অনেকের কাছেই ঘরে বসে ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে কাজ করা এবং টাকা উপার্জন করা অনেকটা স্বপ্ন সত্যি হওয়ার মত ব্যাপার। কিন্তু কোন ধরনের পরিকল্পনা এবং নিয়ম এবং মোটিভেশন ছাড়া ফ্রিল্যান্সিং এর মত একটি কাজ করা যথেষ্ট কঠিন হয়ে দাঁড়াতে পারে। এছাড়া গ্রাফিক্স ডিজাইন বা ওয়েব ডিজাইন বা সর্বোপরি ফিল্যান্স ডিজাইনিং হচ্ছে ফ্রিল্যান্সিং এর মধ্যে অন্যতম কঠিন একটি কাজ।
আপনার যদি নিজের কাজের জন্য একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা না থাকে বা নিয়মমাফিক কাজ করার মত মনোভাব না থাকে তাহলে এই ধরনের ফ্রিল্যান্স ডিজাইনিং এর কাজে হয়ত খুব বেশি সফল হতে পারবেন না। তাই আজকের টিউনে এমন ১০ টি বিষয় বা টিপস এর ব্যাপারে বলব যা সব ফ্রিল্যান্স ডিজাইনারদের মনে রাখ উচিৎ এবং মেনে চলা উচিৎ। আর বেশি ভূমিকা না করে এবার মূল টিউনটি শুরু করা যাক।
আপনার প্রত্যেক দিনের প্রত্যেকটি কাজের জন্য একটি রুটিন করে নেয়া উচিৎ। কারন, আপনার সকল কাজের জন্য একটি নির্দিষ্ট রুটিন করে রাখাই সবথেকে সহজ উপায় আপনার ব্রেইনকে বোঝানোর জন্য যে ঠিক কোন সময় আপনার কোন কাজটি করা উচিৎ। অনেকের জন্য এই রুটিনটি হতে পারে ঘুম থেকে ওঠা, ব্রেকফাস্ট করা এবং কাজে লেগে পড়া। আবার অনেকের জন্য এটা অন্যরকমও হতে পারে।
আপনার প্রতিদিনের কাজ যেমনই হোক না কেন, আপনি যদি ফ্রিল্যান্স ডিজাইনার হয়ে থাকেন, আপনার উচিৎ আপনার প্রত্যেকদিনের কাজকে সুন্দরভাবে গুছিয়ে নেয়া আপনার কাজের একটি নির্দিষ্ট দৈনিক রুটিন তৈরি করার মাধ্যমে। এর ফলে আপনি বুঝতে পারবেন যে আপনি ঠিক কোন কাজের জন্য কতটা সময় নিচ্ছেন এবং আপনার কাজগুলোও হবে ধারাবাহিক, যা আপনার ফ্রিল্যান্স ক্যারিয়ার এর জন্য যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
যদিও ফ্রিল্যান্স ডিজাইনিং কাজটির এত চাহিদার অন্যতম একটি কারন হচ্ছে যখন ইচ্ছা তখন কাজ করার স্বাধীনতা। মূলত ফ্রিল্যান্সিং কাজটির সবথেকে বড় বৈশিষ্ট্যও এটি। কিন্তু তবুও আপনি দিনের ঠিক কোন সময়টাতে কতক্ষন ধরে কাজ করবেন এটা নির্দিষ্ট করে রাখা অনেক ভাল একটি সিদ্ধান্ত।
হয়ত আপনি সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা বা সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা এমন যেকোনো সময় সিলেক্ট করে রাখতে পারেন যা আপনার জন্য ভালো। কোন সময়টি আপনি কাজ করার জন্য নির্দিষ্ট করে রাখেবেন এটি সম্পূর্ণ আপনার ইচ্ছার ওপর নির্ভর করবে। কিন্তু সবসময় চেষ্টা করবেন, আপনি যে সময়টা নির্দিষ্ট করে রাখবেন সেটাকে ধরে রাখতে। অর্থাৎ প্রত্যেকদিন ঠিক ঐ সময়টাতে কাজ করার অভ্যাস করবেন। এর ফলে আপনার নিয়মমাফিক কাজ করার একটি ভাল অভ্যাস তৈরি হবে এবং আপনার শরীরও আপনার কাজের সময় এবং কাজের গতির সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবে। নিয়মমাফিক কাজ করা অবশ্যই একটি ভাল অভ্যাস যা আপনার ফ্রিল্যান্স ক্যারিয়ারে আপনাকে অনেক সাহায্য করবে।
