লন্ডন অলিম্পিক-২০১২ মাতালো বাংলাদেশ!! অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি! মিথ্যা নয় এত্তটুকুন। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বিশ্ববিখ্যাত কোরিওগ্রাফার অাকরাম খানের তত্ত্বাবধানে লন্ডনে হয়ে গেল অলিম্পিকের এযাবৎকালের ইতিহাসের সবচাইতে সেরা ও জমকালো অলিম্পিক গেমসের উদ্ভোধনী অনুষ্ঠান। দি গ্রেটেস্ট শো অন অার্থ।
প্রাচীন গ্রীসে দেবতাদের বাসভূমি বলে গণ্য অলিম্পাস পাহাড়ের পাদদেশে দেবতাদের সম্মানার্থে যে খেলাধূলার প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হতো তাকে অলিম্পিক গেমস বলা হয়। মনে করা হয় প্রধানত গ্রীসের এলিসের অলিম্পিক ভিলেজে অলিম্পাস পাহাড়ের পাদদেশে দেবতা জিউসের উদ্দেশ্যে ৪ বছর পর পর অলিম্পিক গেমস অায়োজিত হতো।
খ্রিস্টপূর্ব ৭৭৬ অব্দ হতে চলে ৩৯৬ খ্রিস্টাব্দে এই খেলা বন্ধ হয়ে যায়।
পরবর্তীতে ১৮৯৬ সালে ফ্রান্সের ব্যারন পিয়ের দ্য কুবেরত্যাঁর উদ্যোগে অলিম্পিক গেমস পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকে অাধুনিক অলিম্পিকের সূত্রপাত হয়। তখন থেকে এই খেলা চার বছর অন্তর অন্তর অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। ১৯১৩ থেকে ১৯১৯ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে এবং ১৯৩৭ থেকে ১৯৪৭ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে এই আয়োজন স্থগিত ছিল।
২৭ শে জুলাই ২০১২ থেকে ১২ই আগস্ট লন্ডনে ৩০তম গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমসের আসর বসেছে।
এরপর প্রথা অনুযায়ী ২৯শে আগস্ট থেকে ৯ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে প্যারা অলিম্পিক গেমস।
আধুনিক কালের বৃহত্তম খেলাধুলার আসর অলিম্পিক গেমস প্রতি ৪ বছর পর অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে ১৮৯৬ সাল থেকে। এখন পৃথিবীর প্রায় প্রতিটি দেশ অংশ নিচ্ছে অলিম্পিক গেমসে। দিনকে দিন জনপ্রিয়তা বাড়ছে অলিম্পিকের। বাংলাদেশ ১৯৮৪ সালে প্রথম অলিম্পিক গেমসে অংশ নেয়।
অলিম্পিকের স্থান আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (IOC= International Olympic Committee) নির্বাচন করে থাকে আয়োজক শহরকে।অলিম্পিক গেমসের সম্ভাব্য বছরের ৭ বছর আগে এই নির্বাচন করা হয়। আগামী বছর ২০১৩ সালে, ২০২০ সালের অনুষ্ঠিতব্য অলিম্পিক গেমসের আয়োজক শহরের নির্বাচন করা হবে। এ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার সিডনি ছাড়া দক্ষিন গোলার্ধের কোন শহরে অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হয় নি। আর মহাদেশ হিসেব করলে আফ্রিকা, দক্ষিন আমেরিকা এবং এন্টার্কটিকা মহাদেশে এখনো অলিম্পিক গেমসের আয়োজন হয়নি তবে ২০১৬ সালের