আগের টিউনগুলাতে আপনাদের দেখিয়েছি কিভাবে মাদারবোর্ড এবং তার বুকে বসানো প্রসেসর কাজ করে। আজ এমন একটি অতি প্রয়োজনীয় ডিভাইস নিয়ে আলোচনা করা হবে যেটা ছাড়া সত্যিকার অর্থেই একটি কম্পিউটার অচল। অর্থাৎ কম্পিউটার এর সকল প্রয়োজনীয় যন্ত্র যেমন মাদারবোর্ড, প্রসেসর, ডিস্ক, কীবোর্ড, মাউস ইত্যাদি লাগানো থাকলেও এই বিশেষ জিনিসটি না থাকলে আপনার সিস্টেম চালুই হবেনা। সম্পর্কের দিক দিয়ে সে প্রসেসরের খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু। জানতে চান তার নাম? সে হল সকলের পরিচিত “র্যাম” বা “মেমরি”।
আচ্ছা ধরুন আপনি অংকে খুব ভালো। আপনাকে একশটা যোগ বিয়োগ করতে দেওয়া হল। কী পারবেন না? খুব সহজ তো! তবে আপনি নিশ্চয়ই রাফ করার জন্য এক টুকরো কাগজ চাইবেন নাতো এতগুলা সংখ্যা কিভাবে পর পর মনে রেখে যোগ করবেন?
তাহলে প্রসেসর হল আপনার মাথা আর র্যাম বা মেমরি হল আপনার রাফ কাগজ বা খাতা। অর্থাৎ প্রসেসর সকল হিসাব নিকাশ পারে ঠিকই, কিন্তু সেটাকে দরকার মত প্রকাশ করতে বা যাচাই করতে একটা মধ্যবর্তী জায়গার দরকার হয় যেখানে আপাতত তথ্য রেখে কাজ করা যায়। এই জায়গা বা মেমরিই হল র্যাম।
ছোট্টবেলা থেকেই আমরা সবাই জানি যে র্যাম মানে “র্যান্ডম অ্যাক্সেস মেমরি”। কিন্তু একে র্যান্ডম বলার কারণ কি? মেমরিই বা কেন বলা হয়?
র্যামকে র্যান্ডম বলার কারণ হল, এতে রক্ষিত যেকোন তথ্য অবস্থানের উপর নির্ভর না করেই খুব দ্রুত পড়া যায়। অর্থাৎ র্যামের শুরুর দিকে হোক আর শেষের দিকেই হোক, যেখানে দরকার সেখানকার তথ্য মুহুর্তেই পড়া যায়। মানে হল যেকোন জায়গার তথ্য পড়তে একই সময় লাগে। যেমন ধরা যাক র্যামে Techtunes শব্দটির অক্ষরগুলো বিভিন্ন স্থানে রাখা আছে। কোন মূহুর্তে T পড়তে যদি ১০ ন্যানোসেকেন্ড সময় লাগে, তাহলে ব্লকের শেষে থাকা s পড়তেও ১০ ন্যানসেকেন্ডই সময় লাগবে।
এখন কথা হল মেমরি বলতে সাধারণত র্যামকে বোঝানো হয় কেন। আসলে যা তথ্য ধারণ করতে পারে সেটাই মেমরি। কম্পিউটারে সবার আগে যে মেমরির দরকার হয়, অর্থাৎ প্রসেসরের সাথে কাজ করার জন্য যে মেমরি থাকে সেটাকে বলা হয় প্রাইমারি মেমরি বা প্রাথমিক মেমরি। আর অন্যসব মেমরি যেমন হার্ডডিস্ক, সিডি/ডিভিডি ড্রাইভ, ইউএসবি ফ্ল্যাশ ড্রাইভ ইত্যাদি এর মেমরি কে বলা হয় সেকেন্ডারি মেমরি। শুধু মেমরি বলতে তাই প্রথম ধরণের মেমরি বা র্যামকেই বোঝানো হয়।
স্যাম বা “সিরিয়াল অ্যাক্সেস মেমরি” নামে আরেকটি পরিভাষা আছে। যেসব ডিভাইস সিরিয়াল পদ্ধতিতে অর্থাৎ একের পর এক ব্লকে তথ্য রাখে এবং তথ্য বের করতে সমস্ত ব্লক চেক করে তাদের স্যাম বলা হয়। ম্যাগনেট টেপ হল স্যাম এর উদাহরণ।
