“ওয়েব সার্ভিস ব্যাবসার ভবিষ্যৎ ও কিছু কথা” শিরোনামের যে টিউনটি লিখেছিলাম, সেটি থেকে অনেক সাড়া পেয়েছি। টিউনমেন্ট তেমন না হলেও প্রোফাইল থেকে আমার কোম্পানীর সাইটে ভাল কিছু ভিজিটর এসেছিলেন, তাদের কয়েকজন ফোনও করেছিলেন। বললেন টিউন ভাল লেগেছে। একজন তো ক্লায়েন্টই হয়ে গেলেন। মজার ব্যাপার- তাই না! এভাবে টিউনিং/ব্লগিং থেকেও আপনার লীড আসতে পারে- তাই এটি কিন্তু ওয়েব সার্ভিসে নিজের দক্ষতা প্রমাণের অন্যতম মাধ্যম।
সেই টিউনে এক টিউনার ভাই ওয়েব সার্ভিসে নিজেকে দক্ষ করার ব্যাপারে একটি টিউন লিখতে বলেছিলেন। তাই এই টিউনটি লিখতে বসেছি।
খুব বেশি ভূমিকা লেখা আমার আসলে পছন্দ নয়- পারি না বলেই কি না ঠিক বলতে পারব না। 😀
আচ্ছা- এই ব্যাপারটা ক্লিয়ার হওয়া দরকার আছে। ওয়েব সার্ভিস হল ওয়েব সম্পর্কিত সেবাসমূহ। যেমন- ডিজাইন, ডেভেলপমেন্ট, হোস্টিং, এসইও, সোশাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট, অন্যান্য অনলাইন মার্কেটিং সহ আরো কিছু। আসলে প্রফেশনাল বা স্পেশালিস্ট হতে হলে যে কোন একটি বিষয়ে/বিভাগে দক্ষ হলেই চলে। তার পরও যারা ওভার অল প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কিংবা হ্যান্ডলিং করতে চান- তাদের জন্য ওয়েব ডেভেলপ, ওয়েব ডিজাইন, ওয়েব হোস্টিং অথবা এসইও টার্মগুলোর একটিকে ব্যাবহার করাটা একটু বেখাপ্পা লাগে। তাই সমন্মিত টার্ম "ওয়েব সার্ভিস" ব্যাবহার করাটাই শ্রেয় বলে মনে করলাম।
যারা আউটসোর্সিং করেন, তারা ভাল করেই জানেন যে একজন ক্লায়েন্ট সমকক্ষ কোন সার্ভিসের জন্য আলাদা প্রোভাইডারের চেয়ে এক প্রোভাইডারের কাছ থেকেই সব সার্ভিস নেয়াটা সহজ এবং বোধগম্য মনে করেন। এতে করে তারা ডিস্কাউন্ট, রিলায়াবিলিটি কিংবা দ্রুততা সবই আশা করতে পারেন। আর দেশের লোকাল মার্কেটে আমার মত যারা সার্ভিস দেন, তাদের তো কোন কথাই নেই। আমি ওয়েব ডেভেলপমেন্টে যত ভাল পালোয়ানই হই না কেন, ওয়েব হোস্টিং বা এসইওর ক্ষেত্রে যদি কোন ৩য় পক্ষ ব্যবহার করি তবেই সেরেছে। আমি তো কোন কাজেরই না! তাই এই টিউনটিতে আমি উপরে উল্লেখিত কোন নির্দিষ্ট বিষয় নিয়ে বলব না। সামগ্রিক ভাবে ওয়েব সার্ভিস এ নিজেকে দক্ষ করা নিয়েই এ টিউন।
আমি ধরেই নিচ্ছি যে আপনি ওয়েব ডিজাইন-ডেভেলপমেন্ট, হোস্টিং, এসইও এসবের ব্যাপারে প্রাথমিক ধারণা নিয়েই টিউনটি পড়ছেন। তবে ধারণা না থাকলেও আপসেট হবেন না, অল্প অল্প করে সবগুলো টার্মই আলোচনা করতে চেষ্টা করব।
ওয়েব সার্ভিসের দক্ষতা আসলে পুরোটাই একটি সিস্টেম্যাটিক প্রসেস। আর তাই শুরু করে দক্ষ হওয়ার চেয়ে দক্ষভাবে শুরু করতে পারলে অনেক ভাল হয়। আপনি ইন্ডিভিজুয়াল অথবা কর্পোরেট যে কোন ভাবেই শুরু করতে পারেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে জেনে রাখা ভাল যে আপনার আউটলুক যেন প্রফেশনাল হয়। আপনার ব্যক্তিগত এ্যাপেয়ারেন্সের কথা বলছি না। আপনার ক্লায়েন্ট এ্যাপ্রোচ, কাজের ধরণ, ডেলিভারি কিংবা পেমেন্ট মাধ্যম যেন প্রফেশনাল হয়। শুরু করার আগে আপনাকে কিছু চেকলিস্ট মেন্টেইন করতে হবে। যেমন-
এখানে উল্লেখিত সেবাগুলো আপনি একই প্রতিষ্ঠান থেকে একই সাথে প্রদান করতে পারেন।
১। ক্লায়েন্টের কাছ থেকে কাজের অর্ডার ও অগ্রিম পেমেন্ট নেয়ার পর প্রথম কাজ হবে তার কাঙ্ক্ষিত পদ্ধতিতে ফটোশপে লে-আউট ডিজাইন করা।
২। স্ক্রীনশট দেখিয়ে প্রয়োজনে রিভিশন দিয়ে ফাইনাল ডিজাইন এ্যাপ্রোভ করতে হবে। কয়েকবার এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে হতে পারে।
৩। পরে ডেভেলপমেন্ট সম্পন্ন করে সেই ডিজাইন এপ্লাই করতে হবে।
