“জ্যোতিষ রাজ ‘অমুক’ এর কাছে আছে সাত রাজার ধন সাপের মাথার মনি, যা পিতলের আংটি তে ব্যবহার করে আঙ্গুলে পরলে বিপদ দূর হয় / ব্যবসায় সাফল্য আসে / দাম্পত্য জীবন সুখের হয় এবং সকল সমস্যার সমাধান হয়” – এরকম অনেক বিজ্ঞাপন অনেক কথা আমরা শুনে থাকি।
বর্তমানে শিক্ষার হার বাড়ার সাথে সাথে এ বিষয়ে সচেতনতাও বেড়েছে। আমরা ধরেই নিতে পারি অজ-পাড়াগা থেকে আসা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত নন এমন মানুষেরাই এ ধরনের কথায় কান দেন।
কিন্তু বসুন্ধরা সিটি’র মত অত্যাধুনিক শপিং কমপ্লেক্সের লিফটে যখন দেখা যায় এমন বিজ্ঞাপন যার অবস্থান খোদ সেখানেই তখন আরেকবার চিন্তা করতে হয় শুধু অশিক্ষিত-অসচেতন মানুষেরাই কি এই প্রতারনার ফাদে পা দিচ্ছে নাকি সেই ফাদে আটকা পড়ছে “শিক্ষিত সচেতন” মানুষেরাও।
এমন অভিজাত স্থানে অবস্থান নেয়া জ্যোতিষদের কাছে যাচ্ছে তারাই, যাদের অঢেল সম্পত্তি আছে এবং দেখা যায় এক-একটি আংটি বা পাথরের জন্য খদ্দের রা দিয়ে আসছে সেখানে লক্ষ-লক্ষ টাকা। এদের মধ্যে এক দল আছে যারা অশিক্ষিত ধনী তারা অনেকটা সেই অজ-পাড়া গাঁ এর লোকদের মতই ফাদে পা দিচ্ছে, আরেকদল সংশয় প্রকাশকারী। অনেক শিক্ষিত ব্যক্তি ও অনেক সময় “দেখি ব্যাপার টা কি” এই মনোভাবে সেখানে যাচ্ছে এবং তাদের একটা কুট-কৌশলে ধরা পরে শিক্ষিতি হবার পরও ভেবে নিচ্ছে তাদের এই “জ্যোতিষ বিদ্যা” আসলেই অনেক বড় কিছু।
একাজে এই “জ্যোতিষ রাজ” রা নিচ্ছে কিছু কৌশলের আশ্রয় এবং তাতে বোকা বনে গিয়ে অনেকেই লাখ-লাখ টাকা খুইয়ে মানষিক প্রশান্তি নিয়ে ফিরে আসছেন। এটা শুধু অভিজাত না সকল জ্যোতিষী ই এইরকম কিছু কৌশলের আশ্রয় নেয়।
তাদের এই কৌশলের অন্যতম একটা হল “সাপের মাথার মনি”। অনেকে এই নামেই ঢালেন অর্থ-বিত্ত। তারা যত শিক্ষিতই হোক মানষিক অবস্থা অশিক্ষিতের থেকে খুব একটা উন্নত নয়। আর অনেকে ব্যাপারটা পরীক্ষা করতে গিয়ে ধরা পড়েন কৌশলের ফাদে।
কৌশল টা কী?
যদি কখনো আপনি তাদের সত্যতার প্রমান দেখতে চান তার দেখাবে। তার আপনার সামনে একটি জীবন্ত সাপ নিয়ে আসবে। আপনি নিজ হাতে কাটবেন সাপটির মাথা। সাথে সাথে মাথার ভেতর থেকে বেড়িয়ে আসবে লাল/নীল/কাল একটি চকচকে পাথর বা মনি।
আসলে এরকম একটা ঘটনা চোখের সামনে ঘটার পর আপনি যত শিক্ষিতই হোন না কেন এর পেছনের বিজ্ঞান ও কৌশল টা যদি জানা না থাকে তবে “সাপের মাথার মনি” র অস্তিত্ব আর বিশেষ ক্ষমতার ব্যাপারটা আসলে অস্বীকার করাটা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে।
এর পেছনের কৌশল জানার জন্য আগে জেনে নিন এই “সাপের মাথার মনি” জিনিশ টা কী?
