বর্তমান সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে মিডিয়া জগতে সবথেকে বেশি রাজত্ব করছে ভিডিও কনটেন্ট। সেই সাথে তাল মিলিয়ে বাড়ছে স্ক্রিপ্ট রাইটার দের চাহিদা। অভিজ্ঞ অনভিজ্ঞ যে কেউ চাইলেই এখন স্ক্রিপ্ট রাইটার হিসেবে কাজ করতে পারে। বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পাবলিশ করার জন্য যে ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করা হয় তার পেছনে অবদান রয়েছে হাজারো স্ক্রিপ্ট রাইটার দের। সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণকে কাজিয়ে লাগিয়ে আপনিও আপনার প্রতিভা তুলে ধরতে পারবেন হাজারো দর্শকের সামনে।
মনে প্রশ্ন জাগতে পারে ভিডিও কনটেন্ট ক্রিয়েটর দের সাথে স্ক্রিপ্ট রাইটার দের সম্পর্ক কী? আর স্ক্রিপ্ট রাইটিং মানে কী? কীভাবে স্ক্রিপ্ট রাইটিং করে আয় করা যায়? আপনাদের এই সকল প্রশ্নের উত্তর নিয়ে সাজানো হয়েছে আজকের এই টিউনটি। আশাকরি প্রতিভা বিকাশের নতুন এক দিগন্ত খুঁজে পাবেন আজকের টিউনে।
স্ক্রিপ্ট রাইটিং সম্পর্কে জানার আগে চলুন আমরা স্ক্রিপ্ট সম্পর্কে জেনে নেই। যে কোনো ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করার আগে টেক্সট কনটেন্ট এর মাধ্যমে যে নীলনকশা তৈরি করা হয় সেটাই মূলত স্ক্রিপ্ট। ভিডিও কনটেন্ট বলতে বোঝানো হচ্ছে সিনেমা, নাটক, শর্টফিল্ম, কার্টুন ভিডিও, ফানি ভিডিও, ডকুমেন্টারি ভিডিও ইত্যাদি। অর্থাৎ ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে যা কিছু আমাদের সামনে তুলে ধরা হয় তা-ই ভিডিও কনটেন্ট। আর ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করার জন্য যে পূর্ব প্রস্তুতি নেয়া হয় সেটাই মূলত স্ক্রিপ্ট।
ভিডিও কনটেন্ট এর মূল ঘটনা বা গল্প আগে লিখে নিতে হয়। সেই সাথে ঘটনার ধারাবাহিকতা, প্রতিটি চরিত্রের ডায়ালগ, পারিপার্শ্বিক পরিবেশ কেমন হবে তার সবকিছুই আগে থেকে সাজিয়ে নিতে হয়। এরপর লিখিত ধারা অনুযায়ী একে একে ভিডিও শুট করা হয়। এই যে একটা ভিডিও কনটেন্ট এর পুরো বিষয়বস্তু টেক্সট আকারে পরিকল্পিতভাবে সাজানো হয় এটাই মূলত স্ক্রিপ্ট। পরিকল্পিত স্ক্রিপ্ট ছাড়া কখনোই একটি পূর্ণাঙ্গ ভিডিও কনটেন্ট নিখুঁত ভাবে তৈরি করা সম্ভব না।
ভিডিও কনটেন্ট এর জন্য নিজের সৃজনশীল চিন্তাভাবনা কাজে লাগিয়ে একটি গল্প, কাহিনি বা বিষয়বস্তু টেক্সট আকারে লেখাকে স্ক্রিপ্ট রাইটিং বলে। একটি নাটক বা সিনেমা বা ব্লগ ভিডিওর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কী কী ঘটবে, কখন কী হবে, কোন চরিত্রের কথোপকথন কী হবে তা সবকিছু স্ক্রিপ্ট রাইটিং এর অন্তর্ভুক্ত হবে। যারা স্ক্রিপ্ট লেখে তাদেরকে বলা হয় স্ক্রিপ্ট রাইটার। স্ক্রিপ্ট রাইটিং এর জন্য রাইটারকে মিডিয়া জগৎ সম্পর্কে মোটামুটি ভালো ধারণা রাখতে হবে। দর্শক কী চায়, দর্শকের মধ্যে কোন ধরনের গল্প হিট হবে, কোন গল্পের গ্রহনযোগ্যতা বেশি সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা রেখে স্ক্রিপ্ট রাইটিং করতে হয়।
মোবাইল স্ক্রিন বা টেলিভিশন স্ক্রিনে কিংবা সিনেমা হলে আমরা যে ভিডিও দেখি এটি মূলত অভিনয় মাত্র। এই স্ক্রিনে আমরা কী দেখব তা ঠিক করে একজন স্ক্রিপ্ট রাইটার। স্ক্রিপ্ট এর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরোটাই লেখা হয় দর্শকদের উদ্যেশ্য করে। বর্তমান সময়ে যে হারে ভিডিও কনটেন্ট এর চাহিদা বাড়ছে তাতে স্ক্রিপ্ট রাইটিং এর চাহিদা দিন দিন বাড়বে বৈ কমবে না।
