ইন্টারেকটিভ হোয়াইটবোর্ড হচ্ছে সর্বপ্রথম ব্ল্যাকবোর্ড আবিষ্কারের মতোই একটি প্রযুক্তিগত সাফল্য। যা মাল্টিমিডিয়া ও বিভিন্ন তথ্যের সমন্বয়ে শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা করেছে। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিক্ষা পদ্ধতিকে শিশুদের জন্য আরও আকর্ষণীয ও কার্যকর করা সম্ভব হয়েছে।
ইন্টারেক্টিভ হোয়াইট বোর্ড হচ্ছে সাধারন ব্ল্যাকবোর্ড বা হোয়াইট বোর্ডের উন্নত রূপ যা সরাসরি টাচ স্ক্রিন প্যাডের মতো বা অন্যান্য ডিভাইস যেমন—কম্পিউটার বা মোবাইল এর মাধ্যমে ব্যবহার করা যায়। শুধু তাই নয় এটা ব্যবহার করে কম্পিউটারের প্রজেক্টেড স্ক্রীনও নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ইন্টারেকটিভ হোয়াইট বোর্ড ক্লাসরুম ছাড়াও কর্পোরেট মিটিং রুম, ট্রেনিং রুম, ব্রডকাস্টিং স্টুডিওতে ব্যবহার করা যায়।
ইন্টারেক্টিভ হোয়াইটবোর্ড প্রথম ১৯৯০ সালে অফিসে ব্যবহারের জন্য ক্যালিফোর্নিয়ার PRAC তৈরি করেছিলো, যা ছোট পরিসরে মিটিং ও গোল টেবিল বৈঠকে ব্যবহার করা হতো।
ইন্টারেক্টিভ হোয়াইটবোর্ড যদিও প্রথমে শুধু মিটিং রুমে বৈঠকে ব্যবহার করা হলেও পরবর্তীতে ক্লাসরুমেও ব্যবহার শুরু হয়। বর্তমানে ইন্টারেক্টিভ হোয়াইটবোর্ড সাধারণ ব্ল্যাকবোর্ড এর জায়গা দখল করে নিয়েছে।
ইন্টারেক্টিভ হোয়াইট বোর্ডের পেছনের প্রযুক্তিটি অত্যন্ত চমৎকার। এটি ইউএসবি ক্যাবলের মাধ্যমে কম্পিউটারের সাথে যুক্ত থেকে প্রয়োজনীয় পাওয়ার পায়। এর ড্রাইভার (কম্পিউটারের সাথে অন্যান্য হার্ডওয়্যারের সমন্বয়কারী সফট্ওয়্যার) কম্পিউটার চালু হওয়ার সাথে সাথেই কাজ শুরু করে ইন্টারেকটিভ হোয়াইট বোর্ড কে সচল করে। একটি ডিজিটাল প্রজেক্টর কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত এবং ইন্টারেক্টিভ হোয়াইটবোর্ডে কম্পিউটারে প্রদর্শিত চিত্রটি প্রজেক্ট করে। এর দুর্দান্ত ফিচার ব্যবহারকারীকে আঙ্গুলের মাধ্যমে ইন্টারেক্টিভ ডক ফাইলে লিখতে এবং এক্সেল স্প্রেডশিট, পাওয়ারপয়েন্ট স্লাইড বা স্মার্ট নোটবুকের মতো অ্যাপ্লিকেশনগুলিতে লিখারও সুযোগ দেয়।
ইন্টারেক্টিভ হোয়াইটবোর্ড ডিসপ্লে
ইন্টারেক্টিভ হোয়াইটবোর্ড ব্যবহার করে শিক্ষকরা ক্লাসের বিষয়গুলিকে আরো ভালোভাবে উপস্থাপন করতে পারেন। বিভিন্ন রকমের মাল্টিমিডিয়া যেমন ইন্টারনেট থেকে ছবি, মাইক্রোসফট ওয়ার্ড থেকে টেক্সট, স্প্রেডশিট থেকে গ্রাফ, ইত্যাদির সমন্বয়ে প্রাণবন্ত উপস্থাপন করা সম্ভব। ইন্টারেক্টিভ হোয়াইটবোর্ড চিরাচরিত চক-বোর্ড অথবা প্রজেক্টর-বোর্ডের তুলনায় আরো ভালোভাবে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ আকর্ষণে সক্ষম। তাছাড়া, কম্পিউটারের ছোট স্ক্রীনের বদলে ইন্টারেক্টিভ হোয়াইটবোর্ডের বড় ডিসপ্লে শিক্ষার্থীদের ভালোভাবে নিজের জায়গায় স্বাচ্ছন্দ্যে বসেই দেখতে সাহায্য করে। যার ফলে, শিক্ষার্থীদের ভিড় বা ধাক্কাধাক্কি করতে হয় না যা একজন শিক্ষকের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাড়ায়।
ক্লাস রেকর্ড
ইন্টারেকটিভ হোয়াইটবোর্ডের একটি অন্যতম সুবিধা হলো এর মাধ্যমে ক্লাসের লেকচার রেকর্ড করা যায়, যা শিক্ষাক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে সফটওয়্যারের মাধ্যমে নোট ও সহজে উপস্থাপন করা যায়। এই ফিচারটি ব্যবহার করে শিক্ষকরা তাদের নোট এবং লেকচার রেকর্ড করে রাখতে পারবেন। ইন্টারেকটিভ হোয়াইটবোর্ড শিক্ষার্থীদের নিজেকে উপস্থাপন করতেও উৎসাহ-উদ্দীপনা যোগায় যা তাকে ভবিষ্যতে কাজে লাগে। এছাড়াও, শিক্ষক তার লেকচার এবং ক্লাস এক্টিভিটি সেভ করে তা প্রিন্ট করে শিক্ষার্থীদের দিতে পারেন। অনেক ইন্টারেকটিভ হোয়াইটবোর্ডেই সফটওয়্যারের মাধ্যমে এই সুবিধাগুলো পাওয়া যায়।
