আমরা সকলেই কম্পিউটার কিনতে যেয়ে যে জিনিসটির প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেই তা হল গ্রাফিক্স কার্ড। যারা সময়মত গুরুত্ব দেন না, তারা পরবর্তীতে সাধের গেমগুলো খেলতে না পেরে এই ব্যাপারে মনোনিবেশ করেন। প্রযুক্তির দিন দিন উন্নতির কারণে তৈরী হচ্ছে নতুন নতুন অ্যাপ্লিকেশান বা গেমস। এসব চালাতে হলে ভালো মানের গ্রাফিকস কার্ড কেনার বিকল্প নেই। আজ আমি গ্রাফিক্স কার্ড এর সাথে জড়িত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে টিউন করছি। চলুন শুরু করে দেই।
গ্রাফিক্স কার্ড হল মাদারবোর্ড এর সাথে সংযুক্ত এমন একটি ডিভাইস যেটা এক বা একাধিক মনিটরে দেখার জন্য ভিডিও আউটপুট তৈরী করে, এবং অন্যান্য ডিভাইস যেমন ক্যাপচার কার্ড, টিভি, হোম থিয়েটার, মিউজিক সিস্টেম ইত্যাদি এ ভিডিও দেখানোর কাজে সাহায্য করে। আজকাল গ্রাফিক্স কার্ড এর সাথে ইন্টিগ্রেটেড সাউন্ড ডিভাইস থাকে। ফলে ভিডিও এর পাশাপাশি অডিও আউটপুটও পাওয়া যায়।
আগেই বলেছি যে এটা ভিডিও আউটপুট দিয়ে থাকে। এই কাজের জন্য সকল গ্রাফিক্স কার্ডে থাকে একটি ‘কোর ক্লক’ যেটা মাদারবোর্ড এর আসল প্রসেসরের মতই কাজ করে এবং নিজস্ব ফ্রিকোয়েন্সি রয়েছে। এটাকে বলা হয় GPU বা Graphics Processing Unit. এর স্পীড ২৫০ মেগাহার্টজ থেকে ৪ গিগাহার্টজ পর্যন্ত হয়ে থাকে। এই GPU যেকোন ছবিকে প্যারালাল পদ্ধতিতে পিক্সেলের পর পিক্সেল আকারে সাজিয়ে ছবি তৈরী করে। পিক্সেল (Picture থেকে Pix আর Element থেকে el নিয়েই Pixel) হল যেকোনো ছবির ক্ষুদ্রতম অংশ যার নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে, এবং তা লাল, নীল আর সবুজ ডট বা ফোঁটার সমন্বয়ে গঠিত।
মাদারবোর্ড এর বায়োসের মতই গ্রাফিক্স কার্ড এর বায়োস অন্যান্য ডিভাইস ও অপারেটিং সিস্টেম এর কার্নেলের সাথে সংযোগ রক্ষা করে। এখানে কার্ডের ভোল্টেজ, মেমরি, ফ্যান স্পীড ইত্যাদি নিয়ে সেটিংস দেওয়া থাকে। অবশ্য এগুলো পরিবর্তন করে আরো বেশী পারফরমেন্স পাওয়া সম্ভব।
র্যামের মতই গ্রাফিক্স কার্ডেও মেমরি থাকে যেটাকে ভিডিও মেমরি বলা হয়। বর্তমানে DDR ধরনের মেমরি নিয়ে গ্রাফিক্স কার্ড তৈরী করা হচ্ছে। DDR মানে হল Double Data Rate. অর্থাৎ গ্রাফিক্স কার্ডটি কি হারে ডাটা আদান প্রদান করবে তা নির্ভর করে এই মেমরি এর উপর। বিভিন্ন ধরনের মেমরি লেআউট রয়েছে। যেমন DDR, DDR2, GDDR3, GDDR3, GDDR5. মেমরির সাথে ক্লক স্পীডের সম্পর্ক আছে। নিচের ছকে দেখে নিন কোন ধরনের মেমরিতে ক্লক স্পীড আর ডাটা রেট কত।
গ্রাফিক্স কার্ডের বাকি যা থাকে তা হল ভিডিও দেখানোর একটা ব্যাবস্থা। অর্থাৎ ভিডিও আউটপুট কোন মনিটর বা ডিসপ্লে ডিভাইস এ পাঠানোর উপায়। বিভিন্ন ইন্টারফেস আছে যার মাধ্যমে এটা করা হয়। চলুন দেখে নিই কিভাবে –
১. ভিজিএ:
এটা Video Graphics Array এর ছোট্ট ফর্ম। এটা বহুল ব্যাবহৃত আর জনপ্রিয় একটি ইন্টারফেস। ১৫ পিন বিশিষ্ট সকেটের মাধ্যমে ভিডিও পাঠানো হয়। এটা RGB এর মাধ্যমে সিগনাল প্রেরণ করে। ছবিটা দেখলেই চিনতে পারবেন।
২. এইচডিএমআই:
