৩-জি পলিটিক্স ও ডিজিটাল বাংলাদেশ মূল্যায়ন পত্র-২

 

ভূমিকাঃ থ্রীজি হলো তৃতীয় প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক।এর দুটি বড় গুন হলো, মোবাইল ফোনে আমরা যে ভয়েসের শেয়ার করতে পারি, ৩ জি'তে চাইলে ভয়েসের সাথে দুইজন বা অধিক জনে দূরে ভিন্ন ভিন্ন লোকেশনে থেকেও ভয়েসের সাথে সাথে লাইভ ভিডিও স্ট্রিমিং শেয়ার করতে পারবে অর্থাৎ সর্বত্র বিরাজমানের গুন/ক্ষমতা লাভ করবে।দ্বিতীয় গুনটি হলো এর ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট কানেকটিভিটি।গব্রডব্যান্ড ইন্টার্নেট পরিবহনের এই সুবিধা বাংলাদেশের জন্য অমূল্য অপরিহার্য একটি বিষয়।বাংলাদেশে আমরা মূলত আজ ২০১২ সালেও যে ধরনের মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করছি, একে অন্তত ১৫ বছর আগের ২.৫জি/(জিপিআরএস-GPRS) বা ২.৭৫জি/(এজ-EDGE) নেটওয়ার্ক দাবি করা হয়।একে থ্রীজিতে আপগ্রেড করতে হলে মোবাইল অপারেটরগুলি কে সরকারের অনুমোদন নিতে লাগবে।কারন থ্রীজির জন্য যেই তরঙ্গ ব্যবহার করতে হবে তার মালিক রাষ্ট্র, যার জন্য সরকারকে নির্দিষ্ট ফি দিয়ে, সেই নির্দিষ্ট তরঙ্গ ট্রান্সমিশন ও নেটওয়ার্ক তৈরীর করতে লাগবে।মোবাইল যদি গণতন্ত্রের প্রতীক হয়, তাহলে থ্রীজি সেই প্রতীকের স্বাধীনতা।আর তরঙ্গ ব্যবহার করে সৃষ্টি গণমাধ্যম বা টেলিযোগাযোগকে তৃতীয় বিশ্বের রাজনীতিবিদরা সবসময় ভয় পেছে।তাই রেডিও, টেলিভিশন, মোবাইল সহ গণতন্ত্রের সমার্থক, নাগরীক স্বাধীনতার মাধ্যমকে এরা সবসময় জনগণের নাগালের বাইরে রেখেছে - দেশকে অবরুদ্ধ রেখে শোষনের উদ্দেশ্যে।ভূমির মত মানুষের জন্মগত অধিকার জনগণের মাথার উপর আকাশকে নিরাপত্তা রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্যের অজুহাত দেখিয়ে সংরক্ষিত এলাকা ঘোষনা করে রেখেছে।লোকাল নদীতে নাউ বাইলে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়না অথচ লোকাল আকাশে কথা উড়ালেও আপনার পেছনে এনএসআই ডিজিএফআই ছুটবে।সব মাথামোটা গন্ডারের দল দেড় শতক আগের উদ্ভাবিত তরঙ্গের ব্যবহার নিয়ে তালটিংবালটিং করে শুধু উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকেই ১৫০ মিলিয়ন মূর্খ বানিয়ে রাখেনি বরং দেশের গণতন্ত্র, শিক্ষা, উন্নয়ন, যোগাযোগ সব বনসাই বানিয়ে রেখেছে।এই মানসিকতার রাষ্টে, ২১ শতকের প্রথম আবিষ্কার থ্রীজি টেলিকম - অতীতের সকল মাধ্যমের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালি ও নাগরীকের স্বাধীনতার চুড়ান্ত রুপ - এর প্রশ্নে কি কি হতে পারে তার জ্বলন্ত প্রমান আজকের ২০১২ সালের বাংলাদেশ।যদিও অনেক দেশে থ্রীজি নিয়ে ধর্মীয় বাঁধাও এসেছে, তবে বাংলাদেশের অবস্থা আর কোথাও হয়নি।কারন ২০০৯ সালের পর আজ বিশ্বের আর কোন দেশে থ্রীজি রোলআউট বাকি নেই।অথচ এই থ্রীজি নিয়ে গত সাড়ে তিন বছর যাবৎ, ডিজিটাল বাংলাদের হেডকোয়ার্টার তথা ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয়, দেই দিচ্ছি করে, দিচ্ছে না।একদিন যখন যা দিবে - আমি বলে গেলাম - পুলিশে যেমন ছাত্রছাত্রীদের বলে লেখাপড়া তর *** দিয়া ভইরা দিমু, তেমনি ৩-জি তেমনি জনগণের *** ভইরা দিব নে।

