কেমন আছেন সবাই? আশা করি ভালই আছেন। ইন্টারনেট এর মাধ্যমে টাকা উপার্জন করার গাইডলাইন এর দ্বিতীয় পর্বে আপনাদের স্বাগতম। যারা এই সিরিজের আগের টিউনটি পরেননি তারা এখান থেকে পরে আসুন। তাহলে আপনার বুঝতে সুবিধা হবে। আমি এই সিরিজে আপনাদের কে অনলাইন থেকে ইনকাম করার পদ্ধতিগুলো সম্পর্কে জানানোর চেষ্টা করবো। যারা অনলাইন এর ইনকাম এর সাথে পরিচত নন তারাও আশা করি আমার আগের টিউনটি পরে বুঝতে পারবেন।
ইন্টারনেট থেকে ইনকাম করার অনেক ধরনের রাস্তা আছে। কিন্তু আপনি যেই পদ্ধতি বেছে নিন আপনাকে মনে রাখতে হবে আপনি কাজ করার জন্য সারা পৃথিবীর সাথে প্রতিযোগিতা করছেন। তাই আপনাকে নিজেকে সেভাবে গড়ে তুলতে হবে। যদি তা না পারেন তাহলে অনলাইন এর কাজ আপনার জন্য না। ইন্টারনেট এ কাজ করার জন্য প্রথমে আপনাকে অনেকদিন ধরে কাজ শিখতে হবে। কাজের ধরন বুঝতে হবে। আপনি যেই কাজ করতে চান বা আপনি যেই ধরনের কাজ পারেন সেগুলোর চাহিদা আছে কিনা তা দেখতে হবে।Earn From Internet,
এরকম কাজ যারা করে তাদের কাজের মান কেমন এবং আপনার কাজের মান কেমন তা মিলিয়ে দেখতে হবে। এবং সবসময় প্রযুক্তির সাথে আপডেটেড থাকতে হবে। আপনি যদি মনে করেন একবার কাজ শিখেই আজীবন কাজ করে খেতে পারবেন তাহলে ভুল। আপনাকে প্রতিনিয়ত কাজ শিখতে হবে। শেখার শেষ নেই। তবে আপনি যদি এই ইন্টারনেটে একবারেই নতুন হন তাহলে এই বিষয়ে সুন্দর সুন্দর ব্লগ আছে সেগুলো পরতে পারেন। তবে আমি মনে করি এই সিরিজ এর প্রথম টিউনটি পরলেই আপনি অনেক জিনিস বুঝতে পারবেন।
ইন্টারনেট থেকে ইনকাম করার বাকি ১০টি পদ্ধতি সম্পর্কে আপনি আপনাদের সাথে এখন আলোচনা করব।
বাংলাদেশে কিছুদিন আগে থেকে উবার(Uber) তাদের সার্ভিস দেয়া শুরু করেছে। উবার হল একটি ইন্টারনেট ট্যাক্সি সার্ভিস। এই সার্ভিস ব্যবহার করে আপনি উবার এর রাইড নিতে পারেন। অর্থাৎ আপনি যেখানে আছে সেখান থেকে আপনি যেখানে যেতে চান সেখানে তারা নিয়ে নিবে। এবং আপনাকে ট্যাক্সি ভাড়া করতে কিছুই করতে হবে না। শুধু আপনার ফোনে উবার অ্যাপটি ইনস্টল করে আপনার লোকেশান ঠিক করবেন এবং কোথায় যেতে চান তাও বলবেন অ্যাপকে। এবং অ্যাপ আপনার জন্য ট্যাক্সির ব্যাবস্থা করে দিবে। আমাদের দেশে এটি নতুন হলেও বিশ্বের অনেক দেশেই উবার অনেক সফলতার সাথে চলছে।
এবং আপনি চাইলেই উবার এর জন্য কাজ করতে পারেন। আপনার যদি একটি গাড়ি থাকে এবং সেই গাড়িটি যদি উবার এর দেয়া নিয়ম মেনে হয় তাহলে আপনি এই গাড়িটি ব্যবহার করে উবার এর জন্য কাজ করতে পারবেন। বাংলাদেশে নতুন হলেও অনেকেই বিদেশে এই কাজ করে থাকেন।
আমি আগের টিউন অনলাইন শপ এর কথা বলেছিলাম। কিন্তু আপনি অনলাইন শপ ছাড়াও আপনার প্রোডাক্ট বিক্রি করতে পারবেন। এর জন্য প্রায় সবাই ফেসবুক ব্যবহার করে। ফেসবুক একটি পেজ খুঁজে সেখানে আপনি আপনার প্রোডাক্ট এর লিস্ট দিয়ে দিবেন এবং যারা আপনার প্রোডাক্ট নিতে চায় তারা টিউমেন্ট করবে বা আপনার পেজ এ ম্যাসেজ দিবে। এবং আপনি তাদের বাসায় প্রোডাক্ট পৌছিয়ে দিবেন। এটি দিন দিন অনেক জনপ্রিয় হয়ে যাচ্ছে। তাই আপনিও এই কাজটি করতে পারেন।
