গেমিং কম্পিউটার বানানোর জন্য সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ হচ্ছে গ্রাফিক্স কার্ড। আপনার গেমিং কম্পিউটারের জন্য সবথেকে উপযুক্ত গ্রাফিক্স কার্ডটি কিভাবে বাছাই করবেন সেই ব্যাপারে কিছু আলোচনা করবো। এখানে সংক্ষেপে ৫ টি জিনিসের উপর আলোচনা করবো যেগুলো জানা থাকলে আপনি খুব সহজেই আপনার কম্পিউটারের জন্য উপযুক্ত গ্রাফিক্স কার্ডটি বাছাই করতে পারবেন।
NVIDIA বনাম AMD
গ্রাফিক্স কার্ড কেনার আগে প্রথমেই যেটি জানা দরকার সেটি হচ্ছে মাত্র ২ টি Graphics Proccesing Unit (GPU) প্রস্তুতকারী কোম্পানি আছে, সেগুলো হচ্ছে NVIDIA ও AMD। এই দুইটি কোম্পানিই অন্যান্য কোম্পানি যেমন ASUS, Gigabyte, EVGA, MSI এর মত কোম্পানিগুলোকে এদের পণ্য বিক্রি করার জন্য লাইসেন্স প্রদান করে থাকে। এই কোম্পানি গুলোই গ্রাফিক্স কার্ডের বিভিন্ন রকম সেবা যেমন Colling system, Clock rates বা Software দিয়ে থাকে। তাই গ্রাফিক্স কার্ডের GPU একই হলেও এই সমস্ত কোম্পানির উপর ভিত্তি করে এই যন্ত্রাংশের ভিন্নতা হতে পারে। তাই আপনি যদি প্রথম থেকেই কোন GPU কোম্পানির গ্রাফিক্স কার্ড কিনবেন সেটা ঠিক না করে থাকেন, তাহলে আপনার বাজেটের উপর ভিত্তি করে সব থেকে ভাল কাজ করে যেই গ্রাফিক্স কার্ড সেইটাই কেনা উচিত। তবে এই দুইটি কোম্পানির মধ্যে NVIDIA এর গ্রাফিক্স কার্ডকে তুলনামূলক ভাল বলে বিবেচনা করা হয়।
আপনি যদি ঠিক করে থাকেন কোন GPU কোম্পানির গ্রাফিক্স কার্ড কিনবেন, তারপরে আপনাকে ঠিক করতে ASUS, Gigabyte, EVGA, MSI এই ধরনের কোম্পানি যারা ওই দুই GPU কোম্পানির গ্রাফিক্স কার্ড বিক্রি করে তাদের মধ্যে কোনটা পছন্দ করবেন। তবে এক্ষেত্রেও বলা ভাল যে আপনার বাজেটের উপর ভিত্তি করে একটা পছন্দ করতে হবে কারন প্রায় সব কোম্পানির গ্রাফিক্স কার্ডই প্রায় একই রকম। তবে এক্ষেত্রে সব থেকে ভাল হবে উপরোক্ত কোম্পানির মধ্যে যেটার দাম কম সেটাই কেনা কারন দাম নির্ভর করে Colling system এবং Clock rates এর কার্যক্ষমতার উপরে। তবে সবসময় এই দুইটি জিনিস আপনার গেম খেলার অভিজ্ঞতায় খুব বেশি পার্থক্য তৈরি করতে পারবে এমন নয়।
আপনি কি ধরনের গেম খেলেন?
আপনি কি ধরনের গ্রাফিক্স কার্ড কিনবেন সেটা অনেকটাই নির্ভর করবে আপনি কি ধরনের গেম খেলেন তার উপরে। সাধারন হিসাব হচ্ছে, আপনার গেম যদি খুব বেশি গ্রাফিক্স নির্ভর হয় তাহলে অবশ্যই আপনাকে ভাল গ্রাফিক্স কার্ড কিনতে হবে। যেমন ধরেন, আপনি যদি The Witcher 3, PUBG, Battlefield 1 এর মত গেম খেলেন তাহলে আপনাকে অবশ্যই ভাল গ্রাফিক্স কার্ড কিনতে হবে কিন্তু League of Legends, Dota 2, Minecraft এই ধরনের গেম খেলার জন্য অত ভাল গ্রাফিক্স কার্ড না হলেও চলবে। তাই প্রথম দিকে আপনি কম দামের টা কিনে কিছু টাকা বাঁচাতে পারেন।
মনিটরের Resulation/ Refresh rate
আপনি কি ধরনের গেম খেলছেন তার পাশাপাশি এটাও খেয়াল করা দরকার যে আপনি যে গেম খেলছেন সেটার রেজুলেশন কেমন। যদিও এখন বেশিরভাগ গেমেরই রেজুলেশন অনেক ভাল থাকে। যদি আপনি আপনার গেমিং কম্পিউটার দিয়ে 4K মনিটরে গেম খেলতে চান তাহলে অবশ্যই আপনাকে ভাল মানের গ্রাফিক্স কার্ড কিনতে হবে। কিন্তু আপনি যদি সাধারন 1080P মনিটরে খেলতে চান তাহলে কিছুটা কম দামের টা আপনি ব্যবহার করতে পারেন। তবে আপনার যদি ভবিষ্যতে ভাল মানের মনিটর কেনার ইচ্ছা থাকে তাহলে এখনই ভাল গ্রাফিক্স কার্ড কিনে ফেলতে পারেন। মনিটরের রেজুলেশন এর পাশাপাশি মনিটরের রিফ্রেশ রেটের উপরেও নির্ভর করবে আপনি কি ধরনের গ্রাফিক্স কার্ড কিনবেন। যেই মনিটরের রিফ্রশ রেট যত ভাল সেই মনিটরে গেম তত স্বচ্ছন্দে খেলতে পারবেন। সেজন্য যারা প্রতিযোগিতাই অংশগ্রহণের জন্য গেম খেলেন তাদের মনিটরের রিফ্রেশ রেট অবশ্যই ভাল হতে হবে। সেজন্য আপনি যখন গ্রাফিক্স কার্ড কিনবেন তখন খেয়াল করতে হবে আপনার গ্রাফিক্স কার্ডটি যেন মনিটরের রেজুলেশন ও রিফ্রেশ রেটের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।
