(অপ্রয়োজনীয় কোন আর্গুমেন্টে জড়াবেন না- এই শর্তে পড়তে পারেন। আমরা চাই না এই বিষয়ে উম্মাহর মধ্যে ফিতনা হোক)
“হে মুসলমানগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যেন তোমরা তাক্ওয়া অর্জন করতে পার” [আল-কুরআন, ২;১৮৩]।
প্রতি বছর সিয়াম সাধনার প্রারম্ভে, প্রান্তে এবং কুরবানীর ঈদের সময়ে আমরা একটি জাতীয় বিতর্কে লিপ্ত হই। আর এই বিতর্কের মধ্যমনি হলেন, নি:স্বার্থ পরোপকারী হিসেবে সু-প্রতিষ্ঠিত, অকৃপন জড় বস্তু ,পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ। যথাসময়ে না ওঠার দায়ে বরাবরই যিনি অভিযুক্ত।
আরবী তারিখ গণনা করা হয় চাঁদ দেখে। আরবী মাস চাঁদ দেখার উপর নির্ভরশীল। চাঁদ দেখে বিভিন্ন সময়ের ইবাদত পালন করতে হবে, এ ব্যাপারে কারো কোনা দ্বিমত নেই। দ্বিমত হলো, একের চাঁদ দেখা অন্যের জন্য গ্রহনযোগ্য কিনা বা অন্যের উপর এটি কিভাবে বর্তাবে; তা নিয়ে। প্রতি বছর এ বিতর্ক যখন বরাবরের মত চরমে, তখন একজন সাধারণ বান্দা হিসেবে আমি আগ্রহী হলাম বিভিন্ন হাদীসগ্রন্থ অধ্যায়নে এবং আলিম সমাজের মতামত গ্রহন করতে। চাঁদ দেখা সংক্রান্ত বিষয়ে আজ আমি আমার চিন্তা আপনাদের সাথে ভাগাভাগি করতে চাচ্ছি। শুরুতে সংক্ষেপে দুটি হাদীস শুনে নেই:
*** রসূল সা: বলেন, তোমরা রোজা রাখবে না, যে পর্যন্ত না চাঁদ দেখতে পাও। একইভাবে তোমরা রোজা ভঙ্গ(ঈদ) করবে না, যে পর্যন্ত না শাওয়ালের চাঁদ দেখতে পাও। তবে যদি মেঘের কারনে তা তোমাদের কাছে গোপন থাকে, তবে শাবান মাস পূর্ণ করবে ত্রিশ দিনে। অপর বর্ণনায় আছে,তিঁনি(সা বলেন- মাস কখনও উনত্রিশ দিনেও হয়। (সূত্র: সহীহ বুখারী -৩য় খন্ড, ১৭৮৫-১৭৯০, সহীহ মুসলিম-৩য় খন্ড, ২৩৬৭-২৩৯৪)
*** রোজা রাখ চাঁদ দেখে এবং রোজা ভঙ্গ করবে চাঁদ দেখে। যদি মেঘের কারনে চাঁদ গোপন থাকে, তবে সাবান মাস ত্রিশ দিনে পূর্ণ করবে। (সূত্র: সহীহ বুখারী ৩য় খন্ড, ১৭৮৫-১৭৯০, সহীহ মুসলিম ৩য় খন্ড, ২৩৬৭-২৩৯৪)
এ হাদীসের অর্থ হল-তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখবে এবং চাঁদ দেখেই রোজা ভঙ্গ করবে বা ঈদ পালন করবে। উল্লেখ্য: এখানে রসূল সা: ‘তোমরা’ বলতে, আমাদেরকেই বুঝিয়েছেন। সামনের আলোচনায় ব্যাপারটি আরও স্পষ্ট হবে। সর্ব প্রথম প্রশ্ন করব, এখানে তোমরা(বা আমরা) কারা ? এরা কি তৎকালীন মক্কা,মদীনার মানুষেরা/ সকল সাহাবা রা:/আজকের মক্কা/মদীনা বা আরবের লোকেরা, নাকি রসূলের সা: সকল উম্মত ? আমার ধারণা সকলেই এক মত পোষণ করবেন যে, তোমরা বলতে এখানে উম্মতে মুহাম্মদীকে বুঝানো হয়েছে। অর্থাৎ বক্তব্য এই যে, রসূল সাঃ তাঁর উম্মতের পুরো অংশকে নির্দেশ দিচ্ছেন-“তোমরা চাঁদ দেখে রোজা রাখবে এবং ঈদ পালন করবে। এখানে মেঘের কারনে চাঁদ দেখা যাওয়া/ না যাওয়ার ব্যাপারটিও সকল উম্মতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
“তোমরা চাঁদ দেখে রোজা, ঈদ পালন করবে” এ আদেশ কি উম্মতের প্রত্যেকটি ব্যক্তির উপর প্রযোজ্য ?
যদি এটি প্রত্যেকটি ব্যক্তির উপর সমভাবে প্রযোজ্য হয়, তবে প্রত্যেকটি মানুষকে ব্যক্তিগতভাবে চাঁদ দেখতে হবে। একের চাঁদ দেখা অন্যের উপর বর্তাবে না। যারা চাঁদ দেখবে তারাই রোজা রাখবে বা ঈদ পালন করবে এবং যারা তা দেখতে পাবে না তারা পালন করবে না অথবা যেদিন দেখবে সেদিনই শুধু রোজা বা ঈদ পালন করবে। আমার ধারণা কোনো আলিমই এ মতের সাথে এক মত পোষণ করবেন না। পূর্ববর্তী কোনো সময়েই এটি পরিলক্ষিত হয়নি। কারণ-রসূল সাঃ এমন নির্দেশ প্রদান করেননি। একের চাঁদ দেখা অন্যের জন্য যথেষ্ট হবে কিনা সে বিষয়টি আমরা একটি হাদীসের মাধ্যমে জেনে নেই:
*** “রসূল সা: আমাদের প্রতি নির্দেশ প্রদান করেন যে,আমরা যেন শাওয়ালের চাঁদ দেখাকে ইবাদত হিসেবে গুরুত্ব দেই। আর আমরা স্বচক্ষে যদি তা না দেখি তবে দুজন ন্যায় পরায়ন লোক এ ব্যাপারে স্বাক্ষ্য প্রদান করলে তখন আমরা যেন তাদের সাক্ষ্যের ওপর নির্ভর করি।“ (সূত্র:আবু দাউদ-৩য় খন্ড/২৩৩১,২৩৩২)
এবারে বিষয়টাকে আরও একটু বর্ধিত করে নেই। আমরা জানতে পারলাম,রোজা এবং ঈদ অবশ্যই চাঁদ দেখে পালন করতে হবে এবং এও জানতে পারলাম যে, একের চাঁদ দেখা অন্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারে। এখন প্রশ্ন হলো, অন্য যে ব্যক্তি আমার অবর্তমানে বা আমার পরিবর্তে চাঁদ দেখছেন তার সাথে আমার কেমন সম্পর্ক হতে হবে ? (১)তাকে কি আমার পরিবারের সদস্য হতে হবে ? (২) তাকে কি আমার গোত্র/বংশের কেউ হতে হবে? (৩)তাকে কি আমার পাড়া বা মহল্লা/এলাকার লোক হতে হবে ? (৪) তাকে কি আমার ভাষার লোক লোক হতে হবে? (৫) তাকে কি আমার দেশের লোক হতে হবে? অথবা (৬) তাকে শুধুমাত্র রসূলের(সাঃ) উম্মত হলে চলবে কি না ?
আমাদের আজকের আলোচনার জন্যে উপরের প্রত্যেকটি প্রশ্নই গুরুত্বপূর্ণ। চলুন ব্যপারটি বুঝতে আমরা দুটি হাদীস দেখে নেই:
*** একবার সাহাবীগণ রমজানের চাঁদ দেখা নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েন। তারা তারাবিহ নামাজ না পড়ার এবং পরদিন রোজা না রাখার ইচ্ছা পোষণ করেন। এমতাবস্থায় ‘হাররা’ নামক এক স্থান থেকে জনৈক বেদুইন এসে সাক্ষ্য দেয় যে, সে চাঁদ দেখেছে। তখন তাকে রসূল সা: এর দরবারে নিয়ে আসা হয়। রসূল সা: তাকে জিজ্ঞেস করেন, তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রসূল’ ? সে বলে, হ্যা আমি সাক্ষ্য দেই এবং আরও সাক্ষ্য দেই যে, আমি নতুন চাঁদ দেখেছি। অত:পর রসূল সা: হযরত বেলাল রা: কে নির্দেশ দিলেন, লোকদেরকে জানিয়ে দেওয়ার জন্যে যাতে তারা তারাবিহ নামাজ পড়ে এবং পরদিন রোজা রাখে। (সূত্র: আবু দাউদ ৩য় খন্ড/২৩৩৩, ২৩৩৪, তিরমিযী,নাসাঈ,ইবনে মাজাহ,দারেমী)
বি:দ্র: এই হাদীসটি আবু দাউদ শরীফে তিন জন রাবীর বর্ণনায় আলাদা আলাদা ভাবে বর্ণিত হয়েছে অথাৎ একই রকম তিনটি হাদীস রয়েছে।
*** একবার লোকেরা রমজানের শেষে শাওয়ালের চাঁদ দেখা নিয়ে মতভেদ করেন। তখন দুজন বেদুইন রসূল সা: এর কাছে হাজির হয়ে আল্লাহর কসম করে সাক্ষ্য প্রদান করেন যে, গত সন্ধ্যায় তারা শাওয়ালের চাঁদ দেখেছে। তখন রসূল সা: লোকদেরকে রোজা ভাঙ্গার নির্দেশ দেন। রাবী খালফ তার হাদীসে অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে, রসূল সা: আরও বলেন যে, লোকেরা যেন আগামীকাল ঈদগাহে আসে”।
(সূত্র:আবু দাউদ ৩য় খন্ড/২৩৩৩,২৩৩৪)
আমরা হাদীস দুটি শুনলাম এবং বুঝলাম যে, যিনি/যারা চাঁদ দেখে সাক্ষ্য প্রদান করছেন, তাদেরকে অন্যদের পরিবারের সদস্য হবার প্রয়োজন নেই, তাদের বংশের/গোত্রের লোক হবারও প্রয়োজন নেই। তাদের এলাকা/দেশের লোক হবারও প্রয়োজন নেই। এ হাদীস অনুযায়ী রসূল(সাঃ) ভিন্ন একটি স্থানের লোকদের সাক্ষ্য গ্রহন করেছেন। এখানে আরও উল্লেখ্য যে, এ ব্যাপারে বিশ্বস্ত এক জনের সাক্ষ্যও গ্রহনযোগ্য। এ মর্মে আমরা দুটি হাদীস জেনে নেই :
*** হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর(রাঃ) বলেন,একবার বহু লোক মিলে চাঁদ দেখতে ও দেখাতে লাগল। আমি গিয়ে রসূল সা:কে সংবাদ দিলাম যে, আমি চাঁদ দেখেছি। এ সংবাদ শুনে রসূল সা: নিজে রোজা রাখার সিদ্ধান্ত নিলেন এবং লোকদেরকেও রোজা রাখতে নির্দেশ দিলেন। (সূত্র: আবু দাউদ ৩য় খন্ড/২৩৩৫,দারেমী)
*** হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক বেদুঈন রসূল(সাঃ)এর নিকট এসে বলল-আমি রমজানের নতুন চাঁদ দেখেছি। তিঁনি(সঃ) জিজ্ঞেস করলেন-‘তুমি কি এ সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই ? তুমি কি আরও সাক্ষ্য দাও যে, মুহাম্দ (সাঃ) আল্লাহর রসূল ?’ সে বলল-হ্যা। অত:পর রসূল(সাঃ) বললেন-হে বেলাল ! লোকদের মধ্যে ঘোষণা করে দাও,তারা যেন আগামী কাল থেকে রোজা রাখে।
( সূত্র: সূত্র:আবু দাউদ ৩য় খন্ড/২৩৩৩,২৩৩৪ তিরমিযী)
আমার বিশ্বাস যে পর্যন্ত আলোচনা করা হয়েছে, সে পর্যন্ত সকল আলেমই একমত পোষণ করবেন। বিপত্তি আসলে এর পরের অংশ নিয়ে। চলুন সে সংক্রান্ত আলোচনায় প্রবেশ করি।
আমরা দেখলাম চাঁদ দেখার ব্যাপারে ভিন্ন এলাকার লোকের সাক্ষ্য গ্রহন করা হয়েছে। কিন্তু সে লোকটি কতদূর থেকে এসে সাক্ষ্য দিলে তা গ্রহনযোগ্য হবে, এ মর্মে আমরা কোনো হাদীস দেখতে পাইনা এবং পূর্ববর্তী সময়ের কোনো ঘটনাও এটিকে সমর্থন করেনা যে, কেউ বেশী দূরবর্তী স্থান থেকে এসে সাক্ষ্য দেওয়ার কারনে তার সাক্ষ্য গ্রহন করা হয়নি। অর্থাৎ যে লোকটি ভিন্ন এলাকা থেকে আগত হয়েছেন, তিনি কত দূরবর্তী স্থানের মানুষ তা বিষয় নয়। বরং তিনি একজন সহীহ মুসলিম এবং বিশ্বস্ত কিনা সেটি আলোচনার বিষয়। কেউ যদি বলে উক্ত ব্যক্তি ভিন্ন দেশের মানুষ হলে তার সাক্ষ্য গ্রহন করা হবে না , তবে একই দেশের ভেতর অবস্থিত ভিন্ন এলাকার মানুষ হলে তার সাক্ষ্য গ্রহন করা হবে । এমনটি বললে, আমরা তার কাছে হাদীসের দলিল চাইতে পারি দেশ সংক্রান্ত বিষয়ে ,অবশ্য তিনি তার স্বপক্ষে দলিল পেশ করতে সক্ষম হবেন না।
দেশ ব্যাপারটি কি ?
