মজিলা সম্প্রতি তাদের নতুন মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম Firefox Os অবমুক্ত করেছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ সহ অনেকগুলো দেশে Firefox OS নির্ভর ডিভাইস চলে এসেছে। সিম্ফনি আর গ্রামীনফোনের মাধ্যমে বাংলাদেশে এসেছে FireFox os স্মার্টফোন। নতুন অপারেটিং সিস্টেম হিসাবে ভালো সাড়া পাচ্ছে বাংলাদেশে।
নতুন আগত এই ওএস ও এর ফিচার সম্পর্কে যারা বেশি কিছু জানেন না। তাদেরকে জানানোর উদ্দেশ্যেই মূলত আমার আজকের এই লেখা।
শক্তিশালী ওয়েব টেকনোলজিঃ ফায়ারফক্স ওএস এর প্রধান ও অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি তৈরী ওয়েব টেকনোলজি উপর ভিত্তি করে। এবং যা একে আরো শক্তিশালী ও দ্রতগতির করেছে। লিনাক্স কার্নেলের উপর Firefox ব্রাউজার ইঞ্জিন বসিয়ে তার উপর UI (User Interface) এর লেয়ার বসানো হয়েছে এবং যার (UI) সম্পূর্ণটাই HTML5, CSS3 ও JavaScript দিয়ে তৈরি। কল,মেসেজিং,ক্যামেরা অ্যাপ থেকে শুরু করে সোশাল অ্যাপ, ম্যাপ ইত্যাদি সব HTML5 এ লেখা।
অ্যাডাপ্টিভ সার্চঃ Firefox OS এ রয়েছে শক্তিশালী অ্যাডাপটিভ সার্চ সুবিধা। যা আপনার সার্চ করার অভিজ্ঞতাকে পাল্টে দেবে। এর মাধ্যমে আপনি কোন কিছু সার্চ করলে ওই বিষয় সম্পর্কিত অ্যাপ এসে হাজির হবে (যা আগে থেকে আপনার ফোনে ইন্সটল করা নেই) এবং আপনি সহজেই ও সল্প সময়ের মধ্যেই আপনার কাঙ্ক্ষিত সার্চ রেজাল্ট পেয়ে যাবেন।
আর একটা মজার জিনিস হল আপনি যা সার্চ করবেন তার ভিত্তিতে ব্যাকগ্রাউন্ড ওয়ালপেপার পরিবর্তন হবে।
ওয়েব অ্যাপঃ যেহেতু Firefox OS নির্মিত ওয়েব টেকনোলজির উপর ভিত্তি করে। Firefox OS এর অ্যাপগুলোও ওয়েব টেকনোলজি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়। আর ওয়েব টেকনোলজি অর্থাৎ HTML, CSS, JavaScript দিয়ে লিখা অ্যাপ গুলোকেই বলা হচ্ছে ওয়েব অ্যাপ।
ওয়েব অ্যাপ বলতে আমরা মূলত একটা ওয়েব সাইটে কোন সার্ভার থেকে সচল হওয়া প্রোগ্রামকে বুঝে থাকি। কিন্তু মজিলা ধারণাটির পরিবর্তন করেছে। Firefox OS এ ওয়েব অ্যাপ চলবে অফলাইনে তবে বিশেষ সুবিধার হোস্টেড অ্যাপও রয়েছে।
লো-হার্ডওয়্যার রিকোয়ারমেন্টঃ ফায়ারফক্স ওএস কে একটা ওয়েব ব্রাউজার বলা যেতে পারে। কারণ এটি চলছে ফায়ারফক্স ব্রাউজার ইঞ্জিনের উপর। আর সবগুলো অ্যাপই ওয়েব অ্যাপ। ফলে প্রযুক্তিগত কারণে কম হার্ডওয়্যারেই অনেক ভালো পার্ফমেন্স পাওয়া যায়। জেনে অবাক হবেন, মাত্র ১২৮ মেগাবাইট র্যামের ফোনেও কোন সমস্যা ছাড়াই চালাতে পারবেন ফায়ারফক্স ওএস।
ভাষাঃ বাংলা সহ ৩৭ টিরও বেশি ভাষা রয়েছে Firefox OS এ। এবং এটা একটি লোকালাইজড OS. এটি সম্পূর্ণ বাংলায় লোকালাইজেশন করা। লোকালাইজেশন অর্থ কিন্তু ঠিক অনুবাদ হয়। লোকালাইজেশন হচ্ছে কোন বিদেশি ভাষাকে নিজের ভাষায় এমনভাবে উপস্থাপন করা যেন সাধারণ মানুষ সহজে বুঝতে পারে।
বিল্ট-ইন বাংলা কিবোর্ডঃ অন্যান্য অপারেটিং সিস্টেম চালিত ফোনে বাংলা লিখতে হলে আপনাকে থার্ড পার্টি কিবোর্ড অ্যাপ ব্যবহার করে লিখতে হবে। অনেক ফোনে হয়তো বাংলাই লেখা যায় না। কিন্তু Firefox OS এ বাংলা লেখার জন্য বিল্ট-ইন বাংলা কিবোর্ড রয়েছে। এবং ফোনেটিক ও প্রভাত লেআউট ব্যবহার করে বাংলা লিখতে পারবেন।
লোকেশন সার্ভিসঃ Firefox OS এ রয়েছে Mozilla Location Service (MLS) এর উন্মুক্ত সেবাটি। এর মাধ্যমে জিপিএস ছাড়াই ডিভাইসের সেলুলার বা ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে অবস্থান জানা যায়। এটা কাজ করে মূলত নেটওয়ার্কের টাওয়ারের অবস্থানের উপর ডিভাইসের অবস্থান নির্ণয়ের মাধ্যমে।
