মাদারবোর্ড এর বুকে যেসব ডিভাইস বাস করে, তাদের মাঝে সেরা কে? উত্তরে সবাইই বলবে যে প্রসেসর। এমনকি র্যাম, হার্ডডিস্ক এদের যদি মুখ থাকত তাহলে তারাও হয়ত বলত যে প্রসেসর ছাড়া কম্পিউটার অচল। কারণ সকল ডিভাইস থেকে তথ্য নিয়ে সেটাকে কাজে লাগিয়ে ফলাফল বের করা, সবার খোঁজ খবর নিয়ে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেয় একমাত্র প্রসেসর নিজেই। আজকের টিউনে এই প্রসেসর নিয়েই আলোচনা করা হবে।
যে প্রসেস করে সেই প্রসেসর। ব্যাকরণের সমাসের মত হয়ে গেল তাইনা? তাহলে আরো ভালোভাবে বলি, যা কোন তথ্য নিয়ে সেটাকে নির্দেশ অনুযায়ী ফলাফলে পরিণত করে সেটাই প্রসেসর। বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক্স যন্ত্রে কেন্দ্রীয় যে অংশ সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করে সেটাই প্রসেসর। তাহলে দুইশ টাকা দামের খেলনা গাড়ির মাঝে যে প্রসেসর আছে আর আধা-লক্ষ টাকা দিয়ে কেনা কম্পিউটারের মাঝের প্রসেসর কী একই? মোটেই না। কম্পিউটারে যে প্রসেসর ব্যাবহার করা হত তাকে বলা হয় সিপিইউ বা Central Processing Unit. ধরণের দিক দিয়ে এটা মাইক্রো-প্রসেসর। যদিও সিপিইউ দেখতে আমরা সচরাচর যেসব আইসি দেখি তাদের সমান বা ছোট্ট, কিন্তু এর একেবারেই ভেতরের মূল অংশটুকু অনেক অনেক ছোট্ট। তাই এদের বলা হয় মাইক্রো-প্রসেসর।
কম্পিউটারে যেসব প্রসেসর ব্যাবহৃত হয় সেগুলো আকারে যেমন ছোট, তেমনি কাজের দিক দিয়েও বেশ শক্তিশালী। এদের তো আর ইচ্ছামত যেখানে সেখানে তৈরী করলেই হল না! সিপিইউ এর গঠন আর প্রস্তুতপ্রণালী অনেক জটিল। আমরা প্রসেসর কে দেখি চারকোণা একটা চকচকে ধাতুর আবরণ দিয়ে ঘেরা চেপ্টা পাতের মত। কিন্তু এর মাঝে থাকে অনেক কিছু। শুনুন বলছি।
আগে বলে নিই আইসি কী। একটা তড়িৎ বর্তনীকে যদি খুব ছোট্ট করে বানিয়ে কিছুর মাঝে পুরে দেওয়া যায় তাহলে সেটা হয়ে যায় আইসি বা Integrated Circuit. আইসি এর মাঝে থাকে অসংখ্য ট্রানজিস্টর, ডায়োড, রেজিস্টর ইত্যাদি। একটা আইসি তার গঠন অনুযায়ী নির্দিষ্ট কাজ করতে সক্ষম। এরকম অনেক অনেক আইসি একত্রে ছোট্ট আকারে সাজিয়ে নিলে পাওয়া যায় মাইক্রো-প্রসেসর। ইলেক্ট্রনিক্সের কাজে অর্ধপরিবাহক বা সেমকন্ডাক্টরের ব্যাবহার অনেক বেশি। এই চিপ তৈরীতে সেমকন্ডাক্টরের হিসেবে সিলিকনের পাত ব্যবহার করা হয়। সিলিকন পাতের ওপর এভাবে ট্রানজিস্টর, ডায়োড, রেজিস্টর ইত্যাদি তৈরী করার পদ্ধতিকে বলা হয় ফেব্রিকেশান।