দেশ ব্যাপারটি হলো একটি আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক সীমারেখা,যার উপর ভিত্তি করে একটি এলাকাকে নিজেদের বলে আখ্যায়িত করা হয়। মূলতঃ পৃথিবী আল্লাহর এবং তা সকল মানুষের জন্যে উম্মুক্ত। হযরত মুহাম্মদ(সাঃ) সারা পৃথিবীর সকল মানুষের জন্যে রসূল। তিনি নির্দিষ্ট কোনো গোত্র, সম্প্রদায়ের জন্যে নির্ধারিত নন। আর তাই তাঁর(সাঃ) সকল বক্তব্য পৃথিবীর সকল মানুষের জন্যে সমভাবে প্রযোজ্য।
অতএব, চাঁদ দেখা সংক্রান্ত বিষয়টি সারা পৃথিবীর সকল মানুষের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। কোনো এলাকার লোক চাঁদ দেখতে ব্যর্থ হলে, ভিন্ন এলাকার মানুষের সাক্ষ্য গ্রহন করা হয়েছে এবং এখানে সেই লোকটি কত দূরবর্তী স্থানের লোক তা বিবেচনায় আনা হয়নি। এখানে আরেকটি বাস্তবতা হলো যোগাযোগের মাধ্যম। তৎকালীন সময়ে মানুষের বাহন ছিল ঘোড়া, গাধা, উট, পদযুগল ইত্যাদী। এগুলোর উপর ভিত্তি করে একজন মানুষের পক্ষে এক দিনে খুব বেশীদূর অগ্রসর হওয়া সম্ভবপর ছিলনা। ফলে যিনি চাঁদ দেখছেন তার পক্ষে দূরবর্তী অঞ্চলের মানুষকে জানানো সম্ববপর ছিলনা। আজকের দিনের মত যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে রেডিও, টেলিভিশন, ইন্টারনেট, টেলিফোন না থাকাতে তাদের পক্ষে দূরবর্তী অঞ্চলের মানুষের সাথে তাৎক্ষনিক যোগাযোগ রক্ষা করা সম্ভব ছিল না। ফলে, সন্ধ্যায় চাঁদ দেখা গেলে প্রথমে তা নিজ এলাকার লোকদেরকে জানিয়ে দেওয়া হত, তারপর পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষদেরকে জানানোর জন্যে ঘোড়া সওয়ার পাঠানো হত। প্রথম থেকেই এই নিয়ম চালু ছিল। কিন্তু ঘোড়া সওয়ারের পক্ষেও বহুদূর গমন করা সম্ভবপর ছিলনা। কিন্তু আমরা এখান থেকে একটি বিষয় বুঝতে পারি, তা হলো-কোনো এলাকায় চাঁদ দেখা গেলে যথাযথ গুরুত্বের সাথে অন্য এলাকার মানুষকে জানানো জরুরী, যাতে করে সকলে একসাথে রোজা ,ঈদ পালন করতে পারে।
ঘোড়ার মাধ্যমে যোগাযোগের এ মাধ্যমটির চেয়েও আরও উন্নত যোগাযোগ মাধ্যম পরবর্তী সময়ের খিলাফতের যুগে আমরা প্রত্যক্ষ করেছি। সে সময়ে সমুদ্রবক্ষে জাহাজের নিরাপদে দিক চিনে চলাচলের সুবিধার্তে যে সকল লাইট হাউস বা বাতিঘর ছিল, আকাশে চাঁদ দেখা গেলে সেগুলিতে আলো জ্বালিয়ে দেওয়া হত। একটি লাইট হাউসে আলো জ্বললে সে খবর যখন অন্যটিতে পৌঁছাত ,তখন অন্যটিতেও আলো জ্বালিয়ে দেওয়া হত। এভাবে জনতা আলো জ্বলতে দেখে চাঁদ দেখার ব্যাপারটি বুঝতে পারত। এ প্রক্রিয়ায় যে সকল এলাকার মানুষ চাঁদ দেখার ব্যাপারটি বুঝতে পারত,সে সকল এলাকার মানুষেরা রোজা,ঈদ একসাথে পালন করত।
এখান আমরা একটু লক্ষ্য করলে বুঝতে পারব যে, আকাশে চাঁদ দেখা গেছে, এ সংবাদটি পায়ে হেটে অন্যদেরকে জানানো, ঘোড়ায় চড়ে জানানো, লাইট হাউসের মাধ্যমে জানানোর মধ্যে বিষয়ভিত্তিক কোনো পার্থক্য নেই বরং প্রযুক্তিগত পার্থক্য রয়েছে, যা প্রথম যুগ থেকেই গ্রহন করা হয়েছে। বেশী সংখ্যক মানুষকে দ্রুততার সাথে জানানোর জন্যে এ মাধ্যমগুলি প্রযুক্তি বিশেষ,যা সময়ের প্রেক্ষিতে পরিবর্তিত হয়েছে। এখানে উক্ত প্রযুক্তির একটিই উদ্দেশ্য ছিল, তা হলো-দ্রুততার সাথে অন্যদেরকে চাঁদ দেখার সংবাদটি জানানো।
আজকের এই প্রযুক্তির উৎকর্ষতার সময়ে যদি কেউ এক এলাকাতে চাঁদ দেখতে পায় এবং তা অন্য এলাকার লোকদেরকে টেলিফোনে, ইন্টারনেটে, টেলিভিশনে, রেডিওর মাধ্যমে জানিয়ে দেয়, তাহলে তা পূর্ববর্তী সময়ের পায়ে হাটা, ঘোড়ায় চড়া, লাইট হাউসের মাধ্যমে ঘটিত প্রচারণার সমপর্যায়েরই হবে। কারণ, এখানে উদ্দেশ্য একই। এ লক্ষ্যে কোনো ভৌগলিক সীমারেখা ইসলামে বিবেচ্য বিষয় নয়। বরং জাতীয়তাবাদী নীতিতে আবদ্ধ হয়ে মুসলিমদের ভূখন্ডকে ভৌগলিক বিভাজন করা সুস্পষ্ট হারাম। রাসুল (সাঃ) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি জাতীয়তাবাদের (আসাবিয়্যার) প্রতি আহ্বান করে সে আমাদের অন্তর্ভূক্ত নয়।”
অতএব, যদি আরবের কোথাও চাঁদ দেখা যায়, তাহলে সে সংবাদ ভিন্ন এলাকায় পৌঁছে গেলে “চাঁদ দেখা গেছে” ব্যাপারটি উক্ত এলাকার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। আবার ভিন্ন এলাকাতে চাঁদ দেখা গেলে সে সংবাদ আরবে পৌঁছলে, আরবের জন্যও এটি গ্রহনযোগ্য হবে। এভাবে সকল স্থানের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি একই। চাঁদকে জাতীয়তাবাদের সংকীর্ণ ধারনার জালে জড়ানো যাবে না। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়:- ধরে নিলাম, ইরাকের সময়ের চেয়ে বাংলাদেশের সময় ৩ ঘন্টা কম, অর্থাৎ ইরাকে যখন মাগরিবের সময় হবে তার তিন ঘন্টা পর বাংলাদেশে মাগরিবের সময় হবে। সে অনুযায়ী ইরাকে চাঁদ দেখা গেলে বাংলাদেশের লোক সে সংবাদ বিকেলের দিকে জানতে পারবে এবং সন্ধ্যায় এখানে চাঁদ দেখা যাক বা না যাক ধরে নেওয়া হবে চাঁদ দেখা গেছে বা উদীত হয়েছে। এখানে আমরা ভিন্ন এলাকার মানুষের সাক্ষ্য গ্রহন করলাম সুন্নাহ অনুযায়ী। আবার এমনও হতে পারে, ইরাকের লোকেরা চাঁদ দেখতে পেলনা এবং এ সংবাদটিও আমরা বিকেলের দিকে জানতে পারব, তখন আমরা সন্ধ্যায় চাঁদ দেখার চেষ্টা করব। যদি এখানে চাঁদ দেখা যায়, তাহলে আমরা তাদেরকে এবং অন্যদেরকে জনাবো এবং তা গ্রহনীয় হবে। যদি এখানেও না দেখা যায় তবে আমাদের চাইতে যে সকল এলাকার সময় কম অর্থাৎ আরো পরে সন্ধ্যা হয়, তারা আকাশে চাঁদ খোঁজার চেষ্টা করবে এবং পেলে তা ঘোষিত হবে সকলের জন্যে। এখানে আরেকটি ব্যাপার উল্লেখ করার আছে :
পৃথিবীর এক প্রান্তের সাথে অপর প্রান্তের সময়ের সর্বোচ্চ পার্থক্য ১২ ঘন্টা। যদি আমরা বা অন্য কোনো অঞ্চলের মানুষেরা সেহরী করার নির্ধারিত সময় পার হবার পর , চাঁদ উদীত হবার ব্যাপারে জানতে পারে, তাহলে তাদের উপর উক্ত দিনের রোজা রাখার বাধ্যবাদকতা অর্পিত হয়না। আবার চাঁদ উদিত হয়েছে, এ সত্য সংবাদটি কারো কাছে অথবা কোনো এলাকার নিকট না পৌঁছালে তাদের উপরও রোজা রাখা বা অন্যদের সাথে ঈদ(যদি ঈদের চাঁদ দেখার সংবাদ তাদের কাছে না পৌঁছায়) পালন করার বাধ্যবাদকতা অর্পিত হয়না। সে পরিস্থিতিতে তাদেরকে নিজেদের প্রচেষ্টায় চাঁদ দেখতে হবে(অথবা ত্রিশ রোজা পূর্ণ করতে হবে), যেহেতু অন্য স্থান থেকে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারনে তথ্য আসার সম্ভাবনা নেই। এ প্রসঙ্গে আমরা হাদীস থেকে জানব:
