জেনে নিন বিশ্বের অসাধারন সব স্থাপত্যশৈলী সম্পর্কে। এবার বিমোহিত হবে মন, বিস্ফারিত হবে আঁখি!! প্রযুক্তি-প্রেমী এবং সৌন্দর্য পিপাসুরা না দেখলে জীবনটাই বৃথা!!! [শেষ-অংশ]

Level 7
সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা

-------------------------- بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ --------------------------

সুপ্রিয় টেকটিউনস কমিউনিটি সবাইকে আমার সালাম এবং পহেলা বৈশাখের পান্তা-ইলিশ এবং সেই সাথে শুকনা মরিচের শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আধুনিক যুগের অত্যাশ্চর্য কিছু স্থাপত্যশৈলী নিয়ে আমার দুই পর্বের টিউনের দ্বিতীয় বা শেষ অংশ।

সুন্দর কিছু সৃষ্টি করার নেশা মানুষের জন্মসূত্রে পাওয়া। যে অবুঝ শিশু সেও ধুলা-মাটি-কাদা দিয়ে নতুন কিছু তৈরী করতে চায়। সৃজনশীল কিছু করার মানুষিকতা থেকে মানুষ আজ পর্যন্ত যা কিছু সৃষ্টি করেছে সবগুলোই তাদেরকে বিখ্যাত করেছে। স্রষ্টাকে দিয়ে নয় সৃষ্টিকে দিয়ে মানুষ নিজেকে পরিচিত করেছে। তাজমহল তৈরী করেছিলেন সম্রাট শাহ্জাহান, কিন্তু মানুষ তাজমহলের নাম যতোটা জানে শাহজাহানের নাম ততোটা জানেনা। চীনের মানুষের চাইতে চীনের প্রাচীর মানুষকে বেশি মোহিত করে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সোনার তরী কবিতার মতো মানুষ সৃষ্টিকর্তাকে নয় সৃষ্টিকে বেশি মূল্যায়ন করে আসছে। আদিম প্রযুক্তির কথা আজ না হয় নাই বললাম কিন্তু প্রযুক্তির ক্রমবিকাশের সাথে আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে এবং তাদের সংমিশ্রনে যে কি ধরনের অবিশ্বাস্য স্থাপত্য তৈরী হচ্ছে তারই একটি ক্ষুদ্র বর্ণনা আজ আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করবো। আশা করি টিউনের শিরোনামের মতোই এই অত্যাধুনিক স্থাপত্যগুলো আপনাদের চিত্ত হরণ করতে সমর্থ্য হবে। তবে এই টিউনটি শুরু করার পূর্বে যারা আগের টিউনটি মিস করেছেন তারা নিচের লিংক থেকে আগের টিউনটি দেখে নিতে পারেন।

স্ফটিকের দ্বীপ, রাশিয়া (Crystal Island, Russia)

এই দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যটি তৈরী করা হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্থাপত্য নিদর্শনের স্থানটি দখল করার জন্য। এই অবিশ্বাস্য বিশাল আকৃতির টাওয়ারটির মেঝে ২৭,০০০,০০০ বর্গফুট এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। এই বিশাল টাওয়ারটির বিশেষত্য হলো এই বিল্ডিংটির চারপাশে থার্মাল বাফার প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে যার ফলে এর ভেতরের তাপমাত্রা সব সময় সমান থাকে। যদিও গ্রীষ্মকালে বায়ুচলাচলের জন্য এটি অপসারন করে রাখা হয়।

কোর, যুক্তরাষ্ট্র (Cor, United States)

অসংখ্য বাবল আকৃতির ছিদ্রযুক্ত এই বিল্ডিংটি যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামীতে অবস্থিত। এই বাবল সদৃশ ছিদ্রগুলোতে মূলত বায়ুকল বসানো থাকে। যার সাহায্যে বিল্ডিংটি শক্তি সঞ্চয় করে রাখতে পারে।

