ছোট বেলায় চকলেট খেতাম অনেকটা নেশা খোরের মত। বেশি খাওয়া হত চুইংগাম। আর বাবা তখন দেশের বাইরে থাকার কারণে ফরেইন চকলেটের কখনও কমতি হয়নি। তাই আমার দাঁতগুলো কখনোই জাতের ছিল না। দুই মাড়িতে দুইবার দুইবার করে চারবার ফিলিং করানো হয়েছে এপর্যন্ত। একবার ত ফিলিং করিয়ে আসার তিনদিন পর চুইংগাম চাবিয়ে পুরা ফিলিংই চুইংগামের সাথে তুলে নিয়ে আসলাম। আমার এই সমস্ত কর্মকান্ডের জন্যে আশাহত হয়ে আমার মা আর কোনদিনই ফিলিং করায়নি। ফিলিং এর যে কি কষ্ট আমার হাড়ে হাড়ে জানা আছে। ফিলিং এর নাম শুনলে এখনও একটা নীরব ভয় মেরুদন্ড বেয়ে নেমে যায়।কাল খবর পেলাম আমার বড় মামি নাকি তার দ্বিতীয়বারের মত রুট ক্যানাল করিয়েছে। প্রসেসটা সন্মন্ধে আমার অনেক ঘোলাটে ধারনা ছিল। অনেকের কাছেই শুনেছি যে একবার কষ্ট করে রুট ক্যানাল করেই ফেললেই জ্বালা যন্ত্রনার অবসান হয়। তাই আমার দাঁতেও করানোর কথা ভাবছেন আমার আম্মাজান। তাই প্রসেসটা একটু ঘাটলাম এবং টিউনরা বন্ধুদের সাথে শেয়ার করার দুঃসাহস করলাম।
রুট ক্যানাল হচ্ছে ক্ষয়ে যাওয়া / আক্রান্ত দাঁতকে ফেলে না দিয়েই সেটাকে রিপেয়ার করার সিস্টেম। এই প্রসেসে দাঁতের ভেতরে মাড়ির নালী ( ক্যানাল ) কে ক্লিয়ার করা হয় বলে এই প্রসেসটাকে রুট ক্যানাল প্রসেস বলা হয়ে থাকে। গত কয়েক দশক আগেও এই রুট ক্যানাল সিস্টেমটি অনেক ভয়ানক যন্ত্রনাদায়ক ছিল। তবে ডেন্টল সাইন্সের উন্নতিতে আজকাল নাকি খুব কম লোকই এই সিস্টেমে ব্যাথা পেয়ে থাকেন। এই প্রসেসে দাঁতের অবস্থা একটু ভাল থাকলে সেটাকে রিপেয়ার করা যায় নতুবা সহজেই একটা নতুন ক্রাউনও রিপ্লেস করা যায়।
মাড়ির অভ্যন্তরে পাল্প নামক একটি সফট লেয়ার থাকে। এর উপরেই ক্রাউনটা বিন্যস্ত থাকে। ক্রাউনটাকেই আমরা দাঁত বলে থাকি( আসলে আমরা যে সাদা অংশটা দেখতে পাই )। যখন আমাদের দাঁতে কোন ক্ষয় হওয়া শুরু হয়, মানে সোজা বাংলাতে বলতে গেলে যখন আমাদের দাঁতে পোঁকা ধরে তখন এই ক্রাউন একটু ডিপে ভেদ করলেই কিন্তু ব্যাকটেরিয়া পাল্পে এ্যাক্সেস পেয়ে যায়। এবং ধীরে ধীরে মাড়ি এবং ক্যানালের একদম নিচের অংশে সিরিয়াস রকম ইনফেকশান এমনকি পুঁজের সৃষ্টি করতে পারে। সাথে সাথে আমাদের পাল্প লস, বোন লস এবং ক্ষেত্র বিষেশে দাঁতটাও লস হয়ে যায়। এর সবচেয়ে বড় লক্ষন হচ্ছে দাঁতে ছিদ্র সৃষ্টি হওয়া, টেম্পারেচার সেনসিটিভিটি, দাঁত ব্যাথা এবং বিভিন্ন গাম নিঃসরন হওয়া। এই সমস্ত জিনিস আল্লাহ না করুক যদি আপনার হয়ে থাকে তাহলে ডেন্টিষ্টের স্বরনাপন্ন হোন। আপনার রুট ক্যনালিং লাগতেও পারে।
এই রুট ক্যানাল সাধারনত একজন এনডোডেনটিষ্ট অর্থাৎ সাধারন ডেনটিষ্টই সম্পাদন করে থাকে। এটি সাধারনত দুটি অথবা তিনটি ভিজিটে সম্পন্য করা হয়ে থাকে। প্রথমেই ডেন্টাল এক্স-রে এর সাহায্যে দাঁতের ক্ষয় ক্ষতির ব্যাপারে ধারনা নেয়া হয়ে থাকে। এবং এর পরেই একটি লোকাল এনেসথেসিয়া লাগানো হয়। যাতে রুগী বেশি চিল্লা পাল্লা না করে। একটি রাবার এর মত শিট আপনার মুখে দিয়ে দাঁতগুলোকে আবৃত করা হয় যাতে মুখের লালা দিয়ে অপারেশানে কোন সমস্যার সৃষ্টি না হয়। এর পরে আপনার দাঁতের ক্ষয় হওয়া দাতের এনামেলের উপরের অংশ ডেনটিষ্ট মামু তার টুলকিটের সাহায্যে রিমুভ করে দিয় আপনার পাল্পে এ্যাক্সেস নিবে এবং সেখানে থাকা পচা জিনিস পাতি পরিস্কার করে পাল্পটাকে ক্লিয়ার করা হবে।
