আপনি যদি ব্লগিং করতে চান বা ব্লগিং এ নতুন হয়ে থাকেন তাহলে আশাকরি এই পোস্টটি আপনার উপকারে আসবে। ব্লগিং মূলত একটি উত্তম পেশা, যা বর্তমানে বহু জনপ্রিয়। ১৯৯৪ সালে প্রথম ব্লগের জন্ম হয়। তারপর এর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে।
তারই ধারাবাহিকতায় নতুন নতুন নিশ অনুযায়ী ব্লগ তৈরি হতে শুরু করে। এই নিশ মূলত এসইও এর কারণে তৈরি হয়েছে। আজ আমরা নিশ, এসইও, কিওয়ার্ড ডিফিকাল্টি ও কন্টেন্ট ইত্যাদি বিষয়ে জানবো। যাতে করে আপনি ব্লগিং এর ব্যসিক গাইডলাইন পেতে পারেন। তাই শুরু থেকে শেষ অবধি আজকের কন্টেন্ট এর সাথে থাকার অনুরোধ করছি।
ব্লগিং এর শুরুতে আপনার একটা নিশ সিলেকশন জরুরি। যে নিশ নিয়ে আপনি লিখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন এবং যে নিশের বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখেন সেই নিশকে বেছে নিন।
আমরা নিশ্চয়ই জানি ব্লগ কি। তাই ব্লগিং এর শুরুতে আমাদের মাথায় যে প্রশ্নটা আসে তা হল কিভাবে ব্লগ সাইট বানাব। তবে ব্লগ সাইট বানাতে যে পরিশ্রম ও জ্ঞান রাখা জরুরি তার মধ্যে নিশ সম্পর্কে জ্ঞান রাখাটা সবচেয়ে জরুরি বিষয়। একটি নির্দিষ্ট নিশই পারে ব্লগিং এ টার্গেটেড অডিয়েন্স আনতে।
নিশ কি? এটা কিভাবে কাজ করে? আপনি যদি ব্লগিং এ বিগিনার হয়ে থাকেন তবে নিশ্চয়ই এমনটাই ভাবছেন৷ আপনার মত আমারও এইরকম প্রশ্ন মাথায় ছিল। তবে এ বিষয়টি এত জটিল নয়, যতটা আপনি ভাবছেন। তো চলুন জেনে নিই আসলে নিশ কি?
নিশ বলতে ব্লগিং এ একটা নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু বোঝায়, যার আন্ডারে আপনি শুধু ঐ টপিকেই লিখবেন। নিশ তিন প্রকার —
এখানে ব্রড নিশ হচ্ছে যে নিশের আন্ডারে আরও কিছু এক জাতীয় ক্যাটাগরি নিয়ে কন্টেন্ট লেখা হয়, তাকে ব্রড নিশ বলে। অন্যদিকে মাইক্রো নিশে একটা নিশের আন্ডারে শুধু একটা ক্যাটাগরিই থাকে। আর স্পেসিফিক নিশ হল মূলত একটা নিশ যেখানে শুধু একটা নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর আলোচনা করা হয়।
ব্লগিং এর ক্ষেত্রে সাধারণত ব্রড নিশই বেশি ব্যবহৃত হয়। টেকনোলজি, লাইফস্টাইল, ফ্যাশন, নিউজ এগুলো মূলত ব্রড নিশের আন্ডারে। তারপরও নিশ সিলেকশন এর সময় সম্পূর্ণ স্বাধীনতা নিজের ওপর দিয়ে রাখুন। কারণ একমাত্র আপনিই জানেন আপনি কোন বিষয়ে দক্ষ।
তারপরও ধরে নিচ্ছি আপনার নিজের দক্ষতা সম্পর্কে ধারণা নেই। তাহলে বলব অন্যদের ব্লগ দেখুন আর পড়ুন। পড়ার কোনো বিকল্প নেই। আর তাছাড়া এসইও এর কারণে ব্লগিং এখন অনেক সমৃদ্ধ। আপনি র্যাংকিং সাইটগুলো থেকেই তাই সুনির্দিষ্ট ধারণা পেতে পারেন।
