একটি T-Shirt এর ইতিকথা! টিউনটি পড়লে শুধু অবাক হবেন না, তার বেশি কিছু হবেন! (মেগা টিউন)

একটি টি-শার্ট এর  বাজার দর সর্বনিন্ম ১৫০ থেকে ২০০ টাকা (ফুটফাতে যেগুলো কিনতে পাওয়া যায়)। আমরা অহরহ এগুলো ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু কেউকি কখনো ভেবেছেন এই টি-শার্ট টি কতগুলো process এর মধ্যে দিয়ে আমাদের হাতে এসে পৌঁছেচে? আজ আমি আপনাদেরকে সেই  প্রসেসগুলো সম্পর্কে পরিচিত করব। টিউনটি যখন শেষ হবে, আপনারা সত্যিই অবাক হবেন ।

একটি টি-শার্ট  তৈরী করতে কম করে হলেও প্রধানত পাঁচটি ধাপ সম্পন্ন করতে হয়। ধাপগুলো হলো :

১। স্পিনিং/ইয়ার্ন ম্যানুফ্যাকচারিং

২। ইয়ার্ন  ডাইং

৩। উইভিং/ নিটিং

৪। ফেব্রিক ডাইং এবং প্রিন্টিং

৫। ক্লথিং/গার্মেন্টস
তবে ক্ষেত্র বিশেষে চারটি ধাপেই পুরো কাজ সম্পন্ন করা যায়
এখানে প্রতেকটি ধাপই কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়ার স্বমন্নয়ে গঠিত।আমি চেষ্টা করব প্রত্যেকটি ধাপের বিভিন্ন প্রক্রিয়া গুলোর সমন্ধে আপনাদেরকে মোটামুটি একটা ধারণা দিতে যাতে পুরো চিত্রটা আপনাদের সামনে ফুটে উঠে।

১। স্পিনিং/ইয়ার্ন ম্যানুফ্যাকচারিং :

স্পিনিং বলতে বয়ন কৌশল আর ইয়ার্ন ম্যানুফ্যাকচারিং বলতে সূতা তৈরির প্রক্রিয়াকে বুঝানো হয়। শাব্দিক অর্থ ভিন্ন হলেও  দুটি প্রায় কাছাকাছি প্রক্রিয়া। টেক্সটাইল এর ভাষায়,  যে প্রক্রিয়ার সাহায্যে টেক্সটাইল ফাইবার দ্বারা প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন প্রক্রিয়া দ্বারা টেক্সটাইল ফাইবার বা আশ বা তন্তু সমুককে twist (পেচানো) প্রদানের মাধ্যমে প্রান্ত বিহীন নুন্যতম শক্তি সম্পন্ন সূতা প্রস্তুত করা হয়, তাকে স্পিনিং/ইয়ার্ন ম্যানুফ্যাকচারিং। বলে। এই প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে তারাই ভালো বুঝবেন যারা পাট থেকে দড়ি তৈরির প্রক্রিয়া দেখেছেন।

 আমাদের দেশে যে তুলা হয় তা বালিশ বা তোসখ তৈরী করা ছাড়া আর কোনো কাজে লাগে না। কারণ, সূতা তৈরী করতে ফাইবার বা তন্তু সমূহের নুন্যতম একটা লেন্থ এর প্রয়োজন হয়। যা আমাদের দেশের শিমুল তুলার নাই। তাই আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে তুলা আমদানি করি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মিসর,চীন,আমেরিকা,ভারত,পাকিস্তান,তুর্কি ইত্যাদি।

 প্রস্তুত প্রণালীর উপর ভিত্তি করে সূতাকে বিভিন্ন ভাবে ভাগ করা যায়। যেমন কার্ডেড সূতা, কমবড সূতা ইত্যাদি।আবার কাচামাল বা মূল উপাদানের উপর ভিত্তি করে সূতাকে বিভিন্ন ভাবে ভাগ করা যায়। যেমন কটন সূতা, পলিস্টার সূতা, আক্রাইলিক সূতা, ভিসকোস সূতা,পলিভিনাইল সূতা, রেয়ন সূতা ,উল সূতা, সিল্ক সূতা ইত্যাদি। এ ছাড়াও দুই প্রকার তুলা মিক্স করে যে সূতা তৈরী করা হয় তাকে মিক্সড সূতা বা ব্লেন্ডেড সূতা বলে। আমরা যে পোশাক ব্যবহার করি, তার ৯০ ভাগ ভেজাল বা মিক্স সূতা দিয়া তৈরী, যদিও দোকানদাররা ১০০ ভাগ কটন সূতা বলে নিশ্চয়তা দেয়, কিন্তু বেশিরভাগ সুতার ক্ষেত্রে পলিস্টার সূতা মিক্স থাকে।

