Nostoc এর নাম আমারা অনেকেই শুনেছি। আসলে আমাদের জীববিজ্ঞান বই এর একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এটা। তাই ভাবলাম Nostoc নিয়ে একটু লেখা যাক।
Nostoc আসলে সায়ানোব্যাকটেরিয়ার একটা গণ। ২৯টির কাছাকাছি এর প্রজাতি রয়েছে। বর্ষাকালে আমাদের দেশের রাস্তাঘাট যে পিচ্ছিল হয়ে যায়, তার মধ্যে অন্যতম নাটের গুরু এই Nostoc. এটা কিন্তু একটা Nostoc এর ছবি না। আসলে এরা কলোনিয়ালভাবে থাকে। পানিতে, ভেজা মাটিতে দলবেঁধে বাস করে। আবার পানির বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদের গায়েও লেগে থাকতে পারে। তাছাড়া পানিতে ভাসমান বা ডুবন্ত অবস্থায় তো থাকেই। অনেকসময় পানিতে Nostoc বেশি হয়ে গেলে সেই পানি দুষিত হয় পড়ে। সেই পানি পান করলে অন্যান্য প্রাণী-তো বটেই, মানুষেরও মৃত্যুর আশংকা থাকে। অনেকসময় বড় বড় গাছের (আবৃতবীজী) মূলেও এদের পাওয়া যায়।
কলোনি থেকে এদের পৃথক করে আনলে একক Nostoc পাওয়া যায়। Nostoc এর দেহ একটাই অশাখ ফিলামেন্ট। অনেকগুলো একসারি কোষ নিয়ে (ট্রাইকোম) এই ফিলামেন্ট গঠিত।
ডান পাশের পাশের ছবিতে সবচেয়ে বড় যে গোল্লাটি দেখা যাচ্ছে, সেটার নাম হেটারোসিস্ট। এদেরকে কেন কোষের তালিকা থেকে কেন আলাদা করা হয়েছে, তা আমার জানা নেই তবে এতটুকু জানি যে, হেটারোসিস্টের মধ্যে দুই প্রান্তে দুটি পোলার নডিউলের মধ্য দিয়ে দুটি ক্ষুদ্র ছিদ্র আছে। অন্যান্য কোষের সাথে এই পথেই তার ব্রডব্যান্ড কানেকশন (!) বজায় থাকে।
হ্যাঁ, এদের আরও এক ধরণের ব্যতিক্রমী কোষ আছে। এখানে খাদ্য জমা থাকে। মোটা কোষপ্রাচীরের এই বিশেষ কোষগুলোকে অ্যাকাইনিটি বলে। প্রোটিন আর সায়ানোফাইসিয়ান স্টার্চ এদের সঞ্চিত খাদ্য। হেটেরোসিস্টের আর অ্যাকাইনিটির গুরুত্ব বোধহয় একটু বেশিই কারণ বেশিরভাগ জায়গাতে দেখলাম সবার মাঝে এদের নিয়েই মাতামাতি। তবে এদের গুরুত্বের একটা কারণ হতে পারে, যে এই হেটেরোসিস্ট আর অ্যাকাইনিটি দিয়ে এদের অযৌন বংশবিস্তার ঘটে। এদের কলোনি ভেঙেচুরে গেলেও অবশ্য এদের বংশবিস্তার ঘটে যায়।
যেহেতু প্রোটোপ্লাজমই জীবনে চালিকাশক্তি, তাই তাঁর একটু (!) বর্ণনা না দিলে হয়ত তিনি ক্ষমা করবেন না। এদের প্রোটোপ্লাজমে প্লাস্টিড, মাইটোকন্ড্রিয়া, গলগি বস্তু এসব নেই। মূলত আছে কিছু চ্যাপ্টা ল্যামেলি, আর সেন্ট্রোপ্লাজম + সেন্ট্রোপ্লাজমে জালের মত কিছু DNA, RNA (ক্রোমাটিন বস্তু)। তাহলে প্রশ্ন উঠতেই পারে, প্লাস্টিড যখন নেই তাহলে এদের রঙিন কিভাবে দেখায়? আসলে এদের প্রোটোপ্লাজমে যে চ্যাপ্টা ল্যামেলি আছে, তার মাঝে বিভিন্ন রঞ্জক পদার্থ আছে, যেমন সবুজ রঙের জন্য ক্লোরোফিল –A, কমলা-লালের জন্য ক্যারোটিন, হলুদের জন্য জ্যান্থোফিল, নীলাভের জন্য সি-ফাইকোসায়ানিন, লালের জন্য সি-ফাইকোইরিথ্রিন..... থাক আর দাঁত ভাঙতে হবে না। আর নেই।