ইন্টারনেট রিসোর্স
ইন্টারেক্টিভ হোয়াইটবোর্ডের মাধ্যমে ইন্টারনেটে প্রবেশ করে এর বিপুল পরিমাণ রিসোর্স থেকে বিভিন্ন ফাইল যেমন- ফ্ল্যাশ ফাইল, জি. আই. এফ ইমেজ, ইনফো-গ্রাফ নিয়ে শিক্ষকরা ব্যবহার করতে পারেন। যার ফলে শিক্ষার কার্যকারীতা বাড়ানোর পাশাপাশি পরিশ্রম ও সময় উভয়ই সাশ্রয় করে। শিক্ষার্থীর যেকোন প্রশ্নের উত্তর শিক্ষক তাৎক্ষণিক গুগল সার্চের করে অডিও, ভিডিও, ছবির মাধ্যমে দিতে পারবেন।
চমৎকার শিখন পদ্ধতি
শিক্ষাক্ষেত্রে ইন্টারেক্টিভ হোয়াইটবোর্ড এক অসাধারণ শিখন-পদ্ধতি উপযোজন করেছে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা একই সাথে শুনতে পারে, দেখতে পারে অথবা নিজের হাতের আঙ্গুলের মাধ্যমে ইন্টারেকটিভ হোয়াইডবোর্ড ব্যবহার করতে পারে যার মাধ্যমে তারা আনন্দের সাথে ও কার্যকরীভাবে কোন কিছু শিখতে পারে। এই অসাধারণ পদ্ধতির সুবিধা শিক্ষাক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী সংযোজন।
ইন্টারেকটিভিটি
ইন্টারেক্টিভ হোয়াইপবোর্ডের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা চমৎকার ভাবে গ্রুপ এক্টিভিটিতে যোগদান করতে পারে ফলে তারা একে অন্যের সাথে মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে কাজের ফলাফল অনুযায়ী এক্টিভিটির ভুল গুলো সংশোধন করতে পারে। শিক্ষক তাদের কাজের মূল্যায়ন সঠিক ভাবে করতে পারেন এবং ক্লাসের অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও তাদের মতামত জানাতে পারে। এভাবে একটি মিথস্ক্রিয়াপূণৃ শিক্ষার পরিবেশ গড়ে উঠে।
সংরক্ষণ
ইন্টারেক্টিভ হোয়াইটবোর্ডের অন্যতম একটি সুবিধা হচ্ছে, এর মাধ্যমে লেকচার, নোট ও আলোচনা গুলো সংরক্ষণ করে রাখা যায়। যা পরবর্তীতে খুব সহজেই ব্যবহার করা যায়। আগের ক্লাসের সংরক্ষিত লেকচার ও কন্সেপ্ট গুলো দেখে নিয়ে একজন শিক্ষার্থী তা আবার রিভিশন করতে পারে। তাছাড়া, কোন কারণে ক্লাসে অনুপস্থিত শিক্ষার্থী আগের ক্লাসে পড়ানো বিষয় গুলো জেনে নিতে পারে।
গেমস
ইন্টারেক্টিভ হোয়াইটবোর্ড শিক্ষা সংশ্লিস্ট গেমিং সুবিধাও প্রদান করে। এতে Rearranging Jumbled Text/ Objects এর মতো গেম ড্র্যাগ এন্ড ম্যাচ এর মাধ্যমে খেলা যায়। বিশেষ করে শিশুরা এই সমস্ত গেমের মাধ্যমে আনন্দের সাথে শিখতে পারে। শিক্ষকরা এই ধরনের গেম তৈরী করতে পারেন যাতে তা কার্যকরী শিক্ষার মাধ্যম হয়।
ইন্টারেক্টিভ হোয়াইটবোর্ড হচ্ছে ক্লাসরুমের জন্য একটি সাশ্রয়ী উপকরণ যার মাধ্যমে শুধুমাত্র একটি কম্পিউটার দিয়েই পুরো ক্লাসরুম কভার করা যায়। ফলে অনেক খরচ বাচানো যায়। অত্যাধুনিক সুবিধার জন্য বাংলাদেশে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখন ইন্টারেক্টিভ হোয়াইটবোর্ডের দিকে ঝুকছে। বাজারে বিভিন্ন সুবিধা সম্বলিত ইন্টারেক্টিভ হোয়াইটবোর্ড পাওয়া যায়। ইন্টারেক্টিভ হোয়াইটবোর্ড এর ধরন অনুযায়ী দাম বিভিন্ন হয়।
আমি Daniel Mujib। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 3 বছর 12 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 1 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।