বাণিজ্যিকভাবে আলাদা আলদা করে চিপ তৈরী করা অনেক সময়সাপেক্ষ আর অলাভজনক ব্যাপার। তাই সমস্যা এড়াতে একসাথে একটা বড় সিলিকন পাতের ওপর অনেকগুলো চিপ বানানো হয়। তারপর সেটাকে একক অনুযায়ী কেটে নেওয়া হয়। এই পদ্ধতিকে বলে এলএসআই বা Large-Scale Integration. প্রসেসর অনেক বেশি সুক্ষ্ম হয় বলে একসাথে আরো বেশী চিপ ফেব্রিক করা হয়। তখন সেটাকে বলে ভিএলএসআই বা Very Large-Scale Integration. ফেব্রিকেশানের পর পাত কেটে যেসব ছোট্ট ছোট্ট চিপ পাওয়া যায় সেটাকে বলা হয় ডাই (Die). এই ডাই এর সাথে বাইরের অন্যান্য ডিভাইস যুক্ত করার জন্য তার লাগানোর ব্যাবস্থা থাকে। এই চিকন তারের সাহায্যে ডাই থেকে প্রসেসরের নিচে যে অনেকগুলা বিন্দুর মত দাগ থাকে সেখানে সংযোগ দেওয়া হয়। সেই প্রসেসর মাদারবোর্ড এর সকেটে লাগালেই হয়ে যায়। নিচের ছবিটা দেখুন, এখানে অনেকগুলা ডাই দেখানো হয়েছে যা আসলে একটা বৃত্তাকার প্লেটে ফেব্রিক করে বানানো হয়েছে।
আর এই ছবিটা দেখে বুঝবেন প্রসেসরের মাঝে ডাই কিভাবে বসানো থাকে।
ডাই থেকে প্রসেসর এর কানেক্টরে কীভাএব তার দিয়ে সংযোগ দেওয়া হয় তা দেখে নিন এই ছবিতে।
একটা ডাই কতটা ক্ষুদ্র হতে পারে তা বোঝা যায় এই ছবিটা দেখে। এটা ইনটেল অ্যাটম প্রসেসরের ডাই যা একটা চালের সমান।
এখন কথা হল ডাই যদি এত ছোট্ট হয়, তাহলে সিপিইউ এত বড় করে বানানোর কি দরকার? আসলে ডাই বা কেন্দ্রীয় অংশ যখন কাজ করে তখন বিদ্যুৎ প্রবাহের কারণে তাপ উৎপন্ন হয়। এই তাপকে সমভাবে ছড়িয়ে দিতে বাইরের ধাতব আবরণ বানানো হয়। আর ডাই অনেক সংবেদনশীল, একে রক্ষা করার জন্যেই বাইরে অনেক শক্ত আবরণ দেওয়া থাকে।
ডাই নিয়ে আরো একটু জানা দরকার। তা হল ডাই এর ন্যানোটেকনোলজি কেমন। ডাই যত বড় ক্ষেত্রফলের হয়, সার্কিট বড় হওয়ার কারণে উৎপন্ন তাপের পরিমাণ তত বেশি হয়। বেশি বিদ্যুতও লাগে। তাই দিন দিন ডাই এর ক্ষেত্রফল কমছে। যেমন কোর ২ ডুয়ো সিরিজে ডাই ছিল ৪৫ ন্যানোমিটার, আর কোর আই সিরিজে তা হয়েছে ৩২ ন্যানোমিটার।
আগেই বলেছি যে ডাইতে অসংখ্য ট্রানজিস্টর বসানো থাকে। এরা একসাথে তৈরী করে লজিক গেইট যার মাধ্যমে সিপিইউ প্রদত্ত ডাটা কাজে লাগিয়ে ফলাফল তৈরী করে। এদেরকে কোর বলা হয়। দিন দিন প্রসেসরের কার্যপরিধি বেড়ে যাচ্ছে। আগের টিউনে আমি বলেছিলাম যে হাই-স্পীড পেরিফেরাল কে নর্থব্রিজ কন্ট্রোল করে। আধুনিক কালে প্রসেসরের মাঝে নর্থব্রিজ ইন্টিগ্রেট করা থাকে। তাই প্রসেসর শুধু লজিক নিয়ে পড়ে থাকে তা না। ফলাফল তৈরীর পাশাপাশি তাকে জিপিইউ আর মেমরি এর দেখভাল করতে হয়, ইনপুট আউটপুট ডিভাইসের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতে হয়। তাছাড়া মেমরি বা র্যাম থেকে ডাটা নিয়ে কাজ করার জন্য নিজেই একটা ক্যাশের সাহায্য নেয়। তাহলে নিচের জিনিসগুলো সিপিইউ তে থাকে।
এবার সবকয়টার বর্ণনা দিই।
