টিউন্টারভিউ গেস্ট: অমি আজাদ, ডেভেলপার ইভানজেলিস্ট, মাইক্রোসফট বাংলাদেশ
টিউন্টারভিউ হোস্ট: আরিফ নিজামী
সময়: ১৮ সেপ্টেম্বার, ২০১১ । রবিবার । দুপুর ২টা ।
স্থান: মাইক্রোসফট বাংলাদেশ অফিস । গুলশান, ঢাকা ।
ব্যাপ্তি: প্রায় ৫৭ মিনিট ।
অমি আজাদ । বাংলা ভাষাকে ই-জগতে প্রতিষ্ঠিত করার পিছনের গুটিকয়েক কারিগরের একজন । তার নামের সাথে আছে দেশের প্রথম Microsoft Most Valuable Professional (MVP) পুরস্কার অর্জনের গৌরব । বর্তমানে মাইক্রোসফটের ডেভলপার ইভানজেলিস্ট পদে থাকা অমি আজাদের শুরু থেকে সব গল্প জানব আজ ।
টেকটিউনস: শুভ অপরাহ্ন । প্রথমেই আপনার নিজের সম্বন্ধে কিছু শুনব ।
অমি আজাদ: আমার জন্ম দিনাজপুরে। অনেকে মনে করে গ্রামে জন্ম আমার, আসলে ওটা একটা ভালো শহর। বাংলাদেশের আর দশটা শহর যেমন থাকে তেমনই শহর। আমাদের অপার্চুনিটি বলতে ঢাকার মতন তেমন কিছু ছিল না; এটা উপলব্ধি হলো যখন ঢাকায় আসলাম, মনে হলো এক বিশাল সমুদ্রে এসে পড়লাম। ছেলেমেয়েদের মধ্যে যে স্মার্টনেস যে নলেজ, তা আমাদের মধ্যে ছিল না। তারপরেও যেটা স্বীকার করবো যে ফ্যামিলি থেকে আমরা হিউজ সাপোর্ট পেতাম। উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারে আমার জন্ম; পরিবারের পক্ষ থেকে কখনই কোন কমপ্লেইন ছিল না, যে এটা করছ কেন ওটা করছ কেন। শুধু একবার একটাই কমপ্লেইন হয়েছিল, আমি বলেছিলাম যে চারুকলায় পড়ালেখা করব; আব্বা আমাকে মেরে ফেলার জন্য বন্দুক বের করেছিলেন 🙂
পরিবার থেকে ভীষণ সাপোর্ট পেয়েছি আমি; একটু বলি, ১৯৯৪ সালে দিনাজপুর থেকে ঢাকায় ডায়াল করতাম ইন্টারনেট ব্যবহার করার জন্য, সেসময় মিনিটে বিল উঠত ৪০ টাকা। এই STD কল করে ইন্টারনেট ব্যবহার করতাম প্রতিদিন আধা ঘন্টা ২০ মিনিটের মত; মাসে ২৫-৩০ হাজার টাকা ফোনের বিল আসতো এবং আব্বা এই ফোনের বিলটাও বেয়ার করতেন কিন্তু কিছু না বলে। এমন না যে আব্বার ঘুষের টাকা ছিল, তিনি এই সাপোর্টটা দিতেন যে ছেলে কিছু করতে চায়। আমার মনে হয় না এখনকার বাবারা এরকম সাপোর্টট দিবে! শুধু বাবা না, আমি প্রচন্ড সাপোর্ট পেয়েছি বাবা, মা, ভাই, বৌ সবার কাছ থেকে। ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ডটা এরকমই।
আমরা দুই ভাই, দিনাজপুরে ISP করার মধ্যে দিয়ে আইটি ফিল্ডে এন্ট্রি। অনেকেই হয়ত নাম জানে- দিনাজপুর অনলাইন। দিনাজপুর অনলাইনে কাজ করার পাশাপাশি বাংলা নিয়ে কাজ করার একটা প্যাশন ছিলো। তখন একুশে নামের একটা প্রজেক্টেও কাজ করতাম আর এরই মধ্য দিয়ে তখন পরিচয় হয় ডঃ রবিন আপটন, হাসিন হায়দারের মতন মানুষের সাথে। হাসিন আমাকে উৎসাহ দেয় যে বাংলা নিয়ে কাজটা আমি প্রফেশন হিসেবে নিচ্ছিনা কেন এবং সিসটেক ডিজিটালের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। আমি দিনাজপুর অনলাইন ছেড়ে ঢাকায় চলে আসি। ইন্টেলের নববাংলা নামের একটা প্রজেক্ট ছিল সিসটেক ডিজিটালের সাথে, সেখানে কাজ শুরু করলাম, বাংলা নিয়ে কিছু রিসার্চের কাজ করছিলাম তখন আর এর মধ্য দিয়ে আমার ক্যারিয়ার শুরু।
তারপর অলোম্যাচ নামের ফ্রান্সের একটা কোম্পানির অফশোর অফিস চালাতাম। চার-পাঁচ জন ডেভলপার নিয়ে, খুব ভালো একটা টিম ছিল। আমার কপাল ভালো যে সবসময় সব টিমই ফ্র্রেন্ডলি ছিল আমার সাথে। আমাদের Systech এ ম্যানেজার ছিলেন রাশেদুল হাসান, ফ্যান্টাস্টিক গাই। অলোম্যাচ থেকে চলে গেলাম দাউদ আইটিতে। ওখানে আমরা ডেনমার্কের এডমিরাল আইটির প্রজেক্টে কাজ করতাম। তারপর চলে গেলাম সিদ্দিকি টেলিমার্কেটিংএ সেখানে ইনফ্রাটেল-এর কাজ করতাম।
এর মাঝখানে কনসাল্টেন্ট হিসেবে World Bank, USAID, CIDA, UNDP এর সাথে কাজ করা হয়েছে। ন্যাশনাল আইডির যে প্রোজেক্ট ছিল, ওটাতেও সম্পৃক্ত থাকার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। গভর্নমেন্টকে কাছ থেকে জানার ভালো সুযোগ হয়েছে। মুনীর হাসান ভাইয়ের কথা ডেফিনেটলী বলব। মুনীর হাসান ভাই গভর্নমেন্টের সাথে কাজ করার একটা ভালো লিংক করে দিয়েছিলেন। এভাবেই ক্যারিয়ার চলতে চলতে আজ মাইক্রোসফটের ডেভলপার ইভানজেলিস্ট।
টেকটিউনস: সামাজিক বিজ্ঞানের ছাত্র হয়েও আইটি সেক্টরের ক্যারিয়ারে কিভাবে এলেন ?
