মাদারবোর্ড বা মেইনবোর্ড হল কম্পিউটারের ভেতরে অবস্থিত সার্কিট বোর্ড যাতে সিস্টেম এর প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ডিভাইস পরষ্পরের সাথে সংযুক্ত থাকে এবং নতুন ডিভাইস সংযুক্ত করার ব্যাবস্থা থাকে। কম্পিউটিং এর ভাষায় এই ডিভাইসগুলোকে বলা হয় পেরিফেরালস (Peripherals)। প্রযুক্তির উত্তোরোত্তর উন্নতির কারণে মাদারবোর্ড এর নিঁখুত সংজ্ঞা দেওয়া সম্ভব নয় কারণ প্রতিদিনই নতুন নতুন পেরিফেরালস মাদারবোর্ডে যুক্ত হচ্ছে।
যখন থেকে কম্পিউটার এর সুচনা, তখন আজকের মাদারবোর্ড এর মত কোন কিছু ছিলনা। একেবারে প্রথমদিকে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশগুলো একত্রে লাগানোর জন্য ‘ব্যাকপ্লেইন’ নামক ব্যাবস্থা রাখা হয়েছিল। এটা আসলে একটা পিসিবি বোর্ড যাতে অনেকগুলো কানেক্টর থাকত (আজকের মাদারবোর্ড এ যেমন কয়েকটা পিসিআই পোর্ট থাকে), এই কানেক্টরগুলোতে বিভিন্ন প্রসেসিং ডিভাইস, স্টোরেজ ডিভাইস ইত্যাদি লাগানো যেত। অর্থাৎ সবগুলো আলাদাভাবে যুক্ত থাকত এবং তাদের একত্রিত করতে ব্যাকপ্লেইন ব্যাবহৃত হত। এর সাথে ‘সিঙ্গেল বোর্ড কম্পিউটার’ অর্থাৎ প্রসেসিং অংশটুকু লাগালেই তা পরিপুর্ণ কম্পিউটার হয়ে যেত। নিচের ছবিটাতে ব্যাকপ্লেইন আর সিঙ্গেল বোর্ড কম্পিউটার অংশটুকু দেখানো হল।
ব্যাকপ্লেইন এর সুবিধা ছিল যে কানেক্টর যতক্ষণ ভালো থাকত ততক্ষণ ইচ্ছামত ডিভাইস লাগানো বা খোলা যেত। এতে তারের কোনো ঝামেলা ছিলনা। আর কোন অংশ নষ্ট হলে সেইটুকু পরিবর্তন করলেই হত। তবে এর সীমাবদ্ধতা যা তা হল ব্যাকপ্লেইনের মাধ্যমে তত্বীয়ভাবে অসংখ্য ডিভাইস কানেক্ট করানো সম্ভব। কিন্তু সকল প্রসেসর, ইনপুট আউটপুট ডিভাইস ইত্যাদি এর কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। এই কারণে ১৯৮০ সালের পর থেকে নির্দিষ্ট সংখ্যক পোর্ট ও ডিভাইস নিয়ে মাদারবোর্ড নামক ধারণা চলে আসে। পিসিবি বোর্ড তখন থেকে সহজলভ্য হওয়ার কারণে সার্কিট বোর্ডে আবশ্যক পেরিফেরাল যুক্ত করে মাদারবোর্ড তৈরি করা শুরু হয়। একেবারেই শুরুর দিকে যেসব কোম্পানি মাদারবোর্ড তৈরী করত তাদের মাঝে Micronics, Mylex, AMI, DTK, Orchid Technology, Elitegroup ইত্যাদি পরিচিত ছিল। এরা প্রায় সকলেই জাপানের তাইওয়ানের কোম্পানি ছিল। কিন্তু পরে অ্যাপেল আর আইবিএম এর দাপটে এরা টিকতে পারেনি, কারণ অ্যাপেল আর আইবিএম তাদের মাদারবোর্ড এ অনেক বেশি সুবিধা দেওয়া শুরু করে। ১৯৯৭ এ ইনটেল প্রসেসর তৈরীর পাশাপাশি