সিপিইউ এর একেবারেই প্রধান অংশ হল কোর। কোরের উপর প্রসেসরের ক্ষমতা নির্ভর করে। কোরের মাঝে থাকে দুইটা অংশ। একটা হল অ্যারিথমেটিক/লজিকাল ইউনিট (Arithmetic/Logical Unit) আরেকটা হল কন্ট্রোল ইউনিট(Control Unit)। এই দুইটা রেজিস্টার নামক আরেকটা অংশের মাধ্যমে পরষ্পরের সাথে যুক্ত থাকে। কোন কাজের নির্দেশ পেলে একটা কোর (সিঙ্গেল কোর প্রসেসর হলে সেটাকেই সিপিইউ বলা যায়) তিন ধাপে কাজ করে। তা হল -
এই ছবিতে কোয়াড কোর প্রসেসরের ডাই দেখানো হয়েছে যাতে চারটি কোর দেখা যাচ্ছে –
এসব করার জন্য বাসের (Bus) দরকার হয়। বাস বলতে আমরা বুঝি বিভিন্ন পেরিফেরালের মাঝে যোগাযোগের রাস্তা বা মাধ্যম। যেমন সিপিইউ মেমরি থেকে কিছু তথ্য চায়। তাহলে প্রথমে তাকে মেমরি এর লোকেশান খুঁজে বের করে তথ্য জানার জন্য নির্দেশ পাঠাতে হবে। মেমরিতে তথ্য বিভিন্ন ব্লকে থাকে। প্রতিটা ব্লকের ঠিকানা বা অবস্থানকে বলে অ্যাড্রেস। যে উপায়ে মেমরিতে তথ্যের অ্যাড্রেস বের করা হয় সেটা হল অ্যাড্রেস বাস (Address Bus)। এই বাস কিন্তু একমুখী। আচ্ছা, এবার তথ্য সিপিইউ তার নিজের কাছে আনতে বা ফলাফল বের করে মেমরিতে পাঠাতে যে বাসের সাহায্য নেয় তা হল ডাটা বাস (Data Bus)। আর কাজ শেষে মেমরি বা অন্য কোন ডিভাইস (যেমন ডিস্ক) কে নির্দেশ পাঠায় যে বাসের মাধ্যমে তার নাম কন্ট্রোল বাস (Control Bus)।
নিচের ছবিতে প্রসেসর প্রধান ইউনিট আর বাস দেখানো হয়েছে।
কোর বেশি হলে ক্ষমতা বাড়ে। একই ডাই-তে কোর ফ্যাব্রিক না করে আলাদা আলাদা ডাই তে কোর বসালে সেটা আরো বেশী শক্তিশালী হয়।
সিপিইউ অনবরত মেমরি আর অন্যান্য ডিভাইস থেকে তথ্য গ্রহণ করতে থাকে। এর তথ্য সংগ্রহ আরো দ্রুততর করতে কোরের সাথে ক্যাশ মেমরি যুক্ত করা হয়। ক্যাশ মূল মেমরি থেকে যেসব স্থানে সম্প্রতি ডাটা রিড/রাইট করেছে সেসব স্থানের অ্যাড্রেস ক্যাশিং করে রাখে। পুরো ব্যাপারটা বইয়ের শুরুতে সূচিপত্রের মত কাজ করে। সূচিতে যেমন ভেতরের কোন পাতায় কী আছে তা লেখা থাকে, ক্যাশ মেমরি তেমনি মেমরির কোন ব্লকে কী ডাটা আছে তা সংগ্রহ করে রাখে এবং কোর সেই ডাটা চাওয়া মাত্র সেটা সেখানে পাঠায়। ক্যাশিং একাধিক লেভেল বা ধাপে হলে ক্ষমতা আরো বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন ধাপের ক্যাশ মেমরিকে L1, L2, L3 এভাবে সংগায়িত করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে একাধিক কোর একই লেভেল ক্যাশ মেমরি ব্যাবহার করতে পারে। তখন সেটাকে Shared Level Cache বলা হয়। ক্যাশ মেমরি যত বেশি আর যত লেভেলের হয়, প্রসেসরের কর্মক্ষমতা তত বেশী হয়।