স্ক্রিপ্ট রাইটিং শুরু করার জন্য প্রথমেই আপনাকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে আপনি কোন বিষয়ে স্ক্রিপ্ট লিখবেন। মুভি স্ক্রিপ্ট লিখবেন নাকি নাটকের স্ক্রিপ্ট লিখবেন নাকি সোশ্যাল মিডিয়ায় পাবলিশ করার জন্য যে কোনো ভিডিও কনটেন্ট এর স্ক্রিপ্ট লিখবেন৷ তবে ক্যারিয়ার এর শুরুতেই মুভি স্ক্রিপ্ট এর দিকে না আগানোই ভালো। প্রথমে আপনি ইউটিউব ভিডিও স্ক্রিপ্ট, কার্টুন ভিডিও স্ক্রিপ্ট কিংবা ডকুমেন্টারি ভিডিও স্ক্রিপ্ট লিখতে পারেন৷ কেননা ছোট ছোট ভিডিওর জন্য স্ক্রিপ্ট লেখা তুলনামূলক সহজ৷
সাধারণ ভাবে সোশ্যাল মিডিয়া স্ক্রিপ্ট দিয়েই স্ক্রিপ্ট রাইটিং এর জার্নি শুরু করা উচিত। কোন ধরনের স্ক্রিপ্ট লিখবেন তা সিলেক্ট করার পরে ঐ বিষয়ে আপনাকে কিছুটা রিসার্চ করতে হবে৷ ধরুন আপনি কার্টুন ভিডিও স্ক্রিপ্ট লিখবেন, এক্ষেত্রে আপনাকে কয়েকটি কার্টুন স্ক্রিপ্ট পড়ে নিতে হবে অথবা কার্টুন ভিডিও দেখে নিতে হবে। এতে করে আইডিয়া জেনারেট করা সহজ হবে। তারপর আপনি আপনার মতো করে একটি গল্প সাজাতে পারবেন৷
অনেক সময় গল্প বা কাহিনি খুঁজে পেতে স্ক্রিপ্ট রাইটার দের বেশ বেগ পেতে হয়। এক্ষেত্রে আপনি আপনার পারিপার্শ্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে গল্প সংগ্রহ করতে পারেন। এরপর ঐ গল্পকে কিছুটা মডিফাই করে নিজের মতো একটি চমৎকার গল্প বানিয়ে নিতে পারবেন। তার পাশাপাশি ঘটনাপ্রবাহ কেমন হবে তার সাথে মিলিয়ে টাইমিং সেট করতে হবে। সাধারণত A4 সাইজের এক পৃষ্ঠা লেখায় ১ মিনিটের ভিডিও Duration হয়।
সোশ্যাল মিডিয়া সাইটের সাধারণ ভিডিও গুলো সাধারণত ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে হলে বেশ জনপ্রিয়তা পায়। তাই সময়ের সাথে বিবেচনা করে স্ক্রিপ্ট এর দৈর্ঘ্য কতোটুকু হবে তা আপনি নিজেই ঠিক করতে পারবেন৷ নাটকের স্ক্রিপ্ট এর জন্য ৪০ থেকে ৫০ পৃষ্ঠা আর মুভি স্ক্রিপ্ট হলে তা ১০০ থেকে ১৫০ পৃষ্ঠার মধ্যে শেষ করতে হবে। স্ক্রিপ্ট এর মধ্যে বর্ণনার থেকেও বেশি ক্যারেক্টার এর ডায়ালগ এর ওপরে বেশি প্রাধান্য দিতে হবে।
স্ক্রিপ্ট হুবহু গল্পের মতো না লিখে সাধারণ কিছু বর্ণনা দিয়ে ডায়ালগ গুলো সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে হবে। যাতে একজন ডিরেক্টর থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সকলেই আপনার স্ক্রিপ্ট পড়ে পুরো বিষয়টি চোখের সামনে দেখতে পায়। স্ক্রিপ্ট এর মধ্যে ইমোশনাল টাচ রাখবেন এবং শেষ পাতে বাজিমাত করার চেষ্টা করবেন। অর্থাৎ শেষের ঘটনা এমন রাখবেন যাতে করে দর্শক আপনার স্ক্রিপ্ট থেকে তৈরি ভিডিও অনেক লম্বা সময় ধরে মনে রাখতে পারে। হয় কোনো শিক্ষনীয় ম্যাসেজ থাকতে পারে, কিংবা ট্রাজেডিক ঘটনা অথবা অকল্পনীয় কিছু যা দর্শক কল্পনাও করতে পারেনি।
আসলে স্ক্রিপ্ট লেখার আগে পুরো ঘটনাটি নিজের মাথার মধ্যে বসাতে হবে। চোখ বন্ধ করে যদি আপনি পুরো স্ক্রিপ্ট এর ভিডিও চিত্র কল্পনা করতে না পারেন তাহলে ঐ স্ক্রিপ্ট আপনি যথাযথভাবে টেক্সট কনটেন্টে ফুটিয়ে তুলতে পারবেন না। তাই একটা স্ক্রিপ্ট লেখার আগে আপনাকে ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পনা করে তারপর খাতা-কলম নিয়ে বসতে হবে। পিসি কিংবা ল্যাপটপ নিয়ে বসলে আপনার কল্পনাশক্তি কিছুটা হলেও কমার সম্ভাবনা থাকে।