হোমওয়ার্ক করার মত অনেক ডিজাইনাররাই তাদের কাজ করার সময় কাজ করার সাথে সাথেই গান শুনতে চান বা টেলিভিশন দেখতে চান। আপনার যদি মনে নাও হয় বা আপনার যদি মনেও হয় যে এসবের কারনে আপনার কাজের কোন বিঘ্ন ঘটছে না, তবুও জেনে রাখবেন এসব সাধারন ছোট ছোট শব্দও নিশ্চিতভাবেই আপনার কাজের কিছুটা বিঘ্ন ঘটাবেই।
আপনার কাজ করার সময় আপনার পেছনে যখন কোন ধরনের কোলাহল চলতে থাকবে, আপনার মস্তিষ্ককে সবসময়ই অতিরিক্ত কাজ করতে হবে সেসব কোলাহলগুলোকে শোনা এবং প্রসেস করার জন্য। আপনি না জানলেও আপনার মস্তিষ্ক এটা করবে। যার ফলে আপনার প্রধান কাজ থেকে আপনার মস্তিষ্ক কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে পড়বে। ফ্রিল্যান্স ডিজাইনিং এর মত কাজের ক্ষেত্রে কাজ করার সময় একটুও অমনোযোগী হওয়া কখনোই উচিৎ নয়। তাই কাজ করার সময় পেছনের সব ধরনের কোলাহল থেকে যতটা সম্ভব বিরত থাকুন।
আপনি যেহেতু আপনার ঘরে বসেই কাজ করছেন তাই সাধারনভাবে আপনার একটি ল্যাপটপ বা পিসি এবং আপনার বিছানা বা একটি চেয়ার এবং একটি টেবিল ছাড়া আর তেমন কিছুই দরকার হবেনা। কিন্তু যেখানে সেখানে বসে কাজ না করে আপনি যদি আপনার কাজের জন্য একটি নির্দিষ্ট জায়গা নির্বাচন করে রাখেন তাহলে আপনার কাজ করতে আরো বেশি সুবিধা হবে।
আপনি যদি কাজ করার জন্য এমন একটি নির্দিষ্ট জায়গা সিলেক্ট করে রাখেন যা আপনার জন্য আরামদায়ক এবং আপনার কাজটি করার সময় যেখানে আপনি সবথেকে বেশি মনঃসংযোগ করতে পারবেন, তাহলে কাজটি করা আপনার জন্য আরো অনেক বেশি সহজ। যেমন, আপনি যদি বিছানায় বসে ডিজাইনিং এর কাজ করেন তাহলে আপনি খুব বেশি মনোযোগ সহকারে করতে পারবেন না। কারন বিছানায় বসলে সাধারনভাবে আমাদের মস্তিষ্ক এবং শরীর নিজেদেরকে ঘুমানোর জন্য তৈরি করে। কিন্তু আপনি যদি চেয়ার টেবিলে বসে কাজ করেন তাহলে আপনার মস্তিষ্ক এবং শরীর নিজেদেরকে আপনার কাজটি সহকারে করার জন্যই তৈরি করবে। তাই ফ্রিল্যান্স ডিজাইনারদের উচিৎ নিজের কাজের জন্য একটি নির্দিষ্ট জায়গা সিলেক্ট করে নেয়া এবং সবসময় সেখানেই কাজ করার চেষ্টা করা।
