রোজার দিনে ডাক্তার যদি এন্টিবায়োটিক দেয় আপনি কি করবেন ?

একজন ফার্মাসিস্ট একজন ডাক্তার আর বায়োক্যামিস্ট বুঝে এন্টীবায়োটিকের কি সমস্যা। এন্টিবায়োটিক সাধারনত ব্যাক্টেরিয়া মারে বা ব্যাক্টেরিয়ার বংশবিস্তার কমায়। তবে ব্যাক্টেরিয়ার একটা অসাধারন গুন আছে সেটা হচ্ছে এন্টিবায়োটিক দিয়ে যদি তাকে না মারতে পারেন তাহলে সে নিজেকে এন্টীবায়োটিকের রেজিস্টেন্স করে ফেলে। আর একবার রেজিস্টেন্স করে ফেলতে পারলে তার যত বংশধর আছে সেগুলোকে সেই এন্টীবায়োটিক দিয়ে মারা যাবেনা। আরো উন্নততর এন্টীবায়োটিক ইউজ করতে হবে।

এই লেখাটি শিপলু ভাইয়ের ফেসবুক পেজ থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে যা শুধুমাত্র জনসচেতনতার উদ্দেশে প্রকাশ করার হয়েছে। এই টিউন টি দ্বারা আপনার কিছু মাত্র উপকার হয়ে থাকলে টিউনটি অন্য যেকোন সাইট বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করতে পারেন। আর বিস্তারিত তথ্যের জন্য তার ফেসবুক পেজে যোগাযোগ করতে পারেন।

মুল টিউনঃ
রোজার দিনে ডাক্তার যদি এন্টিবায়োটিক দেয় আপনি কি করবেন?

আসলে এন্টীবায়োটিক সব ড্রাগের মত না। এন্টীবায়োটীকের একটা বড় সমস্যা হচ্ছে এটি ঠিক ঠাক মত না খেলে আপনার বডীতে রেজিস্ট্রেন্স তৈরি করবে। পরবর্তিতে এই এন্টিবায়োটিক আপনার বডিতে কাজ করবেনা।

আমি যখন ফার্মাসিতে অনার্স করি তখন ঢাকা ভার্সিটির তখনকার ফার্মাসি ডিপার্টমেন্ট এর ডিন ড। আব্দুর রসিদ স্যার একটা কথা বলেছিলো। এখন থেকে ২০০ বছর আগে ও ২০০ বছর পরের পার্থক্য কি জানো? আমরা বলেছিলাম না স্যার। স্যার বল্লো ২০০ বছর আগে ব্যাক্টেরিয়া জনিত রোগে গ্রামের পর গ্রাম ধংশ হয়ে যেতো কারন তাদের শেলফে কোন ওষুধ (এন্টীবায়োটিক) ছিলোনা। আর ২০০ বছর পরে শহরের পর শহর ধংস হয়ে যাবে কারন তাদের শেলফ ভর্তি ওষুধ (এন্টীবায়োটীক) থাকবে।

অবাক করা কথা। ওষুধ থাকলে কেনো মারা যাবো?
একজন ফার্মাসিস্ট একজন ডাক্তার আর বায়োক্যামিস্ট বুঝে এন্টীবায়োটিকের কি সমস্যা। এন্টিবায়োটিক সাধারনত ব্যাক্টেরিয়া মারে বা ব্যাক্টেরিয়ার বংশবিস্তার কমায়। তবে ব্যাক্টেরিয়ার একটা অসাধারন গুন আছে সেটা হচ্ছে এন্টিবায়োটিক দিয়ে যদি তাকে না মারতে পারেন তাহলে সে নিজেকে এন্টীবায়োটিকের রেজিস্টেন্স করে ফেলে। আর একবার রেজিস্টেন্স করে ফেলতে পারলে তার যত বংশধর আছে সেগুলোকে সেই এন্টীবায়োটিক দিয়ে মারা যাবেনা। আরো উন্নততর এন্টীবায়োটিক ইউজ করতে হবে।