প্রতিটা কম্পিউটারে ভিডিও আউটপুট দেখানোর জন্য গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট দরকার। নতুন প্রসেসরে এই জিপিইউ ডাই-তে অবস্থান করে। এছাড়াও জিপিইউ কন্ট্রোলার নামে একটি অংশ থাকে যেটা এক্সটার্নাল জিপিইউ বা পিসিআই পোর্ট এ লাগানো গ্রাফিক্স কার্ড কে নিয়ন্ত্রণ করে এবং ভিডিও আউটপুট FDI এর মাধ্যমে আউটপুট ইন্টারফেস (ডিভিআই বা ভিজিএ কেবল) এ প্রেরণ করে।
সকল কোর বা সিপিইউ মেমরি বা র্যামের সাথে সরাসরি যে হাবের সাহায্যে যুক্ত থাকে তার নাম মেমরি কন্ট্রোলার। এটা মেমরি থেকে সিপিইউতে আর সিপিইউ থেকে মেমরিতে অনবরত ডাটা রিড রাইট করতে থাকে।
ডিএমআই মানে হল Direct Media Interface. নর্থব্রিজ আর সাউথব্রিজের মাঝের সরাসরি সংযোগকে ডিএমআই বলে। নতুন প্রসেসরে নর্থব্রিজ নেই। তাই সিপিইউ এর যে অংশ সাউথব্রিজ অর্থাৎ লো-স্পীড ডিভাইস যেমন ডিস্ক, ইউএসবি, পিসিআই ইত্যাদি কে নিয়ন্ত্রণ করে সেটা হল ডিএমআই।
নিচের ছবিটায় সকল অংশ ডায়াগ্রাম আকারে দেখানো হল –
এখন কথা হল সকল প্রসেসরে জিপিইউ থাকেনা। সেক্ষেত্রে জিপিইউ কন্ট্রোলার থাকে। তখন মাদারবোর্ড এ নর্থব্রিজ নামের যে চিপ থাকে সেটাই সেটা জিপিইউ, মেমরি আর প্রসেসরের মাঝে সমন্বয় সাধন করে। আর যেসব কোরে ডিএমআই নেই, সেক্ষেত্রে নর্থব্রিজ আর সাউথব্রিজের মাঝের বাসই দুইয়ের মাঝে কানেকশান বজায় রাখে। আগে নর্থব্রিজ থেকে প্রসেসর এ ডাটা অ্যাক্সেস করতে ফ্রন্ট-সাইড-বাস নামে একটি পদ্ধতি ব্যবহার করা হত। এতে চিপসেটকে নির্দিষ্ট হারে কোরে ডাটা সেন্ড আর রিসিভ করতে হত। এফএসবি এর সমস্যা হল এতে প্রসেসরের সবটুকু ক্ষমতা কাজে লাগানো যেত না। অর্থাৎ প্রসেসর অনেক ভালো ফ্রিকোয়েন্সির হওয়া সত্বেও এফএসবি কম হওয়ার কারণে ডাটা সেন্ড করে রিসিভ না করা পর্যন্ত নতুন প্যাকেট পাঠানো যেত না। এই কারণে নতুন সিস্টেমে নর্ত্থব্রিজ পুরোটাই কোরের সাথে ডাইতে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইনটেল এটাকে বলে “স্যান্ডি ব্রিজ” পদ্ধতি।
(ব্যাক-সাইড-বাস: প্রসেসর থেকে ডাটা প্রসেসর মেমরি তে ক্যাশ করার রাস্তা হল বিএসবি)
নিচের ছবিটায় এফএসবি আর বিএসবি দেখানো হয়েছে –
ক্লক স্পীড হল প্রসেসরের পারফরমেন্স নির্ণয়ের মূল উপায়। একটা প্রসেসর সেকেন্ডে কতটা নির্দেশ পালন করতে পারে সেটাই তার ক্ষমতা। ধরা যাক কোন প্রসেসর সেকেন্ডে ১০০০ টা নির্দেশ (বা কোনো গাণিতিক ক্যালকুলেশান) পালন করতে পারে। তাহলে তার ক্ষমতা ১ কিলোহার্টজ। যদি ১০০০০০০০০০ টা কাজ সম্পাদন করতে পারে তাহলে আমরা বলি তার ক্ষমতা ১ গিগাহার্টজ। খুব দ্রুত ক্ষমতাসম্পন্ন প্রসেসরের ক্ষেত্রে GT/s নামের এককটি ব্যবহার করা হয়। এর মানে হল Giga Transfer pre second. অর্থাৎ সেকেন্ডে কতটা নির্দেশ পালন বা বয়ে নিতে পারে সেটার পরিমাপ হল GT/s.
