হ্যালো টেকটিউনস জনগণ, কেমন আছেন আপনারা সবাই? আশাকরি সবাই ভাল আছেন। এখন থেকে নিয়মিত আবার নতুন টিউন নিয়ে আমরা হাজির হলাম আপনাদের কাছে। আর টেকটিউনসের নিত্যনতুন টপিক আর সার্ভিস নিয়ে ভালো না থেকে আর উপায় আছে? আর এই নিত্যনতুন টপিক আর সার্ভিসের ধারা বজায় রাখার নিমিত্তে, আজকে আমি আপনাদের সাথে একদম নতুন একটি টপিক নিয়ে হাজির হলাম। আর আপনারা এই টিউনের মাধ্যমে জানতে পারবেন অনেক নতুন নতুন সব তথ্য।
এই টিউনে আমি আপনারদের সাথে রিলোডেড গেমস এবং রিপ্যাকড গেমস গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো আর জানবো সেই গেমগুলো খেলা লিগ্যাল কিনা।
আপনি যদি অনেকদিন ধরে গেম খেলে থাকেন তাহলে টরেন্টে আপনি দুটি লেবেলে অনেক গেমের ভার্সন দেখতে পাবেন; আর তা হল "রিলোডেড" এবং "রিপ্যাকড"। এই নামগুলো যারা প্রথম বার দেখবেন তাদের কাছে মনে হবে এটা মনে হয় ঐ গেমের নতুন ভার্সন, আসলে তা কিন্তু নয়, এই "রিলোডেড" এবং "রিপ্যাকড" দিয়ে আলাদা কিছু বুঝানো হয়ে থাকে।
এই টিউনে আমি রিলোডেড এবং রিপ্যাকড গেম বলতে কি বোঝায় এবং সেগুলো লিগ্যাল কিনা তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
যখন আপনি অনলাইনে গেম এর ডেস্ক্রিপ্টশনে "রিলোডেড" লেখা দেখেন, এই "রিলোডেড" দুইটি অর্থ হতে পারে। হতে পারে "রিলোডেড" গ্রুপ এই গেমটিকে ক্রাক করেছে এবং আপলোড করেছে, বা আপলোডার এই গেমটি পুনরায় আপলোড করেছে।
মাঝে মাঝে যেকোন গেমে "রিলোডেড" বা "RLD" লেবেল লেখা হয়, আর এই লেভেল দিয়ে রিলোডেড পাইরেসি গ্রুপ এই গেমটিকে ক্রাক করেছে তা বুঝিয়ে থাকে। তাছাড়া ক্রাকার'রা এও লিখে দেয় যে তারা ক্রাক করার জন্য দায়ী।
আপনাদের মাঝে অনেকেই রিলোডেড টিমকে চিনে থাকবেন। এই রিলোডেড টিমটি ২০০৪ সালে তাদের যাত্রা শুরু করে এবং এরই মধ্যে তাদের নামে অনেকগুলো বদনাম ও রয়েছে। এর মধ্যে একটি বদনাম ছিল, তারা আসল গেম রিলিজ হওয়ার চার দিন আগেই রিলোডেড গেম আপলোড করবে আসলে তারা তা করতে পারে নি। আর এরপর থেকে, রিলোডেড গেম গুলো পাইরেটদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যারা সাধারণত পেইড গেমগুলো ফ্রিতে খেলে থাকে।
মাঝে মাঝে, "রিলোডেড" লেবেল দিয়ে আপলোডার অরিজিনাল ফাইলগুলোকে মডিফাই করে ইন্টারনেটে পুনরায় আপলোড করাকে বুঝানো হয়ে থাকে। এই রকমের রিলোডেড গেম সাধারণত লিগ্যাল ই ধরা হয়ে কেননা যিনি মডিফাই করেন তিনি অরিজিনাল গেমের লিংক উল্লেখপূর্বক তার মডিফিকেশন করা ফাইলগুলো পুনরায় আপলোড করে যাতে গেমটিকে আপনারা আরও ভাল ভাবে উপভোগ করতে পারেন। তাছাড়াও তারা ফাইলগুলোকে রিসেন্ট আপডেট শব্দের পরিবর্তে "রিলোডেড" শব্দটি ব্যবহার করে থাকে।
