হিমালয়। নামটা সেই ছোটবেলা থেকেই শুনছি আমরা। পৃথিবীর সবচেয়ে উচু স্থান হলো হিমালয়। উচ্চতা মাত্র ৮, ৮৪৮ মিটার!মানে ৮.৮৫ কিলোমিটার!আকাশের সাথেই যার মিতালী। মেঘ যাকে নিয়ে খেলা করে, সাদা তুষার যার পোশাক আর যার আছে মাথা উচু করে সামগ্র পৃথিবী কে দেখা সেই তো হিমালয়। আমার আজকের টিউনটি সেই হিমালয়কেই নিয়ে। টিউনের মাধ্যমে আমি আপনাদেরকে জানাতে চেষ্টা করবো হিমালয়ের সকল খুটিনাটি তথ্য আর আমরা সবাই হরিয়ে যাবো এক অজানার দেশে।
আজ থেকে প্রায় ৬ কোটি বছর আগে জন্ম নেয় এভারেস্ট। আসলে আমরা জানি যে কোন পর্বতমালা সৃষ্টি হয়েছে পৃথিবীর ভূ-গভের সৃষ্ট আন্দোলনের ফলে। আমাদের পৃথিবীর ভূ-গভে মাটির স্তর গুলো প্লেট আকারে থাকে। এগুলো আবার বিভিন্ন উপমহাদেশীয় এরিয়া নিয়ে গঠিত। এমনি ২ টি প্লেটের সংঘষে সৃষ্টি হয় এভারেস্টের। ভারতীয় উপমাদেশের প্লট ও দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ান প্লটের সংঘর্ষে এভারেস্ট তৈরী।
তাছাড়া অভন্তরীণ ভুমিকম্প ও এর জন্য দায়ী। এ ধরনের সংঘর্ষ কোটি কোটি বছর পর পর সংঘটিত হয়।
১৮০৮ সাল। তৎকালীন ভারতে ব্রিটিশরা শুরু করলো পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতসমূহের অবস্থান বের করার অভিজান। এর জন্য তারা "বৃহৎ ত্রিকোণমিতিক জরিপ" (Great Trigonometric Survey) শুরু করেন।
এই প্রক্রিয়া নিখুত ভাবে চালানোর জন্য তারা ব্যব হার করলো ১১০০ পাউন্ড অজনের থিয়োডোলাইট।
জরিপ কাজ আরাম্ভ হলো দক্ষিণ ভারত থেকে। জরুপকারী দল ক্রমাগত উত্তরদিকে সরতে থাকে এবং ১৮৩০ সালে তারা হিমালয়ের পাদদেশে পৌঁছায়। তারা আস্তে আস্তে নেপালের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। কিন্তু তখন নেপাল ও তিব্বতে বিদেশীদের প্রবেশ ছিল নিষিদ্ধ। এভাবে অননেক বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে ১৮৪৭ সালের শেষর দিকে এভারেস্টের ১৪০ মাইল (২৩০ কিমি) পূর্বে কাঞ্চনজঙ্ঘা এর কাছে চলে আসেন। সে সময় বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতচূড়া হিসেবে বিবেচিত হত কাঞ্চনজঙ্ঘা। সে সময় জরিপ চালান ব্রিটিশ প্রধান জরিপকারক এন্ডু ওয়াহ। তিনি কাঞ্চনজঙ্ঘা থেকে পূর্ব দিকে একটি নতুন পর্বত দেখতে পান। তিনি এক পলকেই দেখে বুঝতে পারেন এটা কাঞ্চনজঙ্ঘার চেয়ে ও অনেক বড়। কিন্তু এর জন্য তো প্রমান চাই। তিনি জেমস নিকলসন নামে এক কর্মচারী পাঠান জরিপের জন্য। সে অনেক হিসাব নিকাশ করে এসে ফলাফল দেয় যে এর উচ্চতা ৩০, ২০০ ফুট (৯, ২০০ মিটার)। কিন্তু তার হিসাবে ভুল হবার কারণ ছিল আলোর প্রতিসারণ। ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে নিকলসন চলে যান তার দেশে। কি আর করা এত গুলো পর্বত কি নামহীন ভাবে পড়ে থাকবে? না কর্নেল ওয়াহ তার এক ক্লার্ক মাইকেল হেনেসিকে দিয়ে সবগুলো পাহাড় গুলোর রোমান সংখ্যার হিসাব রাখতে বললেন। সে হিসাবে এভারেস্টের নাম হলো peak-XV বা "চূড়া-১৫"। যাই হোক সেবার ও ওয়াহ পারলেন না। অবশেষে তিনি স্বরণাপন্ন হন বাঙ্গালী গণিতবিদ ও জরিপকারক রাধানাথ শিকদারের। তিনি ছিলেন স্যার এভারেস্টের অনেক প্রিয় পাত্র।
১৮১৩ সালে তার জন্ম জোড়াসাকোতে। তিনি তখন এই জরিপে হাত দেন। ৮৯ টি নামহীন পরবতের হিসাব করতে হবে তাকে। একদিন তিনি peak-XV (চূড়া-১৫) এর হিসাব কষে বের করলেন ২৯০০২ ফুট!মাথা খারাপ হয়নি তো। আবারও তিনি দেখলেন। নাহ ঠিকই আছে, সাথে সাথে তিনি চলে গেলেন " রয়েল জিওগ্রাফিক সোসাইটি"তে তার স্যার কর্নেল এন্ড্রু ওয়াহর কাছে। তিনি তার সকল বিষয় গুলো আবার ও পরীক্ষা করে দেখলেন সব ঠিকই আছে। তিনি যা ভেবেছিলেন ঠিক তাই। এই চূড়া-১৫ ই তাহলে কাঞ্চনজঙ্ঘার চেয়ে উচু। আর তার মানেই হল চূড়া-১৫ হলো পৃথিবীর সবচেয়ে উচু স্থান। রাতারাতি সব দিকে খবর পোছে গেল। এভাবেই একজন বাঙ্গালী গণিতবিদ ও জরিপকারক রাধানাথ শিকদারের হাত ধরেই আবিষ্কার হলো বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট। সেই রাধানাথ শিকদার ১৮৭০ সালে মারা যান। কিন্তু রেখে যান এক অনাবদ্য সৃষ্টি।
আবিষ্কার হলো সর্বোচ্চ পর্বতচূড়া কিন্তু এর নাম কি দেয়া হবে। ভাবত লাগলেন কর্নেল এন্ড্রু ওয়াহ। তিনি দেখলেন যে এটাই এখন তার কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। জরিপকারীরা সবাই চাচ্ছিলো যে নামটা স্থানীয় কোনো নামের হোক। কিন্তু তারা কোনো স্থানীয় নাম খুঁজে পেলনা। করণ তখন তিব্বত ও নেপালে বিদেশীদের প্রবেশ ছিল বন্ন্ধ। তাই তারা স্থানীয় নাম খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হলো। তবে বেশ কিছু স্থানীয় নাম প্রচলিত থাকলেও এদের মধ্যে সুপরিচিত ছিল তিব্বতিদের ব্যবহার করা কয়েকশ’ বছরের পুরনো নাম "চোমোলুংমা"। কিন্তু এইনামের আবার অনেক উপনাম থাকার কারণে তিনি এই নাম নাকচ করে দেন। তাই তিনি সহ সবাই মিলে এর নাম রাখার সিধান্ত নেন তাদের পূর্বসূরি ভারতের প্রাক্তন জরিপ পরিচালক জর্জ এভারেস্টের নামে।
এ সম্পকে ওয়াহা লিখেন ----
