সুপ্রিয় টেকটিউনস কমিউনিটি, সবাইকে আমার সালাম এবং শুভেচ্ছা জানিয়ে বর্তমানে সোনার হরিণখ্যাত চাকরীর যুগে নিজেকে সাবলম্বী করার শ্রেষ্ঠ উপায় সম্বলিত টিউনে আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি।
আজ থেকে ৫-১০ বছর পেছনে যদি একবার তাকান তাহলে দেখতে পাবেন ঘরে বসে কোন কাজ করাকে কতোটা নিচু স্তরের কাজ বলে মনে করা হতো। কারন ঘরে বসে কাজ বলতে তখন ছিলো- দর্জি, কাঁথা সেলাই, কুটির শিল্প, ছবি আঁকা ইত্যাদি ইত্যাদি। এগুলো কোন শিক্ষিত ছেলেদের কাজ বলে গন্য করা হতো না। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনে তথ্য প্রযুক্তি এবং ইন্টারনেটে মানুষের বিচরন বেড়ে যাবার কারনে এই কাজের ক্ষেত্রও অনেকাংশে বেড়ে গেছে।
এখন আপনি চাইলে ঘরে বসেই প্রথম শ্রেনীর কাজগুলো অনায়াসেই করতে পারবেন। যা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আপনার অবস্থানকে করবে আরো সুদৃঢ়। বর্তমানে ওডেস্ক, ইল্যান্স, গুরু সহ আরো কিছু প্লাটফর্ম আছে যার সাহায্যে হাজার হাজার তরুণ তরুণী তাদের কাঙ্খিত ভবিষ্যৎ নিজের হাতে তৈরী করছে।
আজকের টিউনে আপনারা জানতে পারবেন এমন কিছু সম্মানজনক কাজ যেগুলো ঘরে বসে করলেও আন্তর্জাতিক ভাবে খ্যাতি অর্জন করা যায়। তাহলে আর দেরি কেন? চলুন যেনে নেই আপনার জন্য কোন জায়গাটা অপেক্ষা করছে।
রাইটার বা লেখক কথাটা শুনলেই কেমন জানি হুমায়ুন আহমেদ, জাফর ইকবাল কিংবা আনিসুল হকের কথা মনে আসে। এ কারনে আপনার মনে হতে পারে লেখক হতে হলে আপনাকে অনেক বই লিখতে হবে এবং সেগুলো যথাযথ ভাবে প্রকাশ করে পাঠকের কাছে পৌছাতে হবে। কিন্তু একজন ফ্রিল্যান্সার লেখক মানে এরকম কিছু না, যে শুধু বই লেখবে এবং সেগুলো প্রকাশ করবে।
আপনার কাজের জন্য রয়েছে বিশাল এক ক্ষেত্র। আপনি বিভিন্ন বিষয়ে আর্টিকেল লিখতে পারেন, ব্লগ বা ফোরামের জন্য টিউন লিখতে পারেন, বিভিন্ন ওয়েব সাইটের পেইজের কন্টেন্ট লিখে দিতে পারেন, প্রডাক্টের রিভিউ দিতে পারেন কিংবা যে কোন টেকনিক্যাল ডকুমেন্ট বা আরো কিছুই আপনি লিখতে পারবেন।
আমরা যদি কাজের জন্য বিশ্বসেরা ওয়ার্কিং প্লাটফর্মগুলো দেখি তাহলে দেখবো আমাদের ধারনাতীত নিবন্ধধিত রাইটার রয়েছে সেখানে। আর কাজের ক্ষেত্র তো ব্যাপক। চলুন এক নজরে পরিসংখ্যানটা একটু দেখে নেই।
Statistics of Writter In Different Platform | ||
---|---|---|
Odesk | Elance | Guru |
263, 700 জন রাইটার | 24, 177 জন রাইটার | 180, 000 জন রাইটার |
যেখানেই মধু আছে সেখানে মাছি তো থাকবেই। তার মানে একটু আগে যে বললাম, বিভিন্ন প্লাটফর্মে শত সহস্র রাইটাররা কাজ করছেন। তাহলে তাদের কাজগুলোর জন্য অনেক বেশি পরিমানে এডিটিং এর প্রয়োজন তো হবেই। মজার ব্যাপার হলো রাইটারদের সাথে তুলনা করলে এডিটর এর সংখ্যা কিন্তু কম না। এবার বলছি একজন এডিটর এর কাজ আসলে কী? বিশাল বিশাল কমিউনিটি ব্লগ গুলোতে কোন টিউন পাবলিশড করার আগে সেগুলো এডিট করা হয়, ওয়েব পেজের কন্টেন্ট এবং ইবুক এডিটিং এর জন্যও এডিটরের চাহিদা ব্যাপক।