লাইক আগে আপনি সিম্পল পেনিসিলিন খাইলেই আপনার অশুখ ভালো হয়ে যেতো কিন্তু এখন আপনাকে সেফরাডিন খাইতে হয়। কেনো?
কারন হচ্ছে ব্যাক্টেরিয়া প্রথমে পেনিসিলিন খাইলে মারা যাইতো কিন্তু কেউ না কেউ পেনিসিলিন এর ঠিক ঠাক মত ডোজ কমপ্লিট করেনাই। তখন সেই ব্যাক্টেরিয়া সেই পেনিসিলিনের উপর রেজিস্টেন্স হয়ে গেছিলো। এর পর সেই ব্যাক্টেরিয়া তার মল মূত্র দিয়ে পুরো শহরে ছরিয়ে গেছে। এর পর অন্য কেউ সেইম ব্যাক্টেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হইলেও সে আর পেনিসিলিন দিয়ে ট্রিটমেণ্ট নিলেও তার রোগ সারবেনা।
এই কারনে আজকে নতুন নতুন এন্টীবায়োটীক আবিস্কার হচ্ছে। আগে যেখানে ৩ টাকা দামের এন্টীবায়োটিকে আপনার কাজ হতো এখন ৫৫ টাকা দামের এন্টিবায়োটিকেও কাজ হয় না।

তাহলে বিজ্ঞানীরা কতদিন এই নতুন থেকে নতুন এন্টীবায়োটিক আবিস্কার করবে?
Antibiotic Pills

উত্তর হচ্ছে অতি শিগ্রই এমন দিন আস্তেছে যে নতুন আর এন্টিবায়োটিক আবিস্কার হবেনা। কারন ব্যাক্টেরিয়া মারা যে সকল রুট আছে যেমন সেল ওয়ার ডেস্ট্রয়, DNA/RNA রেপ্লিকেশন বন্ধ সহ যে সকল ওয়ে আছে সব গুলোই মোটামুটি এপ্লাই হয়ে গেছে। আর হয়তো নেক্সট ১০০ বছরে খুবই কম এন্টীবায়োটিক আবিস্কার হবে। আর আপনারা জানেন একটা ড্রাগ আবিস্কার করতে নরমালি ৫ বিলিওন ডলার খরচ হয় আর সেটির সেফটি চেক করে মার্কেটে আস্তে আস্তে ১০ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত চলে যায়। মানে নেক্সট ১০০ বছরে আরো ৪ থেকে ৫ টা আন্টিবায়োটিক আবিস্কার হওয়ার সম্ভাবনা আছে আর এই বিগ এমাউন্টের ইনভেস্টমেন্ট খুবই কম কোম্পানি করে। লাইক আমাদের দেশের কোন কোম্পানি নতুন কোন ড্রাগ আবিস্কার এর পিছনে এক টাকাও খরচ করেনা। নোভাটিস, গ্লাক্সোইস্মিত ক্লাইন (হরলিক্স এর কোম্পানি), ফাইজার, স্যানোফি সহ কিছু মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানি বাদে কেউ এত বড় ইনভেস্টমেন্টে যায় না। আর আদো এই ইনভেস্টমেন্ট করে লাস্ট পর্যায়ে কোন ড্রাগ পাওয়া যাবেকিনা এইটার নিশ্চিত না। আর আবিস্কার করার পরেও ৪ থেকে ৫ বছর পরে হটাট করে দেখা যায় সেটা সেইফ না। তখন সাথে সাথে সেটি মার্কেট থেকে তুলে নেওয়া হয়। এই কারনে মাঝে মধ্যে দেখবেন একটা ভালো অষুধ হটাট করে মার্কেটে নাই।