'আমার সম্মানিত পূর্বসূরি জরিপ প্রধান কর্ণেল স্যার জর্জ এভারেস্ট আমাকে প্রতিটি ভৌগলিক উপাদান স্থানীয়ভাবে প্রচলিত নামকরণ করতে শিখিয়েছিলেন। কিন্তু এই পর্বতটি, যা কিনা খুব সম্ভবতঃ পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত- এর কোন স্থানীয় নাম আমরা খুঁজে পাইনি, আর কোন স্থানীয় নাম থেকে থাকলেও নেপালে প্রবেশের আগে তা আমাদের পক্ষে নিশ্চিতভাবে জানা সম্ভব নয়। এরমধ্যেই চূড়াটির নামকরণ করার সুযোগ এবং পাশাপাশি দায়িত্বও আমার কাঁধে বর্তেছে.এমন একটি নাম যা কিনা দেশ-বিদেশের ভূগোলবিদরা জানবে এবং পৃথিবীর সভ্য জাতির লোকদের মুখে মুখে ফিরবে। 'কিন্তু জর্জ এভারেস্ট এটাকে প্রত্যাখান করেন। কিন্তু তা বেশিদিন টেকেনি। অবশেষে ১৮৬৫ সালে "রয়েল জিওগ্রাফিক সোসাইটি" আনুষ্ঠানিকভাবে পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতচূড়ার নামকরণ করে মাউন্ট এভারেস্ট।
এরপর থেকেই এই "চূড়ো ১৫" ই হয়ে গেল "মাউন্ট এভারেস্ট"। তাছাড়া নেপালের সবাই একে ডাকে "সাগরমাথা’ (আকাশের দেবী)। আর তিব্বতীয়রা একে এখনো ডাকে "চোমোলুংমা"। যার মানে হলো "মহাবিশ্বের দেবী মা"
হলো আবিষ্কার, হলো নামকরণ ও, এবার পালা চূড়োয় চড়া। আমরা জানি যারা পাহাড় থেকে পাহাড়ে ঘুরে বেড়া তাদেরকে পর্বতারোহী বলা হয়। তাদের নেশা পেশা সবই এই পাহাড়কে ঘিরেই। এই খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে সকল অদম্য সাহসী পর্বতারোহীরা উঠে পড়ে লেগে গেলেন এভারেস্ট জয় করার জন্য। নানা দেশ থেকে নানা পর্বতারোহী এসে ভিড় জমাতে লাগলেন এভারেস্টের দেশ নেপালে। তবে আবিষ্কারের ও আগে ব্রিটিশরা ১৯২১ সালের অভিযানে হিমালয়ে প্রত্যাবর্তন করে। এতে জর্জ ফিনচ প্রথমবারের মত অক্সিজেন ব্যবহার করে পর্বতারোহণ করেন। তার আরোহণের গতি ছিলো বিস্ময়কর – ঘন্টায় প্রায় ৯৫০ ফুট (২৯০ মি)। তিনি ৮, ৩২০ মিটার (২৭, ৩০০ ফুট) ওপরে ওঠেন, যা ছিল সর্বপ্রথম কোনো মানুষের ৮, ০০ মিটারের বেশি উচুতে আরোহণ। ম্যালোরি এবং কর্ণেল ফেলিক্স দ্বিতীয়বারের মতো ব্যর্থ অভিযান করেন। ম্যালোরির নেতৃত্বাধীন দলটি উত্তরের গিরিখাত বেয়ে নামতে গিয়ে ভূমিধ্বসের কবলে পড়ে এবং সাতজন পর্বতারোহী নিহত হয়। এভাবে চলতে থাকে আরো ৩২ বছর। এর মধ্যে অনেকে প্রাণ হারান এভারেস্ট জয় করতে গিয়ে। কিন্তু কেউই থেমে থাকেন নি একের পর এক অভিজান তারা চালু করেন।
এমন সময় ১৯৯৫৩ সালে এক পর্বতারোহী জেনে যান যে এভারেস্টই পৃথিবীর সবচেয়ে উচু পাহাড়। ব্যস রওনা দিলেন এভারেস্টের উদ্দেশ্য। জানেন এই লোকটি কে?ঠিক বলেছেন তিনিই ছিলেন এডমন্ড হিলারি। জন্মস্থান ছিল তার নিউজিল্যান্ডে।
