বর্তমান সময়ে প্রায় সব ক্ষেত্রেই ভার্চুয়াল জগতের প্রসার ঘটছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে ভার্চুয়াল জগতের প্রসার তুলনামূলক একটু বেশিই ঘটেছে। ফলে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য আধুনিক শিক্ষা সংক্রান্ত প্লাটফর্ম। অর্থাৎ, এই যুগ যেন ডিজিটাল ক্লাসরুমের যুগ। তবে আমাদেরকে একটা বিষয় মানতেই হবে যে, বর্তমানে ইন্টারনেট ও প্রযুক্তির যুগে শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং তাদের সাপোর্ট কারী লোকদের জন্য একটা ভার্চুয়াল স্পেস থাকা খুবই জরুরী। এরকম একটি ভার্চুয়াল স্পেস বা জায়গার আবির্ভাব ঘটিয়েছে গুগল আর অ্যাপ্লিকেশনটির নাম দিয়েছে Google Classroom। আজকে আমরা এই টিউনের মাধ্যমে Google Classroom সম্পর্কে জানবো।
Google ২০১৪ সালের ১২ অক্টোবরে একটা ভার্চুয়াল স্পেস এর সৃষ্টি করে এবং যার নাম দেয় Google Classroom। শিক্ষার জন্য ক্লাস-ওয়ার্ক সংক্রান্ত সুবিধা প্রদান করে এমন একটি ভার্চুয়াল স্পেস বা কেন্দ্রীয় বন্ধুত্ব সুলভ হাব হল Google Classroom। এটির উদ্দেশ্য হল শিক্ষা বা সঠিক জ্ঞানকে আরও দ্রুত দূর দূরান্তে ছড়িয়ে দেওয়া।
অফিসিয়াল ওয়েবসাইট @ Google Classroom
Educational Market এ অনেক ধরনেরই ওয়েব অ্যাপ রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে বেশ কয়টি অ্যাপ কার্যকরীও বটে। তবে গুগল তাদের সর্বসেরা অ্যাপ Google Classroom শিক্ষাগত বাজারে নিয়ে এসেছে। এই অ্যাপ্লিকেশনটি মোটেও ফাইল শেয়ার এবং ডকুমেন্ট ক্রিয়েট করার সেরা অ্যাপ নয়। কারণ ফাইল শেয়ার এবং ডকুমেন্ট ক্রিয়েট করার সেরা অ্যাপ আগে থেকেই মার্কেটে রয়েছে। যেমন- Google Drive ও Google Docs। এগুলোর কাজ হচ্ছে ফাইল শেয়ার ও ডকুমেন্ট ক্রিয়েট করা।
তবে, গুগল ক্লাসরুম কিন্তু অনলাইনে সমবেত হওয়ার জন্য উপযুক্ত নয়। এ সমবেত বা একত্রিত বা জামায়েত সৃষ্টির জন্য কার্যকরী অ্যাপ্লিকেশন বাজারে আগে থেকেই আছে। আর সেটি হল Google Hangouts Meet। এবার হয়তো আপনাদের মনে নিশ্চয়ই প্রশ্ন জেগেছে, তাহলে Google Classroom এর কাজ কী? তো চলুন জেনে নিই গুগল ক্লাসরুমের কাজ গুলো সম্পর্কে।
Google Classroom অ্যাপটি অ্যাসাইনমেন্ট, কুইজ এবং Announcements তৈরি ও শেয়ার করতে পারে। এছাড়াও গ্রেডিং, ক্লাস অর্গানাইজেশন এবং ক্লাস পরিচালনা ইত্যাদি কার্যক্রম গুলো এই অ্যাপের ইন্টারফেসের মাধ্যমে ম্যানেজ করা যায়। অর্থাৎ একজন টিচার যেভাবে বাস্তব ক্লাসরুম গুলোতে ক্লাস নেয়, ঠিক সেই ভাবেই ক্লাস নেওয়ার চিন্তাভাবনা নিয়েই তৈরি হয়েছের এই অ্যাপটি।
নির্দিষ্ট তারিখ এবং আগত ক্লাস বা কার্যক্রমের উপর নজর রাখতে শিক্ষার্থীরা Intuitive টুলস ব্যবহার করে। এই টুলসটি মূলত একটা সোশিয়্যাল অ্যাপ্লিকেশন বা সফটওয়্যার। এটা ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ ও Imo ইত্যাদি ছাড়াও অন্য যেকোনো কমিউনিকেশন মাধ্যম হতে পারে। যে টপিকে স্টাডি হবে বা হয়েছে সেটা নিয়ে শিক্ষার্থীরা সহপাঠী বা শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করতে পারবে। এবং তার নিজেরা নিজেদের চিন্তাভাবনা, প্রজেক্ট এবং কন্টেন্ট গুলো শেয়ার করতে পারবে। এই প্লাটফর্মে পিতামাতা, অভিভাবক বা শিক্ষার্থীর পড়াশোনায় নজর রাখে এমন ব্যক্তিকেও যুক্ত করা যাবে, যে শিক্ষার্থীর কার্যক্রমের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেবে।
