আপনি কি ফ্রিল্যান্সিং শিখছেন? ফ্রিল্যান্সিং এ ক্যারিয়ার গড়ার জন্য স্কিল ডেভেলপমেন্ট এর কাজে সময় দিচ্ছেন? ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য কোনো মোটা অঙ্কের টাকার একটা কোর্স কিনতে চাচ্ছেন? যদি আমার সমস্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর আপনার কাছে হ্যা হয়ে থাকে তাহলে আমার আজকের পোষ্টটি আপানার জন্যই করা। তাহলে চলুন আর কথা না বাড়িয়ে শুরু করে দেই।
আজকের টিউনে আমি ফ্রি এবং পেইড কোর্স সম্পর্কে আলোচনা করব। আজকের এই টিউনে খুব ভালোমতই ধারণা পেয়ে যাবেন আপনার আসলে কোন কোর্সটি করা উচিৎ। ফ্রি কোর্স নাকী পেইড কোর্স। ফ্রি কোর্স গুলো কাদের জন্য অথবা পেইড কোর্স গুলোই বা কাদের জন্যে। আমি দুই ধরনের কোর্সের কয়েকটি করে উদাহরন এবং বৈশিষ্ট্য উল্লেখ্য করে বিস্তারিত বুঝিয়ে দিবো ফলে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন যে, আপনার জন্য কোন কোর্স এ সময় দেওয়াটা জরুরি।
আপনার ও জানা আমার ও জানা একটি ফ্রি কোর্স এর যতই ভালো কোয়ালিটি হোক। কিংবা যতই খারাপ কোয়ালিটি হোক। দিন শেষে কোর্স কিন্তু একদম ফ্রি। কোনো টাকাই খরচ করতে হয় না। কোর্সের ইন্সট্রাক্টর যতই খারাপ হোক। কিংবা যতই ভালো হোক।
আপনার এই কোর্সের জন্য আপনার পকেট থেকে একটা টাকাও খরচ করতে হবে না কোর্সটি ব্যবহার করার জন্য। অন্য দিকে একটি পেইড কোর্স যতই বেশী বেসিক লেভেলের হোক। কিংবা যতই অ্যাডভান্স লেভেলের হোক। দিন শেষে কোর্সটি করার জন্য আপনার পকেট থেকে টাকা খরচ করতেই হবে। যেই কোর্স যেই লেভেলের হয় সেটার দাম ও সেই পরিমাণ হয়।
এই কোর্স আপনি আপনার পকেটের টাকা খরচ করা বাদে কিনতে পারবেন না। এজন্য আমরা বলতে পারি যে, আমরা যদি টাকা পয়সার দিক দিয়ে চিন্তা করতে যাই তাহলে আমাদের ফ্রি কোর্স গুলোই সবচাইতে বেটার।
দ্বিতীয় বিষয়টি সম্পূর্ণ আপনার শেখার উপর নির্ভর করে। মনে করুন আপনি ফ্রিল্যান্সিং এর যেকোনও একটি বিষয় এর উপর স্কিল ডেভেলপমেন্ট করবেন। আপনি ইউটিউব বা গুগল থেকে কিছুটা রিসোর্স খুঁজে বের করলেন। সেই রিসোর্স অনুযায়ী আপনি ফ্রি ভিডিও গুলোই দেখা শুরু করলেন। এবং প্র্যাক্টিস করা শুরু করলেন।
এভাবে অনেক দিন যাবৎ আপনি আপনার রিসোর্স অনুযায়ী স্কিল ডেভেলপমেন্ট করতে থাকলেন। এমন একটা সময় আসলো আপনার মনে হচ্ছে যে, আপনি সেই স্কিল টা অর্জন করে ফেলেছেন। অর্থাৎ আপনার এই বিষয়টির উপর যথেষ্ট পরিমাণে জানা বুঝা এবং দক্ষতা অর্জন করা হয়ে গেছে। আপনি তখন চাইলে এই রিসোর্সটি বন্ধ করে করে দিলেন। এবং আপনার পরবর্তি রিসোর্স বা গাইডলাইনের দিকে যেতে লাগলেন।
এবার আরও একটি উদাহরণ দেওয়া যাক। আপনি আপনার ইচ্ছা অনুযায়ী কয়েকটি রিসোর্স দেখলেন। এগুলোর মধ্যে যেকোনও একটি পেইড কোর্স আপনার ভালো লাগলো। আপনি আপনি কোর্সটি কিনে নিলেন। কিনে অনেকদিন যাবৎ কোর্সটি দেখতে লাগলেন।
এরপর কোর্সের অর্ধেকে এসে দেখলেন যে, আপনি যেমনটি ভাবছিলেন কোর্সটি আসলে তেমনটা নয়। অর্থাৎ আপনি যে যে বিষয় গুলো শেখার জন্য কোর্সটি কিনতে চেয়েছিলেন। কোর্সটিতে আসলে সেই সেই বিষয়গুলো নেই। তো এখন কি করা?
