আপনি জীবনে কয়টি ওয়েব ব্রাউজার ব্যবহার করেছেন এ পর্যন্ত? গুগল ক্রোম, মজিলা ফায়ারফক্স, মজিলা ফ্লক, ওপেরা, অ্যাপলের সাফারি, ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার কিংবা ইউসি ব্রাউজার! কিন্তু আমরা ক্রোম আর ফায়ারফক্স নিয়ে বেশির ভাগ সময় ব্যস্ত থাকি, একে অপরের সাথে তুলনা করতে ব্যস্ত থাকি।
ওয়েব ব্রাউজারের প্রতিযোগীতায় কয়েক বছর আগেও অপেরা বাজার মাতাতে পারছিলো। কিন্তু এখন পিসি বা অ্যান্ড্রয়েড কোথাও ওপেরা আমরা তেমন একটা ব্যবহার করে থাকি না। কিন্তু ওপেরা কোম্পানি আরেকটি ওয়েব ব্রাউজার নিয়ে আজ আমি টেকটিউনসে কিছু কথা বলতে এসেছি। ওপেরা কোম্পানি গত বছর Vivaldi নামের নতুন একটি ওয়েব ব্রাউজার বাজাতে উন্মুক্ত করেছে।
Vivaldi একটি ফ্রিওয়্যার, ক্রস প্ল্যাটফর্ম ওয়েব ব্রাউজার যেটি নির্মাণ করেছে Vivaldi Technologies কোম্পানি, এই কোম্পানিটি ওপেরা সফটওয়্যারের দ্বারা ফাউন্ডেড করা হয়েছে। ব্রাউজারটি অফিসিয়ালি এপ্রিল ১২, ২০১৬ সালে মুক্তি দেওয়া হয়। ব্রাউজারটিকে ওপেরা ওয়েব ব্রাউজার, প্রেস্টো লেআউট ইঞ্জিন, ব্লিংক লেআউট ইঞ্জিন এগুলোর মিক্সড করে তৈরি করা হয়েছে। ব্রাউজারটি এরই মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। ২০১৭ সালের জানুয়ারী মাসেই ব্রাউজারটি ১ মিলিয়ন ইউজার ক্রস করতে সক্ষম হয়।
Vivaldi ব্রাউজারটি মূলত Presto ইঞ্জিনের উপর ভিক্তি করে নির্মিত হয়েছে। প্রেস্টো ইঞ্জিণটি ওপেরা ব্রাউজারে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়েছিল। পরবর্তীতে ওপেরা ব্রাউজারে নতুন ইঞ্জিন Blink ব্যবহার হওয়া শুরু করে। অন্যদিকে ২০১৩ সালের শেষের দিকে ওপেরা কোম্পানির কো ফাউন্ডার এবং সাবেক সিইও Jon Stephenson von Tetzchner কোম্পানিটি ছেড়ে দেন এবং Vivaldi Technologies য়ে মুভ করেন। তিনি অপেরা ১৪ পর্যন্ত নির্মিত করে দেয় আসছিলেন তাই Vivaldi ব্রাউজারের সূচনা হয় Opera 14 এর পর থেকেই।
Vivaldi ব্রাউজারটির নাম তারা পছন্দ করেন ইতালিয়ান Baroque কম্পোজার এবং Virtuoso ভায়োলিনিস্ট Antonio Lucio Vivaldi এর নাম থেকে।
Vivaldi ব্রাউজারটিকে ওপেন সোর্স Chromium Browser Engine দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। এই ইঞ্জিন দিয়ে বর্তমানে গুগল ক্রোম. ক্রোম ওএস, ওপেরা ইত্যাদি ব্রাউজার তৈরি করা হয়ে থাকে। সাধারণত গুগল ক্রোম যারা ব্যবহার করেন তারা নিজেদেরকে পাওয়ার ইউজার হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন। তবে সত্য করা বলতে কি ব্রাউজারটি পাওয়ারফুল হিসেবে বলা যায় না। কারণ গুগল ক্রোমের কোনো তেমন উল্লেখ্যযোগ্য ফিচার নেই যেটি ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি নিজেকে পাওয়ার ইউজার হিসেবে দাবী করতে পারেন। কিন্তু অন্য দিকে Vivaldi ব্রাউজারে কোনো Default সেটিংই নেই। এই ব্রাউজারের প্রায় সকল সেটিংসকেই আপনি আপনার নিজের মতো করে সাজিয়ে নিতে পারবেন।