অমি আজাদ: জানিনা, আমার মনেহয় প্যাশনেট হলে সবকিছুই করা সম্ভব। আমার মামার একটা কম্পিউটার ছিল ’৯২-তে। উনি কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং করেন সিংগাপুর থেকে। উনি সিংগাপুরেই সেটেল ছিলেন, কিন্তু একটা পিসি কিনে রেখে গিয়েছিলেন দিনাজপুরে। ওটা নিয়ে ঘাটাঘাটি করতাম। তখন গেম খেলতাম, এটা ওটা করতাম, বাংলায় একটা বই পেয়েছিলাম কিউবেসিক প্রোগ্রামিং এর, সেটা দেখে টুকটাক DOS এ ক্যালকুলেটর বানানো জাতীয় কাজ করতাম। তারপর FOXPRO, FORTAN (খুবই ক্রিটিকাল প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ) নিয়ে নাড়াচাড়া করতাম। সেগুলো নিয়ে পড়ালেখা শুরু করে দেখলাম এটা এমন একটা মেশিন একে আমি যা বলব সেটাই করবে। আগ্রহটা কিন্তু ওখান থেকেই শুরু। আমি কিন্তু খুব critical দিকে যেতাম না। আমি এটাকে যতটুকু ফান হিসেবে নেয়া যায় ততটুকুই করতাম, এক্সপ্লোর করতাম।
এপ্লিকেশনেরতো কোন লিমিট নাই। ওয়েবের যে ব্যাপারটা, ওয়েবের মধ্যেই অনেক কিছু করা যায়। এখন হ্যান্ডহোল্ড ডিভাইসও চলে এসেছে । এগুলো লিমিট ছাড়া একটা জগত, ঢুকতে ঢুকতে ঢুকেই গেলাম। আর আমি ছাত্র হিসেবে খুব ভালো ছিলাম তাও না। আমি বাধ্য হয়েই শেষে সমাজ বিজ্ঞানে ভর্তি হয়েছিলাম। সারাক্ষণই কম্পিউটার নিয়ে থাকতাম, পড়ালেখা করব কখন? 🙂 এই জিনিসটা একটা খারাপ দিক ছিল। আমি পাঠকদের বলব দুটোই একসাথে কন্টিনিউ করতে হবে। পড়ালেখাটা খুবই কাজের। ওটাও সিরিয়াসলী নিতে হবে।
টেকটিউনস: বাংলা কম্পিউটিং নিয়ে কাজ করে গেছেন বেশ বড় একটা সময় । এর পিছনে অনুপ্রেরণা কি ছিল ?
অমি আজাদ: বিষয়টা হচ্ছে যে ২০০০ সালের দিকে, সবাই হতে লেখালেখি করত, আমি চিন্তা করেছিলাম যে হাতে লেখালেখি করব না। তখনও চিঠির প্রচলন, ইমেইল তেমন একটা নেই। প্রশিকা, বিজয়, লেখনী সহ আরো দুই একটা টুল ছিলো বাংলা লেখার জন্য। এখন যেমন সবাই স্বাচ্ছন্দ্যে লেখতে পারে, তখন এই ফিলটা ছিল না। ফন্ট চেঞ্জ করতে হয়, সার্চ করা যায় না, বিভিন্ন ব্যারিয়ার। তাছাড়া অনেক টাকা দিয়ে সফটওয়্যার কিনতে হত। Windows এর ভার্সন বদলালে বা অফিসের ভার্সন চেঞ্জ হলে সফটওয়্যার কোম্পানিকে টাকা দিয়ে আবার ঠিক করাতে হত। ২০০০ বা ২০০১ সালের দিকে ঘাটাঘাটি করছিলাম ফ্রি সাল্যুশন কি কি আছে। অলট্রিুইস্ট ইন্টারন্যাশনাল নামের একটা প্রতিষ্ঠানের প্রোজেক্ট ছিল একুশে; ডঃ রবিন আপটন সেটা চালাতেন। একুশে একটা ম্যাক্রো এপ্লিকেশন যেটা অফিস এর সাথে কাজ করবে এবং এভেইলেবেল যে ফন্ট আছে তা দিয়েই কাজ করবে। যেমন প্রশিকার যে ফন্ট আছে ওটা দিয়ে বিজয়ে লেখা যায় না, কিন্তু একুশে সবগুলোতেই লেখা যায়। এভাবে শুরু তারপর আমি কিছু এক্সটেন্ডেড করেছিলাম এপ্লিকেশনটায়, যেমন প্রশিকায় লেখা ডকুমেন্ট বিজয়ে কনভার্ট করা, বিজয়ে লেখা ডকুমেন্ট প্রশিকায় কনভার্ট করা, বিজয়েরই আবার চার-পাচঁটা ভার্সন আছে - এক ভার্সন থেকে অন্যটায় কনভার্সন, এই কাজগুলোতে আমার ইনপুট আছে। এই কাজ করতে করতে ২০০১ এর শেষের দিকে মনে হলো দেখি উইন্ডোজের বা ইউনিকোডের অবস্থাটা কেমন।