থ্রীজি'র ইতিহাসঃ বিশ্ব সর্বপ্রথম ১-জি প্রজন্মের মোবাইল নেটওয়ার্ক স্থাপন হয়েছিল জাপানে, ১৯৭৯ সালে।এটি ছিল এ্যানালগ মোবাইল টেলিকমিউনিকেশন।১৯৯১ সালে ২-জি বা প্রথম ডিজিটাল মোবাইল নেটওয়ার্ক ফিনল্যান্ডে শুরু হয়।বাংলাদেশে আমরা মূলত ১৯৯৭ সালে প্রথম ২-জি মোবাইল নেটওয়ার্ক স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছিলাম।বিশ্বের প্রথম কমার্শিয়াল থ্রিজি নেটওয়ার্ক চালু হয়ছিল, ১ অক্টবর, ২০০১ জাপানে।পরবর্তী দুই তিন বছরের মধ্যেই বিশ্বের ধনী দেশগুলো তাদের মোবাইল অপারেটরদের নেটওয়ার্ক ৩-জিতে আপগ্রেড করার জন্য চাপ দেয়-কোথাও কোথাও বিনামূল্যে, নেটওয়ার্ক সম্পন্ন করার জন্য সময় বেঁধে দেয়।কেননা তারা জানতো, যেই ব্রডব্যান্ডের জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করে অপটিক ক্যবলে স্থির লোকেশনে সংযোগ নিতে হয়, তা মোবাইলে, বাতাসের ভেতর দিয়ে পাওয়ার দরজা ছিল এই শতকের অন্যতম আবিষ্কার। যা জনগণ ও রাষ্ট্রকে অলটাইম এক সূত্রে গেথে সর্বোচ্চ স্বচ্ছ নিরাপত্তা, প্রশাসন, বিনোদন, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড, শিক্ষা, স্বাস্থ সহ অসংখ্য আশির্বাদ ঘরে ঘরে নাগরীকের পকেটে পকেটে পৌছে দিতে পারবে।উল্লেখ্য ২০০৩ সালে থ্রীজি ওপেন করার পর ডেনমার্কে হিসেব করে দেখা হয়েছে, থ্রীজি আসার পর রাজধানীতেই তাদের রোড ট্রাফিক ২৫% কমে গেছে, কারন মানুষের কাজের জন্যই মোবিলাইজেশন, ব্রডব্যান্ড ও নেটে টাকা লেনদেনের সুবিধা মানুষকে তার প্রয়জনীয় অসংখ্য কাজে মোলিকিউল মোবিলাইজেশন বাদ দিয়ে বিট মোবিলাইজেশনে আরও সহজে ও স্বল্প ব্যায়ে করতে দিয়েছে।এদিকে ২০০৬ থেকে ২০০৭ সালের দিকে এসে এই সব ৩জি নেটওয়ার্ক আরও আপগ্রেড করে আরও বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন ৩.৫-জি বা ইউনিভার্সাল মোবাইল টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম - UMTS, হাই স্পীড ডাউনলিংক প্যাকেট এ্যাক্সেস' HSDPA তে আপগ্রেড করেছে।বহু দেশ এরই মধ্যে ফোরজি-4G নেটওয়ার্ক স্থাপন করে ফেলছে।এ বছর যুক্তরাষ্ট্রে ৫-জি পরীক্ষা করার পরিকল্পনা আছে।শুধু যে ধনী দেশেগুলিতেই মোবাইল নেটওয়ার্কের এই আাপগ্রেডেশন হয়েছে তাই নয়, থ্রীজি'তে আপগ্রেডেশনের এই অনুমোদন আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশগুলো সহ তৃতীয় বিশ্বের অধিকাংশ দেশে ২০০৮ সালের মধ্যে দিয়ে দিয়েছে।যেমন ৯ জুলাই ২০০৮ বার্মায়, ৬ মে ২০০৮ ভুটান, মে ২০০৭ নেপালে, জানুয়ারী ২০০৮ পাকিস্তান, ফেব্রুয়ারী ২০০৮ মালদ্বীপ, ৭ মার্চ ২০০৮ উগান্ডা, জুন ২০০৬ শ্রীলংকা, ২৮ এপ্রিল, ২০০৯ মঙ্গোলীয়া, অক্টবর, সর্বশেষ ভারত ২০০৯ সালে।