১৮৩৮ সালে চার্লস ব্যাবেজ তাঁর অ্যানালিটিকাল ইঞ্জিনের জন্য মেমরি হিসেবে পাঞ্চ কার্ড এর বাবস্থা ভেবে রেখেছিলেন। পরে ১৯৩২ সালের পর থেকে ড্রাম মেমরি, ম্যাগনেটিক কোর মেমরি ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের ও কম ক্ষমতাসম্পন্ন মেমরি নিয়ে বিজ্ঞানীরা কাজ করতে থাকেন। ১৯৪৫ সালে এনিয়াক কম্পিউটারে ড্রাম মেমরি ব্যবহার করা হয়। ১৯৫২ সালে Jay Forrester নামের এক ব্যাক্তি ফেরোম্যাগনেটিক সিরামিক পদার্থের তৈরী ম্যাগনেটিক কোর মেমরি তৈরী করেন যেটা ম্যাগনেটিক চার্জের মধ্যমে ১ আর ০ ধারণ করে রাখতে পারত। নিচে ম্যাগনেটিক কোর মেমরির একাংশের ছবি দেওয়া হয়েছে –
এরপর থেকে অর্ধপরিবাহক বা সেমিকন্ডাক্টরের বহুল ব্যবহার শুরু হয়। তখন ইনটেল সর্বপ্রথম ১৯৬৯-৭০ সালে ৩১০১ নামের স্ট্যাটিক মেমরি চিপ বাজারে ছাড়ে। এর ধারণক্ষমতা ছিল ৬৪ বিট।
খুব দ্রুত ইনটেল ১১০১ নামের স্ট্যাটিক মেমরি চিপ আনে যেটা ২৫৬ বিট ক্ষমতার ছিল। এর ছবি নিচে দেওয়া হল –
১৯৭০-৭১ সালের মাঝে ডেভেলপ করতে থাকা অবস্থায় ইনটেল ১৯৭২ সালে বাজারে আনে ১১০৩ নামের মেমরি চিপ যা ছিল ইতিহাসের প্রথম ডাইনামিক মেমরি চিপ। Robert Dennard, An Wang ও Kenneth Olsen নামের তিন বিজ্ঞানী মিলে এটা তৈরী করেন। এটার ক্ষমতা ছিল ১ কিলোবিট। ওই বছরে সর্বাধিক বিক্রি হওয়া কম্পিউটার ডিভাইস ছিল এটি। এরপর থেকে মাল্টি-চিপ মেমরির উৎপাদন শুরু হয় এবং মেমরির পরিমাণ বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। এটা হল সেই যুগান্তকারী মেমরি চিপ –
প্রসেসরের ক্ষেত্রে যেমন বলেছিলাম যে অসংখ্য ট্রানজিস্টর মিলে আইসি তৈরী করে এবং অনেক অনেক আইসি মিলে তৈরী করে লজিক গেইট যার মাধ্যমে প্রসেসরের এএলইউ গাণিতিক কাজ সমাধান করতে পারে। র্যামও ঠিক একইভাবে অনেক অনেক (প্রায় কোটি কোটি) ট্রানজিস্টর আর ক্যাপাসিটর নিয়ে গঠিত। ট্রানজিস্টর মিলে অসংখ্য কলাম আর সারণি তৈরী করে যার মাঝে ক্যাপাসিটর থাকে। নিচে ডির্যামের ভেতরে কিভাবে ট্রানজিস্টর মেমরি সেল তৈরী করে আর তাতে ক্যাপাসিটর কিভাবে থাকে তা দেখানো হয়েছে।
ক্যাপাসিটরের কাজ হল চার্জ বা ইলেক্ট্রন ধারণ করে রাখা। কলাম আর সারণির ছেদকে বলা হয় মেমরি সেল বা ব্লক। এভাবে অনেক অনেক মেমরি ব্লক মিলে বহুগুন চার্জ ধারণের জায়গা সৃষ্টি করে। এই সেল বা ব্লকের সাথে প্রসেসর বা নর্থব্রিজের সংযোগ দেওয়ার জন্য সার্কিট বোর্ডের সাথে পিন লাগানো থাকে। সেটা মাদারবোর্ড এর নির্দিষ্ট স্লটে লাগালে মেমরি কন্ট্রোলারের সাথে কাজ শুরু করে। মেমরির ধারণ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য একই সার্কিট বোর্ডে অনেক মেমরি চিপ লাগানো হয়। প্রতিটা মেমরি চিপকে মডিউল বলা হয়। এই যেমন একাধিক মেমরি চিপ লাগানো পিসিবি বোর্ড –