মাদারবোর্ড তৈরীতে হাত দেয়। ফলে বাজারের বড় একটা অংশ তাদের অনুকূলে চলে আসে। এখন সকল মাদারবোর্ড প্রস্তুতকারী কোম্পানি তাদের বোর্ডে প্রসেসর, মেমরি, ইনপুট আউটপুট ডিভাইস এর পাশাপাশি নেটওয়ার্ক, গ্রাফিক্স ইত্যাদি সহ আলাদা কার্ড লাগানোর সুব্যাবস্থা করে দিয়েছে। এছাড়া এটিআই, এনভিডিয়া তাদের মাল্টি-জিপিইউ এর জন্য বিশেষ বোর্ড তৈরী করে থাকে।
একটা ছোট্ট কৌতুক বলি। এক লোককে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে যে “কম্পিউটার এর ভবিষ্যৎ কি?” উনি উত্তর দিলেন “কম্পিউটার এর ভবিষ্যৎ অন্ধকার কারণ এতে কোন ফাদারবোর্ড নেই”
এরকম শুনে অনেকেই জোক করেন যে ফাদারবোর্ড কেন নেই। মজার ব্যাপার হল ফাদারবোর্ড না থাকলেও মাদারবোর্ড এর সাথে আরেকটা জিনিস সংযুক্ত করা যায় যার নাম ডটারবোর্ড। মেয়ে যেমন মায়ের অনুগত হয়, তেমনি এই বোর্ড মাদারবোর্ড এর অধীনে থেকে কাজ করে। ডটারবোর্ড আসলে একধরণের এক্সপেনশান কার্ড যা মূল বোর্ডের পিসিআই বা আইএসএ বাসে যুক্ত থাকে আর সত্যিকার কম্পিউটার বাসের মতই আচরণ করে। ডটারবোর্ড এর মাধ্যমে আলাদা রেইড, সিপিইউ, নেটওয়ার্ক ডিভাইস, স্টোরেজ ডিভাইস ইত্যাদি যুক্ত করা যায়।
এটা হল পাটা ডটারবোর্ড -
আর এটা হল ল্যান ডটারবোর্ড যা থেকে একসাথে তিনটি পোর্ট বের হয়েছে -
এবার আসি বিস্তারিত বর্ণনায় –
*** প্রসেসর সকেট: এটা মাদারবোর্ডে থাকা একটি সকেট যাতে প্রসেসর কোনো ঝামেলা বা ক্ষতি ছাড়াই বসানো যায় ও খোলা যায়। বিভিন্ন মডেলের প্রসেসরের জন্য বিভিন্ন সকেট রয়েছে। দুই ধরণের সকেট রয়েছে। একটা হল ZIF আর আরেকটি হল LGA. LGA সকেট সবাই চেনেন। Land Grid Array কে LGA বলা হয়। Zero Insertion Force কে ZIF বলে। দুই ধরণের সকেটের ছবি দেখেই বুঝবেন কোনটা কেমন। এখন LGA সকেট সবচেয়ে বেশি ব্যাবহৃত হয়। বিভিন্ন প্রসেসরের জন্য বিভিন্ন সকেট আছে। যেমন পেন্টিয়াম প্রসেসরের সকেট হল LGA 771. কোর টু ডুও এর সকেট LGA 775. আর কোর সিরিজের প্রসেসর বসানো হয় LGA 1156 সকেটে। বিভিন্ন সকেটের বাস স্পীড আলাদা আলাদা হয়ে থাকে।
এই হল ZIF সকেট -
আর এগুলো হল LGA সকেট যা এখনকার প্রসেসরের জন্য বহুল ব্যাবহৃত হয়। নিচেরটা হল পেন্টিয়াম প্রসেসরের জন্য -
এটা কোর টু ডুও এর জন্য -
আর এইটা সবার পরিচিত কোর আই সিরিজের প্রসেসরের জন্য -
সাধারণত একটা বোর্ড এ একটাই প্রসেসর থাকে। তবে সম্প্রতি একাধিক প্রসেসর সকেট-যুক্ত বোর্ড পাওয়া যাচ্ছে। মাল্টি-সিপিইউ মাদারবোর্ড এরকম দেখতে -