Ferdinand Cheval Palace (Ideal Palace), ফ্রান্স

এই প্রাসাদটি ফ্রান্সে অবস্থিত যা তৈরী করেন ফার্ডিন্যান্ড শ্যাভেল নামক একজন ব্যক্তি। মজার ব্যাপার হলো এই বিল্ডিংটি তৈরী করার জন্য অন্য যেকোন বিল্ডিংয়ের চেয়ে অনেক অনেক অনেক বেশি সময় লেগে গিয়েছিলো। কারন এই বিল্ডিংটি বিশেষ কিছু অংশ তৈরী করার জন্য যে পাথরগুলো লাগতো সেগুলো ফার্ডিন্যান্ড শ্যাভেল সাহেব নিজে সংগ্রহ করে আনতেন। আপনি শুনে আশ্চর্য হবেন যে, ফার্ডিন্যান্ড শ্যাভেল সাহেব তার প্রাসাদের জন্য প্রথমদিকে যে পাথরগুলো সংগ্রহ করতেন সেগুলো তিনি তার পকেটে পুরে নিয়ে আসতেন। তারপর তিনি তার কাজের জন্য ঝুড়ি ব্যবহার করা শুরু করেছিলেন। তিনি কেরোসিনের আলোতে রাতজেগে এই বিল্ডিংটি নির্মান করেন। ক্ষুদ্রের সমন্বয়ে যে বৃহৎ কিছু সৃষ্টি হয় এটাই তার সবচেয়ে বড় নিদর্শন।

BMW Welt, জার্মানি

এই অসাধারন বিল্ডিংটি শুধুমাত্রই কোন দৃষ্টিনন্দন সৃষ্টি নয়, এটা বিখ্যাত হয়েছে তার নিজস্ব গ্রীন এনার্জির উৎসের কারনে। এই বিল্ডিংয়ের সমস্ত ছাদ জুড়ে রয়েছে সৌরকোষ যা সমস্ত বিদ্যুতের চাহিদা মেটায়। এছাড়াও এতে রয়েছে প্রাকৃতিক ভাবে বায়ুচলাচলের ব্যবস্থা এবং এর স্টীল প্যানেলগুলো সূর্যের তাপে খুব দ্রুত উত্তপ্ত হয় বলে এটি বিল্ডিংএর ভেতরের পরিবেশকে উষ্ণ রাখতে পারে। (আমাদের দেশে আমরা বিল্ডিংকে ঠান্ডা রাখতে চাই আর সেখানে এরা গরম রাখে, আজব দুনিয়া!!)

ঘনক আকৃতির বাড়ি, নেদারল্যান্ডস

এই অসাধারন বাড়িটি তৈরী করেছেন নেদারল্যান্ডস এর Piet Blom নামক একজন ব্যক্তি। তাকে যখন একটি তৈরী করা বাড়িকে বর্ধিত করতে বলা হয় তখন তিনি তার ইউনিক আইডিয়া কাজে লাগান। একটা গাছের মতো করে ডিজাইন করতে গিয়ে তিনি ঘনক আকৃতির ডিজাইন করে ফেলেন। বিশাল এই বাড়িটির প্রত্যেকটা ঘনকে ৩টি করে লিভিং স্পেস আছে।

Nakagin Capsule Tower, জাপান

১৯৭২ সালে জাপানে এই ইউনিক ডিজাইনের বিল্ডিংটি তৈরী করা হয়। এই বিল্ডিংটি তৈরীর মুল উদ্দেশ্য হলো খুব ছোট্ট পরিসরে সুখে থাকার উপায় উদ্ভাবন। এর ভেতরে থাকতে কেমন লাগবে জানিনা কিন্তু জিনিস দেখতে কিন্তু এক্কেবারে অসাধারন।