সম্প্রতি এটা খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কারন ক্ষুদ্র পোর্ট আর হাইডেফিনিশান আউটপুটের কারনে। প্রায় সকল গ্রাফিক্স কার্ডে অন্তত একটি এইচডিএমআই পোর্ট থাকে। High-Definition Multimedia Interface কে HDMI বলা হয়। ছবি দেখুন।
৩. ডিভিআই:
Digital Visual Interface থেকেই ডিভিআই এসেছে। এটা ২৪ পিন বিশিষ্ট পোর্ট যা নয়েজ ছাড়া ছবি দেখাতে ব্যাবহৃত হয়। সকল এলসিডি ও এলইডি মনিটরে এটা থাকে কারণ ডিভিআই দিয়ে ফ্ল্যাট স্ক্রিনে ছবি অনেক ভালো দেখা যায়। এটা দেখতে এরকম।
৪. এস-ভিডিও:
Separated Video থেকেই বলা হয় এস-ভিডিও। বিভিন্ন ডিভিডি প্লেয়ার, টিভি ইত্যাদি এ ভিডিও দেখানোর জন্য এটা জনপ্রিয়। তবে আধুনিক গ্রাফিক্স কার্ডে এইচডিএমআই এর প্রসারের কারণে এটা আর ব্যবহার করা হয়না। এর পোর্ট দেখতে এরকম –
কোর ক্লক খুব বেশি গরম হয়ে যাওয়ার কারণে ঠান্ডা করতে হিট সিঙ্ক বা ফ্যান ব্যাবহৃত হয়। হাই-এন্ড পিসি তে ঠান্ডা করতে লিকুইড কুলিং সিস্টেম ব্যাবহৃত হয়। কিছু কার্ডে পাওয়ার দেওয়ার জন্য আলাদা কানেক্টর থাকে। এখানে পাওয়ার সাপ্লাই থেকে জ্যাক লাগানো হয়। লিকুইড কুলিং সিস্টেম দেখতে এরকম –
প্রথমদিকে ১৯৯৩ সালের দিকে গ্রাফিক্স কার্ড মাদারবোর্ড এ যে সকেটে লাগানো হত তার নাম ছিল পিসিআই বা Peripheral Component Interconnect. এটা প্যারালাল পদ্ধতিতে কাজ করত। পরে ইন্টেল ১৯৯৭ এ AGP (Accelerated Graphics Port) নামে পোর্ট তৈরী করে। এটা প্যারালাল পদ্ধতিতে কাজ করতে বলে অনেক ধীরগতির ছিল। অনেকে গ্রাফিক্স কার্ডকে এজিপি কার্ড বলেন যা সম্পুর্ণ ভুল কারণ এজিপিতে ৩টা খাঁজ থাকত আর বর্তমানে পিসিআই গ্রাফিক্স কার্ডে ২টা খাঁজ থাকে। ২০০৪ এর পর বাজারে নতুন পোর্টযুক্ত মাদারবোর্ড আসে যাকে পিসিআই-ই বলা হয়। PCI-e এর ফুল ফর্ম PCI-Express. উল্লেক্ষ্য যে PCIe পোর্টে শুধু গ্রাফিক্স কার্ড না, অন্যান্য সাউন্ড কার্ড, ল্যান কার্ড, ওয়াইফাই কার্ডও লাগানো হয়। একারণে অনেক মাদারবোর্ড এ একাধিক PCIe স্লট থাকে।
নিচের ছকে দেখে নিন বিভিন্ন এজিপি, পিসিআই আর পিসিআই-ই এর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য -
পিসিআই-ই এর পরে x বসিয়ে কার্ডের পিন সংখ্যা আর দৈর্ঘ্য বোঝানো হয়। নিচের ছক দেখুন।
এই দেখুন বিভিন্ন ধরনের পিসিআই স্লট -
গ্রাফিক্স কার্ড হল বিশিষ্ট পাওয়ার খাদক। যাদের ভালো গ্রাফিক্স কার্ড আছে তারা ভালো জানেন যে এটা কী পরিমাণ এনার্জি খায় এবং গরম হয়। গ্রাফিক্স কার্ড থেকে ভালো আউটপুট পেতে অবশ্যই ভালো মানের পাওয়ার সাপ্লাই ব্যবহার করা প্রয়োজন। মনে রাখা দরকার যে কেসিং এর সাথে যে পাওয়ার সাপ্লাই ইউনিট দেওয়া থাকে সেটা কখনোই আসল নয়। জেনে রাখুন যে ৪০০ ওয়াটের পাওয়ার সাপ্লাইয়ের দাম কয়েক হাজার টাকা। সেখানে একটা কেসিং মাত্র দেড় বা দুই হাজার টাকা দামের হয়। ভাল ব্র্যান্ডের যেমন থার্মালটেক এর পাওয়ার সাপ্লাই ব্যবহার করলে ভালো হবে। নিচের ছবিটা দেখুন গ্রাফিক্স কার্ড এতটাই গরম হয় যে ডিমও সেদ্ধ হয়ে যাচ্ছে।
