জেনে নিন : গুগল অ্যালগরিদমের ইতিহাস (প্রথম পর্ব)

সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্ট গুগল প্রতিবছরই ৫০০-৬০০ বার পান্ডা, পেঙ্গুনইসহ অ্যালগরিদমে নতুন সংষ্করণ বা পরিবর্তন আনে। বিষয়টি অনেকের কাছেই অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। কারণটি হলো এই সকল আপডেটের বেশিরভাগই গৌণ বা ছোট ধরনের পরিবর্তন। মূল বিষয়টি হলো, প্রতি বছর গুগল অ্যালগরিদমে ৩/৪টি বড় ধরনের আপডেট আসে। এগুলো সার্চ রেজাল্টে বড় ধরনের প্রভাব ফেলে।

অনলাইন মার্কেটার, ওয়েবমাস্টারদের গুগলের এই সকল অ্যালগরিদমের বিভিন্ন আপডেট কবে হয়েছে, কি ধরনের পরিবর্তন এসেছে এসব জানা জরুরী। যার ফলে সাইটের র‌্যাংকিং ও অর্গানিক ওয়েবসাইট ট্রাফিক বৃদ্ধির জন্য যা করা দরকার সেটি সম্পর্কে ধারনা পাবেন। তাই পাঠকদের জন্য গুগলের অ্যালগরিদমের বড় ধরনের পরিবর্তণ ও এ সম্পর্কিত সংক্ষিপ্ত তথ্য তুলে ধরা হলো।

 

সেপ্টেম্বর ১৯৯৮ : সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে গুগলের যাত্রা
ল্যারি পেইজ ও সের্গেই ব্রিন একটি প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে গুগল প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৪ সালের ১৯শে আগস্ট এটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে পরিণত হয়। মূলত সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে গুগলের যাত্রা শুরু হয়, যেটি লিংক ম্যাট্রিক্স ব্যবহারের মাধ্যমে কোনো সাইটের র‌্যাংক নির্ধারণ করে।

ডিসেম্বর ২০০০ : গুগল টুলবার
গুগল তাদের ব্রাউজার টুলবার ‘টুলবার পেজ র‌্যাংক (টিবিপিআর)’ চালু করে। মূলত তখন থেকেই সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন বিতর্ক শুরু হয়।

সেপ্টেম্বর ২০০২ : প্রথম ডকুমেন্টেড আপডেট
গুগল সর্বপ্রথম তাদের ডকুমেন্টেড আপডেট আনে। যেটির প্রভাব বেশি না হলেও পেজর‌্যাংক পরিবর্তনে অনেক ভ’মিকা রাখে।

ফেব্রুয়ারি ২০০৩ : দ্য বস্টন আপডেট
অ্যালগরিদম আপডেট হিসেবে গুগলের প্রথম আপডেট ‘এসইএস বস্টন’ ঘোষনা করা হয়। অ্যালগরিদম কম্বিনেশন ও প্রতি মাসে ইন্ডেক্স রিফ্রেশ (গুগল ড্যান্স) সম্পর্কিত বেশ কয়েকটি বিষয় ছিলো এই সংষ্করণে।

এপ্রিল ২০০৩ : দ্য কাসান্ড্রা আপডেট
কিছু বেসিক লিংক কোয়ালিটি, হিডেন লিংক ও হিডেন টেক্সট ব্যবহার করে দ্য কাসান্ড্রা আপডেট আনে গুগল।

মে ২০০৩ : দ্য ডমিনিক আপডেট
ব্যাক লিংক রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে ও সেটি কাউন্ট করার মাধ্যমে অ্যালগরিদমে বিশেষ পরিবর্তণ আনা হয়। এই সময়ে ডিপক্রাউলার ও ফ্রেশবট আপডেটের ফলে অনেক ওয়েবমাস্টার দাবি করেন, তাদের সাইটের র‌্যাংকিং অনেক পরিবর্তণ আসছে।

জুন ২০০৩ : দ্য এসমারেলডা আপডেট
এটিই ছিলো গুগল অ্যালগরিদমের নিয়মিত মাসিক আপডেটের সর্বশেষ সংষ্করণ। গুগল ড্যান্সের পরিবর্তে ইভারফ্লাক্স আনা হয়, যেটি গুগলের পরবর্তী আপডেট সম্পর্কে সতর্কবার্তা দেয়।

জুলাই ২০০৩ : দ্য ফ্রিটজ আপডেট
প্রতি মাসের পরিবর্তে প্রতিদিন গুগল ইনডেক্স আপডেট নির্ধারণ করা হয়। এটি মূলত গুগল ড্যান্স বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেই কার্যক্রম শুরু করে।

সেপ্টেম্বর ২০০৩ : দ্য সাপ্লিমেন্টাল ইনডেক্স
পারফরমেন্স লেভেলের কোনো পরিবর্তন ছাড়াই এই আপডেটের মাধ্যমে গুগল আরো বেশি ডকুমেন্ট ইনডেক্স করার সুবিধা আনা হয়।