*** চিপসেট: চিপসেট হল যে পেরিফেরাল প্রসেসর এবং অন্যান্য ডিভাইস এর সাথে সামঞ্জস্য রক্ষা করে চলে। আধুনিক আর্কিটেকচার অনুযায়ী মাদারবোর্ড চিপকে দুইটি অংশে ভাগ করা হয়। একটাকে বলা হয় নর্থব্রিজ আরেকটা সাউথব্রিজ।
নর্থব্রিজ: এটা মাদারবোর্ড এর হাই-স্পীড ডিভাইসগুলোকে কন্ট্রোল করে। অর্থাৎ প্রসেসর, র্যাম, ভিডিও প্রসেসর এর সাথে যুক্ত থাকে। একে অনেক সময় ‘মেমরি কন্ট্রোলার হাব’ও বলা হয়। আপনারা মাদারবোর্ডে যে হিটসিঙ্ক দেখতে পান তার নিচের চিপটাই নর্থব্রিজ। এটা একই সাথে প্রসেসর, ভিডিও আর র্যামকে কন্ট্রোল করে। বিল্ট-ইন গ্রাফিক্স কার্ডে এটাই ভিডিও প্রসেসর হিসেবে কাজ করে। আধুনিককালে নর্থব্রিজের সবটুকু অংশ প্রসেসরে ইন্টিগ্রেট করা হয়েছে। তাই মাদারবোর্ড এ বাকি যে চিপ থাকে সেটা সাউথব্রিজ।
সাউথ ব্রিজ: মাদারবোর্ড এর অন্যান্য স্লো-স্পীড ডিভাইস যেমন বায়োস, পিসিআই বাস, ইউএসবি, স্টোরেজ ডিভাইস, ক্লক, অডিও ডিভাইস, এনআইসি ইত্যাদি কন্ট্রোল করে যে চিপ সেটা সাউথ ব্রিজ। আপনারা মাদারবোর্ড এ হিটসিঙ্ক ছাড়া আরেকটি যে বড় চিপ দেখতে পান সেটাই সাউথ ব্রিজ।
নিচের ছবিটায় নর্থব্রিজ আর সাউথব্রিজ দেখানো হয়েছে –
এই ছকের মাধ্যমে দুই চিপের কাজ বোঝা যাবে –
মাদারবোর্ড এ বিভিন্ন মডেলের চিপসেট লাগানো থাকে। 910, 915, 945, 965, 975, P31, P35, G31, G33, G35, X38, X48, P43, P45, G31, G33, G41, G43, G45, H55, H57, H61, H67, X79 ইত্যাদি হল বিভিন্ন চিপসেট। আলাদা আলাদা চিপসেটের বাস, পোর্ট, পিসিআই স্লট ইত্যাদি এর ধারণক্ষমতা আলাদা আলাদা হয়।
*** ভোলাটাইল মেমরি: ভোলাটাইল মেমরি মানে হল যে মেমরি পাওয়ার চলে গেলে মুছে যায়। র্যাম বা র্যান্ডম অ্যাক্সেস মেমরি হল ভোলাটাইল মেমরি। র্যাম দুই ধরণের হয়ে থাকে। এখন ডি-র্যাম বা ডাইনামিক র্যান্ডম অ্যাক্সেস মেমরি বেশি ব্যাবহৃত হয়। এটা প্রসেসর এর কার্যক্ষেত্র বা ড্রাফট পেপারের মত কাজ করে। মেমরি লাগানোর জন্য যে স্লট থাকে তাকে বলে DIMM বা Dual In-line Memory Module. আধুনিক র্যাম বা মেমরি মডিউলে সার্কিট বোর্ডের দুপাশে মেমরি চিপ বসানো থাকে বলে এরকম বলা হয়। মেমরি দেখতে এরকম -
বিভিন্ন ভার্সন এর জন্য মেমরি স্লটের ডিজাইন আলাদা আলাদা হয়। মেমরি স্লট দেখতে এরকম –