বলতে গেলে প্রতিটা মাদারবোর্ডেই বিল্ট-ইন জিপিইউ থাকে। এটা আসলে প্রসেসরের কিছু অংশ ব্যবহার করে ভিডিও প্রসেস করতে। আর ফিজিকাল র্যামের একটা অংশ ব্যবহার করে ভি-র্যাম হিসেবে। এটার কোর ক্লক স্পীড খুবই কম হয়। এই গ্রাফিক্স কার্ড দিয়ে চলার মত সকল কাজ করা গেলে কখনোই রিচ-অ্যাপ্লিকেশান চালানো সম্ভব নয়। তাই কম ক্ষমতার হলেও আলাদা গ্রাফিক্স কিনে নেওয়াই উত্তম।
ভেবে অবাক হবেন যে গ্রাফিক্স কার্ড নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অনেক। কি ভাবছেন? আজ পর্যন্ত এটিআই, এনভিডিয়া আর ইন্টেল এইচডি গ্রাফিক্স ছাড়া তো কিছুই শুনলাম না, এটা কি ধরনের কথা? আসলে আমি আপনি দুজনই সঠিক। জিপিইউ বা প্রসেসর চিপ তৈরী করে মুলত এএমডি, এনভিডিয়া আর ইনটেল। সেটাকে কাজে লাগিয়ে কার্ড বানায় এটিআই, এমএসআই, আসুস, বায়োস্টার, ফক্সকন, গিগাবাইট, এক্সএফএক্স, স্যাফায়ার ইত্যাদি কোম্পানি।
এএমডি: ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানি বাজারে অনেক এগিয়ে আছে তাদের অত্যাধুনিক ডিভাইসগুলোর কারণে। গত বছরগুলোতে মার্কেটে এদের শেয়ার তুলনামূলকভাবে বেড়েছে। এরা মাইক্রোপ্রসেসর, চিপসেট, জিপিইউ ইত্যাদি তৈরী করে বাজারে বেশ সুনাম গ্রহন করেছে। সবার আগে ৬৪-বিট প্রসেসর তৈরীর কৃতিত্বস্বরুপ amd64 মডেল আজো পরিচিত।
এনভিডিয়া: নতুন কিন্তু খুব দ্রুত বাজারে নামডাক ফেলে দেওয়া এই কোম্পানি ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। শুধুমাত্র জিপিইউ তৈরীতে এদের জুড়ি শুধু এএমডি নিজেই। বিভিন্ন ফ্যামিলির এবং অনন্য ফিচারের কারণে এদের ভিডিও কার্ড সুপরিচিত।
ইনটেল: চিপ জায়ান্ট নামে খ্যাত এই কোম্পানি ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ভিডিও এক্সিলারেটর, মাদারবোর্ড, প্রসেসর, নেটওয়ার্ক ডিভাইস ইত্যাদি তৈরীতে ইনটেল সুপরিচিত। এদের তৈরী ভিডিও চিপসেট বিল্ট-ইন গ্রাফিক্স হিসেবে সকল ব্র্যান্ডের কম্পিউটার, ল্যাপটপে বহুলভাবে ব্যাবহৃত হয়।
যাদের ল্যাপটপে ডিসক্রিট জিপিইউ আছে তারা জানতে চান না যে মোবাইল গ্রাফিক্স কার্ড কেমন হয়? এই দেখুন -
আর যাদের কোনোটাই নেই, অর্থাৎ বিল্ট-ইন, তারা মন খারাপ করবেন না। ইনটেল গ্রাফিক্স মিডিয়া এক্সিলারেটর চিপটি দেখতে এরকম -
মাল্টি-জিপিইউ সহ মাদারবোর্ডগুলো দেখতে এরকম -
জানতে চান আপনার গ্রাফিক্স কার্ডের ক্লক স্পীড, মেমরি, ট্রানজিস্টর সংখ্যা, মেমরি টাইপ ইত্যাদি বিভিন্ন তথ্য? এক্ষুণি ডাউনলোড করে নিন নিচের সফটওয়্যারটি।
আর উইন্ডোজ ব্যবহারকারীরা ডেক্সটপে গ্রাফিক্স কার্ড এর ক্লক স্পীড, মেমরি ফ্রিকোয়েন্সি, ফ্যান স্পীড ইত্যাদি তথ্য জানতে চাইলে ডাউনলোড করে নিন GPU Meter নামের গ্যাজেটটি।
আমি মো মিনহাজুল হক। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 7 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 22 টি টিউন ও 2958 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 6 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
Ek kothai awesome. Many many thanks. Ekta proshno 4 theke 5 hazar er modhe kon card ta sobche valo hobe? ektu jodi boten