অনলাইন বা অফলাইন যেখানেই যান সেখানি প্রায় সবসময় নানা ধরনের ভিডিও তৈরির দরকার পরে। এবং ভিডিও তৈরির জন্য অবশ্যই একজন ভাল ভিডিও এডিটর এর দরকার আছে। তাই আপনি ভিডিও এডিটিং পারেন তাহলে আপনি অনেক জায়গায় কাজ করতে পারবেন। আর যদি আপনার ভিডিও নিয়ে কাজ করতে ভাল লাগে তাহলে আজকে থেকেই ভিডিও এডিটিং শেখা শুরু করে দিন। অনলাইন এ ভিডিও এডিটিং এর অনেক কাজ আছে। এছাড়াও অফলাইনেও এর অনেক চাহিদা।
ভিডিও এডিটিং ছাড়াও আপনি সাউন্ড এডিটর হতে পারেন। অথবা আপনি এনিমেশন তৈরি করতে পারেন। এই কাজগুলো শেখা ছাড়া আপনি পারবেন না। তাই এরকম কাজ করতে চাইলে আজেক থেকেই ভিডিও এডিটিং শেখা শুরু করে দিন। আপনি ভিডিও এডিটিং এর অনলাইন কোর্সও করতে পারেন। ইউডেমিতে অনেক ভাল ভাল ভিডিও এডিটিং এর উপর কোর্স আছে। কিছু কিছু কোর্স আপনি ফ্রীতে পেয়ে যাবেন।
যারা নিয়মিত অনলাইনে বিভিন্ন ব্লগ পড়েন বা টেকটিউনস এর টিউন পড়েন তারা এই নামের সাথে আশা করি পরিচিত। এফিলিয়েট মার্কেটিং বলতে আসলে আপনি কোন কোম্পানির জন্য তাদের প্রোডাক্ট বেচে দিলেন। এবং কোম্পানি এর জন্য আপনাকে প্রোডাক্ট এর যত দাম তার ৪-৫% টাকা আপনাকে দিল। ভালভাবে এফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারলে আপনি অনেক বেশি টাকা ইনকাম করতে পারবেন। তবে আমি আগেই বলেছি আপনি জেতাই করতে চান না কেন, আপনাকে প্রথমে এর পিছনে অনেক বেশি সময় ব্যায় করতে হবে। তবেই আপনি সফলতার মুখ দেখবেন।
এফিলিয়েট মার্কেটিং এর জন্য প্রায় সবাই অ্যামাজন বেছে নেয়। কারণ অ্যামাজন এর প্রোডাক্ট সংখ্যা অনেক বেশি। এবং বেশি পে করে। তবে এফিলিয়েট মার্কেটিং এর জন্য আপনাকে প্রথমে ভাল একটি ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে। অর্থাৎ আপনি যেই বিষয়ের বা যেই প্রোডাক্ট এর মার্কেটিং করবেন তার উপর আপনার একটি ভাল ওয়েবসাইট থাকতে হবে। যেখানে নিয়মিত অনেক ভিজিটর ভিজিট করে। তাহলেই কেবল এফিলিয়েট মার্কেটিং সম্ভব। তা না হলে হবে না।
আপনি যদি কোন বিষয়ে পারদর্শী হন এবং আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে ভাল লাগে তাওলে আপনি প্রশ্নের উত্তর দিয়ে টাকা উপার্জন করতে পারেন। এই কাজের জন্য একটি ওয়েবসাইট আছে যার নাম জাস্ট-আন্সার(JustAnswer), এই ওয়েবসাইটে আপনি চাইলে কাজ করতে পারেন। এখানে আপনার কাজ হল আপনি যেই বিষয়ে দক্ষ সেই বিষয়ের প্রশ্নের উত্তর দেয়া।
যদি আপনার উত্তর ঠিক হয় এবং আপনার উত্তরে আপনার ক্লায়েন্ট খুশি হয় তাহলে সে আপনাকে পে করবে। এই ওয়েবসাইট এর কাজগুলো সহজ মনে হলেও আসলে কঠিন। কারণ যদি কোন বিষয়ে দক্ষ না হন তবে আপনি আপনার ক্লায়েন্ট এর প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন না। এবং এর পরে আর কাজও পাবেন না। তাই দক্ষ না হয়ে এখানে কাজ না করাই ভাল।
এই কাজটি সম্পর্কে সবাই জানে। এবং অনেকেই এটি করে। কিন্তু তারপরেও খুব বেশি লাভ করতে পারে না। কারণ কেউ না বুঝেই একটু ইউটিউব চ্যানেল খুলে ফেলে এবং ভিডিও আপলোড দেয়া শুরু করে। এতে শুধু ভিডিও আপলোড দেয়া ই হয়। সেই ভিডিও কেউ দেখে না। আর যদি ভিডিও কেউ না দেখে ত যে ভিডিও দিল তার কোন ইনকাম হবে না। আর ভিডিও না দেখার সবচেয়ে বড় কারণ যিনি ভিডিও বানাচ্ছেন তিনি নিজেই ঐ টপিক সম্পর্কে ভালভাবে জানেন না। তবে তিনি ভিডিওতে কি বলবেন?
