চাকুরির থেকে বাংলাদেশে দিনদিন ব্যবসা করার প্রবণতা বাড়ছে। বিশেষ করে বর্তমান শিক্ষিত যুবসমাজ চাকুরির পেছনে ঘুরঘুর না করে নিজেই নিজের ব্যবসায় সেট হয়ে পড়ছে কিংবা পারিবারিক ব্যবসায় যোগ দিচ্ছে। এতে যেমন আমাদের দেশে বেকারত্বের হার কমছে ঠিক তেমনিই দেশের মেধাযুক্ত জনগোষ্টি উক্ত মেধাকে যথাযথ কাজে লাগাতে পারছে। আজ আমি এমন একটি বিষয় নিয়ে কথা বলতে এসেছি যেটা নিয়ে আগে হয়তো টেকটিউনসে কথা বলেনি। অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম একটি অন্য ধরনের টিউন করবো। আজ হাতে সময় পেয়ে গেলাম।
আমাদের মধ্যে অনেক তরুণ-তরুণীরা রয়েছেন যাদের আগে থেকেই পারিবারিক ব্যবসায় রয়েছে। এবং তারা চাইলেই যেকোনো সময় পারিবারিক ব্যবসায় চলে যেতে পারেন। যেমনটি আমার কথাই ধরুন। দেশের বাড়ি গাজীপুরে, আর গাজীপুরে আমার ফ্যামিলিই সর্বপ্রথম কম্পিউটার ব্যবসা শুরু করে। তো বাপ দাদার এই কম্পিউটার ব্যবসায় আমি চাইলে এখন থেকেই হাল ধরতে পারি। কিন্তু আমি যদি অন্য কিছু করতে চাই তখন? মানে নিজে থেকে কোনো কিছু করার জন্য কিংবা নিজের আলাদা একটা ছোট্ট ব্যবসায় খুলতে গেলে তখন কি করবেন আপনি? সেটার জন্য আজকের আমার এই টিউনটি। জানিনা টেকটিউনসে এই টিউনটি প্রকাশের জন্য কতটা উপযুক্ত, কিন্তু টেকটিউনসে আমি ভূতের গল্প, হলিউডের সিনেমার রিভিউও দিয়েছি যখন তখন আজকের এই ব্যতিক্রমধর্মী টিউনটিও করা হয়ে যাক। আজ আমি কথা বললো কিভাবে আপনি প্রায় বিনে পয়সায় আপনার নিজের বিজনেস তৈরি করতে পারবেন!
বিজনেস বা ব্যবসায় কথাটির প্রচলন ব্যাপক। যারা প্রতিদিন সকালে আপনার বাসায় কিংবা আপনার অফিসে এসে দৈনিক পত্রিকাগুলো দিয়ে যায় তারাও এক ধরনের ব্যবসায়ের সাথে জড়িত। আবার যারা আপনার অফিসের পাশের গলিতেই চা, বিস্কুট, দুধ ইত্যাদি বিক্রি করে সেই টং ঘরটির মালিকও এক ধরনের ব্যবসায় সাথে জড়িত। আবার বড় বড় শোরুমে তো ব্যবসা হয় সেটা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তো এখানে আমি বলতে চাচ্ছি যে বিজনেস ছোট কিংবা বড় অনেক ধরনেরই হতে পারে। আবার অনেক ধরনের বিজনেস আছে যেটা আমাদের প্রচলিত সমাজের সম্মানের সাথে মান বজায় রেখে করতে হয়। যেমন সবাই চাইলে রাস্তার মোড়ে পুরি, সিঙ্গারা কিংবা ভাজাপোড়ার দোকান দিতে পারে না ঠিক তেমনটি সবাই চাইলে একটি গাড়ির শোরুম খুলে ব্যবসায় শুরু করতে পারে না। ঠিক তেমনি ব্যবসায় ভালো সাফল্য পাবার জন্য সঠিক স্থানকেও নির্বাচন করা খুবই জরুরী! একটা কথা মাথায় রাখতে হবে যে, সব জায়গায় সবকিছুর বিজনেস চলে না। আপনি এমন এক স্থানে মোবাইল শোরুম দিলেন যেখানে তেমন জনবসতি নেই সেখানে আপনার মোবাইলের সেল হবে না, আবার আপনি জনমানব শুন্যস্থানে রেস্তোরাঁর বিজনেস দিলেও আপনার ব্যবসায় টিকবে না। কারণ এই সকল ব্যবসার জন্য চাই জনবসতিপূর্ণ এলাকা।
তো আপনি নিজেই নিজের একটি ব্যবসা খোলা সিদ্ধান্ত নিলেন। তাহলে আর দেরি কেন? কি সমস্যার জন্য বিজনেস শুরু করতে পারছেন না? সেটার উত্তর হলো টাকা!