ওই সময় পরিচয় হলো পল নেলসনের সাথে, তিনি ওই সময় মাইক্রোসফটের টাইপোগ্রাফিক ডিপার্টমেন্টের হেড ছিলেন। ওরা ওই সময় বাংলা নিয়ে একটা ঝামেলায় ছিলেন এবং কনট্রিবিউটর খুঁজছিলেন। তখন বাংলা, হিন্দি সহ Indic যে ভাষাগুলো আছে সেগুলো নিয়ে কাজ করছিলেন প্রফেসর যোশী । উনি ও উনার মেয়ে অপূর্বা এক সাথে কাজ করতেন। উনারা কোন কারণে প্রজেক্ট ছেড়ে ব্যাক করেন ইন্ডিয়াতে , এই আনফিনিসড প্রোজেক্ট টা R&D করতে আমি কাজ শুরু করলাম মাইক্রোসফটের সাথে। শুরুতে Non Discloser Agreement সাইন করতে হলো এবং আমার কিছু সোর্সকোডে কন্ট্রিবিউট করার সুযোগ হয়েছিলো উইন্ডোজে usp10.dll নামের একটা ফাইলের।
এই প্রথম আমার সুযোগ হয় মাইক্রোসফটের কোন সোর্স কোড দেখার। সবচেয়ে ভালো লাগে যে প্রতিটা লাইনে ডেসক্রিপশন আছে, কোন লাইন কি কাজ করছে। সাধারণত যেটা আমাদের এনভার্নমেন্টে প্রোগ্রামারদের কমেন্ট লিখতে দেখা যায়না, ফলে যে কাজ করেছে, সে ছেড়ে গেলে অন্যরা চাপে পড়ে যায় এবং কূল কিনারা পায়না। আমি যে সোর্সে অনেক মডিফিকেশন করেছি তা না, অল্প কিছু করেছি। য-ফলা নিয়ে একটা ঝামেলা ছিল ওটা ঠিক করলাম। পরেতো ‘ৎ’ চলে আসলো। ৎ তে আমার একটা ইনপুট ছিল, চন্দ্রঁবিন্দুর পজিশন নিয়ে ঝামেলা ছিল, সেটা ঠিক করেছিলাম। অফিস ২০০০ ইউজ করে তারা এই সমস্যাগুলো এখনো দেখা যাবে যেগুলি পরে ঠিক করে ফেলা হয়েছে। Virinda ফন্টটাতে সরাসরি আমার অনেক ইনপুট আছে, হিন্টিং - টেস্টিং এর বহু কাজ ছিল । এভাবে মাইক্রোফটের সাথে ইনভলবমন্ট ২০০১ এর মাঝামাঝি থেকে।
তারপর উইন্ডোজ এক্সপি সাভির্স প্যাক টু আসলো, বাংলা সাপোর্ট অনেক ভালো হলো । এর মধ্যে উইনিকোডের সাথে অনেক ফাইট চলতে লাগল, ওই সময় খুব ভালো সাপোর্ট দিয়েছিল Microsoft থেকে পিটার কনস্টেবল এবং ভারতের হায়দ্রাবার ইউনিভার্সিটির ডঃ গৌতম সেনগুপ্ত। আমরা ভীষন ফাইট করে ‘ৎ’ পেলাম। অনেকে অনেক কিছু বলে, তবে সত্য কথা বলতে বাংলাদেশ থেকে কেউ তেমন কিছুই করেনি, একটা মেইলও করেনি কেউ। আমি ওই মেইল লিস্টে ছিলাম, কখনও দেখিনাই বাংলাদেশ থেকে একটা মেইল গেল। আমরা য-ফলার জন্যও কাজ করেছিলাম, পরে আর সময় দিতে পারিনি এবং এখনো কোন সমাধান হয়নি। এভাবে বাংলা কম্পিউটিং এর সাথে আমার সম্পর্ক গভীর থেকে গভীরে যেতে থাকে। আর কাজগুলি যে আমি টাকার জন্য করেছি তা না। একটা ডেডিকেশন কাজ করতো, যে আজকে এগুলি ঠিক হয়ে গেলে সমস্থ বাংলা ভাষাভাষীরা এটা ব্যবহার করতে পারবে। একই সাথে লিনাক্সের জন্যও কন্ট্রিবিউট করেছিলাম তখন।
এখনো মাইক্রোসফটের সাথে বাংলা নিয়ে কাজ করা হয়। যেমন ওরা চিন্তা করছে উইন্ডোজ এইটে একটা ট্রানসিলারেট (যেটাকে পাবলিক ফোনেটিক বলে) লেআউট থাকবে । এটা নিয়ে কিছু ইনপুট দিয়েছি, আমি জানিনা শেষ পর্যন্ত প্রোডাক্ট টিম সেটা রাখবে কি-না।
কাজ করতে করতে একদিন ওরা বলল তুমিতো অনেকদিন ধরে কাজ করছ তোমাকে একটা রিকগনিশন দেয়া দরকার। তখন ২০০৪ বা ৫-এর দিকে ওরা আমাকে MVP করে।
টেকটিউনস: আপনি কি বাংলাদেশে প্রথম MVP নাকি জাবির আল মিশো ভাই ?