এনি ওয়ে আসুন এইবার মেইন কথায়। ড্রাগ নিয়ে যারা পড়ালেখা করে তারা একটা টার্মের সাথে পরিচিত। সেটা হচ্ছে ইফেক্টিভ কন্সান্ট্রেশন। আপনি যদি ওষুধ খাইলেই সেই ওষুধ সাথে সাথে কাজ করবেনা। সেই ওষুধ আপনার বডিটে একটা নির্দিষ্ট ঘনত্বে পৌঁছাইলেই সেটি কাজ করবে। এখন আসুন এইবার দেখি, ধরেন কোন এন্টিবায়োটিকের দিনে দুইটা করে ডোজ আছে এর অর্থ সকালে একটা রাতে একটা না। এর অর্থ ১২ ঘন্টা পর পর খাইতে হবে। অনেক ডাক্তার বলে এলার্ম দিয়ে খাইতে। এর কারন বলতেছি। ধরেন আপনি সেহেরীতে ৩ঃ৩০ এ একটা এন্টীবায়োটিক খাইলেন দিনে আপনার দুইটা খাইতে হবে মানে ঠিক বিকাল ৩ঃ৩০ এ সেই অষুধ এর ইফেক্টিভ কন্সান্টেশন হারাবে। এখন আপনি যদি ৩ঃ৩০ এ আরেকটি খেয়ে ফেলেন তাহলে আবার ইফেক্টিভ কন্সান্টেশনে চলে যাবে। ব্যাক্টেরিয়া গুলো মারার গতি সেইম হবে। কিন্তু আপনি ইফতারির পরে যদি ৭ঃ৩০ এ খান তাহলে ৪ ঘন্টা আপনার রক্ত এন্টিবায়োটিক বাদে থাকবে। তখন আপনার বডীতে যে সকল ব্যাক্টেরিয়া ছিলো তারা নিজেকে চেঞ্জ করে নিবে এবং রেজিস্টেন্স করে নিবে। এতে আপনার বডিতে সেই এন্টিবায়োটিক আর ঠিক ঠাক মত কাজ করবেনা। আর এই ব্যাক্টেরিয়া মল মুত্রের মাধ্যমে কোন নালাতে পউছাইলো সেই নালাতে একটা মাছ বা কোন শব্জি বা কোন ফল গাছ ছিলো সেই ব্যাক্টেরিয়া সেখানে বসে থাকলো ঠিক ঐ সময় কেউ সেই ব্যাক্টেরিয়া সমৃদ্ধ খাবার না ধুয়ে খাইলো পরে সে সেই ব্যাক্টেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হইল। ঐ ব্যক্তি যদি এখন সেইম এন্টিবায়োটিক খায় যেটি আপনি খেয়েছেন তাহলে তার সেই এন্টীবায়োটিক দিয়ে কাজ হবেনা। কারন সেটি রেজিস্ট্রেন্স গ্রো করে ফেলেছে অলরেডী।

এখন পরের কথা আসি। আপনি ৭ঃ৩০ এ এন্টীবায়োটিক এর আরেকটি ডোজ খাইলেন। তাহলে নেক্সট টা আবার ৭ঃ৩০ (সাড়ে সাতটা) এ খাইতে হবে তা না খেয়ে আপনি ভোর ৩ঃ৩০ (সাড়ে তিনটা) এ খাইলেন। পুরান ডোজের টা সকাল ৭ঃ৩০ পর্যন্ত ইফেক্ট থাকবে নতুনটা দিয়ে ওভার ডোজ হয়ে গেলো। মানে সকাল ৩ঃ৩০ থেকে সকাল ৭ঃ৩০ পর্যন্ত আপনার শরীরে ওভার ডোজ আছে। এতে আপনার শরীরে ড্রাগ টক্সিক কন্সান্ট্রেশনে চলে যেতে পারে। সকল ওষুধ কোণ ডোজে খাইলে সমস্যা নাই কিন্তু ওভার ডোজ খাইলে সেটা টক্সিক ডোজ বলে। এতে আপনার শরীরে টক্সিসিটী শো করতে পারে মানে বিষক্রিয়া। যেই এন্টিবায়োটীকে আপনি ব্যাক্টেরিয়া মারতেছেন সেটা দিয়ে নিজে মইরেন না কিন্তু।
অনেকের আবার ৭ দিনের ডোজ দিলে ৪ দিন খায় এর পরে অসুখ ভালো হয়ে যায় আর খায়না। এইটা আরো মারাত্তক। কারন ৪ দিনে ধরেন আপনার ৭০% ব্যাক্টেরিয়া মারা গেছে আপনি সুস্থ ফিল করতেছেন এর অর্থ এই না যে আপনি ১০০% সুস্থ। যদিও বাইর থেকে মনে হয় আপনি ১০০% সুস্থ আসলে তা নায়। সো আপনার অশুক ভালো হয়ে গেলেও আপনাকে ডোজ শেষ করতে হবে।
তাহলে সবাই বুঝতে পারতেছেন যে এন্টীবায়োটীক এর ডোজ ঠিকঠাক মত কমপ্লিট করতে হয় ও ঠিক ঠাক মত টাইম মত খাইতে হয়।