এই হল Nostoc এর সেই বিখ্যাত কলোনির একটা। বাইরের দিকে বাবলে মত যে আবরণটা দেখতে পাচ্ছেন, সেটা হল জিলাটিনের আবরণ। ভাল করে দেখে রাখুন। এই কুচক্রী আবরণীর কারণেই কিন্তু রাস্তাঘাট পিচ্ছিল হয়ে যায় (মানে এরা যেখানে থাকে সেখানে চমৎকারভাবে পিচ্ছিল বানায়)। তাই পিচ্ছিল রাস্তায় পড়ে গেলে নিজেকে দোষ না দিয়ে এই মি. জিলাটিনকে আগে দোষ দেবেন। এদের যে এত দোষ বললাম, একটু গুণ না গাইলেই তো নয়। জমিতে আমরা যে ইউরিয়া সার দেই, এই Nostoc সেই ইউরিয়ার চাহিদা মেটাতে পারে। অবাক লাগছে? একটু খুলে বলি, উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য একটি অতি প্রয়োজনীয় উপাদান হল নাইট্রোজেন। বারবার চাষাবাদ করতে থাকলে যে পর্যাপ্ত নাইট্রোজেন ভূমিতে দরকার হয়, প্রাকৃতিকভাবে তা অত দ্রুত ফিরে পাওয়া যায় না। আর তাই কৃত্রিমভাবে মাটিতে নাইট্রোজেনের পরিমাণ বাড়াতে আমরা ইউরিয়া সার প্রয়োগ করি। এই Nostoc -এর কাজ হল বায়ুমন্ডলের সেই নাইট্রোজেনকে মাটিতে সংবন্ধন ঘটানো। ফলে যে কাজ ইউরিয়া করছিল, সেই একই কাজ করল Nostoc. পার্থক্য এটাই যে, এখানে আর কোন কৃত্রিমতা থাকলো না। রাসায়নিক বিপদও থাকল না।
Nostoc সম্পর্কে একটা মজার তথ্য দিয়ে রাখি। এদের একটা চমকপ্রদ ক্ষমতা আছে। এরা দেহের কাজকর্ম (রান্না-বাড়া!!!) ধীর করে দীর্ঘদিন নির্জীব হয়ে পড়ে থাকতে পারে এবং প্রয়োজনে পানি শোষণ করে নাটকীয়ভাবে আবার দেহের জৈবিক কার্যাবলী শুরু করে দিতে দেয়। এই বিশেষ ক্ষমতার কারণেই এরা আর্কটিক অঞ্চলের প্রতিকূল পরিবেশেও নিজেদেরকে টিকিয়ে রাখতে পেরেছে। UV-A/B রশ্মি শোষণ করারও চমৎকার ক্ষমতা এদের আছে। তাই প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকার দীক্ষা নিতে এদের উপর সুন্দরভাবে (!) গবেষণা চালানো হচ্ছে। ক-দিন পর হয়তো দেখা যাবে মানুষও এই Nostoc গলা পর্যন্ত ডুবিয়ে এন্টার্কটিকায় বসে আছে!!!
*পূর্বে আমার ব্লগে প্রকাশিত।
আমি শঙ্খ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 5 টি টিউন ও 20 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
উত্তাল সমুদ্রের অতলে হারিয়ে মুক্তা কুড়াতে চাই উত্তর মেরুর কোণে বরফ ঘরে বসে রবি ঠাকুর পড়তে চাই...
জটিল তো!