নভেম্বর ২০০৩ : দ্য ফ্লোরিডা আপডেট
মূলত এই আপডেটের ফলে এসইও বিষয়টি অনেকটা চ্যালেঞ্জিং বিষয় হয়ে দাড়ায়। এই আপডেটে অনেক জনপ্রিয় ওয়েবসাইটের র‌্যাংকিং কমে যায়।

জানুয়ারি ২০০৪ : দ্য অস্টিন আপডেট
এটি মূলত আগের ফ্লোরিডা আপডেটের বর্ধিত সংষ্করণ। এখানে কিওয়ার্ড স্ট্যাফিং ও ইনভিজিবল টেক্সট ইনডেক্সের মাধ্যমে মোটকথা অন-পেজ অপটিমাইজেশনকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। যে বিষয়গুলো এখনও গুরুত্বপূর্ণ।

ফেব্রুয়ারি ২০০৪ : দ্য ব্র্যান্ডি আপডেট
এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আপডেট ও অনেক পরিবর্তণ আনা হয়। দ্য লেটেন্ট সিমেনটিক ইনডেক্সিংয়ের মাধ্যমে এই আপডেটে কোনো ওয়ার্ডের সিসোনিম বা সমার্থক শব্দ খুঁজে বের করা ও কিওয়ার্ড অ্যানালাইসিস ফিচারে আমূল পরিবর্তণ আসে।

জানুয়ারি ২০০৫ : দ্য নোফলো
গুগল মাইক্রোসফট ও ইয়াহুর সঙ্গে মিলে ‘নোফলো’ লিংক বিষয়ক আপডেট আনে। এটার মূল উদ্দেশ্য ছিলো স্প্যাম লিংক খুঁজে বের করা। তবে এটি লিংকিং এর ক্ষেত্রে অনেক বড় প্রভাব ফেলে।

nofollow-link

ফেব্রুয়ারি ২০০৫ : দ্য অ্যালেগ্রা আপডেট
এই আপডেটে সাইটের র‌্যাংকিংয়ে পরিবর্তণ আসলেও অ্যালগরিদম পরিবর্তনের সব বিষয় অনেকটা অস্পষ্ট। ধারণা করা হয়, গুগল কিছু সন্দেহজনক লিংক ধরার জন্য অ্যালেগ্রা আপডেট আনে।

মে ২০০৫ : দ্য বরবন আপডেট
সার্চ কোয়ালিটিতে পরিবর্তনের এই আপডেটের মূল বিষয়টি আগের আপডেটের মতো অস্পষ্ট থাকলেও বেশিরভাগ ওয়েবমাস্টাররা মনে করেন, এই আপডেটে নন-ক্যানোনিকাল ও ডুপ্লিকেট কনটেন্ট একটা সাইটের জন্য কতটা ক্ষতিকর হতে পারে সেটি প্রকাশ পেয়েছে।

জুন ২০০৫ : পার্সোনালাইজড সার্চ
মূলত এই আপডেট থেকেই গুগল তাদের ব্যবহারকারীর সার্চ হিস্টোরিকে কাজে লাগাতে শুরু করে। পূর্ববর্তী সার্চ হিস্টোরিকে মনে রেখে এটি পরবর্তী সার্চের সময় রিলেটের কনটেন্ট দেখানো শুরু করে। এতে সার্চিং সময়টা আরো সহজ ও দ্রুত হয়। এরপর থেকে বিভিন্ন অ্যাপ্লিকেশনে গুগল পার্সোনালাইজড সার্চ ফিচারটি ব্যবহার শুরু করে।

জুন ২০০৫ : দ্য এক্সএমএল সাইটম্যাপ
সচরাচর ব্যবহৃত এইচটিএমএল সাইটম্যাপকে এক্সএমএল সাইটম্যাপে পরিবর্তণ করা হয়। সাইটের ইনডেক্সিং ও ক্রাউলিংয়ের জন্য ওয়েবমাস্টাররা গুগল ওয়েবমাস্টার টুলে তাদের সাইটের এক্সএমএল সাইটম্যাপ সাবমিট করার সুযোগ পান।

xml sitemap

সেপ্টেম্বর ২০০৫ : দ্য গিল্লিগান আপডেট
গুগলের পক্ষ থেকে বলা হয়, এই আপডেটে তেমন কোনো পরিবর্তণ আনা হয়নি। ইনডেক্স ডাটা প্রতিদিনই আপডেট হবে তবে টুলবার পিআর এর মতো কিছু মেটিক্স প্রতি ৩ মাস অন্তর অন্তর আপডেট হবে।

অক্টোবর ২০০৫ : দ্য গুগল লোকাল/ম্যাপস আপডেট
বেশ কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে লোকাল এসইও এর ক্ষেত্রে এই আপডেট বিশেষ ভ’মিকা রাখে। ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন তথ্য শেয়ারের জন্য গুগল ম্যাপ চালু করা হয়।

অক্টোবর ২০০৫ : দ্য জ্যাগার আপডেট
এই আপডেটটি সেপ্টেম্বরে শুরু হয় এবং অক্টোবর পর্যন্ত উন্নয়নের কাজ চলে। এই আপডেটের প্রধান বিষয়গুলো ছিলো লিংক ফার্মস, পেইড লিংক, লো কোয়ালিটি লিংক ও রেসিপ্রোক্যাল লিংক।