*** হযরত মূসা ইবনে ইসমাইল কুরায়ব থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, উম্মে ফাযল বিনতে হারিস তাকে মুয়াবিয়ার কাছে শাম দেশে(সিরিয়া) পাঠান। তিনি বলেন, আমি সিরিয়া থাকা অবস্থায় রমজানের চাঁদ ওঠে এবং আমরা তা দেখি জুম্মার রাতে। অত:পর আমি রমজানের শেষের দিকে মদীনায় ফিরে আসি। ইবনে আব্বাস আমাকে সফর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন এবং বিশেষ করে চাঁদের সম্পর্কে বলেন-“তোমরা রমজানের চাঁদ কখন দেখেছিলে ?” আমি বলি-জুম্মার রাতে দেখেছি। অত:পর তিরি জিজ্ঞেস করেন-“তুমি নিজেও কি তা দেখেছিলে ?” আমি বলি, হ্যাঁ এবং অন্যান্য লোকেরাও দেখেছে ও রোজা রেখেছে, এমনকি মুয়াবিয়াও রোজা রাখেন। ইবনে আব্বাস বলেন, আমরা চাঁদ দেখেছি শনিবার রাতে। সুতরাং আমরা ত্রিশদিন পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত রোজা রাখব অথবা শাওয়ালের চাঁদ না দেখা পর্যন্ত রোজা রেখে যাব। আমি বললাম, মুয়াবিয়ার দর্শন ও রোজা রাখা কি এ ব্যাপারে যথেষ্ট নয়? তিনি বলেন না, আমাদেরকে রসূল সা: এরকম করতে নিষেধ করেছেন। (সূত্র:আবু দাউদ ৩য় খন্ড/২৩২৬)
*** তাবেঈ ইবনে বাখতারী বলেন, একবার আমরা ওমরা করার জন্যে বের হলাম। যখন আমরা বাতনে নাখলা নামক স্থানে পৌঁছলাম, তখন সকলে মিলে চাঁদ দেখতে পেলাম। আমাদের মধ্যে কেউ বলল, এটি তিন দিনের চাঁদ, কেউ বলতে লাগল এটি দুই দিনের চাঁদ। পরে আমরা যখন ইবনে আব্বাসের সাথে সাক্ষাৎ করলাম এবং বললাম, আমরা রমজানের চাঁদ দেখেছি, কিন্তু আমাদের কেউ বলেছে এটি তিন দিনের ,কেউ বলেছে এটি দুই দিনের চাঁদ। ইবনে আব্বাস বললেন, তোমরা কোন রাতে দেখেছো ? আমরা বললাম,অমুক রাতে। তখন তিনি বললেন, রসূল সা: সেখান থেকে তারিখ গণনা করতেন, যে রাতে চাঁদ দেখতেন। ( সূত্র: সহীহ মুসলিম ৩য় খন্ড/২৩৯৭,তিরমিযী)
এখানে উল্লেখ্য যে, মদীনা থেকে তৎকালীন সিরিয়ার দূরত্ব এত বেশী ছিল যে, একই দিনের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে যোগাযোগ করা সম্ভবপর ছিলনা। ফলে, উভয় এলাকার মানুষ ভিন্ন তারিখে চাঁদ দেখে রোজা রেখেছে। পরের হাদীসটিতেও একই ব্যাপার ঘটেছে অর্থাৎ তাদের কাছে অন্য এলাকার কোনো তথ্য পৌঁছেনি,ফলে তাদেরকে নিজেদের মত করে চাঁদ দেখতে হয়েছে। যদি তাদেরকে ভিন্ন এলাকার কোনো লোক এসে “চাদ দেখা গেছে” এ সংবাদ দিত ,তাহলে তারা অবশ্যই তা গহন করতেন; পূর্বোক্ত হাদীস অনুযায়ী। এক্ষেত্রে শর্ত হল, যিনি/যারা চাঁদ দেখার বিষয়টি জানাচ্ছেন, তিনি/তারা বিশ্বাসযোগ্য কি না। যদি তিনি বা তারা বিশ্বাসযোগ্য হন তাহলে তার সাক্ষ্য গ্রহন করা হবে। বর্তমান কালে স্যাটেলাইট টেলিভিশন, ইন্টারনেটের কল্যানে চাঁদকে পৃথিবীর সকল এলাকাবাসীর সামনে সরাসরি উপস্থাপন করা যায়। সুন্নাহ অনুযায়ী এই চরম সত্য বিষয়টি গ্রহনযোগ্য হবার কথা। কিন্তু এটি গ্রহনযোগ্য না হলে একমাত্র আন্তর্জাতিক ভৌগলিক সীমারেখা বা রাজনৈতিক বিষয়টিই চাঁদ দেখা সংক্রান্ত বিষয়ের ক্ষেত্রে প্রধান বাঁধা হয়ে দাড়ায়, যা সরাসরি সুন্নাহ বিরোধী।
এছাড়া কিছু কিছু এলাকাতে(মেরু এলাকাতে) ৬ মাস দিন এবং ৬ মাস রাত হয়। নরওয়েতে কখনই রাত বা সন্ধ্যা হয়না এবং ইউরোপের কয়েয়কটি দেশে কখনও কখনও দিন ২৩ ঘন্টা পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হয়ে থাকে। এ সমস্ত ক্ষেত্রে তাদেরকে ভিন্ন এলাকার তথ্যের সাহায্যে রোজা এবং ঈদ পালন করতে হবে/হয়। কেউ যদি বলে, প্রত্যেক দেশের মানুষকে চাঁদ দেখতে হবে, তাহলে তার কাছে জানতে চাইব, নরওয়ে, গ্রিনল্যান্ড ইত্যাদী দেশে এবং উত্তর মেরু, দক্ষিন মেরুতে থাকা সহীহ মুসলিমদের কি হবে? জাতীয়তাবাদী চাঁদ তাদের জাতিকে স্বীকৃতি দিলনা রোজা বা ঈদ পালনের ! নাকি রোজার পূর্বে তাদেরকে দেশ ত্যাগ করে ‘সময়মত চাঁদ ওঠে’ এমন দেশে পাড়ি জমাতে হবে? আবারও পূর্বোক্ত হাদীস পেশ করছিঃ-
*** রসূল সা: বলেন, তোমরা রোজা রাখবে না, যে পর্যন্ত না চাঁদ দেখতে পাও। একইভাবে তেমরা রোজা ভঙ্গ(ঈদ) করবে না,যে পর্যন্ত না শাওয়ালের চাঁদ দেখতে পাও। তবে যদি মেঘের কারনে তা তোমাদের কাছে গোপন থাকে,তবে শাবান মাস পূর্ণ করবে ত্রিশ দিনে। অপর বর্ণনায় আছে,তিনি সা: বলেন- মাস কখনও উনত্রিশ রাতেও হয়। (সূত্র: সহীহ বুখারী -৩য় খন্ড, ১৭৮৫-১৭৯০, সহীহ মুসলিম-৩য় খন্ড, ২৩৬৭-২৩৯৪)
*** রোজা রাখ চাঁদ দেখে এবং রোজা ভঙ্গ করবে চাঁদ দেখে। যদি মেঘের কারনে চাঁদ গোপন থাকে তবে সাবান মাস ত্রিশ দিনে পূর্ণ করবে। (সূত্র: সহীহ বুখারী ৩য় খন্ড, ১৭৮৫-১৭৯০, সহীহ মুসলিম ৩য় খন্ড, ২৩৬৭-২৩৯৪)
এখানে রসূল(সাঃ) সারা বিশ্বের সমস্ত মানুষকে উদেশ্যে করে এ বিধানটি শুনিয়ে দিচ্ছেন। ফলে তা সেভাবেই পালিত হবে। সারা বিশ্ব যদি মেঘে ঢেকে থাকে তবে চাঁদ দেখা যাবে না এবং সাবান মাস ত্রিশ দিনে পূর্ণ হবে। এছাড়া যদি কোনো দিন সম্পর্কে সন্দেহ সৃষ্টি হয় তাহলে রসূল(সাঃ) বলেন:-
যে ব্যক্তি সন্দেহের দিনে রোজা রেখেছে,সে আবুল কাশেমের (রসূল সা এর নাফরমানী করেছে। ( সূত্র: আবু দাউদ ৩য় খন্ড/২৩২৭, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)
অনুরূপভাবে ‘ঈদের চাঁদ দেখা গেছে’ এই সংবাদ প্রকাশিত হলে, সকলকে একসাথে ঈদ পালন করতে হবে। কোনোভাবেই ঈদের দিনে রোজা রাখা যাবে না।
*** আবু সাঈদ খুদরী রা: থেকে বর্নীত, রাসুল (সাঃ) রোযার ঈদের দিন এবং কুরবানীর ঈদের দিন রোযা রাখতে নিষেধ করেছেন। (সূত্র: সহীহ সহীহ বুখারী ৩য় খন্ড/১৮৬৭,১৮৬৮ ও সহীহ মুসলিম ৩য় খন্ড/২৫৩৭-২৫৪২)।
Collected From
তারিক বিন জিয়াদ
by Collected Notes and Discussion on Wednesday, July 27, 2011 at 5:37pm
part 01: https://www.facebook.com/note.php?note_id=258156834200238
প্রখ্যাত আলেম ওলামাগণ এ সিন্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে,- এক শহরের মানুষ রমযানের চাঁদ দেখলে অন্য শহরের লোকদের জন্যও চাঁদ দেখা প্রমাণিত হবে। এমনকি পৃথিবীর একেবারে পশ্চিম প্রান্তে চাঁদ দেখা গেছে, এই সংবাদ যদি নির্ভরযোগ্য সূত্রে পূর্ব প্রান্তের অধিবাসীদের নিকট পৌঁছে, তবে তাদের উপর এই দিনে রমযানের রোযা ফরয হবে।
(সূত্র: দুররুল মুখতার, ২য় জিলদ, পৃষ্ঠ-১০৮; আলগিরী, ১ম জিলদ, পৃঃ-১৯৮; বাহরুর রায়েক, ২য় জিলদ, পৃঃ-২০৭; মাজমাউল আনহুর, ১ম জিলদ, পৃঃ- ২৩৯)
হযরত ইমাম আবু হানিফা (রহ এর যাহিরুর রেওয়ায়াহ এবং ফেকাহায়ে হানাফিয়ার অধিকাংশের অভিমত হল চন্দ্রের উদয় ও অস্তের ব্যবধান গ্রহণযোগ্য নয়। তারা পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে বিরাট ব্যবধান হওয়া সত্যেও উদয় অস্তের পরিবর্তনের দিকে দৃষ্টি না দিয়ে এক রাস্ট্রের চাঁদ দেখাকে অন্য রাস্ট্রের জন্য যথেষ্ট মনে করে রায় প্রদান করেছেন।
একটি যুক্তি ঃ
হযরত শিব্বির আহমাদ উসমানী (রহ) ফতহুল মুলহিম নামক হাদীসের কিতাবে নিজের অভিমত প্রকাশ করতে গিয়ে বলেছেন যে, আরবী মাস ২৯ দিন বা ৩০ দিন হয়ে থাকে। কোন দেশে ২৮ রমজানের দিন যদি খবর আসে যে অন্য দেশে চাঁদ দেখা গিয়েছে, সে অনুযায়ী রোযা ভাংগ করলে তো তাদের রমজান মাস ২৮ দিন হয়ে যাবে। আবার ৩০ দিন রোযা রাখার পরেও যদি কোথাও চাঁদ দেখার খবর না আসে, তাহলে তো তাদের ৩১ টি রোযা রাখতে হবে। অথচ চন্দ্র মাস তো ২৮ দিন কিংবা ৩১ দিন হয় না। তাই যার যার দেশের চাঁদ দেখার উপর ভিত্তি করে রোযা পালন বা মাস গণনা করাই শ্রেয়।
প্রথমতঃ এ অভিমতের স্বপক্ষে সুন্নাহ ভিত্তিক কোন দলিল নেই। দ্বিতীয়তঃ তিনি বলেছেন আরবী মাস ২৮ দিন কিংবা ৩১ দিন হবে না, একথা সঠিক। কিন্তু কখন মাস গণনা শুরু হবে তার প্রতি গুরুত্ব¡ না দিয়ে দুরবর্তী কোন দেশে চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে মাস শেষ করলেই একম হতে পারে। তাই মাসের শুরুটাও একই নিয়ম হতে হবে। অর্থাৎ চাঁদ দেখার খবর পাওয়ার সাথে সাথেই মাস শুরু করতে হবে। মাস শুরু করা এবং শেষ করার ক্ষেত্রে একই নিয়ম পালন করলে আর এরকম সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না। তাহলে কোন মাস ২৮ দিন বা ৩১ দিন হবে না। আর যথাযথ ভাবে মাস শুরু করার ৩০ দিন পরেও, চাঁদ দেখা না গেলে রোযা ভংগ করতে হবে, এটিই সুন্নাহ। এখানে পূর্বোক্ত একটি হাদীস আবারও পেশ করতে হচ্ছে:-
