খাদ্যগ্রহণ মানব শরীরের জন্য অপরিহার্য একটি কাজ। এটি ছাড়া মানুষ কখনোই বাঁচতে পারে না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের খাদ্যের প্রচলন। বাঙালিরা লাঞ্চে বা ডিনারে ভাত খেয়ে থাকে অন্যদিকে আমেরিকানরা বার্গার ও চিজ বা পিজ্জা খেয়ে কাটায় বছরের পর বছর। তবে মাত্রাতিরিক্ত খাদ্যগ্রহণ যেমন শরীরের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়, তেমনি শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিও হতে পারে।
বৃটিশ হার্ট ফাউন্ডেশন কর্তৃক পরিচালিত একটি জরিপে দেখা গেছে, বর্তমান প্রজন্মের ৮ থেকে ১৫ বছর বয়সীদের মধ্যে ৭৩ শতাংশই তাদের খাদ্য গ্রহণের প্রতি সতর্ক নয়। তারা জানে না যে অতিরিক্ত ও অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যগ্রহণ তাদের জীবনকালকে কমিয়ে দিতে পারে। বৃটিশ হার্ট ফাউন্ডেশন জরিপের পর অতিরিক্ত খাদ্য ও ফাস্টফুডকে জাঙ্কফুড বলে আখ্যায়িত করেছে। এছাড়াও জরিপ বলছে, ২০৫০ সালের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ শিশুই অতিরিক্ত মোটা হয়ে যাবে শুধু অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যগ্রহণের কারণে। এছাড়াও একই কারণে শরীরের বিভিন্ন স্থানে স্পট দেখা দেয়া, দাঁত গঠনে সমস্যা দেখা দেয়াসহ আরো নানামুখী সমস্যা দেখা দিতে পারে।
জরিপে দেখা গেছে, বর্তমানে ১০ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশই মাত্রাধিক ওজনবিশিষ্ট বা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মোটা। ওই জরিপের ফলাফলে আশঙ্কা করা হয়েছে যে, আজকের শিশুরাই হতে পারে ভবিষ্যতের প্রথম প্রজন্ম, যারা তাদের বাবা-মায়ের চেয়ে কম আয়ু পাবে। তবে বৃটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের আরেকটি জরিপে দেখা যায়, ১১০০ শিশু-কিশোরের মধ্যে ৫৬ শতাংশ ৮০ বছরের বেশি সময় বাঁচবে বলে মনে করে এবং ১১ শতাংশ মনে করে ১০০-এরও বেশি।
ভবিষ্যৎ প্রজন্মের তরুণ সমাজ তথা আজকের শিশুদের বাঁচাতে চ্যারিটি একটি অনলাইন গেম প্রকাশ করেছে যা শিশু-কিশোরদের স্বাস্থ্যসম্মত খাবার বাছাইয়ে সহায়তা করবে এবং ঝুঁকিপূর্ণ ও অস্বাস্থ্যকর খাবার সম্পর্কে সচেতন করে তুলবে। নতুন এই অনলাইন গেমের নাম দেয়া হয়েছে ইয়োবোট। ব্যবহারকারীরা অনলাইনে তাদের নিজেদের একটি ক্ষুদ্র ভার্সন তৈরি করতে পারবেন যার নামই হবে ইয়োবোট এবং অবলোকন করতে পারবেন পরিশ্রম বা এক্সারসাইজ ও খাদ্যগ্রহণ কিভাবে জীবনের বেঁচে থাকা ও সুস্থ থাকার ওপর প্রভাব ফেলে। আপনি যখনই আপনার নিজের জন্য ইয়োবোট তৈরি করবেন তখন থেকেই এটি শুধু ওয়েবসাইটেই নয় বরং আপনার সঙ্গে যোগাযোগ রাখবে ই-মেইল ও এসএমএসের মাধ্যমে। এটি আপনাকে জানান দেবে যখন সে ক্ষুধার্ত। স্বাভাবিকভাবেই এটি আপনার জীবনের একটি অংশ হিসেবে গড়ে উঠবে।
বৃটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের প্রিভেনশন অ্যান্ড কেয়ার বিভাগের পরিচালক মাইক ন্যাপটন বলেন, আজকের জাঙ্ক ফুড প্রজন্ম দেখতে পায় না যে বার্গারের বক্সের ভেতরে আসলে কী আছে। তারা বুঝতে পারছে না যে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণের একটি ভয়াবহ পরিণতি রয়েছে। এক্ষেত্রে বৃটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের আবিষ্কার ইয়োবোট সম্পর্কে তিনি বলেন, ইয়োবোট হচ্ছে নতুন একটি পদ্ধতি যার দ্বারা শিশু-কিশোররা অতিরিক্ত খাদ্যগ্রহণের পরিণতি সম্বন্ধে পরিষ্কার ধারণা পাবে। বর্তমানে শিশুদের অতিরিক্ত খাদ্যগ্রহণের ব্যাপারে নিয়ন্ত্রিত হতে ও এ ব্যাপারে জ্ঞান অর্জনে ইয়োবোটকে গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম হিসেবে দেখছেন মাইক।
ওজন সংশ্লিষ্টবিষয়ক চ্যারিটির মেডিক্যাল ডিরেক্টর ড. ক্যাম্পবেল বলেন, আমরা ইয়োবোটের মাধ্যমে শিশু-কিশোরদের স্বাস্থ্যসম্মত ও নিয়ন্ত্রিত খাদ্যগ্রহণের গুরুত্বের ব্যাপারে সতর্ক করে তুলতে চেষ্টা করছি এবং এ কাজে আমরা যথেষ্ট উন্নতি করতে পেরেছি। তিনি মনে করেন, শিশু-কিশোররা তখনই তাদের লাইফস্টাইলে পরিবর্তন আনবে বা নিয়ন্ত্রিত খাদ্যগ্রহণ শুরু করবে যখন তারা এর গুরুত্ব অনুধাবন করতে সক্ষম হবে। ইয়োবোট প্রকল্পটি তাদের এই গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করে তোলার প্রথম প্রয়াস। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ভবিষ্যতে অন্যান্য সংস্থা এই কাজে এগিয়ে এলে শিশু-কিশোরদের মধ্যে সচেতনতার কাজ আরো ব্যাপকভাবে পরিচালনা সম্ভব হবে।
ইয়োবোট সাইট : http://www.yoobot.com
পূর্বে দৈনিক যায়যায়দিন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগে প্রকাশিত।
আমি মো. আমিনুল ইসলাম সজীব। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 16 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 83 টি টিউন ও 201 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 7 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আমাদের জন্যে টিউনটা যে অনেক প্রয়োজনীয় তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। টেকটিউনসকে একটি ব্যতিক্রমী টিউনে সমৃদ্ধ করার জন্যে সজীবকে অনেক ধন্যবাদ।