অলিম্পিক গেমসের আসর বসবে দক্ষিন আমেরিকার ব্রাজিল দেশের রিও ডি জেনিরো শহরে। অনান্য ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় দেশের নাম বিবেচনা করা হলেও অলিম্পিকের ক্ষেত্রে শহরকেই বিবেচনা করা হয়ে থাকে। যেমন গত ফুটবল বিশ্বকাপের আসর বসেছিল দক্ষিন আফ্রিকায় কিন্তু এবার অলিম্পিকের আসর বসছে লন্ডন শহরে। অলিম্পিক গেমসের এ নিয়ম এসেছে প্রাচীন গ্রীসের অলিম্পিক থেকে যেখানে ক্রীড়া প্রতিযোগিতা হত নগর-রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে।
সবচে বেশী বার অলিম্পিক আয়োজক শহর-লন্ডন-১৯০৮,১৯৪৮,২০১২,দুইবার আয়োজক শহর গুলো হল- এথেন্স, প্যারিস,এবং লস এঞ্জেলস। ১৯০৬ সালে এথেন্সে অনুষ্ঠিত গেমস আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি কর্তৃক স্বীকৃত নয়। দেশ হিসেবে বিবেচনা করলে আমেরিকার যুক্তরাস্ট্র সবচে’ বেশী চারবার অলিম্পিক গেমসের আয়োজক দেশ ১৯০৪, ১৯৩২, ১৯৮৪, এবং ১৯৯৬।
এপর্যন্ত আয়োজিত সবগুলো অলিম্পিকে অংশ নিয়েছে ৫টি দেশ- গ্রীস, বৃটেন, সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্স এবং অস্ট্রেলিয়া । প্রতিটি অলিম্পিকে সোনা জেতা একমাত্র দেশ হল বৃটেন। সোভিয়েত ইউনিয়ন প্রথম অংশ নেয় ১৯৫২ সালে অনুষ্ঠিত হেলসিংকি অলিম্পিকে।
অলিম্পিক গেমস ৪ বছর পর অনুষ্ঠিত হলেও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারনে ১৯১৬ সালে এবং ১৯৪০ ও ১৯৪৪ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারনে অলিম্পিক গেমস অনুষ্ঠিত হয় নি।
অলিম্পিক গেমসের প্রকার ভেদ- সাধারণভাবে অলিম্পিক গেমস বলতে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমসকে বোঝানো হলেও ১৯২৪ সাল থেকে শীত কালীন অলিম্পিক গেমস এর প্রচলন হয়। শীতকালীন এবং গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক একই বছর অনুষ্ঠান শুরু হলেও ১৯৯২ সালে এসে শীত এবং গ্রীষ্ম অলিম্পিক ২ বছর পর পর অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ফলে শীতকালীন অলিম্পিক ১৯৯২ সালের পর ১৯৯৪ সালে পুনরায় অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ অলিম্পিক গেমস বা “প্যারা অলিম্পিক গেমস” অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে ১৯৬০ সাল থেকে। অলিম্পিক গেমসের আয়োজক শহর গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক গেমসের পর পরই প্যারালিম্পিক গেমসের আয়োজন করে থাকে। যুবক বয়সীদের জন্য “ইয়ুথ অলিম্পিক গেমস” প্রথম অনুষ্ঠিত হয় সিঙ্গাপুরে , ২০১০ সালে ।
অলিম্পিক গেমস এবং মহিলা- ১৯০০ সালে প্যারিসে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় অলিম্পিক গেমসে প্রথম মহিলাদের অংশগ্রহন শুরু হয়। সৌদি আরব ,কাতার এবং ব্রুনেই এই তিন দেশ থেকে কোন মহিলা ক্রীড়াবিদ এ যাবত অংশ নেয়নি। সৌদি আরবের দুই জন মহিলা ক্রীড়াবিদ চলতি অলিম্পিক গেমসে প্রথম মহিলাদের অংশগ্রহন করছে।