*** তাবেঈ ইবনে বাখতারী বলেন,একবার আমরা ওমরা করার জন্যে বের হলাম। যখন আমরা বাতনে নাখলা নামক স্থানে পৌঁছলাম,তখন সকলে মিলে চাঁদ দেখতে পেলাম। আমাদের মধ্যে কেউ বলল, এটি তিন দিনের চাঁদ, কেউ বলতে লাগল এটি দুই দিনের চাঁদ। পরে আমরা যখন ইবনে আব্বাসের সাথে সাক্ষাৎ করলাম এবং বললাম,আমরা রমজানের চাঁদ দেখেছি,কিন্তু আমাদের কেউ বলেছে এটি তিন দিনের ,কেউ বলেছে এটি দুই দিনের চাঁদ। ইবনে আব্বাস বললেন, তোমরা কোন রাতে দেখেছো ? আমরা বললাম,অমুক রাতে। তখন তিনি বললেন, রসূল সা: সেখান থেকে তারিখ গণনা করতেন,যে রাতে চাঁদ দেখতেন। ( সূত্র: সহীহ মুসলিম ৩য় খন্ড/২৩৯৭,২৩৯৮,তিরমিযী)
এ হাদীসটিতে নাখলা নামক স্থানে যারা ছিলেন, তাদের কেউ কেউ রোজার চাঁদকে দেখে বলছিলেন এটি দুই দিনের এবং কেউ কেউ বলছিলেন, এটি তিন দিনের। যদি চাঁদটি দুই দিনের পুরোনো হয়ে থাকে তাহলে তাদের পক্ষ্যে কি কোনোভাবেই ২৯টি বা ৩০টি রোজা পাওয়া সম্ভব(যেহেতু আরবী মাস ২৮ বা ৩১ দিনে হয়না) ? উক্ত তবেঈ ২৮টি রোজার পালন করার পর যদি ঈদের চাঁদ দেখতে পান,তাহলে কি তার বা তাদের সকলের রোজা বরবাদ হয়ে যাবে বা আল্লাহ কতৃক প্রত্যাখ্যাত হবে ? অথবা তারা কি রোজার চাঁদ ২/৩ তিন দিন পরে দেখতে পেয়ে ভুল করেছিলেন ? দুই দিনের পুরোনো চাঁদ দেখে ২৮টি রোজা পালনের পর তারা যদি ঈদের চাঁদ দেখতে পেতেন,তাহলে কি সেদিনটিতে(অর্থাৎ ঈদের দিনে) রোজা রেখে ২৯টি রোজা পূর্ণ করতেন ?
মূলত: তারা তাদের সাধ্য অনুযায়ী প্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। তাদের কাছে চাঁদ দেখা সংক্রান্ত বিষয়ে অন্য একালার তথ্য ছিলনা, ফলে তাদেরকে নিজেদের প্রচেষ্টায় চাঁদ দেখতে হয়েছে কিন্তু তারা যথা সময়ে চাঁদ দেখতে সক্ষম হননি। অথবা তাদের কাছে সাবান মাসের যথাযথ হিসাব ছিলনা,যদিও রসূল(সাঃ) সাবান মাস গণনায় অতিরিক্ত সাবধানী ছিলেন। তবে যদি কোনো এলাকার লোক ২৮টি রোজা রাখার পর আকাশে ঈদের চাঁদ দেখতে পায় ,তবে অবশ্যই তাদেরকে ঈদ পালন করতে হবে,কারণ-ঈদের দিন রোজা পালন হারাম। আর সঠিকভাবে সাবান মাস গণনা করা হলেও রমজান মাস ৩১দিনে উত্তীর্ণ হবার সম্ভাবনা নেই। একইসাথে সাবান মাসের ২৯ তারিখে যদি কোথাও চাঁদ দেখতে না পাওয়া যায়,তবে অনুমানের উপর নির্ভর করে পরের দিন রোজা পালন করা যাবে না। উক্ত দিনকে সন্দেহযুক্ত দিন বলা হয় এবং সন্দেহযুক্ত দিনে রোজা পালন করা যাবে না। ঠিক এমনই একটি সন্দেহযুক্ত দিনে একবার প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসীর(রাঃ)এর সামনে একটি ভূনা বকরী উপস্থিত হয় এবং তখন তিঁনি(সাঃ) সকলকে বললেন-খাও। কিন্তু জনৈক ব্যক্তি দূরে সরে গিয়ে বলল-আমি রোজাদার। আম্মার ইবনে ইয়াসীর(রাঃ) বললেন-যে ব্যক্তি সন্দেহযুক্ত দিনে রোজা রাখে সে আবুল কাসিমের(রসূল সাঃ) সাথে অবাধ্য আচরণ করেছে। (সূত্র: আবু দাউদ ৩য় খন্ড/২৩২৭, তিরমিযী)
আর একটি যুক্তি ও তার জবাবঃ
যারা একই দিনে রোযা রাখার কথা বলেন, তাদের যুক্তি খন্ডন করার জন্য এক শ্রেণীর মানুষ বলেন যে, “একই দিনে রোযার কথা বলেন, তাহলে সকল এলাকায় একই সময় নামাযের কথা বলেন না কেন ?” মূলত: এখানে একই দিনে রোজা রাখার কথা বলা হয়েছে, এই সময়ে নয়। রোজা রাখার বিষয়টি যেকোনো এলাকার আকাশে চাঁদ দেখার উপর নিভরশীল এবং এক স্থানের সাথে অন্য স্থানের সর্বোচ্চ সময়ের পার্থক্য ১২ ঘন্টা হতে পারে,এর বেশী নয়(মেরু অঞ্চল সম্পর্কে পূর্বে আলোচিত হয়েছে)। দীবা-রাত্রীর আবর্তনের ফলেই এটি হয়ে থাকে। কিন্তু নামাজের সময়টি চাঁদ দেখার সাথে সম্পৃক্ত নয়, ফলে উদাহরন হিসেবে এটি মোটেও গ্রহনযোগ্য হবে না। নামাজের সময় পৃথিবী-সূর্য্যরে আবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সময়ের পার্থক্যের সাথে সম্পৃক্ত। অর্থাৎ আমি যেখানেই থাকিনা কেন, সূর্য্য উদীত হবার পূর্বেই ফজরের নামাজ আদায় করতে হবে,বেলা দ্বিপ্রহরের সময় যোহর, সূর্য্য টলে গেলে আসর,অস্ত গেলে মাগরিব এবং তার পর এশার নামাজ আদায় করতে হবে। যেসকল এলাকায় ৬মাস দিন, ৬মাস রাত হয় অথবা যেখানে কখনই রাত হয়না অথবা যেখানে ২৩ ঘন্টা পর্যন্তও দিন দীর্ঘায়িত হতে পারে, সেখানে সময়ের একটি হিসাব করে, ভিন্ন এলাকা থেকে তথ্য গ্রহন করে নামাজ, রোজা পালন করতে হবে।
এবারে আমরা একটু বাস্তবতার ভেতর প্রবেশ করব:
প্রায় প্রত্যেক রমজান এবং ঈদের সময় আমাদের সাথে আরব/আফ্রিকা/মধ্য এশিয়া/এশিয়ার অনেক দেশ এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশের সাথেও এক/দুই দিনের পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। আমাদের দেশে চাঁদ দেখার জন্যে একটি জাতীয় কমিটি রয়েছে এবং তারা শুধু বাংলাদেশের জন্যে চাঁদ তল্লাসী করেন। যখন তারা রোজা বা ঈদের ঘোষণা করেন, তখন বলেন-‘দেশের অমুক স্থানে চাঁদ দেখা গেছে এবং তার ভিত্তিতে ঘোষনা করা হল, আগামীকাল থেকে রোজা শুরু।’ আবার তারা বলেন-‘দেশের কোথাও চাঁদ দেখা যায়নি।’ এর অর্থ হলো, দেশের কোথাও চাঁদ দেখা গেলে তা গ্রহন করা হত।
আচ্ছা ধরুন দেশের সেই “কোথাও” নামক স্থানটি পঞ্চগড় অথবা ধরুন বেনাপোল। যদি পঞ্চগড় বা বেনাপোলে কেউ চাঁদ দেখতে পেত,তাহলেও কিন্তু চাঁদ দেখা কমিটি উক্ত অঞ্চলের মানুষের সাক্ষ্য গ্রহন করতেন এবং তারা তা করে থাকেন। তাহলে উক্ত অঞ্চল থেকে আরেকটু দূরে যিনি/যারা দাড়িয়ে চাঁদ দেখছেন অথাৎ পঞ্চগড়ের একটু ওপাশে চেংড়াবান্দা অথবা বেনাপোলের একটু ওপাশে পেট্রোপোলে দাড়িয়ে যারা চাঁদ দেখছেন, তাদের সাক্ষ্য চাঁদ দেখা কমিটি কেন গ্রহন করছেন না বা করেন না ? নাকি ওদের ঈমানে কোনো সমস্যা আছে ! তারা তো আমাদের সীমান্তের চেয়ে কয়েক হাত ওপাশে অবস্থান করছে, তাহলে এতকাছে থাকা সত্ত্বেও কেন তাদের সাক্ষ্য গ্রহন করা হয় না ??? বেনাপোল অথবা পঞ্চগড়ের সাথে ঢাকার দূরত্ব ৩০০-৩৫০কি:মি:। এতদূরের মানুষদের থেকে ঢাকার কমিটি চাঁদ দেখা সংক্রান্ত বিষয়ে সাক্ষ্য গ্রহন করছেন অথচ উক্ত এলাকা সমূহের থেকে কয়েক মিটার বাইরে দাড়ানো মানুষের সাক্ষ্য গ্রহন করছেন না। সমস্যা কোথায় !! মগজে, হাদীসে নাকি সীমান্তে ???
এক্ষেত্রে কোন হাদীসটি ফিট করা হবে, যখন একটি অবস্থানে আমার বামপাশে দাড়ানো কিছু লোকের সাক্ষ্য আমি গ্রহন করছি এবং একই দূরত্বে ডান পাশে দাড়ানো লোকের সাক্ষ্য আমি গ্রহন করছি না ? ডান পাশের লোকগুলো যদি ভারত অথবা মায়ানমার হয় এবং তারা যদি সহীহ মুসলিম হয় তাহলে তাদের সাক্ষ্য কেন গ্রহন করা হবে না ? চাঁদ বাবাজীকে দেখার জন্যে জাতীয়তাবাদী ওই সীমানা অনুসরনে আকাশকে আলাদা করার অনুমতি কে দিয়েছে ? রসূল(সাঃ)??? আমি কি অবারও পূর্বের হাদীসগুলি এখানে পেশ করব না ?
