আসসালামুআলাইকুম বন্ধুরা 400 বছর পূর্বে অর্থাৎ 1600 শতাব্দীর সাহিত্যে মঙ্গল গ্রহকে দ্বিতীয় পৃথিবী হিসাবে দাবি করা হয়েছিল। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় বর্তমানে বিজ্ঞানীরা এই দাবিকে গ্রহণ করতে চলেছে।
মঙ্গল গ্রহই কেন দ্বিতীয় পৃথিবী হবে? আচ্ছা ঠিক আছে যদি মঙ্গল গ্রহ দ্বিতীয় পৃথিবী হয়েও থাকে তাহলে সেখানে যাব কিভাবে? এবং সেখানে গেলে সেখানে কিভাবে বসতি স্থাপন করব? আমার এই টিউনে আমি আপনাদের এই সকল প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তো বন্ধুরা বেশি কথা বলব না আমরা চলে যাই প্রধান বিষয়।
আমরা আমাদের এই টিউনে মঙ্গল গ্রহের এসকল বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। কিভাবে মঙ্গল গ্রহ আমাদের দ্বিতীয় পৃথিবী হবে, কিভাবে আমরা সেখানে যাব, কিভাবে বসতি স্থাপন করা হবে, বসতি স্থাপন করতে গেলে কি কি সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে, সেগুলোর সমাধান কি, সবগুলো প্রশ্নের উত্তর আমি আজকে আমার এ টিউনের মাধ্যমে দিব। সকলে ধৈর্য ধরে পড়তে থাকুন অবশ্যই আপনি পড়ার শেষে খুশি হয়ে উঠবেন কারণ. আগে টিউনটি পড়ে নিন.
মঙ্গল গ্রহে বসতি স্থাপনের আগে আসছে কিভাবে মঙ্গল গ্রহে পৌঁছাব? 1971 সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন মাটস ২ & মাটস ৩ নামক দুটি রোবট কে সর্বপ্রথম মঙ্গলগ্রহে পাঠায়। কিন্তু মঙ্গল গ্রহের এই দুটি পৌঁছানোর সাথে সাথে ফেটে যায়। এতে করে সেই মিশন আনসাকসেসফুল থেকে গিয়েছিল। এরপর 1976 সালে দ্বিতীয়বার মঙ্গল গ্রহে পাঠায় আরো একটিকে। তখন সে রোবটটি সাবধানতার সাথে মঙ্গল গ্রহের মাটিতে পা রাখে এবং সেই রোবটটি সর্বপ্রথম পৃথিবীতে মঙ্গল গ্রহের ছবি পাঠিয়েছিল।
এর পরবর্তীতে 21 বছর পর আরেকটি রোবটকে নামানো হয় মঙ্গল গ্রহে। রোবটটি শুধু সেখানে নামেনি, ঘুরেও বেরিয়েছিল। রোবটটির নাম হল 'সোজনা'।
এর পরবর্তীতে নাসা 'স্পিট' এবং 'অপোরচুনিটি' নামক আরো দুইটি রোবটকে পাঠায় মঙ্গল গ্রহে। আর এই মিশ্রণটি ছিল 90 দিনের। কিন্তু অবাক করা ব্যাপার রোবটের গায়ে ধুলো জমে যাওয়া সত্ত্বেও মঙ্গল গ্রহে হাওয়া থাকায় সে ধুলোগুলো মুছে গিয়েছিল এবং সূর্যের তাপ থেকে রোবটের সোলার প্যানেল চার্জ হচ্ছিল। এতে করে 90 দিনের মিশন গিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল ছয় বছরে। কিন্তু মঙ্গল গ্রহের মাটি খাল প্রবন হওয়ায় দুইটি রোবট পরবর্তীতে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।
