আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে গান শোনা, মুভ্যি দেখা বা গেম খেলা থেকে শুরু করে আরও অনেক ক্ষেত্রেই স্পীকার গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করছে, যা আর কাউকে বলে বোঝানোর প্রয়োজন নেই। আমরা যারা কম্পিউটার ব্যাবহার করি তারা সবাই স্পীকার ব্যাবহার করি বা এর সাথে পরিচিত। তবে একটি স্পীকারের বিভিন্ন টেকনিক্যাল টার্মস বা বিষয় রয়েছে যার সংগে সবাই পরিচিত নই। এই সকল বিষয় জানলে আপনি হয়ে উঠবেন স্পীকারের পটু আর বাজার ঘুরে আপনার চাহিদা অনুযায়ী সেরা স্পীকারটিই আপনি ঘরে আনতে সক্ষম হবেন।
আসুন এক পলকে দেখেনি যে কোন বিষয় গুলো সম্পর্কে আজ আমরা জানবো-
1. Output power
2. Speaker unit
3. Frequency response
4. S/N ratio
এবার বিস্তারিত আলোচনায় চলে আসি
১) আউটপুট পাওয়ারঃ এই বিষয়টি নিয়েই সাধারনত বিভিন্ন ভুল ধারনা এবং অতিরঞ্জন দেখা যায়। আগেই বলে নেয়া ভাল যে আউটপুট পাওয়ার সাধারনত মাপা হয় Watt এ এবং ওয়াট মেসারমেন্ট হয় দুভাবে একটি RMS(Root Means Square) অপরটি PMPO(Peak Music Power Output). RMS ভেল্যুই বেশিরভাগ স্পীকারের স্পেসিফিকেশনে দেখা যায়। PMPO কে অনেক ক্ষেত্রে Peak বা সর্বোচ্চ মান ও বলা হয়। RMS আর PMPO এই দুইএর মধ্যে প্রধান পার্থক্য হলো RMS স্পীকারের এভারেজ ওয়াট নির্দেশ করে আর PMPO তার সর্বোচ্চ ক্ষমতা নির্দেশ করে। এখানে সর্বোচ্চ ক্ষমতা বলা হলেও এক্ষেত্রে স্পীকারের সাউন্ড কোয়ালিটি বা ডিস্টরশান কে বিবেচনা করা হয়না, এছাড়াও এই ক্ষমতা কোন এক বিন্দুতে পরিলক্ষিত অর্থাৎ আপনি সব সময় তা পাবেননা। কিন্তু RMS উপরের সব কিছুই বিবেচনায় এনে হিসেব করা হয় এবং এটি যেহেতু এভারেজ মান তাই আপনি সব সময়ই পাবেন। এত কিছু বলার মানে হলো আমরা স্পীকার কেনার সময় এর RMS মানটিকেই বিবেচনায় আনব যেহেতু এটি বেশি সঠিক। মনে রাখবেন কোন স্পীকারের গায়ে যদি ১২০০ ওয়াট ম্যাক্স লেখা থাকে বুঝে নিবেন এটি তার পীক মান। সে স্পীকারটির আর এম এস হয়ত হবে ১৮০-২০০ ওয়াট। তাই ওয়াট রেটিংস নিয়ে বিব্রত হবেন না। আর এখন ওয়াট সম্পর্কে না জানলেও হবে পরবর্তিতে যা আলোচনা করব তা থেকেই স্পীকার দেখলেই ওয়াট সম্পর্কে পূর্ন ধারনা চলে আসবে।
২) স্পীকার ইউনিটঃ এটি দ্বারা পুরো সিস্টেমে যতগুলো স্পীকার(Driver) ব্যাবহৃত হয়েছে তার বর্নণা থাকে। ধরুন আপনি একটি 2:1 সিস্টেম বিবেচনা করছেন। এখানে লেখা আছে-
Satellite – 3” 4ohms 10 watts RMS
Subwoofer – 5.25” 4ohms 18 watts RMS
