বাংলাদেশে যুব সমাজের একটি অন্যতম প্রিয় বাহন মোটরসাইকেল। এটির প্রতি তারা খুবই উৎসাহী এবং অধিকাংশ সময় আমরা দেখি তারা একটি ভালো মোটরসাইকেল কিনতে চায়। তাই একটি ভালো মানের মোটরসাইকেল কেনা যুব সমাজের ট্রেণ্ডে পরিণত হয়েছে। যদি আপনি একটি মোটরসাইকেল কিনতে চান তাহলে এটি আপনার জন্য মোটরসাইকেল কেনার একটি মৌলিক নির্দেশনা। আশা করি আপনি এটি মেনে চলবেন এবং নিজের জন্য একটি সুন্দর মোটরসাইকেল কিনতে পারবেন।
১. প্রতিটি মোটরসাইকেলের আছে বিভিন্ন ধরনের ইঞ্জিন এবং সিলিণ্ডার ক্ষমতা যেটি সিসি নামে পরিচিত। বেশী সিসির মোটরসাইকেলগুলো সবসময় কম সিসি মোটরসাইকেলের তুলনায় শক্তিশালী হবে এটা ঠিক নয়। এটি পুরোপুরি নির্ভর করে ইঞ্জিনে সিলিণ্ডারের সংখ্যা এবং এর নকশার উপর। অধিক সিলিণ্ডারের ইঞ্জিন অপেক্ষাকৃত অধিক শক্তিশালী এবং চালাতে সুবিধা। কিন্তু কম সিলিণ্ডারের ইঞ্জিন দামে সস্তা এবং রক্ষণাবেক্ষণে সুবিধা।
২. কেনার পূর্বে আপনাকে আপনার প্রয়োজানুসারে মোটরসাইকেল নির্বাচন করতে হবে। মোটরসাইকেলের আছে বিভিন্ন ধরন যেমন- ট্রাডিশনাল বা স্ট্যাণ্ডার্ড, কম জ্বলানীর, ভ্রমণোপযোগী, বদ্ধ রাস্তার, স্পোর্টস, স্কুটার এবং প্যাডেলযুক্ত মোটরসাইকেল। প্রতিটি মোটরসাইকেল একে অপর থেকে আলাদা এবং প্রত্যেকের আছে ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্য, তাই প্রথমে এগুলো সম্পর্কে জানুন এবং আপনারটি বেছে নিন।
৩. অতিরিক্ত প্লাস্টিকবিহীন মোটরসাইকেলগুলো আনফেয়ার মোটরসাইকেল নামে পরিচিত এগুলোর তুলনায় অতিরিক্ত প্লাস্টিক যুক্ত ফেয়ার মোটরসাইকেলগুলো শুরুর পর্যায়ে ভালো। যদি আপনি শুরুর পর্যায়ে থাকেন তাহলে আপনার অবশ্যই ফেয়ার মোটরসাইকেল কেনা উচিত কারণ শুরুর পর্যায়ে আপনার দ্বারা সৃষ্ট ক্ষতি হাত থেকে প্লাস্টিক আপনার প্রিয় মোটরসাইকেলটিকে বাঁচাবে।
৪. যখন আপনি একটি মোটরসাইকেল কিনবেন তখন এটিকে পরীক্ষামূলকভাবে রাস্তায় চালিয়ে নিবেন। ৩০ মিনিটের মত চালাবেন যার ফলে এটি আপনার জন্য আরামদায়ক কিনা এবং আপনি যেরকম মোটরসাইকেল চাইছেন সেরকম কিনা তাও বুঝতে পারবেন।
৫. ডিলার ক্যাশ চায় তাই আপনি ক্যাশ রাখার চেষ্টা করবেন।
৬. যদি আপনি সর্বোচ্চ দাম দেন তাহলে আপনি নিশ্চিত লেটেস্ট মডেলটি পাবেন।
৭. ডিলারকে মোটরসাইকেলেটির নিয়ন্ত্রণ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করুন, এর মাধ্যমে মোটরসাইকেলটি সম্পর্কে তাদের কি পরিমাণ তথ্য আছে তা জানতে পারবেন।
৮. মোটরসাইকেলেটিতে কোনো প্রকার দাগ আছে কিনা দেখে নিন যদি আপনি একটিও পান তাহলে তা ডিলারকে দেখান।
৯. দেখে নিন এর যন্ত্রাংশে কোনো ক্ষত কিংবা ফাটল আছে কিনা যদি থাকে তাহলে ধরে নিন এটি পূর্বে নষ্ট হয়েছে বা দুর্ঘটনায় পড়েছে, তাই এই দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা উচিত।
১০. শোরুমে যাওয়ার আগে কিছু তথ্য জানার চেষ্টা করুন, ধারনা নিন, পরবর্তীতে যাতে আপনাকে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে না হয়।
১১. হ্যাণ্ডেলটি হবে সোজা এবং মসৃণ।
