এন্টারপ্রিনর গাইডলাইনঃ শুরু থেকে শেষ। একটি উদ্যোক্তা কর্মশালা। উদ্যোক্তা না হয়ে আপনি যাবেন কোথায়।

হ্যালো টেকটিউনস কমিউনিটি, প্রযুক্তির অন্তরালে কেমন আছেন সবাই। আশা করি টেকনোলজি নাস্তার আশা পাশ ঘুরতে ঘুরতে নিজেদের অন্য মাত্রায় নিয়ে আছেন। আমি বরাবরের মতো ভালোই আছি। আর আজকের নতুন টপিকস নিয়ে আপনাদের একটু স্বস্তির আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছি।

আজকে আমি এই একুশ শতকের খুব জনপ্রিয় টপিকস নিয়ে আলোচনা করবো, আর সেটা হলো উদ্যোক্তা বা এন্টারপ্রিনর হওয়ার গাইডলাইন। আসলে এই জবহীন মার্কেট ব্যবস্থায় আমরা পিষ্ট। আমরা একটু স্বস্তির জন্য উদ্যোক্তা হওয়ার পথ বেঁছে নেই। অনেকে উদ্যোক্তা হওয়ার প্ল্যান নেই, কিন্তু আমাদের এই সমাজ ব্যবস্থা তাকে অনেক সময় সায় দেয় না। আমরা না পারি একজন মানুষের সুন্দর কর্মসংস্থানের যোগান দিতে, আবার সে নিজে কিছু করুক তাও বাঁধা দিতে আগে এগিয়ে আসি।

যাইহোক এখন আর মানুষ উদ্যোক্তা জিনিসটাকে ঐভাবে নিচ্ছে না। তারা এখন এটাকে কর্ম জীবনের নতুন সূচনা হিসেবে দেখছে। এখন আমরা বলি চাকরি খুঁজবো না চাকরি দিবো। নিজে ভালো কিছু করবো, সেইসাথে আরও কিছু মানুষের চাকরি দিয়ে তার ভবিষ্যৎ অন্ধকারের হাত থেকে রক্ষা করবো।

আমি কারও মুখাপেক্ষী নই, আমি উদ্যোক্তা

আমরা যদি একটু উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকায় তাহলে দেখবো তারা চাকরির থেকে নিজে কিছু করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। কারণ তারা কখনও অন্যের মুখাপেক্ষী থাকতে পছন্দ করে না। যেকারনে এই একুশ দশকে যতো উন্নয়ন তারাই আমাদেরকে শেখাচ্ছে। কিন্তু আমরাও পারি ঠিক এরকম কিছু সৃষ্টি করতে। কিন্তু আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এমন আমাদের উদ্যোক্তা না হয়ে চাকরি করতে শেখায়। আচ্ছা একটা কথার উত্তর দিবেন, এই যে এতো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আমরা চাকরির জন্য হাহুতাশ করি, ঐ প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা কি একদিন ছোট উদ্যোক্তা হিসেবে শুরু করেন নাই। তাহলে তাকে আমরা সম্মান করি, কিন্তু আপনি শুরু করতে এতো বাঁধা কেন। কারণ আমরা সাকসেস কে ভালো বাসি, কিন্তু রিস্ক নিতে ভয় পাই। অথচ এই জগতের সব কিছু ঐ ছোট ছোট উদ্যোগ থেকে সৃষ্টি।

উন্নত বিশ্বে শৈশব থেকেই তাদের উদ্যোক্তা মানুসিকতা তৈরি করা হয়

তবে উদ্যোক্তা হতে চাইলেন, কিন্তু কীভাবে কি করবেন বুঝলেন না। তাহলে কি হবে? ঠিক এই কারনেই আজকে আমার এই টিউন। এক ভাইয়ের উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্নকে সফল করতে আজকে আমি কিছু গাইডলাইন নিয়ে আসছি। তিনি আমাকে রিকুয়েস্ট করেছেন টিউনটা আমি যেন করি। যেকারনে আজকের এই টিউন। আশা করি আপনাদের সবার উদ্যোক্তা হওয়ার পথকে সুন্দর করবে। আসুন শুরু করি জানতে কি সেই পথ যা আমাদের মেনে উদ্যোক্তা জীবনে সফলতা আনতে হবে।

উদ্যোক্তা হওয়ার সকল টিপস এবং কিলার মেথডঃ

আমি এই টিউনে আলোচনা করবো আপনি সাকসেসফুলি কীভাবে উদ্যোক্তা জীবন শুরু করবেন। ঠিক তারই কিছু মূল্যবান টিপস আপনাদের সামনে নিয়ে আসবো। দেখে নিন সেই দারুণ স্টার্টিং টিপস-