এখানে satellite স্পীকারটির মাপ ৩ ইঞ্চি এবং এটি একটি ৪ ওহমের(ওহম হলো রোধের একক স্পীকারের ক্ষেত্রে যাকে ইম্পিডেন্স ও বলা হয়, এ বিষয় বিস্তারিত না জানলেও কোন ক্ষতি নেই) স্পীকার যা কিনা ১০ ওয়াট RMS দিতে সক্ষম। সেটেলাইট স্পীকার গুলো সাধারনত মিডরেঞ্জ থেকে হাইরেঞ্জের সাউন্ড ফ্রিকোএন্সি দেয়ার জন্য ব্যাবহৃত হয়।
আর subwoofer স্পীকারটির মাপ ৫.২৫ ইঞ্চি এবং এটি ১৮ ওয়াট দিতে সক্ষম। সাবউফার ব্যাস বা লো ফ্রিকোএন্সির সাউন্ড দেয়ার জন্য ব্যাবহৃত হয়।
আরেকটি স্পীকার ইউনিট ও যোগ হতে পারে তা হল tweeter. এটি অত্যন্ত হাই ফ্রিকোএন্সি সাউন্ড দিতে সক্ষম।
অনেক ক্ষেত্রে আলাদা ভাবে স্পীকার ডাইমেনশন উল্লেখ থাকতে পারে। মনে রাখবেন স্পীকার ডাইমেনশন অনেক বড় একটি বিষয়। স্পীকারের আকার যত বড় হবে সেটি তত বেশি পাওয়ার দিতে সক্ষম। উপরের উদাহরনে ডাইমেনশন ইঞ্চিতে দেয়া হয়েছে তবে তা মিলিমিটারেও থাকতে পারে। আমি আপনাদের রিকমেন্ড করবো যে ব্র্যান্ডেরই স্পীকার কিনুন উপরের ইউনিট এর থেকে ছোট মাপের কখনই কিনবেন না। আমাদের বাজারের বেশির ভাগ স্পীকারই (২০০০ টাকার নিচের) ২.৫" satellite এবং ৪" subwoofer ব্যাবহার করে। যাতে অল্পতেই সাউন্ড ডিস্টরটেড হয়ে যায়।টা
আমি আপনাদের কিছু স্পীকার ডাইমেনশন এবং তার RMS watt এর একটা ধারনা দিই-
এই গুলো মিডরেঞ্জ এর জন্য-
২.৫''=৭ ওয়াট
৩"=১০ ওয়াট
৪"=২০ওয়াট
সাব উফারের জন্য
৪"=১৫ ওয়াট
৫"=১৭ ওয়াট
৫.২৫"=১৮ ওয়াট
৫.৫''=২২-২৫ ওয়াট
৬"=৩০-৩৩ ওয়াট
৮"=৬০-৮০ ওয়াট
১০"=১২০-১৪০ ওয়াট
সাধারনত এর থেকে বড় স্পীকার দিয়ে তৈরী সিস্টেম আমি বাংলাদেশে দেখিনি। উপরের ওয়াটের মান পরিবর্তন হতে পারে তবে এর থেকে খুব বেশি উনিশ বিশ দেখলে বুঝবেন আপনার সাথে প্রতারনা করা হচ্ছে। তাই ভালো করে স্পীকারের সাইজ এবং ওয়াট যাচাই করে নিন।
৩) ফ্রিকোয়েন্সি রেসপন্সঃ এই ব্যপারটি খুব ভালোভাবে বোঝার বিষয়। আপনারা জানেন যে আমাদের শ্রবন ক্ষমতা হল ২০ হার্টজ থেকে ২০ হাজার হার্টজ বা ২০ কিলোহার্টজ পর্যন্ত। এখন দেখার বিষয় স্পীকারটি কত ফ্রিকোয়েন্সির সাউন্ড দিতে সক্ষম। সাধারনত কোন স্পীকারই আমাদের শ্রবন সীমা অতিক্রম করেনা বরং স্পীকারের সীমাবদ্ধতা আরও বেশি। আমরা যে শব্দ শুনি তা স্পীকারের ভাষায় তিনটি স্তরে ভাগ করা হয়েছে,
লো ফ্রিকোয়েন্সি-২০-২০০ হার্টজ-উৎপন্ন করতে ব্যাবহৃত হয় সাবউফার
মিড ফ্রিকোয়েন্সি-২০০-২০০০ হার্টজ-উৎপন্ন করতে ব্যাবহৃত হয় মিডউফার বা মিডরেঞ্জ স্পীকার
হাই ফ্রিকোয়েন্সি-২০০০-২০০০০ হার্টজ-উৎপন্ন করতে ব্যাবহৃত হয় টুইটার
