সুরভাইবাল হরর! ভিডিও গেমস জগতে এই ধাঁচের গেমসগুলো আমার কাছে খুবই ভালো লাগে। তবে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট অনুযায়ী ভূত, প্রেত, জ্বীন ইত্যাদি রয়েছে ভয় পাবার পিছনে, আর ভিডিও গেমসগুলো পশ্চিমা দেশগুলো নির্মাণ করে বিধায় অধিকাংশ হরর ভিক্তিক ভিডিও গেমসগুলো জুম্বি, এলিয়েন এ জাতীয় বিষয় দিয়ে সাজানো হয়। তবে আউটলাষ্ট গেমটি আসলেই, সুরভাইল হরর ভিডিও গেমসগুলোকে নতুন এক মাত্রা এনে দেয়।
যাই হোক, বিগত কয়েক বছর ধরেই নিয়মিত ভাবে সুরভাইবাল হরর ভিডিও গেমসগুলো মুক্তি পেয়ে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় এ বছরের শুরু দিকে মুক্তি পেয়েছে Dying Light।
ওপেন ওর্য়াল্ড ভিক্তিক এই ফার্স্ট পারসন হরর ভিডিও গেমটি এ বছরের জানুয়ারীর শেষের দিকে বাজারে আসে। গেমটি নির্মাণ করেছে পোল্যান্ড এর গেম ডেভেলপার কোম্পানি Techland এবং গেমটি প্রকাশ করেছে Warner Bros, Interactive Entertainment. গেমটি নতুন হরর গেম হিসেবে আউটলাস্টের পর সর্বোচ্চ বিক্রির রেকর্ড করেছে। তবে জিটিএ ৫ গেম বিক্রির রেকর্ড ভাঙ্গা এত সহজ নয়!
ডাইয়িং লাইট গেমটিতে তোমাকে জুম্বিদের বিরুদ্ধে লড়তে হবে। গেমটিতে মূলত হ্যান্ড-টু-হ্যান্ড ফাইটিংকে বেশি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। আর গেমটিতে ব্যবহার করা হয়েছে রাত-দিন আবহাওয়া চক্র, যা বর্তমান যুগের বহু গেমেই ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে গেমটিতে অস্ত্র হিসেবে রেডিমেট পাচ্ছো ১০০টির বেশি ইউনিজ অস্ত্র, তবে ক্র্যাফটিং করে নতুন ১০০০টির বেশি নতুন নতুন অস্ত্র বানিয়ে নিতে পারো! অস্ত্রগুলোকে ব্যবহার করা যাবে লিমিটেড সময়ের জন্য যেখানে অতিরিক্ত ব্যবহারের জন্য অস্ত্রের কার্যকারিতা এবং ক্ষমতা দুটোই কমে যাবে। মানে গেমটিতে অস্ত্রের ব্যবহার কে যথা সম্ভব বাস্তবমুখি করার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে নির্দিষ্ট কিছু কিছু অস্ত্র তুমি কয়েক বারের জন্য রিপেয়ার বা ঠিকঠাক করতে পারবে। আর ক্র্যাফটিং এর জন্য তোমার দরকার হবে অস্ত্রের ব্লু-প্রিন্ট, মেটাল পার্টস ইত্যাদি যা তোমাকে গেমেই খুঁজে নিতে হবে অথবা তুমি চাইলে সরাসরি গেমে অবস্থিত বিভিন্ন শপ থেকে কিনে নিতে পারবে। তবে একটা কথা, গেমটিতে অস্ত্রের সংখ্যা অনেক করে দেয়া হলেও হরর এর আসল মজা পাবার জন্য গেমটিতে গুলির সংখ্যা অত্যন্ত নগন্য করে দেয়া হয়েছে! আর বেশির ভাগ রেডিমেট অস্ত্র গেমটির কাহিনীচক্রের শেষের দিকে ব্যবহার করা জন্য আনলক করা হবে।
আর আগেই বলেছি গেমটিতে রয়েছে দিন-রাত আবহাওয়া চক্র। সেখানে গেমটিতে দিনের দৈর্ঘ্য হচ্ছে ৬৪ মিনিট এবং রাতের দৈর্ঘ্য হচ্ছে ৭ মিনিট। তো তাহলে বলা যেতে পারে যে একটানা দেড় ঘন্টার মতো গেমটি খেললেই দিন-রাত দুটোরই মজা তুমি উপভোগ করতে পারবে। আর গেমটিতে এনভিডিয়া ফিজিক্স এর লাইটিং সিস্টেম এর সাহায্যে কুয়াশা, বৃষ্টি, ধুলো-বালি ইত্যাদির ইফেক্টকে বাস্তবিক করা হয়েছে।
দিনের বেলায় জুম্বি গুলো অনেকটা সহজ হিসেবে থাকবে। তবে অনেক গুলো জুম্বি একত্রে হলে সেখানে তোমার বিপদ! আর রাত্রের বেলায় জুম্বিদের শ্রবণ শক্তি বেড়ে যাবে বহু গুণে। মানে গেমটির আসল মজা পাবার জন্য রাত্রের আবহাওয়া বেশ উপযোগী। রাত্রের বেলায় জুম্বিদের মুভমেন্ট স্পিড বেড়ে যাবে, মানে তোমার পিছে পিছে দৌড়ানোর ক্ষমতা থাকবে তখন! আর ডেমেজ তো বেড়ে যাবে অবশ্যই! আর আরেকটি কথা, রাত্রের বেলায় জুম্বিরা তোমার মতো দেয়াল বেয়ে বেয়ে বিল্ডিং চড়তে এবং এক বিল্ডিং থেকে অন্য বিল্ডিং এ লাফিয়ে বেড়াতে পারবে!!!