কিন্ডারগার্টেনাররা তাদের প্রজেক্ট শেয়ারের কাজে Google Classroom ব্যবহার করতে পারবে। করোনা ভাইরাসের সময়কালে উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনেক কাজে আসে এই গুগল ক্লাসরুম। তবে, প্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার্থীরা তাদের ক্লাস-ওয়ার্ক ডিজিটাল ভাবে পরিচালনার জন একটা উপযুক্ত অ্যাপ্লিকেশন চায়। আর এই চাহিদা পূরণ করতে পারে এই Google Classroom।
আমরা হয়তো নিশ্চয়ই জানি যে, Google-mail বা Gmail এবং Google Drive এর মত টুলগুলি বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায়। অর্থাৎ, এসব অ্যাপ্লিকেশনের সার্ভিস গুলো নিতে কোন প্রকার অর্থ প্রদানের প্রয়োজন পড়ে না। আমরা হয়তো অনেকেই জানি যে, G Suite দুর্দান্ত সেরা ইমেইল হোস্টিং সেবা প্রদান করে থাকে। এই G Suite মূলত একটি ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন যা গুগলের বিভিন্ন ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত। অর্থাৎ এটি মূলত একটি এন্টারপ্রাইজ সাবস্ক্রিপশন প্রোডাক্ট যা স্কুলগুলো জন্য বা অন্য কোন অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের জন্য Gmail, Google Drive, Google Classroom ইত্যাদি ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের টুলস গুলোকে একত্রিত করে।
আপনি যদি কোন স্কুলের অংশ হয়ে থাকেন বা কোন অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের অংশ হয়ে থাকেন তাহলে, আপনি বিনামূল্যে G Suite অ্যাক্সেসের সুযোগ পাবেন। এছাড়াও আপনি একজন ব্যক্তি হিসেবে Google Classroom এ বিনামূল্যে অ্যাক্সেস পেয়ে যাবেন। এছাড়া অন্যান্য লাভজনক প্রতিষ্ঠান গুলো যদি G Suite সার্ভিস নিতে চায়, তাহলে তাদের অর্থ প্রদান করতে হবে।
Google এই ব্যাপারটা আপনাদের কাছে স্পষ্ট করেছে যে, এই অ্যাপ্লিকেশনটি আপনার ইনফরমেশন গুলো বিজ্ঞাপণের উদ্দেশ্যে বিক্রি করবে না বা আপনার ইনফরমেশনের সাহায্যে আয়ের জন্য বিজ্ঞাপণ প্রদর্শন করবে না। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে অ্যাপ্লিকেশনটি ব্যবহার করা অত্যন্ত নিরাপদ। তাই প্রয়োজন পড়লে অবশ্যই Google Classroom অ্যাপ্লিকেশনটি ব্যবহার করবেন।
আপনি যদি চান তাহলে আপনি নিজেই Google Classroom ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু এজন্য আপনাকে অবশ্যই Google Classroom ব্যবহারের নিয়মাবলী বা পদ্ধতিগুলো জানতে হবে। তো, Google Classroom ব্যবহারের জন্য প্রথমেই আপনাকে এর ওয়েবসাইট লিংক টিকে যেকোনো ব্রাউজারের মাধ্যমে ওপেন করতে হবে। Google Classroom ওয়েবসাইটটির লিংকটি আমি উপরে দিয়ে দিয়েছি, সেখান থেকে আপনারা প্রবেশ করতে পারবেন।
এক্ষেত্রে প্রথমেই আপনার প্রয়োজন পড়বে একটি জিমেইল অ্যাকাউন্টের। কারণ আমাদেরকে এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের জন্য সাইন ইন করতে হবে। তো, আপনার যদি কোন Google অ্যাকাউন্ট না থাকে তাহলে একটি Google অ্যাকাউন্ট ক্রিয়েট করে নেবেন। এরপর আমরা Google অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে ওয়েবসাইটটিতে লগইন করবো।
আপনি যদি নিজে ক্লাসরুম তৈরি করতে চান, তাহলে ওয়েবসাইটের হোম পেইজের উপরের ডান দিকে প্লাস (+) চিহ্নে ক্লিক করুন।
এরপর "Creat Class" এ ক্লিক করুন।
এরপর যে পপ আপ পেইজটি আসবে সেখানে আপনাকে কিছু ইনফরমেশন জানানো হবে এবং একটি প্রশ্ন এর সাথে সম্মতি দেওয়ার অপশন থাকবে। সেখানে টিক চিহ্ন দিন।
তারপর আরেকটি পপ আপ পেইজ ওপেন হবে, যেখানে ক্লাসের নাম, সেকশনের নাম, সাবজেক্ট এর নাম ও রুম নাম্বার দিতে হবে। ঠিক যেন নিচের স্ক্রিনশট এর মতো।