অলিম্পিকের পতাকা – এটি হল সাদার উপর পাঁচটি রঙ্গীন বৃত্ত। পাঁচটি বৃত্ত দিয়ে পৃথিবীর পাঁচটি প্রধান ভৌগলিক এলাকা, এশিয়া,ইউরোপ,আফ্রিকা, আমেরিকা এবং অস্ট্রেলেশিয়াকে বোঝানো হয়ে থাকে। বৃত্ত গুলোর রঙ পর্যায়ক্রমে নীল,হলুদ, কাল, সবুজ ও লাল। পৃথিবীর সমস্ত দেশের পতাকায় এর অন্ততঃ একটা রং বিদ্যমান। বৃত্ত গুলো একে অপরের সাথে জুড়ে থাকার অর্থ হল যে অলিম্পিক গেমস পৃথিবীর বিভিন্ন দেশগুলোকে মৈত্রীবন্ধনে আবদ্ধ করার মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে। ১৯১৩/১৪ সালে পিয়েরে ডি কুবার্তা এই পতাকা তৈরী করেন। ১৯২০ সালের এন্টোয়ের্প(Antwerp,Belgium) অলিম্পিকে প্রথম অলিম্পিক পতাকা ব্যবহার করা হয়।
অলিম্পিকের বিশ্বাস এবং মূলমন্ত্র হল - ক্ষিপ্রতা, উচ্চতা এবং শক্তি ( Citius, Altius, Fortius ) । ১৯২১ সালে পিয়েরে ডি কুবার্তা প্রচলন করেন। ১৯০৮ সালের লন্ডন অলিম্পিকে বিশপ তালবোটের দেওয়া বক্তৃতার অংশ হল অলিম্পিক গেমসের মুল বিশ্বাস বা Creed. “জীবন যুদ্ধে জয়ী হওয়ার চেয়ে যুদ্ধ করে টিকে থাকা যেমন বেশী গুরুত্বপূর্ণ একইভাবে অলিম্পিকে গেমসে জয় পরাজয়ের চেয়ে অংশগ্রহণই বেশী গুরুত্বপূর্ণ”
অলিম্পিক শপথ- আধুনিক অলিম্পিকের জনক কুব্যার্তা অলিম্পিক শপথ রচনা করেন। অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধন দিনে একজন ক্রীড়াবিদ সমস্ত ক্রীড়াবিদদের পক্ষ থেকে এই শপথ পাঠ করে থাকেন “ সমস্ত ক্রীড়াবিদদের পক্ষ থেকে আমি শপথ নিচ্ছি যে আমরা অলিম্পিক গেমসের সমস্ত নিয়ম কানুনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকব, খেলোয়াড় সুলভ মনোভাব নিয়ে আমরা অলিম্পিকের সম্মান এবং মর্য্যাদা সমুন্নত রাখব। ১৯২০ সালের অলিম্পিকে বেলজিয়ামের অসিচালনা ক্রীড়াবিদ ভিক্টর বোইন প্রথম শপথ বাক্য পাঠ করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান- উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রচলন শুরু হয় ১৯০৮ সালের লন্ডন অলিম্পিক গেমসে। অলিম্পিক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান গুলো হল- অলিম্পিক পতাকা উত্তোলন এবং আবহ সঙ্গীত, আয়োজক দেশের পতাকা উত্তোলন এবং সে দেশের জাতীয় সঙ্গীত বাজানো। এরপর সে দেশের কৃস্টি এবং সভ্যতা ফুটিয়ে তুলে নাচ, গান এবং শারীরীক কলা কৌশল প্রদর্শন করেন সে দেশের শিল্পীরা। এর পর অংশগ্রহন কারী দেশগুলো একে একে স্টেডিয়ামে প্যারেড করেন। অলিম্পিক গেমসের উৎপত্তি স্থল গ্রীস সর্বপ্রথম স্টেডিয়ামে প্রবেশ করে , এরপর আয়োজক দেশের বর্ণমালার ক্রমানুযায়ী অনান্য দেশ এবং সবশেষে স্টেডিয়ামে প্রবেশ করেন আয়োজক দেশের ক্রীড়াবিদরা ।