*** একবার সাহাবীগণ রমজানের চাঁদ দেখা নিয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েন। তারা তারাবিহ নামাজ না পড়ার এবং পরদিন রোজা না রাখার ইচ্ছা পোষণ করেন। এমতাবস্থায় ‘হাররা’ নামক এক স্থান থেকে জনৈক বেদুইন এসে সাক্ষ্য দেয় যে, সে চাঁদ দেখেছে। তখন তাকে রসূল সা: এর দরবারে নিয়ে আসা হয়। রসূল সা: তাকে জিজ্ঞেস করেন, তুমি কি সাক্ষ্য দাও যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং আমি আল্লাহর রসূল’ ? সে বলে, হ্যা আমি সাক্ষ্য দেই এবং আরও সাক্ষ্য দেই যে, আমি নতুন চাঁদ দেখেছি। অত:পর রসূল সা: হযরত বেলাল রা: কে নির্দেশ দিলেন,লোকদেরকে জানিয়ে দেওয়ার জন্যে যাতে তারা তারাবিহ নামাজ পড়ে এবং পরদিন রোজা রাখে। (সূত্র: আবু দাউদ ৩য় খন্ড/২৩৩৩, ২৩৩৪, তিরমিযী,নাসাঈ,ইবনে মাজাহ,দারেমী)
*** একবার লোকেরা রমজানের শেষে শাওয়ালের চাঁদ দেখা নিয়ে মতভেদ করেন। তখন দুজন বেদুইন রসূল(সা এর কাছে হাজির হয়ে আল্লাহর কসম করে সাক্ষ্য প্রদান করেন যে, গত সন্ধ্যায় তারা শাওয়ালের চাঁদ দেখেছে। তখন রসূল সা: লোকদেরকে রোজা ভাঙ্গার নির্দেশ দেন। রাবী খালফ তার হাদীসে অতিরিক্ত বর্ণনা করেছেন যে,রসূল সা: আরও বলেন যে, লোকেরা যেন আগামীকাল ঈদগাহে আসে”। (সূত্র:আবু দাউদ ৩য় খন্ড/২৩৩৩,২৩৩৪)
*** হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,জনৈক বেদুঈন রসূল(সাঃ)এর নিকট এসে বলল-আমি রমজানের নতুন চাঁদ দেখেছি। তিঁনি (সঃ) জিজ্ঞেস করলেন-‘তুমি কি এ সাক্ষ্য দাও যে,আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই ? তুমি কি আরও সাক্ষ্য দাও যে, মুহাম্দ(সাঃ) আল্লাহর রসূল ?’ সে বলল-হ্যা। অত:পর রসূল(সাঃ) বললেন-হে বেলাল ! লোকদের মধ্যে ঘোষণা কওে দাও, তারা যেন আগামী কাল থেকে রোজা রাখে।
( সূত্র: তিরমিযী)
এবার আমরা নিকট ইতিহাতে প্রবেশ করবঃ- ১৯৭১ এর পূর্বে পশ্চিম পাকিস্থানে চাঁদ দেখা গেলে আমাদের দেশেও রোযা রাখা হতো কিংবা ঈদ উজ্জাপন করা হতো। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর দুটি দেশ আলাদা হয়ে যাওয়ার কারণে রোযা রাখার তারিখ, ঈদ উজ্জাপন করার তারিখও আলাদা হয়ে গেল। তাহলে তখনকার দিনে একসাথে রোজা বা ঈদ পালন করার সিদ্ধান্ত কি সঠিক ছিল ? যদি সঠিক হয় ,তবে এখনকারটা সঠিক নয় আর যদি সেটি ভুল হয়ে থাকে তবে ,এখনকারটা সঠিক। পূর্বে পাকিস্থান,ভারতের আকাশে চাঁদ দেখা গেলে রোজা রাখা যেত,তাহলে আজ সে আকাশে চাঁদ দেখা গেলে এখানে রোজা/ঈদ পালন করা যায়না কেন ? এখানে চাঁদ কি রাজনৈতিক পরিচয়ে পরিচিত নয় ? যদি ভারতের আকাশে চাঁদ দেখার ব্যাপারটি আমাদের কাছে স্বীকৃত হয় তাহলে আমরা একসাথে রোজা পালন করতে পারি,তাহলে ভারতও তার পার্শ্ববতী দেশের আকাশের চাঁদকে স্বীকৃতি দিতে পারে। এভাবে একটি এলাকা যেহেতু আরেকটি এলাকার সাথে সম্পর্কযুক্ত ,তাহলে প্রত্যেকের একসাথে রোজা এবং ঈদ পালন করতে সমস্যা কোথায়(উল্লেখ্য: আরব বিশ্ব,মধ্য এশিয়া, এশিয়ার অনেকগুলি দেশ, ইউরোপ এবং আফ্রিকাও একসাথে রোজা, ঈদ পালন করে থাকে) ? এ বিষয়ে সময়ের পার্থক্য সর্বোচ্চ ১২ ঘন্টার পরিবর্তে আমাদের ক্ষেত্রে কেন ১/২ দিন দীর্ঘ হয়ে যায় ? হাদীস অনুযায়ী কিয়ামত হবে ১০ই মুহাররমে। প্রশ্ন হল-১০ই মুহাররম কোনটি অথবা কয়টি ? আমাদেরটি নাকি ওদেরটি ? আরব,আফ্রিকাতে যদি ১০ মুহাররম আগে হয় তাহলে ওদিকে আগে কিয়ামত হবে। আর যদি সেদিন অথবা তার পরের দিন আমরা আকাশে চাঁদ না দেখতে পাই তবে তার পরেরদিনকে অবশ্যই নিয়মানুযায়ী ১০ই মুহাররম হিসেবে বিবেচনা করা হবে। সেক্ষেত্রে চাঁদবদন হায়াৎ আরো দুদিন বর্ধিত হবার সম্ভবনা ঠেকানো যাচ্ছেনা। আমরা তওবা পড়ে নি:শঙ্কচিত্তে অবশিষ্ট খাবারটুকু চিবোতে চিবোতে টেলিভিশন, ইন্টারনেটের কল্যানে লাইভ কিয়ামত প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পাব, তা জাতীয়তাবাদী চাঁদের কল্যানে দম্ভের সাথে বলা যাচ্ছে।
রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কারনে সীমানা নির্ধারন করে উম্মাহকে ভাগাভাগি কারা বা দেশ প্রতিষ্ঠা করা আল্লাহর নির্দেশ নয় এবং সুন্নাহও নয়। এভাবে সীমানার উপর নির্ভর করে শরিয়াহর হুকুম জারি করাও সুন্নাহ নয়। উম্মাহ একটি দেহের মত। সারা বিশ্বের সহীহ মুসলিম একটি দেহ,একই তাদের ঈদ। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
“আর তোমরা সকলে আল্লাহর রজ্জুকে সুদৃঢ় হস্তে ধারণ কর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। (আল-কুরআন,৩:১০৩)
মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদেরকে জাতীয়তাবাদী চাঁদের হাত থেকে রক্ষা করুন !এবং পৃথিবীর সব মুসলিমদের একই দিন থেকে রোযা রাখার এবং একই দিন ঈদ পালন করার তৌফিক দান করুন।
***সুত্র সুমুহ ইসলামী ফাউন্ডেশন থেকে প্রকাশিত সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, এবং আবু-দাউদ এর হাদিস থেকে নেয়া।
by Ibn Abu Ahmad on Friday, July 29, 2011 at 11:52am
কোনো এক বিধ্বস্ত ধূসর সন্ধ্যা। স্কটল্যান্ডের গগণে কমলাভ এক বিষাদময় চাঁদ উদিত হলো। চাঁদের সিকিভাগ যেন কোনো কারণে কেউ ছুরি দিয়ে কেটে নিয়েছে। বিবিসি চ্যানেল থেকে গম্ভীর কন্ঠে সংবাদপাঠক বলে চললো, “At last, the devastating day of Destruction or Doomsday has happened across the Middle East.”
ঠিক ২৪ ঘন্টা পরের কথা। এটিএন বাংলার সংবাদপাঠিকার মস্তকে ঘোমটার আবরণ দেখা গেল। নিশ্চয় আল্লহভীতি দেখানোর মতো কোনো কারণ ঘটেছে!জানা গেল কিছুক্ষণ পরেই। ভয়ার্ত কন্ঠে সে বললো, “ইউরোপ,আমেরিকা এবং ল্যাটিন আমেরিকার সকল যায়গায় আজ সেই মহাপ্রলয় দেখা গিয়েছে। মানুষ তো দূরের কথা, সেই মহাদেশের অস্তিত্বই এখন খুজে পাওয়া যাচ্ছে না পৃথিবীর মানচিত্রে। এই উপমহাদেশের সকল জীবিত সত্ত্বাকে তাই সতর্ক হয়ে জীবনের শেষ প্রহর কাটানোর জন্য উপদেশ দেয়া হচ্ছে।”
আরো ২৪ ঘন্টা পরের ঘটনা। এবারে উপমহাদেশেও সেই মহাপ্রলয়ের আগমন ঘটলো। কিন্তু, সতর্ক করে দেবার মতো কোনো জীবন্ত সত্ত্বা তখন পৃথিবীর বুকে টিকে নেই।
পাঠক সমাজ হয়তো আমাকে পাগল ভাবছেন। কিংবা মনে করছেন আমি রসিকতা করছি। ব্যাপারটা মোটেই সেরকম কিছু নয়। ব্যাপারটি আপনারা চালাক হলে আমি কিবলতে চাচ্ছি আগেই বুঝতে পেরেছেন আশা করি।আর বুঝতে না পারলেও ভয় নেই। খুবই সহজ বিষয়। মিনিট দশেকের একাগ্রচিত্ত আপনাকে এই মহামূল্যবান বিষয়টি সম্পর্কে সম্পূর্ণ সচেতন করে দিবে।
তার আগে কিছু সাহিত্যের কথা বলে নেই। কবিদের কবিতায় কিংবা গদ্যকারের গদ্যে আকাশের গোলাকার যে বস্তুটি নিয়ে সবচেয়ে বেশী মাতামাতি লক্ষ্য করা যায়; যে বস্তুটি হাতে পাবার লোভ দেখিয়ে ছোট্ট শিশুকে মা ভাত খাওয়ান; যে বস্তুটি বৈধ এবং অবৈধ ভালবাসা উভয় ক্ষেত্রেই উপমা হিসেবে ব্যবহৃত হয়, সেটা হচ্ছে চাঁদ- পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ।
সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, এই বস্তুটি কেবল সাহিত্যিকদের সাহিত্যরসের রসদই নয়; এটা বিভিন্ন ব্লকের আলিমদের একটি বিতর্কের মাধ্যমও বটে। চন্দ্র দেখে মাস শুরু করার যে বিষয়টিতে রাসূল(স) এর সময়ে কোনো ধানাই-পানাই ছিলো না; যে বস্তুটির ক্ষেত্রে অধিকাংশ ক্লাসিকাল স্কলাররা একমত; সে বিষয়ে বর্তমান সময়ে মতানৈক্য মহামারী আকার ধারণ করেছে। এবং আরো মজার বিষয় হচ্ছে, চাঁদ দেখে রোজা রাখার বা ঈদ করার বিভিন্ন কায়দা কানুন দিয়ে আমরা কে কোন দলের বা কোন ব্লকের সেটার হিসেব কষতে থাকি;যদিও সেটা ইসলামের জন্য ক্ষতিকর,তা সত্ত্বেও।
এবারে কিছু বাস্তব অসঙ্গতির কথা উল্লেখ করা যাক।
প্রথমত, যদি কিয়ামত ১০ই মহররম,শুক্রবার (সেটার দলীল আমার কাছে নেই) হয়ে থাকে তবে কি তা সৌদি আরবের ১০ তারিখ? নাকি ইউরোপের? না বাংলাদেশের? এ কথাটা যদি সত্য হয়ে থাকে যে, সেই নির্দিষ্ট দিনেই কিয়ামত হবে; তবে এই নোটের প্রথম তিন প্যারা কল্পনা নয়; বাস্তব সত্য মাত্র।
দ্বিতীয়ত,আমরা সকলেই জানি হজ্জ্বের সময় জিলহজ্জ্ব মাসের ৯ তারিখ আরাফাতের ময়দান ভ্রমণ করতে হয়।এই আরাফার দিনে রোজা রাখা সুন্নত। তো ব্যাপারটা হচ্ছে, হাজীরা তো সৌদি আরবের ০৯ তারিখ আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করেন;কিন্তু আমাদের দেশের তো তখন জিলহজ্জ্ব মাসের ০৮ তারিখ কিংবা ০৭ তারিখ থাকে, ০৯ তারিখ না। তাহলে আমরা কেন ০৭ কিংবা ০৮ তারিখে রোজা রাখবো ?