মার্কেটপ্লেসঃ Firefox OS এর অ্যাপের জন্য রয়েছে Firefox Marketplace. যেখানে রয়েছে হাজারো অ্যাপের সম্ভার। নিত্য প্রয়োজনীয় ও জনপ্রিয় প্রায় সকল অ্যাপ ও গেমস রয়েছে ফায়ারফক্স মার্কেটপ্লেসে। এছাড়াও লোকাল অনেক অ্যাপ রয়েছে। প্রতিদিন আরো অনেক অনেক অ্যাপ যোগ হচ্ছে মার্কেটপ্লেসে।
ফেসবুক সোশাল ইন্টিগ্রেশনঃ Firefox OS এর কনট্যাক্ট সেটিং এ ফেসবুক সিঙ্ক নামে একটি অপশন রয়েছে। এর মাধ্যমে খুব সহজেই ফেসবুক থেকে কনট্যাক্ট ইম্পোর্ট করা যায়। আপনি যখন কনট্যাক্ট এ ঢুকবেন, নামের সাথে ফেসবুকের ছবি, ফোন নম্বর, ইমেইল অ্যাড্রেস, হোম লোকেশন দেখতে পাবেন। এবং কনট্যাক্ট থেকে সহজেই এসএমএস,ইমেইল আইডিতে মেইল কিংবা ফেসবুক ওয়ালে মেসেজও দিতে পারবেন।
বিন্ট-ইন ফটো এডিটরঃ Firefox OS এ রয়েছে বিল্ট-ইন ফটো এডিটর অ্যাপ। ছবি তোলার পরে গ্যালারী থেকে বিল্ট-ইন ফটো এডিটরের মাধ্যমে ছবির এক্সপোজার বাড়াতে কমাতে, ক্রপ করতে, ছবিতে বিভিন্ন ইফেক্ট ও বর্ডার দিতে পারবেন।
মিউজিক অ্যাপঃ Firefox OS ফোনে MP3, AAC, WAV ইত্যাদি মিউজিক ফাইল অ্যাড করতে পারবেন। ফাইলগুলো Play List, Artist, Album আকারে মিউজিক অ্যাপে সর্ট হবে। প্লে-লিস্ট থেকে আপনি চাইলে ব্লুটুথের মাধ্যমে মিউজিক ফাইল শেয়ার করতে পারবেন।
এফএম রেডিওঃ Firefox OS ডিভাইসে হেডফোন সংযুক্ত করে আপনি রেডিও শুনতে পারবেন। এফএম রেডিও অ্যাপটি চালু করার সাথে সাথে রেডিও স্টেশন খোজা করা শুরু করবে এবং প্রাপ্ত স্টেশনগুলো প্রদর্শন করবে। আপনি চাইলে পছন্দের রেডিও স্টেশনগুলো পরবর্তীতে দ্রুত অ্যাকসেসের জন্য বুকমার্ক করে রাখতে পারেন।
ভিডিও প্লেয়ারঃ ক্যামেরার অ্যাপের সাহায্যে ভিডিও গ্রহণ করে গ্যালারী বা ভিডিও প্লেয়ার অ্যাপ থেকে ভিডিওগুলো দেখতে পারবেন। এছাড়াও H.264 এবং VP8 ফরমেটের ভিডিও ইম্পোর্ট করতে পারবেন।
সিকিউরিটিঃ কোন অপারেটিং সিস্টেমের কথা বলতে গেলে সবার আগেই আসে সিকিউরিটির প্রশ্নটি। তাই এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে ব্যবহারকারীর সর্বোচ্চ সিকিউরিটি নিশ্চিত করতে Firefox Os এ রয়েছে অ্যাপ সিকিউরিটি এবং Do Not Track সুবিধা।
অনেক ওয়েবসাইট আছে যেগুলো ব্রাউজিং এর সময় ইউজারকে ট্র্যাক করে এবং বিভিন্ন অ্যাড প্রদর্শন করে। আপনি যদি চান ওয়েবসাইটগুলো আপনাকে ট্র্যাক করবে না তাহলে সেটিং থেকে Do Not Track অপশনটি এনেবল করে দিলে ব্রাউজিং এর সময় ওই সাইটের কাছে একটা তথ্য যাবে যে আপনি চান না আপনাকে ট্র্যাক করা হোক। (অবশ্য এটা মানা বা না মানা ওয়েবসাইটের ইচ্ছাধীন)
অ্যাপ সিকিউরিটির জন্য রয়ছে WEB API, যা অ্যাপ্লিকেশনের জন্য হার্ডওয়্যার অ্যাকসেস পারমিশন দিয়ে থাকে।
সিকিউর অ্যাপ ইনস্টল এবং আপডেটের জন্য রয়েছে রোবাস্ট পারমিশন মডেল।
আমি ওয়াহিদুজ্জামান হৃদয়। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 8 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 10 টি টিউন ও 105 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 0 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
দারুন লিখেছেন ! আচ্ছা তার মানে মোটামুটি ওয়েব ডিজাইন জানলেই কি ফায়ারফক্স এর জন্যা এপ ডেভলপ করা সম্ভব ? আর বাংলাদেশে সর্বনিম্ন দাম কত হতে পারে ?