শুধুর নিউজিল্যান্ডে থেকে তিনি চলে আসেন নেপালে। খুজতে থাকেন একজন সঙ্গী। পেয়েও যান। আর সেই সঙ্গীই ছিলো নেপালের লোকের কাছে দেবতাতূল্য "তেনজিং নরগে"।
এই দুইজন মিলে শুরু করেন অসম্ভবকে সম্ভব করার মিশন। তবে এর আগে ১৯৫২ সালে তেনজিং নোরক দক্ষিণ-পূর্ব রিজের হয়ে ৮, ৫৯৫ মিটার (২৮, ১৯৯ ফুট) ওপরে ওঠেন, যা ছিল এভারেস্ট বিজয়ের আগে উচ্চতা আরোহণে মানুষের নতুন রেকর্ড। তিনি তার এই অভিজ্ঞতা ১৯৫৩ সালের মিশনে কাজে লাগান।
১৯৫৩ সাল ব্রিটিশ অভিযাত্রীক দল খুজতে থাকেন সাহসী দুই পর্বতারোহীকে। সে সুবাদে তারা পেয়ে যান এডমন্ড হিলারি ও তেনজিং নরগেকে।
তারা ১৯৫৩ সালের ২৮ শে মে রওনা দেন এভারেস্ট জয়ের উদ্দেশ্যে। সকাল ৭ টা ৩০ মিনিটে তারা শুরু করেন তাদের অভিজান। এর মধ্যে অনেক প্রতিকূলতা, বাধা বিপত্তি না মেনে চলতে থাকেন আবিরাম। সে সুবাদেই ১৯ মে ১৯৫৩ সালের ২৯ মে সকাল ১১ টা ৩০ মিনিটে পৃথিবীর প্রথম মানুষ হিসেবে পা রাখেন এভারেস্টের চূড়োয়। তবে এডমন্ড হিলারিই সবার আগে উঠেন হিমালয়ে। তখন নেরগে ছিলেন তার চেয়ে মাত্র ১০০ মিটার নিচে। এভাবেই মানুষ প্রথম জয় করে এভারেস্টের মত অসম্ভব এক জগতকে।
এভারেস্ট জয় করার খবর পেয়ে তাদের সংবধনা দেয়ার জন্য সূদূর লন্ডন থকে রানী ২য় এলিযাবেথ নেপালে এসে তাদেরকে বীর হিসাবে আখ্যায়িত করেন। আর নেপালের সবাইতো তেনজিংকে তাদের দেবতা হিসাবেই মানে।
তাদের এই জয়ের পরে থেমে আর থেমে থাকেনি জয়ের ধারা। সেই থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ২ হাজার ২ শ’র বেশি পর্বতারোহী উঠেছেন এভারেস্টে। সেখানে আমাদের দেশকেও উজ্জ্বল করেছেন বাংলাদেশের দামাল ছেলে মুসা ইব্রাহিম। এ বছরের ২৩ মে তিনি জয় করে ফিরেন এভারেস্ট।
পেশায় একজন সাংবাদিক এই মুসা ইব্রাহিম। জন্ম তার জন্ম ১৯৭৯ সালে লালমনিরহাটের মোগলহাটে। বাবা আনসার আলী ও মা বিলকিস বেগম। ঠাকুরগাঁওয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টেকটিউনসউট থেকে মাস্টার্স করেন মুসা। মাস্টার্স করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও। বর্তমানে তিনি ডেইলি স্টার-এ সহ-সম্পাদক হিসেবে কর্মরত।
