টরেন্ট হচ্ছে একটি অনলাইন ফাইল শেয়ারিং প্রোটোকল বা প্রযুক্তি। যেটি P2P অর্থাৎ পিয়ার টু পিয়ার প্রযুক্তি ব্যবহার করে। পিয়ার টু পিয়ার নেটওয়ার্ক প্রযুক্তির মাধ্যমে ফাইল শেয়ারকারীগন একে অপরের কম্পিউটিং পাওয়ার ব্যান্ডউইড্থ শেয়ার করে থাকে। পিয়ার টু পিয়ারে আপনি এবং আমি যদি কোন ফাইল শেয়ারিং করি তখন আপনি আর আমি হচ্ছি ক্লায়েন্ট। আমরা সার্ভারকে কে ডাউনলোড এবং আপলোডের জন্য রিকোয়েস্ট করি। আরো ভালো ভাবে বোঝাতে ধরুন - কোন একটি এফটিপি সার্ভারে একটি ফাইল বা প্রোগ্রাম রাখা আছে যা আমরা কয়েক জন এই মূহুর্তে ডাউলোড করছি। এখানে আমরা হচ্ছি ক্লায়েন্ট এবং এফটিপি সার্ভার কে রিকোয়েস্ট করছি ফাইল টির জন্য। এখন যত বেশী ক্লায়েন্ট এবং রিকোয়েস্ট বাড়বে ততবেশী ততবেশী চাপ এপটিপি সার্ভারটির উপর পড়বে এবং পারফরমেন্স ধীর গতীর হয়ে পড়বে। এটিকে বলে ফিক্সড ক্লায়েন্ট সার্ভার আর্কিটেকচার। আর পি টু পি তে ব্যাপারটি পুরোপুরি উল্টো। এখানে যত বেশী ক্লায়েন্ট এবং রিকোয়েস্ট বাড়বে শেয়াররিং পারফরমেন্স ততবেশী বৃদ্ধি পাবে। কারন ফিক্সড ক্লায়েন্ট সার্ভার আর্কিটেকচারে কেউ কারো ব্যান্ডউইড্থ শেয়ার করেনা কিন্তু পিটুপি বা টরেন্টে একে অপরের ব্যান্ডউইড্থ শেয়ার করা হয়।
# টরেন্টঃ.torrent :
টরেন্ট অর্থাৎ এক্সটেনশন যুক্ত ফাইল হচ্ছে একটি মেটা ফাইল বা প্রয়োজনীয় তথ্য সমৃদ্ধ একটি ফাইল। যেখানে টরেন্ট এর মাধ্যমে যেই ফাইল ডাউনলোড করা হবে সেইফাইল সম্বন্ধিত কিছু তথ্য যেমন ফাইলটির নাম, ফাইলটির আকার এবং ট্র্যাকার ইউআরএল (যেটি সম্পর্কে পরে বলছি) থাকে।
# পিয়ারঃ peer or leecher :
পিয়ার হচ্ছে যেই কম্পিউটারের সাথে আপনি যুক্ত এবং যে বিটটরেন্ট ক্লায়েন্ট ব্যবহার করে আপনি টরেন্টের মাধ্যমে ফাইল ডাউনলোড করছেন। পিয়ার কে লিচার ও বলা হয়। লিচার মানে একজন বা কয়েকজন একটি নির্দিষ্ট ফাইল শেয়ার করছে আর আপনি তাদের থেকে ফাইলটির অংশ ডাউনলোড করছেন। আপনি যখন টরেন্টের মাধ্যমে ফাইল ডাউনলোড শুরু করলেন তখন আপনার কাছে ফাইলটির কোন অংশই নেই। আপনি সিডার বা ফাইলটি শেয়ার কারী হতে ফাইলটি ডাউনলোড করছেন। তাই আপনি হচ্ছেন পিয়ার বা লীচার।
# সিড এবং সিডারঃ seed or seeder
সিডার হচ্ছেন তিনি যিনি বিটটরেন্ট ক্লায়েন্ট ব্যবহার করে উক্ত ফাইলের সম্পূর্ন অংশ ডাউনলোড করছেন বা করছেন এবং একই সাথে ফাইলের যতটুকু অংশ ডাউনলোড করা হয়েছে তা অন্য পিয়ারদের সাথে শেয়ার করছেন। একটি টরেন্ট এর ডাউনলোড স্পিড উক্ত টরেন্টের সিডারের সংখ্যার উপর নির্ভর করে। সিডার বা শেয়ারকারীর সংখ্যা যত বেশী ডাউনলোড স্পিড বা পারফরমেন্স তত বেশী হবে।