একসাথে একাধিক নির্দেশ পালন করাকে প্রসেসরের প্যারালাল প্রসেসিং ক্ষমতা বলে। ধরুন প্রসেসর কে ২+৩ আর ৪+৫ এর ফলাফল নির্ণয় করতে দেওয়া হল। তাহলে যদি সে প্রথমে ২ আর ৩ এর যোগফল বের করে পরে ৪ আর ৫ এর যোগফল বের করে তাহলে সময় বেশী লাগবে। কিন্তু যদি একই সাথে ২ আর ৩ যোগ করার নির্দেশ দেওয়ার সাথে সাথে ৪ আর ৫ যোগ করতে বলা হয় তাহলে দ্রুত (প্রায় আগের চেয়ে দ্বিগুণ সময়ে) ফলাফল পাওয়া যাবে। এটা হল প্যারালাল প্রসেসিং। এর উপর ভিত্তি করে প্রসেসরকে RISC আর CISC এই দুইভাগে ভাগ করা হয়েছিল। RISC হল Reduced Instruction Set Computing আর CISC হল Complex Instruction Set Computing. RISC টাইপের প্রসেসর এমনভাবে তৈরী হত যে এরা নিজেরাই প্যারালাল পদ্ধতিতে ম্যাক্সিমাম প্রসেসিং করতে পারত। কিন্তু CISC ধরণের প্রসেসরে অ্যাসেম্বলি কোডের মাধ্যমে প্যারালাল প্রসেস করাতে হত।
এখানে প্যারালাল প্রসেসিং এর উদাহরণ দেখানো হয়েছে যেখানে একসাথে দুইট নির্দেশ দিয়ে কম সময়ে বেশি আউটপুট পাওয়া সম্ভব।
প্যারালাল পদ্ধতিতে একাধিক নির্দেশ পালন করে ফলাফল বের করা সম্ভব। প্রসেসরের ক্ষমতা আরো বাড়ানোর জন্য থ্রেড লেভেলের সাহায্য নেওয়া হয়। একই প্রোগ্রাম বা নির্দেশ কয়েকটি কোরের মধ্যে পাঠিয়ে আরো দ্রুত ফলাফল বের করা হয়। একে বলা হয় থ্রেডিং। এইজন্য এক বা একাধিক ডাই-তে একাধিক কোর বসিয়ে মাল্টি-কোর সিপিইউ তৈরী করা হয়।
প্রসেসর কী হারে ডাটা নিয়ে কাজ করে সেই পরিমাপকে বলা হয় ডাটা ইনটেজার টাইপ। প্রথমদিকে প্রসেসরগুলো ৪ বিট বা ৮ বিট হারে ডাটা ইনপুট নিয়ে কাজ করত। এখন সেটা ৩২ বিট, ৬৪ বিট ইত্যাদিতে পরিণত হয়েছে। ডাটা ইনটেজার এর উপর প্রসেসরের মেমরি অ্যাড্রেস করার ক্ষমতা নির্ভর করে। কোন প্রসেসর ৩২ বিট টাইপ হলে সেটা 232= 4,294,967,296 বাইট অর্থাৎ 4 গিগাবাইট পর্যন্ত মেমরি অ্যাড্রেস কাজ করতে পারে। যদিও কার্নেল আর অ্যাপ্লিকেশান লিমিটেশানের কারণে 3 গিগাবাইটের বেশি মেমরি অ্যাক্সেস করা সম্ভব হয়না। প্রসেসর ৬৪বিট টাইপ হলে 264=18446744073709551616 বাইট বা 16 এক্সবিবাইট আলাদা আলদা মেমরি ব্লক অ্যাড্রেস করতে পারে। এই কারণে ৬৪ বিট প্রসেসর যুক্ত সিস্টেম অধিক পরিমাণ মেমরি বা র্যাম নিয়ে কাজ করতে পারে। তবে বাস্তবে ৬৪বিট মেমরি অ্যাড্রেসিং করা সম্ভব হয়না ফিজিকাল লিমিটের কারণে। তাই ৬৪বিট সিস্টেম মুলত ৪৮ বা ৫২ বিট আকারে মেমরি অ্যাড্রেস করে থাকে।
প্রতিটা প্রসেসরের শক্তি ওয়াটে হিসাব করা হয়। এই সংখ্যা প্রসেসরের ফ্রিকোয়েন্সি আর তাপমাত্রার মাঝে সম্পর্ক প্রকাশ করে। সম্পর্কটি হল –