এরপর কিরিও সিটি নামক আরো একটি রোবট কে পাঠানো হয় মঙ্গল গ্রহে। যেটিতে সোলার প্যানেল এর পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছিল নিউক্লিয়ার জেনারেটর। আর এই মিশনটি চলেছিল 13 বছর পর্যন্ত। কিন্তু শুনে অবাক হবেন এই যে 13 বছরে এ রোবটটি মাত্র 41 কিলোমিটার ঘুরে বেরোতে পেরেছিল। ভাবছেন, কেন? কারণ এ রোবটগুলো ছয় মাসে যে কাজ করতে পারে মানুষেরা তা দুই ঘণ্টার মধ্যে করে ফেলতে পারে।
কিন্তু এটা বড় কথা নয় যে এই রোবটগুলো কতদূর ঘুরেছিল। বড় কথা এটাই যে রোবটগুলো মানুষকে কি কি তথ্য দিয়েছিল, পৃথিবীতে কোন কোন তথ্যগুলো পাঠিয়েছিলো? এগুলোর পাঠানো তথ্য অনুযায়ী বিজ্ঞানীরা সর্বপ্রথম অনুমান করতে পেরেছিল যে মঙ্গল গ্রহেও বসতি স্থাপন করা সম্ভব।
কিন্তু এখন কথা হল মঙ্গল গ্রহে যাবো কীভাবে, এর জন্য কি কোন যান তৈরি হয়েছে? এর উত্তরে আমি বলব না, তৈরি হয়নি। কিন্তু এর নির্মাণকাজ চলছে। এর নির্মাণ কাজের জন্য পৃথিবীর দুটি সংস্থা বর্তমানে কাজ করছে। তারা হল নাসা ও স্পেস এক্স। নাসা বলেছে 24 থেকে 25 বছরের মধ্যেই তারা মঙ্গল গ্রহে পা রাখতে চলেছে।
এদিকে স্পেসএক্সের মালিক ঘোষণা দিয়েছেন যে তারা যে যানটি তৈরি করছেন তাতে করে তারা 100 জন মানুষকে মঙ্গল গ্রহে প্রথমত পাঠাবেন এবং তারা সেখানে শুধু ঘুরতে যাবেন না, তারা সেখানে থাকবে এবং বসতি স্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এর জন্য তারা তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে যাবেন, যেখানে নাসার তৈরি যান গুলো এত ওজন বহন করতে পারবে না। এই যানটির তৈরীর কার্যক্রম এখনো চলছে।
এটি 2025 থেকে 2029 সাল পর্যন্ত চলবে এবং তার পরবর্তী বছর অর্থাৎ 2030 সালে সর্বপ্রথম মানুষ নিয়ে মঙ্গল গ্রহে পা রাখতে চলেছে।
মঙ্গল গ্রহে বসতির জন্য আমাদের অনেকগুলো প্রবলেম দেখা দিচ্ছে অর্থাৎ মঙ্গল গ্রহে বসতি স্থাপনের জন্য গবেষণা করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা অনেক ধরনের সমস্যা অনুভব করেছেন। কিন্তু চিন্তা করবেন না এই সমস্যা গুলো আস্তে আস্তে সমাধান হচ্ছে। আর আমাদের এই পয়েন্টগুলোর প্রথমে রয়েছে পানি।
আমরা জানি বেঁচে থাকার জন্য পানি অত্যাবশ্যক অর্থাৎ পানি ছাড়া কোন জীবের বেঁচে থাকতে পারে না। কিন্তু মঙ্গল গ্রহে পানি কোথায়? বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছে মঙ্গল গ্রহের নিচে এবং ওপরের জমা হয়ে আছে বরফ। তারা যদি এগুলোকে গলিয়ে ফেলতে পারে তাহলে মানুষ সেখান থেকে তাদের প্রয়োজনীয় পানি পেতে পারে। এছাড়াও বিজ্ঞানীরা গবেষণার মাধ্যমে জানতে পেরেছে মঙ্গল গ্রহের মাটির নিচে পানি রয়েছে। আর ঠিক এই কারণেই বিজ্ঞানীরা মঙ্গল গ্রহকে দ্বিতীয় পৃথিবী হিসাবে ধারণা করছে।
যদি মঙ্গল গ্রহে এই জলের সমাধানটা হয়ে যায় তাহলে এর ফলে আমরা সেখান থেকে আমাদের প্রয়োজনীয় অক্সিজেনও পেতে পারি।