অমি আজাদ: একই বছর আমি সম্ভবত ২য় কোয়ার্টারে আর মিশো ৩য় কোয়ার্টারে ।
টেকটিউনস: MVP পুরস্কার পাওয়াটা কেমন অনুভূতির ছিল ?
অমি আজাদ: Awesome! বাংলাদেশে প্রথম, আর তখন আমি ঢাকাতেও থাকি না। অদ্ভুত এক অনুভূতি! মাইক্রোসফটের একটা সার্টিফিকেট।
টেকটিউনস: আপনি যে শ্রম দিয়েছেন তার যথাযথ স্বীকৃতি কি পেয়েছেন ?
অমি আজাদ: স্বীকৃতির জন্য কিছু করিনি। হ্যাঁ at the end of the day আমাকে জীবিকা আয় করতে হবে। স্বীকৃতির জন্য বা পয়সার জন্য কাজ আমি করিনি। এখন বাংলার জন্য যারা কাজ করছে যেমন মেহেদী, হাসিন, সিয়াম, রিফাত এরা কেউ পয়সার জন্য কাজ করছে না। আবার যখন কমার্শিয়ার সাপোর্ট লাগে তখন এদের ডাক পড়ে, এটাই ভালোলাগা বা সফলতা। যেমন সিয়ামের একটা উদাহরণ দেই, রবির যখন কমার্শিয়াল ফন্টের দরকার হলো, বা নিবার্চন কমিশনের ফন্টের দরকার হলো তখন ওকে ডেকেছে, সে পয়সাও পেয়েছে। এখন বাংলা নিয়ে কিছু হলে সচিবালয় থেকে বা মিনিষ্ট্রি থেকে আমাদেরকেই ডাকে, এটাই সফলতা। তবে গভর্নমেন্ট থেকে যদি আরো ভালো সাপোর্ট পেতাম তাহলে ভালো হত। ওনাদের এটেনশন আমাদের এক্সপেক্টেড লেভেলের না।
টেকটিউনস: এক সময় আপনার উপর মাইক্রোসফটের ফন্ট নিজের বলে চালিয়ে দেয়ার অভিযোগ করা হলো – আপনার বক্তব্য কি ?
অমি আজাদ: (হাসি) মাইক্রোসফটের ফন্ট আমি চালালে কি আমি আজকে মাইক্রোসফটে কাজ করি! কনট্রোভার্সি থাকবেই। অনেকেই আপসেট হয়ে যায় যে বাংলার জন্য কাজ করতে গেলাম কিন্তু এটা কি হলো। এটা আমি আসলে পারসোনালী নেই না। প্রফেশনালী কাজ করতে গেলে কমিউনিটি ডেভলপ করতে গেলে অনেক বেরিয়ার আসে, সেটা ইগনোর করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
টেকটিউনস: দেশের কিছু ব্যবহারকারী বাদ দিলে প্রায় সব পিসিই পাইরেটেড উইন্ডোজ ব্যবহার করে, এই ব্যাপারে মাইক্রোসফট বাংলাদেশের অবস্থান কি ?
অমি আজাদ: সবকিছুই পাইরেটেড তা নয়। সচেতনতার অভাব আছে। সাড়ে তিন হাজার টাকায় কিন্তু উইন্ডোজ পাওয়া যায় সাথে একটা এন্টিভাইরাস ফ্রি। বাজারে একটা এন্টি ভাইরাস ৯০০ টাকা। তাহলে দাম হয়ে গেল ২৫০০ টাকা। ২৫০০ টাকায় একটা ওএস হয়ে যায়। দ্বিতীয়ত: আমাদের এখানে একটা মিস লিডিং কথা আছে, আমরা ২০১৩ পযর্ন্ত পাইরেটেড সফটওয়্যর ইউজ করলে কেউ কিছু বলবে না। আমি যতদূর জানি এটা যে দেশে কপিরাইট আইন নেই সেদেশে প্রযোজ্য, থার্ড ওয়ার্ল্ড, ফোর্থওয়ার্ল্ড বলে কোন লাভ নাই। গরীব দেশ ভাঙ্গায় আর কত? মানুষ ওপেন সোর্স ইউজ করুক, আমার কোন সমস্যা নেই, তবে পাইরেসী যেন না হয়।
শুধু মাইক্রোসফট না। সরকার কর্পোরেটসদের সাথে কাজ করে দাম অনেক কমিয়ে আনতে পারে। সব দেশের জন্য সব কোম্পানীর আলাদা দাম নির্ধারণ করা আছে, বাংলাদেশের নাই। বিল গেটসকে চিঠি দিয়ে কি লাভ, কথা বলতে হবে হাতের কাছে যাদের পাওয়া যায় তাদের সাথে। যেগুলো আমরা প্রতিদিন ব্যবহার করি এমন কোম্পানির কাছে প্রস্তাব দিলে যখন বাল্ক সেল হবে তখন দাম কমেই যাবে। এটা মাইক্রোসফট হোক বা ওরাকল আর এডোবি হোক।
টেকটিউনস: মাইক্রোসফটের MSDNAA ও Student Partner প্রোগ্রামতো ভালই এগোচ্ছে, এর মূল লক্ষ্যটা কি ?