বিভিন্ন প্লাটফর্মে প্রায় সহস্রাধিক ফ্রিল্যান্স এডিটর কর্মরত আছেন। তারা একই সাথে রাইটার এবং এডিটরের কাজ করে বলে আসলে তাদের সঠিক সংখ্যাটা বলা সম্ভব না। আপনি যদি ইংরেজিতে পারদর্শি হয়ে থাকেন, আপনার ব্যাকরণগত দক্ষতা যদি অনেক বেশি থাকে তাহলে আপনার জন্য সব চেয়ে উপযুক্ত কাজ হলো এডিটিং। কারন ভালো এডিটরদের চাহিদা বিশ্বব্যাপি প্রথম শ্রেণীর।
বিভিন্ন প্লাটফর্ম থেকে আপনাকে খুঁজে বের করা হবে তাদের ব্লগ, ম্যাগাজিন কিংবা অনলাইন নিউজ পেপারের জন্য। তাহলে আর দেরী কেন? আজই যে কোন প্লাটফর্মে নিজের জন্য তৈরী করে ফেলুন একটি আকর্ষনীয় এবং শতভাগ পরিপূর্ণ প্রোফাইল।
একজন অনুবাদকের কাজ হলো একটি ভাষার শব্দকে অন্যভাষায় রূপান্তরিত করা। তবে যদি মনে করেন থাকেন যে সব ভাষাকে ইংরেজিতে কিংবা ইংরেজি থেকে অন্য ভাষায় রূপান্তরিত করবেন তাহলে সামান্য ভুল হবে। আপনাকে চাইনিজ থেকে স্প্যানিস কিংবা কিংবা হিন্দি থেকে এরাবিক করতেও হতে পারে। তবে আপনি আপনার পারদর্শিতা মোতাবেক কাজ করতে পারবেন।
মজার ব্যাপার হলো যেখানে প্রায় সারাবিশ্বে ১৮০, ০০০ লোক লেখালেখির সাথে সম্পৃক্ত সেখানে ফ্রিল্যান্স প্লাটফর্মগুলোতে মাত্র ১৫ হাজার অনুবাদক আছে। সুতরাং এটা বলা যেতে পারে আপনি ভাষা বিষয়ে দক্ষ হলে খুব তাড়াতাড়ি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন।
সফটওয়্যার ডেভেলপারদের চাহিদা প্রায় আকাশ চুম্বি। তবে যেন তেন লোকের জন্য এই সেক্টরে কাজ করা কঠিন। কারন সারাবিশ্বের বিভিন্ন প্লাটফর্মে প্রায় ৬০ হাজার সফটওয়্যার ডেভেলপার রয়েছেন যাদের রেটিং ৪.৫/৫ এর উপরে। নিজে যদি যোগ্য থাকেন তাহলে আপনার যোগ্যতা প্রমাণের সময় এসে গেছে। আজই লেগে পড়ুন নিজেকে প্রমাণ করতে।
আপনি যদি হয়ে থাকেন একজন উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তি, আপনি হয়ে থাকেন গণিত, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, ইংরেজি কিংবা অন্যকোন সাবজেক্টে বিশেষজ্ঞ তাহলে এই ক্ষেত্রটি শুধুই আপনার জন্য। একটি সুন্দর ওয়েব ক্যামেরা, ভালো একটি ইন্টারনেট কানেকশন এবং একটি উপযুক্ত প্রোফাইল আপনাকে হাজার হাজার ডলার আয় করতে সহযোগিতা করবে।
তবে আপনার যদি নিজেকে প্রমাণ করার জন্য কোন উপযুক্ত সার্টিফিকেট না থাকে তাহলে আপনি কেবল সেকেন্ড ল্যাংগুয়েজ হিসাবে ইংরেজি শেখাতে পারবেন যদি আপনি ইংরেজি ভালো বলতে পারেন। বর্তমানে ওডেস্ক, ইল্যান্স এবং গুরুতে ফ্রিল্যান্স টিচারের সংখ্যা যথাক্রমে- ৭০০০, ৩০০০ এবং ৪০০০ হাজার। আপনার সফলতার উজ্জল সম্ভাবনা কতোটুকু সেটা নিজেই অনুমান করুন।
এটা খুবই দুর্লভ একটি চাকরীর ক্ষেত্র। কারন সারাবিশ্বে এখনো এর ব্যাপক চাহিদা থাকলেও উপযুক্ত ট্রেইনারের সংখ্যা আসঙ্কাজনক হারে সীমিত। আপনি যদি একজন সার্টিফায়েড জিম ট্রেইনার হয়ে থাকেন তাহলে আপনার চাহিদা এখন সর্বাধিক। কোন প্রকার প্রতিযোগিতা ছাড়ায় খুঁজে পেতে পারেন আপনার ক্লায়েন্টকে।