১) সংকল্প ঠিক করুনঃ

উদ্যোক্তা এমন একজন ব্যক্তি যাকে সকল হিসাব এবং পরিস্তিতি মোকাবেলা করতে হবে। তার ব্যবসার সকল হিসাব তাকেই বহন করতে হবে। যদি কোন অতিরিক্ত কর্মকর্তা তার শুরু থেকে থাকে তাদের পরিচালনা, তাদের কাছ থেকে কাজ বের করার মানুসিকতা এবং তাদের সুযোগ-সুবিধা দেখা, সর্বোপরি তার বিজনেসে কোন অধঃপতন শুরু হলে তা দৃঢ়তার সাথে নিজেকে কন্ট্রোল করা এবং তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার মানুসিক শক্তি থাকতে হবে। এটা একজন উদ্যোক্তার প্রধান মানুসিক বৈশিষ্ট্য থাকা উচিৎ। এভাবে আপনি সংকল্প বদ্ধ হোন।

আপনার হৃদয় থেকে সংকল্প থাকা লাগবে

২) আপনার সঠিক পছন্দ খুঁজে বের করুনঃ

আপনি হয়তো বেশ কিছু বিজনেস সম্পর্কে জানেন। বেশ কিছু বিজনেস আপনি ইচ্ছা করলে শুরু করতে পারেন, কিন্তু একটা বিষয় কখনও এড়িয়ে যাবেন না, সেটা হলো আপনার পছন্দ। আপনার কিছু কিছু বিষয় আছে যা হয়তো আপনি ঘণ্টার পর ঘণ্টা করতে ভালবাসেন। সেই বিষয় জানতে আপনি ক্লান্ত হননা। আপনি সেই বিষয়ে জানেনও অনেক বেশি। পূর্বে এই নিয়ে বেশ অভিজ্ঞতাও আছে আপনার। আপনি বিপদের মুহূর্তে নিজেকে উপভোগ করতে পারবেন। ঠিক এই বিষয়টা বের করার চেষ্টা করুন আপনার নিজের ভেতর থেকে। শুধু টাকার জন্যই একটা বিষয়ে পড়ে থাকলে চলবে না, আগ্রহ থাকা অত্যাবশ্যক।

আপনাকে সব থেকে ভালো লাগা টপিকস খুঁজে বের করতেই হবে

৩) সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করুনঃ

আমরা অনেক সময় নিজেদের পছন্দমতো উদ্যোগ নিই ঠিকই, কিন্তু সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করিনি। এটা খুব ভুল। আপনাকে মিনিমাম এক পেজের একটা নির্দিষ্ট গোল ঠিক করতে হবে। আপনি কীভাবে শুরু করতে যাচ্ছেন আর কীভাবে কি পরবর্তীতে করবেন।

সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা আপনার ব্যবসার এক ধাপ

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর অবশ্যই বের করবেন-

  • আমি কি করতে যাচ্ছি?
  • আমি কাদের সেবা দিবো?
  • আমি আমার কাস্টমার বা ক্লায়েন্টের প্রতি কতোটুকু সংকল্পবদ্ধ এবং কতোটুকু সীমার মধ্যে আমাকে সেবা দিতে হবে?
  • আমার মেইন গোল কি, আমি কি নিয়ে আগাচ্ছি?
  • আমি কতোটা বিপদের মুখে নিজেকে তৈরি রাখছি?

এরকম আরও কিছু প্রশ্নের সঠিক সমাধান নিয়ে এক/দুই পেজের সুন্দর পরিকল্পনা করে রাখুন।

৪) ইনভেস্টের আগে টার্গেট বুঝে নিনঃ

আপনি শুধু ইনভেস্ট করলেই হবে না, আরও অনেক পরিকল্পনা থাকা লাগবে। অনেকে ভাবে টাকা হলে বিজনেস ব্যপার না। আসলে বিজনেসে টাকার সাথে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস শেখা বা গবেষণার দরকার আছে। যেমন আপনার কাস্টমার কারা? তাদের আপনার প্রডাক্ট কতোটা দরকার? আপানার প্রতিযোগী থেকে আপনি অভিজ্ঞ কিনা বা ভালো সেবা দিতে পারবেন কিনা।

সফল উদ্যোক্তা ভিন্ন ভাবে কাজ করে না, একই কাজ ভিন্নভাবে করে

উদ্যোগ শুরু করার আগে এসব বিষয় ক্লিয়ার করে নিন। গবেষণা করুন, পড়ুন। আপনার প্রশ্ন একটু পড়ে পড়ে গুগল থেকে উত্তর বের করুন । অন্য বিজনেসম্যানদের কাছ থেকে হেল্প নেওয়ার চেষ্টা করুন। যারা আপনার থেকে এই বিষয়ে ভালো পড়াশুনা করছে তাদের কাছ থেকে হেল্প নিন। প্রয়োজনে ২/৩ মাসের জন্য তাকে আপনার প্রতিষ্ঠানে হেল্প করার জন্য হায়ার করুন। কিছু ইনভেস্ট এখানে করতে পারেন। এতে আপনার উদ্যোক্তা হওয়ার পথ অনেক বেশি সহজ হবে।