অমি আজাদ: MSDNAA এর কিছু গোল আছে। আমাদের প্লাটফরমে যা যা আছে তা দিয়ে আমরা স্টুডেন্টদের সাপোর্ট দেই। শেয়ারপয়েন্ট কি জিনিস অনেকেই জানে না। সকালে অফিসে একটা ফোন এসেছিল শেয়ারপয়েন্ট সার্ভার মেইনটেইন করতে হবে, সাড়ে তিন লাখ টাকার বেতন দেবে, দুইজন ছেলে দরকার। আমি জানি সারা বাংলাদেশ খুঁজলেও দু’জন পাওয়া যাবেনা। জিপিতে আধা ডজন ছেলে এসেছে ইন্ডিয়া থেকে শেয়ারপয়েন্ট কাজ করতে, আমাদের দেশে লোক নাই। আমরা এই সুযোগগুলি দেই যাতে স্টুডেন্টরা একটু এক্সপ্লোর করে ক্যারিয়ারে কি নিয়ে এগোলে বেশী লাভ, সেটা বুঝতে পারে।
এক ইউনিভারর্সিটির দুজন টিচারকে একদিন জিজ্ঞাস করেছিলাম, ডায়নামিক্স কি, উনারা উত্তর দিতে পারেননি। দোষ উনাদের না, এক বড় প্রতিষ্ঠানের এক টিচারের সাথে কাজ করেছিলাম, যে কিভাবে MSDNAA নিয়ে কাজ করা যায়। কিছুদিন পর উনি মেইল দিলেন যে উনি আমেরিকায় চলে গিয়েছেন স্কলারশীপ নিয়ে এবং অমুকের সাথে কথা বলতে বললেন। অমুকের সাথে কয়েকদিন কথা বললাম, কিছুদিন পর উনিও বলেন যে আমিতো স্কলারশীপ নিয়ে চলে যাচ্ছি দেখি আপনাকে কারো সাথে ট্যাগ করে দেয়া যায় কিনা। আমি জানিনা ওরা আর দেশে ফিরে আসবে কিনা, সবাইতো আর জাফর ইকবাল না। আর এখনকার স্টুডেন্ট টিচার সবারই এক সমস্যা। কেউ কিছু এক্সপ্লোর করেনা, টিচারের ধান্দা স্কলারশিপ নিয়ে বিদেশে যাবে, আর স্টুডেন্টদের ধান্দা কোনোমতে পাশ করলেই হবে। এর বাহিরে যে ইন্ডাস্ট্রি আছে, ক্যারিয়ার আছে কিচ্ছু বুঝতে যায়না!
MSDNAA করার ফলে যেই জিনিসগুলো পাও, এটলিস্ট নামটা জানো। সাড়ে তিন লাখ টাকা স্যালারি ইজ এ লট অফ মানি। কিন্তু আমাদের এখানে এমন ছেলেপেলে নাই। ৯০% ইন্ডাস্ট্রিতে আমাদের প্রোডাক্টগুলো ব্যবহার করে। এই মার্কেটটা ধরলেতো আর ক্যরিয়ার নিয়ে টেনশন করতে হয়না।
বাংলাদেশ নামে ছোট দেশ কিন্তু এখানে ৮২টা ভার্সিটি আছে, সব জায়গায় পৌছানো মাইক্রোসফটের পক্ষে সম্ভব না, এজন্য MSP নেয়া হয়। MSP দের একটা ভিজিবিলিটি আসে, অফিস ৩৬৫ এর মতন অনেক ইন্ডাস্ট্রি স্ট্যান্ডার্ড জিনিসপত্র ব্যবহারের সুযোগ পায়, সার্টিফিকেশন করার সুযোগ পায়।
টেকটিউনস: GNU এর জনক Richard Stallman এর এক লেখায় পড়েছিলাম মাইক্রোসফট যে ফ্রি সফটওয়্যার দেয় এটা ঠিক তেমন যে সিগারেট কোম্পানি কলেজ ছাত্রদের ফ্রি সিগারেট দেয় । আপনার মত জানতে চাচ্ছি।
অমি আজাদ: ব্যাক্তিগতভাবে বললে ভদ্রলোক অনেক ইমোশনাল কথাবার্তা বলেন। ওনার অনেক ফলোয়ার আছে আমি জানি। একবার শুনলাম উনি ল্যানকার্ড ইউজ করা বন্ধ করে দিয়েছেন ওটাতে একটা কপিরাইট করা ফামর্ওয়্যার ছিল বলে। উনি কি সাধু দরবেশ টাইপের লোক নাকি! উনাকে মানুষ খাবার দিয়ে যায়, যা খেয়ে উনি চলেন? উনার ইনকাম সোর্স কি আমি জানি না। At the end of the day you have to make money. তুমি যাই কর না কেন, তোমাকে টাকা রোজগার করতে হবে এই পৃথিবীতে বাঁচতে হলে, তুমি যদি সুন্দরবনে যেয়ে থাকো তাহলে অন্য কথা। বা আমি সাধু-দরবেশ আমার সামনে সবাই ভোগ প্রসাদ রেখে যাবে সেটা খেয়ে, মানব কল্যাণ করব। একটু আগে আমি যে কথাটা বললাম ফ্রি সফটওয়্যার যদি আমি না দেই, তুমি শেয়ারপয়েন্ট কি জানলে না, সাড়ে তিন লাখ টাকার জবটাও পেলে না, লাভ কি আমার হলো না লসটা তোমার হলো? আমি জানি উনি অনেক সম্মানী ব্যক্তি এবং আমি উনার এগেইনস্টে কিছু বলছি না। উনার ওই সময় যা ঠিক মনে হয়েছে তিনি বলেছেন। কিন্তু এখন আমি সাত লাখ টাকা মাসে খরচ করতে রাজি হয়ে দু’টা ছেলে খুঁজছি, আমি পাচ্ছি না। এখন উনি এটার জবাব কি দিবেন?