এর পর চলে আসবে আসল হোম পেইজ। এখানে থেকে আপনি যদি ছাত্র বা শিক্ষকদের ক্লাসটিতে জয়েন করার জন্য ইনভাইট করতে চান, তাহলে আপনাকে People ট্যাবে ক্লিক করতে হবে।
ইমেইল এর মাধ্যমে ইনভাইট পাঠাতে চাইলে, Students বা Teachers এর ডানদিকে থাকা ইনভাইট আইকনে ক্লিক করুন।
এছাড়াও আপনি চাইলে এই ওয়েবপেইজের নিচে থাকা অপশনের মাধ্যমে ক্লাস কোড পাঠতে পারবেন।
অপরদিকে আপনি যদি স্টুডেন্ট হিসেবে ক্লাসটিতে জয়েন হতে চান তবে, আপনাকে ক্লাস কোডের জন্য অপেক্ষা করতে হবে বা শিক্ষককে জিজ্ঞাস করতে হবে। শিক্ষক জিমেইল, ইমেইল অথবা সামাজিক মাধ্যমে আপনাকে কোডটি দিতে পারে। কোডটি যদি আপনি পেয়ে যান তাহলে, ওয়েবসাইটের হোম পেইজের উপরে ডানদিকে প্লাস (+) আইকনে ক্লিক করুন।
তারপর "Join Class" এ ক্লিক করতে হবে।
ক্লাস কোড অপশনে ক্লাস কোডটি বসিয়ে দিন ঠিক নিচের স্ক্রিনশট এর মতো।
ক্লাস কোড বসিয়ে নেক্সট অপশনে ক্লিক করলেই আপনি ক্লাসটি উপভোগ করতে পারবেন এবং ক্লাসের দেওয়া অ্যাসাইনমেন্ট গুলো খুঁজতে পারবেন। প্রশ্ন করতে পারবেন এবং আলোচনা করতে পারবেন। আপনি যেকোনো ব্রাউজারের মাধ্যমে এই ওয়েবসাইটটিতে অ্যাক্সেস করতে পারবেন অথবা Android, iPhone বা iPad এর জন্য তৈরি অ্যাপ এর মাধ্যমে গুগল ক্লাসরুমে অ্যাক্সেস নিতে পারবেন। অ্যান্ড্রয়েড ইউজার হলে প্লে স্টোর এ দেওয়া অ্যাপটিও ব্যবহার করতে পারবেন। নিচে প্লে স্টোর থেকে অ্যাপটি ডাউন-লোডের ডিরেক্ট লিংক দেওয়া হল।
Official Download @ Google Classroom
আপনি চাইলে যেকোনো স্থানে, যেকোনো ডিভাইসে, যে কোন সময়ে Google Classroom ব্যবহার করতে পারবেন। এটি ব্যবহার করে আপনি ক্লাস সংক্রান্ত প্রশ্ন, অ্যাসাইনমেন্ট এবং Feedback ইত্যাদি তৈরি ও শেয়ার করতে পারবেন। যেহেতু এই সফটওয়্যার টি বা অ্যাপ্লিকেশনটি বিনামূল্যে, তাই আপনি এটাকে নানা ধরনের ভালো কাজে ব্যবহার করতে পারবেন।
Covid-19 এর কোয়ারেন্টাইন এর অন্তর্ভুক্ত শিক্ষার্থী বা ভৌগলিক ভাবে ছড়িয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা বা জ্ঞানকে উপস্থাপন করতে এই অ্যাপ্লিকেশনটি ব্যবহার করতে পারবেন। এই অ্যাপ্লিকেশনটি ব্যবহার করে আপনি দূর-দূরান্তে শিক্ষার প্রেরণ করতে পারবেন। পাঠ্যক্রম বহির্ভূত জ্ঞানমূলক কার্যক্রম গুলো এই অ্যাপ্লিকেশন এর মাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে পারবেন। এছাড়াও আরও নানা ধরনের ইতিবাচক কাজ এই অ্যাপ্লিকেশনটি ব্যবহার করে ছড়িয়ে দিতে পারবেন।
তো বন্ধুরা, এই ছিল আজকের টিউন। আশাকরি ভালো লেগেছে। যদি ভালো লাগে তাহলে একটা জোসস দিয়ে আমাকে ধন্যবাদ জানাবেন। এবং টিউন সম্পর্কে কোন মন্তব্য থাকলে অবশ্যই টিউমেন্ট করে জানাবেন। দেখা হচ্ছে পরবর্তী কোন এক টিউনে। সে পর্যন্ত ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং নিজের খেয়াল রাখুন। আল্লাহ-হাফেজ।
আমি মো তানজিন প্রধান। ২য় বর্ষ, বগুড়া আজিজুল হক কলেজ, গাইবান্ধা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 3 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 91 টি টিউন ও 65 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 24 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 4 টিউনারকে ফলো করি।
কখনো কখনো হারিয়ে যাই চিন্তার আসরে, কখনোবা ভালোবাসি শিখতে, কখনোবা ভালোবাসি শিখাতে, হয়তো চিন্তাগুলো একদিন হারিয়ে যাবে ব্যাস্ততার ভীরে। তারপর ব্যাস্ততার ঘোর নিয়েই একদিন চলে যাব কবরে।