A4 পেপারে লিখে সেটাকে আপনি ডিজিটাল টেক্সটে রূপান্তর করে ক্লায়েন্ট এর কাছে ডেলিভারি করতে পারবেন। সব সময় একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে স্ক্রিপ্ট এর মূল ফোকাস পাঠক নয় দর্শক। তাই দর্শকদের কথা মাথায় রেখে পুরো ঘটনাপ্রবাহ সামান্য বর্ণনা ও বিস্তার ডায়ালগ এর সাহায্যে তুলে ধরতে হবে। আপনার স্ক্রিপ্ট এর ওপর নির্ভর করে অন্যান্য শিল্পীদের কাজ ভালো অথবা খারাপ হবে।
স্ক্রিপ্ট রাইটিং করে আয় করার শুরুটা হবে একটু চ্যালেঞ্জিং। প্রথমেই কোনো স্বনামধন্য ডিরেক্টর আপনাকে পাত্তা দেবে না। হোক সে ছোটো পর্দার ডিরেক্টর কিংবা বড় পর্দার ডিরেক্টর। এক্ষেত্রে আপনি সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ক্রিপ্ট রাইটিং বা কনটেন্ট রাইটিং গ্রুপে যুক্ত হয়ে কাজ খুঁজতে পারেন৷ এই সকল গ্রুপে ছোট বড় অনেক কনটেন্ট ক্রিয়েটর স্ক্রিপ্ট রাইটার হায়ার করার জন্য Post করেন।
আপনি নিজেও আপনার লেখা ডেমো স্ক্রিপ্ট আপলোড করে কাজের জন্য আবেদন করতে পারেন৷ কোনো ডিরেক্টর বা কনটেন্ট ক্রিয়েটর আপনার ডেমো স্ক্রিপ্ট দেখে পছন্দ করলে তাদের সাথে চুক্তি ভিত্তিতে কাজ করতে পারেন। হয়তো প্রথম দিকে পেমেন্ট একটু কম পাবেন কিন্তু কম পেমেন্টে কাজ করলে কাজ পাবেন অনেক। তাই প্রথমেই ডিমান্ড না বাড়িয়ে যতো বেশি কাজ পাবেন তা হাতছাড়া করবেন না। এভাবে ছোট ছোট কাজ করতে করতেই একদিন স্বনামধন্য ডিরেক্টর দের সাথে পরিচয় হয়ে যাবে।
তাছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায় যারা কোয়ালিটি কনটেন্ট পাবলিশ করে সরাসরি তাদের ইনবক্সে আপনার ডেমো স্ক্রিপ্ট সাবমিট করতে পারেন। আপনার ডেমো স্ক্রিপ্ট ভালো হলে ও গল্প গ্রহনযোগ্য হলে অনেকেই আপনার সাথে কাজ করতে চাইবে৷ একটু টেকনিক না খাটালে আপনি কাজ পাবেন না। তাই স্ক্রিপ্ট রাইটিং এ নিজের ডেভেলপ ঘটানোর পাশাপাশি লিংক বিল্ড আপ করার দিকে মনোযোগ দিন।
এছাড়া বিভিন্ন জব পোর্টাল গুলোতে মাঝে মাঝেই স্ক্রিপ্ট রাইটার দের জন্য জব অফার পাবলিশ করা হয়। তাই বিভিন্ন অনলাইন জব পোর্টালে নজড় রাখতে পারেন। পাশাপাশি নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল এমনভাবে সাজাবেন যাতে আমজনতা আপনার প্রোফাইল ভিজিট করার সাথে সাথেই বুঝতে পারে আপনি একজন স্ক্রিপ্ট রাইটার। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কাজ পেতে হলে পোর্টফোলিও স্ট্রং হওয়ার বিকল্প নেই। উপর্যুক্ত বিষয়গুলো ফলো করলে খুব দ্রুত আপনি স্ক্রিপ্ট রাইটিং কাজ পেয়ে যাবেন।
আশাকরি স্ক্রিপ্ট রাইটিং নিয়ে যাদের প্রশ্ন ছিলো তারা মোটামুটি সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছেন৷ লেখালেখি যাদের প্যাশন তারা স্ক্রিপ্ট রাইটিং কে ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে পারেন৷ শুধু থাকতে হবে নতুন নতুন কাহিনি সংগ্রহের ফ্যান্টাসি ও তা চমৎকার ভাবে ধারাবর্ণনা করার দক্ষতা।
টিউনটি ভালো লাগলে একটি জোসস করে দিন প্লিজ। নতুন সব ইন্টারেস্টিং টেকনিক্যাল টিউন পেতে আমাকে ফলো করে রাখতে পারেন। ধন্যবাদ।
আমি শারমিন আক্তার। শিক্ষার্থী, ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, গাজীপুর। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 1 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 115 টি টিউন ও 29 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 6 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।