অলিম্পিক মশাল- উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষ হয় স্টেডিয়ামে অলিম্পিক মশাল স্থাপনের মধ্য দিয়ে। আয়োজক দেশের খ্যাতিমান কোন ক্রীড়াবিদ এই মশাল বহন করে নিয়ে স্টেডিয়ামে ঢোকেন যা অলিম্পিক গেমসের শেষ দিন পর্যন্ত জ্বলতে থাকে। আধুনিক অলিম্পিক গেমসে অলিম্পিক মশালের প্রচলন শুরু হয় ১৯২৮ সালের আমস্টারডাম অলিম্পিকে। গ্রীসের অলিম্পিয়াডে প্রাচীন গ্রীসের পোষাক পরিহিত গ্রীক রমণীরা আতস কাচের উপর সূর্য্য রশ্মি ফেলে এই মশাল জ্বালান। এই মশাল পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ঘুরে এসে শেষ হয় অলিম্পিক স্টেডিয়ামে। ১৯৩৬ সালের বার্লিন অলিম্পিকে প্রথম প্রচলন করা হয় অলিম্পিক মশালের পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ প্রদক্ষিন। অলিম্পিক গেমসের সমাপ্তির সাথে সাথে নিভিয়ে ফেলা হয় অলিম্পিক মশাল।
আবহ সঙ্গীত- অলিম্পিক পতাকা উত্তোলনের সময় বাজানো হয় অলিম্পিকের আবহ সঙ্গীত। স্পাইরোস সামারাস এই সঙ্গীতের সুরকার এবং রচয়িতা হলেন কস্টিস পালামাস। ১৮৯৬ সালের অলিম্পিক থেকে এই সঙ্গীত বাজানো শুরু হলেও ১৯৫৭ সালে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি অফিসিয়ালি অনুমোদন করে।
অলিম্পিক মাস্কট- অলিম্পিক গেমসে প্রথম মাস্কটের ব্যবহার হয় ১৯৬৮ সালের মেক্সিকো সিটির অলিম্পিক গেমসে। মেক্সিকোর অংশগ্রহনকারী ক্রীড়াবিদরা জাগুয়ার এবং সাদা ঘুঘু পাখি মাস্কট হিসেবে ব্যবহার করেন।
অলিম্পিক পদক- প্রথম দ্বিতীয় এবং তৃতীয় প্রতিযোগীর জন্য সোনা রুপা এবং ব্রোঞ্জের পদক দেওয়া হয়। পদকের নাম সোনা রুপা বা ব্রোঞ্জ হলেও তা কিন্তু একমাত্র ঐ ধরনের ধাতু দিয়ে তৈরী নয়। যেমন স্বর্ণপদক হল ৫৫০ গ্রামের( ৯২.৫ %) রুপার উপর ৬ গ্রাম সোনার প্রলেপ দেওয়া, রৌপ্য পদক শুধুমাত্র রুপা দিয়ে এবং ব্রোঞ্জপদক টিন, শীশা এবং দস্তা দিয়ে তৈরী। শুধুমাত্র সোনা দিয়ে তৈরী স্বর্ণপদক শেষ দেওয়া হয় ১৯১২ সালে। আয়োজক দেশের জাতীয় অলিম্পিক কমিটি এবং আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি যৌথভাবে প্রতিটি ইভেন্টের পদকের নকশা করে থাকে। প্রতিটি পদক গোলাকৃতি, ৩ মিলিমিটার পুরু এবং ৬০ মিলিমিটার ব্যাসের। ১৯৩২ সালের লস এঞ্জেলস অলিম্পিকের আগ পর্যন্ত বিজয়ীদের পদক দেওয়া হত অলিম্পিক গেমসের শেষ দিনে। ঐ অলিম্পিক গেমসে ইভেন্ট শেষ হওয়ার পর পরই পদক দেওয়ার নিয়ম শুরু হয় এবং ৬০ সালের রোম অলিম্পিক থেকে ফিতা দিয়ে ঝোলানো পদক বিজয়ীর গলায় পরিয়ে দেওয়ার নিয়ম শুরু হয়।
এ যাবত কাল অনুষ্ঠিত সমস্ত অলিম্পিক গেমসের বেশী পদক জয়ী দেশগুলো এবং তাদের অংশ নেওয়া অলিম্পিক গেমসের সংখ্যা, স্বর্ন, রৌপ্য,ব্রোঞ্জ এবং সর্বমোট পদক সংখ্যা (ক্রমানুসারে)হল