টেকটিউনস: বাংলাদেশে Imagine Cup এর কাযর্ক্রম সম্পর্কে জানান ।
অমি আজাদ: Imagine Cup বাংলাদেশে হিউজ সাকসেস। দেশের ছেলেপেলের মধ্যে যে আগ্রহ যে স্পৃহা আমরা দেখলাম তা আমরা কল্পনাও করতে পারিনি। ব্যাক্তিগতভাবে বলছি, এটা আমি কখনই ভাবিনি যে ১০টা ভার্সিটি নক করব আর ৯০০০ স্টুডেন্ট রেজিস্ট্রেশন করবে। আমরা আশা করছি যে, ২০১২’র ইমাজিন কাপ আরও ভালো হবে। কারণ এখন সবাই জেনে গেছে ইমেজিন কাপ কি। স্টুডেন্টপার্টনাররাও কাজ করছে, ফলে ছেলেপেলেরা মোটামুটি জানে।
এবার আমরা বড় কিছু করব। গতবার যেটা হয়েছে, পার্টিসিপেন্টরা সফটওয়্যার বানিয়েছে জাজরা দেখে রেজাল্ট দিয়েছে। এবার একটু চেঞ্জ হবে। এবার আমরা প্রথম ১০টার মত প্রজেক্ট বেছে নিয়ে একটা ভেন্যুতে শোকেস করব তিন চার দিনের জন্য। NSU বা ঢাকা ভার্সিটিতে হতে পারে, যেখানে স্টুডেন্টদের গেদারিং আছে। ইমেজিন কাপ নিউইয়র্ক ফাইনাল থেকে আমার যেটা লার্নিং, যখন ইন্টারভিউ করা হয় তখন টিমের ছেলেপেলে ঘাবড়ে যায়। Practice makes a man perfect, যখন বলতে বলতে মুখে ফেনা উঠে যাবে তখন ওদের এই প্রেকটিসটা হয়ে যাবে । ওরা চ্যাম্পিয়ন না হোক কিন্তু এই প্রেকটিসটা আজ হোক কাল হোক ইন্টারভিউ বোর্ডে গেলেও কাজে লাগবে। নভেম্বারে একটা প্রেস কনফারেন্স করব প্লাস প্রিভিয়াসলী যারা লোকালী ইন্টারন্যাশনালী পার্টিসিপেট করেছে তাদের নিয়ে মিট দা প্রেস করব । তারপর যথারীতি বুটক্যাম্প চলবে।
টেকটিউনস: ২০১২ এর ইমেজিন কাপের জন্য আগ্রহীরা কিভাবে প্রস্তুতি নিতে পারে ?
অমি আজাদ: ইমেজিন কাপের একটা গ্লোবাল সাইট আছে ওটাতে রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে । ফলে ওরা টাইম টু টাইম আপডেট পাবে। এবারো MDG এর চ্যালেজ্ঞগুলো থাকছে, ওগুলো নিয়েই আমাদের কাজ করতে হবে। এই কাজগুলো এখন থেকেই করতে হবে যদি কম্পিট করার ইচ্ছা থাকে।
টেকটিউনস: ২০১১ সালে টিম ড়্যাপচারের পপুলার ক্যাটাগরী জয়টা কিভাবে মূল্যায়ন করবেন ?