এখন  চলুন একনজরে স্পিনিং এর flowchart বা প্রবাহ চিত্র দেখে নেই,

উক্ত ফ্লো চার্টে তিনটি প্রক্রিয়া দেখানো হয়েছে। প্রথমটি কলামটি হলো ইনপুট অর্থাৎ মেশিন বা প্রক্রিয়ার কাচামালের তালিকা। দ্বিতীয়টি হলো প্রক্রিয়া বা মেশিনের নাম। এবং উক্ত প্রক্রিয়া বা মেশিন থেকে উত্পাদ দ্রব্যের নাম। প্রত্যেকটি প্রক্রিয়ায় যথেষ্ট টেকনিকাল টার্ম আছে । যা খুব একটা সহজবোধ্য নয়। তাই বিষয়গুলো এড়িয়ে গেলাম।

নিন্মের চিত্রে, একটি রিং স্পিনিং ফ্রেম মাশিনে রবিং থেকে ইয়ার্ন তৈরী হচ্ছে।


এই প্রসেসগুলো ঠিক ভাবে শেষ হলেই আমরা আমদের টি-শার্টটির জন্য সূতা পাব।
আপনারা যারা এ বেপারে বেশি আগ্রহী, তারা এই লিঙ্কে ক্লিক করলে স্পিনিং  সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন।
এখন আমরা একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে যাই।

ডিজাইন এর উপর ভিত্তি করে টি-শার্ট দুই প্রকারের হয়ে থাকে। যেমন

১। টি-শার্ট :


২। পোলো শার্ট  :

এই দুটোর মধ্যে মূল পার্থক্য হলো টি-শার্ট এর কলার নাই কিন্তু  পোলো শার্টের এর কলার আছে।

আবার রং করার প্রণালীর উপর ভিত্তি করে টি-শার্ট কে মোটামুটি তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন
১। প্রিন্টেড টি-শার্ট :-


এই ধরনের  টি-শার্ট গুলোতে সাধারণত বিভিন্ন ডিজাইন প্রিন্ট করা থাকে।এই পদ্বতিতে off white কিনবা white অথবা এক রঙের ডাইং করা কাপড়ের উপর বিভিন্ন ডিজাইন বা নাম প্রিন্ট করা হয়।এই পদ্বতিতে ফেব্রিক ডাইং করে তারপর প্রিন্টিং করা হয়।

২। ফেব্রিক ডাইড টি-শার্ট:-

এই ধরনের টি-শার্ট গুলো  সাধারণত এক রঙ্গা হয়ে থাকে।এই পদ্বতিতে সরাসরি ফেব্রিক ডাইং করে প্রসেস করা হয়।

৩। ইয়ার্ন ডাইড টি-শার্ট :

এই ধরনের টি-শার্ট গুলোতে দুইটি বা তিনটি রঙের সুতার স্ট্রাইপ থাকে।এই পদ্বতিতে কিছুটা জটিল। এইখানে দুই ভাবে কাজ করা হয়। প্রথমত ইয়ার্ন ডাইং করে নিটিং (নিটিং  সমন্ধে পরে আলোচনা করা হয়েছে) এর মাধমে স্ট্রাইপ ডিজাইন তৈরী করা হয়, অথবা ডাইং  করা কাপড়ের উপর স্ট্রাইপ ডিজাইন প্রিন্ট করেও এই স্ট্রাইপ ডিজাইন করা হয়। লক্ষনীয় এই যে, আমরা বাজার থেকে ভুল করে প্রিন্ট করা কাপড়কে  ইয়ার্ন ডাইং করা কাপড় মনে করে কিনি, এক্ষেত্রে মনে রাখবেন, ইয়ার্ন ডাইং করা কাপড়ের উভয় পাশ সবসময় একই রঙের হয়, অন্যদিকে প্রিন্ট করা কাপড়ের দুই পাশ দুই রকম হয়। যেমন উপরের স্ট্রাইপ টি-শার্ট  টি যদি প্রিন্টের হয়, তবে এর উল্টো পাশে কোনো স্ট্রাইপ থাকবেনা। এক্ষেত্রে প্রিন্টের কোয়ালিটি খারাপ হলে দুই একবার ধুলে প্রিন্ট উঠে যাবার সম্ভাবনা রয়েছে।