১২. যদি দেখেন মোটরসাইকেলটির আসন পাতলা এবং বিবর্ণ তাহলে আপনি বুঝে নেবেন মোটরসাইকেলটি অনেক পুরাতন।
১৩. আপনার দেখা উচিত এর বার, এগজস্ট, প্লাস্টিক এবং লিভারে কোনো ঘষা কিংবা দাগ আছে কিনা। যদি ছোট, অগভীর এবং অসমান্তরাল কোনো দাগ থাকে তাহলে এটি স্বাভাবিক দাগ অথবা মোটরসাইকেলটি একবার ব্যবহার করা।
১৪. সকল বাতি এবং সুইচগুলো ঠিকভাবে কাজ করছে কিনা তা দখুন এবং নিজ হাতে নিশ্চিত করুন এতে কোনো অসংযুক্ত তার আছে কিনা।
১৫. মোটরসাইকেলেটির পায়ের অংশে কোনো ঘষা অথবা দাগ থাকা উচিত নয়।
১৬. চাকাগুলো উপরে উঠিয়ে এর বিয়ারিং গুলো দেখে নিন। টায়ার সংযোজনের জন্য এর চাকার কাঠামো এবং এর সংযোজনের স্থানটি দেখে নিন।
১৭. মোটরসাইকেলটি মধ্যমা বরাবর সোজাসোজি আছে কিনা দেখে নিন।
১৮. আপনার দেখা উচিত এতে কেউ বসলে এর সামনের চাকাটি চালকের মাথা বরাবর আছে কিনা এবং হাতলটি বাম হতে ডান দিকে ধীরে ধীরে ঘুরান। দেখার পর যদি আপনার মনে হয় মাঝখান অতিক্রম করার সময় এটি ততটা মসৃণ নয় তাহলে এর হাতলটি পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে।
১৯. যদি আপনি দেখেন পা রাখার স্থানটি উপরেদিকে, যার মানে রাইডার মোড়ে অল্প হেলে যাবে কিন্তু যদি এটি একেবারে নীচেরদিকে থাকে তাহলে রাইডার মোড়ে অনেক হেলে যাবে।
২০. চাকা যুক্ত করার অংশটিতে কোনো বাঁক আছে কিনা দেখতে চাইলে পায়ের হাঁটুর সাহায্যে সামনের চাকাটিকে ধরে রেখে হাতলটি ঘুরান।
২১. আপনার অবশ্যই দেখা উচিত ব্রেকগুলো ভালোভাবে কাজ করছে কিনা।
২২. ব্রেক চাপার সাথে সাথে এটি চাকা আকড়ে ধরছে কিনা দেখুন।
২৩. গ্যাস ট্যাঙ্কটির দিকে আপনার দৃষ্টি দেওয়া উচিত। মরীচিকা রঙের ধোঁয়া হলে ঠিক আছে কিন্তু গাঢ় চায়ের রঙ হলে বুঝতে হবে এটি পুরাতন যা আপনাকে পরিবর্তন করার প্রয়োজন হবে।
২৪. এগজস্টের চাপ উভয়দিকে সমান হওয়া উচিত। যখন ইঞ্জিন চলে তখন এর জোড়া অংশ গুলোতে হাত দিয়ে দেখুন কোনো ধোঁয়া বের হচ্ছে কিনা।
২৫. চাকাগুলো একটু বেশী সতর্কতার সাথে দেখা উচিত।
২৬. চেইন লাগানোর খাপটিতে একটি প্রসারিত করা চেইন দেখা যাবে যা এক ইঞ্চি ঢিলা অবস্থায় ইঞ্জিন এবং চাকর চেইন লাগানোর খাপটির সাথে শক্ত ভাবে লাগানো থাকবে।
২৭. স্টিয়ারিংটি নাড়াচড়া করে দেখুন সাবলীল আছে কিনা।
২৮. প্রতেকটি যন্ত্র কাজ করছে কিনা দেখুন।
২৯. আপনি যখন বাইকটি পরীক্ষা করার জন্য চালাতে নেবেন, তখন ইঞ্জিনের একটি উত্তাপ পাচ্ছেন কিনা দেখুন।
৩০. মোটরসাইকেলটির বিভিন্ন অংশে কোনো প্রকার ছিদ্র আছে কিনা দেখুন বিশেষত ইঞ্জিন এবং পরিবহন অংশ গুলিতে।
বাংলাদেশে মোটরসাইকেল কেনার সময় প্রয়োজনীয় কিছু মৌলিক বিষয় গুলো যদি আপনি মেনে চলেন তাহলে আশা করি আপনি একটি ভালো মোটরসাইকেল কিনতে পারবেন। আশা করি মোটর সাইকেল প্রেমিদের লেখা টি ভালো লাগবে। যদি ভালো লাগে তাহলে নির্বাচিত টিউন মনোনয়ন করতে ভুলবেন না।
মোটর সাইকেল নিয়ে কোনও প্রশ্ন থাকলে যোগ দিন আমাদের ফেসবুক ফ্যান পেজ এ।
আমি suvrosen007। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 9 টি টিউন ও 18 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।