*** নন-ভোলাটাইল মেমরি: পাওয়ার চলে গেলেও যেসব ডিভাইস স্থায়ীভাবে ডাটা রেখে দিতে পারে তাদের নন-ভোলাটাইল মেমরি বলে। হার্ডডিস্ক, অপ্টিকাল ড্রাইভ, ফ্ল্যাশ ড্রাইভ ইত্যাদি হল এরকম মেমরির উদাহরণ।
*** সিস্টেম ক্লক: মাদারবোর্ড এ একটা আইসি থাকে যেটা থেকে নির্দিষ্ট সময় পর পর সিগনাল উৎপন্ন হয়। আপনারা জানেন যে ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস গুলো কাজ করে স্পন্দনের সাহায্যে। এই টাইম সিগনাল জেনারেটর পিসি চালু হওয়ার সময় নির্দিষ্ট মানের সিগনাল উৎপন্ন করে দেয়। তবে এই স্পন্দনকে পরিবর্তন করে আরো বেশী পারফরমেন্স পাওয়া সম্ভব যাকে বলে ওভারক্লকিং।
এই হল সিস্টেম ক্লকের আইসি -
*** এক্সপেনশান স্লট: মাদারবোর্ড এ বিভিন্ন পেরিফেরাল যুক্ত করার জন্য বেশ কয়েকটি পিসিআই বা পিসিআই-ই স্লট থাকে। এগুলোতে ল্যান কার্ড, সাউন্ড কার্ড, ভিডিও কার্ড, টিভি কার্ড, মডেম, ওয়াই-ফাই কার্ড ইত্যাদি লাগানো যায়। এখনকার মাদারবোর্ডের পিসিআই স্লটগুলো এরকম -
*** পাওয়ার কানেক্টর: সমস্ত সিস্টেম চালু রাখতে শক্তির দরকার। পাওয়ার কানেক্টরের মাধ্যমে পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট থেকে মাদারবোর্ড ও এর বিভিন্ন অংশ বিদ্যুৎ পায়। সাধারণত ২০ পিন বা ২৪ পিন বিশিষ্ট সকেটের মাধ্যমে মাদারবোর্ড পাওয়ার পায়।
এই হল পাওয়ার সকেট –
আর এটা হল পাওয়ার জ্যাক –
সাটা: Serial Advanced Technology Attachment থেকেই সাটা এর নামকরণ। খুব দ্রুতগতি সম্পন্ন পোর্ট যার সাথে হার্ডডিস্ক, ডিভিডি বা সিডি ড্রাইভ ইত্যাদি লাগানো থাকে। অনেকদিন ধরে সাটা ২.০ ব্যাবহৃত হয়ে আসলেও এখন সাটা ৩.০ যুক্ত মাদারবোর্ড পাওয়া যাচ্ছে। সাটা ২.০ এর গতি ৩ গিগাবিট/সেকেন্ড আর সাটা ৩.০ এর গতি ৬ গিগাবিট/সেকেন্ড। অনেক মাদারবোর্ডে ই-সাটা (External SATA) নামের আরেকটি পোর্ট থাকে। এটা আসলে সাটা পোর্টের একটা ইন্টারফেস যেটা কেসিংএর বাইরে থাকে এবং যেকোন সাটা হার্ডডিস্ক বা সিডি/ডিভিডি ড্রাইভ লাগিয়ে একই গতিতে কাজ করা যায়। কিছু ল্যাপটপে ই-সাটার সাথে ইউএসবি কম্বাইন করে পোর্ট বানানো থাকে।
সাটা পোর্ট -
সাটা কেবলের কানেক্টর -
eSATA কেবলের দুই প্রান্ত -
প্যারালাল-এটিএ: Parallel ATA থেকে পাটা নামের উৎপত্তি। প্যারালাল পদ্ধতিতে কাজ করে বলে এর গতি অনেক কম, মাত্র ১৩৩ মেগাবিট/সেকেন্ড। আর বড় সমস্যা,একটি পোর্টে সর্বোচ্চ ২টা ডিভাইস লাগানো সম্ভব। এর সকেট ৪০ পিনের। ওয়েস্টার্ন ডিজিটালের গবেষণার ফসল এই পোর্ট যে কেবল দিয়ে লাগানো হয় তার নাম আইডিই বা Integrated Drive Electronics. SATA আসার পর থেকে এর ব্যাবহার কমে যায়।
পাটা পোর্ট -