শুধু প্রসেসরের মাথা গরম বলে শুধু সেই ফ্যানের হাওয়া খাবে সেই দিন শেষ। আজকাল র্যাম ঠান্ডা রাখার জন্য ‘হিট স্প্রেডার’ এমনকি ‘কুলিং ফ্যান’এর ব্যাবস্থা করা হয়েছে। দেখতে চান? এই যে –
আমরা জানলাম যে মেমরি ব্লকে চার্জ থাকে। মেমরি কন্ট্রোলার কলাম অ্যাড্রেস আর রো অ্যাড্রেসের মাধ্যমে মেমরি সেলের অবস্থান নির্ণয় করে। তারপর সেন্স অ্যামপ্লিফায়ারের মাধ্যমে সেই সেলের চার্জ ঘনত্বের উপর ভিত্তি করে ১ অথবা ০ রিড করে। প্রতিটা সেলের ধারণক্ষমতাকে ১ বিট বলে। ৮ অথবা ৯ বিট মিলে হয় একটি ওয়ার্ড। ৮ বিট কে এক বাইটও বলা হয়। এভাবে অনেক অনেক বাইট মিলে কিলোবাইট মেগাবাইট এমনকি গিগাবাইট পর্যন্ত তথ্য ধারণ করে। এটা হল মেমরি কলাম আর রো এর সরল রূপ -
যেমন Techtunes লিখতে নয়টা অক্ষর বা বাইট দরকার। T লিখতে ৮ বিট লাগে যা বাইনারিতে ০১০১০১০০ এভাবে লেখা হয়। তাহলে T রাখার জন্য মেমরিতে একটি সেল বা বিটে ০, পরেরটায় ১, তারপর ০ এভাবে পরপর ০১০১০১০০ রাখা হয়। রিড করার সময় কন্ট্রোলার ০১০১০১০০ পেলে সেটাকে T আকারে দেখায়। একইভাবে পরের অক্ষরগুলো কাজ করে।
মেমরি সেলে চার্জ রাখার পদ্ধতির উপর ভিত্তি করে র্যাম মুলতঃ দুই ধরণের হয়। ডির্যাম বা ডাইনামিক র্যাম আর এসর্যাম বা স্ট্যাটিক র্যাম। ডাইনামিক র্যাম হল সেইসকল র্যাম যারা মেমরি সেলে চার্জ রাখার জন্য চার থেকে ছয়টি ট্রানজিস্টর ব্যবহার করে। কেননা বারবার চার্জ রিড করার কয়েক মিলিসেকেন্ড পরেই চার্জ ফুরিয়ে যায় কিংবা শক্তি কমে যায়। চার্জ ধরে রাখতে বা রিফ্রেশ করতে কয়েকটি ট্রানজিস্টর দরকার হয়। অনবরত চার্জ সেলে প্রবেশ করে আর বের হয় বলে একে ডির্যাম বলা হয়। অপরদিকে একজোড়া ট্রানজিস্টর আর ক্যাপাসিটর নিয়ে তৈরী হয় এসর্যাম বা স্ট্যাটিক র্যাম। এখানে বারবার চার্জ রিফ্রেশ করতে হয়না বলে কাজ খুব দ্রুত হয়।
স্ট্যাটিক র্যাম তৈরীতে খরচ বেশি হওয়ায় প্রসেসরের ক্যাশ মেমরি যেখানে তথ্য খুব কম সময়ের জন্য অবস্থান করে সেখানে এসর্যাম ব্যবহার করা হয়। আর ডির্যাম কিছুটা কম গতির হওয়া সত্বেও সুলভ হওয়ায় প্রাইমারি মেমরিতে ডির্যাম ব্যবহার করা হয়।
এছাড়া র্যামে বিল্ট-ইন মেমরি এরর চেকিং সুবিধা থাকতে পারে। এর মাধ্যমে কোন সেলে বিট রিড করতে বা লিখতে ভুল হলে তা ধরা যায়। এটার জন্য অতিরিক্ত একটা বিট নিয়ে একটি ওয়ার্ড ধরা হয় যাকে বলে ‘প্যারেটি বিট’। মেমরি কন্ট্রোলারের বিশেষ ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে এরর-যুক্ত বিটকে ঠিক করা যায় যা “ফল্ট টলারেন্স” নামে পরিচিত।