বাংলাদেশের জন্য থ্রীজি কেন সর্বশেষ সুযোগঃ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট ছারা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়া দূরে থাক বরং ডিজিটাল বাংলাদেশের কাজ আরাম্ভ করারই অসম্ভব।এই সত্য মাথায় রেখে, বর্তমান সরকারের প্রথম বছরের ব্রডব্যান্ডের প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্তগুলো নেয়া উচিত ছিল।তেমনই কথা ছিল, ২০০৯ সালে সজিব ওয়াজেদ জয় এর ডিজিটাল বাংলাদেশ ভাষনে বলেছিল, (ইউটিউবে পাবেন) বাংলাদেশের আইনে ব্রডব্যান্ডের সংঙ্গা "Any connection that gives 256 Kbps or more Bandwidth is Broadband." যা এ্যাবসার্ড, সর্বনিম্ন ১ এমবিপিএসকে বলা হবে ব্রডব্যান্ড।এক বছরের মধ্যে বাংলাদেশে ব্যান্ডউইথ সমস্যা থাকবে না।আরও বলেছিলে আমাদের লাস্টমাইল ব্রডব্যান্ডে ৯০ ভাগ হবে তাড়বিহীন।তিনি সঠিক কথাই বলেছিলেন।কিন্তু সেদিন থেকে ক্ষতি ছারা এক ইঞ্চিও আগায়নি আমাদের অবকাঠামো, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী, আমলাদের কূটনীতি, অদক্ষতা, অযোগ্যতার প্যাচে পরে।মূলত গণব্রডব্যন্ড ছাড়া কেউ যদি ডিজিটাল সোনার বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখা, তবে বুঝতে হবে সে মিথ্যা কথা বলছে, আপনাদের সাথে প্রতারনা করছে।সত্যি কথা বলতে কি, বিশ্বের কোন দেশের ইন্টারনেট ইউজেরকে বাধ্য হয়েই আজও ন্যারোব্যন্ড নেট ইউজ করতে হয়, জনবসতি আছে তেমন অঞ্চল পাওয়া দূরুহ হবে। আর এদিকে ২০০৯ সালে এসে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষনা দিলেও গাধার রাজ্যে এর প্রথম বাক্যটিই উপলব্ধিতে আসেনি যে, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের পরে ব্রডব্যন্ডই হবে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির বিশ্বের জনগণের অন্যতম মৌলিক অধিকার।ব্রডব্যন্ড নেটওয়ার্কের জন্য পৃথিবীতে সাধারনত দুইটি মৌলিক পথ আছে।এক ফাইবার অপটিক ক্যাবল নেটওয়ার্ক, দুই ব্রডব্যান্ড তরঙ্গ ব্যবহার করে তাড়বিহীন ব্রডব্যান্ড, যার মধ্যে- থ্রীজি, ওয়াইম্যাক্স অন্যতম।কেলিফোনিয়া শহরের টেলিফোন সিস্টেমের ৬ এমবিপিএস অপটিক ক্যাবল স্থাপনের মাধ্যমে ওয়ার্ড ব্রডব্যান্ডের যাত্রা শুরু হলেও, সেদিন দেখলাম কানাডায় ৩০০ জিবিপিএস অপটিক ক্যাবল স্থাপন হচ্ছে।৬০ এর দশকে এশিয়ার সবচেয়ে দরিদ্র যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশ দক্ষিন কোরিয়া তাদের প্রথম ন্যাশনাল অপটিক ক্যাবল নেটওয়ার্ক বাস্তবায়ন করেছিল ১৯৮৬ সালে।নব্বুইয়ের দশকে দুই বার ও গত দশকে একবার আপগ্রেড করে ৫ কোটি জনগণের দেশটিতে ২০০০ সালের মধ্যেই প্রতিটি হোল্ডিং, বাসাবাড়ি, অফিস অপটিক ক্যাবলে তাদের টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযুক্ত করে ফেলেছিল।আর এখানে আমরা এখনও সেই আদিকালের টিএ্যান্ডটির, যার সারাদেশে সর্বোচ্চ ১০% গ্রাউন্ডও কভারেজ নেই, কপার তাড়ের টেলিফোনি সিস্টেম।এর বর্তমান ও ভবিষ্যৎ আমাদের হাতের উল্টো পিঠের মত স্পষ্ট।এই রকম একটা সিসটেমকে আমরা আগামী ১০০ বছরেও ফাইবার অপটিক ক্যাবলে রিপ্লেইস করে জেলা, উপজেলা হাওড়, বাওড় ও পাহাড়ে জালের মত নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে দেব, সেরকম স্বপ্ন দেখা ঘুমের মধ্যেও উচিত হবে না, দোষ হয়ে যাবে।দেখুন না, গত সাড়ে তিন বছর ধরে বিটিসিএল যে ১৯৯৪ সালের এডিএসএল প্রযুক্তির কথা বলছে, তা দিয়ে এই মুহুর্তে সারা দেশে শুধু জেলায় সর্বোচ্চ ৩০০০ সংযোগ দিতে পারবে।২০০৮ সালে গত কেয়ারটেকার সরকার আমলে, অপটিক হোম নামক একটি মাত্র কোম্পানীকে সারাদেশে অপটিক ফাইবার স্থাপনের লাইসেন্স দেয় হয়, পরবর্তীতে বর্তমান সরকার আরও একটি লাইসেন্স দেয় কিন্তু এই অপটিক ক্যাবল নেটওয়ার্ক জনগণ সংযোগ পাবে না, যা সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার সংযোগের নেটওয়ার্ক হবে ও জনগণকে ডিজিটাল শাসন, শোষন করতে সারাদেশের ৫০০০ ইউআইসি ও ৬৪ জেলা প্রশাসনকে সংযুক্ত করবে।এই ডেডিকেটেড কয়েক এমবিপিএসের লাইন গত সাড়ে তিন বছরে ঢাকায় ৬০ কিলোমিটার ও ৩০ টি ইউআইসি'র কাছাকাছি পৌছেছে, এখন বুঝুন কোথায় আছি আমরা আমাদের ন্যাশনাল অকটিক ক্যাবল বেকবোন তৈরীতে ?