৫) মার্কেটিং পলিসি অনুসরণ করুনঃ

আপনি যেহেতু কাস্টমার নিয়ে কাজ করবেন, সেহেতু আপনার প্রডাক্ট নিয়ে মার্কেটিং করতে হবে। বর্তমান একুশ শতকের সময়ে ট্রাডিশনাল মার্কেটিং এর সাথে, অনলাইন মার্কেটিং করুন আপনার প্রডাক্ট বেজ করে। আর যদি বিজনেস অনলাইন নির্ভর হয় তাহলেতো আপনাকে অনলাইন নির্ভর হতেই হবে। বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া বা ব্লগে আপনার পরিচিতি বাড়ান। তাতে আপনার প্রডাক্ট ব্রান্ডিং এ সুবিধা হবে।

আপনাকে স্মার্ট উদ্যোক্তা হতে হবে

অনলাইন নির্ভর বিজনেস হলে আমার এ বিষয়ে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ টিউন আছে দেখতে পারেন,

ই-কমার্স বিজিনেস শুরু করবেন? আপনার ই-কমার্স বিজিনেস বা অনলাইন বিজিনেসকে আরও বেশি উন্নত করবেন কীভাবে? দেখে নিন সেইসব কিলার মেথড।


ব্যবসা সুদুর প্রসারি চিন্তা নিয়ে করতে হয়। আপনি নির্দিষ্ট বিষয়ে ভালো অভিজ্ঞতা নিয়ে শুরু করুন দেখবেন ভালো করবেন ইনশাল্লাহ। তাছাড়া নিজেকে সব সময় আপডেট রাখবেন আপনার বিজনেস রিলেটেড, তাহলে অন্যদের থেকে একটু দ্রুত এগিয়ে যাবেন এটা আশা করা যায়।

আপনার সার্বিক সাফল্য কামনায় এখানে শেষ করছি। যেকোনো জিজ্ঞাসা টিউমেন্টে করতে পারেন। নতুন কোন টপিকস না বুঝলে আমাকে রিকুয়েস্ট রাখতে পারেন আমি পর্যাপ্ত তথ্য সহ সেটা আলোচনা করার চেষ্টা করবো।

ধন্যবাদ সবাইকে। 🙂

আরও কিছু প্রয়োজনীয় ফিচারড টিউন দেখতে পারেনঃ

Level 2

আমি আইটি সরদার। Web Programmer, iCode বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 261 টি টিউন ও 1750 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 22 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

আমি ইমরান তপু সরদার (আইটি সরদার),পড়াশুনা করেছি কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি নিয়ে; পেশা কন্টেন্ট রাইটার এবং মার্কেটার। লেখালেখি করি নেশা থেকে ফেব্রুয়ারি ২০১৩ থেকে। লেখালেখির প্রতি শৈশব থেকেই কেন জানি অন্যরকম একটা মমতা কাজ করে। আর প্রযুক্তি সেটা তো একাডেমিকভাবেই রক্তে মিশিয়ে দিয়েছে। ফলস্বরুপ এখন আমার ধ্যান, জ্ঞান, নেশা সবকিছু...


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

বর্ণনামূলক লেখাটি পড়ে ভাল লাগল। ধন্যবাদ।
তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাস্তবতাটা ভিন্ন।

আহা, এই টিউন টেনেটুনে ছোট করলেন? আরেকটু ভাঙতে পারতেন তো! তবে আপনার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোত আলোকপাত করেছেন- তবে এই একবিংশ শতকে এসেও অনেকে টর্চ থাকার পরও সুইচ টিপে জায়গামতো আলোই ফেলে না- আমি নিজেই এমনটা শুনেছি……রিস্ক নিয়েছে, কিন্তু কীসের রিস্ক কীভাবে নিয়েছে সেটাই জানেনা 😉

আর সঠিক পছন্দ বা টার্গেট খুঁজে পেতে “গরু খোঁজাটা” (গবেষণা) আমার কাছে খুব জটিল ইস্যু….একজন উদ্যোক্তাকে সারাজীবনই ব্যক্তিগতভাবে গবেষক হয়ে থাকতে হয় বলেই আমার মত।
সচিত্র টিউনের জন্য ধইন্যা রেখে গেলাম 🙂

    @নিওফাইট নিটোল: খুব ছোট যে করেছি তা না, তবে চেষ্টা করছে বাংলাদেশের আলোকে ম্যাক্সিমাম পয়েন্ট উঠিয়ে ধরার। আরও কিছু বিষয় আছে যা করতে হয়, তা আমার অন্য একটা টিউনে আলোচনা আছে, যেকারনে ঐটার লিংক দিয়ে কাজটা সবার একটু বেশি করে দিছি আরকি।
    তবে সুন্দর সমালোচনা এবং আলোচনার জন্য ধইন্যা থাকছেই। 🙂