শুরুটা কখনই আমার আজকের মত ছিলনা। হুমমম, এখন আমি অনলাইনে ক্যারিয়ার গড়ে খুব ভালভাবেই কাজ করে যাচ্ছি। গ্রাফিকসের কাজ করে এমুহুর্তে আমি খুব ভাল সময় কাটাচ্ছি। গত ১বছর ধরে এ কাজ করেই গড়ে ২০,০০০ – ৩০,০০০ টাকা আয় করতে পেরেছি। তবে মাঝে মাঝে ৫০,০০০ টাকার উপরেও আয় করেছি। সুতরাং সেটাকেতো হ্যান্ডসাম ইনকাম বলতেই পারি। তার উপর, এখনও আমি স্টুডেন্ট 🙂
টেকটিউনস কিংবা বাংলাদেশের আরো আইটি বিষয়ক ব্লগগুলোর সাথে আমার বহু আগের সম্পর্ক। এসব ব্লগগুলোতে সবসময় বসে থাকতাম ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ক লেখা পড়ার জন্য। নেশার মত সময় কাটাতাম টেকটিউনসে। অনলাইনে আয় বিষয়ক লেখাগুলো পড়তাম, আর স্বপ্ন দেখতাম একদিন আমিও হব ফ্রিলান্সার। সব কিছুই স্বপ্ন দেখার মধ্যেই সীমিত থাকত, শুরু করতে পারতাম না। অনলাইনে আয়ের অনেক উপায়গুলোর মধ্যে কোন উপায়ে আমি হাটব, সেটিই নির্ধারণ করতে পারছিলাম না।
আমার আত্নীয়, জনপ্রিয় ওয়েবডিজাইন ট্রেইনার, নুরে আলম ভাইয়ের উৎসাহে একদিন আমি বাংলাদেশের জনপ্রিয় আইটি ট্রেনিং প্রতিষ্ঠান ক্রিয়েটিভ আইটি ইনস্টিটিউটে যাই। সেখানে গিয়ে আরো একজন জনপ্রিয় ব্যক্তির সাথে পরিচয় হই। গ্রাফিকস ট্রেইনার, ক্রিয়েটিভ আইটি লিঃ এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর, মনির হোসেন স্যারের কথা বলছি। ওনার কথাগুলো আমাকে গ্রাফিকসের কোর্সে ভর্তি হতে উৎসাহ যোগায়। যদিও কোর্স ফি নিয়ে কিছুটা অসন্তুষ্ট ছিলাম। বলে রাখি, কোর্স করার সময়ই আমার সেই অসন্তুষ্টি দূর হয়ে যায়।উল্টো ভাবতে থাকি যদি আমাকে আরো বেশি কোর্স ফি দিতে বলে, সেটা দিলেও আমার ক্ষতি হবে না। সেটা অবশ্য যারাই সেখানে যায়, সবাই বলে। কোর্সের বিষয়বস্তু, প্রতিষ্ঠানটির সবার আন্তরিকতা, আউটসোর্সিংয়ের কাজে সকল সময়ের সহযোগিতা, সবমিলেই আমার মনে হয় দেশের সেরা প্রতিষ্ঠান এটি।
যাই হোক, একটু অ্যাডভার্টাইজ করে ফেললাম :)। সেই প্রতিষ্ঠানটির বিষয়ে জানতে তাদের ফেসবুকগ্রুপে গিয়ে প্রশ্ন করতে পারেন। ফেসবুক গ্রুপঃ https://www.facebook.com/groups/creativeit/
গ্রাফিকসকে ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নেওয়ার পিছনে যে যে বিষয়গুলো কাজ করেছে, সেটি নিয়ে এর আগে একটি টিউন করেছিলাম। সেটির লিংক দিচ্ছিঃ
আউটসোর্সিংয়ের ক্ষেত্রে গ্রাফিকসের কাজ কেন সেরা ??