পাটা (আইডিই) কেবল -
ইউএসবি: Universal Serial Bus নামে পরিচিত এই পোর্ট খুব বেশি জনপ্রিয় কারণ এই বাসে এমুলেট করে ডিস্ক, ফ্ল্যাশ স্টোরেজ, মডেম, ল্যান, সাউন্ড কার্ড ইত্যাদি অসংখ্য ডিভাইস কম্পিউটারে যুক্ত করা সম্ভব। এর তিনটি ভার্সন রয়েছে। ইউএসবি ১.১ এর গতি ১২মেগাবিট/সেকেন্ড, ইউএসবি ২.০ এর ৪৮০মেগাবিট/সেকেন্ড, আর ইউএসবি ৩.০ এর গতি ৫ গিগাবিট/সেকেন্ড।
ইউএসবি কানেক্টর পিন যা থেকে ইউএসবি পোর্টে সংযোগ যায় -
ইউএসবি কানেক্টর জ্যাক -
সিরিয়াল পোর্ট ও প্যারালাল পোর্ট: আগে এই পোর্ট গুলোর ব্যাবহার ছিল। প্রিন্টার, ক্যামেরা, মডেম, মাউস ইত্যাদি পিসি এর সাথে কানেক্ট করতে এই পোর্টগুলো ব্যাবহার করে হত।
এই হল সিরিয়াল পোর্ট -
আর এটা প্যারালাল পোর্ট -
পিএস/টু পোর্ট: আইবিএম কম্পিউটার এর প্রবর্তিত Personal System/2 নামের এই পোর্টের সাহায্যে মাউস ও কিবোর্ডকে মাদারবোর্ড এর সাথে যুক্ত করা হয় এবং সাউথব্রিজ তাদের কন্ট্রোল করে। এটা ৬ পিন বিশিষ্ট হয়।
এছাড়াও মাদারবোর্ড এ ইন্টিগ্রেটেড সাউন্ড বা নেটওয়ার্ক ডিভাইস থাকলে অডিও, ল্যান ইত্যাদি আউটপুট থাকে। আরো থাকে প্রসেসর আর সিস্টেম কুলিং ফ্যানের পাওয়ার সকেট। এগুলো আলদা আলাদা ডিভাইস বলে এখানে আলোচনা করা হল না।
বায়োস: Basic Input Output System থেকেই এসেছে BIOS. বায়োস হল ছোট্ট একটা মেমরি চিপ যেখানে কম্পিউটারের জন্য প্রয়োজনীয় সকল তথ্য জমা থাকে। বায়োসের আসল কাজ হল মাদারবোর্ড এ পাওয়ার পাওয়ার সাথে সাথে POST এর মাধ্যমে সকল পেরিফেরাল চেক করে অপারেটিং সিস্টেম চালু করা এবং তার কার্নেলের সাথে সকল পেরিফেরালের সংযোগ বজায় রাখা। POST মানে হল Power On Self Test. কিছুদিন আগেই কেউ কেউ হয়ত খেয়াল করেছেন যে পিসি চালু হওয়ার সময় হাবিজাবি লেখা আসে, তারপর ওএস চালু হয়। এটা আসলে সেই টেস্ট। বায়োস কোন এরর থাকলে তা ডিটেক্ট করে বিপ টোনের মাধ্যমে ইউজারকে জানিয়ে দিতে পারে। মোটকথা বায়োস হল মাদারবোর্ডের সকল পেরিফেরালের পাহারাদার।
বায়োস রম-চিপ দেখতে এরকম -
ফর্ম ফ্যাক্টর: মাদারবোর্ড একটা কেসিংএর মাঝে লাগানো থাকে। একারণে মাদারবোর্ড নির্মানকারী কোম্পানীকে অবশ্যই নির্দিষ্ট সাইজ এর বোর্ড তৈরী করতে হয়। নাতো সেগুলো কেসিংএ লাগানো সম্ভব হবেনা। এই কারণে পিসিবি বোর্ড যে সাইজ বা নিয়ম মেনে তৈরী করা হয় তাকে বলা হয় ফর্ম ফ্যাক্টর। বিভিন্ন সাইজ এর ফর্ম ফ্যাক্টর রয়েছে। তার মাঝে সবচেয়ে পরিচিত হল AT, ATX আর microATX.