কাজ করার সময় আরো কিছু জিনিস কাজের থেকে আপনার মনোযোগ সরাতে বাধ্য করতে পারে। এগুলো হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের সোশ্যাল মিডিয়ার নোটিফিকেশান বা ইমেইল প্রোগ্রাম বা কোন অনলাইন স্টোরের নোটিফিকেশান বা এড অথবা যেকোন ওয়েবসাইট যা আপনার কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। এসব প্রোগ্রাম এবং ওয়েবসাইট আপনার মনোযোগ সরিয়ে দিয়ে আপনার কাজের বিঘ্ন ঘটাতে পারে। তাই যদি আপনি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে আপনার কাজটি করতে চান তাহলে এসব অনাকাঙ্খিত প্রোগ্রামস এবং ওয়েবসাইটগুলো ব্লক করে রাখুন। আপনার কাজের সময় বাদে বাকি সব সময় আপনি এগুলো অন করে রাখুন কিন্তু কাজের সময় এই প্রোগ্রামগুলো ব্লক করে রাখাই আপনার জন্য সবথেকে ভাল হবে।
যারা ফ্রিল্যান্স ডিজাইনিং করেন তারা সবাই জানেন যে এই কাজে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হল ক্লায়েন্ট। আপনি যে ক্লায়েন্টের প্রোজেক্টে কাজ করছেন সেই ক্লায়েন্ট চাইলেই যেকোনো সময় আপনার কাজের যেকোনো ধরনের পরিবর্তন বা পরিমার্জন করতে পারে। তাই ক্লায়েন্ট আপনার কাজের কোন ধরনের পরিবর্তন করলে তা আপনাকে অবশ্যই যত দ্রুত সম্ভব জানতে হবে। কারন আপনাকেই কাজটি করতে হবে। এর জন্য আপনার দরকার হবে ক্লায়েন্টের সাথে ইমেইলের মাধ্যমে সবসময় যোগাযোগ রাখা যা প্রায় পৃথিবীর সব ফ্রিল্যান্সাররাই করে থাকেন।
কিন্তু কাজের মধ্যে ইমেইল চেক করলে বা রিপ্লাই দিলে আপনার কাজের যথেষ্ট ব্যাঘাত ঘটবে। তাই আপনি ক্লায়েন্টদেরকে রিপ্লাই দেয়ার জন্যও একটি নির্দিষ্ট সময় বেছে রাখুন। সবথেকে ভাল হয় আপনি যদি কাজের শেষের দিকে বিকালে ক্লায়েন্টদেরকে রিপ্লাই দেন। এর ফলে আপনি ক্লায়েন্টদের সাথেও যোগাযোগ রাখতে পারবেন এবং মনোযোগ সহকারে আপনার কাজটিও করতে পারবেন।
ওয়েব ডিজাইনিং এর ক্ষেত্রে আপনার কাজের প্রত্যেকটি অংশ আপনার কাছে সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ হবে এমনটা নয়। আপনাকে ক্লায়েন্টদের চাহিদা অনুযায়ী বুঝতে হবে যে ক্লায়েন্ট এর কাছে আপনার প্রোজেক্টের মধ্যে কোন কাজটি সবথেকে বেশি ইম্পরট্যান্ট এবং সেই অনুযায়ী কাজ করতে হবে আপনাকে। এছাড়া আপনার যদি মনে হয় যে আপনার প্রজেক্টের মধ্যে এই অংশটি আপনার এবং ক্লায়েন্টের জন্য সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তাহলে আপনার প্রজেক্টের সেই অংশটি আগে করে ফেলুন।
ক্লায়েন্টের দেয়া প্রোজেক্ট এর প্রত্যেকটি কাজই আপনার জন্য সহজ হবে বা প্রত্যেকটি কাজই আপনার জন্য কঠিন হবে এমনটা নয়। আপনার প্রোজেক্ট এর মধ্যে এমন কিছু কাজ থাকবে যা আপনার জন্য তুলনামুলকভাবে সহজ এবং কিছু কাজ থাকবে যা আপনার জন্য তুলনামুলকভাবে কঠিন হবে। এমন অবস্থায় আপনি সবসময় কঠিন কাজটি নিয়েই আপনার প্রোজেক্ট শুরু করবেন। কঠিন কাজগুলোকে কখনো পড়ে করার জন্য ফেলে রেখে সহজ কাজ আগে করবেন না। কঠিন কাজগুলো সবসময় আগে করার চেষ্টা করবেন কারন সহজ কাজ আপনি সহজেই পড়ে করে ফেলতে পারবেন। কঠিন কাজগুলো আগে শেষ করে ফেলতে পারলে আপনাকে কখনো সময়ের ঘাটতিতে পড়তে হবেনা।
