বাসায় নতুন কম্পিউটার কিনে সেই খুশীতে দিন রাত ২৪ ঘণ্টা কম্পিউটার চলানোর পর যখন মাস শেষে বিদ্যুৎ বিল আসে তখন চোখ কপালে ওঠাই স্বাভাবিক। তবে আপনার কম্পিউটার যদি পটেটো পিসি অর্থাৎ লো-কনফিগ এর হয় তাহলে চিন্তার বেশি কারণ নেই। কারণ লো-এন্ড কম্পিউটার এর অনেক কম পাওয়ার দরকার হয়। কিন্তু যদি আপনার কম্পিউটারে মোটামুটি হাই-এন্ড প্রসেসর এবং গ্রাফিক্স কার্ড লাগানো থাকে তাহলে আপনার কম্পিউটার ৫০০-১০০০ ওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারে।
আবার অনেক সময় কম্পিউটার এর জন্য ইউ.পি.এস কেনার সময় যদি কম্পিউটার এর কতটুকু পাওয়ার দরকার হয় তা জানা না থাকে তাহলে সঠিক ইয়.পি.এস কেনা সম্ভব হয় না। কিন্তু আপনার কম্পিউটার ঠিক কতটুকু পাওয়ার নিচ্ছে তা জানা কিছুটা কঠিন। আধুনিক এবং দামি কিছু পাওয়ার সাপ্লাই তে পাওয়ার কনসাম্পশন মনিটর করা যায়। তবে সেটা খুব বেশি পাওয়ার সাপ্লাই তে নেই। তবে পিসি ঠিক কতোটা পাওয়ার নিচ্ছে তা দেখার জন্য আমার চাইলে কারেন্ট মিটার ব্যবহার করতে পারি।
তবে পিসিতে কি কি জিনিস ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ কোন প্রসেসর এবং কোন গ্রাফিক্স কার্ড ব্যবহার করা হয়েছে তার উপর ভিত্তি করে পিসি এর কতটুকু পাওয়ার দরকার তা বলে দেয়া যায়। কারণ প্রসেসর এবং গ্রাফিক্স কার্ড হল পিসি এর সবচেয়ে বেশি পাওয়ার খাদক পার্ট। তাই এই দুইটি থেকেই মোটামুটি ভাবে বলে দেয়া যায় আপনার পিসি ঠিক কতটুকু পাওয়ার নিচ্ছে। তবে একবারে ঠিকভাবে হিসাব করতে হলে আপনাকে প্রতিটা পার্টস কতটুকু পাওয়ার নিচ্ছে তা বের করে যোগ করে দিলেই হবে।
প্রসেসর এবং গ্রাফিক্স কার্ড বাদে পিসি তে আরও কম্পোনেন্ট থাকে। যেমন – মাদারবোর্ড, র্যাম, হার্ড ডিস্ক, মনিটর, সিডি-ড্রাইভ। এছাড়াও পিসিকে ঠাণ্ডা করার জন্য থাকে ফ্যান। প্রসেসর এবং গ্রাফিক্স কার্ড এর পরে মাদারবোর্ড সবচেয়ে বেশি পাওয়ার নেয়। কারণ মাদারবোর্ড এই র্যাম সহ প্রায় বাকি জিনিসগুলো লাগানো থাকে। এবং প্রসেসর এর পাওয়ার ডেলিভারিও মাদারবোর্ড এর মাধ্যমে করা হয়। তাই মাদারবোর্ড এরও কিছু বাড়তি পাওয়ার দরকার হয়।
কম্পিউটারে অনেক ধরনের পার্ট থাকলেও সাধারণত কম্পিউটারের ৫টি পার্ট থাকে।
যথাঃ
১। সিপিইউ
২। জিপিইউ
৩। র্যাম
৪। ডাটা ড্রাইভ
৫। পাওয়ার সাপ্লাই
আপনার ডেক্সটপ কতটূকু পাওয়ার নিচ্ছে তা বোঝার জন্য আপনার পিসি এর পার্টস গুলোর নাম খুঁজে বের করুন। অর্থাৎ প্রসেসর এবং জি.পি.ইউ মডেল খুঁজে বের করুন। এবং তারপরে সেই মডেল গুগল এ সার্চ দিলেই আপনি এই পার্ট গুলো কত ওয়াট পাওয়ার নেয় তা জানতে পারবেন।