# সোয়ার্মঃ swarm
সোয়ার্ম হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট ফাইলের জন্য যতগুলো সিডার বা শেয়ারকারী এবং লীচার বা ডাউনলোডকারী একে অপরের সাথে connected থাকেতাদের সম্মিলিত সংখ্যা। অর্থাৎ টরেন্টের মাধ্যমে একটি ফাইল যদি ১০ জন সিডার শেয়ার করে এবং ৫ জন লীচার তা ডাউনলোড করে তবে মোট পনেরজনের এই মধ্যবর্তী যোগাযোগ কে সোয়ার্ম বলে।
# ট্র্যাকারঃ tracker
টরেন্টের মাধ্যমে যখন ফাইল ডাউনলোড করা হয় তখন সিডার এবং লীচারদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষার ক্ষেত্রে একটি সার্ভার থাকে। এই সার্ভারটিই হচ্ছে ট্র্যাকার। টরেন্ট তৈরীর সময় একটি ট্র্যাকার সার্ভার ইউআরএল উল্লেখ করে দেয়া হয়। এই ট্র্যাকার টি ট্র্যাক করতে থাকে বর্তমানে টরেন্টটির কয়জন সিডার এবং লীচার আছে। যা আপনার বিটটরেন্ট ক্লায়েন্টের মাধ্যমে আপনি জানতে পারেন বর্তমানে উক্ত টরেন্টের জন্য কয়টি সিডার বা লীচার আছে।
ট্র্যাকারের উদাহরণ : http://torrent.ubuntu.com:6969/announce
ধরুন ফয়সাল, অমি, লাভলু, ইমরান, হাসিন এরা পাঁচজন একটি নির্দিষ্ট টরেন্ট ফাইল ডাউনলোড করছে। ফয়সাল টরেন্ট টি তৈরী করেছে এবং file.torrent ফাইলটি সে কোন টরেন্ট সাইটে আপলোড করে দিয়েছে। মনে রাখবেন file.torrent টরেন্ট ফাইলটি ছোটআকারের হয়ে থাকে কিলোবাইট বা ১ মেগাবাইট। এতে শুধূ ফয়সালের কম্পিউটারে রাখা একটি ফাইল (যেটা টরেন্টের মাধ্যমে শেয়ার করা হচ্ছে) এর অবস্থান, ফাইলটির নাম, আকার, ট্র্যাকার ইউআরএল ইত্যাদি তথ্য আছে। এখন ফয়সাল বিটটরেন্ট ক্লায়েন্ট এর মাধ্যমে ফাইলটা শেয়ার বা সিড করছে। প্রথমে চারজন ফয়সাল থেকে ফাইলটির কিছু অংশ ডাউনলোড করলো। এখন সকলেরই কাছে ফাইলটির কিছু কিছু অংশ আছে। এখন সকলেই যতটুকু অংশ ডাউনলোড করেছে তা অন্যদের ডাউনলোড করতে দিচ্ছে অর্থাৎ শেয়ার বা সিড করছে এবং নিজেও অবশিষ্ট অংশ ফয়সাল সহ অন্যদের কাছ থেকে ডাউনলোড করছে। এখন দেখছেন আগে সিডার ছিল ফয়সাল একজন এখন সকলেই একেকজন সীডার হয়ে গিয়েছে। এভাবে সিডার যত বাড়তে থাকবে ডাউনলোড পারফরমেন্স তত বাড়তে থাকবে। একটা সময় আসবে যখন সকলেরই কাছে কাঙ্খিত ফাইলটি সম্পূর্ণ থাকবে। অর্থাৎ আগে যে ফাইল শুধু ফয়সালের কাছে ছিল এখন তা অনেকজনের কাছে আছে। এখন চাইলে কেউকেউ সিডিং বন্ধকরে দিতে পারে তার বিটটরেন্ট ক্লায়েন্ট থেকে। বা চাইলে সিডিং করা চালু রাখতে পারে যাতে অন্যরা তা ডাউনলোড করতে পারে। মনে রাখবেন অন্যরা সিডিং করছিল বলেই আপনি তা ডাউনলোড করতে পেরেছেন। তাই আপনার উচিৎ হবে আপনার ও সিড করা যতক্ষন সম্ভব হয়। টরেন্ট ক্লায়েন্ট থেকে টরেন্টটি মুছে ফেললে বা ক্লায়েন্ট টি বন্ধ করে দিলে সিডিং বন্ধ হয়ে যাবে।
ব্যাস এই হল গিয়ে টরেন্ট শেয়ারিং পদ্ধতি বা প্রযুক্তি।
টরেন্টের কিছু উপকারীতাও আছে এবংকিছু অপকারীতাও আছে। যেমন টরেন্টের মাধ্যমে একদিকে যেমন ফাইল শেয়ারিং করা যায় তেমনি