Power supply ও Case এর সাথে সামঞ্জস্যতা
যখন গ্রাফিক্স কার্ড এর সামঞ্জস্যতার কথা বলা হয় তখন প্রথম যে জিনিস গুলোর কথা বলতে হয় সেটা হচ্ছে Power supply ও কম্পিউটার এর Case। অন্য অনেক যন্ত্রাংশ আছে যেগুলো নিয়ে সমস্যা হতে পারে তবে সেগুলো খুব কম হয় অনেক ক্ষেত্রে নাও হতে পারে। কম্পিউটারের মধ্যে গ্রাফিক্স কার্ড সব থেকে শক্তি খরচ করে থাকে সুতরাং পাওয়ার সাপ্লাই কেনার সময় খেয়াল রাখতে হবে সেটা যেন গ্রাফিক্স কার্ড এর চাহিদা পূরণ করতে পারে। সেজন্য প্রথমে দেখে নিতে গ্রাফিক্স কার্ড চালানোর জন্য ন্যূনতম কত ওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন। তার থেকে বেশি বিদ্যুৎ সাপ্লাই করতে পারে এমন পাওয়ার সাপ্লাই কেনা উচিত। গ্রাফিক্স কার্ড টি কম্পিউটারের কেসের ভিতরে ঠিকমত বসবে কিনা সেটাও দেখে নেয়া উচিত। সাধারণত ছোট আকারের কেস যেমন mini-ITX cases অথবা micro-ATX cases এর ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেজন্য গ্রাফিক্স কার্ডের দৈর্ঘ্য দেখে নিতে হবে, তারপরে কেসে গ্রাফিক্স কার্ড রাখার জন্য কত জায়গা আছে সেটা দেখে নিয়েই কেনা উচিত।
ভারসাম্য রক্ষা করা
সাধারণত প্রথমবার কম্পিউটার প্রস্তুত করার সময় যে ভুলটা সব থেকে বেশি হয় সেটা হচ্ছে খরচের ভারসাম্য রক্ষা করা হয় না। অন্যান্য যন্ত্রাংশের থেকে গ্রাফিক্স কার্ডের পিছনে কম অথবা বেশি খরচ করা হয়। যেমন ধরেন আপনি গ্রাফিক্স কার্ড কিনলেন বেশি দাম দিয়ে কিন্তু প্রসেসর কিনলেন কম দাম দিয়ে আবার প্রসেসর বেশি দাম দিয়ে কিনে গ্রাফিক্স কার্ড কম দামের কিনলেন। সেক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে আপনি বেশি দাম দিয়ে গ্রাফিক্স কার্ড কিনলেও সেটা কম দামের প্রসেসরের সাথে মিলে কখনোই আপনাকে ভাল ফল দিতে পারবেনা। এজন্য যদি আপনার গ্রাফিক্স কার্ড কম বা বেশি দামে কেনার কোন নির্দিষ্ট কারন না থেকে তাহলে কম্পিউটারের অন্যান্য যন্ত্রের সাথে ভারসাম্য রক্ষা করা উচিত। এর মানে হচ্ছে আপনি কিছুটা কম দাম দিয়ে গ্রাফিক্স কার্ড কিনে একটু ভাল মানের পাওয়ার সাপ্লাই কিনতে পারেন। সাধারণত সবাই পাওয়ার সাপ্লাই একেবারেই কম দামের কেনে কিন্তু কম দামের পাওয়ার সাপ্লাই দিয়ে তো আপনি ভাল মানের গ্রাফিক্স কার্ড চালাতে পারবেন না। আপনার প্রসেসর, গ্রাফিক্স কার্ড, RAM এই সব কিছুর উপরেই নির্ভর করবে আপনার কম্পিউটার কেমন চলবে। কিন্তু আপনি যদি মাদারবোর্ড, প্রসেসর অথবা পাওয়ার সাপ্লাই কম দামের কেনেন তাহলে পরে সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
তবে গ্রাফিক্স কার্ড কেনার আগে অবশ্যই মার্কেট ভাল করে যাচাই করে নিবেন। কারন গ্রাফিক্স কার্ডের দাম সাধারণত খুব বেশি উঠা নামা করে। তাই মার্কেট দেখে শুনে আপনার চাহিদার সাথে বাজেটের মিল রেখে কিনে নিতে পারেন। যে ৫ টি বিষয় উপরে উল্লেখ করা হয়েছে আশা রাখি সেগুলো খেয়াল রাখলে আপনার কম্পিউটারের জন্য উপযুক্ত গ্রাফিক্স কার্ডটি কিনতে পারবেন। বাংলাদেশে সহজলভ্য গ্রাফিকস কার্ডের দাম এবং বৈশিষ্ট্য তুলনা করার জন্য ভিজিট করতে পারেন এখানে - https://www.startech.com.bd/component/graphics-card
আমি ফাহাদ খান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 5 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 2 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।