ইঙ্কস্কেপ:
ইঙ্কস্কেপ ভেক্টর আর্টের জন্য জনপ্রিয় একটি ফ্রি সফটওয়্যার এবং একে অ্যাডোবি ইলাস্ট্রেটর এর সমতুল্য বলা হয়। এটা উইন্ডোজ/ লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমের জন্য উপযোগী। ইঙ্কস্কেপ থাকলে ভাল, না থাকলে নিচের লিস্ট থেকে ডাউনলোড করে নিন। এটি উইন্ডোজ/লিনাক্স ৩২ ও ৬৪ বিট সমর্থন করে।
ডাউনলোড:
ডাউনলোডের বাটনটিও তৈরি করা হয়েছে ইঙ্কস্কেপে। সেটার টিউটোরিয়াল পরবর্তী পোস্টে পাবেন। ডাউনলোড করতে ডাউনলোড বাটনে ক্লিক করুন। ইঙ্কস্কেপ লেটেস্ট ভার্সন (উইন্ডোজ), 36MB. Version-0.48.2-1
এবার কথা না বাড়িয়ে সরাসরি আঁকার সিস্টেমে চলে যাই। প্রথমে দেখে নেই এই টিউটোরিয়ালের লক্ষ্য।
বিলিয়ার্ড বল আঁকার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:
- ইঙ্কস্কেপ লিনিয়ার গ্রেডিয়েন্ট ও রেডিয়াল গ্রেডিয়েন্ট সম্পর্কে ধারণা লাভ
- গ্রেডিয়েন্টের মাধ্যমে গ্লসি ইফেক্ট বা চকচকে ইফেক্ট তৈরি
- দ্বিমাত্রিক ছবিতে গ্রেডিয়েন্টের মাধ্যমে ত্রিমাত্রিক আবহ তৈরি
- সুষম আকার বজায় রেখে শেপ স্কেলিং, শিফটিং ইত্যাদি
টিউটোরিয়ালের কয়েকটি ধাপ:
- ক্যানভাস কাজের উপযোগী করে তোলা
- ১ম বড় আকারের বৃত্ত অঙ্কন এবং উজ্জ্বল রঙয়ের গ্রেডিয়েন্ট দেওয়া
- ২য় ছোট আকারের বৃত্ত অঙ্কন এবং গ্রেডিয়েন্ট দেওয়া
- ৩য় ছোট আকারের বৃত্ত অঙ্কন এবং গ্লসি গ্রেডিয়েন্ট দেওয়া
- ২য় বৃত্তে বিলিয়ার্ড বলের নম্বর বসানো
- সমস্ত অবজেক্ট গ্রুপিং, গ্রেডিয়েন্ট সেটিং এবং স্কেলিং
- বিভিন্ন ফরম্যাটে সেভ করার পদ্ধতি
কী আঁকতে যাচ্ছি তা একনজর দেখে নেওয়া যাক:
নিচের ছবিটা আঁকাই হবে আমাদের লক্ষ।
১ম ধাপ: ক্যানভাস কাজের উপযোগী করে তোলা
- ইঙ্কস্কেপ ডাউনলোড করার পর ওপেন করুন (যেহেতু পোর্টেবল তাই ইন্সটল করার ঝামেলা নাই):
- এখন File এ যান তারপর Document Properties এ ক্লিক করুন:
- Page ট্যাবের আন্ডারে দেখবেন Custom size লেখা আছে, সেটার নিচে Width এবং Height ও রয়েছে। সেখানে আপনার মনমত ক্যানভাস সাইজ বসান। আমার মত Height=350 এবং Width=350 (একক পিক্সেলে) নেওয়াই ভাল। সাইজ বসানো শেষে X এ ক্লিক করে বেরিয়ে আসুন:
- যেহেতু ৩৫০*৩৫০ নেওয়া হয়েছে তাই এটার সাইজ খুব বেশি হবে না, সেকারণে কাজ স্মুথলি করার জন্য জুম করতে হবে। ক্যানভাস জুমিংয়ের জন্য তিনটি পদ্ধতি আছে। প্রথমটি ম্যাগনিফাইয়িং গ্লাস আইকনে ক্লিক করে + দিয়ে জুম ইন এবং – দিয়ে জুম আউট করা যায়, ২য়টি হল Ctrl বাটন চেপে ধরে মাউজ হুইলটা সামনে পিছনে ঘোরানো আর ৩য় উপায় হল F3 চাপার পর + অথবা – বাটন চেপে যথাক্রমে জুম ইন ও জুম আউট করা যায়:
এখন বলা যায় আপনি আঁকার জন্য ইঙ্কস্কেপকে তৈরি করেছেন। এবার আমরা আঁকার পদ্ধতি দেখব।
২য় ধাপ: ১ম বৃত্ত অঙ্কন এবং গ্রেডিয়েন্ট তৈরি
- প্রথমেই ইঙ্কস্কেপের একদম নিচে একটি কালার রিবন দেখতে পাবেন, সেটা থেকে সাদা রঙ বাদে যেকোন একটি রঙয়ের উপর ক্লিক করুন:
- এবার বৃত্ত আঁকার জন্য F5 চাপুন অথবা “Create circles, ellipses, and arces” নামক গোলাকার গোলাপী বাটনটিতে ক্লিক করুন:
- আপনার বৃত্তটাকে সুষম করে তুলতে চাইলে Ctrl বাটন চেপে সাধারণভাবে যেভাবে Paint কিংবা ঔধরণের সফটওয়্যারে আঁকাআঁকি করেছেন ঔরকম করে লেফট ক্লিক করে ধরে বৃত্ত এঁকে ফেলুন:
- বৃত্তটাকে সিলেক্ট করার জন্য কার্সর আইকনের বাটনটিতে ক্লিক করুন অথবা F1 চাপুন:
- বৃত্তটির বাইরের লাইন অর্থাৎ স্ট্রোক আমাদের কোন কাজে আসবে না, তাই নিচে Stroke লেখার উপর রাইট ক্লিক করে Remove stroke বাটনে ক্লিক করুন:
- গ্রেডিয়েন্ট তৈরি করার জন্য উজ্জ্বল রঙ ব্যবহার করতে হবে, তাই কালার রিবন স্ক্রল করে আপনার পছন্দ অনুযায়ী চোখে ধরে এমন উজ্জ্বল রঙয়ের উপর ক্লিক করুন:
- গ্রেডিয়েন্ট তৈরি করার জন্য গ্রেডিয়েন্ট আইকনে ক্লিক করুন এবং আমাদের এই কাজের জন্য চাই Radial Gradient, সেকারণে চেক করে নিন Radial Gradient এ ক্লিক করা আছে কিনা, না থাকলে ক্লিক করে নিন:
- এবার আপনার বৃত্তটির উপরে একটুবামে এবং একটু নিচে লেফট ক্লিক করে ধরে ছবির মত টেনে আনুন (২য় বৃত্তটা বোঝানোর সুবিধার্থে আঁকা হয়েছে):
- এখন এই অবস্থায় কালার রিবন থেকে কাল রঙয়ের উপর ক্লিক করুন, তাহলে নিচের ছবির মত দেখবেন (আর অবশ্যই খেয়াল রাখা দরকার, আপনার গ্রেডিয়েন্টের প্রথম প্রান্তের নোডটির রঙ নীল আছে কিনা; তা না হলে কিন্তু কাজ হবে না):
- আগের ছবিটার মত কাল রঙের মধ্যে সবুজ গ্রেডিয়েন্ট না আসলে বুঝবেন আপনার গ্রেডিয়েন্ট নোডের উপরে ক্লিক করা ছিল না। সেটা বোঝার জন্য নিচের ছবি দেখুন:
গ্রেডিয়েন্টের কাজ শেষ, এবার আমরা ২য় বৃত্তটি আঁকবো।
৩য় ধাপ: ২য় বৃত্ত অঙ্কন এবং লিনিয়ার গ্রেডিয়েন্ট দেওয়া
- ২য় বৃত্ত আঁকার জন্য সিলেক্ট বাটনে ক্লিক করুন, তারপর বৃত্ত বাটনে ক্লিক করুন এবং অবশেষে সাদা রঙ বেছে নিন:
- Ctrl চেপে ও মাউজের লেফট বাটন চেপে আগের মতই ছোট আকারের সুষম বৃত্ত আঁকুন। জায়গামত নিতে সিলেক্ট বাটনে ক্লিক করে তারপর টেনে নিয়ে আসুন:
- এবার আমরা Linear Gradient তৈরি করব, সাদা বৃত্ত সিলেক্ট করা না থাকলে সিলেক্ট করুন এবং গ্রেডিয়েন্ট বাটনে ক্লিক করে, New লেখার ঠিক ডানের বাটনটিতে(Linear Gradient) ক্লিক করুন:
- আগের গ্রেডিয়েন্টের মতই তবে এক্ষেত্রে সাদা বৃত্তের পরিধির উপর থেকে ক্লিক করে সোজা নিচে নামিয়ে আনুন:
এই বৃত্তের কাজ শেষ, এবার দেখাবো গ্লসি ইফেক্ট তৈরির প্রক্রিয়া।
৪র্থ ধাপ: গ্লসি ইফেক্ট দেওয়ার জন্য ৩য় বৃত্ত অঙ্কন
- একইভাবে আরেকটি বৃত্ত আঁকতে হবে, সেকারণে সার্কল বাটনে ক্লিক করে সাদা রঙ নির্বাচন করুন:
- সর্ববৃহৎ বৃত্তের একদম উপরের দিকে ছোট একটি বৃত্ত আঁকুন এবং তাকে সিলেক্ট করে যথাযথ স্থানে নিয়ে আসুন:
- ক্লিক করলে ৬টা অ্যারো বা তীর দেখতে পারবেন, এখন অনুভূমিক ভাবে অবস্থিত দুটি তীরের যেকোন একটি উপর ক্লিক করে Shift বাটন চেপে পরিধির দিকে সরান, বৃত্তটা এবার উপবৃত্তাকার আকৃতি ধারণ করবে:
- গ্লসি ইফেক্টের জন্য লিনিয়ার গ্রেডিয়েন্ট দরকার, তাই গ্রেডিয়েন্ট বাটনে ক্লিক করে চেক করুন লিনিয়ার গ্রেডিয়েন্ট আছে কীনা:
- এবার বৃত্তটির একদম উপরে ক্লিক করে টেনে আগের মতই গ্রেডিয়েন্ট বানান। সাদা অংশ বেশি আসলে বর্গাকার নোডটি ধরে উপরে উঠিয়ে দিতে পারবেন:
কাজ মোটামুটি শেষ, এবার নম্বর বসাতে হবে।
৫ম ধাপ: ২য় সাদা বৃত্তে নম্বর বসানো ও সাইজ স্কেলিং
- বামপাশের টুলস থেকে টেক্স এডিটরে ক্লিক করে সাদা বৃত্তের উপর ক্লিক করুন তারপর যেকোন নাম্বার লিখুন, প্রয়োজনে ফন্টের সাইজ বাড়িয়ে নিতে পারবেন:
- তীরগুলো দিয়ে নাম্বারটি বড় ছোট করে বৃত্তের সাথে সামঞ্জস্য বজায় রেখে স্কেলিং করুন:
বিলিয়ার্ড বলটি সম্পূর্ণ তৈরি, এবার স্কেলিং করে এক্সপোর্ট করলেই হবে।
৬ষ্ঠ ধাপ: অবজেক্ট গ্রুপিং, গ্রেডিয়েন্ট সেটিং, শিফটিং এবং স্কেলিং
- এবার Ctrl বাটন ধরে A চেপে সম্পূর্ণ অংশ সিলেক্ট করুন, তারপর Ctrl ধরে G চাপুন:
- সিলেক্ট থাকা অবস্থায় হাইট-উইডথ এর ডানে, Affect লেখার পাশের ৩নং বাটনটি চাপুন (গ্রেডিয়েন্ট সেটিং)। এবার ছবি নাড়ালেও গ্রেডিয়েন্ট নড়বে না:
- এখন সম্পূর্ণ ছবিটি ক্যানভাসের মাঝে আনুন ও এটাকে টেনে বড় করে ক্যানভাস সাইজের মত বড় করুন:
আপনার সব কাজ শেষ। এবার ছবিটি সংরক্ষণের পালা।
৭ম ধাপ: বিভিন্ন ফরম্যাটে ছবি সেভ করা
দুই ধরণের ফরম্যাটে দেখানো হল, একটা ভেক্টর আরেকটা বিটম্যাপ।
বিটম্যাপ ফরম্যাট:
- বিটম্যাপে সেভ করার জন্য, File>Export Bitmap বাটনে ক্লিক করুন:
- নতুন উইন্ডো ওপেন হলে Browse বাটনে ক্লিক করুন:
- File name এ আপনি যে নামে সেভ করতে চান সেটি লিখে যেকোন জায়গা নির্বাচন করে Save বাটনে ক্লিক করুন:
- এবার Export বাটনে ক্লিক করলে কয়েক সেকেন্ডে আপনার বিটম্যাপ (.png format) ইমেজ তৈরি হয়ে যাবে:
- চলুন দেখি বিটম্যাপ ইমেজটা কেমন দেখায় ফটো ভিউয়ারে:
স্কেলেবল ভেক্টর গ্রাফিক্স:
- Svg তে সেভ করা অনেক সহজ, File এ যান Save as বাটনে ক্লিক করুন:
- File Name এ ফাইলের নাম বসান, save as type থেকে ফরম্যাট চয়েস করে save করুন:
- Plain svg সাধারণত ওপেন হয় উইন্ডোজের ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারে, আর সেটা দেখায় ঠিক এমন:
Svg এর সুবিধা হল এটা যতই জুম করা হোক না কেন এটা ফেটে কিংবা পিক্সেলেট হয়ে যায় না।
প্রয়োজনে এই নমুনাটি ডাউনলোড করে নিন:
সবার সুবিধার্থে আমার আঁকা svg ফাইলটি মিডিয়াফায়ারে আপলোড করে দিলাম। আপনারা সেটা নামিয়ে নেড়ে-চেড়ে দেখতে পারেন।
সামান্য সৃজনশীলতা আনতে পারে আমূল পরিবর্তন:
নিচের বলগুলোর নাম্বারে ইঙ্কস্কেপ ফিল্টার ব্যবহার করা হয়েছে এবং মূল বৃত্তের রেডিয়াল গ্রেডিয়েন্টের রঙ পাল্টে দেওয়া হয়েছে:
সবাই ভাল থাকবেন ও সুস্থ থাকবেন। দেখা হবে পরবর্তী কোন পর্বে। আল্লাহ্ হাফেয। 🙂
ধন্যবাদান্তে-
thanks a lot.bro..