“স্কাই টাচ সফটওয়্যারের” হাত ধরে বাংলার প্রথম ক্যাম্পাস রেডিওটির যাত্রা।

বাংলার প্রথম ক্যাম্পাস রেডিওটির যাত্রা


০ রফিকুল ইসলাম
২০০৭ সালের একটি হিট তেলেগু ছায়াছবি 'হ্যাপি ডেস'। ছবিটিতে মাধু নাম নিয়ে অভিনয়কারিণী নায়িকা তামান্না ভাটিয়া উঠে-পড়ে লেগেছিলেন তাদের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ক্যাম্পাস রেডিও চালু করার জন্য। ছবিটিতে ক্যাম্পাস রেডিওকে ঘিরে ঘটে মজার মজার ঘটনা। ফার্ষ্ট ইয়ারে নতুন ভর্তি হওয়া কোন মেয়ে সবচেয়ে সুন্দরী, আমেরিকায় কবে মাষ্টার্সে ভর্তির সাকর্ুলেশন হল, আজ ক্যাম্পাসের কোন শিৰাথর্ীর জন্মদিন, এমনকি ভেঙ্গে যাওয়া প্রেমের জোড়া লেগে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে ওই ক্যাম্পাস রেডিওর বদৌলতে। আপনি আমি যাই বলি না কেন ঐ প্রেমিক যুগলকে 'বিজ্ঞানের সবচেয়ে সেরা আবিষ্কার কোনটি?' প্রশ্ন করা হলে এক শব্দে উত্তর দিয়ে দেবেঃ ক্যাম্পাস রেডিও।

ক্যাম্পাস রেডিও কথাটি বাংলাদেশে কখনো শোনা যায়নি। শুধু বাংলাদেশে না পৃথিবীর অনেক দেশেই এই শব্দটি এখন পর্যনত্দ ব্যবহার করার সুযোগ পায়নি। পৃথিবীর মাত্র ১৭টি দেশের শিৰা প্রতিষ্ঠানে ক্যাম্পাস রেডিও আছে। আর এই সংৰিপ্ত তালিকায় বাংলাদেশের নামও তুলে দেয়ার মহান উদ্যোগ নিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন তরুন শিক্ষর্থী। 'রেডিও আমার ক্যাম্পাস, রাবি' এই নাম নিয়ে চালু করে দিয়েছেন ক্যাম্পাস রেডিও। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রানত্দ হলেও আপনার আমার শুনতে কিন্তু কোন বাধা নেই।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠন 'ফাটল'-এর জন্ম ২০০৬ সালে। প্রথম দিকে অন্য দশটি সংগঠনের মতই তারা শুরম্ন করে নাটক মঞ্চায়ন। এরপর একটু ব্যতিক্রমী কিছু করতে গিয়ে আয়োজন করে লোকজ মেলা। সাফল্যের নেশায় পেলে যা হয় ঠিক তাই ঘটল ফাটল-এর সদস্যদের। আরও ব্যতিক্রমী কিছু করার নেশা জাগলো। এবার ফাইনাল প্রজেক্ট- ক্যাম্পাস রেডিও। যদিও মনে মনে সম্পূর্ণ নতুন একটি বিষয় চালু করা নিয়ে কিছুটা আশংকা, অনিশ্চয়তা কাজ করছিল কিন্তু পিছপা হয়ে যাবার তো কোনো সুযোগ নেই। কারণ ইতিহাসে রাবির ছাত্র শিক্ষর্থীদের পৃষ্ঠ প্রদর্শন করার কোন নজির নেই।

ক্যাম্পাস রেডিও করতে কি কি লাগবে তার খোঁজ নিতে গিয়ে পাওয়া গেল বাংলাদেশেরই সফটওয়্যার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান "স্কাই টাচ সফটওয়্যার"। স্কাই টাচ সফটওয়্যার" এর কর্মকর্তারা প্রযুক্তিগত বিষয়টি যখন বর্ণনা করল তখন রেডিও ক্যাম্পাস স্থাপন করাটা ১৯৬৯ সালের ১৮ ফেব্রম্নয়ারিতে পাকিসত্দানি মিলিটারীর বন্দুকের নলের সামনে দাঁড়িয়ে শেস্নাগান দেওয়ার তুলনায় হাজার গুণ সহজ লাগল। আর দেরি না করে বাঙালীর শুভদিন এই বছরের ২১ ফেব্রম্নয়ারিতেই চালু হয়ে গেল 'রেডিও আমার ক্যাম্পাস, রাবি।

যুগে যুগে বাংলার কবি সাহিত্যিকগন বিভিন্ন স্টাইলে আকার-ইঙ্গিতে যে বিষয়টি আমাদের বোঝাতে চেয়েছেন তার সারমর্ম হল তরম্নণরা আলোর দিকে দৌড় দেবে আর এই বৃদ্ধদের দ্বারা পরিচালিত পরিবার,সমাজ, রাষ্ট্র ওই তরম্নণদের শার্টের পেছন থেকে টেনে ধরে রাখতে চাইবে। ফাটল সংগঠনের ভাগ্যেও ওই একই পরিণতি। রাষ্ট্রিয় আইন-কানুনের ফাঁদে পড়ে এফএম রেডিও চালুর অনুমতি পাওয়া গেল না। এই অনুমতি পেতে নাকি ক্যাম্পাস প্রশাসনের অনুমতি লাগবে। ক্যাম্পাস প্রশাসনও ধীরে চলো নীতিতে অগ্রসর হচ্ছে। সরাসরি অনুমতি না দিলেও বাধা দেয়নি। যেহেতু অনুমতি নেই তাই এফ এম রেডিওর পরিবর্তে ইন্টারনেট রেডিও চালু করতে হয়েছে। তাও আবার ভাড়া করা বাসায়। রাবি আয়তনের দিক থেকে এদেশের সর্ববৃহৎ বিশ্ববিদ্যালয়। সে ক্যাম্পাসে এমন একটি যুগোপযোগী পদৰেপ বাসত্দবায়ন করতে গিয়ে আয়োজকদের বাসা ভাড়া করতে হয়েছে এমন সংবাদে আবারো কবিদের প্রসঙ্গ আসে। রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরম্নল ইসলাম, সুফিয়া কামালদের আমলে সম্ভবত ক্যাম্পাস শব্দটি এত পরিচিত ছিল না। তাই বাংলাদেশের ক্যাম্পাস প্রশাসন সম্পর্কে তারা ধারণা করতে পারেননি। তাদের আমলে বুঝতে পারলে তরম্নণদেরকে ক্যাম্পাস প্রশাসন থেকেও সাবধানে থাকতে বলে যেত।