বর্তমানে টপ ফ্রিল্যান্স প্লাটফর্মগুলোতে যেমন গুরুতে ৯০০০ এর মতো, ওডেস্ক এ ২০০ এর মতো এবং ইল্যান্সে ৪০০ এর মতো ফিটনেস ট্রেইনার রয়েছে। সুতরাং বুঝতেই পারছেন আপনার চাহিদা এখানে কতোটুকু। স্কাইপ কিংবা ভিডিও কলিং এর মাধ্যমে সেবা দিতে আজই তৈরী করুন আপনার ব্যক্তিগত প্রোফাইল।
টিউনের শেষ দিকে আসলেও ওয়েব ডিজাইনার কিংবা গ্রাফিক্স ডিজাইনারে কথা কিন্তু বলিনি। আপনারা হয়তো খুবই আশ্চর্য হয়েছেন। অনেকেই হয়তো টিউনটাকে অসম্পূর্ণ ভাবতে পারেন। আসলে এই দুইটা বিষয়ের চাহিদা এখন সর্বোচ্চ লেবেলে পৌছে গেছে।
বাংলাদেশের আইটি কোচিংগুলো এই দুইটা বিষয়কে পুঁজি করেই তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে দক্ষ লোকের পাশাপাশি অদক্ষরাও মার্কেটা ধ্বংসের পাশাপাশি গড়ার কাজ করে যাচ্ছে। তবে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রগুলোও এই দুই ক্ষেত্রে সর্বাধিক। আশা করি ভেবে চিন্তে নিজের একটা সুদৃঢ় অবস্থান তৈরী করবেন।
টিউনটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অথবা বুঝতে যদি কোন রকম সমস্যা হয় তাহলে আমাকে টিউমেন্টের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না। কারন আপনাদের যেকোন মতামত আমাকে সংশোধিত হতে এবং আরো ভালো মানের টিউন করতে উৎসাহিত করবে। সর্বশেষ যে কথাটি বলবো সেটা হলো, আশাকরি এবং অপরকেও কপি পেস্ট টিউন করতে নিরুৎসাহিত করি। সবার সর্বাঙ্গিন মঙ্গল কামনা করে আজ এখানেই শেষ করছি। দেখা হবে আগামী টিউনে।
আপনাদের জন্য » সানিম মাহবীর ফাহাদ
আমি সানিম মাহবীর ফাহাদ। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 11 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 176 টি টিউন ও 3500 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 159 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আগে যা শিখেছিলাম এখন তা শেখানোর কাজ করছি। পেশায় একজন শিক্ষক, তবে মনে প্রাণে টেকনোলজির ছাত্র। সবার দোয়া প্রত্যাশি।
আসলে ফ্রিল্যান্সিং ব্যাপারটা অনেকের কাছে রূপকথার মতো মনে হয়। রাতারাতি বড় লোক হওয়ার ধান্ধা সবাইকে আচ্ছন্ন করে রাখে। তবে এটা যে একটা ক্রিয়েটিভ কাজের ক্ষেত্র এটা আমরা সবাই বুঝতে পারিনা। সহজ এবং প্রতিযোগিতাপূর্ণ কাজের ভিড়ে আপনার বর্ণনাকৃত অপেক্ষাকৃত কম প্রতিযোগিতাপূর্ণ এবং গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো দেখে ভালো লাগলো। আমরা শুধু কিছু নির্দিষ্ট কাজের পিছনে ছুটছি। যদি আপনার উল্লেখকৃত কাজগুলোতে চেষ্টা করি তাহলে আশা করা যায় আমরা সফল হবো।
কষ্ট করে অনেক সুন্দর এবং তথ্যবহুল একটি টিউন করেছেন। আল্লাহ আপনাকে এর জন্য উত্তম প্রতিদান দিবেন। আপনার জন্য শুভকামনা থাকলো। অনেক অনেক অনেক ধন্যবাদ ফাহাদ ভাই 🙂