২০০২ সালে অন্নপূর্ণা ট্রেইলে অভিযানের মধ্য দিয়ে মুসা স্বপ্নপূরণের পথে অগ্রসর হন। সেবার উঠেছিলেন ১২ হাজার ৪৬৪ ফুট। এরপর তিনি একটার পর একটা পর্বতারোহণ প্রশিক্ষণ ও অভিযানে অংশ নিতে থাকেন। তিনি হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টেকটিউনসউট থেকে দুই দফায় গত ছয় বছরে দুটো পেশাদারি পর্বতারোহণের প্রশিক্ষণ নেন। গত বছর জুনে তিনি ও তাঁর সহযোগী তৌহিদ হোসেন অন্নপূর্ণা-৪-এর শিখর জয় করেন প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে। নিচে তার হিমালয় জয়ের কাহিনী তুলে ধরা হলো কালের কন্ঠ থেকে পাওয়া একটি ফিচার থেকে।
২০০৭ সালের ২৯ অক্টোবর গড়ে তোলেন 'বাংলাদেশ নর্থ আলপাইন ক্লাব (বিএনএসি)'। এ সংগঠন গড়ার পরই স্বপ্ন বাস্তবায়নের একটা রূপরেখা তৈরি করেন। স্থির করেন, ২০১০ সালের মধ্যেই এভারেস্ট অভিযান করবেন। প্রস্তুতি হিসেবে বেশ কিছু পর্বতে অভিযানে যান। শেষে সমস্যা দাঁড়ায় টাকা নিয়ে। বাংলাদেশে বসে অভিযানের প্রয়োজনীয় অর্থ ও রসদ সংগ্রহ করাও আরেকটা এভারেস্ট জয়ের সমান। এই বাঁধাও পেরোলেন মুসা। এই অভিযানের খরচের একটি বড় অংশ দিয়েছেন বোন নূর আয়শা। পাশাপাশি অনেক ঘোরাঘুরি করে, বন্ধুবান্ধবের সাহায্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে রাজি করিয়ে ২০১০ সালের মার্চে অভিযানে নেমে পড়লেন। লক্ষ্য একটাই এভারেস্টের চূড়ায় ওড়াবেন দেশের পতাকা।
এভারেস্টের উদ্দেশে মুসা ঢাকা ছাড়েন গত ৮ এপ্রিল। প্রথমে যান কাঠমান্ডু। সেখান থেকে তিব্বত। তিব্বত থেকে সংগ্রহ করেন পর্বতারোহণের পারমিট। কারণ টাকার অঙ্কটা কম। নেপাল থেকে পারমিট নিতে লাগে ২৫ হাজার মার্কিন ডলার, আর তিব্বত থেকে ১০ হাজার। বেইস ক্যাম্প থেকে তিনি ট্রেকিং শুরু করেন ২০ এপ্রিল। গন্তব্যে পৌছাতে লাগে এক মাসের বেশি সময়। ভালো আবহাওয়ার অপেক্ষায় সময় চলে যায়।
২৩ মে সকালে ওঠেন চূড়ায়। সেখানে ছিলেন ২৫ মিনিটের মতো। ২৪ মে মুসা ও তাঁর সঙ্গীরা অগ্রবর্তী বেইস ক্যাম্পে পৌছেন। বেইস ক্যাম্পে পৌছেন ২৫ মে বিকেলে। এ অভিযানে বড় ধরনের বিপদে পড়েছিলেন তিনি। উত্তরাংশের দ্বিতীয় ধাপে গিয়ে তাঁর অক্সিজেন মাস্কের পাইপ ছিদ্র হয়ে যায়। তিনি নিঃশ্বাস নিতে পারছিলেন না। কিন্তু শেরপারা সেটি সঙ্গে সঙ্গে ঠিক করে ফেলে। এ যাত্রায় এভাবেই উদ্ধার পান তিনি।
বাংলাদেশের পতাকা হাতে এভারেস্টের চূড়ায় মুসা সাথে শেরপা সোম বাহাদুর তামাং (ডানে)
তিনি প্রথম বাংলাদেশী হিসাবে এভারেস্টে উড়ান বাংলাদেশর পতাকা। তার সঙ্গী হিসাবে ছিলেন নেপালের ২ জন শেরপা সোম বাহাদুর তামাং এবং গনেশ মাগার। তারা মোট ২৬ জনের একটি দল একসাথে এই অভিজানে নামেন। এর মধ্যে ১৪ জন নেপালি শেরপা ছাড়াও এভারেস্ট বিজয়ীদের ওই দলে ছয়জন যুক্তরাজ্য, তিনজন মন্টেনিগ্রো ও একজন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। আমাদের অনেক গর্ব আজ মুসা ইব্রাহিমকে নিয়ে।