আমাদের দেশের বেশিরভাগ ২:১ সিস্টেমই ৪০ হার্টজ এর নিচের সাউন্ড উৎপন্ন করতে পারেনা। আপনি পুরো ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জ পেতে হলে অনেক বড় অঙ্কের টাকা নিয়ে বাজারের যেতে হবে।এখন ফ্রিকোয়েন্সি রেসপন্স হল ফ্রিকোয়েন্সি গুলো ডেলিভার করা। উপরের স্পীকার গুলো যদি আলাদা ভাবে একটি সিস্টেমে থাকে আর যদি খুব ভাল মানের হয় তবে আপনি পুরো ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জ ই ভালোভাবে পাবেন। আর মান খারাপ হলেও পাবেন কিন্তু ঢিলেঢালা ভাবে। খুব ভালোমানের অনেক দামি ও বড় মাপের সাবউফার ব্যাবহার করে ২৫ হার্টজের সাউন্ড ও পাওয়া সম্ভব। আর হাই ফ্রিকোয়েন্সি সাউন্ড ১৬ কিঃহাঃ এর উপরে সাধারনত কোন সাউন্ডে থাকেনা বা ততটা বোঝা ও যায়না।
আসুন দেখেনি নিজের বর্তমান স্পীকারটির কতটুকু লো ফ্রিকোয়েন্সির সাউন্ড দিতে সক্ষম
১০-১০০হার্টজ পর্যন্ত আলাদা করা সাউন্ড ক্লিপটি ডাউনলোড করুন এখান থেকে
রেস্পন্স সম্পর্কে নিশ্চিত হতে আপনার পছন্দের গানটি সঙ্গে করে নিয়ে যান
৪) এস/এন রেশিওঃ S/N বা Signal to Noise ratio দ্বারা বোঝায় স্পীকার দিয়ে উৎপন্ন মূল শব্দ এবং নয়েজ এর মধ্যে ব্যাবধান কতটুকূ। সাধারনত সব কিছু থেকেই কিছু পরিমান নয়েজ বা অপ্রয়োজনীয় শব্দ তৈরী হয়। এই রেশিও দিয়ে এই নয়েজ এর পরিমান ই বঝানো হয়। মূল শব্দ কে নয়েজ দিয়ে ভাগ করে এই রেশিও বের করা হয়। সাধারনত 6৫ ডিবি এর উপর এস/এন রেশিও হলে তা সমস্যা করেনা।
এস/এন রেশিও কে প্রকাশ করা হয় এভাবে-
>85db
আসুন সিগনাল এবং নয়েজ এর পার্থক্য নিজেরাই পরখ করে দেখি। নিচের লিঙ্ক থেকে ক্লিপ দুটি ডাউনলোড করে শুনুন-
পরের ক্লিপটিতে s/n ratio বেশি হওয়ায় নয়েজ কম শোনা যাচ্ছে।
আশা করছি উপরের বিষয় গুলো আপনারা বুঝতে পেরেছেন। এইগুলো মাথায় রেখে ভালভাবে স্পেসিফিকেশনটি দেখলেই আপনি স্পীকারের পারফরমেন্স বুঝতে পারবেন। যদি আপনাদের থেকে উৎসাহ পাই তবে স্পীকার কেনার ক্ষেত্রে কিছু টিপস ও ট্রিক্স নিয়ে পরবর্তিতে আরেকটি টিউন করব, কারন আজ আর ভাল লাগছেনা। আল্লাহ হাফেজ...
আমি রিফাত হুসাইন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর 8 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 5 টি টিউন ও 47 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
ভালবাসি গান শুনতে, মুভ্যি দেখতে আর গীটার বাজাতে। ভাললাগে জানতে। ইলেক্ট্রনিক্স আর টেকনোলজি আমার মূল আ্কর্ষন।
thanks very much bro.