ফাটল সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ফাহদ হোসেন জানান ক্যাম্পাস কতর্ৃপৰ তিন মাস রেডিও আমার রাবি এর কার্যক্রম পর্যালোচনা করে অনুমতি দেবার বিষয়ে সিদ্ধানত্দ নেবে। বর্তমানে কাজলা গেটে দুটি রম্নমের একটি বাসা ভাড়া নিয়ে দুটি কম্পিউটার আর অন্য কিছু আসবাব দিয়ে স্টুডিও সেট করা হয়েছে। আপাতত রাত আটটা থেকে রাত বারোটা পর্যনত্দ বিভিন্ন অনুষ্ঠান চলানো হচ্ছে। ক্যাম্পাসের শিৰাথর্ীরাই সব কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। শিৰকদের মধ্যে সহকারী প্রক্টর তারেক আল মামুন এবিষয়ে সর্বাত্মক সহায়তা করছেন। ফাটলের সভাপতি তানভীর আজাদের নেতৃত্বে শিৰাথর্ীদের মধ্যে কাজ করছেন সোনিয়া নাসরিন, আনিসুর রহমান, শিপন আহমেদ।

সামান্য সহায়তা ও একটি মাত্র দাবি

রেডিও আমার রাবি চালু করতে এপর্যনত্দ যত খরচ হয়েছে তার পুরোটাই ফাটল সংগঠনের শিৰাথর্ীদের জমানো টাকায় হয়েছে। যার হাতে যা ছিল তা দিয়ে রেডিওটি চালু করা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু স্টুডিওটিকে ঠিকমত সাজানো সম্ভব হয়নি। মাত্র দুই লাখ টাকার অনুদান বা স্পন্সর পাওয়া গেলে স্টুডিওটিকে সাজানো সম্ভব হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ও রাস্টীয় অনুমতি পাওয়ার পর এফএম চালু করতে আর এক লাখ টাকাই যথেষ্ট। তবে এই মুহূর্তে দুই লাখ টাকার খুব প্রয়োজন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের যে শিৰাথর্ীদের জন্য রেডিওটি চালু হল তারাই এটি শুনতে পায় না। কারণ রাবির হলগুলোতে ইন্টারনেট সংযোগ নাই। কয়েকজন শিৰক কর্মকর্তার বাসায় আর অফিসে ইন্টারনেট সংযোগ আছে। ফাহদ হোসেন তাই শিৰাথর্ীদের মাঝে ইন্টারনেট সুবিধা দেওয়ার জন্য আকুতি জানান। তবে এফ এম চালু করার সুযোগ হলে শিৰাথর্ীরা মোবাইল রেডিওতে এ রেডিওটি শুনতে পারবে।

"স্কাই টাচ সফটওয়্যার" ও ক্যাম্পাস রেডিও

"স্কাই টাচ সফটওয়্যারের" আহমেদ মিন্টু জানান- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু সর্বপ্রথম ক্যাম্পাস রেডিও চালু করেছে তাই তাদেরকে খরচের ৰেত্রে অনেক ছাড় দেয়া হয়েছে। ইন্টারনেটভিত্তিক ক্যাম্পাস রেডিও চালু করতে সফটওয়্যার ক্রয় ও ইন্সটলেশন বাবদ একলাখ টাক লাগে। এবং কম্পিউটার ক্রয় ও হার্ডওয়্যার ইন্সটলেশনের জন্য আরও পঞ্চাশ হাজার টাকা। এই মোট দেড় লাখ টাকাই ক্যাম্পাস রেডিও সেট করার জন্য যথেষ্ট। তিনি আরও বলেন রাবির পর বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় ও আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ-এ আরও ক্যাম্পাস রেডিও স্থাপনের চেষ্টা চলছে।

রেডিও আমার রাবি'র ওয়েবসাইট http://amarcampusru.org/
সূত্র:- দৈনিক ইত্তেফাক

Level 0

আমি আকাশছোঁয়া। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 15 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 23 টি টিউন ও 80 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞানের প্রতি আলাদা একটা টান অনুভব করতাম। বিভিন্ন যন্ত্রপাতি বিশেষকরে ইলেক্ট্রনিক্সের প্রতি ছিলো আলাদা একটা ভালোবাসা। ইলেক্ট্রনিক্সের কোন খেলনা পেলে তা না খুলে দেখা পর্যন্ত মনে শান্তি পেতাম না। কেমন করে কাজ করে এগুলো এই প্রশ্ন ঘুরপাক খেতো মাথায়। বাসার টর্চলাইট থেকে শুরু করে বড়ভাইয়ের ক্যালকুলেটর কোন কিছুই...


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

অভিনন্দন

ভালো কাজ অভিনন্দন 🙂

Level 0

অভিনন্দন

আভিনন্দন মিন্টু ভাই ।

ধন্যবাদ সাবাইকে