৪। প্রয়োজনীয় কন্টেন্ট ও খুঁটিনাটি কাজ শেষ করে সাইট সার্ভারে আপলোড করতে হবে। ডোমেইন সেটআপও করতে হতে পারে যদি পূর্বে থেকে করা না থাকে। চাইলে আপ করেও কন্টেট সম্পর্কিত কাজ করা যায়।
৫। কাজ শেষ হলে সাইট বুঝিয়ে দিন। বাকি টাকা বুঝে নিন।
ধরি আপনি ৩০ জন ক্লায়েন্টকে গড়ে ১ জিবি হোস্টিং এর প্যাকেজ সেল করেছেন বার্ষিক ৯০০/- টাকয়। তাহলে বছরে আপনার আয়- ৩০X৯০০ = ২৭,০০০/- টাকা। আপনার প্যাকেজের খরচ যদি ৪,০০০/- টাকা হয়- তাহলে শুধু মাত্র ওয়েব হোস্টিং থেকে বছরে আপনার লাভ ২৩,০০০/- টাকা।
রিসেলার হোস্টিং কেনার সময় খেয়াল করবেন আপনার প্রোভাইডার যেন আপনাকে ওভারসেলিং সুবিধা প্রদান করে। ওভারসেলিং এ আপনি ১০ জিবি প্যাকেজ নিয়ে ১০০ জিবি প্যাকেজও সেল করতে পারবেন। ততোক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ আপনার সকল ক্লায়েন্টের মোট ব্যবহৃত ডিস্কস্পেসের পরিমান ১০ জিবির মধ্যে থাকছে।
২টি পদ্ধতিতে এসইও করাযায়-
- অন পেইজ এসইওঃ ওয়েব পেজকে নির্দিষ্ট কী-ওয়ার্ডের জন্য অপটিমাইজ করা।
- অফ পেইজ এসইওঃ অন্য হাই ট্রাফিক সাইটে ওয়েব পেজের ব্যাক লিঙ্ক তৈরি করা।
প্রচারেই প্রসার। তাই এর কোন বিকল্পই নেই। শুরুতে আপনি যে কাজ করেন সে তথ্য ক্লায়েন্টের কাছে পৌছাতে হবে। ভাল হয় যদি ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্যামিলি বা পরিচিত কারো কাজ দিয়ে শুরু করা। এতে করে সহজে শুরু করা যাবে। আপনার সেবাগুলোর প্রয়োজন আছে এমন পরিচিত ভাই, আংকেল, শিক্ষক অথবা পাড়াতো ভাইয়ের কাছেও বলতে পারেন। গুটিসুটি হয়ে বসে থাকলে কখনো কাজ পাবেন না। এছাড়াও সোশাল শেয়ারিং, ফেসবুক, টুইটার, গুগল+, লিঙ্কড ইন সহ বিভিন্ন সাইটে আপনার প্রচার প্রচারণা চালাতে পারেন। আপনার যদি কোন বিষয়ে ভাল নলেজ থাকে তবে সে বিষয়ে ব্লগিং করেও আপনার কাজের প্রচার করতে পারেন।
বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে বিজ্ঞাপণ দিতে পারেন অনেক কম খরচে। AmaderAd.Com কে আমি রিকমেন্ড করি। পে পার ক্লিক বিজ্ঞাপণের ক্ষেত্রে তাদের একটি দারুণ অফার চলছে। যোগাযোগ করে দেখতে পারেন।
আপনার সেবার মার্কেটিং আপনি নিজেও করতে পারেন। চাইলে অন্য কাউকে দিয়েও করাতে পারেন। মনে রাখবেন আপনার সেবার প্রচার পরিচিতি যত বাড়বে ততই বাড়বে কাজ পাওয়ার হার।
সুন্দর করে চালিয়ে যান। দক্ষতা সময়ের সাথে সাথে অর্জন হয়। তাই নিয়ম মেনে ধৈর্য ধরে চলুন- সফলতা আসবেই।
কোন কিছু জানার বা বলার থাকলে টিউনমেন্ট করুন- রিপ্লাই দিতে চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ্। ভাল থাকবেন সবাই। ধন্যবাদ।।
আমি ওয়ালিউর রহমান। Founder & CEO, WaliBD, Uttara। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 20 টি টিউন ও 20 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
একাডেমিকভাবে একজন এ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার। তবে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট থেকেই উপার্জনের হাতেখড়ি। এ ব্যাবসায় জড়িত আছি সেই ২০০৮ সাল থেকে। এখনো আছি...। নিজ প্রতিষ্ঠান WaliBD.Com এর মাধ্যমে তাই চেষ্টা করছি ডিফরেন্ট কিছু করবার। যে কোন ধরনের ওয়েবসাইট তৈরির জন্য যোগাযোগ করুন: ০১৯৪৬-৩৬৬৪৪৮
অসাধারন আপনার লেখার হাত।
আপাতত আমি ওয়েব ডিজাইনিং এ নিজেকে দাড় করা তে চাচ্ছি। পরবর্তিতে ডেভোলমেন্ট, এসইও, ওয়েব হোস্টিং সার্ভিসের দিকে আগাবো। আপনার এই টিউনটি খুবি উপকারে লাগবে গাইড লাইন হিসেবে। অসংখ্য ধন্যবাদ 🙂
প্রোফেশনালিজমের ব্যাপারটা একটু ক্লিয়ার করে দিলে ভাল হত। কিসব কাজে এটা প্রকাশ পায়। কিসব ব্যবহার করলে সেটাতে ব্যাঘাত ঘটে এসব আরকি।