The UFO Houses, তাইওয়ান

এই অসাধারন বাড়িগুলোকে একসাথে বলা হতো Sanzhi Pod City। এই বাড়িটি ১৯৭০ সালের পরে ভ্যাকেশন রিসোর্ট হিসাবে তৈরী করা হয়েছিলো। কিন্তু আশ্চর্য বিষয় হলেও সত্য যে, মাত্র ১০ বছরের ব্যবধানে ১৯৮০ সালের দিকে এই এলাকাটিকে পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা হয়। এর পেছনে অনেকগুলো গল্প লুকিয়ে আছে, কিছুটা কুসংস্কার এবং কিছুটা ভয়ে মানুষ এলাকাটি পরিত্যাগ করে। এই বাড়িগুলো নির্মানের সময়ে অনেক মানুষ মারা পড়ে যায়। তারপর এর পেছনে বাড়তে থাকে গল্পের সংখ্যা। এখানকার প্রবেশপথের নিকটে থাকা ড্রাগনের ভাস্কর্যকে রাস্তা বড় করার জন্য ভেঙ্গে ফেলা হয়েছিলো বলেই এরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলেও অনেকে মনে করেন। তবে যাই হোক, খুব দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে ২০১০ সালে এই দৃষ্টিনন্দন স্থাপত্যগুলো ভেঙ্গে ফেলা হয়।

House Attack, অস্ট্রিয়া

এটা অস্ট্রিয়ার সবচেয়ে বড় আর্ট মিউজিয়াম। এই বিল্ডিংটি ডিজাইন করেন Erwin Wurm নামক একজন স্থপতি। এই বাড়িটি রিপ্রেজেন্ট করে যে একটি ছোট্ট বাড়ি এই মিউজিয়ামের ছাদে আছড়ে পড়েছে। আর এ কারনেই এর নাম দেওয়া হয় House Attack! বিচিত্র দুনিয়া!!!

নাচের ঘর (The Dancing House), Czech Republic

পিকে মুভির কল্যাণে অনেকেই হয়তো ডান্সিং কারের সাথে পরিচিত গেয়ে গেছেন!! কিন্তু আজ আমি আপনাদের ডান্সিং হাউজের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো। এই বিল্ডিংটি ১৯৯২ সালে ডিজাইন করা হয় এবং ১৯৯৬ সালে এর নির্মান কাজ শেষ হয়। চেক প্রজাতন্ত্রে অবস্থিত এই বিল্ডিংটি সৌন্দর্য পিপাসুদের জন্য এক অনন্য নিদর্শন।

Hundertwasser Building, জার্মানি

এটা জার্মানিতে অবস্থিত একটি দৃষ্টিনন্দন এবং সত্যিকারের সৃজনশীল আবাসিক ভবন। এই ১২ তলা ভবনের ভিতরে একটি ছোট কৃত্রিম হ্রদ, আঙ্গিনা , খেলার মাঠ, এবং ১০৫টি অ্যাপার্টমেন্ট আছে.

Abu Dhabi Performing Arts Center, সংযুক্ত আরব আমিরাত

এটা আবু-ধাবির একটি শিল্পকলা একাডেমি। ২০০৭ সালের দিকে এই ভবনটির ডিজাইন করা হয়। এটার নির্মান কাজ এখনো শেষ হয়নি। নির্মান কাজ শেষ হলে এই ভবনটি যে সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসাবে আত্বপ্রকাশ করবে না এটা বলা যায় না। সংযুক্ত আরব আমিরাত যে কী কী করবে সেটা এখনো বুঝা মুশকিল। এতো বিলাসী জাতি আমি জীবনে দেখিনি।

Vertical Village, দুবাই

এই চিত্তহর্ষক বিল্ডিংটি দুবাইতে অবস্থিত। এই বিল্ডিংটির বিশেষ বৈশিষ্টগুলো হলো, এখানে রয়েছে স্বয়ংক্রিয় এবং মাকড়সার জালের মতো সৌর কোষ। নিজের পাওয়ার সাপ্লাই এবং নিজেকে ঠান্ডা রাখার জন্য রয়েছে নিজস্ব ছায়া তৈরীর ব্যবস্থা। কোন কৃত্রিমতা নয়, বরং প্রাকৃতিক উৎসকে কাজে লাগানো হয়েছে এই বিল্ডিংটিতে। এখানে হোটেল, সিনেমা, থিয়েটার, রেস্ট্যুরেন্ট থেকে শুরু করে রয়েছে প্রয়োজনীয় সবকিছু। টাকা থাকলে আপনিও একবার ঘুরে আসতে পারেন।