তো বাধ্য হয়ে আপনার যেই বিষয় গুলোর উপর ইন্টারেস্ট নেই আপনার এখন সেই বিষয়ে গুলিও জোর করে স্কিল ডেভেলপমেন্ট করতে হবে। অথবা আপনাকে এই কোর্সটি থেকে সম্পূর্ণরূপে বেরিয়ে আসতে হবে। সেক্ষেত্রে আপনার যেই টাকা গুলো দিয়ে কোর্সটি কিনেছিলেন সেই সম্পূর্ন টাকাই জলে যাবে।
তো এখন আপনি নিজেই বলেন আপনার জন্য কোন কোর্সটি বেটার। এই দিক দিয়েও বলতে গেলে ফ্রি কোর্সটি এগিয়ে আছে।
ফ্রি কোর্স বা ইন্টারনেট থেকে রিসোর্স বের করে পড়া শুরু করলে সেই বিষয়টা শিখতে থাকলে এবং পুরোপুরি শিখে ফেলতে পারলে সেই কাজের প্রতি আপনার অটোমেটিক ভালোবাসা জন্মাবে। যেমন আপনি ফ্রি রিসোর্স দেখে কিছু একটা শিখলেন। সম্পূর্ণ দক্ষতা অর্জন করলেন। তখন সেই স্কিল ব্যবহার করে যেকোনো একটা কাজ করতে আপনার অনেক বেশী আনন্দ লাগবে। এর কারণ হচ্ছে এটা আপনি সম্পূর্ন নিজের ইচ্ছেতে শিখেছেন।
এটার জন্য কেউ আপনাকে ফোর্স করেনি এমনকি গালমন্দও করেনি। এমনকি আপনি যেনো স্কিল টা তাড়াতাড়ি করে শিখে ফেলবেন এর জন্য কেউ কাজের চাপও দেয়নি। এটা আপনি সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছায় নিজের অবসর সময় ব্যবহার করে শিখেছেন। আর অবসর সময়ে মানুষ সেই কাজটিই একমাত্র করে যেই কাজটি তার ভালো লাগে। সুতরাং এই কাজের প্রতি আপনার অলরেডী ভালোলাগা এবং ভালোবাসা জন্মে গিয়েছে।
কিন্তু স্কুল, কলেজ, অথবা ইউনিভার্সিটিতে, যেই ধরনের শিক্ষা দেওয়া হয় সেই ধরনের শিক্ষার মাধ্যমে ভালোলাগা তো দূরের কথা উল্টো আপনি সেই কাজ বা পড়ার প্রতি এক রকমের ঘৃনা জন্মানো শুরু করবে। আপনি নিজেই চিন্তা করে দেখুন। এই পদ্ধতিতে আপনাকে প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আপনার প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে হবে। সেটা রোদ, বৃষ্টি, গরম, শীত, আবহাওয়া যেইরকমই হোক না কেন। তাছাড়া কিছু কিছু ক্ষেত্রে আপনি অসুস্থ হলেও আপনাকে নির্দিষ্ট সময়ে ক্লাসে উপস্থিত থাকতে হয়।
এক কথায় আপনি যেকোনও কারণেই এক দিনের ক্লাস মিস করলেই সেই ক্লাসটি আর ফিরে পাবেন না। যেই সমস্যাটা সেল্ফ লার্নিং বা ফিরে রিসোর্স থেকে হয় না। এজন্যই ফ্রি রিসোর্স এ যেকোনো কাজ শিখলে সেটার প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়। আপনি যেই কাজটি সারা জীবন করবেন। বা যেই কাজের প্রতি ক্যারিয়ার বিল্ড আপ করবেন সেই কাজকে যদি আপনি ভালোবাসতে না পারেন তাহলে আপনি কখনই সেই কাজটি করতে পারবেন না।