হার্ডওয়্যার নিয়ে প্রথম টিউনে আমি বলেছিলাম মাদারবোর্ডের DIMM স্লটে কিভাবে র্যাম লাগানো হয়। এটা আসলে খুবই সাধারণ একটা স্লটে যাতে মেমরি চিপ সহ সার্কিট বোর্ড বসিয়ে দিলেই কাজ হয় যায়। নিচের ছবিতে DIMM স্লট দেখানো হয়েছে –
অনেক ক্ষেত্রে বেশী পরিমাণ মেমরির জন্য মেমরি ব্যাঙ্ক ব্যবহার করা যেতে পারে। এটা হল একটি পিসিআই-ই ডিভাইস যাতে মেমরি কন্ট্রোলার চিপ সহ মেমরি লাগানোর স্লট থাকে। এটা দেখতে এরকম -
র্যাম কাজের দিক দিয়ে ডির্যাম আর এসর্যাম এই দুই ধরণের তা আগেই বলা হয়েছে। গঠনের দিক দিয়ে র্যাম (ডাইনামিক মেমরি মডিউল) কয়েকধরণের আছে। এগুলো হল –
SIPP: এটা হল Singel In-line Pin Package. অর্থাৎ সার্কিট বোর্ডের একদিকে মেমরি চিপ বসানো থাকে এবং সেটা পিন পদ্ধতিতে মাদারবোর্ডে বসানো হয়। এতে ৩০ টা পিন থাকত।
SIMM: এটা হল Single In-line Memory Module. সার্কিট বোর্ডের একপাশে মেমরি চিপ লাগানো হুত, কিন্তু এতে কোন পিন থাকতনা। এটায় আজকের র্যামের মত চকচকে পরিবাহী এলাকা থাকত যেটা মাদারবোর্ড এর মেমরি স্লটে বসিয়ে দিলেই হত। এটা ৩০-৭২ পিনের হত।
DIMM: এটা হল বহুল ব্যাবহৃত এবং জনপ্রিয় মেমরি লেআউট যা Dual In-line Memory Module নামে পরিচিত। এতে সার্কিট বোর্ডের দুইপাশে মেমরি মডিউল লাগানো হয় এবং অনেক বেশী মেমরি ধারণ করতে পারে। বলা যেতে পারে যে দুই লেয়ারে SIMM ধরণের মেমরি একসাথে যুক্ত করে DIMM বানানো হয়। DIMM থেকে সুবিধাজনক বিভিন্ন ধরণের মেমরি যেমন SO-DIMM বানানো হয়েছে। এই মেমরি ৭২ থেকে ২৪০ পিন নিয়ে কাজ করে।
RIMM: এটা কিছুটা আলাদা গঠন আর কার্যপদ্ধতির ডির্যাম মডিউল। ইনটেল কোম্পানির আধিপত্য এবং মেমরি মডিউলের ফর্ম ফ্যাক্টর নিয়ন্ত্রণ করা রোধ করতে Rambus নামের কোম্পানি Rambus In-line Memory Module নামে বিশেষ ধরণের মেমরি বাজারে ছাড়ে। এটা অনেকটা DIMM এর মতই ছিল, তবে আলাদা ছিল এর বিশেষ স্লট আর ডিজাইনের কারণে। এটা ১৬৮- ২৩২ পিন বিশিষ্ট ছিল।
কার্যক্ষেত্রে DIMM কেই আদর্শ মেমরি মডিউল হিসেবে নেওয়া হয়। কাজের দিক দিয়ে DIMM দুই ধরণের। যেমন –
ADR শব্দটির পুর্ণরুপ Asynchronous Dynamic RAM. এটা প্রথমদিকে উদ্ভাবিত ডাইনামিক মেমরি যা সিস্টেম বাসের সাথে যত দ্রুত সম্ভব তথ্য আদান প্রদান করত। অর্থাৎ এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ক্লক সাইকেল বা চক্র ছিলনা। আর এর অসুবিধা ছিল যে এর মাধ্যমে একক সময়ে একটা মাত্র নির্দেশ পাঠানো বা গ্রহণ করা যেত। এই সমস্যা দূর করতে SD র্যাম তৈরী করা হয়।