এতক্ষণ ধরে আমরা যে আলোচনা করলাম, তার সারমর্ম হলো টি-শার্ট কি ধরনের হবে তার উপর নির্ভর করে এটা কোন প্রসেস থেকে কোন প্রসেসে যাবে। আমরা প্রথমে যে পাঁচটি প্রধান ধাপ সম্পর্কে আলোকপাত করালম, এই ধাপগুলোর মধ্যে স্পিনিং অর্থাৎ সুতা তৈরীর ধাপটি সর্বপ্রথম শেষ করতে হবে। আর বাকি ধাপগুলো নির্ভর করবে আমরা কি ধরনের টি-শার্ট তৈরী করব তার উপর। আমরা যদি স্ট্রাইপ টি-শার্ট  তৈরী করতে চাই, তবে স্পিনিং এর পরে আমাদেরকে ইয়ার্ন বা সূতা ডাইং বা রং করতে হবে। তারপর ওই সূতা দিয়া ডিজাইন অনুযাই ফেব্রিক তৈরী করতে হবে। তারপর ওই ফেব্রিক আমরা গার্মেন্টস এ পাঠাব। আর যদি আমরা এক কালার টি-শার্ট বা এক কালার টি-শার্ট  এর উপর প্রিন্ট করতে চাই, তবে স্পিনিং থেকে প্রাপ্ত সূতা থেকে সরাসরি ফেব্রিক তৈরী করে সে ফেব্রিক কে ডাইং বা একটি মাত্র কালার করে গার্মেন্টস এ পাঠাব । প্রিন্ট করতে চাইলে গার্মেন্টস থেকে  প্রিন্টিং ডিপার্টমেন্ট এ পাঠানোর প্রয়োজন পরবে।

এখন, আমরা যদি একটি স্ট্রাইপ টি-শার্ট তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাই, তাহলে স্পিনিং এর পর আমাদের কে দ্বিতীয় ধাপ অর্থাৎ ইয়ার্ন ডাইং সম্পর্কে জানতে হবে।

২। ইয়ার্ন ডাইং :-

সাধারণত, ইয়ার্ন ডাইং বলতে সূতা রং করার পদ্বতিকে বুঝানো হয়। আমরা এর আগে জেনেছি কিভাবে স্পিনিং থেকে সূতা প্রস্তুত করা হয় । স্পিনিং থেকে প্রাপ্ত সূতাকে  সুবিধাজনক প্যাকেজ এ  রূপান্তর করা হয়।

কিন্তু ইয়ার্ন ডাইং করতে হলে একে নির্দিষ্ট প্যাকেজ এ রুপার্ন্তর করতে হবে। কারণ ডাইং এর সময় একে উচ্চ তাপ এবং চাপ সয্য করতে হয়।

এই ক্ষেত্রে, উচ্চ তাপ এবং চাপ সয্য করতে পারে এমন ববিন এ সূতা জড়ানো হয়।


এরপর এই ডাইং মেশিনের ধারণ ক্ষমতা অনুযাই নির্দিষ্ট সংখ্যক ববিন মাশিনের carrier এ লোড দেয়া হয়।

এটি একটি ইয়ার্ন ডাইং মেশিন ।এটি ইয়ার্ন ডাইং মেশিন carrier । যে ববিনগুলো রং করা হবে সেগুলো এই carrier এর স্টিক এর মধে ঢুকানো হয়।
carrier এ নির্দিষ্ট পরিমান সুতার প্যাকেজ বা ববিন ঢুকানো বা লোড দেওয়ার পর ক্রেন এর দ্বারা carrier টিকে মেশিনে লোড করা হচ্ছে।

এরপর এই রং করা সূতাকে ফিনিশিং করার পর তা কাপড় বানানোর উপযোগী হয়ে উঠে।

৩। উইভিং/ নিটিং:

এখন আমরা রং করা সূতা দিয়া কাপড় বা ফেব্রিক তৈরী করব।কিন্তু তার আগে আমাদেরকে ফেব্রিকের প্রকারভেদ সম্পর্কে জানতে হবে।
ফেব্রিক প্রধানত তিন প্রকার। যথা

১। ওভেন ফেব্রিক
২। নিট ফেব্রিক
৩। মেল্টেড ফেব্রিক

১। ওভেন ফেব্রিক :