ব্রাউজারটি প্রথমবারের মতো ইন্সটল করলেই আপনি তা বুঝতে পারবেন। প্রথমে ব্রাউজারটিকে আপনার অনান্য ব্রাউজারের মতোই লাগবে। শুধু দেখবে বাম দিকে একটি ছোট লেআউট প্যানেলে চারটি টুলস দেওয়া রয়েছে Bookmarks, Downloads, Notes এবং history। এগুলোকে আপনি অপ্রয়োজনীয় মনে করলে হাইড করে নিতে পারবেন। আর ব্রাউজারের নিচের দিকে চিকন স্ট্যাটাস বার পাবেন স্ক্রিণশট নেবার জন্য, পেজ স্ল্যাকিং করার জন্য, ইমেইজ ম্যানেজ করার জন্য এবং জুম এডজাস্ট করার জন্য।
আর উপরের দিকের Vivaldi লোগে ক্লিক করলে আপনি ব্রাউজারের সকল মেন্যু কে খুঁজে পাবেন যেমন ফাইলস, ভিউ, টুলস ইত্যাদি। যেহেতু আগেই বলেছি এই ব্রাউজারের ডিজাইনিং হবে আপনার পছন্দ মতো। কোনো দিনও কি শুনেছেন এড্রেসবার নিচের দিকে থাকে?! হ্যাঁ আপনার মন চাইলে সেটিংসয়ে গিয়ে আপনি ব্রাউজারের এড্র্রেসবারটিকে নিচের দিকে নিয়ে আসতে পারবেন! আর অন্যদিকে সকল ট্যাবগুলোতে ভার্টিক্যাল ভাবেও সাজাতে পারবেন।
শুধু তাই নয়, আপনি নিজে নিজেই নিজের জন্য ব্রাউজারের থিম ডিজাইন করতে পারবেন। যেমন ব্যাকগ্রাউন্ড, ফরগ্রাউন্ডের ছবি পরিবর্তন, কালার পরিবর্তন, এসেন্ট পরিবর্তন ইত্যাদি। এছাড়ার নির্দিষ্ট ওয়েবসাইটে ঢুকলে ব্রাউজারের থিম কি হবে সেটাও আপনি পরিবর্তন করে নিতে পারবেন। মানে এক এক ওয়েবসাইটের জন্য এক এক রকমের থিম! ব্যাপারটা বেশ চমৎকার!
শুধুমাত্র ভিউজুয়াল দিক থেকে নয়, Vivaldi ব্রাউজারের সেটিংস অপশনে গিয়ে আপনি এর আসল মজাটিও নিতে পারবেন যদি আপনি আসলেই পাওয়ার ইউজার হয়ে থাকেন তবে। ব্রাউজারে আপনি আপনার নিজের মতো করে কিবোর্ড শর্টকাট বানিয়ে নিতে পারবেন, এছাড়াও mouse gestures নিয়ন্ত্রণও করতে পারবেন। এছাড়াও নতুন ট্যাব চালুর ক্ষেত্রে এনিমেশনটিও আপনি সেট করে নিতে পারবেন! এছাড়াও কির্বোডের F2 বাটন প্রেস করলে ব্রাউজারটির Quick Command বক্স আপনার সামনে চলে আসবে! এছাড়াও ব্রাউজারের একটি বিল্ট ইন টাক্স ম্যানেজারও রয়েছে!
এছাড়াও Vivaldi ব্রাউজারের একটি ইউনিজ ফিচার হলো এর নোটস! যেটিকে আপনি আপনার ইচ্ছে মতো করে স্টোর করে রাখতে পারবেন!
আরেকটি ফিচার হচ্ছে Web Panel, এটি প্রায় বুকমার্কের মতোই কিন্তু বুকমার্কের থেকেও বেশ কাজের। ওয়েব প্যানেলের সাইটগুলো প্যানেলের মধ্যেই ওপেন হয় এবং কোনো এড্রেসবার থাকে না।
তো টিউনটির শেষে এসে বলতে পারি যে, আপনার একবার হলেও এই নতুন ব্রাউজারটি ট্রাই করে দেখা উচিৎ। টিউনে আমি ব্রাউজারটির বেসিক ফিচারগুলো তুলে ধরলাম, ব্রাউজারটি ইন্সটল করে আসল স্বাদ আপনি নিজেই নিয়ে নিন। ব্রাউজারটি ডাউনলোড করে নিন ওদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে: https://vivaldi.com/
সফটওয়্যারটি ডাউনলোড করা হয়ে গেলে আপনার পিসিতে ইন্সটল করুন। এবার নিচে আমি ব্রাউজারটির ফিচারগুলো এক এক করে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার চেষ্ঠা করছি।
Vivaldi ব্রাউজারের একটি অন্যতম ফিচার হচ্ছে ফাস্টার ন্যাভিগেশন সিস্টেম। এই ফিচারের মধ্যে রয়েছে:
এটি অনান্য ব্রাউজারের মতোই এখানেও পাবেন, আপনার পছন্দের সব সাইটগুলোর কুইট লিংক এতে সন্নিবেশিত থাকবে।
আপনার যাবতীয় স্পিড ডায়ালসগুলোকে ফোল্ডারের মধ্যে রেখে দিয়ে সুন্দর করে সাজাতে পারবেন এই ফিচারের মাধ্যমে।
Vivaldi ব্রাউজারের প্রায় সবকিছুই এখানে আপনি সিম্পল টেক্সট কমান্ডসের সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন!