গেমটিতে বেঁচে থাকতে হলে তোমাকে Survivor Sense এর মাধ্যমে জুম্বিদের অবস্থান চিহ্নিত করতে হবে এবং যথা সম্ভব তাদেরকে এড়িয়ে যেতে হবে। আর তোমার কাছে গেমটির মেইন ডিফেন্স হিসেবে থাকবে আল্ট্রাভায়োলেট লাইট, যা দিয়ে জুম্বিদের মুভমেন্ট স্পিড অনেক কমিয়ে দিতে পারো।
গেমটিতে এক্সপেরিয়েন্স পয়েন্টগুলোকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। জুম্বিদের সাথে কমবাট ফাইটিং এ জড়িয়ে পড়লে তুমি পাওয়ার পয়েন্টস অর্জন করতে পারবে, পার্কআউট মূভমেন্ট এর সাহায্যে তুমি Agility পয়েন্টস অর্জন করতে পারো এবং গেমটির মিশন, চ্যালেঞ্জ এবং সাইড মিশনগুলো কমপ্লিট করে তুমি Survival পয়েন্টস পাবা।
স্কিল পয়েন্ট গুলোর সাহায্যে তুমি তোমার ক্যারেক্টারের নতুন নতুন স্কিল আনলক এবং পুরোনো স্কিলগুলো আপগ্রেড করতে পারো। আর দিনের বেলায় প্রতিবার তোমার মৃত্যু হলে Survival পয়েন্ট কেটে নিয়ে তোমাকে আবারো Re-spawn করাবে, আর দিনের বেলার থেকে রাত্রের বেলায় খেললে সকল প্রকার এক্সপিরিয়েন্স পয়েন্টগুলো দ্রুত হারে অর্জিত হতে থাকবে।
গেমটির অনলাইন মাল্টিপ্লেয়ার ফিচারে রয়েছে কো-অপ মোডে ৪ জন কে নিয়ে খেলার সুবিধা। আর এ ছাড়াও গেমটির মেইন ক্যাম্পেইন টাকেও কো-অপ মোডে খেলার উপযোগী হিসেবে তৈরি করা হয়েছে। Be the Zombie মোডের মাধ্যমে তুমি নিজেই একটি শক্তিশালি জুম্বিরূপে গেমটিতে তোমার বন্ধুদের বিপক্ষে খেলতে পারবে!! দারুণ না!!
গেমটিতে মেইন মিশন, সাইড মিশন এবং চ্যালেঞ্জ সব মিলিয়ে টোটাল ৫২/৫৩ ঘন্টার গেম-প্লে রয়েছে। তার মানে বেশিক্ষণ না!!