P=CV2f
যেখানে P = ওয়াটে প্রসেসরের শক্তি
C = তাপমাত্রা
f = ফ্রিকোয়েন্সি
ডাইয়ের মাঝে বিদ্যুৎ প্রবাহের কারনে প্রসেসরে প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয়। এই তাপকে সরিয়ে ফেলতে হিট সিঙ্ক এবং ফ্যান ব্যবহার করা হয়। অনেক ক্ষেত্রে লিকুইড কুলিং সিস্টেম ব্যবহার করা হয় যেটা তরলের মাধ্যমে তাপ পরিবহন করে। ওভারক্লক করা প্রসেসর ঠান্ডা করতে তরল গ্যাস যেমন নাইট্রোজেন বাবহৃত হয়।
এই হল বিভিন্ন ধরণের হিটসিঙ্ক আর কুলিং ফ্যান –
আর এখানে দেখানো হয়েছে কিভাবে তরল নাইট্রজেন দিয়ে প্রসেসর ঠান্ডা করা হচ্ছে –
তরল নাইট্রোজেন কুলিং সিস্টেম ইকুইপমেন্ট –
ল্যাপটপ এর হিটসিঙ্ক সিস্টেম –
প্রথম মাইক্রো প্রসেসর বলা যেতে পারে ১৯৭১ সালে তৈরী ইনটেলের 4004 চিপকে। এটা মাত্র ৪ বিট উপায়ে কাজ করত। এর স্পীড ছিল মাত্র ৭৪০ কিলোহার্টজ। এর পিন ছিল ১৬ টা।
এর পরে ১৯৭৪ এ ইনটেল বাজারে ৮ বিট প্রসেসর আনে যেটার মডেল ছিল 8080. এর গতি ছিল ২ মেগাহার্টজ। ৪০ পিনের এই মাইক্রোপ্রসেসরটি অল্প পরিমাণে ১৬ বিট কাজ করতে পারত।
১৯৭৮ এ 8086 নামের প্রসেসর বাজারে এনে ইনটেল বেশ বড় মাপের সাড়া ফেলে দেয়। এটা ছিল ১৬ বিট প্রসেসর আর সর্বোচ্চ ১০ মেগাহার্টজ গতিসম্পন্ন।
তারপর ১৯৮৬ সালে আসে 80386 মডেলের প্রসেসর যা সম্পুর্ণ ৩২ বিট সাপোর্ট করত। এটা ১২ থেকে ৪০ মেগাহার্টজ গতিসম্পন্ন ছিল। এই প্রসেসরের মাধ্যমে নতুন আর্কিটেকচার IA-32 বা Intel Architecture 32-bit এর প্রচলন হয়। প্রোগ্রামাররা এটাকে মডেল হিসেবে নিয়ে সফটওয়্যার ডেভেলপ করা শুরু করে। তাই x86 নাম দ্বারা ৩২বিট সিস্টেম কে বোঝানো হয়।
80386 ফ্যামিলির আরো অনেক প্রসেসর আছে যাদের নাম অনুযায়ী বিভিন্ন আর্কিটেকচার তৈরী করা হয়। এগুলো i386, i486, i686 ইত্যাদি নামে পরিচিত। i686 বের করার পর থেকে ইনটেল ৬৪বিট প্রসেসর তৈরীতে হাত দেয়।
১৯৯০ এর পর থেকে কয়েকটি কোম্পানি ৬৪বিট প্রসেসর তৈরীতে সফল হয় এবং কম খরচে উৎপাদন শুরু করে। প্রথম নিনটেনডো আর প্লে-স্টেশানে ৬৪ বিট আর্কিটেকচার ব্যাবহার করা হয়। AMD সবার প্রথমে ৬৪বিট প্রসেসর বাজারে ছাড়ে এবং সেই আর্কিটেকচারের নাম দেয় amd64. তাই তখন থেকে AMD64 সিরিজের প্রসেসর গুলো ৬৪বিট সফটওয়্যার ডেভেলপিং এর মডেল হিসেবে গৃহীত হয়। ৬৪বিট আর্কিটেকচার x86_x64 নামেও পরিচিত কারন এটা এমনভাবে তৈরী করা হয় যে এতে ৩২ বিট সফটওয়্যার চালানো সম্ভব হয়। প্রথম x86_x64 ভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম ছিল ইউনিক্স।