যখন কোন গেমে "রিপ্যাকড" লেবেল যুক্ত করা হয়, তখন তা দিয়ে বুঝানো হয় আপলোডার এই গেমটিকে দ্রুত ডাউনলোড করার লক্ষে ফাইলগুলোকে কমপ্রেস বা অন্য কোন মাধ্যম ব্যবহার করে। এছাড়াও এই রকম গেমগুলোর বিবরণে ডাউনলোডারদের উদ্দেশ্য করে বলা থাকে যে, এই গেমের বেস ফাইলগুলো আপলোডারের কাছে রয়েছে, "রিপ্যাকড" ভার্সনে ফাইলের সাইজ কমানো হয়েছে অতঃপর পুনরায় আপলোড করা হয়েছে যাতে সবাই দ্রুত ডাউনলোড করে গেমটি খেলতে পারে।
যখন কোন ক্র্যাকিং টিম প্রথমে কোন গেমকে ক্র্যাক করে, তখন অরিজিনাল গেম থেকেও ক্র্যাক গেমের সাইজ বেশি হতে পারে। আর তার কারণ মেইন সফটওয়্যার-এ সম্পূর্ণ গেমটি থাকে, কোন কমপ্রেস বা অপ্রয়োজনীয় ফিচার থাকে না, ক্র্যাক করার সময় মেইন ফাইলটিকে এক্সট্রাক্ট করা থেকে শুরু করে আরও অনেক কাজ করা হয় ফলে মেইন গেম থেকেও এর সাইজ বেশি হয়ে থাকে।
উদাহরণস্বরূপ, কোন গেম ক্র্যাক করার পরে যখন এটি ইন্টারনেটে আপলোড করে তখন ফাইল সাইজ বেশি হওয়ার কারণে ডাউনলোডকারীদের তা ডাউনলোড করেতে অনেক বেশি সময় লাগতে পারে। যদিও ক্র্যাকার'রা গেমের ডাউনলোড সাইজ কে আসল গেমের সাইজে রাখতে পারে তবুও গেমটি ইন্সটল করার পরে আপনাদের হার্ড ড্রাইভে অনেক বেশি পরিমাণ জায়গা দখল করবে।
বিশাল আকার গেমগুলোর সাইজ কমানোর সময়, ক্র্যাকার'রা সাধারণত ফাইলের আকার কমাতে ফাইলগুলোকে কমপ্রেস করে থাকে। প্রথমে তারা যে ফাইলগুলো সবচেয়ে বেশি জায়গা নেয় সেই ফাইলগুলো (যেমন সাউন্ড এবং টেক্সচার ফাইলগুলো) তারপরে অন্যান্য ফাইলগুলোর সাইজ কমপ্রেস করে থাকে।
এছাড়াও, গেমগুলোর সকল ফাইলগুলোর মধ্যে যে ফাইলগুলো তেমন প্রয়োজন নেই তা ডিলিট করে দিবে। উদাহরণস্বরূপ, একটি গেমে বিভিন্ন ভাষার অপশন থাকে। আবার প্রত্যেকটি ভাষার জন্য আলাদা সাউন্ড ফাইল রয়েছে যা গেমাররা ইচ্ছা মত তাদের নিজের ভাষায় চেঞ্জ করে নিতে পারে।
আর এজন্যই যারা গেমের "রিপ্যাকড" ভার্সন তৈরি করেন তারা তাদের লোকাল ভাষা বাদে ভাষার সকল ফাইলগুলো রিমুভ করে দিয়ে ফাইলের আকার হ্রাস করে থাকে। তারপরে তারা গেমটিতে কোন কোন ভাষা রয়েছে তা উল্লেখ করে ফাইলগুলো আপলোড করবে, যাতে করে আপনার ডাউনলোড করার আগে ভাষা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেন। যেমনঃ প্রায় অধিকাংশ গেমেই বাংলা ভাষা নেই, তবে ইংরেজি সহ অন্য অনেক গুলো ভাষা রয়েছে যদি আমরা ইংরেজি ভাষা রেখে বাকি সব ভাষা ডিলিট করে দেই তাহলে হার্ড ডিস্ক থেকে অনেকটা জায়গা বাঁচাতে পারবেন।