তৃতীয়ত, আরবী বছরে একটি রাত আছে, যে রাতে ইবাদত করা হাজার বছর ইবাদতের চেয়েও উত্তম। যদিও নির্দিষ্ট করে বলা নেই কবে এই মহিমান্বিত রাত্রি বা লাইলাতুল ক্কদর,তবুও অনেক আলিম,স্কলার আর মুহাদ্দীসদের মতে এটি রমজানের ২৭ তম রজনীতে হবার সম্ভাবনা বেশি। তাই যারা বেশী পাপ কাজ করেছেন, তারা সৌদি আরব, ইউরোপ আর বাংলাদেশ ভ্রমণ করলে টানা তিন রাত এই অসামান্য ফায়দা লাভের সুযোগ পেয়ে যাবে।
চতুর্থত, ধরুণ কোনো ব্যাক্তি রমজানের শুরুতে বাংলাদেশে ছিলো। দূর্ভাগ্যজনকভাবে সেদিন এখানের চাঁদ দেখা যায়নি।তাই বাধ্য হয়েই রোজা শুরু করলো পরের দিন।তো সেই লোকের ধরুণ কাজের খোজে সৌদি আরবে পাড়ি জমানোর সুযোগ পেল মধ্য রমজানে। এখন সেখানে গিয়ে সে দেখলো, রোজা দুই দিন আগে শুরু হয়েছে(কারণ চাঁদ উঠতে দেখা না গেলেও তারা এস্ট্রোনোমিকাল ক্যাল্কুলেশন করে নাকি ঠিক করেছে যে চাঁদ কবে দেখা যেতে পারে। আর এভাবেই নাকি তারা আগের দিনেই রোজা শুরু করে দিয়েছে)। তা সৌদি আরবে ২৯ রোজার পরের দিন ঈদ হলো।এখন সেই হতভাগা ব্যাক্তি কি ২৭ রোজা রেখেই ঈদ করবে? (এ কেমন কথা!!) পক্ষান্তরে, সৌদি থেকে রোজার শুরুতে কেউ বাংলাদেশে এসে রমজানের মধ্যভাগ পেলে তার ঈদ হবে তার রাখা ৩১ কিংবা ৩২ রোজার পর!! এটাও কেমন জানি দৃষ্টিকটু লাগছে!
পঞ্চমত, ধরুণ এই রমজানে কোনো কারণে ভারত আমাদের সীমান্তের কোনো জেলা দখল করে সেটাকে তার কোনো অঙ্গরাজ্যের দ্বারস্থ করে দিলো। এখন সে জেলার লোকেরা যদি ওই রাজ্যের একদিন পরে রোজা শুরু করে আর ঈদ হয় ২৯ রোজার পরে,তাহলে কি এই জেলার লোকেরা এখন ২৮ রোজায় ঈদ করবে(কারণ চাঁদ তো দেখা গেছে)??
এবারে আসা যাক চাঁদ দেকে মাস শুরু করা নিয়ে কিছু সাধারণ বিভ্রাটের কথায়। কোরআনে বলা হয়েছে, “Whoever witnesses the crescent of the month, he must fast the month." [Sura Baqara-2:185]
অর্থাৎ, “তোমরা যারা রমজান মাসের চাঁদ দেখ,তারা রোজা রাখ।”
এখানে কিন্তু, যারা চাঁদ দেখেছে তাদেরকে রোজা রাখার কথা বলা হয়েছে। তো প্রশ্ন হলো, আপনি জীবনে কয়বার চাঁদ দেখে রোজা শুরু বা শেষ করেছেন? যদি আপনি স্বচক্ষে চাঁদ দেখে না থাকেন,তাহলে কি রোজা হবে না? আমি তো জীবনের সব রমজানের বা ঈদের চাঁদ দেখে রোজা বা ঈদ পালন করিনি। চাঁদ দেখা কমিটির কারা কারা আছে,ওদের কথা শুনেই শুরু করে দিলাম।
তার মানে শাব্দিক অর্থে এটা বলা হয়নি,এটার Implicit কোনো meaning আছে।কি সেই অর্থ? একটু চিন্তা করলেই বুঝতে পারবেন যে,এখানে চাঁদ দেখে নিশ্চিত হবার কথা বলা হয়েছে, সেটা একজনি দেখুক,অনেকেই দেখুক কি অধিকাংশই দেখুক। শর্ত হচ্ছে, যারা চাঁদ দেখবে তাদেরকে বিশ্বাসযোগ্য,সত্যবাদী মুসলিম হতে হবে।সে বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের মুসলিমই হোক না কেন, বিশ্বাসী হলে তার কথার সত্যতা গ্রহণ করতে হবে।
এখন আরেকটা প্রশ্ন থেকে যায়,তা হচ্ছে এটার কোনো সীমানা আছে নাকি। অর্থাৎ,ভৌগোলিক সীমানা এখানে কোনো নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে নাকি। গতকাল কোন এক সাইটে দেখলাম বেশ জোর গলায় বলছে, যে কোনো দেশের আলিমরা যেটা মেনে নেন সেটাই আমরা মেনে নিতে বাধ্য থাকবো।কিন্তু, আমার প্রশ্ন হচ্ছে,সব দেশের যেসব আলিমরা সরকারের দ্বারস্থ হোন, তারা যতটা না জ্ঞানের কারণে পদবী পান, তার চেয়ে বেশী পান বিলকুল হারাম বস্তু বা কাজকে হালাল করে কিংবা ইসলামকে সেকুলারাইজ করে। ব্যাপারটা বুঝার জন্য খুব বেশী জ্ঞানী হওয়ার দরকার নেই যে বর্তমান যুগে সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতির আসনে সে আলিম বসতে পারবেন না যিনি রাজতন্ত্রকে হারাম বলেন। একইভাবে বাংলাদেশের বায়তুল মোকাররমের খতীব হওয়ার প্রধান যোগ্যতা থাকতে হবে গণতন্ত্রের মত স্পষ্ট শিরককেও বৈধ ঘোষণা করা। একইভাবে শেয়ার ব্যবসা, সুদভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা কিংবা সেকুলার আদালতকে যে যতটা গুছিয়ে, যতটা সুচারুভাবে সাধারণ মানুষের ব্রেইনওয়াশ করে হালাল ঘোষণা করতে পারবে, তার উচ্চাসন ততটাই নিশ্চিত। আর এসবের বিরুদ্ধে সোচ্চার আলিমদেরকে পদবী তো দূরের কথা, অস্তিত্বের জন্যই পুলিশ-র্যাবের ভয়ে টতস্থ থাকতে হয়।সে গল্পে পরে আসছি।
এখন অনেকে প্রশ্ন করে বসতে পারেন, সব দেশে তো আমরা একই সময়ে সেহরী-ইফতার করি না কিংবা সালাত আদায় করি না। কথা সত্য। তবে এটার সাথে মাস শুরু করার যে বিন্দুমাত্র যোগসাজশ নেই, তা যে কোনো মানুষের কাছেই বোধগম্য। সূর্য হচ্ছে, পাঁচ ওয়াক্ত সালাত এর সময় নির্ধারণ(ফজরের ওয়াক্ত সুবহী সাদিক থেকে এশা শুরুর লক্ষণ সূর্যের লাল আভা না থাকা, সবগুলোই সূর্যের অবস্থানের উপর নির্ভরশীল)। পক্ষান্তরে, চাঁদ দেখার কারণ শুধু মাস শুরু কিংবা শেষ করা।সোজাসাপ্টা কথায় নতুন চাঁদের দ্বারা মাস শুরু হয়, আর সূর্যের বিভিন্ন অবস্থান দিয়ে নামাজের ওয়াক্ত নির্ধারণ হয়। যেমন সেহরী আর ইফতারের সময় ঠিক করে দিয়ে আল্লাহ বলেন- - "And eat and drink until the white thread of dawn appears to you distinct from its black thread; Then complete your fast until the night appears" [TMQ 2:187]”
উপরের সব কিছুই আসলে অর্থহীন হবে যতক্ষণ না আমরা আমদের যে কোনো কাজকে শরীয়াহ দিয়ে প্রমাণ করতে পারি।কারণ, যে কোনো প্রকার অনৈক্য দেখা গেলে আল্লাহ ও তার রাসূলের দিকে ফিরে যাবার কথা বলা হয়েছে এভাবে-
“If you differ in anything among yourselves, refer it to Allah and His Messenger, if you believe in Allah and in the Last Day. That is better and more suitable for final determination.”[Sura Nisa-04:59]
এখন দেখা যাক, চাঁদ দেখা নিয়ে শরীয়াহ কি বলে। আগের দুইটি আয়াত তো দেখলামই। এবারে কিছু হাদীস দেখা যাক।
Bukhari and Muslim reported on the authority of Abdullah Ibnu Omar (may Allah be pleased with them) that the Messenger of Allah (saw) mentioned Ramadhan and said:
"Do not fast till you see the new moon, and do not break fast till you see it; but if the weather is cloudy complete it (thirty days)."
Muslim also reported on the authority of Abdullah Ibnu Omar that the Messenger of Allah (saw) said:
“The month of Ramadhan may consist of twenty-nine days; so when you see the new moon observe fast and when you see (the new moon again at the commencement of the month of Shawwal) then break it, and if the sky is cloudy for you, then calculate it (and complete thirty days)."
এখানে বলা হয়েছে, নতুন চাঁদ(রমজানের) দেখা ব্যতীত রোজা শুরু না করা এবং নতুন চাঁদ(শাওয়ালের) দেখার আগে রোজা ভঙ্গ না করা। এখানে ["Do not fast till you see it and do not break fast till you see it." - "Do fast when you it is sighted and break fast when it is sighted] বলে কোনো অঞ্চলের মুসলিমদের মধ্যে এই ব্যাপারটি সীমাবদ্ধ করে দেয়া হয়নি।আর এই হাদীসে যে ধাতু ‘সুম্মু’ ব্যবহার করা হয়েছে তার অর্থ ‘রোজা রাখ’ যা আম (সাধারণ) অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। অর্থাৎ, বিশ্বের সকল মুসলিমদেরকে Address করে বলা হয়েছে, শুধুমাত্র সৌদিদেরকে বলা হয়নি। আবার ‘রুয়ায়াতাহ’ শব্দটি এখানে ব্যবহৃত হয়েছে যার অর্থ ‘দেখা গেলে’। এখানেও কোনো স্থান,কাল ইত্যাদি দিয়ে এটা সীমাবদ্ধ করে দেয়া হয়নি। অর্থাৎ,এখানেও সকল মুসলিমদের কথা বলা হচ্ছে।
এখন আমরা যে প্রশ্নবাণে জর্জরিত তা হচ্ছে, রাসূল(স) কি তার জীবনে কোনোসময় মদীনায় চাঁদ দেখা না গেলেও অন্য অঞ্চলের মুসলিমদের কথা শুনে রোজা শুরু করেছেন কিংবা ঈদ করেছেন? উত্তরটা নিচেই দেয়া আছে:
It is also reported in a Saheeh hadith: Abu ‘Umayr ibn Anas reported from his paternal uncles
among the Ansaar who said:
“It was cloudy and we could not see the new moon of Shawwaal, so we started the day fasting, then a caravan came at the end of the day and told the Messenger of Allaah (peace and blessings of Allaah be upon him) that they had seen the new moon of Shawwaal the day before, so he told the people to stop fasting, and they went out to pray the Eid prayer the next day.”