অমি আজাদ: টিম ড়্যাপচার একটা দুর্দান্ত টিম। ওদের উদ্দ্যম, ওদের ক্রিয়েটিভিটি এবং ওদের মেন্টর নিয়াজ মোর্শেদের যা গাইডিং, সব অসাধারণ। আমি জানিনা অন্যান্য টিম এটা পেয়েছিল কিনা । অন্যান্য টিমের টিচাররা ওদের মেন্টর ছিল, কিন্তু ওরা হয়ত ওই গাইডেন্স পায়নি। যেরকম একটা টিম উইন্ডোজ ফর্মস দিয়ে খুব ক্রিটিকাল সব কাজ করেছিলো কিন্তু ওই টিম এটাই জানতো না যে WPF নামে একটা জিনিস আছে বা সিলভার লাইট বলে এটা জিনিস আছে । যেটা ওদের ছয় মাসের কাজ কমিয়ে দিত। টিম ড়্যাপচারের জুঁটিটা সুন্দর হয়েছিলো।
টেকটিউনস: আপনি দেশের আইসিটি ক্ষেত্রে এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি কী জরুরি করা বলে মনে করেন।
অমি আজাদ: আমার মনে হয় বাংলাদেশে সব কিছুই আছে। শুধু যেটা নেই সেটা হলো আওয়ার্নেস । যেমন গার্মেন্ট সেক্টর, এরা এটা জানেনা যে কিভাবে আইটিকে কাজে লাগিয়ে পরিধি আরো বড় করা যায়। আর সফটওয়্যার ডেভলপামেন্ট যে কোম্পানি আছে, তাদের এই আওয়ার্নেস নাই যে এরা গার্মেন্টস সেক্টরকে কিভাবে ইমপ্রুভ করতে পারে সেই বিষয়ে এডুকেটেড করা। ইন্ডিয়াতে কিন্তু খুব বড় মার্কেট, আগে কিন্তু ছিল না। একদম রুট লেভেলে কথা বলি, আগে কিন্তু মানুষ গাছর নিচে ঘুমাতো, ঘর ছিল না। যে ঘর আবিস্কার করেছে সে কিন্তু যে গাছের নিচে ঘুমায় তার কছে আইডিয়াটা সেল করেছে। বিষয়টা এরকম। মার্কেটটা তৈরী থাকেনা, প্রয়োজনটাকে দেখাতে হয় আঙ্গুল দিয়ে যে এটা তোমার প্রয়োজন। আমাদের আইটি সেক্টরে বেটার মার্কেটিং লোক দরকার, যে প্রয়োজনাকে ফিল করাতে পারবে।
টেকটিউনস: রাজধানীর মানুষ এখন ওয়াই ম্যাক্স ব্যবহার করছে কিন্তু পুরো দেশের মানুষ এর সুফল ভোগ করবে?/দেশের ওয়াই ম্যাক্স নিয়ে কিছু বলুন।
অমি আজাদ: এগুলোর খুবই বাজে অবস্থা । এই যে আমাদের ওয়াইমেক্স বা গোটা টেলিকম ইন্ডাস্ট্রি, এদের আসলে কে কন্ট্রোল করে? কিছুদিন আগে ব্যবহারকারীরা দেখি খুবই আপসেট কারণ ওরা Fair use policy এপ্লাই করেছে। এপ্লাই করার ফলে ৩৫ জিবির বেশী ডাউনলোড হলে স্পিড কমিয়ে দেয়। সে স্পিড আবার সহজে বাড়ে না, বিলিং সাইকেল চলে গেলেও না। ফোন করে চিল্লিচিল্লি করে বাড়াতে হয়। এই FUPতো একটা পলিসি এটা কে এপ্রুভ করল? BTRC এপ্রুভ করেছে? ওরা কি একবার কি জিজ্ঞাস করেছিল কেন এই পলিসি? ব্লগে দেখি এদের বিরুদ্ধে লেখা ভরা। BTRC কি একবার বলেছে যে এত kbps এর নিচে স্পিড দেয়া যাবে না। ওরা বলে upto one mbps, তাহলে down to কত? একটা ইউজার মিনিমাম কত পাবে?
টেকটিউনস: প্বার্শবর্তী দেশ ভারতে 3G সেবা খুব ভাল মত চলছে আমাদের দেশে 3G চালু হলে তার সুফল মানুষ কতটুকু পাবে?
অমি আজাদ: আমি মন থেকে চাই 3G আসুক, কারণ বাংলাদেশে এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রামে ডিস্টেন্স অনেক বেশী। একটাই সুবিধা 3G বা ওয়াইমেক্স এর সেটা হলো দুরদুরান্তে high speed ইন্টারনেট দিতে পারব তার পাশাপাশি অন্য অনেক সার্ভিস ও চলে যাবে।
টেকটিউনস: আপনার নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে পরিকল্পনা কি কি আছে ? Entrepreneurship এ যাবার কোন পরিকল্পনা আছে ?
অমি আজাদ: আমার ক্যারিয়ারতো কমিউনিটি নিয়ে। আপাতত ইন্ট্রারপেনারশীপে যাওয়ার কোন ইচ্ছা নেই। মাইক্রোসফটের হয়ে আমি অনেকগুলো কাজ শুরু করেছি এবং অনেকগুলো চিন্তাধারা কে কাজে লাগাচ্ছি। যেমন আমি আসার আগে ইমেজিন কাপ বাংলাদেশে ছিলই না, তারপর MSDNAA, স্টুডেন্ট পার্টনারশীপ। এগুলো নিয়ে আমার লংটার্ম ভিশন আছে । আরেকটা নতুন প্রোগ্রাম আনছি ফ্যাকাল্টি কানেকশনস। এগুলো নিয়ে আমার ভিশন যেগুলো আছে ওগুলো ছেড়ে আমি কালই ইন্ট্রারপেনারশীপে যেতে পারবো না। তবে কেউ যদি করতে চায় তাহলে আমি সব ধরণের সাপোর্ট দিতে রাজি আছি। মাইক্রোসফটের বিভিন্ন প্রোগ্রাম আছে বা বুদ্ধি দিয়ে জ্ঞান দিয়ে হোক হেল্প করতে রাজি আছি। কিন্তু এই মুহূর্তে আগামী এক দুই বছর এরকম কিছু চিন্তা করছি না। তবে লংটার্মে হয়ত মুভ করতে হবে, we all have to move on ।
টেকটিউনস: আপনার পরিবার সমন্ধে কিছু বলুন।
অমি আজাদ: আমার পরিবার খুব ছোট । আমি, আমার বউ আর আমার বাচ্চা। ছেলের বয়স ছয় বছরও কেজিতে পড়ে মাইলস্টোন স্কুলে। আমার বউ হাউজ ওয়াইফ, আগে টিচার ছিল মাইলস্টোন স্কুলেই। ও বাসায় থাকতে বা ঘর গোছাতেই বেশী পছন্দ করে। আমার মায়ের সাথে খুব ক্লোজ রিলেশন ছিল, আম্মা আমাদের খুব ভালোভাবে গড়ে তুলেছেন, যার কারণে এই পূর্যন্ত আসতে পারা এবং এগিয়ে যাওয়া। আমি চাই না আমার ছেলের সাথে মা’র কোন গ্যাপ থাকুক। তাই আমিও এনকারেজ করি না বাইরে জব করুক। তবে everyone has their freedom.