আর রিপ্যাকড করা গেমগুলোও ক্র্যাক করা হতে পারে। আর আপনারা জানেন যে, ক্র্যাক হচ্ছে এমন একটি টুল যার মাধ্যমে যেকোনো প্রোগ্রামের কপি প্রটেক্টশন রিমুভ করে ফ্রিতে সেই প্রোগ্রাম ব্যবহার করা যায়। তাছাড়া ক্র্যাক গেমগুলো ডাউনলোড করার পরে, ইউজার'রা গেমের ক্র্যাকটি নিজেই ইন্সটল করতে পারে ফলে সমস্যা ছাড়াই গেমগুলো খেলতে পারে।
আপনি পাইরেটিং ল এবং টরেন্টের গেমের সাইটগুলোতে এই সম্পর্কে টার্মস গুলো পড়লেই জানতে পারবেন যে এগুলো ডাউনলোড করা বৈধ নাকি অবৈধ। প্রত্যেকটি ক্র্যাক গেমে ক্র্যাকিং গ্রুপের ট্যাগ, আর গেমের সাইজ অরিজিনাল গেম থেকে অনেক কম হবে এই দুইটি মাধ্যমে সহজেই ক্র্যাক গেম সনাক্ত করতে পারবেন।
ক্র্যাকিং গ্রুপের ট্যাগ বা কমপ্রেস করা গেম এর যেকোনো একটি আপনি দেখতে পান তবে সেই গেমটি ডাউনলোড করে আপনি পাইরেসি করছেন। এমনকি যদি এমন কোন ক্র্যাক গেম আপনি ডাউনলোড করেন যা অনেক পুরানো বা এখন আর কেউ খেলে না, তাহলেও তা ইলিগ্যাল এবং নীতি-নৈতিকতা বহির্ভূত কাজ।
এই পরিস্থিতিতে আপনি যদি এমন সব ক্র্যাক গেম দেখে থাকেন তাহলে তা ডাউনলোড করা থেকে বিরত থাকবেন এবং গেমটি ডাউনলোড করার জন্য লিগ্যাল কোন উপায়ের খোঁজ করবেন। আধুনিক গেমগুলো সহজে খুঁজে পাওয়ার জন্য Steam এবং the Epic Store দুইটি ওয়েব সাইটে খুঁজতে পারেন আর পুরানো গেমগুলো ডাউনলোড করতে Good Old Games (GOG) এ খুঁজে দেখতে পারেন।
উপরের দুইটি ওয়েব সাইট থেকে গেম খেলতে বা কিনতে আপনাকে অর্থ ব্যয় করতে হবে, তবে আমরা অনেকেই চাই ফ্রিতে গেম খেলতে। তবে, ক্র্যাক গেম এ থাকে ভাইরাস এবং ম্যালওয়ার আর এই ক্র্যাকিং গেমগুলো ডাউনলোড করা অবৈধ এছাড়াও আরও অনেক সমস্যা রয়েছে ক্র্যাকিং গেম এ। তাই ঝুঁকি নিয়ে খারাপ ফাইল ডাউনলোড করে চালানোর চেয়ে Steam থেকে কম দামে গেম খেলা অনেক ভাল।
আপনার কাছে যদি টাকা নাও থাকে তবুও আপনি নতুন কোন গেম খেলার জন্য পাইরেসির পথে যেতে হবে না। বর্তমানে এমন অনেক গেম রয়েছে যা খেলার জন্য আপনাকে কোন ধরনের টাকা দিতে হবে না। গেমটি ফ্রিতে খেলতে পারার দুইটি কারণ রয়েছে, প্রথমত গেমটিতে ফ্রি-টু-প্লে মডেল ব্যবহার করা হয়েছে অথবা কোন স্টোর এই গেমটিকে ফ্রিতে দিচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, Steam অনলাইন গেম সাইটে আপনি অনেক ফ্রি গেম খুঁজে