এই প্রযুক্তির কল্যানে পাইরেসীও করা যায়। শেয়ারিং পদ্ধতিতে যে কেউ যেকোন কিছুই শেয়ার করতে পারে সেটা সফটওয়্যার হোক, মিউজিক হোক, মুভি হোক বা গেম হোক। এখানে নির্দিষ্ট কাউকে ধরা সম্ভব নয়। কারন টরেন্ট কোন কোম্পানী নয় যেটা একটি ফাইল শেয়ারিং পদ্ধতি মাত্র। কাজা বা ন্যাপস্টার পি ২ পি শেয়ারিং সার্ভিস দেয়। তারা যেহেতু একটি প্রতিষ্ঠান তাই তাদের কে কোন কিছু করা হতে বিরত রাখা সম্ভব। কিন্তু টরেন্ট কে নয়। কারন টরেন্ট না কোন নির্দিষ্ট কোম্পানী, না কোন নির্দিষ্ট সার্ভারে সংরক্ষিত, না কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি দ্বারা শেয়ার কৃত। তাই হলিউড ও টরেন্টের কাছে হার মানতে বাধ্য হচ্ছে। ওয়ার্নার ব্রাদার্সের সাথে bittorrent.com এর চুক্তি হয়েছে। এখন থেকে তাদের রিলিজকৃত চলচ্চিত্র গুলো টরেন্টের মাধ্যমেই সরবরাহ করছে bittorrent.com একটি নির্দিষ্ট মূল্যে, রিলিজ হবার সাথে সাথেই। তবে এটিও তেমন কার্যকর নয়। যখন যে কেউ ফ্রি ডাউনলোড করতে পারবে এটা তবে অর্থের বিনিময় ডাউনলোড করবে কেন?
এখন বিটটরেন্ট ক্লায়েন্ট আপনার প্রয়োজন হবে টরেন্ট ডাউনলোডের জন্য। এখানে কিছু বিটটরেন্ট ক্লায়েন্টের নাম এবং ওয়েব অ্যাড্রেস দিলাম।
ইন্টারনেটে খুজলে আরো অনেক ক্লায়েন্ট খুঁজে পাওয়া যাবে। এখন একটা তথ্যের অভাব বোধ করছেন তাইনা। সেটা হল টরেন্ট সাইট যেখানে অসংখ্য টরেন্ট খুঁজে পাবেন। এমন ই কিছু সাইটের লিন্ক দিচ্ছি :
এখানে বাংলাদেশী টরেন্ট কন্টেন্ট সহ টরেন্ট তৈরী এবং ডাউনলোডিং সম্বন্ধিত অনেক টিউটোরিয়াল পাবেন। এছাড়াও টরেন্ট তৈরীর টিউটোরিয়ালের জন্য যেতে পারেন
এছাড়াও en.wikipedia.org তে গিয়ে bittorrent দিয়ে সার্চ করলে অনেক তথ্য পাবেন।
ইশতিয়াক আহমেদ (ফয়সাল)
http://foisal.wordpress.com/?s=torrent
আমি darklord। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 16 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 30 টি টিউন ও 111 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
Share your knowledge with others..........
ভাই আমার পিসিতে কখনোই টরেন্টে স্পিড ওঠেনা, কারন বলতে পারেন? এত সুনাম শুনেছি আগে থেকেই। 1 কেবি স্পিড পাই যে ক্লায়েন্টই ব্যবহার করিনা কেন। কেউ কোন সাহায্য করতে পারবেন??
আপনি কোন আইএসপির লাইন ব্যবহার করেন? আপনার স্বাভাবিক ডাউনলোড স্পিড কত ?( টরেন্ট নয় নরমাল ফাইল ডাউনলোড এর)
ইউটরেন্ট ইউজ করলে ডাউনলোডরত অবস্থায় টরেন্টে রাইট ক্লিক করে Bandwidth Allocation থেকে Set upload limit 1kb/s করে দিলেইতো হয়। ১ কেবির চেয়ে বেশী স্পিডে আপলোড হবেনা।
রুবেল ভাইয়ের টিউনটা বেশী ভালো লেগেছে ….. তবে ফয়সাল ভাইয়েরটা ও খারাপ না।