তাই ইউটিউব এ ভিডিও দেয়া যেমন সহজ টাকা ইনকাম করা ঠিক তততাই কঠিন। ইউটিউব এ প্রতিদিন ১০০০০ হাজার ভিউ না হওয়া পর্যন্ত টাকা ইনকাম এর চিন্তা না করাই ভাল। কারণ আগে ইউটিউবে ভাল ভাল ভিডিও দিয়ে আপনার আসল সাবসক্রাইবার বাড়াতে হবে। আবার অনেকে দেখি ইউটিউব এ ভিডিও দেখার জন্য সবাইকে বলে। হুম এটা অবশ্যই ভাল। কিন্তু কেউ যদি আপনার ভিডিও ওপেন করে না দেখে কেটে দেয় তখন ইউটিউব বুঝে যে ভিডিও এর টপিক ইন্টারেস্টিং না। তাই সেই ভিডিও তখন আর সার্চ রেজাল্ট এ আসে না।
তাই ভিডিও বানাতে হলে ভাল ভিডিও বানান।
আমাদের মধ্যে অনেকেই ইউডেমিতে নানা ধরনের কোর্স করেছি। এবং ইউডেমির কোর্সগুলো অন্য ওয়েবসাইট এর তুলনায় অনেক ভাল। আপনি চাইলে ইউডেমিতে এরকম কোর্স তৈরি করতে পারেন। এবং সেটা বিক্রি করতে পারেন। যদি আপনার কোর্সটি ভাল হয় তবে কিছদিন এর মধ্যেই আপনি ভাল সারা পাবেন। এবং আপনার অনেক ভাল উপার্জন হবে। কিন্ত আপনার কোর্স এর মান যদি খারাপ হয় তাহলে কেউ সেই কোর্স করবে না। তবে এটি ইন্টারনেট থেকে অর্থ উপার্জন এর একটি ভাল পদ্ধতি।
অনলাইন এ আপওয়র্ক এর মত ওয়েবসাইটে অনেকেই ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট খুঁজে থাকেন। তাই আপনিও কারো এরকম অ্যাসিস্ট্যান্ট হয়ে যেতে পারেন। এবং তাকে বিভিন্ন কাজে সাহায্য করতে পারেন। যেমন ডাটা এন্ট্রি, ফাইল ঠিক করা, ছবি রিসাইজ করা। তবে এই কাজগুলো সহজ বলে এখানে আপান্র প্রতিযোগী বেশি। তবে চেষ্টা করে যান আশা করি আপনিও ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট এর কাজ করতে পারবেন।
বিভিন্ন ওয়েবসাইটে আপনি শিক্ষক হয়ে শিক্ষা দিতে পারবেন। ইদানিং এই কাজটি অনেক জনপ্রিয় হতে শুরু করেছে। ভার্চুয়াল টিচার হতে হলে যে সবসময় কম্পিউটার এর সামনে থাকতে হবে তা না। আপনি চাইলে ভিডিও বানিয়ে তা ওয়েবসাইট এ দিতে পারেন। এছাড়াও লাইভ ক্লাসও করাতে পারেন। অনেকে ফেসবুক এর মাধ্যমে লাইভ ক্লাস করায়।
আপনার লেখার হাত যদি ভাল হয়। এবং লিখতে ভালবাসেন তবে আপনিও অন্য ওয়েবসাইট বা ক্লায়েন্ট এর জন্য আর্টিকেল লিখে টাকা উপার্জন করতে পারেন। এই কাজ আপনি বিভিন্ন ফ্রী-লেন্সিং ওয়েবসাইট এ পাবেন। এছাড়াও বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে এ ধরনের কাজ পাওয়া যায়। আপনি চাইলে করতে পারেন।
আজ এ পর্যন্তই। আশা করি অনলাইন থেকে কিভাবে উপার্জন শুরু করবেন। এবং এর জন্য আপনাকে কি করতে হবে তার উপর আপনার ভাল ধারণা হয়ে গেছে। আশা করি আপনি সেই অনুযায়ী আগাবেন।
টিউনটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সবাই ভাল থাকবেন।সুস্থ থাকবেন। এবং টিউনটি কেমন হলো তা অবশ্যই জানাবেন।
আমি আশরাফুল ফিরোজ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 10 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 77 টি টিউন ও 35 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 6 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।