দুই সারি  সূতা তাঁত এর সাহায্যে পরস্পর সমকোণ বন্ধনীর মাধ্যমে যে কাপড় বা ফেব্রিক তৈরী করে তাকে, ওভেন ফেব্রিক বলা হয়।

এই ধরনের ফেব্রিক দিয়ে শাড়ি, লুঙ্গি, বেড শীট,  শার্ট, পেন্ট, কভার ইত্যাদি তৈরী করা হয়।

ওভেন ফেব্রিক কে আবার প্রধান তিন ভাগে ভাগ করা যায়।

১। প্লেইন ফেব্রিক:

প্লেইন ফেব্রিকের  structural  ডিজাইন

২। টুইল ফেব্রিক:

এই কাপড় সাধারণত মোটা হয়। জিন্স পেন্ট তৈরির কাজে এই কাপড় বেবহার করা হয়।


৩। সাটিন ফেব্রিক :

এই ধরনের কাপড় সাধারণত কৃত্তিম সূতা দ্বারা তৈরী হয় বলে পিচ্ছিল প্রকিতির হয়। যেমন সিল্ক ফেব্রিক,রেশম ফেব্রিক, ইত্যাদি।

এছাড়াও আরো বেশ কয়েক প্রকারের ফেব্রিক রয়েছে। আর প্রত্যেক প্রকারের ফেব্রিকের অন্তত শখানেক করে derivatives অর্থাৎ উপজাতক আছে।

২। নিট ফেব্রিক :

নিডেল এর দ্বারা  লুপ তৈরির মাধমে একটি লুপের সাথে আরো একটি লুপের inter meshing করে যে ধরনের ফেব্রিক তৈরী করা হয়, তাই নিট ফেব্রিক।

এই ধরনের কাপড় দিয়ে টি-শার্ট ,আন্ডারওয়ার, ট্রাউসার ইত্যাদি ফেব্রিক তৈরী করা হয়।

নিট ফেব্রিকের শতশত ডিজাইন আছে। আপনি আপনার টি-শার্ট টিকে খুব ভালো ভাবে দেখেন, এটি যদি rib ডিজাইন হয়ে থাকে তবে তা উপরের ফেব্রিকের মত দেখাবে।

৩। মেল্টেড ফেব্রিক  :-

সিন্থেটিক ফাইবার অর্থাৎ কৃত্তিম আশ সমূহ যেমন পলিয়েস্টার, নাইলন, এক্রিলিক ইত্যাদি কে উচ্চ তাপ এবং চাপে গলানোর মাধ্যমে পাতলা শীটের মত যে ফেব্রিক তৈরী করা হয়, তাই মেল্টেড ফেব্রিক। এই ধরনের ফেব্রিক সাধারণত বায়ু এবং পানি প্রতিরোধী হয়। যেমন ছাতার কাপড়, প্যারাশুট,রেইন কোট ইত্যাদি।

স্পিনিং থেকে প্রাপ্ত সুতা থেকে  টি-শার্ট তৈরী করার উদ্দেশ্য নিয়ে একে ইয়ার্ন ডাইং করানো হয়।উপরে বর্ণিত বিভিন্ন প্রকারের ফেব্রিক দেখে এটুকু খুব সহজে বুঝা যায় যে আমাদের কাঙ্খিত স্ট্রাইপ টি-শার্ট পেতে হলে আমাদেরকে উক্ত ইয়ার্ন ডাইং করা সুতা দিয়ে নিট ফেব্রিক তৈরী করতে হবে।

৪। ক্লথিং বা গার্মেন্টস :

কাপড় হতে মানুষের ব্যবহার উপযোগী করে পোশাক বা বস্ত্র তৈরী করার পর্ক্রিয়াকে ক্লদিং বা গার্মেন্টস বলে। বস্ত্র তৈরীকারী প্রতিষ্ঠান গুলো নিটিং থেকে প্রাপ্ত ফেব্রিক হতে পোশাক তৈরী করার জন্য কিছু কার্যপ্রণালী নির্ধারণ করে। একে গার্মেন্টস এর প্রসেস ফ্লো-চার্ট বলে।

১। ডিজাইন অঙ্কন
২। পেটার্ন ডিজাইন
৩। সেম্পল মেকিং
৪। প্রোডাকশন পেটার্ন
৫। গ্রেডিং
৬। মার্কার মেকিং
৭।  স্প্রেদিং
৮। সর্টিং
৯। সুইং
১০। ইন্সপেকশন
১১। প্রেসিং
১২। ফিনিশিং
১৩। ফাইনাল ইন্সপেকশন
১৪। পেকিং
১৫। বেলিং