সবার মত আমারো একটু ভয় ছিল, আমার দ্বারা সুন্দর ডিজাইন কখনও সম্ভব হবে কিনা। প্রশিক্ষনের সময় জেনেছি ভাল ডিজাইনার হওয়া যায় তিনটি ধাপেঃ
১ম ধাপঃ অন্যকোন ভাল ডিজাইনকে হুবহু তৈরি করতে হবে এবং এরকম কমপক্ষে ১০০টি ডিজাইন তৈরি করতে হবে। এ ধাপে গ্রাফিক্স সফটওয়্যারের সকল টুলসের ব্যবহার সম্পর্কে অভিজ্ঞতা বাড়বে।
২য় ধাপঃ এ ধাপে অনেকগুলো ডিজাইন থেকে আইডিয়া নিয়ে নতুন ডিজাইন তৈরি করতে হবে। এরকম ৫০টা প্রজেক্ট করতে হবে। এধাপের পর ডিজাইন সম্পর্কে অভিজ্ঞতা বাড়বে।
৩য় ধাপঃ এবার আপনি নিজেই ডিজাইনার। সুতরাং এ ধাপে আপনি আপনার নিজের ক্রিয়েটিভিটি কাজে লাগিয়ে ডিজাইন শুরু করতে পারেন।
এ ধাপগুলো ট্রেনিংয়ের সময়ই পালন করতে বাধ্য করা হয়েছিলাম আমি। সেজন্য এখন আমার কাছ থেকেও বের হচ্ছে ভাল কিছু ডিজাইন। 🙂
যখন ট্রেনিং নিচ্ছিলাম, তখনই ট্রেনিংয়ের অংশ হিসেবে আমাদেরকে 99designs.com এ কাজ করতে হত। কোর্সের ২০% শেষ হওয়ার পরই এই মার্কেটপ্লেসেই কাজ করতে বাধ্য করার পিছনে মনির স্যারের যুক্তিগুলো আমার কাছে অনেক বিজ্ঞান সম্মত মনে হয়েছে।
- মার্কেটের ডিমান্ড বুঝতে শিখা যায়।
- বায়ারদের দৃষ্টি ভংগির সাথে পরিচিত হওয়া যায়।
- এই মার্কেটপ্লেসে সকলের কাজগুলো দেখা যাওয়ার কারনে, অন্যদের কাজগুলো দেখে ডিজাইন কনসেপ্ট সম্পর্কে জ্ঞান বাড়ে।
- এই মার্কেটপ্লেসে গ্রাফিকস সম্পর্কে প্রতিযোগিতা হয়। একজন প্রতিযোগী যত ইচ্ছে ডিজাইন জমা দিতে পারে। বায়ার কর্তৃক ফিডব্যাক দেওয়ার কার্যকরী কোন ব্যবস্থা না থাকার কারনে বিনা টেনশনে কাজ করা যায়।
- প্রতিযোগীতার মনোভাব নিয়ে কাজ করতে শুরু করার কারনে কাজের মান ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে।
সবশেষ আমার পক্ষ হতে বলব, এ মার্কেটপ্লেসে নতুন কিংবা পুরাতন প্রফাইলের আলাদা কোন মূল্য নাই। সেজন্য নতুন হওয়ার পরও জেতার সম্ভাবনা থাকে। আর একটা লোগো কম্পিটিশন জিতলেই আয় হবে ৩০০ ডলার(২৪,০০০ টাকা)।
আগেই বলেছি। শুরুতে একই ভয় আমারও ছিল। কিন্তু প্রশিক্ষণের এক একটি ধাপ যেতে যেতে সব কিছুই আমি সম্ভব করতে পেরেছি। আমি তো উপরে প্রশিক্ষণের ধাপগুলো এখানে শেয়ার করলামই। তাহলে যুদ্ধে নামবেন না কেন ? যুদ্ধে না নেমেই কিভাবে বুঝবেন, আপনি পারবেন কিনা ? আমি বেশিরভাগদেরই দেখেছি, যারা খুব হতাশ। কিন্তু খোজ নিয়ে দেখা যায়, তারা এখনও ভয়ের কারনে ফিল্ডেই নামেন নি। ফিল্ডে না নেমেই হতাশ। ফিল্ডে না নেমেই কিভাবে বুঝবেন আপনার দ্বারা সম্ভব নাকি অসম্ভব ?