যেমন ধরুন একটি লো-এন্ড এ.এম.ডি Sempron 2560 APU সাধারণত ২৫ পাওয়ার নিয়ে থাকে। অন্যদিকে ইন্টেল এর i7-6900K প্রায় ১৪০ ওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার করে।
আবার যেসব কম্পিউটারে গ্রাফিক্স কার্ড ব্যবহার করা হয় সেসব কম্পিউটারে সাধারণ কম্পিউটার থেকে বেশি বিদ্যুৎ বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। আবার যেসব বড় আকারের গেম খেলা হয় তখন সাধারণ এর চেয়ে পাওয়ার বেশি লাগে। কারণ তখন গ্রাফিক্স কার্ড কে সাধারণ এর চেয়ে বেশি কাজ করতে হয়।
এবার আসা যাক র্যাম এর কথায়। র্যাম খুব কম পাওয়ার নেয়। মোটামুটি সাধারণত র্যাম প্রতি মডিউলে ৪ ওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। তবে লোড এর সময় র্যাম ১০ ওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারে।
হার্ড ডিস্কগুলোও র্যাম এর মত খুব অল্প পাওয়ার নেয়। এবং এখনকার আধুনিক হার্ডডিস্কগুলো আরও কম পাওয়ার ব্যবহার করে। সাধারণত ৫০০ জিবি থেকে ১ টিবি হার্ডডিস্ক ৫.৩ ওয়াট থেকে ৭-৮ ওয়াট পাওয়ার নেয়। আবার ২ টিবি বা ৪ টিবি হার্ড ডিস্ক ৮ ওয়াট এর মত বিদ্যুৎ নেয়। এস.এস.ডি আরও কম পাওয়ার নেয়। সাধারণ এস.এস.ডি গুলো ২.২ ওয়াট থেকে ৩ ওয়াট বিদ্যুৎ নেয়।
কম্পিউটারের জন্য সঠিক পাওয়ার সাপ্লাই নির্বাচন করা আসলেই একটু ঝামেলার। কারণ আপনি যতই হিসাব করেন হয়ত কম্পিউটার তার চেয়ে বেশি পাওয়ার নেয়। তাই আপনি যদি প্রয়োজনীয় পাওয়ার এর থেকে কম রেটিং এর পাওয়ার সাপ্লাই কিনেন তাহলে দেখা যাবে আপনার কম্পিউটারে একটু লোড পরলেই কম্পিউটার বন্ধ হয়ে যায়।
তাই ডেক্সটপ এর জন্য পাওয়ার সাপ্লাই কেনার সময় সচেতন হওয়া দরকার। আপনার কম্পিউটার যতটুকু পাওয়ার নেয় চেষ্টা করবেন তার থেকে ১০০-১৫০ ওয়াট বেশি ক্ষমতা সম্পন্ন পাওয়ার সাপ্লাই কিনতে। যেমন আপনার কম্পিউটার চলতে যদি ৫০০ ওয়াট পাওয়ার সাপ্লাই দরকার হয় তখন আপনি ৬৫০ বা ৭৫০ ওয়াট এর পাওয়ার সাপ্লাই কিনবেন।
এতে আপনার একটু বেশি খরচ হলেও লাভ আপনারই হবে। কারণ এতে আপনার কম্পিউটার নিরাপদ থাকবে। এবং আপনি চাইলে আপনার কম্পিউটারে আরও বেশি পাওয়ার হাংরি পার্ট লাগাতে পারবেন। আপনার পাওয়ার সাপ্লাই কেনার সময় এফিসিয়েন্সি দেখে পাওয়ার সাপ্লাই কিনবেন। এফিসিয়েন্সি এর ভিত্তিতে পাওয়ার সাপ্লাইকে অনেকগুলো ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন ৮০+ গোল্ড, ৮০+ ব্রোঞ্জ, ৮০+ সিলভার।
আবার আরও দামি পাওয়ার সাপ্লাই গুলোতে ৮০+ প্লাটিনাম এফিসিয়েন্সি থাকে। ৮০+ এফিসিয়েন্ট একটি পাওয়ার সাপ্লাই ৪০০ ওয়াট এর একটি পিসিকে পাওয়ার দিতে আপনার মেইন লাইন থেকে ৫০০ ওয়াট বিদ্যুৎ নেয়। তাই যথা-সম্ভব এফিসিয়েন্ট পাওয়ার সাপ্লাই কিনতে হবে।