এছাড়া ৩৬বিট, ৪৮বিট, ১২৮বিট ইত্যাদি সিস্টেম আছে যেগুলো নিয়ে গবেষণা চলছে।
প্রথমে অনেকগুলো কোম্পানি রচেসসর তৈরীতে মনোযোগী হয়েছিল। তাদের মাঝে মটোরোলা, ভিআইএ, আইবিএম, ইনটেল ইত্যাদি অন্যতম। কিন্তু ইনটেল উন্নতমানের প্রসেসর তৈরি করে বাজার ছেয়ে ফেলায় বাকিরা সরে পড়ে। আইবিএম মূলত সুপার কম্পিউটার তৈরীতে ব্যাস্ত। এএমডি নামের কোম্পানি প্রসেসর তৈরীতে হাত দিয়ে ইনটেলকে বিপদে ফেলে দেয়। তাই ইনটেল নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে এএমডি এর সাথে প্রতিদ্বন্দিতা করে যাচ্ছে। অবশ্য চিপ-জায়ান্ট বলতে ইনটেলকেই বোঝানো হয়। পৃথীবিতে ইনটেল এর প্রসেসর সবচেয়ে বেশী বাবহৃত হচ্ছে।
ইনটেল এখনো 80xxx এর মডেলে প্রসেসর তৈরী করে যাচ্ছে। প্রতি ফ্যামিলির কোরের আলাদা আলাদা নাম আর একই কোর থেকে সৃষ্ট প্রসেসরের ভিন্ন ভিন্ন কোডনেম আছে। ইনটেলের যেসব সিরিজের প্রসেসর আছে তারা হল – পেন্টিয়াম, সেলেরন, আইটানিয়াম, কোর আই, জিওন, এটম ইত্যাদি। পেন্টিয়াম সিরিজের প্রসেসরগুলো হল প্রথমে একক কোর নিয়ে বের হওয়া বিভিন্ন ফ্রিকোয়েন্সি আর স্বল্প ক্যাশ মেমরির প্রসেসর। সেলেরন হল মোটামুটি একটু ভালো আর সুলভ প্রসেসর। আইটানিয়াম হল ৬৪বিট ফ্যামিলির প্রসেসর যেটা IA-64 আর্কিটেকচারের উপর নির্মিত। কোর সিরিজের প্রসেসরগুলো হল বেশ উন্নতমানের আর দামী। জিওন প্রচএসসর মূলত সার্ভার আর ওয়ার্কস্টেশানের জন্য। এটম হল আল্ট্রা পোর্টেবল মোবাইল প্রসেসর।
বেশি জনপ্রিয় কয়েকটি প্রসেসরের তুলনামুলক বর্ণনা দিলাম নিচের ছকে –
একই নামের প্রসেসরের অনেকগুলো ভার্সন থাকে। যেমন কোর আই ৫ ৪৬০এম এ কোর ২টা, ক্যাশ মেমরি ৩ মেগাবাইট। কিন্তু কোর আই৫ ৭৮০ তে কোর ৪টা আর ক্যাশ মেমরি ৮ মেগাবাইট।
এখানেই আজকের প্রসেসর নিয়ে টিউন শেষ। যারা আগের টিউন পড়ে CPU-Z নামের সফটওয়্যারটি ডাউনলোড করেছিলেন তারা সহজেই প্রসেসরের সকল দরকারী তথ্য পেয়ে যাবেন সেটা থেকে। যারা করেন নি, তারা ডাউনলোড করে নিন এখান থেকে।
আপনারা দেখে শুনে ভালো মানের প্রসেসর কিনবেন। টিউনটি পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ। কোন ভুল ত্রুটি পেলে দ্রুত জানাবেন। ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
আমি মো মিনহাজুল হক। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 9 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 22 টি টিউন ও 2958 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 6 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
অনেক দিন পর একটা তথ্য নির্ভর টিউন পেলাম । চালিয়ে যান……