[Reported by the five. It is sahih; al-Irwaa’, 3/102 Abu Dawud 1153]
অর্থাৎ, রাসূল(স) সাহাবীদেরকে রোজা রাখা বন্ধ করে ঈদ করতে বললন। অপর বর্ণনায় এসেছে, তার আগে তিনি যারা সাক্ষ্য দিচ্ছিলেন তারা মুসলিম কি না সেটা যাচাই করে তাদেরকে কালিমা শাহাদাত পাঠ করিয়ে সাক্ষ্য নিয়ে চাঁদ দেখা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন।
যেখানে স্বয়ং রাসূল(স)রোজা ভঙ্গ করেছেন (অন্য যায়গার মুসলিমরা শাওয়াল মাসের নতুন চাঁদ দেখেছে এটা নিশ্চিত হবার পরে), সেখানে আমাদের এটা গ্রহণ করতে এতো দ্বিধাবোধ কেন? কেন আমরা সকল মুসলিম একসাথে ঈদ করার কথা আসলে রাসূল(স) এর জীবনের ঘটনা না দেখে কোন দেশের গ্র্যান্ড মুফতী কি বলেছে সেটা দেখি? ইমাম আবু হানিফা,ইবনে তাইমিয়্যা এবং আরো অনেক ক্লাসিকাল স্কলাররা সকল মুসলিম একই সাথে ঈদ করার স্বপক্ষে শরীয়াহ প্রমাণ দেখিয়েছেন। তবে কি আমাদের কাছে বর্তমান যুগের মুফতী সাহেবদের মতামত রাসূল(স) এর জীবনের উদাহরণ থেকে বেশী দামী হয়ে গেল? যদি তাই হয়, তবে এতক্ষণ যা বললাম তার সবই অর্থহীন।
আরেকটি বিষয় হচ্ছে জোতির্বিদ্যা বা Astronomy ব্যবহার করে মাস শুরু করা। এখানে Astronomy ব্যবহার করে করাটা ঠিক হতো, যদি তা শরীয়াহ এর হুকুমের সাথে যেত। কিন্তু, ‘রুয়ায়াতাহ’ শব্দটি কেবল মানুষের চোখে একটি বস্তু পর্যবেক্ষণ এর কথা বলে।এখানে যদি বিশ্বের কোনো প্রান্তে বৈরী পরিবেশের কারণে চাঁদ দেখা না যায়, তবুও আমাদেরকে ৩০ রোজা রাখতে হবে। আর যে চাঁদ সারা বিশ্বের সকল প্রান্তে একবার না একবার উঁকি দেয়ই, সে চাঁদ নিশ্চয় সব এলাকায় মেঘের জন্য মানুষের দেখা পাবে না এমনটা ঘটবে না। সৌদি আরবে গতবার এই কারণে ঈদুল আজহা একদিন আগে হয়েছিল।
আমাদের করণীয়-
* প্রথমত, আমাদের সজাগ থাকতে হবে যে চাঁদ কোথাও দেখা যায় কিনা। এমন অনেক ওয়েবসাইট আছে যেখানে এই নিয়ে প্রতি ১০ মিনিট পর পর আপডেট দেয়া হয়। এখানে লক্ষণীয় বিষয় হলো, আমাদের সজাগ দৃষ্টি। আমরা (মনের সন্তুষ্টির জন্য) যদি বার্সা-রিয়াল, ভারত-পাকিস্তানের খেলা দেখার জন্য রাত জাগতে পারি, তবে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য যে রোজা রাখবো তা নিশ্চিত হয়ে ঠিকভাবে রাখার জন্য কি রাত জাগতে পারবো না। আর সবসময় নিশ্চয় এমনটাই হবে না যে, পসচিমদের দেশেই চাঁদ আগে দেখা যাবে যার জন্য আমাদের না ঘুমিয়ে থাকতে হবে।
*চাঁদ দেখার বিভিন্ন অঞ্চলের সময়ের সর্বোচ্চ পার্থক্য ১০ ঘন্টা।অর্থাৎ, সবচেয়ে পশ্চিমের দেশে সেটা দেখা গেলেও সবচেয়ে পূর্বের দেশে সুবহী সাদিক এর সময় গড়াবে মাত্র। আর আল্লাহ সঠিক পন্থায় আমাদের চেষ্টাটাই লক্ষ্য করবেন। মুসলিমরা একসাথে থাকার সময়, অর্থাৎ ইসলামিক খিলাফাহ এর সময়, যে কোনো অঞ্চলে চাঁদ দেখা গেলে ঘোড়া ছুটিয়ে কিংবা কোনো বিশেষ বাতি জ্বালিয়ে বা শব্দ শুনিয়ে সবাইকে জানিয়ে দেয়া হতো যে নতুন মাসের চাঁদ দেখা গিয়েছে। এইসকল মতানৈক্যের প্রধান কারণ মুসলিমরা আজ তাদের একসাথে থাকার গ্রাউন্ড হারিয়েছে, হারিয়েছে তাদের ভিশন, হারিয়েছে পৃথিবী নেতৃত্ব দেবার রাজনৈতিক ও সামরিক ঐক্য। আর এর সবই হয়েছে প্রায় ১৩০০ বছরের বিচিন্ন সময়ে জয় করা একটা বিশাল ঐক্যবদ্ধ জাতিকে যখন ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করে ৫৮টি ক্ষুদ্র,অস্থিতিশীল রাষ্ট্রের প্রয়াশ নেয় ইসলামের শত্রুরা। আজ সময় এসেছে আবার রাসূল(স) এর আদর্শে ঐক্যবদ্ধ হয়ে পৃথিবী নেতৃত্ব দেবার।
*আমাদের এলাকা-মহল্লার ইমামদের সাথে এই নিয়ে কথা বলা প্রয়োজন। তারা অনেকেই বিষয়টা জানেন, তবে চাকরী, মসজিদ কমিটি আর পুলিশ-র্যাবের ভয়ে অনেক কিছুই বলতে পারেন না। যেই দেশে ইমামের খুতবা সরকার ঠিক করে দেয়, সেই খুতবা না পড়লে আবার ইমামকে অ্যারেষ্ট করা হয়,যেই দেশে ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ‘ব্যালী ড্যান্স’ দেখানো হয় আর যে দেশের ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সবচেয়ে বেশী ভ্রমণ করেন মার্কিন পররাষ্ট্রদূত(একজন খৃষ্টান) সে দেশে নিশ্চই সেসব আলিমরাই সুখে থাকবেন যারা ইসলামের আসল সত্য লুকিয়ে ইসলামের পাশ্চাত্য ভার্সন বের করবেন।আর আমরা সাধারণ,শিক্ষিত জনতা এই বিষয়ে কথা বললে সমাজের লোকেদের এই বিষয়ে ভুল ভাঙ্গবে।
*‘আজ বাংলাদেশে ঈদুল ফিতর পালিত হচ্ছে।‘
আর
‘আজ সমগ্র মুসলিম বিশ্বে ঈদুল ফিতর পালিত হচ্ছে।’
কথা দুইটির পার্থক্য অনেক। কাফিররা আমাদের বলে, তোমরা তো একইদিনে তোমাদের প্রধান উৎসবই করতে পারো না, তোমাদের আবার Unity কি? তার উপর বাংলাদেশের ঈদ বলে আমাদেরকে মুসলিম পরিচয় ভুলিয়ে অঞ্চলভিত্তিক জাতীগত পরিচয়কে বড় করে দেখানো হচ্ছে।
তাই একই দিনে ঈদ করার কথা সুনলে আপনাকে কেউ সহজেই মেনে নিবে, একথা ভুলেও ভাববেন না। তাতে কি? আল্লাহ তো মেনে নিবেন। আর তার সন্তুষ্টিই তো আমাদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য।
PART 1 - Introduction to book "A complete guide to the rules of fasting" by Sheikh Abu Iyaas
Sunday, 31 July 2011 10:20 Sheikh Abu Iyaas
Khilafah.com will be serialising the book "Al Jaami'u li Ahkaam is Siyaam" throughout the blessed month of Ramadhan. Please note this is a draft translation from Arabic. If any confusion arises from the translation then please refer to the original Arabic book.
Al Jaami'u li Ahkaam is Siyaam
"A complete guide to the rules of fasting"
by Sheikh Abu Iyaas Mahmood bin Abdul-Lateef bin Mahmood ('Uwaydhah)
First Edition
All praise is to Allah سبحانه وتعالى Lord of the worlds, Ar-Rahman Ar-Raheem, the Owner of the Day of Judgment and prayers and peace are upon the Messenger of Allah who was sent as a mercy to all mankind. May Allah's prayers and peace be on him and on his family and companions.
This is a book about the laws of fasting which I have named 'Al Jaami'u li Ahkaam As Siyaam' (A complete guide to the rules of fasting). It has been written as a follow up to the book 'Al Jaami'u li Ahkaam As Salaah' (A complete guide to the rules of prayer). I have followed the same methodology in this book. From the beginning of 'Ahkaam at Tahaarah' (rules of purification) I have followed and specified an effective model and methodology for the writing of Fiqh. The reader now has at his disposal two complete books of Fiqh representing a specific model.
This was my intention when issuing these two books and I believe that they are sufficient to act as a blueprint for the fuqahaa (jurists) and mujtahideen (Scholars) in their work without the need to expand the examples. I do not claim that I have produced for the reader a complete series on Islamic fiqh but I only aimed to present the most correct example and model for the presentation of fiqh. I believe these two books are sufficient to achieve this purpose.
The methodology I have used to write fiqh achieves the following:
1) To present all of the texts from Al Quraan Al Kareem and the As Sunnah Ash Shareef which relate to an issue (mas'ala) from the issues of fiqh. I have done this without summarizing the evidences that are in accordance with the Jurist's own view and which support his Ijtihaad whilst leaving out all other evidences like a great number of scholars from the past and present have done.
2) The use of Saheeh and Hasan Ahaadeeth only and leaving all others categories. This includes all weak forms of Hadeeth, and I mean those that the Muhaddithoon (Hadeeth Scholars) have agreed upon. These hadeeth are not allowed to be used by anyone in the deriving of Al Ahkaam Ash Sharee'a and not even in the merits of actions. As for Ahaadeeth which the Muhaddithoon have disagreed upon in terms of them being sound or weak, then if it was in agreement with other sound saheeh and hasan ahaadeeth or if it was alone in its section then I accepted it. However if it contradicted the saheeh or hasan hadeeth (in meaning) then it was rejected and left.
3) To show the opinions of the Fuqahaa, Ulamaa and A'immah in every mas'ala (issue) of the masaa'il to the greatest extent possible. This enriches the study and it displays the strength of the extracted Ahkaam (rules) in comparison to others. Its case is like the natural pearls displayed beside those which are artificial and manufactured and if the natural pearls would be shown to people by themselves then the people would not have been able to sense their beauty and excellence or appreciate their value.
4) To work with all the texts (evidences) related to an issue of the issues and not neglecting any. This is because the reality of the Nusoos (texts) is that they are not contradictory to each other in origin. There has never emanated from the Prophet صلى الله عليه وسلم ahaadeeth which are contradictory except and only in the very rare case of Nuskh (abrogation). As for what we see of ahaadeeth that are contradictory within most of the fiqhi issues then this goes back to the sanad (chain) and this requires us to look at and explain. The weak forms of ahaadeeth and by greater reason (baab awlaa) the ahaadeeth al mawdoo'a (missing link in sanad/chain of narration) need to be distanced. All the weak ahaadeeth that have no origin to them but have been spread in the books of fiqh, Usool ul Fiqh need to be separated from those which are sound i.e. saheeh and hasan.