উপরোক্ত ফ্লো চার্ট টির ১৫ টি ধাপ ই পোশাক তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সবকটি ধাপ একটির পর একটি শেষ হবার পরেই কাপড় থকে পোশাক তৈরী করা সম্ভব হয়।

ফেব্রিক স্প্রেডিং মেশিনের সাহায্যে কাপড়কে কাটিং টেবিলের উপর বিছানো হচ্ছে ।

ফেব্রিক কাটিং মেশিনের সাহায্যে কাপড়কে পেটার্ন ডিজাইন অনুসারে কাটা হচ্ছে

যে পোশাকটি প্রস্তুত করা হবে প্রথমে তার একটি ডিজাইন কাগজে অঙ্কন করা হয়।পরে কাগজ থেকে ওই ডিজাইন কে বড় আর্ট পেপারে পোশাকের রিয়েল সাইজ অনুযাই পেটার্ন আকতে হবে। এতে করে পোশাকটি তরী করতে কি পরিমান কাপড় লাগবে তা বাহির করা যায়। এরপর ওই পোশাকটির একটি সেম্পল তৈরী করা হয়।এরপর অর্ডারের পরিমান অনুযাই মূল উত্পাদনের জন্য আবার পোশাকটির পেটার্ন তৈরী করা হয়। এবার খুব সতর্কতার সাথে পেটার্ন তৈরী করা হয়। কেননা যদি ওই পোশাকটির মোট অর্ডারের পরিমান এক লক্ষ্য পিস হয় এবং প্রতিটি পিস থেকে এক বর্গ ইঞ্চি পরিমান ও কাপড় সেভ করা যায়, তবে মোট সেভ হলো প্রায় ৬৪।৫১৬ বর্গ মিটার কাপড়!

এরপর কাপড়কে স্প্রেডইং মেশিনের সাহায্যে টেবিলে বিছানো হয়। কাটিং মেশিন দিয়ে কাপড়ের বিভিন্ন অংশকে আলাদা আলাদা ভাবে কাটা হয় ।এরপর এই আলাদা আলাদা অংশকে সেলাই মেশিনের সাহায্যে সেলাই করা হয়। পরে আইরন করে ওই পোশাক টিকে পেকিং করা হয় এবং বাজারজাত করা হয়। এই ভাবে এত সব পরক্রিয়া শেষে আমরা একটি টি শার্ট কে পরিধানের উপযোগী করে পাই।

এখানে বলে রাখা ভালো যে, প্রতেকটি সেকশনে "কিউ সি বা কোয়ালিটি কন্ট্রোল" নামক একটি বিভাগ আছে যাদের কাজ হলো কোনো ত্রুটিপূর্ণ পণ্য যাতে উত্পাদন বা সরবরাহ করা না হয়। আপনারা এটা জেনে অবাক হবেন যে, আমরা যে টি শার্ট গুলো বাজার থেকে পাই,তার প্রত্যেকটাই কিউ সি ফেইল। কারণ কিউ সি পাশ সকল পোশাক বিদেশে রপ্তানি করা হয়। আর এক টা টি-শার্ট নুন্যতম ২০ ডলারে বিক্রি করা হয়। বিশ্বাস না হয়, কিনার সময় আপনি আপনার টি শার্ট টি কিনার সময় খুব ভালো ভাবে লক্ষ্য করবেন, কোনোনা কোনো ত্রুটি অবশ্যই আছে। তবে অনেক সময় এত সুক্ষ ত্রুটি থাকে যা আমরা খালি চোখে নির্ধারণ করতে পারিনা। বাটা মোজা তো সবাই বেবহার করেন। কিন্তু আপনি কি জানেন, বাটা কোম্পানি সকল কিউ সি ফেইল  মোজা লোকাল মার্কেটে সেল করে?