ডেক্সটপ কম্পিউটার চালাতে কতটুকু পাওয়ার দরকার তা বের করা যেমন কঠিন তেমনি ল্যাপটপ এর পাওয়ার কনসাম্পশন বের করা ততটাই সহজ। কারণ ল্যাপটপ ঠিক ততটাই পাওয়ার নিতে পারে যতটা তার চার্জার পারে। তাই আপনার ল্যাপটপ এর চার্জার যদি ৪০ ওয়াট এর হয় তার মানে আপনার কম্পিউটার যখন চার্জ হয় তখন ল্যাপটপ দেয়াল থেকে ৪০ ওয়াট বিদ্যুৎ নেয়।
সাধারণত স্পেক এর ল্যাপটপগুলো ৪০ থেকে ৮০ ওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ নিতে পারে। কিন্তু আপনার ল্যাপটপ যদি অনেক হাই-এন্ড হয়। এবং ল্যাপটপ এর ভিতরে ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স প্রসেসর ইউনিট বা জি.পি.ইউ থাকে তাহলে আপনার ল্যাপটপ ১০০-১৫০ ওয়াট বা এরও বেশি বিদ্যুৎ নিতে পারে। আপনি আপনার ল্যাপটপ এর চার্জার এর লেখা পরলেই পেয়ে যাবেন। যেমন স্যামসাঙ এর ক্রোমবুক মাত্র ৪০ ওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। অন্যদিকে ১৭.৩ ইঞ্চি রেজার ব্লেড প্রো ভি-২ ২৫০ ওয়াট বিদ্যুৎ ব্যবহার করে।
ল্যাপটপকে ডেক্সটপ এর সাথে কম্পেয়ার করলে দেখতে পারবেন ডেক্সটপ এর তুলনায় ল্যাপটপ অনেক কম বিদ্যুৎ নেয়। কারণ ল্যাপটপের প্রসেসর এবং জি.পি.ইউ কম পাওয়ার নেয়ার জন্য ডিজাইন করা থাকে।
সাধারণ কম্পিউটারে জি.পি.ইউ ছাড়াই দুইটি মনিটর খুব সহজেই মনিটর লাগানো যায়। তবে মনিটর খুব বেশি পাওয়ার নেয় না। আগের দিনের সি.আর.টি মনিটর যদিও অনেক পাওয়ার হাংরি ছিল। কিন্তু এখনকার এল.ই.ডি মনিটরগুলো খুব কম পাওয়ার ব্যবহার করেই কাজ করতে পারে। তবে মনিটর এর সাইজ, পিক্সেল সংখ্যা মনিটর কতটুকু পাওয়ার ব্যবহার করবে তার উপর প্রভাব ফেলে।
যেমন একটি ২৩ ইঞ্চি মনিটর ২৭ মনিটর থেকে কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করে। তবে ২৭ ইঞ্চি পর্যন্ত মনিটরগুলো সাধারণত ২৫-৩৫ ওয়াট পাওয়ার ব্যবহার করে। আর যেহেতু মনিটর সব সময় অন থাকে তাই মনিটর এর ব্যাবহৃত পাওয়ার অবশ্যই মোট পাওয়ার এর সাথে যোগ করতে হবে।
আপনার কম্পিউটারের আশাকরি উপরের লেখা পরে আপনি কাছাকাছি হিসাব করতে পারবেন। আবার কম্পিউটারে যদি শুধু ওয়েব ব্রাউজ করেন তবে কম্পিউটার খুব বেশি পাওয়ার ব্যবহার করবে না। কিন্তু যদি গেম খেলেন তবে অনেক বেশি পাওয়ার এর দরকার হবে।
টিউনটি পড়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। আমার লেখা অন্য টিউনগুলো পরতে চাইলে আমার প্রোফাইল থেকে ঘুরে আসুন। এবং টিউনটি কেমন লাগলো তা অবশ্যই জানাবেন।
আমি আশরাফুল ফিরোজ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 77 টি টিউন ও 35 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 6 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
Nice post, thanks for sharing.