এমনটা সবার ক্ষেত্রেই হয়। কাজ করার জন্য প্রথমে নিজের পেশাকে ভালো বাসতে হয়। তাছাড়া একটি প্রাতিষ্ঠানিক কোর্স এ সমস্ত কাজ নির্দিষ্ট সময় নিয়ে করতে হয়। নিদ্দিষ্ট সময়ে কাজ করতে না পারলে সেই কাজ আর করতে মন চায়না অর্থাৎ কাজের থেকে ভালোবাসা সরে যায়।
নিয়মিত হোমওয়ার্ক জমা দিতে হয়। এই হোম ওয়ার্ক এর প্যারাও কোনো ফ্রি রিসোর্স এর ক্ষেত্রে নিতে হয় না। তাছাড়া কিছুদিন পর পর তো একটা পরীক্ষা আছেই। সব মিলিয়ে একটি পেইড কোর্স পুরোটাই একটা প্যারা।
যেই প্যারা সামলে আপনি আপনার কোর্স সম্পূর্ন করতে পারলে আপনি হয়তো কিছু একটা ভালোমত শিখতে পারবেন। কিন্তু সেই কাজের প্রতি আপনার ভালবাসা জন্মাবে না। অর্থাৎ সেই কাজ আর বেশীদিন করতে মন চাইবে না। কিন্তু একটি ফ্রি রিসোর্স থেকে আপনি সম্পূর্ন প্যারামুক্ত হয়ে নিজের অবসর সময় ব্যবহার করে যথেষ্ট সময় নিয়ে একটি কাজ শিখতে পারলে আপনার সেই কাজের প্রতি ভালবাসা জন্মাবে। ফলে আপনি সেই কাজটি দীর্ঘদিন যাবৎ করে সেই কাজের প্রতি ক্যারিয়ার বিল্ড আপ করতে পারবেন।
আমার আজকের পোষ্টটি এই আপাতত এইখানেই শেষ করে দিচ্ছি। এই টিউনের আরো একটি পর্ব হতে চলছে। সেটা আমি খুব শীঘ্রই নিয়ে আসতে চলছি। প্রথম পোষ্টটি এমনিতেই অনেকটা বড় হয়ে গিয়েছে।
এজন্য আমি টিউনের দ্বিতীয় পর্ব করতে বাধ্য হচ্ছি। আর এই টিউনে আপনারা দেখতেই পেরেছেন যে আমি এই টিউনে যেই তিনটি পয়েন্ট উল্লেখ করেছি সেই তিনটি পয়েন্টে আমি শুধুমাত্র ফ্রি কোর্সের সুবিধাগুলো সম্পর্কে আলোচনা করেছি। টিউনের দ্বিতীয় পর্বে আমি ফ্রি কোর্স গুলোর সুবিধা সম্পর্কে আলোচনা করবো। এবং আপনার জন্য কোনটা বেটার হবে সেটাও বলে দিবো। ততক্ষণে সকলে ভালো থাকুন, এবং টেকটিউনস এর সাথেই থাকুন, ধন্যবাদ।
আমি মো মারুফ শেখ। ৪র্থ সেমিস্টার, শ্যামলী আইডিয়াল পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, মোহাম্মদপুর, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 4 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 29 টি টিউন ও 6 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 3 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 4 টিউনারকে ফলো করি।