কি এভারেস্ট এ উঠতে চান?তা হলে তো আপনাকে কিছু রুট সম্পকে জানতে হবে। আসলে এভারেস্ট উঠতে গেলে অনেক গুলো রুট আছে কিন্তু তার মধ্যে আপনাকে যেকোন বড় ২ টি রুটের ১ টি বেছে নিতে হবে। রিজ গুলো হলো
১। দক্ষিণ-পূর্ব রিজ ও
২। উত্তর-পূর্ব রিজ
দুটি পথই ভিন্ন ভিন্ন। এখানে একটি রিজ (দক্ষিণ-পূর্ব রিজ) হলো নেপালে আর উত্তর-পূর্ব রিজ হলো তিব্বতে অবস্থিত। নিচে এই রিজ ২ টির কিছু দিক নিদের্শনা দেয়া হলো
এই রিজটির অবস্থান হলো নেপালে। এখানে থেকে যারা এভারেস্ট জয় করে তাদেরকে নেপাল মাউন্টিং ফেডারেশন এভারেস্ট জয়ী হিসাবে সনদ প্রদান করেন। এই সে পথ যেখান থেকেই সর্বপ্রথম মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছিল এডমন্ড হিলারি ও তেনজিং নরগে। তারা দক্ষিণ-পূর্ব রিজ ধরেই উঠেছিলেন ৮, ৮৪৮ মিটার!
এই দক্ষিণ-পূর্ব রিজের বেস ক্যাম্প অবস্থিত সমুদ্রপাষ্ঠ থেকে ৫, ৩৮০ মিটার (১৭, ৭০০ ফুট) উপরে। এই বেস ক্যাম্পে আপনাকে যেতে হলে নমচে বাজার হয়ে কাঠমুন্ডু, তারপর "লুকলা" (২, ৮৬০ মিটার) হয়ে যেতে হবে। এখানে আসতে সাধারণত অভিযাত্রীদের ৫ থকে ৬ দিন লাগে। তারপর তারা বেসক্যাম্পে বেশ কিছু সপ্তাহ অবস্থান করে। এখানে নেপালের শেরপাদের নিয়ে তারা নানা ধরনের প্রশিক্ষন গ্রহন করে। এখান থেকে তারা আহরোনের সকল যন্ত্রপাতি গ্রহন করে। তারপর তারা খুম্বু গ্লাসিয়ার থেকে উপরে উঠার যাত্রা শুরু করে।
বেস ক্যাম্প থেকে একটু উপরে উঠলেই ক্যাম্প ১ *(Camp I) যেটি ৬, ০৬৫ মিটার উচুতে অবস্থিত।
ক্যাম্প ১ থেকে অভিযাত্রীরা "ওয়েস্টান কিউ' দিয়ে অগ্রসর হয় ক্যাম্প ২ (Camp II) বা Advanced Base Camp (ABC) তে। একে বাংলায় অগ্রবরতী বেস ক্যাম্প বলে।
যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬, ৫০০মিটার উপরে। এবার Advanced Base Camp দিয়ে অভিযাত্রীরা চলতে থাকেন Camp III এর দিকে।
এখানে আর হাটা পথ নয় এবার চলতে হবে রশি বেয়ে বেয়ে। যা আগে থেকেই শেরপারা ঠিকঠাক করে রাখে। Camp III থেকে Camp IV যাওয়ার সময় অভিযাত্রীগনকে পাড়ি দিতে হয় "ডেথ জোন"। নাম শুনেই নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন যে স্থানটা হলো মরণ ফাদ। আর এই ডেথজোনে অভিযাত্রীরা আসেন "সাউথ কোল" দিয়ে।
আবহাওয়া ঠিকঠাক থাকলে তারা এই "ডেথ জোন" পাড়ি দেবার জন্য সর্বোচ্চ ২ দিন সময় নেয়। আর আব হাওয়া যদি খারাপ থাকে তাহলে তারা নেমে আসে Camp III তে।
