বর্তমান পৃথিবীটা হচ্ছে আধুনিকতায় মোড়ানো। এখন মানুষের রুচি,কথাবার্তা, চালচলনে এসেছে বিপুল পরিবর্তন। শুধুমাত্র কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে নয়,পরিবর্তন এসেছে প্রতিটিক্ষেত্রে। আর এই পরিবর্তনের বিরাট একটা অংশ এসেছে ইন্টারনেট নামক এক জাদুর কাঠিতে ভর করে। যোগাযোগ ব্যাবস্থা থেকে শুরু করে যেকোনো ক্ষেত্রেই বেড়েছে ইন্টারনেট এর ব্যাবহার আর তাই একে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে ট্রিলিয়ন ডলার এর মার্কেট।
ইন্টারনেট এর সহজলভ্যতা আমাদের জীবনের যেসব ক্ষেত্রে দারুন পরিবর্তন এনেছে তন্মধ্যে কেনাকাটা বা শপিংঅন্যতম। এখনকার মানুষ আর আগের মত নয় যে হেটে হেটে বসুন্ধরা সিটি তন্ন তন্ন করে পছন্দের জিনিষ কিনে আনবেন,কারন এখন হোম ডেলিভারীসহ অনলাইনেই শপিং করার সহজ সিস্টেম আছে।
যত দিন যাচ্ছে ততই অনলাইনে কেনাকাটার হার বৃ্দ্ধি পাচ্ছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে অনলাইন শপিং যথেষ্ট জনপ্রিয়। বাংলাদেশে অনলাইনে কেনাকাটা কিছু শ্রেনীর মানুষদের মাঝে সীমাবদ্ধ থাকলেও অচিরেই এটি যে জনপ্রিয় হতে যাচ্ছে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়, কারন দিন দিন ইন্টারনেট ব্যাবহারকারী বাড়ছে বৈ কমছে না। আর তাই দিন দিন ইকমার্স সাইটগুলোর জনপ্রিয়তাও বাড়ছে,তাই এখনই সময় ইকমার্স ওইয়েবসাইট তৈ্রি করার কারন দিন দিন এই সেক্টরে প্রতিযোগীতা বাড়বেই।
কিন্তু অনেকেই বুঝে উঠতে পারছেন না ঠিক কিভাবে শুরু করবেন। অথবা শুরু করার চেষ্টা করছেন কিন্তু গাইডলাইনের অভাবে শুরু করতে পারছেন না তাদের জন্য আমার এই টিউন। নিচে দেয়া গাইডলাইন গুলো ফলো করলে আশা করি কোটি টাকার বাজার ধরার চেষ্টা আপনিও করতে পারবেন।
একা একা ইকমার্স ওয়েবসাইট তৈ্রি করার চেষ্টা করা আর আম গাছে কাঠাল পাওয়ার চেষ্টা করা এক কথা। কারন কে না জানে “দশের লাঠি একের বোঝা”। এটা স্বভাবিক দশজন মিলে একটা কাজ করলে সাকসেস গ্যারান্টি দেওয়া যাবে কিন্তু একা একজন কখোনই তার সাফল্যের ব্যাপারে গ্যারান্টি দিতে পারবে না। মানলাম আপনি প্রচুর টাকা ইনভেস্ট করবেন কিন্তু একটা টিমের যেই স্পিরিট থাকবে সেটা কী কখনো টাকায় কেনা যাবে?
তাছাড়া একা যখন কাজ করবেন তখন বিভিন্ন সমস্যায় পড়লে মনোবল ভেঙ্গে যেতে পারে, কিন্তু সাথে আরো মানুষ থাকলে কখনোই এমনটা হবে না।
তাই বেস্ট ফ্রেন্ডদের অথবা প্রিয় কাছের মানুষদের ইনভাইট করুন পার্টনার হতে,তবে সব ভাংতি আলাপ আগেই করে নিবেন।
ইকমার্স ওয়েবসাইট তৈ্রির প্ল্যান করার পর আগে চিন্তা করুন আপনাদের বাজেট কীরকম। কারন বাজেট বড় ধরনের একটা ফ্যাক্টর। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, শুরুর দিকে বাজেট তুলনামুলক কমই থাকে । ফলে অনেকেই কাজে তেমন মজা পান না। ফলে সফলতাও লাভ করেন না।। তাই বাজেট যেমনই হোক না কেন, কোন কোন ক্ষেত্রে কত টাকা খরচ করতে হবে তা নির্ধারন করে কাজে নেমে পড়ূন।