পাল্পে এ্যাক্সেস নেয়ার পর এর ক্যানালে ফ্লাশ মেরে এটাকে পুরা ফ্রেশ করে ফেলা হয়। এরপর এইসময় ডেনটিষ্ট তার সুবিধা মত ক্যানালের সাইজে পরিবর্তন আনতে পারেন যাতে পরবর্তিতে ফিলিং আপের সময় সহজেই কর্ম সম্পাদন করা যায়। এই ক্যানাল পূনরায় ফিল করে দেয়ার পূর্বে ভেতরকার সমস্ত ইনফেকশান ভালমত ক্লিয়ার করে ড্রাই করিয়ে নেয়া হয়। এর পরে কিছু মেডিকেশান সিস্টেমে এই ক্যানালকে ফিল করে ফেলা হয় এবং একে কয়েকদিন ওপেনই রাখা হয়। যাতে করে এই কিছুদিনের মধ্যেই আপনার দাঁতে আবার কোন ইনফেকশান দেখা দিলে তাও যেন রিমুভ করে ফেলা যায়। এই কারনেই বলেছিলাম রুট ক্যানাল প্রসেসটি কয়েকটি ভিজিটে সম্পন্য করা হয়ে থাকে।
ভেতরকার অংশ আবার ফ্লাশ করে ক্লিন করে দেয়ার পরে শুকিয়ে যাওয়ার পরে সময় হয় এই ক্যানাল ফিল করার। এই স্টেপের জন্যে আবার আলাদা করে এনেসথেসিয়া এ্যাপ্লাই করার দরকার হয় না। রাবার কম্পাউন্ড অথবা এ্যাডহেসিভ ইলিমেন্ট দিয়ে এই ক্যানাল ফিল করা হয়। এবং এই লিকুইড দিয়ে ফিলআপ করে দেয়ার পরে এর উপরে একটি সিমেন্টের লেয়ার দেয়া হয় এই লিকুইডকে প্রটেক্ট করার জন্যে।
এই ক্ষেত্রে সাধারনত নতুন দাঁতই বসিয়ে থাকেন অনেকেই। এই দাঁতকে সিমেন্টের লেয়ারের উপরে মাউন্ট করানো হয়। অনেক ক্ষেত্রে এই নতুন ক্রাউন বসানোর সুবিধার জন্যে একটি রডের সাপোর্ট দেয়া হতে পারে। সেটা সম্পূর্ণ ডেন্টিষ্টের উপর নির্ভর করে। অনেকে তাদের পছন্দের দাঁতও বসিয়ে থাকে। অনেকেই আবার স্বর্নের দাঁত রিপ্লেস করে থাকে।
আমি ভাবতেছি একটা গোল্ডেন টুথ দেয়া যায় কি না ................................
আমি দুঃসাহসী টিনটিন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 16 বছর 7 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 200 টি টিউন ও 1531 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 34 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
মানুষ হিসেবে তেমন আহামরি কেউ নই আমি। সাটামাটা জীবনটাই বেশী ভালো লাগে। আবার মাঝে মাঝে একটু আউলা হতে মন চায়। ভালো লাগে নিজেকে টিনটিন ভাবতে .... তার মত দুঃসাহসী হতে মন চায় ..... কিন্তু ব্যক্তি জীবনে অনেকটা ভীতুই বটে ..... অনেক কিছুই হাতছাড়া হয়ে গেছে জীবনে এই কারনে ..... আবার...
আমারে জিগাও দুইতিন বার হইয়া গেছে । দেভদাস ও স্বীকার করবো একটা মাইয়া ছ্যাকা দিলে যত কষ্ট দাতের ব্যাথা তার থেকে হাজারগুন বেশী কষ্টকর ……
ধন্যবাদ ড: টিনটিন ভাই । ৩ বছর আগে টেম্পরারী ফিলিং করে ভয়ে আর ঐ ডেন্টিস্ট এর ধারে কাছে নাই এখন যাবার সময় ঘনিয়ে এসেছে ভাবছি আপনার সাথে দেখা করবো ভিজিট দেব না কিন্তু ।
হাইটেক টিউন ছেড়ে মেডিকেল সাইন্স.. চেম্বারটা কী এবার শান্তিনগরেই ঠিক করলেন? তা টিনটিনের ছবিটা রঙিন হল দেখছি। নাইস টিউন।