সবসময় লক্ষ্য করুন যে আপনার প্রোজেক্টের কোন কাজটি করতে কতক্ষন সময় লাগল। আপনি যদি প্রত্যেকটি কাজের জন্য আলাদা আলাদা ভাবে সময় সিলেক্ট করে থাকেন, তাহলে এই সময়গুলোকে ফলো করার চেষ্টা করুন স্টপওয়াচ বা টাইমারের সাহায্যে। টাইমারের সাহায্যে আপনার কাজের গতি ট্র্যাক করতে পারলে আপনার কোন কাজটি করতে কতটুকু সময় লাগল এবং কোন কাজটি কতটুকু সময়ের মধ্যে শেষ করতে হবে এটিরও আপনি একটি হিসাব রাখতে পারবেন। এভাবে আপনার প্রত্যেকটি কাজের হিসাব রাখলে আপনার সম্পূর্ণ প্রজেক্টটি কমপ্লিট করতে ঠিক কতটুকু সময় লাগবে এটারও অনেকটা ধারনা পাবেন। এবং সময়ের মধ্যে কাজ করলে আপনার কাজ করার গতিও আস্তে আস্তে বৃদ্ধি পাবে।
কাজকে আপনি সবসময় সবথেকে বেশি গুরুত্ব দিলেও কখনো সম্পূর্ণভাবে কাজের মধ্যেই ঢুকে পড়বেন না। সবসময় মনে রাখবেন এই কাজের বাইরেও আপনার একটি জীবন আছে। এবং মানুষের জীবনে এসব কাজ যতটা গুরুত্বপূর্ণ, ঠিক ততটাই গুরুত্বপূর্ণ খেলাধুলা এবং বিনোদন। আপনি যদি খেলাধুলা না করেন বা আপনার মনকে রিফ্রেশ করার জন্য কোন ধরনের বিনোদনের সাথে যুক্ত না রাখেন তাহলে তা আপনার দেহ এবং মনের জন্য ক্ষতিকর। আপনার দেহ এবং মনকে সুস্থ রাখতে হলে অবশ্যই আপনাকে খেলাধুলা করতে হবে বা নিজেকে কোন ধরনের বিনোদনের সাথে যুক্ত রাখতে হবে। তাই আপনার কাজের পাশাপাশি খেলাধুলা এবং বিনোদনের জন্যও পর্যাপ্ত পরিমান সময় রাখুন।
মূলত এগুলোই প্রয়োজনীয় দশটি টিপস যা একজন ফ্রিল্যান্স ডিজাইনার হিসেবে মেনে চলা উচিৎ। আশা করি এই টিউনটি পড়ে আপনাদের মধ্যে কেউ উপকৃত হয়েছেন। আজকের মত টিউনটি এখানেই শেষ করছি। টিউনটি সম্পর্কে আপনাদের কোন ধরনের কোন প্রশ্ন থাকলে বা কোন মতামত থাকলে টিউনমেন্টে জানাতে পারেন। ভালো থাকবেন।
You can contact me on : Facebook
আমি সিয়াম একান্ত। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 9 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 40 টি টিউন ও 82 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 12 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আমার নাম সিয়াম রউফ একান্ত। অনেকে সিয়াম নামে চেনে আবার অনেক একান্ত নামে। যাইহোক, পড়াশুনা একেবারেই ভাল লাগেনা আমার। ভাল লাগার মধ্যে দুইটা জিনিস , ফটোগ্রাফি আর প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তির প্রতি ভাললাগা থেকেই টেকটিউন্স চেনা এবং টেকটিউন্সে আইডি খোলা। দেখা যাক কতদূর কি করা যায়......
ধন্যবাদ বিষয় গুলো ভালোভাবে উপস্থাপন করার জন্য