বিজনেস চালু করতে হলে শুরুতে কত পরিমান টাকা বা কত পরিমান মূলধন লাগবে সেটা নির্ভর করে আপনার বিজনেসের ধরন এবং বিজনেসের আকারের উপর। তাই কোনো প্রকার বিজনেসের কোনো নির্দিস্ট startup ফি থাকে না। তাই এক এক রকম বিজনেসের শুরুতে এক এক রকমের মূলধন লাগবে। তবে কোনো বিজনেস শুরু করার আগে নিজের বিষয়গুলো গবেষনা করে নেওয়া উচিত:
দেশের এবং বিদেশের এমন অনেক স্থান রয়েছে যেখানে কোনো প্রকার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান খোলার আগে দেশের সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নেবার প্রয়োজন হয়। আর এই অনুমতি বা লাইসেন্স নেবার জন্য আলাদা খরচপাতি রয়েছে এবং আপনার ক্ষেত্রে যদি এটার প্রয়োজন হয় তাহলে এর জন্য কত খরচ হবে সেটা আগে সঠিক জায়গায় গিয়ে জেনে নিন।
যেকোনো ধরনের ব্যবসায় শুরু করতে হলে মূলধন হিসেবে টাকার পাশাপাশি যন্ত্রপাতি কিংবা পন্য সামগ্রীরও প্রয়োজন রয়েছে। যেমন কম্পিউটার, লাইট, চেয়ার, টেবিল ইত্যাদি। এই জন্য আপনার কত নগদ খরচ হবে সেটাও ব্যবসায় নামার আগে ক্যালকুলেট করে নিন।
বিশেষ প্রকারের ব্যবসার জন্য বিশেষ যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয়। যেমন ফটোকপি মেশিন, সেলাই মেশিন, কফি মেকার মেশিন ইত্যাদি। এই সমস্ত কোনো বিশেষ যন্ত্রপাতি বা সফটওয়্যার যদি আপনার ব্যবসায় প্রয়োজন হয় তাহলে এর খরচ কত হবে সেটাও ব্যবসার পরিকল্পনাতে যুক্ত করে নিন।
একটি ব্যবসা শুরু করতে হলে সবথেকে বেশি টাকা খরচ হয় এই ক্ষেত্রে। কোনো কোনো স্থানে আগে থেকেই মোটা অঙ্কের এডভান্স পে করতে হয়। এ জন্য আপনি ব্যবসায়টা কোথায় শুরু করতে চান এবং তার আগে সেখানকার কোনো অফিস টুলেটে গিয়ে টাকাপয়সার মেটার টা আগে গিয়ে আলোচনা করে আসলে ভালো হয়।
আপনার ব্যবসায় ছোটখাট হলেও অন্তত একজন কর্মী আপনার অবশ্যই লাগবে। বিভিন্ন কাজে সাহায্য করার জন্য আপনার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে কতগুলো কর্মী নিয়োগ দেবার প্রয়োজন হবে সেটাও বিজনেস শুরু করার আগে হিসেব করে নিতে হবে আপনাকে এবং তাদের বেতন এবং অনান্য সুবিধার কথাও আপনাকে আগে ভাগেই সেট করে নিতে হবে।
বিভিন্ন ব্যবসায়ে উন্নতি কিংবা যেকোনো প্রকারে আইনী বিষয়ে সাহায্য করবার জন্য প্রায় বড় বড় প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব আলাদা একজন উকিল বা আইনজীবি থেকে থাকেন। আপনার ব্যবসায়ে এইরকম কোনো আইনজীবির প্রয়োজন পড়বে কিনা সেটাও ব্যবসায় নামার আগে চিন্তা ভাবনা করে নিবেন।
বিজনেস শুরু করার আগে যে স্টেপগুলো আপনার চিন্তা ভাবনা করে নিতে তাদের মধ্যে সবার শেষে রয়েছে নিজেকে চেনার স্টেপ। যে বিজনেসটি আপনি শুরু করতে যাচ্ছেন বা চাচ্ছেন, তার জন্য আপনি তৈরি কিনা, বা বিজনেসটি চালিয়ে যাবার মতো মানসিক এবং আর্থিক সার্মথ্য আপনার রয়েছে কিনা সেটা আগে নিশ্চিত হয়ে নিন। এর জন্য বাসার মুরব্বি কিংবা দক্ষ কোনো কনসালটেন্স এর সাথে পরামর্শ করতে পারেন আপনি।
তো কম মূলধন নিয়ে কোনো ব্যবসায় শুরু করতে চাইলে আপনাকে দুটি পথ অবলম্বন করতে হবে। সেগুলো হলো:
নিজের কোনো ব্যবসায় শুরু করার সময় একেবারে হাতে মূলধন যা আছে তা নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়া উচিত হবে না। এক্ষেত্রে আপনার উচিত কিছু অল্প পরিমাণ মূলধন নিয়ে শুরুতে আপাতত হিসেবে ব্যবসায় শুরু করা। এবং কয়েকমাস এই সল্প পরিমাণের মূলধন দিয়ে ব্যবসায় চালিয়ে আপনার দেখা উচিত যে ব্যবসায়টা আসলেই ভালো মতো চলছে কিনা। এতে সাফল্য আসলে পরবর্তীতে আপনি আপনার পূর্ণ মূলধন উক্ত ব্যবসায়ে খাটিয়ে দিতে পারেন। যেমন আপনি যদি সাইবার ক্যাফে বিজনেস দিতে চান তাহলে ধরুন আপনি প্রায় ৪০টি পিসি দিয়ে দোকান দেবার সামর্থ্য রাখেন। এখন প্রথমেই ৪০টি পিসির দোকান না দিয়ে প্রথম ৫ কিংবা ৬ মাসের জন্য ৮ বা ১০টি পিসি নিয়ে প্রাথমিক ভাবে একটি ক্যাফে খুলুন। ৫ বা ৬ মাস পর মূলধনের সাথে অর্জিত মুনাফা মিলিয়ে নিয়ে দেখুন লাভের পরিমাণ যথাযথ কিনা। এখানে ক্যাফে ব্যবসায়ে যদি আপনি সাফল্য পান তাহলে এবার আপনি আরো ৩০টি পিসি যোগ করে আপনার ক্যাফের আকার বড়সড় পূর্ণাঙ্ক করে নিতে পারেন কোনো প্রকার ঝুঁকি ছাড়াই। তাই নিজের কোনো নতুন ব্যবসায় শুরু করার সময় পরিমাণমতো আকারের মূলধন নিয়ে ব্যবসায় নামা উচিত।
নিজের মূলধন যোগান দেবার সামর্থ্য নেই বলে তাহলে কি হয়েছে। এখন আপনি আউটসোর্স থেকে মূলধন যোগানের ব্যবস্থা করতে পারেন। যেমন পরিবারের কারো কাছ থেকে মূলধনের জন্য টাকা ধার নিতে পারেন। নিজে বেশ কয়েকটি আউটসোর্স এর পয়েন্ট আমি আপনাদের জন্য দিয়ে রাখলাম:
> পরিবার এবং বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে ধার হিসেবে আপনি মূলধনের জন্য টাকা সংগ্রহ করতে পারেন। নিজের ব্যবসায় শুরু করছেন এর জন্য আপনি অবশ্যই আপনার পরিবারের থেকে কোনো পরিমাণের আর্থিক এবং অনান্য সহায়তা পেতেই পারেন। আর কোনো বন্ধুবান্ধবও আপনার এই ব্যবসায় কার্যে আপনাকে সাহায্য করতে পারেন।
> বিভিন্ন প্রকারের ইনভেস্টর। আমাদের সমাজে অনেক ধনী ব্যক্তি রয়েছেন তারা আমাদের এই উদয়মান তরুণ সমাজের অনেকের নতুন ব্যবসায়ে ইনভেস্টর হিসেবে মূলধনের যোগান দিয়ে থাকেন। তাই এদের কাছ থেকেও আপনি ঋণ হিসেবে কিংবা ব্যবসায়ে পার্টনার হিসেবে তাদেরকে শেয়ারে রাখতে পারেন। মূলধন যোগানের এটি হলো আরেকটি মাধ্যম।
> বিভিন্ন প্রকারের এনজিও প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকারের এনজিও প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা তরুণদের নিজেদের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার জন্য সুদমুক্ত লোনের ব্যবস্থা করে থাকে। আপনি চাইলে তাদের নিকট হতেও সুদমুক্ত লোনের জন্য আবেদন করতে পারেন। এরা সাধারণত মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের জন্য সুদমুক্ত লোনের ব্যবস্থা করে থাকে।
> সরকারি ঋণ। অনেক সময় আপনার ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান থেকে সরকার কিংবা দেশের উন্নয়ন সরাসরি সম্পৃত্ত থাকে। এই সকল ক্ষেত্রে সরকার নিজেই এই ধরনের ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন প্রকার সাহায্য এবং সহযোগীতার ব্যবস্থা করে থাকে।
> ব্যাংক লোন। এটি হলো আউটসোর্সের সর্বশেষ ধাপ। সুদ দিয়ে আপনি যেকোনো সময় ব্যাংক থেকে লোন নিতে পারেন। তবে ব্যাংক লোনের জন্য সমাজে আপনার স্টেটাস উচ্চতর হতে হবে এবং লোন পরিশোধ করার ক্ষমতা আপনার রয়েছে এইরকম ধারণা ব্যাংকেরও থাকতে হবে।
এই ছিল আজকের টিউনের যত আলোচনা। আশা করবো আজকের টিউন থেকে আমি কিছুটা হলেও আপনাদেরকে ক্ষুদ্র ব্যবসায় বা নিজের ব্যবসায় চালু করার ব্যাপারে তথ্য শেয়ার করতে পেরেছি। আগামীতে অন্যকোনো টপিক নিয়ে আমি টিউনার গেমওয়ালা চলে আসবো আপনাদেরই প্রিয় বাংলা টেকনোলজি ব্লগ টেকটিউনসে।
আমি ফাহাদ হোসেন। Supreme Top Tuner, Techtunes, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 661 টি টিউন ও 428 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 149 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
যার কেউ নাই তার কম্পিউটার আছে!