আবার অনেকে ফিল্ডে নেমে ৩-৪ টা কম্পিটিশনে অংশগ্রহণ করেই হতাশ হয়ে যায়। কিংবা অনেকেই প্রশিক্ষণ নেওয়ার মত ধৈয্য রাখেন না। আপনি মাসে ৩০,০০০ টাকা বেতনের চাকুরী করবেন, সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে যদি ২৫ বছর সাধনা করতে পারেন। তাহলে আউটসোর্সিংয়ের ক্ষেত্রে পরিশ্রম করতে এত অনীহা কেন ? অথচ একটা সময় এখানে আয় করবেন, মাসে ৪০,০০০ টাকা – ৫০,০০০ টাকা। আউটসোর্সিংয়ের ক্যারিয়ার গড়তে মাত্র ৪মাসের সঠিক সাধনাই আপনাকে সফলতার পথে নিয়ে যাবে। এইটুকু পরিশ্রমের জন্য প্রস্তুত না থাকলে আউটসোর্সিং আপনার জন্য না। একটি বিষয় বলে রাখি ১বছরের অভিজ্ঞতার পরও এখনও প্রতি মাসে আমাকে অনেক প্রতিযোগীতাতে অংশগ্রহণ করতে হয় এবং প্রত্যেক প্রতিযোগীতাতে আমাকে বেশ কয়েকটা লোগো সাবমিট করতে হয় এবং এর জন্য প্রতিদিন ব্যয় করছি গড়ে ৪-৫ ঘন্টা। এরপরই আমি প্রতি মাসে ২-৩ টি জিততে পারি। ৫০,০০০টাকার জন্য এটুকু পরিশ্রম করাকে আমার কাছে অস্বাভাবিক মনে হয় নি।
যেই টিপসগুলো দিব, সেগুলোর কিছু প্রশিক্ষন নিতে গিয়ে শিখেছি, কিছু আমি কাজ করতে গিয়ে বুঝেছি।
১। বায়ারের কাজের বিস্তারিত কয়েক বার ভালভাবে পড়ুন। আগে তার প্রয়োজনগুলো ভালভাবে বুঝুন।
২। অন্যদের ডিজাইনগুলো এবং সেই ডিজাইনের উপর বায়ারের ফিডব্যাকগুলো দেখুন ভালভাবে।
৩। যেই ডিজাইনগুলো বাতিল হয়ে গেছে, সেগুলোকেও দেখুন। তাহলে বুঝতে পারবেন, বায়ারের জন্য কোন টাইপের ডিজাইনগুলো করে সময় নষ্ট করেও কোন লাভই হবে না।
৪। প্রতিযোগীতার নিচের টিউমেন্টগুলোও ভালভাবে লক্ষ্য রাখুন। আপনার জন্য অনেক কাজে লাগবে সেগুলো।
৫। লোগো সাবমিট করার সময় প্রেজেন্টেশন অনেক স্মার্ট করুন। সুন্দর প্রেজেন্টেশন যেমন একটি খারাপ ডিজাইনকেও আকর্ষণীয় করে তোলে, তেমনি এর বিপরীতটাও ঘটে।খারাপ প্রেজেন্টেশন কিংবা প্রেজেন্টেশন ছাড়া সুন্দর লোগো সাবমিট করলেও সেটি অনেক বায়ারের পছন্দ হবে না।
কিছুদিন আগে একটি লোগোতে আমি জিতেছি। সেটির লিংকটি দেখেন, তাহলেই প্রেজেন্টেশনটা বুঝতে পারবেন।
লিংকঃ http://99designs.com/logo-design/contests/dark-secret-mysterious-innovation-283793
৬। কারো ডিজাইন কপি করবেন না। এটি বেআইনি। সেই প্রতিযোগীতা থেকে আপনি বাতিল হয়ে যেতে পারেন।
৭। বায়ার আপনাকে পাবলিক মেসেজ দিলে কিংবা আপনার ডিজাইনের উপর কোন মেসেজ দিলে সেটির উত্তর সাথে সাথে দেওয়ার চেষ্টা করুন।
৮। প্রতিযোগীতাগুলো সাধারণত ৭দিন ধরে চলে। একদম শুরুর দিন থেকেই প্রতিযোগীতাতে ডিজাইন সাবমিট শুরু করতে হবে। তাহলে বায়ারের ফিডব্যাকগুলো বুঝতে সুবিধা হবে। বায়ারের কাছেও পরিচিত হতে পারবেন।
আশা করি উপরের এই ৮টি টিপসই আপনাকে জিততে সহযোগিতা করবে। আমি তো শুধু এগুলোই অনুসরণ করি।
কিছুদিন আগে পিপল পার আওয়ারেও কাজ শুরু করেছি। সেখানে যাদের অ্যাকাউন্ট আছে, যদি সম্ভব হয় আমার প্রোফাইলে এবং আওয়ারলি গুলোতে স্টার দিয়ে আসলে খুশি হব।
লিংকঃ http://pph.me/skrdesign21
সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন। নিজে শিখুন এবং অন্যদেরকে শিখতে সাহায্য করুন। আজ আর নয়। খোদাহাফেজ।
আমি Rony-ahamed। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 2 টি টিউন ও 38 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
খুব ই অনুপ্রেরনা মুলক একটি লেখা ! এক নিঃশ্বাসে পড়ে শেষ করলাম ! রনি ভাই, আপনি শুধু গ্রাফিক্স ডিজাইনারই না একজন ভাল Motivator- ও হতে পারবেন ! শুভ কামনা থাকলো আপনার জন্য