১ম-আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্র- ( ২৫- ৯২৯, ৭২৯,৬৩৮- ২২৯৬)
২য় - রাশিয়া এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন একত্রে ( ৯- ৩৯৫,৩১৯,২৯৬- ১০১০)
৩য়- বৃটেন (২৬- ২০৭,২৫৫,২৫৩-৭১৫)।
বিভক্ত পূর্ব এবং পশ্চিম জার্মানীকে একসাথে বিবেচনা করলে জার্মানি হবে ৩য় স্থান দখলকারী দেশ।
কোন অলিম্পিক গেমসে (টিম এবং ব্যাক্তিগত ইভেন্ট মিলে) সবচে’ বেশী স্বর্ন পদক জয়ী হলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাতারু মাইকেল ফেল্পস, তিনি ২০০৮ এর বেজিং অলিম্পিকে সর্ব মোট ৮টি স্বর্ণপদক জেতেন, সর্বমোট স্বর্ণপদক জয়ী তালিকার ও শীর্ষে তিনি। ২০০৮ এবং ২০০৪ মিলে তার জয় করা স্বর্ণপদক সংখ্যা ১৪, অস্ট্রেলিয়ার সাতারু মার্ক স্পিটজ ১৯৭২ সালের অলিম্পিকে ৭ টি স্বর্ণপদক নিয়ে তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে।
অলিম্পিক ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ সংখ্যক পদক জিতেছেন রাশিয়ার জিমন্যাস্ট লারিসিয়া লাতিনিনা (Larisa Latynina) , তিনি সর্বমোট রেকর্ড সংখ্যক ১৮টি পদক জিতেছেন ।
দীর্ঘদিন কোন একক অলিম্পিক গেমসের পদক তালিকার শীর্ষে ছিল মার্কিন যুক্তরাস্ট্র। ২০০৮ সালের বেজিং অলিম্পিকে ৫১টি স্বর্ণপদক জয় করে শীর্ষস্থান ছিনিয়ে নেয় এশীয় দেশ চীন।
পৃথিবীর ৫৮ টি দেশ এখনো অলিম্পিকে কোন পদক পায় নি।
ম্যারাথন দৌড়- অলিম্পিক গেমসের শেষ ইভেন্ট হল ম্যারাথন দৌড় যা সমাপনী দিনে সকালে শুরু হয়ে সমাপনী অনুষ্ঠানের স্টেডিয়ামে এসে শেষ হয়। ৪৯২ খৃস্ট পূর্বাব্দে আক্রমনকারী পারস্যের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে গ্রীকদের যুদ্ধ জয়ের সংবাদ ম্যারাথন থেকে প্রায় ২৫ মাইল খালি পায়ে পাহাড় পর্বতের মধ্যে দিয়ে দৌড়ে এথেন্স এ বয়ে নিয়ে এসে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ফেইডিপিডিস( Pheidippides )। ফেইডিপিডিস এর সে দৌড়কে অমর করে রাখতে ১৮৯৬ সালের আধুনিক যুগের প্রথম অলিম্পিকেই ম্যারাথন দৌড়কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।১৯০৮ সালের আগ পর্যন্ত ম্যারাথন দৌড়ের দুরত্ব ছিল আনুমানিক। ১৯০৮ সালের লন্ডন অলিম্পিকে বৃটেনের রাজপরিবারের পক্ষ থেকে এই দৌড় উইন্ডসর দূর্গ থেকে শুরু হওয়ার অনুরোধ জানান হয় যাতে করে রাজপরিবারের ছেলে মেয়েরা এই দৌড়ের আরম্ভটা দেখতে পারে। উইন্ডসর দূর্গ থেকে লন্ডনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামের দূরত্ব ছিল ৪২ কিলো ১৯৫ মিটার যা পরবর্তীতে অনুসরিত হয়ে আসতে থাকে এবং ১৯২৪ সালে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি কর্তৃক আধুনিক অলিম্পিক গেমসের ম্যারাথন দৌড়ের দুরত্ব হিসেবে অনুমোদিত হয়।