এরপরে যে সমস্যাটা হবে সেটি হল জলবায়ু। মঙ্গল গ্রহের জলবায়ু খুব নেতিবাচক এবং মানুষের থাকার পক্ষে অত্যন্ত কষ্টকর অর্থাৎ এর জলবায়ুর অ্যাটমোস্ফিয়ার খুবই পাতলা যা একজন মানুষের বেঁচে থাকার জন্য উপযোগী নয়।
কিন্তু বিজ্ঞানীরা এর সমাধান বের করে ফেলেছে অর্থাৎ মঙ্গল গ্রহে যদি বসতি স্থাপন সম্ভব হয় তাহলে তারা মঙ্গল গ্রহে মাটির নিচে বসতি স্থাপন করবে। কিংবা তারা মঙ্গল গ্রহে মোটা ছাদের তৈরি করবে যা ক্ষতিকারক রশ্মি ও বহিরাগত হামলা থেকে তাদের কে বাঁচাবে। কি ভাবছেন এটা সম্ভব? সম্ভব। আধুনিক টেকনোলজির সাহায্যে এটি সম্ভব।
এ বিষয়ে ধারণা পাওয়ার জন্য নাসা 3D-PRINTED HABITAT CHALLENGE প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল। যেখানে জুহি কোম্পানির আইডিয়া নাসা গ্রহণ করেছিল। যেটা ছিল বরফের তৈরি থ্রিডি প্রিন্টেড ত্রিভুজ। এর সরাসরি অর্থ হলো আগামী দিনে মানুষ মঙ্গলগ্রহে সার্ফেসের উপরে থাকতে পারবে।
এর পরেই মানুষ যে সমস্যায় পড়বে সেটি হল মধ্যাকর্ষণ। আপনি হয়তো জেনে থাকবেন যে মঙ্গল গ্রহের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি পৃথিবীর তুলনায় 62 শতাংশ কম। আর এই মাধ্যাকর্ষণ বলে যদি কোন মানুষ সেখানে থাকতে চাই তাহলে কিছু সময়ের মধ্যে তার হাড়গোড় ভেঙে যাবে এবং পরবর্তীতে পঙ্গু হয়ে যাবে। কিন্তু বিজ্ঞানীরা এর সমাধান বের করেছে।
ধরুন আপনি কোন একটি বালতিতে পানি ভলেছেন। এখন বালতি থেকে উল্টে দিলে অবশ্যই পানি গুলো পড়ে যাবে। তাই না? কিন্তু আপনি যদি ওটিকে ধরে অতি দ্রুত চারদিকে ঘুরাতে থাকেন, তাহলে কি পানিগুলো পড়বে? পড়বে না। সেখানে এক ধরনের মধ্যাকর্ষণ শক্তির মতোই কোন একটি শক্তি উৎপন্ন হবে।
সে রকমই মঙ্গলগ্রহের বাড়িগুলোকে যদি মঙ্গল গ্রহের চারদিকে ঘোরানো যায় তাহলে সেখানেও মধ্যাকর্ষণ বল তৈরি হবে এবং মানুষ মধ্যাকর্ষণের মত অনুভুতি পাবে। যেটা সম্ভব হবে সেন্ট্রিফিউজের সাহায্যে অর্থাৎ ঘূর্ণন গলায়ক।
কিন্তু এই সমাধান টা করতে গিয়েও আরো একটি সমস্যা বের হয়ে আসছে। যেটা হলো যখন মানুষ মঙ্গল গ্রহে থাকবে তখন সেন্ট্রিফিউজের ওপর থেকে যখন মানুষ আকাশের দিকে তাকাবে তখন মানুষের মাথা ঘুরবে অর্থাৎ তার বমি হবে। কিন্তু এর সমাধানও কিন্তু বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যে বের করে ফেলেছে। তারা মঙ্গল গ্রহে বসতি স্থাপনের সময় এর ওপরে ছাদ তৈরি করে দেবে যাতে করে এর সমাধান হয়ে যাবে বলে মনে করে তারা।
জল ও অক্সিজেন পাওয়ার পর খাদ্য তৈরি করার জন্য প্রয়োজন সূর্যের আলো। আর এটি পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়তে হবে কারণ গরমের সময় মঙ্গল গ্রহের তাপমাত্রা 20৹ সেলসিয়াস এবং শীতের সময় সেটি -100৹ সেলসিয়াস তাপমাত্রায় নেমে আসে। কিন্তু এতে করে খাবার কিভাবে জন্মে!? মানুষ তাহলে খাবে কি?