ওয়াইম্যাক্সের কথা বলতে গেলে আরেক করুন কাহিনী।২০০৮ সালে আমরা যেই ওয়াইম্যাক্স রোল আউট করলাম শুধু সঠিক নীতিমালার কারনে তা আজও পুরো ঢাকার ৩০% কভার করতে পারেনি।এই ব্রডব্যেন্ড সুনামগঞ্জের শাল্লায় পৌছাতে পুরো একবিংশ শতাব্দী লেগে যাবে ! ২০০০ সালে জাপানে, প্রথম চালু হয় তাড়বিহীন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিবহনে ওয়াইম্যাক্স-Wimax প্রযুক্তি ৮ বছর পর পরীক্ষা ও অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশে, আমরা ওয়াইম্যাক্স-Wimax লাইসেন্স দেয়ার সময়ই সেই সোনার ডিম দেয়া হাঁসের মত একবারেই জবাই করে সব খেয়ে ফেলতে চেয়েছিলাম।পৃথিবীর সর্বোচ্চ মূল্যে ওয়াইম্যাক্স লাইসেন্স বিক্রি করে সেদিন বিটিআরসির চ্যায়ারম্যান আইএমএফ সরকার অনেক লাফঝাপ দিলেও ওয়াইম্যাক্স অবকাঠামো যে গড়ে ওঠার অংকুরেই ধ্বংস করেছি তা সেদিন বুঝতে না পারলেও আজ বোঝা উচিত।অপটিক ক্যাবলহীন একটা দেশে ওয়াইম্যাক্স যেখানে আশির্বাদ হতে পারতো তা বোঝা হয়ে গেছে। আমরা বরং এখন লাইসেন্স ফ্রি ওয়াইম্যাক্স ঘোষনার কথা চিন্তা ভাবনা করছি, তাতে এই প্রযুক্তি আমাদের কিছুটা কাজে লাগবে।