টেকটিউনস: টেকটিউনস কেমন লাগে ?
অমি আজাদ: টেকটিউনসের ইনফো খুবই সুন্দর । সাইটা যদি আমি এক কথায় বলি খুবই প্রোফেশনাল । CNet এর কোন বাংলা ভার্সন যদি চিন্তা করতাম তাহলে এর থেকে ভালো কিছু হতে পারত না। কিন্তু একটা জিনিস খারাপ, পাইরেসী। টেকটিউনসে সফটওয়্যার বা মুভি পাইরেসীগুলো ঠিক না। এটা যদি বন্ধ করে দেয় তাহলে কিছু ভিজিটর কমে যাবে, কিন্তু awareness টা শুরু করতে হবে। পাইরেসী নিয়ে আমাদের অনেক সমস্যা। টেকটিউনস আশা করি একটা রেভুলুশন শুরু করতে পারে। কারো ব্লগ পোষ্ট মুছে দেয়ার দরকার নাই, কিন্তু সচেতনতাটা আরম্ভ করতে হবে।
টেকটিউনস: প্রযুক্তির ক্ষেত্রে টেকটিউনসের আর কী কী করা উচিত বল আপনি মনে করেন।
অমি আজাদ: টেকটিউনস থেকে আশা করি, যে বেশ কিছু অপার্চুনিটিস আমাদের সামনে আছে। যেমন Javascript conference হয়ে গেল, phpXpert সেমিনার আছে, dotNET ওপেন ডে হলো, সামনে ইমেজিন কাপ আছে । টেকটিউনস আমাদের সাথে কাজ করতে পারে, শুধু মাইক্রোসফট না, সবার সাথে। যাতে অনলাইন সেক্টরে জিনিসগুলো ফোকাস পায়। যেমন ইভেন্টগুলো প্রোফেশনাল ডকুমেন্ট থাকে না, কেউ একজন দায়সারা কিছু লিখলো, কিন্তু প্রোফেশনাল ডকুমেন্ট দরকার আছে । ইভেন্টগুলোতে ৯০% ই একই অডিএন্স আসে, প্রোফেশনাল ডকুমেন্টেশন থাকলে নতুনরা জানতে পারত।
টেকটিউনস: টেকটিউনসের পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
অমি আজাদ: টেকটিউনসকেও অনেক ধন্যবাদ।
ইতোমধ্যেই টেকটিউনস টিউন্টারভিউ পুরো দেশ জুড়ে বিভিন্ন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া আর সংবাদ মাধ্যমে তুমুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। আর এরই ধারাবাহিকতায় টেকটিউনস টিউন্টারভিউ প্যানেল তৈরি করছে প্রযুক্তি জগতে দেশে ও দেশের বাইরে অবস্থানকারি বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় আর নিবেদিত প্রাণ ব্যক্তিত্বদের তালিকা। তাঁদের সাফল্যের কাহিনী আর তাঁদের ভবিষ্যত চিন্তা-ধারা তুলে ধরবে টেকটিউনস টিউন্টারভিউ টিম। আর তা হতে পারেন আপনিও! তাই প্রস্তুত থাকুন!
আপনি কাকে চান টেকটিউনস টিউন্টারভিউ গেস্ট হিসেবে? আমাদের জানান আপনার ইচ্ছার কথা। অথবা আপনি যদি মনে করে আপনার আশে পাশেই আছে সে ব্যক্তিত্ব আমাদের জানান টিউমেন্ট করে। টেকটিউনস টিউন্টারভিউ হোস্ট আপনার পছন্দের টিউন্টারভিউ গেস্টেকে তুলে ধরবে তাঁদের সাফল্যের কথা আর তাঁদের প্রণোদিত জীবনের কথা।
টেকটিউনসকে ফুসবুকে লাইক করে, টুইটারে ফলো করে, টেকটিউনসের RSS Feed ও Email RSS এ সাবস্ক্রইব করে এবং আপনার ফেসবুক ও টুইটার প্রোফাইলে টেকটিউনস পিকচার ব্যাজ পরিধান করে, অ্যালেক্সাতে রিভিউ দিয়ে আপনার প্রাণ প্রিয় টেকটিউনসকে সাপোর্ট ও প্রমোট করুন। টেকটিউনসের সাথে আরও নিবিড় ভাবে যুক্ত হতে এবং রিয়েলটাইম আপডেট পেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা টেকটিউনসের সোসিয়াল অলিগলিতে যুক্ত হোন এখনই।
শুধু নিজে নয় আপনার বন্ধু-বান্ধব, পরিজন আর সবাইকে নিয়ে আসুন এই প্রযুক্তি বলয়ে।
সাথে থাকুন টেকটিউনসের আর ভালোবাসুন প্রযুক্তিকে।
আমি টিউন্টারভিউ হোস্ট : আরিফ নিজামী। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 6 টি টিউন ও 13 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 4 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
টিটির টিউন্টারভিউ টা আমার খুব ভাল লাগে.. দারুন দারুন সব এক্সপার্টদের সমন্ধে জানতে পারি। 🙂
ধন্যবাদ ।