SDR মানে হল Synchronous Dynamic RAM. এটাকে সিনক্রোনাস বলা কারণ হল এই পদ্ধতিতে র্যাম সিস্টেম বাস থেকে নির্দিষ্ট ক্লক সিগনালের সাথে সামঞ্জস্য রেখে তথ্য আদান প্রদান করে। এছাড়া পাইপলাইনের মাধ্যমে একইসাথে একাধিক ও আরো জটিল উপায়ে অনেক বেশি তথ্য সরবরাহ করতে পারে। SD র্যাম খুব দ্রুত কাজ করে। আমরা বর্তমানে সবাইই এই ধরণের র্যাম বাবহার করছি।
SD RAM কে গতির দিক দিয়ে বিভিন্ন ভাবে ভাগ করা যায়। যথা –
DDR মানে হল Double Data Rate. আমরা জানি ইলেক্ট্রিক সার্কিটে কোন সিগনাল প্রেরণ করার পর সেটা উৎসে ফিরে আসলে এক সাইকেল বা চক্র পূর্ণ হয়। DDR হল এমন ধরণের ডাটা থ্রো রেট যার মাধ্যমে একটা সাইকেলেই ডাটা রিড এবং রাইট করা হয়। এই ধরণের মেমরির ক্লক রেট ছিল ১৩৩, ১৬৬ বা ২০০ মেগাহার্টজ। বিভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সির DDR মেমরি সর্বোচ্চ ৪.২ গিগাবাইট/সেকেন্ড হারে তথ্য আদান প্রদানে সক্ষম। এই ধরণের র্যাম ২.৫ ভোল্ট বিদ্যুৎ নিয়ে কাজ করে।
DDR2 হল DDR এর পরের সংস্করণ। এটা আরো দ্রুতগতি সম্পন্ন কারণ একই সাইকেলে DDR মেমরির চেয়ে দ্বিগুণ হারে কাজ করে। এর ক্লক স্পীড ২০০, ২৬৬, ৩৩৩ বা ৪০০ মেগাহার্টজ পর্যন্ত হয়। এদেরকে যথাক্রমে DDR2-400, DDR2-533, DDR2-667 আর DDR2-800 –এভাবে প্রকাশ করা হয়। অর্থাৎ আমরা DDR2-800 লেখা মেমরি দেখলে বুঝব তার ক্লক স্পীড ৮০০ মেগাহার্টজ তা নয়। সেটা আসলে ৪০০ মেগাহার্টজ। এক সাইকেলে দ্বিগুণ কাজ (একবার রিড, একবার রাইট) হয় বলে নামের শেষে ক্লক স্পীডের দ্বিগুণ সংখ্যা লেখা হয়। এই রেটে সর্বোচ্চ ১৭ গিগাবাইট/সেকেন্ড হারে ডাটা আদান প্রদান সম্ভব। এরা ১.৮ ভোল্ট বিদ্যুৎ নিয়ে কাজ করে।
DDR3 হল সম্প্রতি জনপ্রিয় খুব বেশী ব্যান্ডউইথ যুক্ত মেমরি। ৪০০ থেকে ৮০০ মেগাহার্টজ ক্লক স্পীড সম্পন্ন এই মেমরি সেকেন্ডে ৫২.৮ গিগাবাইট হারে তথ্য আদান প্রদানে সক্ষম এবং অনেক বেশী বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী কারণ মাত্র ১.৫ ভোল্ট বিদ্যুৎ লাগে।
DDR4 নামের মেমরি বর্তমানে গবেষণায় রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে যে ২০১৫ সালের মাঝে এটা জনপ্রিয় হবে। DDR সিরিজের মেমরি বোর্ডের নির্দিষ্ট স্লট আছে। যদিও সবগুলো একই ধরণের, তবে ভুল এড়াতে এক এক ধরণের মেমরিতে খাঁজ বা নচ এক এক দূরত্বে রাখা হয়। নিচে ছবি দেওয়া হল –
এছাড়াও Mobile DDR, Graphics DDR ইত্যাদি বিভিন্ন ধরণের মেমরি ব্যান্ডউইথ রয়েছে।
বিভিন্ন কোম্পানি আছে যারা ডাইনামিক মেমরি মডিউল তৈরী করে। যেমন Micron Technology, Kingston Technology, Winbond Electronics Corporation, Transcend Information, Inc, Hynix Semiconductor Inc ইত্যাদি যারা বিভিন্ন দেশে মেমরি মডিউল সরবরাহ করে। তবে এদের বেশিরভাগই তাইওয়ান, কোরিয়া, চীন ইত্যাদি দেশের মাল্টি-ন্যাশনাল কোম্পানি। তবে Corsair নামের একটি আমেরিকান কোম্পানি আছে যেটা উন্নতমানের মেমরি তৈরীতে পরিচিত হয়েছে। Apacer নামের কোম্পানি ছিল যেটা মেমরি তৈরী করত, তবে এরা এখন ফ্ল্যাশ মেমরি তৈরীতে মনোযোগী।