এবার আসা যাক থ্রীজিতে, যার আবির্ভাব মোবাইল কমিউনিকেশনে যতনা প্রভাব ফেলেছে তারচেয়ে বহুগুন বেশি প্রভাব ফেলে ইন্টারনেটে জগতে।এ্যন্ড ইউজারের হাতে মোবাইল ব্রডব্যন্ড বা ইউনিভার্সাল ব্রডব্যন্ড পেয়ে ইন্টারনেট জগতে তোলপার হয়ে গেছে গত এক দশকে।ওয়েব জগতে একের পর এক ঢুকে যাচ্ছে মানুষের দৈনন্দিন কর্মকান্ডের অসংখ্য বিষয়।বাংলাদেশের মত একটা দেশেও যখন মাত্র পনের বছরে মোবাইলফোন ব্যবহারকারী ৬০% ছারিয়ে গেছে সেখানে সেই মোবাইলে ব্রডব্যান্ড চলে আসায় উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো প্রতিযোগীতা করে নাগরীককে মোবিলাইজেশন ফ্রিডম দিয়ে দিয়েছে।অথচ বাংলাদেশের এক্সজিসটিং টেলিকমে ব্রডব্যান্ড ইনফ্রাস্টাকচার বলে যেখানে কিছু নেই ওয়ার্লেস কানেক্টিভিটি যেখানে নিয়তি।এত অল্প গ্রাউন্ড টাওয়ারিং করে বিশ্বে আর কোথাও যেখানে এত বেশি মানুষ পাবে না (ভাবুন অষ্ট্রেলিয়ার আড়াই কোটি জনগণের জন্য মোবাইল নেটওয়ার্কিং করতে কত বর্গকিলোমিটার টাওয়ারিং করতে লাগে, আরা বাংলাদেশের ১৬ কোটিকে কয় হাজার টাওয়ার স্থাপন ও ব্যবস্থাপনা করতে হয়?)এদেশে ওয়ালেস কানেক্টিভিটি শুধু অপরিহার্যই না, বাস্তবতাও বটে, মোবাইল নেটওয়ার্ক ছাড়া অন্য কোন নেওয়ার্কে যে কোন লোকেশনে ব্রডব্যান্ড দেয়া আগামী প্রায় ১০০ বছরেও অবাস্তব।অন্যান্য দেশ যেখানে থ্রীজি, ওয়াইম্যাক্স, অপটিক ক্যাবল সবগুলো পথেই তাদের ন্যাশনাল ব্রডব্যান্ড বেকবোন গড়ে তুলেছে সেখানে আমাদের ইউজার এন্ডে ব্রডব্যান্ডের এই এক মাত্র মাধ্যম কে এত বছর উন্মুক্ত না করে দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রদ্রোহীতা মূলক অপরাধ করেছে।যেকোন বিশুদ্ধ রাষ্ট্রে এর সাজা প্রকাশ্য মৃত্যু দন্ড হতে বাধ্য।কারন ১৫০ মিলিয়ন নাগরীকের মুক্তির সবেধন নীলমনি দশ বছর আগের টেকনোলজী থ্রজি নেটওয়ার্ক গত পাঁচ বছর যাবৎ আমরা দেই দিচ্ছি করছি।প্রথমে সারাদেশ তাড় দিয়ে কানেক্টিভিটির কথা আপনার সামনে যদি কেউ বলে, নির্দিধায় তাকে একটা থাপ্পর মেরে বলতে পারেন /মোবাইল/ওয়ারলেস ব্রডব্যন্ড'ই হবে বাংলাদেশের ডমেস্টিক ব্রডব্যন্ড বেকবোন।ইমিডিয়েট ও প্রথম উপায় একটাই, থ্রীজি।