ইকমার্স ওয়েবসাইট তৈ্রি করার প্রথম শর্ত হচ্ছে আপনি কোন ধরনের পন্য বিক্রি করবেন তা নির্দিষ্ট করা। পন্য নির্ধারন করার ক্ষেত্রে অবশ্যই বিচক্ষন হতে হবে। কারন প্রোডাক্ট এর চাহিদা কীরুপ,লাভ হবে কীরুপ,ক্যারিং খরচ পরবে কেমন তা চিন্তা না করে যেমন ইচ্ছা তেমন সাজো এর মত যেমন ইচ্ছা তেমন প্রোডাক্ট সিলেক্ট করলে ধরা খেতে হবে তা সিউর। আবার নিজের বিন্দুমাত্র আইডিয়া নেই এরকম পন্য সিলেক্ট করা ও বোকামি। পন্য নির্বাচন করার আগে অবশ্যই আপনার প্রতিদ্ধন্দী কারা, তাদের মার্কেট পজিশন কীরকম তা বিবেচনা করা উচিত। কখোনই এমন পন্য বিক্রির চেষ্টা করবেন না যেটি অন্য বিখ্যাত ইকমার্স ওয়েবসাইট দ্বারা মার্কেটের প্রায় ৭৫ শতাংশ চাহিদা পুরন করা হচ্ছে ভালো ফিডব্যাকের সাথে।
পন্য নির্ধারনের পর নির্দিষ্ট করুন পন্যগুলো কোন কোন ক্যাটাগরীতে পড়ছে। ক্যাটাগরী নির্দিষ্ট করার সুবিধা হচ্ছে, পন্যগুলো কিনতে সুবিধা হবে এবং দাম নির্ধারন করতেও সুবিধা হবে। তাছাড়া ওয়েবসাইটে কাস্টোমাররা সহজেই তাদের পন্য গুলো খুজে নিতে পারবেন।
কোন কোন পন্য বিক্রি করবেন তা নির্দিষ্ট করার পর নির্দিষ্ট করুন আপনি পন্য কীভাবে কাস্টোমারর হাতে পৌছাবেন। হোম ডেলিভারী দেবার চেষ্টা করুন। এক্ষেত্রে কোন কুরিয়ার সার্ভিস/ পরিবহন ব্যাবহার করবেন তা নির্ধারন করুন। হোম ডেলিভারী কোন কোন এলাকার জন্য রাখবেন তা নির্ধারন করুন। হোম ডেলিভারীর আগেই পেমেন্ট নিশ্চিত করার চেষ্টা করতে হবে।
ওয়েবসাইট তৈ্রীর কাজে হাত দেওয়ার আগে নির্ধারন করুন পেমেন্ট অপশন হিসেবে কোনগুলো রাখবেন।
মানুষ কোন পেমেন্ট অপশন ব্যাবহারে স্বাচ্ছন্দ্যতা বোধ করে তা বিবেচনা করে পেমেন্ট অপশন নির্ধারন করুন। পেমেন্ট অপশন হিসেবে ব্যাংক ট্রান্সফার,বিকাশ,পেপাল(যদিও বাংলাদেশে পেপাল সাপোর্ট করে না),পেজা,মানিবুকার রাখতে পারেন। তবে উপরের সবগুলো রাখতে হবে এমন না কারন কাস্টোমারের সেটিসফিকশন যেমন দরকারী তেমন নিজের সুবিধা অনুযায়ী কাজ করতে পারাটাও দরকারী। যেমন দেশে পেপাল সাপোর্ট করে না, এখন পেপাল এ যদি কোন কারনে কোনো সমস্যা হয়ে তবে পেপাল একাউন্ট এ থাকা টাকাগুলো হাতছাড়া হতে বাধ্য।
একটা ইকমার্স ওয়েবসাইটের অন্যতম সৌন্দর্য হচ্ছে একটি সুন্দর ডোমেইন নেম। আপনার ইকমার্স ওয়েবসাইটের জন্য একটি সুন্দর এবং ইকমার্স রিলেটেড নাম সিলেক্ট করুন। যেমন ইকমার্সের জন্য আপনি যদি চিন্তা করেন অমুকডটকম নাম রাখবেন তাহলে তা মানানসই হবে না, কেউ বুঝবেও না এটা কি ওয়েবসাইট। কিন্তু যদি ইবাজারডটকম রাখেন তবে সবাই বুঝবে এটি কিসের ওয়েবসাইট।
যেকোন ওয়েবসাইটের জন্য ভাল মানের হোস্টিং দরকার আর তা যদি হয় ইকমার্স ওয়েবসাইটের জন্য তাহলে তো কথাই নেই। তাই হোস্টিং কেনার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সচেতন হতে হবে। দেশীয় হোস্টিং প্রোভাইডারদের চেয়ে বিদেশী প্রোভাইডারগুলো ভাল হবে। কারন দেশীয় হোস্টিং প্রোভাইডারগুলো সাধারনত বিদেশী প্রোভাইডারদের থেকে হোস্টিং রিসেল করে, তাছাড়া তাদের তেমন ভাল বিজনেস প্যাকেজ নেই। ভালো হোস্টিং এর জন্য গোড্যাডী,হোস্টগ্যাটর এবং নেমচীপ এর বিজনেস প্যাকেজ গুলো কনসিডার করা যেতে পারে। ইকমার্স ওয়েবসাইট চালুর প্রথম দিকে ভালো শেয়ার্ড বা বিজনেস ক্লাস হোস্টিং ব্যাটার হবে তবে সাইটের ট্রাফিক বাড়লে ভিপিএস বা ডেডিকেটেড এ মাইগ্রেট করাই ভাল হবে।