মুলত সাপের মাথায় কোন পাথর/মনি প্রাকৃতিক ভাবে থাকে না বা তৈরী হয় না। সাপের বিষ একটি বিষ গ্রন্থিতে তৈরী হয় এবং গ্রন্থি থেকে বিষ দতে প্রবাহিত হয়। কখনো কখনো বিষ দাতের মধ্য দিয়ে বেড়িয়ে আসতে পারে না। তখন এই বিষ জমা হয়ে কঠিন আকার ধারন করে। এটাকেই বলা হয় “সাপের মাথার মনি”। এই ঘটনাটি প্রকৃতিতে খুবই দূর্লভ। তবে এই জন্য এটি কখনোই কোন ঐশ্বরিক ক্ষমতার অধিকারী নয় এমনকি আপনার ভাগ্য নির্ধারনের কোন ক্ষমতাই এর নেই। আর এটি আংটিতে ব্যবহার করার মত কোন কঠিন পাথরের মত ও হয় না। তরল বিষ কঠিন অবস্থা প্রাপ্ত হয়ে একটা irregular অবয়ব তৈরী করে মাত্র। অথচ সর্প-মনি বিশারদ রা আপনাকে সাপের মাথা থেকে এনে দেবে সুন্দর আকৃতির একটি রঙ্গিন পাথর।
এখন দেখুন কিভাবে তারা সাপের মাথা থেকে আপনার সামনে নিয়ে আসে একটি সুদৃশ পাথর বা মনি।
সাপ এক প্রকার সরীসৃপ। এর দেহে, দেহ থেকে সম্পূর্ন আলাদা তুলনামুলক ভাবে পুরু ও ফ্লেক্সিবল একটি খোলস থাকে। এই খোলস সাপের দেহকে বাইরের আঘাত থেকে রক্ষা করে। জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ের যখন সাপের দেহের বৃদ্ধি ঘটে তখন সাপ তার খোলস পরিবর্তন করে। বৃদ্ধি শেষে তার দেহে এমন আরেকটি পুরু ও ফ্লেক্সিবল খোলস তৈরী হয়ে যায়। আমরা সাপের বাইরে এই খোলস টিকেই দেখি। যাদের গ্রামে ভ্রমনের অভ্যাস আছে তারা হয়ত এরকম সাপের খোলস পরে থাকতে দেখে থাকতে পারেন। এই খোলস টি ভেতরের সাপের দেহের সাথে চামড়ার মত লাগানো থাকে না। অনেকটা চিংড়ি ও কাকড়ার খোলসের মত ফাপা অবস্থায় এই খোলসের ভেতর সাপের মূল দেহ থাকে। আপনি চাইলে সাপের এই খোলসের এক প্রান্ত একটু কেটে টান দিলে ভেতরের পুরো সাপটি কে খোলস থেকে বের করে আনতে পারবেন। সাপের এই বৈশিষ্ট টিই ব্যবহার করে সাপের মাথার মনি দেখান হয়ে থাকে।
এই সর্প-মনি বিশারদ রা প্রথমে একটি সাপের ব্যবস্থা করে, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিষহীন সাপ এই কাজে ব্যবহার করে। তারপর তারা সাপের লেজের দিকে অল্প একটু কেটে সেখানে একটি রঙ্গিন পাথর প্রবেশ করায়। তাহলে পাথর টি থাকে সাপের পাতলা চামড়ার বাইরে এবং শক্ত খোলসের নিচে। তারপর এটিকে রাবারের টিউবের মত চেপে চেপে লেজের দিক থেকে পাথর টাকে সাপের মাথায় নিয়ে আসা হয়। এই সম্পুর্ন কাজটি ঘটে আপনার অগোচরে। এর পর তারা পূর্বে প্রস্তুতকৃত সাপটি কে নিয়ে আসে আপনার সামনে। আপনার লক্ষ্য থাকে সাপের মাথায়, লেজে নয়। তারপর আপনি যখন সাপটির মাথাটা কাটেন তখন বেরিয়ে আসে সেই আগে থেকে প্রস্তুত পাথর টি। যেটিকে সাপের মাথার মনি বলে চালিয়ে দেয়া হয়, এবং হাতিয়ে নেয়া হয় মোটা অংকের টাকা।
এই গুপ্ত বৈজ্ঞানিক কৌশল টা যদি আপনার জানা না থাকে তাহলে আপনার বিশ্বাস করে নেয়া টা অস্বাভাবিক না যে সাপের মাথায় মনি থাকে, সেটা খুব দামী ও ঐশ্বরিক ক্ষমতার অধিকারী।
এমন বিভিন্ন কৌশল এর সাহায্যেই জ্যোতিষ রা ধোকা দিয়ে যাচ্ছে মানুষদের।
সবাইকে ধন্যবাদ।
আমি এস এ খান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 24 টি টিউন ও 268 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য