প্রতিটা অপারেটিং সিস্টেম চলার জন্য মেমরিতে নির্দিষ্ট জায়গা দখল করে রাখে। তাই আপনি যতটুকু র্যাম কিনবেন তার সবটুকুই ব্যবহার করতে পারবেন না। যেমন উইন্ডোজ ৭ চালাতে ন্যূনতম ৫১২ মেগাবাইট র্যাম দরকার। এখন কোন অ্যাপ্লিকেশান বা গেইমস যদি ১ গিগাবাইট র্যাম চায় তখন বাকিটা কোথা থেকে দিবেন? তাই আপনার অপারেটিং সিস্টেম এবং সচরাচর যেসব অ্যাপ ব্যবহার করেন তা কতটুকু র্যাম ব্যবহার করে তা মিলিয়ে র্যাম কিনুন। একটু বেশী কেনা ভালো কারণ র্যাম খুব কমে গেলে সিস্টেম স্লো হয়ে যাবে। ৬৪ বিট সিস্টেম ব্যবহারে ইচ্ছুক হলে ৩ গিগাবাইটের বেশি র্যাম কিনুন। তবে পয়সা খরচ করে র্যাম কিনে ফেলে রাখার মানে হয়না কারণ বেশি র্যাম মানেই বেশী শক্তি খরচ। তাই সব ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিন।
কম্পিউটারের বিভিন্ন ডিভাইস খুব সুক্ষ্ম হওয়ার কারণে সেগুলো নিজে খুলে ঠিক করতে যাওয়া বোকামি। তাই যতটা সম্ভব সেগুলো নষ্ট হওয়া থেকে বিরত রাখাই সবচেয়ে ভালো উপায়। র্যাম নিয়ে যে সমস্যা সবার হয় তা হল – পিসি চালু না হওয়া। মেমরি স্লটে ময়লা জমলে এই সমস্যা হয়। তাই মাঝে মাঝে র্যাম খুলে পরিবাহী অংশটুকু ভালোমত মুছে নিলে সুফল পাওয়া যায়। কেসিং-এর মাঝে যেন বাতাসের চলাচল বাধাগ্রস্ত না হয় সেজন্য কুলিং ফ্যান ঠিকমত ঘুরছে কিনা তা খেয়াল রাখবেন। যারা ল্যাপটপ ব্যবহার করেন তাদের জেনে রাখা দরকার যে ল্যাপটপের নিচের দিকে মাঝে র্যামের উৎপন্ন তাপ বের হওয়ার জন্য ছিদ্র থাকে। সেগুলো যেন কাজ করার সময় বন্ধ না হয়ে যায় তার দিকে খেয়াল রাখা উচিত। র্যাম নষ্ট হলে তা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিবর্তন করে ফেলা দরকার, কেননা সেক্ষেত্রে সিস্টেমের ক্ষতির পাশাপাশি আরেকটি র্যাম (যদি থাকে) ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আজকের টিউন এখানেই শেষ। পরবর্তীতে স্টোরেজ ডিভাইস (হার্ডডিস্ক) নিয়ে লেখা হবে। কোন ভুল থাকলে তা দ্রুত জানাবেন। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। ধন্যবাদ
আমি মো মিনহাজুল হক। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 7 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 22 টি টিউন ও 2958 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 6 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
ঝাক্কাস একটা টিউন করছেন ভাই।
এরকম গবেষনা মূলক টিউন দরকার।