কিভাবে কন্টেন্ট লিখতে হয় এই প্রশ্নটির মধ্য দিয়ে আপনি কন্টেন্ট লেখার দক্ষতা অর্জন করতে সক্ষম। আর আপনি যদি স্কিল বা দক্ষতার সাথে ব্লগিং করেন তবে তার বেনিফিটটাও বেশি পাবেন। বস্তুত যতখানি স্কিল ডেভেলপ করবেন ততখানিই বেনিফিট পাবেন। এক্ষেত্রে আপনার কতকগুলি বিষয় মেনে চলতে হবে। প্রথমত, আপনার লিখিত কন্টেন্ট এর ওপর জোর দিতে হবে।
লিখিত কন্টেন্ট হতে হবে সহজ ও নির্ভুল, যাতে সবাই তা পড়ে বুঝতে পারে। অনেকেই পর্যাপ্ত পরিমাণ এসইও করতে গিয়ে কন্টেন্ট এর প্রাঞ্জলতা হারিয়ে ফেলে। এতে করে এসইওর মাধ্যমে অর্গানিক ট্র্যাফিক বা ভিজিটর এলেও তারা কন্টেন্ট এর ভ্যালু বুঝতে পারে না। সেইসাথে রিপিটেড ভিজিটরও হ্রাস পায়।
কন্টেন্ট লেখার জন্য তাই আপনার বর্ণনা কৌশল ও সহজে প্রকাশ করার পরিকল্পনা থাকতে হবে। এছাড়াও কন্টেন্ট এ ফিচার ইমেজ ছাড়াও আরও প্রাসঙ্গিক ইমেজ এডিট করে ব্যবহার করতে পারেন। যাতে করে কন্টেন্ট এর প্রাঞ্জলতা বৃদ্ধি পাবে।
ব্লগিং এ লেখনীয় অনেক টপিক আছে৷ তবে তার মধ্যে প্রায়োরিটি পায় কেবল কিওয়ার্ড ভিত্তিক লেখাগুলো। কারণ এই লেখাগুলো সহজে পাঠকের কাছে পৌঁছে। তার মধ্যেও কিন্তু আছে। লেখায় যদি আপনি পাঠকের জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের জবাব না রাখেন তবে পাঠক আপনার লেখা পড়বে না। কারণ সে এখান থেকে কিছুই শিখবে না।
তাই আপনাকে পাঠকের মূল প্রশ্ন জানতে হবে। তারপর সেই টপিকের ওপর এসইও ভিত্তিক রিসার্চ করে লিখতে হবে। মূলত এটিই হচ্ছে এনগেজিং Post।
কন্টেন্ট রাইটিং এ যত ব্যসিক মেনে চলতে হয় তারমধ্যে সবচেয়ে কমন ব্যসিক হল নির্দিষ্ট টপিক বজায় রাখা। এতে করে পাঠকের আগ্রহ ধরে রাখা সহজ হয়ে ওঠে৷ কারণ মানুষ যেকোনো একটা ব্যাপারেই ফোকাস রাখতে পছন্দ করে।
যদি আপনি একটি বিষয়ের কন্টেন্ট এ অন্য বিষয় নিয়ে আসেন তবে সেই কন্টেন্ট হয়ে উঠবে বিভ্রান্তিকর। কারণ পাঠক আপনার থেকে একটি নির্দিষ্ট টপিকের বিশ্লেষণ আশা করে।
এছাড়াও কন্টেন্ট এর গতানুগতিক ধারা বজায় রাখতে না পারলে সেই কন্টেন্ট এসইও ভিত্তিক করে তোলাটাও কষ্টকর। তখন আর ঐ লেখা র্যাংকিং সিস্টেমে সচরাচর দেখা যায় না। যদি প্রসঙ্গত অন্য টপিক চলে আসে তখন কন্টেন্ট এ ইন্টারনাল লিংক ব্যবহার করে ব্যাকলিংক তৈরি করতে পারেন। দ্রষ্টব্য, ব্যাকলিংক এসইও এর একটা অংশবিশেষ।
ব্লগিং করতে হলে আপনাকে প্রতিনিয়ত জানতে হবে। কারণ প্রতিদিনই এই সেক্টর এ নতুন কিছু না কিছু আপডেট হচ্ছে। এই আপডেটগুলো জানতে আপনাকে আগ্রহী হতে হবে। নতুবা ব্লগিং হয়তো আপনার জন্য নয়।
বর্তমানে ব্লগিং এ র্যাংকিং সিস্টেম কিছু বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল —
এখন এখানে অনেকেই বলে থাকেন যে, ডোমেইন অথরিটি তেমন গুরুত্বপূর্ণ না। তবে গুগল ইউজার এক্সপেরিয়েন্স এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা যায় ২২% পাঠকই সাইট থেকে চলে যায় যখন তারা দেখে সাইটটি আসলে নতুন। আর গুগল পাঠককে এনগেজ রাখতে সবসময় সেরা সাইটকেই গুরুত্ব দেয় বেশি।