কখন বাংলাদেশ থ্রীজির জন্য ম্যাচিউর হয়েছিলঃ সে হিসাব করলে দেখা যাবে ২০০৬ সালের মে মাসে বাংলাদেশ যখন ৩০০ কোটি টাকা ব্যায়ে প্রথমবারের মত সিমিউই-৪ সাবমেরিন ক্যবলে, ৮ জিবিপিএস সংযোগে, যুক্ত হয় - সেই সময়টাই ছিল বাংলাদেশে থ্রীজি রোল আউটের উপযুক্ত ও অবশ্যই করনীয়।এর আগে আসলে, যেকথা না আসলেও একই কথা ছিল -কেননা আগে ব্যন্ডউইথই ছিল।আবার তখন সংঙ্গে সংঙ্গে আমরা থ্রিজি দিয়ে দিলে ১৯৯৩ সালে সাবমেরিন ক্যবলে সংযুক্ত না হয়ে দেশের যে ক্ষতি হয়েছিল তা সর্বোচ্চ তিন বছরে কভার করে নিতে পারতাম।আপনাদের মনে থাকবে ওয়ারীদ বাংলাদেশে ৩-জি'র আওয়াজ তুলেছিল ২০০৪ সালেই।ওয়ারিদকে মোবাইল নেটওয়ার্ক স্থাপনের লাইসেন্সের সাথে থ্রী-জি অনুমোদনের ফাইল গেলে সেদিন কেবিনেট মিটিংয়ে সকল বৃদ্ধরা এর বিপক্ষে জোর দাবী তুলেছিল।যার শানেনজুল ছিল, "এটা দিলে আমাদের ইয়ং জেনারেশন নষ্ট হয়ে যাবে, ওরা ভিষন পাপ করবে, ফ্রি সেক্স হইয়ে যাবে, ঘরে বসে ওরা একে অন্যের নিজেদের ব্লুফিল্ম দেখবে।কোরান, হাদিস সব ঘেটে ঐ মিটিংয়েই ইসলামে ৩জি'র অনুমোদনের কোন সুযোগ নেই তা প্রমান হয়ে থাকতে পারে।এখনও এই নীতিই চলমান, সেই সাথে যুক্ত হয়েছে মহা দুর্নীতির পনের সালা পরিকল্পনা।

থ্রীজি নামে আমরা কি পেতে চলেছিঃ শুনা যাচ্ছে এ বছর ডিসেম্বরের মধ্যে সীমিত পর্যায়ে ডিশিওর আসছে থ্রীজি।আমারা একটা ভবিষ্যৎবানী করে দিলাম, পুলিশে যেমন বলে লেখাপড়া তর *** দিয়া ভইরা দিমু, ৩জি তেমনি জনগণের *** ভইরা দিব নে।বাংলাদেশে থ্রীজি আসলেও নেটের গতি আসবে না কারন তরঙ্গ দিবে না।১৯৯৩ সালের সাবমেরিন ক্যবলে সংযুক্ত না হয়ে আমরা পারকেপটা যেরকম মোটা বাশ খেয়েছিলাম তোমাদের যাবে মোটা বাঁশ ঝাড় পার নাগরীক।কারন রেডি নীতিমালাটা সরকারের চার বছর খেটেখুটে যে থ্রীজি নীতিমালা প্রস্তাব করেছে তা চালাতে ওয়াইম্যাক্স এর দশাই হবে।নীতিমালায় থ্রীজি এর এক মেগাহার্স তরঙ্গের নিলামের সর্বনিম্ন দর ধরা হয়েছে ১৫০ কোটি টাকা।সর্বোচ্চ ডাকে ৪টি অপারেটরকে লাইসেন্স দেয়া হবে -যা ৩ টি হওয়া সর্বত্তম ছিল।প্রাথমিক নেটওয়ার্কের প্রত্যেককে ১০ মেগাহার্স করে তরঙ্গ নিতে হবে।এত বছর পরে আমাদের থ্রীজি পলিসিতে, প্রতিটি অপারেটরকে নূন্যতম ১৫০০ কোটি টাকার শুধু তরঙ্গই যদি কিন্তে হয়, তাহলে সেই তরঙ্গে আমাদের কাছে তারা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট কত দামে বেঁচবে ?গরীবের ইন্টারনেট এ্যাক্সেস নিষিদ্ধ!অথচ আমাদের দরকার সবার জন্য ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট।আমরা যদি শুরুতে প্রস্তাবিত থ্রীজি নীতিমালায় আর সব ঠিক রেখে, শুধু প্রতি মেগাহার্স স্পেক্ট্রামের ফি ১৫০ কোটির বদলে ১ টাকা ৫০ পয়সা করে দেই এবং পরবর্তীতে নীতিমালায় ধরা ৫% প্রফিট শেয়ারিং এর পরিবর্তে ১৫% প্রফিট শেয়ার করি তাহলে একদিকে যেমন দ্রুত নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে পারবো, ইউজার লেভেলে সর্বনিম্ন দামে থ্রীজি ইন্টারনেট দিতে পারবো আবার তিন বছরেই আরও বেশি রাজস্ব পাব।সরকার যদি ২০০৯ সালে থ্রীজি ফ্রি ওপেন করেদিত তাহলে এত দিনে এরচেয়ে বেশি রাজস্ব আয় করতে পারতো।এবং এর ফলে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের দাম রিক্সাওয়ালার হাই ইস্কুলে পড়া ছেলেটিরও নাগালে চলে আসবে।