কোনো ওপেনকৃত সাইটের পরবর্তী পেইজে জাম্প করার জন্য এই ফিচারটি ব্যবহার করবেন।
আপনার ভিজিটকৃত কোনো সাইটের প্রথম পৃষ্ঠায় যেতে চাইলে বা আগের পেজে যেতে চাইলে এই ফিচারটি ব্যবহার করবেন।
Vivaldi ব্রাউজারে আপনি অন্যদের থেকে আরো বেশি স্মার্ট ভাবে ব্রাউজিং করতে পারবেন। স্মার্ট ব্রাউজিং ফিচারগুলোর মধ্যে রয়েছে:
ব্রাউজিং করার সময় কোনো নোটস আপনি এখানে লিখে রাখতে পারবেন এবং এগুলোকে নির্দিষ্ট সাইটে লিংক করে দিতে পারবেন।
Vivaldi সাইড প্যানেলের মাধ্যমে আপনি যেকোনো বুকমার্ককৃত পেইজ প্যানেলের ভিতরই ব্রাউজ করতে পারবেন। বিশেষ করে সোশাল মিডিয়াগুলোকে চেক করার জন্য নরমাল ব্রাউজিংয়ের পাশাপাশি সাইড বাই সাইড হিসেবেও এটি ব্যবহার করতে পারবেন।
বুকর্মাকস, ডাউনলোডস এবং নোটসগুলোতে ফাস্ট একসেস করতে পারবেন এটার মাধ্যমে।
সার্চ বক্সের মাধ্যমে কি করতে পারবেন সেটা তো আর নতুন করে বলার কিছু নেই।
এখানে আপনি আপনার পছন্দ মতো যেকোনো সার্চ ইঞ্জিন বেছে নিতে পারবেন।
যারা একই সাথে একাধিক সাইটে ব্রাউজিং করে থাকেন তাদের জন্য Vivaldi ব্রাউজারের ট্যাব ম্যানেজমেন্ট ফিচারগুলোতে রয়েছে:
আপনার ওপেনকৃত যাবতীয় সকল ট্যাবের হিস্টোরী আপনি এখানে পাবেন এবং এখান থেকে যেকোনো ট্যাব পুনরায় ওপেন করতে পারবেন।
একটি ট্যাবের উপর আরেকটি ট্যাব ড্রাগ এন্ড ড্রপ করলে যেটি স্ট্যাকস হিসেবে সংরক্ষিত হয়ে থাকবে।
ট্যাব বারটিকে এই ফিচারটির মাধ্যমে সকল ওপেনকৃত ট্যাবের একত্রে একটি প্রিভিউ আপনি দেখতে পাবেন।
সম্প্রতি বন্ধ করা কোনো ট্যাবকে এখন থেকে পুনরায় ওপেন করতে পারবেন।
চালুকৃত সকল ট্যাবগুলোর মধ্যে দিয়ে দ্রুত নেভিগেট করতে পারবেন এই ফিচারটির মধ্য দিয়ে।
বুকমার্কস ফিচারে আপনি যেগুলো পাচ্ছেন:
এই বারের মাধ্যমে আপনি আপনার বুকমার্কসগুলোকে ম্যানেজ করতে পারবেন।
নির্দিষ্ট বুকমার্কে নির্দিষ্ট নাম সেট করতে পারবেন দ্রুত একসেস করার জন্য।
ব্রাউজারের প্রায় প্রতিটি প্রধান একশনকে আপনি মাউস মুভমেন্টের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন এই ফিচারের মাধ্যমে।
এর সম্পর্কে আর নতুন করে কিছু বলার নেই তবে আপনি নিজেই নিজের মতো করে কাস্টম কিবোর্ড শর্টকাটস বানিয়ে নিতে পারবেন।
সর্বশেষ ফিচার লিস্টে আছে এর ভিজুয়্যাল ফিচারসমুহ:
স্পিড ডায়াল পেজের ব্যাকগ্রাউন্ড ইমেজ আপনি আপনার মতো করে ছবি সেট করে নিতে পারবেন।
ওয়েব পেজের কনটেন্সকে জুম ইন এবং আউট করতে পারবেন।
Vivaldi ব্রাউজারের ইউজার ইন্টারফেসের এলিমেন্টের সাইজ আপনি এখানে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
Vivaldi ব্রাউজারের UI এর রং আপনি এখানে এসে এক ক্লিকের মাধ্যমে পরিবর্তন করতে পারবেন।
এই ফিচারের মাধ্যমে যে সাইটটি আপনি ব্রাউজ করছেন সেটির রংয়ের সাথে আপনার ব্রাউজারের রং পরিবর্তন হয়ে যাবে!
তো আশা করছি নতুন এই Vivaldi ওয়েব ব্রাউজারটি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। তো এক্ষুনি ট্রাই করে দেখুন এই অসাম ব্রাউজার টি এবং ব্রাউজারটির সম্পর্কে কোনো মতামত থাকলে সেটা আমাদের টিউমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন।
আমি ফাহাদ হোসেন। Supreme Top Tuner, Techtunes, Dhaka। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 661 টি টিউন ও 428 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 149 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
যার কেউ নাই তার কম্পিউটার আছে!
আসলে এটিকে বলা যায় গুগল ক্রোমের একটু স্টাইলিশ ভারশন,অনেকদিন ধরেই ব্যবহার করি,ভালোই লাগে