এটা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে ইকমার্স ওয়েবসাইটের জন্য একটা ইউজার ফ্র্যান্ডলী ইন্টারফেস সবচেয়ে দরকারী। তাই সাইটের ডিজাইন করার ক্ষেত্রে যতটা সম্ভব ইউজার ফ্র্যান্ডলী করে তৈ্রি করার চেষ্টা করুন।
কোন স্ক্রিপ্ট দিয়ে তৈ্রি করবেন অথবা কোন প্রোগামিং ল্যাঙ্গুয়েজ এ তৈ্রি করবেন তা আগেই নির্ধারন করুন। যেহেতু এখানে অর্ডার রিসিভ এবং সিকিউরিটি মেইনটেইন করার ব্যাপার আছে তাই ইকমার্স ওয়েবসাইটটি পিএইচপি দিয়ে তৈ্রি করাটাই ভাল হবে।
নিজের নতুন স্ক্রিপ্ট দিয়ে ইকমার্স ওয়েবসাইট তৈ্রি করতে হবে এমন নয়। বিভিন্ন সিএমএস আছে যেগুলো ফ্রী তে পাওয়া যায় আবার অল্প টাকায় কিনে ব্যাবহার করা যায়। তবে ফ্রী আর পেইড যেকোনো স্ক্রিপ্টকেই নিজ থেকে মোডিফাই করতে হবে কারন স্ক্রিপ্টের পেমেন্ট অপশন আর আপনার নির্ধারিত পেমেন্ট অপশন এক নাও হতে পারে।
আপনার ইকমার্স ওয়েবসাইটের জন্য একটি ইউনিক টেম্পলেট ইউজ করার চেষ্টা করুন এবং নিজে না পারলে তা রেস্পন্সিভ ওয়েবডেভেলপার দিয়ে করুন। ইকমার্স সাইটের জন্য মোবাইল ভার্সন রাখার চেষ্টা করুন।
আপনার ইকমার্স ওয়েবসাইটটি চালু করার আগেই একটু জোরেশোরে প্রচারনা চালানোর চেষ্টা করুন। ইকমার্স ওয়েবসাইটটির ফিচার গুলো কেমন হবে, কেন অন্যদের থেকে আলাদা তা তুলে ধরার চেষ্টা করুন। প্রচারনার জন্য বাজেটের একটা অংশ রাখুন। কারন প্রচারেই প্রসার।
প্রচারনার অংশ হিসেবে ফেসবুক প্রোমোট,বিলবোর্ড এডভার্টাইজিং ইত্যাদি রাখতে পারেন।
তাছাড়া ইকমার্স ওয়েবসাইটটি উদ্বোধন উপলক্ষ্যে রাখতে পারেন বিশেষ ছাড় এবং উপহার সামগ্রী।
উপরের আলোচিত ব্যাপারগুলো ইকমার্স ওয়েবসাইট তৈ্রি করার আগেই নির্ধারন করার চেষ্টা করুন। কারন শুরু যদি নড়বড়ে হয় তাহলে তেমন সফলতা নাও আসতে পারে। আর তাছাড়া যেকোন কাজের ক্ষেত্রে প্ল্যান বাই প্ল্যান এগুলেই সফলতা লাভ করা যায়।
আজ এপর্যন্তই। আশা করি অন্য আরেকদিন ইকমার্স ওয়েবসাইট তৈ্রি করার পর কিভাবে কীভাবে মূলধারার প্রতিযোগীতায় প্রবেশ করে পন্য বিক্রি বৃদ্ধি করা যায় সে ব্যাপারে লিখব।
( বিঃদ্রঃ লেখাটি গতবছরের লেখা...আশা করি এখনো কাজে লাগবে 🙂 )
কোনো ধরনের সাহায্যের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন ফেসবুকে। ফেসবুকে আমি
আমি জিএমশুভ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 19 টি টিউন ও 96 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আমি জিএমশুভ। পড়ালেখার পাশাপাশি লেখা লেখি করছি। ভালবাসি টেকনোলজিকে। নেট ব্রাউজ করা আর বই পড়া আমার প্রধান সখ।আর ভালবাসি নতুন কিছু জানতে এবং অন্যকে জানাতে। ফেসবুকে আমি: http://facebook.com/gms.me
রংপুরে থাকি। শুধু রংপুর ভিত্তিক একটি ই-কমার্স সাইট খোলার প্লান চুড়ান্ত হয়েছে। ডোমেইন কিনেছি। কিন্তু ওয়ার্ডপ্রেস জানলেও পিএইচপি নাই। শুধু রংপুর জেলার কারণে বাজেট কম। ই-কমার্স সাইট বানানোর মত বাজেট নাই। আমি ব্লগস্পট এক্সপার্ট। অনেক টেমপ্লেট খুজলাম ব্লগস্পটের। পেলামো ঠিকই কিন্তু সেগুলোতে পেপাল সিস্টেম। আমি চাচ্ছি ইমেইল ইনভয়েস সিস্টেম করতে। কোন সাজেশন থাকলে দিন