5) Examining the texts and extracting the Ahkaam from them only occurs in three ways:
(i) By bringing of the texts one with another, by explaining one text with another text, and this is the strongest method to extract.
(ii) Or by explaining a text in accordance with knowledge of the sharee'ah
(iii) Or thirdly by explaining the evidence with firm knowledge of the Arabic language which is distant from weak and strange interpretations.
A text is therefore understood by another text, or by knowledge of the sharee'ah or by submitting to a firm knowledge of language. In relation to the far off interpretations, regretful explanations and the process of making the texts agree with the opinion of an Imaam or madhhab, all of this has to be abandoned from the study of fiqh so that fiqh and sharee'ah maintains its honour and high status. This is to protect them against any alien or foreign intrusion or western infiltrations as we have seen in many books of fiqh particular from authors in our present time.
6) The origin for every Muslim is to be restricted in his actions by the hukm shar'i. He should commit to it with confidence and contentment and not to take it and act according to it if he is doubtful in its correctness. In order to help the Muslim with this peace of mind in what he is following is hukm shar'i, we have proceeded with this methodology which incorporates the Ahkaam with its evidences, with proofs of its correctness and likewise proofs for the error in other opinions.
7) The Sahaabah (rah) used to receive/understand the texts of al-Quran al-Kareem and the as-Sunnah an-Nabawi in a natural way similar to how we receive speech between and amongst ourselves. This means that just by hearing the ayah or hadeeth they would understand the desired meaning straight from the Arabic and sharp intellect and as such rarely disagreed in the extraction of the Ahkaam. The taabi'oon and taab'i taabi'oon (first and second generations after the Sahaabah) followed this same methodology and after them came the period of the Fuqahaa after them. At that time the madhaahib of fiqh (schools of thought) were established and what accompanied that of partisanship and intolerance. Fiqh began to take a new orientation and progressively became distanced from the natural way to ways that could be described as manufactured. This means that the manufactured means overcame/dominated the Fuqahaa in their istinbaat (extraction) process. This was the same for every Faqeeh who followed a Madhhab or Imaam. His efforts were directed to giving victory to his madhhab or Imaam. They became involved in forms of debate and 'ilm ul-Kalaam (scholastic debate) and were affected by it to a lesser or greater extent. In addition they placed down different Usooli principles, increasing its scope and complexity so fiqh became manufactured with nobody understanding its precise details except their respective specialists. With time the process of receiving/understanding the texts naturally stopped completely. The Istinbaat (extraction) of Ahkaam became limited to the new breed of fiqh and then even those who practiced it declined in number gradually until the doors of ijtihaad were closed.
In relation to this I say that the main reason for the closing of the doors of Ijtihaad and the disappearance of the mujtahidoon was due to the fact that fiqh became manufactured with its principles and Usool which were rarely understood and comprehended by those wishing to learn, let alone the ordinary people due to its complicated nature and ramifications. The Ulamaa of every madhhab proceeded to place Usooli principles (qawaa'id usooliya) specific to his madhhab with all of its branching and ramifications (additional problems/complications). As a result of the Usooli principles becoming over complicated, this had ramifications on ijtihaad and the resultant Ahkaam, to the point where a lot of these Ahkaam were outside the realm of soundness.
So that fiqh returns to its natural way and away from these over complications and ramifications and so that the madhabi differences are lessened and what accompanies it of partisanship and in addition to create the path to increase the number of mujtahidoon, I have come up with this model/methodology which I believe is the most sound for the writing of fiqh. Inspired by the way that the Sahaabah (rah) received and understood fiqh and distancing myself from the over complications in understanding. Due to this the noble reader will find that the Usooli principles rarely appear in this model and what does appear is free of depth or complication.
The difference between the method of the Sahaabah (rah) and those who came after was that the Sahaabah (rah) use to place the text in front of them relying on what came to their minds from their understanding of the Arabic language. In addition to their knowledge and experience of how the texts lived in their surroundings and circumstances taking the text with simplicity without complication. As for those who invented the new way of fiqh, they placed the differing Usooli principles in front of them as their starting point with all of its branches, complicatedness and details. They then made the people subservient to these principles. From this many and diverse meanings sprung out linked to the different branches and ramifications. This is where the biggest dispute occurred between them (new fiqh people) as every one of them held on tightly to a specific meaning/wording that he had understood, and with the hukm which he had extracted according to what he had put down of the detailed principles specific to him. He strove to defend it and respond it so as to seek victory for the madhhab of his Imaam. All of this led to a situation where the study of fiqh produced a lot of varied and different Ahkaam. This included the Saheeh (sound), Da'eef (weak) and Shaadh (rare/strange). If a reader looks at the vast quantity of opinions in every single matter it will give him a head ache. If someone would like examples of what I have stated then let him look up the fiqhi opinions in the following issues:
When is Laylat ul Qadr?,
Does sleep break the Wudoo?,
What is the middle prayer (salaatul wustaa)?
You will find in these issues and others like them huge and wide differences especially in the book Fathul Baari of Ibn Hajar Al Asqalaani and also in the Sharh (explanation) Saheeh Muslim by Imaam Nawawi.
8) In relation to getting rid of the manufactured method of extracting the Ahkaam Ash Sharee'ah and Ijtihaad and the return to the natural method which was dominant in the first three generations, those of the Sahaabah, those who followed them and those that followed them. The only way is through the devotion/dedication to the texts of Allah's سبحانه وتعالى book al-Majeed and the noble ahaadeeth through reading, memorisation and explanation. This is a devotion and pursuit which is correctly described as the eternal living of the sharee'ah texts which continues years after years, until we have acquired the ability and knowledge which the Sahaabah (rah) of the Prophet of Allah صلى الله عليه وسلم possessed. This requires a working relationship with the sharee'ah texts in understanding, extraction and indications in exactly the same way that we possess the ability that we work with speech amongst ourselves. We would therefore understand the texts as we understand our speech amongst ourselves and without this methodology the doors of Ijtihaad will never be opened. If they were to be opened however, then it would not lead to the correct form of Ijtihaad which possesses the quality of endurance and continuance.
At this point I have a very important remark to make and that is that the Mujtahid can either be a Mujtahid Mutlaq or a Mujtahid in a Mas'ala as is known amongst the fuqahaa. There exists a great deal of benefit for fiqh and Muslims in both these forms of Mujtahid.
As for the Mujtahid in the Madhhab, who proceeds with ijtihaad in accordance to the Usooli principles which were established by their Imaam. If this Mujtahid gives free reign to his mind and understanding in the extraction of Ahkaam and he doesn't restrict himself to what his Imaam arrived at then there is no problem in this and the benefit is like the other categories of Mujtahid. An example of this is Ibn Mundhir from the Shaafe'iyah. As for when this type of Mujtahid doesn't exit from the Ijtihaad of his Imaam and his only aim and goal is to give victory to his Imaam and madhhab then this form is accused of being away from integrity and the true context and is in many situations veiled from the sound opinion and correct Hukm. At Tahaawiy from the Hanafiyyah is an example of this approach.
Here I have another important point and that is that the Muslims are in need of a radical thought revolution away from imitation in order to revive and remove backwardness from it. Islamic fiqh is in need of this creative non-imitational revolution in order to bring it back to life. This revolution will not take place however by widening the scope of education in the Islamic Sharee'ah faculties and universities and will never occur in this way. This is as long as they continue on their current methodology as they have, including al Azhar University, adopted the manufactured approach and have stubbornly latched themselves to it. I sent my book (al Jaami'u li Ahkaam is Salaah) to Al Azhar and received the response that this book is not according to our methodology!!
Therefore we do not find a university or college of sharee'ah that graduates Mujtahidoon or even Fuqahaa. They only graduate Muta'allimoon (people who have studied) and Mutafaqqihoon (students of fiqh). The difference between the Faqeeh and mutafaqqih is that the Faqeeh possesses a specific opinion of his own in the fiqhi issues whereas the mutafaqqih doesn't possess his own opinion and only possesses opinions from other fuqahaa. If we asked a question in a Mas'ala then he would only respond by saying what the madhhab of so and so says on such and such in the issue. He vary rarely outweighs between two opinions and even if he attempts Tarjeeh (outweighing) then the opinion he outweighs isn't even his own opinion but an opinion of a Faqeeh from amongst the fuqahaa.
I view that the only real solution is to return to the way of the Sahaabah (rah) in the way of taking in (the texts) and deriving the rules. This could be if all of the universities, colleges and centers of sharee'ah adopted this method and made all curriculums established on its basis. As long as this does not happen then the situation will remain in a rigid and lifeless state.
I wanted to mention these eight main points so as to explain my model and define it as well as to elaborate its aim and need. My hope is that there will arise from this noble Ummah men who will tread the path of this methodology returning to the origins of the Islamic fiqh with its beauty and greatness. They will take the new matters, realities, actions and problems and derive for them the correct Islamic rulings.
In this book I have stated the number of each hadeeth as it has been established from its source something which did not occur in the previous book despite its precision and complete accuracy. This is therefore an additional benefit making it easier to return back to any hadeeth which the reader wishes to view its source.
I also committed to writing the name of the person whose speech was affirmed in the book in the introduction of the narrators in the case where there were many narrators. This is what I made reference to in the introduction of the book (al Jaami'u li Ahkaam is Salaah). In this book I have found it sufficient to cite the established hadeeth number as reference except in a few instances where there was a need to mention a secondary statement so I cited a further number.
You will find at the end of the book a reference of all the sources relied upon for this work. This includes some information so that any revision will be more efficient and that the truthfulness of the texts mentioned can be verified. In most of these sources the ahaadeeth have been ordered as a series of numbers and in some cases according to the subject matter without citing the number series. So those that have been dealt with according to the first method I have established the series number (raqm mutasalsal) and for those of the second method I have cited the page number where the hadeeth is located. For example (250/4) means the fourth part (volume) page number 250. However in the case of Al Mu'jam Al Kabeer of Tabari and Al Musnad of Abi Ya'la Al Moosally the first number represents the part (volume) whilst the second represents the hadeeth number.
I ask Allah سبحانه وتعالى As Samee'u l Aleem to accept from we what I have spent in effort and what I have intended to achieve and that this book is met with the same acceptance as the first book. All praise belongs to Allah firstly and lastly.
Al –Khamees (Thursday) 28 Jumaada al Awwal 1423 hijri
8th August 2002
আমি marufbillah। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 6 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 5 টি টিউন ও 31 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
ধন্যবাদ । পুরোটা না পরে মন্তব্য লিখছি বলে দু:খিত । কাজের জন্য বের হবো ।
দেখে দেশে দেশে ঈদ করার সুযোগ নেই ।এটা ও.আই.সি-র সিদ্ধান্তবিরোধী । এটা মুসলিমদের একতা নষ্ট করছে । মুসলিমদের বিজ্ঞান বিমুখ, কুসংস্কারাচ্ছন্ন এবং বাস্তবতাবোধ বর্জিত জাতিতে পরিনত করেছে । এজন্য জনমত গঠন করতে হবে । এ সম্পর্কে আমার পোস্ট দেখুন http://www.somewhereinblog.net/blog/fakhrul78/29440806 এবং http://www.amarbornomala.com/post8584.html
http://sonarbangladesh.com/blog/fakhrul/55104
http://hijri-calendar.blogspot.com/ এবং http://bangladesh-astronomical-union.blogspot.com এ আমার লেখাগুলো দেখবেন ।
এ অবস্হা দুর করার জন্য আমাদের জিওদার্নো ব্রুনো আর গ্যালিলিও মতো হতে হবে । বেশী নয় বড়জোড় দশ বার জন হলেই হবে । মুসলিম বিশ্বে এদের মতো লোকের বড় অভাব । এর জন্য দায়ী মুলত: বিজ্ঞান বিমুখ, কুসংস্কারাচ্ছন্ন এবং বাস্তবতাবোধ বর্জিত ধর্মজীবিরা । ঈদ মুবারক । আপনার উৎসব পালন মহিমান্বিত হোক ।