অলিম্পিক গেমসে সন্ত্রাস- ১৯৭২ সালে মিউনিখ অলিম্পিকে ১১জন ইসরায়েলের ক্রীড়াবিদকে অপহরন করে হত্যা করে প্যালেস্টাইনি সন্ত্রাসবাদী সংগঠন “ব্লাক সেপ্টেম্বর”।
অলিম্পিক গেমস বর্জন- আফগানিস্তানে সামরিক অভিযানের প্রতিবাদে স্নায়ুযুদ্ধকালীন সময়ে ১৯৮০ সালে মস্কোতে অনষ্ঠিত অলিম্পিক গেমস বর্জন করে আমেরিকা সহ ৬১ টি দেশ ফলে মাত্র ৮১ টি দেশ অংশ নেয় । প্রতিবাদে ১৯৮৪ সালের লস এঞ্জেলেসে অনষ্ঠিত অলিম্পিক গেমস বর্জন করে তৎকালীন ওয়ারশ জোট ভুক্ত ১৪টি পূর্ব ইউরোপীয় দেশ। বর্ণবাদী দক্ষিন আফ্রিকার অলিম্পিকে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ১৯৭৬ সালের মন্ট্রিল অলিম্পিক গেমস বর্জন করে আফ্রিকার ২০টি দেশসহ তৃতীয় বিশ্বের ৩৪টি দেশ। চীনকে অলিম্পিক গেমসে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে তাইওয়ান ১৯৭৬ এবং ১৯৮০ সালের অলিম্পিক গেমস বর্জন করে। ১৯৮৪ সাল থেকে চাইনিজ তাইপে নামে তাইওয়ান অলিম্পিকে অংশ নিয়ে আসছে।
অলিম্পিক গেমস এবং ব্যাবসা- অলিম্পিক গেমসকে ব্যবসার উর্ধ্বে রাখার উদ্দেশ্যে কোন কোম্পানী বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে অলিম্পিকের অংশীদারিত্ব বা স্পনসর করার অনুমতি দেওয়া হয় নি। পেশাদার খেলোয়াড়দের অলিম্পিক গেমসে অংশ গ্রহন ১৯৯২ সাল পর্যন্ত নিষিদ্ধ ছিল। এখন বক্সিং এবং কুস্তি ছাড়া অন্য সব অলিম্পিক ইভেন্টেই পেশাদার খেলোয়াড়রা অংশ নিতে পারেন। ১৯৮০ সালে আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির প্রেসিডেন্ট হুয়ান আন্তোনিও সামারাঞ্চের সময় থেকে অলিম্পিকে বিভিন্ন কোম্পানীর প্রচার এবং অংশীদারিত্ব বা স্পন্সরশীপ শুরু হয়। ১৯৩৬ সালের বার্লিন অলিম্পিক গেমস ছিল প্রথম টেলিভিশনে সম্প্রচার করা অলিম্পিক গেমস।
অলিম্পিকের মজার খবর-
১) মহাত্মা গান্ধী ১৯৩২ সালের লস এঞ্জেলস অলিম্পিক গেমসে পত্রিকার রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেন।
২) ১৮৯৬ সালের ১ম আধুনিক অলিম্পিক গেমসে অধিকাংশ পদক জয় করেন গ্রীক ক্রীড়াবিদরা কিন্তু ১ম সোনা জেতেন আমেরিকার জেমস ব্রান্ডেন কনোলী (James Brendan Connolly)। অলিম্পিক গেমসে অংশ নেওয়ার জন্য হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে ছুটি দিতে অস্বীকৃতি জানালে তিনি হার্ভার্ড ছেড়ে দিয়ে অলিম্পিকে অংশ নেন। ৫২ বছর পর হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দিতে চাইলে তিনি তা গ্রহন করতে অস্বীকার করেন।
৩)মাত্র ৪ জন ক্রীড়াবিদ গ্রীষ্মকালীন এবং শীতকালীন উভয় অলিম্পিকে সোনা জিতেছেন।