এখন করনীয়ঃ গণব্রডব্যন্ডের আগে কেউ যদি ডিজিটাল সোনার বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখায় তবে বুঝতে হবে সে মিথ্যা কথা বলছে।গণশুনানী ছাড়া থ্রীজি পলিসি হয়ে গেলে অসম্ভব ক্ষতি হয়ে যাবে, জাতি কে আগেই সতর্ক করছি রেডি থাকতে, কারন এবারের বাঁশ সাবমেরিন ক্যাবলের চেয়ে অনেক মোটা।এবং অন্তত দশ বছর ভুগতে হবে - কারন আগামী পনের বছরেও বাংলাদেশে থ্রীজি ছাড়া অন্যকোন টেকনোলজি দিয়ে দেশের প্রথম ও একমাত্র ন্যাশনাল ব্রডব্যান্ড ব্যাকবোন গড়া অসম্ভব ও অবাস্তব, সে ক্যাবলই বলুন আর ওয়ার্লেস ওয়াইম্যাক্সই বলুন।আর ন্যাশনাল ব্রডব্যান্ড ব্যাকবোন ছাড়া আধুনিক বিশ্বে বাংলাদেশ একটি বিচ্ছিন্ন ব্লাকহোলে পরিনত হবে, আপনারা হবেন তার দুর্গত নাগরীক।

কোন মন্ত্রীর কাজ ছিল এসবঃ সড়ক যোগাযোগের জন্য সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রনালয়, নদী পথের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রনালয়, কৃষির জন্য কৃষিমন্ত্রনালয়, ভূমি বললে ভূমিমন্ত্রনালয় আছে।তেমনি ডিজিটাল বাংলাদেশ বললে সড়ক, নদী, কৃষি, ভূমির চেয়ে হাজার গুন আধুনিক, সর্বশেষ জ্ঞান চর্চার তীর্থ ভূমি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয়।কিন্তু সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষনা দিয়েও আবুল, শাজাহন, মতিয়ার মত আধুনিক জ্ঞানে ব-কলম জনাব রাজি উদ্দিন রাজুকে বসালেন এই মন্ত্রনালয়ে।মোবাইলের নম্বরটাও সেইভ করতে পারে না, ফোনবুক থেকে নাম বের করে কল দিতে জানে না এরকম একটা জংলি ছাগলকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয়ে বসিয়ে সরকার জনগণের সাথে শুধু প্রতারনাই করেনি।দেশের ১৬ কোটি মানুষের অপুরনীয় ক্ষতিও করেছে যার ফল জনগণই ভোগ করছে ও করবে।এই অপদার্থ দুষ্টু লোকের হাতে পরে এটুআই থেকে শুরু করে প্রতিটি মন্ত্রনালয়, দপ্তরের সকল ডিজিটাল ইনিশিয়েটিভ আজ ব্যার্থতা এবং সময় ও অর্থের অপচয় ছারা কিছু না।এর জন্য শত ভাগ দায়ি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয়।এর মত বাই ফেইস একটা ডিজিটাল অপদার্থকে যারা ডিজিটাল বাংলাদেশের মেরুদন্ড গড়ার কাজ দেয় তাদের নিয়তে আমাদের সন্দেহ ঢুকে গেছে।একে ডিজিটাল বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বানানোর ভেতর দিয়ে শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মানের কু-কমিটম্যান্ট স্পষ্ট ফুটে উঠেছে এবং জনাবও দেশকে বাঁশ দিয়ে যাচ্ছে গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত, পুরো বাঁশ ঝাড় তুলে।

 

নরসিংদীবাসী যেমন লোকমান হত্যার জন্য রাজি উদ্দিন রাজুকে কোন দিন ক্ষমা করবে না তেমনি দেশবাসি তাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ স্বপ্ন ভংঙ্গের জন্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীকে কোনদিন ক্ষমা করবে না।

বাংলা সম্পূর্ন লেখা-  সহজপৃথিবী'র বাংলাব্লগিং https://www.facebook.com/openbd

Level 0

আমি rafin3। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 1 টি টিউন ও 1 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

Level 0

ah jotils hoisae khub khusi hoilam

100000% digbajir banga desh

Level 0

Hai-re Bangladesh-er montiri…………………..