এখানে লক্ষনীয় যে, আমি মূল প্রসেসের সাথে সঙ্গতি রক্ষা এবং বিসয়টি সহজবোধ্য করার জন্য কিছু আনুসঙ্গিক তথ্যের উপস্থাপনা করেছি। যেমন আমরা জানি নিট ফেব্রিক দিয়ে টি-শার্ট তৈরী করা হয়। কিন্তু নিট ফেব্রিক কি, তা বোঝনোর জন্য আমাকে অন্যন্য ফেব্রিকের প্রসঙ্গ তুলতে হয়েছে। এতে করে নিট ফেব্রিক সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাবে।

আমি এতক্ষণ ধরে যা বললাম, তা সম্পূর্ণ প্রক্রিয়ার শতকরা ১% মাত্র। সময় এবং স্থান সংকুলানের কারণে অনেক কিছুই বিস্তারিত বর্ণনা দিতে পারিনি। দক্ষতার অভাবেও অনেক বিষয় ভালো করে উপস্থাপন করতে পারিনি।  এতে আপনাদের বুঝার অসুবিদা হয়েছে।তার উপর আমার বাংলা লেখার অবস্থা যাচ্চেতাই। দয়া করে নিজ গুনে ক্ষমা করবেন।
যাই হোক, অনেকক্ষণ বকবক করলাম। আপনাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করলাম। পোস্টি পরার জন্য আন্তরিক ভাবে ধন্যবাদ নিবেন, আর কোনো বিষয় বুঝতে অসুবিধা হলে জানাবেন। আমি চেষ্টা করব তা কমেন্টস এর মাধ্যমে জানাতে।

Level New

আমি মেধাবী মস্তিস্ক। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 1 টি টিউন ও 173 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।

I am a simple man.


টিউনস


আরও টিউনস


টিউনারের আরও টিউনস


টিউমেন্টস

motamuti valoi..details ace..nice keep tuning yhanks

অনেক বিস্তারিত টিউন। 🙂
ধন্যবাদ আপনাকে।

Level 0

টিউনটি পড়ে ভালো লাগল ।
আপনাকে ধন্যবাদ।

Level 0

টিউনটি পড়ে ভালো লাগল ।ধন্যবাদ আপনাকে। 🙂

    @ctg77: শুধু টিউন করার জন্য টিউনটি করিনি.কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও আপনাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য টিউনটি করা যা আপনাদের বেক্তিগত জীবনে কাজে লাগবে.
    আপনাকেও ধন্যবাদ

অনেক বিস্তারিত টিউন! পড়ে বহুত কিছু জানলাম। ধন্যবাদ এত সময় নিয়ে টিউন করার জন্য। আচ্ছা প্রিন্টেড টি শার্ট এর জন্য আমি নিজে একটা ডিজাইন করেছি! এখন এইটা কোথা থেকে প্রিন্ট করানো যায়??? 😀 😀

    @ভূত রাকিব: বস, আপনি কি পরিমানে প্রিন্ট করবেন তার উপর নির্ভর করবে আপনি কোথায় প্রিন্ট করবেন. আপনি যদি ১০০০-১০০০০০ পিস প্রিন্ট করান তবে বড় কোনো প্রিন্টিং factory তে যোগাযোগ করা লাগবে. আর যদি নিজের জন্য কম সংখ্যক প্রিন্ট করাতে চান, তবে যারা সাইনবোর্ড, বেনার ইত্যাদি তৈরী করে তাদের সাথে যোগাযোগ করুন.
    ধন্যবাদ টিউনটি পড়ার জন্য.

জটিলZZZ টিউন! 😛
১ম টিউনেই হিট!!!
সাবাশ!

একেই বলে বিস্তারিত টিউন। দেখেই মনটা ভরে গেলো মেধাবী মস্তিষ্ক (ভাই নাকি আপা জানিনা 😉 ) খুবই সন্দর হয়েছে টিউনটি। এখন পড়া ‍শুরু করবো

Awesome………….

মেধাবী মস্তিস্কের মস্তিস্ক সত্যই মেধায় ভর্তি ।

    @জ্ঞান-অন্বেষী: কেন খামোখা লজ্জা দিসসেন ভাই? আপনি জ্ঞানী লোক,সারাক্ষণ জ্ঞান অন্বেষণ করেন. আর আমি ৭০ বার চেষ্টা করেও গুগল transliterate এর সাহায্যে “জ্ঞান” শব্দটা লিখতেই পারিনি.শেষে আপনার নাম থেকে কপি পেস্ট করেছি.এবার বুঝেন কেমন মেধাবী! ধন্যবাদ.

এমন বিস্তারিত ভাবে জিনিসটা সেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ……………

    @হায়দার: বিস্তারিত করে লিখেছি আপনাদের বুঝার সার্থে. জানিনি কতটুকু সফল হয়েছি. ধন্যবাদ কমেন্টস করার জন্য.

Level 0

চমৎকার টিউন।।

সুন্দর টিউন বলার অপেক্ষা রাখেনা,ধন্যবাদ টিউনটির জন্য।

আপনাকেও ধন্যবাদ

Level 2

Thanks a lot.