৪) অলিম্পিকের ১০০ মিটার দৌড়ে এ পর্যন্ত কোন শেতাংগ ১০ সেকেন্ডের কম সময়ে শেষ করতে পারে নি। ৯.৬৯ সেকেন্ডে ১০০ মিটার দৌড়ে রেকর্ড এর অধিকারী হলেন জ্যামাইকার উসাইন বোল্ট।
৫) ২০০৮ সালের বেজিং অলিম্পিকে সর্বোচ্চ সংখ্যক ২০৪টি দেশ অংশ নেয়। এলসালভাদর এর সাথে চীনের কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকা সত্বেও সে দেশের ক্রীড়াবিদরা বেইজিং অলিম্পিকে অংশ নেন। সর্বমোট প্রায় ১৩,০০০ ক্রীড়াবিদ বেজিং অলিম্পিকে অংশ নেন।
৬) ১৯৬০ সালের আগে কোন কৃষ্ণাংগ আফ্রিকান ম্যারাথন দৌড়ে সোনা জেতেন নি। ইথিওপিয়ার আবেবে বিকিলা সে বছর খালি পায়ে ম্যরাথন দৌড়ে সোনা জেতেন।
৬) অলিম্পিক গেম নিয়ে এপর্যন্ত ৪০ টির ও বেশী চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে । ১৯২৫ সালে নির্মিত ১ম চলচ্চিত্রের নাম “Nine and Three Quarter Seconds” চলচ্চিত্রে অভিনেতা Charlie Paddock, ছিলেন অলিম্পিকের সোনাজয়ী চ্যাম্পিয়ন ক্রীড়াবিদ।
৭) ১৯০৪ সালের প্যারিস অলিম্পিকে সোনা রুপা ব্রোঞ্জের পদকের পরিবর্তে বিখ্যাত শিল্পীদের আঁকা ছবি পদক হিসেবে দেওয়া হয় কারন ফরাসীরা সোনা বা রুপার চেয়ে শিল্পকর্মকে অধিক মূল্যবান হিসেবে গন্য করে থাকেন।
৪) সুইডেনের অস্কার সোয়ান (Oscar Swahn ) ছিলেন অলিম্পিকে অংশ নেওয়া সবচে বয়ঃজেষ্ঠ্য ক্রীড়াবিদ। ১৯২০ সালের এন্টোয়ার্প অলিম্পিকে অংশ নেওয়া এই ক্রীড়া বিদের বয়স ছিল ৭২ বছর । তিনি ছিলেন একজন শ্যুটার।
৯) অলিম্পিকে অংশ নেওয়া গ্রীক জিমন্যাস্ট দিমিত্রিওস লোন্ড্রাস( Dimitrios Loundras ) ছিলেন বয়সে সবচে ছোট ক্রীড়াবিদ। তার বয়স ছিল ১০ বছর ২১৮ দিন। তিনি ১৮৯৬ সালের এথেন্স অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ পদক লাভ করেন।
১০) ১৯৬৮ সালের মেক্সিকো অলিম্পিকে প্রথম অলিম্পিকে ড্রাগ ব্যবহার সনাক্ত করা হয়।
১১) পোলো, ক্রিকেট, বেসবল,টাগ অফ ওয়ার, ইত্যাদি খেলাগুলো কোন কোন সময় অলিম্পিক গেমসে স্থান পেলেও তা আর খেলা হয় না। ১৯০০ সালের প্যারিস অলিম্পিকে ক্রিকেট স্থান পায় । মাত্র ৪টা দেশ বেলিজিয়াম, হল্যান্ড, ফ্রান্স এবং বৃটেন এই খেলার জন্য দল ঘোষনা করলেও বেলজিয়াম এবং হল্যান্ড প্রত্যাহার করে ফলে কেবল মাত্র ফ্রান্স এবং ইংল্যান্ড চূড়ান্তভাবে প্রতিযোগিতা করে। বৃটেন ফ্রান্সকে পরাজিত করে। ফ্রান্স এবং ইঙ্গল্যান্ড স্বর্ণ এবং রৌপ্যের পরিবর্তে , রৌপ্য এবং ব্রোঞ্জ পদক দেওয়া হয় ২০১২ সালে অলিম্পিক কমিটি তা শুধরে সোনা এবং রুপার পদকে পরিবর্তন করে।
আমি tunes। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 12 টি টিউন ও 67 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
টিউনার ভাইকে অনেক ধন্যবাদ এত সুন্দর করে গুচিয়ে লিখার জন্য। এত তথ্য সমৃদ্ধ টিউন খুব কম দেখা যায়।