কিন্তু এর জন্য বিজ্ঞানীরা সমাধান বের করে ফেলেছে। বসতি স্থাপনের সময় তারা গরমে সোলার প্যানেলে শক্তি সঞ্চয় করে রাখবে এবং শীতকালে কৃত্রিম আলোতে ফল ও ফুল কে বাঁচিয়ে রাখবে। আর বিজ্ঞানীদের অনুমান এভাবে মঙ্গল গ্রহ হয়ে উঠবে আমাদের দ্বিতীয় পৃথিবী।
যদিওবা এখন প্রাণী থাকার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। তবুও সেখানে এক সময় জলভর্তি সমুদ্র ছিল, ছিল প্রাণী। কিভাবে? তা কি আপনি জানতে চান? তাহলে অবশ্যই আমাকে টিউমেন্ট করবেন। আমি আপনারা যদি টিউমেন্ট এবং সাপোর্ট পায় তাহলে অবশ্যই এর পরবর্তী কোন টিউন আমি এ বিষয় নিয়ে লিখে ফেলবো।
তো বন্ধুরা আশাকরি এই টিউনটি আপনাদের ভাল লেগেছে। যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই টিউনটিতে একটা লাইক দেবেন এবং আপনার কি মনে হয়, মঙ্গল গ্রহ কি আমাদের দ্বিতীয় পৃথিবী হতে পারবে? এবং যদি সেখানে বসতি স্থাপন করা যায় তাহলে কি আপনি সেখানে থাকতে চাইবেন? আমার এই দুইটি প্রশ্ন আপনাদের কাছে রইল। যদি আপনারা কেউ এই টিউনটি পড়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনারা টিউমেন্ট এ আমার এ দুটি প্রশ্নের উত্তর দিবেন, প্লিজ।
আশাকরি এ টিউনটি থেকে আপনার অনেক কিছু জানতে পেরেছেন এবং আমিও লিখতে লিখতে অনেক কিছুই জানতে পেরেছি। আমিও কিন্তু এই বিষয়গুলো জানতাম না। এই টিউন লেখার জন্য আমি অনেক জায়গায় ঘাটাঘাটি করেছি এবং অনেক জায়গায় সার্চ করে, অনেক সময় ব্যয় করে আমি এই টিউনটি লিখলাম এবং ইতিমধ্যে আমার হাত ব্যাথা হয়ে গেছে লিখতে লিখতে।
এর জন্য আমি আপনাদের কাছে একটি জিনিসই চাই। সেটি হলো যদি টিউন টি ভালো লাগে, প্লিজ একটা লাইক দেবেন এবং সুন্দর একটি টিউমেন্ট করে দেবেন। যাতে করে আমার টিউন লেখার প্রতি আরও উৎসাহ বাড়তে থাকে।
তো বন্ধুরা আর বেশি কথা বলব না। টিউন টি কেমন লাগল তা অবশ্যই জানাবেন। যদি ভালো লেগে থাকে তাহলে লাইক টিউমেন্ট করবেন এবং সকলে ভাল থাকুন সুস্থ থাকুন আমার পরবর্তী টিউন এর অপেক্ষায় থাকুন এবং টেকটিউনসের সাথে থাকুন। আসসালামু আলাইকুম।
আমি মো: আহাসানুল কবির। ওয়ার্ড কাউন্সিলর, ১নং ভোলাহাট ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ড, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 3 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 37 টি টিউন ও 93 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 5 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 6 টিউনারকে ফলো করি।
খুব সুন্দর হয়েসে টিউন টি। এই খানে এক সময় জলভর্তি সমুদ্র ছিল, ছিল প্রাণী। কিভাবে? তা আমি জানতে চাই?