আমার নিজের জন্য যেমনটা প্রয়োজন, বাংলাদেশ

টিউনটি করার সময় বিশ্বের সেরা স্থাপত্যগুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করতে গিয়ে নিজের মাঝেও কিছু ভালো কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছে। আমার চাহিদা খুবই সীমিত, সাগরের মাঝে এরকম ছোট্ট একটা বাড়ি এবং সেই সাথে সমস্ত বিশ্বের সাথে যোগাযোগের একটা ব্যবস্থা থাকলেই আমি খুশি। জানিনা, এটাকে অল্পতেই সন্তুষ্ট বলা যাবে কিনা। কারন এর জন্য যা যা প্রয়োজন সেটা আমার কোনদিনও হবে না মনে হয়। তবে সাগর পাড়ে না হলেও সত্যিকার অর্থেই নদীর পাড়ে আমার বাবার একটি বাড়ি আছে ভেবে মাঝে মাঝে একটু আধটু গর্ববোধ করি।

শেষ কথা

টিউনটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অথবা বুঝতে যদি কোন রকম সমস্যা হয় তাহলে আমাকে টিউমেন্টের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না। কারন আপনাদের যেকোন মতামত আমাকে সংশোধিত হতে এবং আরো ভালো মানের টিউন করতে উৎসাহিত করবে। সর্বশেষ যে কথাটি বলবো সেটা হলো, আসুন আমরা কপি পেস্ট করা বর্জন করি এবং অপরকেও কপি পেস্ট টিউন করতে নিরুৎসাহিত করি। সবার সর্বাঙ্গিন মঙ্গল কামনা করে আজ এখানেই শেষ করছি। দেখা হবে আগামী টিউনে।

আপনাদের সাহায্যার্থে আমি আছি........

ফেসবুক | টুইটার | গুগল-প্লাস

Level 7

আমি সানিম মাহবীর ফাহাদ। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 176 টি টিউন ও 3500 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 159 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

আগে যা শিখেছিলাম এখন তা শেখানোর কাজ করছি। পেশায় একজন শিক্ষক, তবে মনে প্রাণে টেকনোলজির ছাত্র। সবার দোয়া প্রত্যাশি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

Level 0

Sanim Vai, valo legese apnar presention ! Specially ur last picture which represents ur desire.

Nice in a word ! ! !
Rana…………

এক কথায় অসাধারণ…আর আপনার পছন্দেরটাও বেস্ট ছিল

আসেন ফাহাদ ভাই, আমরাই একটা বানাই ।

    @আতিকুর রহমান সোহেল: মনটা তো চায় বানিয়ে ফেলি একটা, কিন্তু সাধ থাকলেও সাধ্য নাই রে ভাই 🙁

      @সানিম মাহবীর ফাহাদ: বরাবরের মতই অসাধারন টিউন । ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করলাম না 😛 । মনটা চায় দুবাই থেকে ঘুরে আসি কিন্তু এক বন্ধু সেখানে চাকরি করে সে সুবাদে আমি জাইনা ফেলাইছি যে দুবাই মেইন শহরে ১ সপ্তাহ থাকার জন্য ও যাওয়া আসা বাদে মাত্র ৪ লক্ষাধিক টাকা লাগিবে । তাই সে চিন্তা এখন ভুলেও করি না । তারা তো অর্থ চোষা প্রানি ।

@মাহফুজুর রহমান বিপ্লব: সবই বড় লোকের কারবার! সবে সুখে থাকার জন্য বেশি কিছু লাগেনা! জানিনা দুবাইবাসী আমাদের মতো সুখি কিনা! কারন আমরা অল্প কিছুতেই সুখ খুঁজে পেতে জানি!

Level 0

সুন্দর সুন্দর সব স্থাপনা…. ধন্যবাদ আপ্নাকে শেয়ার করার জন্য

Level 0

only nice