২০১২ সালের শুরু দিকে Techland কোম্পানির দক্ষ একটি টিম ডাইয়িং লাইট গেমটির নির্মাণ কাজ শুরু করে। উল্লেখ্য যে একই কোম্পানি ২০১১ সালে Dead Island গেমটিও নির্মাণ করেছিল। তবে ভিতরের তথ্য হিসেবে জানা যায় যে, ডাইয়িং লাইট শুরুর দিকে Dead Island এর একটি সিকুয়্যাল হিসেবেই তৈরি হচ্ছেছিল, কিন্তু গেমটির পরিচালক গেমটিতে সুরভাইবাল হরর ধাঁচ আনার জন্য গেমটিতে Dead Island সিরিজ থেকে আলাদা করে ফেলেন। কারণ Dead Island হ্যাক এন্ড স্ল্যাশ ধাঁচের একটি গেম সিরিজ। তারপর সবশেষে ২০১৩ সালের মে ২৩ তারিখে গেমটির নাম উন্মোচন করা হয় এবং ২০১৩ সালের Electronic Entertainment Expo 2013 বা E3 তে গেমটির প্রথম ট্রেইলার দেখানো হয়। এখানে বলে রাখা ভালো, গেমটির অধিকাংশ উপাদান Dead Island গেম থেকে কপি করা এবং গেমটি এমিং এবং দেয়াল ক্লাইম্বিং ফিচার টি Mirror’s Edge থেকেও ডুপ্লিকেট করা হয়েছে। তবে এই দুটি ক্ষেত্রে নির্মাতারা বহু মডিফিকেশন করেছেন তাই একেবারেই কপি করা হয়েছে তা বলা যায় না।
আর গেমটির বিক্রিও বেশ ভালোই হয়েছে! মুক্তির প্রথম সপ্তাহেই প্রায় দেড় লক্ষ কপি বিক্রি করতে সক্ষম হয় গেমটি। উল্লেখ্য যে Techland কোম্পানি সবচেয়ে ব্যবসা সফল গেম এই এই Dying Light যা The Evil Within, The order:1886 এবং Evolve গেমসগুলোর বিক্রির রেকর্ড ভেঙ্গে দিয়েছে।
সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, গেমটির প্রায় ৫ লক্ষ কপি বিক্রি হয়েছে এবং জুন মাসে খবর পাওয়া যায় যে Techland আরেকটি ভিডিও গেম নির্মাণের কাজ হাতে নিয়েছে, হয়তো Dead Island 3 কিংবা Dying Light এর সিকুয়্যাল আমরা ভবিষ্যৎয়ে পাচ্ছি। তবে নির্মাতারা ডাইয়িং লাইট এর সিকুয়্যাল বানানোর ব্যাপারে বেশ আগ্রহী!
আর স্টোরিলাইন সম্পর্কে বিস্তারিত বলবো না, কারণ স্টোরিলাইন আগেই বলে দিলে খেলার মজাটা নষ্ট হয়ে যায়। তবে গেমটির স্টোরিলাইনের সারসংক্ষেপ হলো গেমটিতে তোমাকে আন্ডারকভার এজেন্ট “Kyle Crane” এর ভূমিকায় খেলতে হবে, হারান এর তুর্কিশ সিটিতে তোমাকে পাঠানো হয় কাদির সোলাইমানকে খুঁজে বের করতে। কাদির ওই অঞ্চলের পাওয়ার ফুল একজন রাজনীতিবিদ। তবে ওই অঞ্চলে গিয়ে তুমি দেখতে পাবে যে একটি রহস্যজনক ভাইরাসের কারণে শহরের অধিকাংশ জনসংখ্যা বিপদজনক জুম্বিতে পরিণত হয়েছে। আর তোমাকেই বেছে নিতে হবে একটি পথ, হয় তোমার এজেন্সির মিশন কমপ্লিট করতে হবে অথবা অনান্য সুরভাইবরদেরকে বাচাঁতে হবে . .. . এখন সিদ্ধান্ত তোমার হাতে . . . . .
Techland
Warner Bros. Interactive Entertainment
Chrome Engine 6
প্লে-স্টেশন ৪, এক্সবক্স ওয়ান এবং
উইন্ডোজ এবং লিনাক্স ভিক্তিক কম্পিউটারে
একশন এডভেঞ্চার,
সুরভাইবাল হরর
সিঙ্গেল এবং মাল্টিপ্লেয়ার
জানুয়ারী-ফেব্রুয়ারী, ২০১৫ সালে
ইন্টেল কোর আই ৫ ৩.৩ গিগাহার্জ অথবা এএমডি এফএক্স ৮৩৫০ গতির প্রসেসর,
জিফোর্স জিটিএক্স ৭৭০ অথবা রাডিয়ন আর৯ ২৯০ মডেলের গ্রাফিক্স কার্ড,
৬ গিগাবাইট র্যাম,
উইন্ডোজ সেভেন ৬৪ বিট অপারেটিং সিস্টেম,
৪০ গিগাবাইট হার্ডডিক্স এর জায়গা,
ডাইরেক্ট এক্স ১১
(http://www.game-debate.com এর তথ্যানুসারে)
আমি ফাহাদ হোসেন। Supreme Top Tuner, Techtunes, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 661 টি টিউন ও 428 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 149 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
যার কেউ নাই তার কম্পিউটার আছে!
ভালো লাগে আপনার টিউনগুলো পড়ে। 🙂