ডিসেম্বর ২০০৫ : দ্য বিগ ড্যাডি আপডেট
এটি মূলত গুগলের অভ্যান্তরীণ কার্যক্রমের আপডেট। গুগল কিভাবে ৩০১/৩০২ রিডাউরেক্ট করে, টেকনিক্যাল ইস্যু বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।

নভেম্বর ২০০৬ : দ্য সাপ্লিমেন্টাল আপডেট
কোনো পেজকে ফিল্টারিংয়ের ক্ষেত্রে এই আপডেটকে ব্যবহার করা হয়। যার ফলে পেনাল্টির মতো বিষয় ঘটেছে। তবে গুগলের পক্ষ থেকে বলা এমনটি হয়নি বলে বলা হয়।

ডিসেম্বর ২০০৬ : দ্য ফলর্স অ্যালার্ম
রিপোর্ট স্বত্বেও কোনো সাইটের র‌্যাংকিংয়ে ভালোমানের পরিবর্তণ আনে এই আপডেট। এটি মূলত মিথ্যা রিপোর্ট ধরার কাজে ব্যবহৃত হয়। তবে গুগলের পক্ষ থেকে বলা হয় এই আপডেটে বেশি কিছু পরিবর্তণ আনা হয়নি।

False_Alarms

মে ২০০৭ : দ্য ইউনিভার্সাল সার্চ আপডেট
সাধারণ অ্যালগরিদমের ক্ষেত্রে কোনো আপডেট না আসলেও এই আপডেটে গুগল তাদের সার্চে নিউজ, ছবি, ভিডিওসহ বেশ কিছু প্রয়োজনীয় সেবাকে যুক্ত করে। যেটি সাচিং কৌশলকে আরো সহজ করেছে।

জুন ২০০৭ : দ্য বাফি আপডেট
এটি মূলত কয়েকটি ছোট ছোট পরিবর্তনের একটি সম্মিলিত আপডেট।

আগষ্ট ২০০৮ : দ্য গুগল সাজেস্ট আপডেট
এটি মূলত সার্চ করার সময় ড্রপডাউনের মাধ্যমে গুগল যে কিওয়ার্ডগুলো সাজেশন সে বিষয়টি। এতে সাচিং কৌশলটা আরো সহজ, নির্ভুল ও কম সময়ে সম্পন্ন করার সুযোগ পেয়েছেন ব্যবহারকারীরা।

এপ্রিল ২০০৮ : দ্য ডিউয়ি আপডেট
এখানে মূলত গুগলের নিজস্ব পণ্য বা সেবা বাড়ানোর বিষয়টি এসেছে। অ্যালগরিদমের বিশেষ কোনো পরিবর্তন না।

ফেব্রুয়ারি ২০০৯ : দ্য ভিঞ্চ আপডেট
এই আপডেটে মূলত বিভিন্ন নামিদামি ব্র্যান্ড, প্রতিষ্ঠানের র‌্যাংকিংকে নজর দেওয়া হয়।

ফেব্রুয়ারি ২০০৯ : দ্য রি-ক্যানোনিক্যাল ট্যাগ আপডেট
গুগল, মাইক্রোসফট ও ইয়াহু জানায় যে তারা ক্যানোলিক্যাল ট্যাগকে গুরুত্ব দিচ্ছে। এর ফলে ওয়েবমাস্টাররা সার্চ বোটকে সহায়তা করার সুযোগ পান এবং সার্চ ইঞ্জিনে প্রভাব ফেলতে পারেন।

আগস্ট ২০০৯ : দ্য কাফেয়িং আপডেট প্রিভিউ
এই আপডেটে ক্রাউলিং স্পিড বাড়ানো, ইনডেক্স পদ্ধতি বর্ধিতকরণ, রিয়েলটাইম ইনডেক্সিং ও র‌্যাংকিং বিষয়গুলোতে পরিবর্তণ আনা হয়। তবে এটি ছিলো প্রিভিউ সংষ্করণ।

real-time-search

ডিসেম্বর ২০০৯ : দ্য রিয়েল টাইম সার্চ আপডেট
এই আপডেটে রিয়েল টাইম সার্চের ক্ষেত্রে গুগল নিউজ, টুইটার ফিড, ইনডেক্সেড কন্টেন্ট ও বিভিন্ন সোর্স থেকে দ্রুত সার্চ রেজাল্ট দেখানোর সুবিধা নিয়ে আসে।

 

লেখাটি অনেক বড় হওয়ায় পাঠকদের সুবিধার্তে ২টি পর্বে ভাগ করে এটি প্রকাশ করা হচ্ছে। আজ প্রকাশিত হলো প্রথম পর্ব।

Level 0

আমি বদরুদ্দোজা মাহমুদ তুহিন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 10 টি টিউন ও 17 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

খুব ভালো লিখেছেন।ধন্যবাদ।

ধন্যবাদ লেখক কে