পাবেন যা খেলতে আপনাকে কোন টাকা খরচ করতে হবে না। PS Now এর মত Steam, এবং Epic Store ফ্রিতে বিভিন্ন সময়ে গেম গিভ এওয়ে (give away) করে থাকে, আর এর মধ্যে Epic প্রত্যেক সপ্তাহেই নতুন নতুন গেম গিভ এওয়ে (give away) করে থাকে। আর তাই, যদি আপনি ফ্রিতে এবং লিগ্যাল পদ্ধতিতে গেম খেলতে চান তবে প্রত্যেক সপ্তাহে তাদের ওয়েব সাইট ভিজিট করতে পারেন। তাছাড়া PS Now এবং Xbox Game Pass কে ভিডিও গেমসের নেটফ্লিক্স হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়। এই প্ল্যাটফর্মে আপনি অল্প কিছু টাকা প্রদান করেন অনেক অনেক ক্যাটাগরির গেম আপনি খেলতে পারবেন। আর হ্যাঁ মনে রাখবেন এটি কিন্তু ফ্রি সার্ভিস নয়, যারা স্বল্প বাজেটে পছন্দের গেম খেলতে চান তাদের জন্য উত্তম একটি মাধ্যম।
রিলোডেড এবং রিপ্যাকড হচ্ছে এমন দুইটি টার্ম যা আপনারা পাইরেট গেম-এ প্রায়শই দেখে থাকবেন। ক্র্যাকার গ্রুপগুলো আপনাকে আপলোড ফাইল সম্পর্কে ধারণা দিতেই এই টার্ম ব্যবহার করে থাকে, আবার কখনও কখনও ক্র্যাকিং গ্রুপ তাদের সিগনেচার বা ফাইল সাইজ কমিয়ে ক্র্যাক গেম সম্পর্কে ইন্ডিকেট করে থাকে।
পাইরেসি তো একপ্রকার চুরি, তবে তা ডিজিটাল চুরি। প্রায়ক্ষেত্রেই আমরা এই পাইরেসি বা চুরি করি তার মালিককে না জানিয়ে আর এর ফলে সে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ঠিক তেমনিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে নতুন কিছু তৈরি করতে যাওয়া উদ্ভাবক'রা। তাই আপনাদের সবাইকে আমি অনুরোধ করবো পাইরেসিকে না বলুন, ডেভলপারদের কে সহযোগিতা করুন।
আমি এরকম নিত্যনতুন কাজের সফটওয়্যার নিয়ে টেকটিউনসে হাজির হবো নিয়মিত। তবে সে জন্য আপনার যা করতে হবে তা হলো আমার টেকটিউনস প্রোফাইলে আমাকে ফলো করার জন্য 'Follow' বাটনে ক্লিক করুন। আর তা না হলে আমার নতুন নতুন টিউন গুলো আপনার টিউন স্ক্রিনে পৌঁছাবে না।
আমার টিউন গুলো জোসস করুন, তাহলে আমি টিউন করার আরও অনুপ্রেরণা পাবো এবং ফলে ভবিষ্যতে আরও মান সম্মত টিউন উপহার দিতে পারবো।
আমার টিউন গুলো শেয়ার বাটনে ক্লিক করে সকল সৌশল মিডিয়াতে শেয়ার করুন। নিজে প্রযুক্তি শিখুন ও অন্য প্রযুক্তি সম্বন্ধে জানান টেকটিউনসের মাধ্যমে।
আমি রায়হান ফেরদৌস। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 183 টি টিউন ও 131 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 73 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 1 টিউনারকে ফলো করি।