আরো মারাত্তক ব্যাপার হচ্ছে যে এন্টীবায়োটিক যারা প্রেস্কাইব করে তারা নিজেরাও অনেক সময় উদাসিন থাকে। রোগিকে এই ব্যাপারে কিছুই বলেনা। একটা উধাহারন দেই। বিশেষ করে টাইমিং এর ব্যপারে।
একদিন আমি আমার এক আত্নীয়কে দেখলাম সে সেফিক্সিম খাচ্ছে। আমি বল্লাম কি হয়েছে। সে বল্লো পায়ে একটা অপারেশন হয়েছেতো তাই এন্টিবায়োটিক দিয়েছে। আমি বললাম ওকে। এর পর দেখলাম সেফিক্সিম খাওয়ার পরেই এক গ্লাস দুধ খাচ্ছে। আমি বললাম এই কি করতেছেন। দুধ খাচ্ছেন কেনো? সে বলে শরীর অসুস্থ তাই ডাক্তার দুধ ডিম বেশী করে খাইতে বলছে। আমি বললাম তা ঠিক আছে কিন্তু এন্টীবায়োটিক খাওয়ার কতক্ষণ পরে খাইতে হবে বলেন নাই? সে বল্লো নাতো? আমি বললাম দেখেন ক্যামিস্ট্রিতে চিলেট নামে একটা জটিল যৌগ আছে। এন্টীবায়োটিক কোন মেটাল জাতীয় জিনিস পাইলে চিলেট ফর্ম করতে পারে যা মারাত্তক ক্ষতিকর। দুধে মেটাল আছে। ক্যালসিয়াম মেটাল। আইরন ও মেটাল। সো এন্টিবায়োটিকের খাবার দুইঘন্টা আগে ও পরে এইসব খাবেন না। এর পর তারা অবাক হয়ে গেলো। এই গুরুত্বপূর্ন ব্যাপারটা ডাক্তার বল্লোনা যে।
--- আসলে বাংলাদেশের ডাক্তারদের মধ্যে অনেক প্রফেসরও আছে যারা রোগিকে কোন প্রকার ইনফমেশন দেয় না। এই কারনে রোগির দীর্ঘমেয়াদী বড় বড় জটিল রোগ হয়ে থাকে। বিদেশে হইলে এইগুলারে কয়েকশ বছর জেল খাটানো যাইতো। সব বলদের দল (শুধুমাত্র যে সকল ডাক্তার রোগীকে সঠিক তথ্য দেয়না)।

দুনিয়ার সব ওষুধ আগে পরে খাওয়া যাইতে পারে কিন্তু এন্টীবায়োটিকের জন্য তা না। এই জন্য যদি রোজা না রাখতে পারেন রাখবেন না। দয়া করে নিজের শরীরে একটা ব্যাক্টেরিয়াকে রেজিস্টেন্স করবেন না নিজের ও অপরের ক্ষতি করবেন না।

লেখাটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন। কোন ব্লগে দিয়ে নিজের নামে চালিয়ে দিলেও সমস্যা নাই। এই লেখার উদ্যেশ মানুষকে সচেতন করা; নিজের ক্রেডিট নেওয়া না।

তথ্যসুত্রঃ https://www.facebook.com/shiplu.hridoy/posts/1007735729271326

Level 0

আমি newboy। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 15 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 18 টি টিউন ও 807 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

প্রথমেই আমার সালাম নেবেন। আমার টিউন গুলো পড়ার জন্য আর TT এর সাথে থাকার জন্য পানাদের সবাইকে ধন্যবাদ। আপনাদেরকে উপদেশ দেয়ার কোনো যোগ্যতা আমার নাই। তাই আমার টিউনগুলোকে নিতান্তই পরামর্শ হিসেবে দেখবেন আশা করি। আমি পড়ালেখা শেষ করে এখন জীবন যুদ্ধে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি আর এর জন্য আপনাদের সবার...


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

ধন্যবাদ। অনেক গুরুত্বপূর্ণ কিছু জানতে পারলাম।

really really thnx for this useful post

Level 0

cephalosporin
1st generation cefadroxil 1 to 2g once daily (2g/24hr)
2nd generation cefonicid 500mg to 1g once daily(1g/24hr)
3rd generation cefixime 400mg once daily(400mg/24hr)
4th generation cefpirome 2g once daily
এটাও সম্ভব তাই না?

maintainace dose, loading dose, median effective dose, half life এসব সম্পর্কে সাহেবের কোন ধারনা আছে কি? ডাক্তার যদি চায় রোগীর পক্ষে রোজা সম্ভব। তাই আমরা যারা ডাক্তার, একটু চিন্তা করলেই সমাধান সম্ভব।

university/medical যেখানেই থাকি না কেন, সত্যিকার মুফতি মাওলানা সম্পর্কে মন্তব্য করার সময় তাদের প্রাপ্য মর্যাদা যেন আমি আপনি ক্ষুন্ন না করি,,,,,,,,,,

    Level 0

    I have no wish insult any mufti or moulana. I only wish to state that most of the mufti of our country has no detail idea about anti biotic medicines and their usage.

Level 0

I have no wish insult any mufti or moulana. I only wish to state that most of the mufti of our country has no detail idea about anti biotic medicines and their usage.

অসাধারন ।