তাই এ বিষয়গুলো নিয়ে নিরপেক্ষ রিসার্চ থাকা জরুরি। যাতে করে সাইটের র্যাংকিং সিস্টেম ধরে রাখা সহজ হয়।
ব্লগিং করতে গেলে ভালো কন্টেন্ট এর পর যে ঝুঁকিটা দেখা দেয় তা হচ্ছে কম্পিটিটর এনালাইসিস। নতুনরা অনেকেই এটার গুরুত্ব বুঝতে পারে না। বস্তুত এর গুরুত্ব বোঝাটাও তেমন সহজ নয়। তবু আমি চেষ্টা করব সহজভাবে উপস্থাপন করার।
আমি কোনো ডেফিনিশনে যাব না, সরাসরি যদি উদাহরণ দিয়ে বলতে হয় তবে আপনাকে এখনই গুগলে গিয়ে সার্চ করতে হবে। ধরুন, আপনি সার্চ করলেন – শরীর দুর্বল হলে করণীয়। এটা মূলত একটি লং টেইল কিওয়ার্ড। যে কিওয়ার্ডে তিনটির বেশি শব্দ থাকে তাকে লং টেইল কিওয়ার্ড বলা হয়। এই কিওয়ার্ড এ আপনি যে সার্চ রেজাল্ট দেখতে পাবেন তার র্যাংকিং এ থাকা সাইটগুলো পত্রিকার নিশে রয়েছে।
অর্থাৎ, আপনি যদি এই কিওয়ার্ড দিয়ে কোনো কন্টেন্ট লিখতে চান তবে আপনার কম্পিটিটর হবে এই পত্রিকার সাইটগুলি। আশাকরি কম্পিটিটর এনালাইসিস ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছেন। বলা বাহুল্য, এই কম্পিটিটর এনালাইসিস এর জন্য এসইও জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কিওয়ার্ড ডিফিকাল্টি নিয়ে কথা বললে আগেই জানতে হয় কিওয়ার্ড কি। কিওয়ার্ড হচ্ছে একটি ধারণা যা আপনার লেখার বিষয়বস্তুকে ইঙ্গিত করে। এসইও এর ভাষায় কিওয়ার্ড হল একটি শব্দ বা বাক্যাংশ, যা লিখে অনুসন্ধানকারীরা সার্চ ইঞ্জিনে প্রবেশ করে।
আমরা যারা নতুন ব্লগিং করি তারা প্রথমত যে ভুলটা করি তা হল কিওয়ার্ড এর সার্চ ভল্যুম চেক করেই ঐ কিওয়ার্ড নিয়ে লিখতে বসে যাই। কিন্তু কিওয়ার্ডের অবস্থা কিরকম অর্থাৎ ওটা লো কম্পিটিটিভ কিওয়ার্ড না হাই কম্পিটিটিভ কিওয়ার্ড তা বুঝতে পারি না। কন্টেন্ট রাইটিং এর ক্ষেত্রে এটা জানাটা জরুরি। সবসময় হাই সার্চ ভল্যুম কিওয়ার্ড এর সাথে লো কম্পিটিটিভ কিওয়ার্ড নিয়ে লেখা উচিত।
এক্ষেত্রে কিওয়ার্ড এর ফ্রি টুলসগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন, Uber Suggest.
পরিশেষে, শুরুতে যেমনটা বলেছিলাম ব্লগিং একটি উত্তম পেশা। এতক্ষণে নিশ্চয়ই আপনিও এ বিষয়ে কনভিন্স হয়ে আমার সাথে একমত। ব্লগিং বিষয়টি রকেট সায়েন্সের মত কঠিন নয়। যদি আপনার প্রতিনিয়ত জানার আগ্রহ ও ধৈর্য্য থাকে। তাই বলছি, ব্লগিং এ লেগে থাকুন। নিশ্চয়ই আপনিও ভালো কিছু করতে পারবেন।
আমি আল মাহমুদ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 1 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 4 টি টিউন ও 0 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 8 টিউনারকে ফলো করি।