AT – ১৯৮৪ সালে আইবিএম এই সাইজ মডেল হিসেবে নেয়। এই ফ্যাক্টরে পিসিবি এর সাইজ হয় দৈর্ঘ্যে ১২ ইঞ্চি আর প্রস্থে ১১-১৩ ইঞ্চি।
ATX – এই মডেলের প্রতিষ্ঠাতা ইনটেল। ১৯৯৬ সালের এই ফ্যাক্টর অনুযায়ী এখনও বোর্ড তৈরী হচ্ছে। এখানে দৈর্ঘ্য হয় ১২ ইঞ্চি আর প্রস্থ হয় ৯.৬ ইঞ্চি।
microATX – মাত্র ৯.৬ বর্গইঞ্চি ক্ষেত্রফলের এই বোর্ড বরাবরের চেয়ে ২৫% ছোট হওয়ায় খুব কম জায়গা দখল করে। এটা ২০০৭ সালের পর থেকে বেশ জনপ্রিয় হয়েছে।
এছাড়া mini-ITX, mobile-ITX, pico-ITX, DTX, mini-DTX ইত্যাদি বিভিন্ন সাইজের ফর্ম ফ্যাক্টর রয়েছে।
এই হল AT ফর্ম ফ্যাক্টর -
এটা micro-ATX ফ্যাক্টর -
আর এটা চমৎকার দেখতে mini-ITX ফ্যাক্টর -
খুব ছোট্ট পিসি এর জন্য pico-ITX ফ্যাক্টর দেখতে এরকম -
এএইচসিআই: Advanced Host Controller Interface থেকেই AHCI এসেছে। অনেকেই বায়োসে এই শব্দটি দেখে থাকবেন। এটা হল সাটা ড্রাইভ কে হট-সোয়াপেবল করে তোলে এবং নেটিভ কমান্ড কিউইং সুবিধা দিয়ে থাকে। হট সোয়াপ মানে হল সিস্টেম চলাকালে সিস্টেম অফ না করেই ডিভাইস খুলে ফেলা যায়। এই সুবিধার কারণে ডিস্ক অনেক বেশি নিরাপদ থাকে। তবে AHCI অ্যাকটিভেট করতে হলে ড্রাইভার প্রয়োজন হয়। উইন্ডোজ ৭ আর লিনাক্স ২.৬.১৩ এর পরের কার্ণেলে এই ড্রাইভার দেওয়া থাকে। এই কারণে অনেকে AHCI মোডে উইন্ডোজ এক্সপি সেটআপ করতে যেয়ে No disk found এরর মেসেজ দেখেন।
ল্যাপটপ এর মাদারবোর্ড
এই হল মাদারবোর্ড এর বিস্তারিত। বেশ কিছু বিষয় আছে যেগুলো একসাথে বর্ণনা করলে টিউন বিশাল হয়ে যাবে। আস্তে আস্তে বাকি যে সকল বিষয়ে টিউন করা হবে – পাওয়ার সাপ্লাই, প্রসেসর, ভিডিও কার্ড, র্যাম, হার্ডডিস্ক, অপ্টিকাল ডিস্ক, ইউএসবি, সাউন্ড কার্ড, নেটওয়ার্ক ডিভাইস, বিভিন্ন পোর্ট, কীবোর্ড, মাউস, মনিটর ইত্যাদি।
আপনার মাদারবোর্ড এর বিভিন্ন তথ্য জানতে ডাউনলোড করে নিন CPU-Z সফটওয়্যারটি। ইন্সটল করে Motherboard ট্যাবে দেখুন কি কি তথ্য আছে -
আমি আগেই গ্রাফিক্স কার্ড নিয়ে টিউন করে ফেলেছিলাম। চাইলে দেখে নিতে পারেন এই টিউন থেকে।
আমি মো মিনহাজুল হক। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 7 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 22 টি টিউন ও 2958 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 6 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
ভাল উদ্যোগ চালিয়ে যান… ভাল টিউন উপহার দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।