অসাধারন লিখনি।
চলুন না সঙ্ঘবদ্ধ হই, আন্দোলন গড়ে তুলি হাতে হাত রেখে রাজপথে।

যা লেখছেন না ভাই । চরম হইছে ।

দিলেন তো ভাই মন টা খারাপ কইরা।এত দুঃখ কষ্ট কোথায় রাখি বলেন তো ভাই

সত্যি বলছি মনটাই খারাপ হয়ে গেল.,, 🙁

ভালই বলছেন—-
আবুল, শাজাহন, মতিয়ার মত আধুনিক জ্ঞানে ব-কলম জনাব রাজি উদ্দিন রাজুকে বসালেন এই মন্ত্রনালয়ে।মোবাইলের নম্বরটাও সেইভ করতে পারে না, ফোনবুক থেকে নাম বের করে কল দিতে জানে না এরকম একটা জংলি ছাগলকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রনালয়ে বসিয়ে সরকার জনগণের সাথে শুধু প্রতারনাই করেনি।

Level 0

অনেক সুন্দর হইছে… টিউনারকে অনেক ধন্যবাদ।

ভাই আমাদের দেশের সব লোকের একটা বদ সভাব হয়ে গেছে যে বাংলাদেশ কে না ভালবেশে রাজনীতি দলকে ভালবাসি।

খুব সুন্দর লিখা হয়েছে, তবে আমাদের সরকারের বিরুদ্ধেও আন্দোলন করে কনো লাভ নেই। কারণ এত চেষ্টা করেও যেমন আমরা পেপাল আনতে পারি নি তেমুনি ৩জি ও সেম অবস্থা।

Khub sundor tune koracen.Onik donnobad.

এই Son-of-the-bitch সরকারের তো কোন কাজ নাই। শুধু মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমাদের মন নষ্ট করে। ভাই আমি ২০০৯ সালের এপ্রিল মাস থেকে মোবাইল শুধু কিনেই যাচ্ছি কিন্তু ৩জি আসে না।

সুন্দর ! …………………আমার ৩জি সেটটা মনেহয় আর কাজে লাগবে না !!!

Ei sorkarer sobkichu shudhu namei digital.

আমাদের মাননীয় টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, এপ্রিল (২০১২) এ থ্রি-জি এবং ডিসেম্বরের মধ্যে ৪-জি চালু হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় জুন মাস শেষ হতে চলল তবুও থ্রি-জির মুখ দেখতে পেলনা দেশের মানুষ। এতে প্রতিয়মান হয়যে মন্ত্রী-আমলারা সাধারন মানুষের কথা চিন্তা করেনা। তারা চিন্তা করে কিভাবে নিজের আখের গোছানো যাই, কারণ সময় খুব কম হাতে!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!

Level 0

WTF!!!
এ কোন দেশে বাস করি আমরা!!! যেখানে বলা হয়ে থাকে বাংলাদেশ হল এমন একটি দেশ যেখানে মানুষ খেতে পায় না কিন্তু টেকনোলজিতে এগিয়ে আছে একটি 1st world country এর মত। এই কি তার নমুনা??? আপনার কথায় অনেক কষ্ট পাইলাম। অনেক আশা ছিল এই ৩জি নিয়ে…..
লেখা+++++++++++
আরও লেখা চাই

যা লেখছেন। চরম হইছে ।আরও লেখা চাই।

এগিয়ে যান আমরা আছি। অনেক ধন্যবাদ।

Level 0

খুব কষ্ট হয় যখন মনে হয় এই দেশ এ জন্মে মনে হয় পাপ করেছি । আশার স্বপ্ন দেখতে দেখতে অন্ধকারের মাঝে ডুবে যাচ্ছি । 🙁

Level 0

ভাই যে দেশের পাতি নেতা থেকে সুরু করে প্রধান মন্ত্রী পর্যন্ত চোর সে দেশের জনগনের উন্নতি ও সুবিধার কোন দরকারই নাই তাদের !!
নিজের পেট ভরাতেই তারা ব্যস্ত………

ভাই চলেন ৩জি এর জন্য আন্দোলন করি facebook এর মাদ্ধমে । আমরা ত আর সরকারের সামনে জেতে পারব না ।

ভাই শত কোটি ধন্যবাদ। এত ভাল টিউন যে আপনাকে স্যালুট।