অনেক বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে তারা Camp IV আসে। এবার সবাই অগ্রসর হতে সর্বোচ্চ চূড়ায় আহরনের জন্য। এর জন্য তাদের প্রথমে "The Balcony" তে আহরণ করতে হয়।
এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮, ৪০০ মিটার উচুতে। তাদের লক্ষ্য থাকে "সাউথ সামিট" এর দিকে, এটি একটি টেবিলের সমান আয়তনের বরফের তাক।
যেখানেই অনেক আভিযাত্রীর শেষ হয়ে গেছে মিশন শুধুমাত্র "সাউথ সামিট" পার না হতে পেরে। "সাউথ সামিট" সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৮, ৭৫০ মিটার উপরে। "সাউথ সামিট" পার হবার পর থেকে পর্বতারোহীরা সবাই একা একা উঠতে শুরু করে। কারণ একসাথে চলার মত পথ সেখানে নেই।
তাদের সাথে করে তখন বহন করতে হয় অক্সিজেন, বরফ কাটার, রশি, জেকটেইপ সহ প্রয়োজনীয় সব কিছু। এই সময়টায় আসলে একজন অভিযাত্রীর জন্য সবচেয়ে কঠিনতম সময়। যদি একটু ভুল হয় তাহলে তাদের সোজা ২, ৪০০ মিটার নিচে চলে যেতে হবে। যার পরিণাম মৃত্যু ছাড়া আর কিছু নয়। আর এখানে সবচেয়ে বড় আসুবিধা হলো হিমালয়ের গায়ের উপর থাকে আলগা তুষারের আবরণ। যা দেখলে বোঝার উপায়ই থাকে না যে সেটি আলগা। এমন অবস্থা সেখানে ভর দিয়ে চলতে গেলেই আলগা তুষারের আবরণ খসে পড়ে। আর এভাবেই আভিযাত্রীদের জীবনের আলো নিভে যায়। "সাউথ সামিট" থেকে মাত্র ৯৮ মিটার উপরেই হলো "সামিট"বা সর্বোচ্চ চূড়া।
কিন্তু এই ৯৮ মিটার পার হতেই আভিযাত্রীরা পার করে দেন ২-৫ ঘন্টা। আর হবেই বা না কেন। কারণ সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশি।
মাউন্ট এভারেস্টের এর দক্ষিণ-পূর্ব রুট ও উত্তর-পূর্ব রুট এর মধ্যে রয়েছে অবস্থানগত, পরিবেশগত অনেক পার্থক্য। তবে দক্ষিণ-পূর্ব রুট থেকে উত্তর-পূর্ব রুট দিয়ে এভারেস্ট উঠা বেশ কিছুটা সহজতর। আর এখান থেকে পারমিট গ্রহনের খরচ ও নেপালের চেয়ে অর্ধেক। মাউন্ট এভারেস্টের উত্তর-পূর্ব রিজ শুরু হয়েছে চীনের তিব্বত অংশ থেকে।
উত্তর-পূর্ব রিজ এর বেসক্যাম্প অবস্থিত "রংগবুক গ্লাসিয়ার: এ। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫, ১৮০ মিটার (১৬, ৯৯০ ফুট) উপরে। বেস ক্যাম্প থেকে ক্যাম্প ২ (Camp II) এর দুরুত্ব ৯২০ মিটার।
আর এর উপরে আছে ক্যাম্প ৩ (Camp III) বা (ABC – Advanced Base Camp) অগ্রবর্তী বেসক্যাম্প। এটির উচ্চতা ৬৫০০ মিটার। এর উপরেই অবস্থিত হলো "নর্থ কোল" এটি ৭০১০ মিটার উপরে। এর পর একে একে আছে Camp VI (৮২৩০ মিটার), নর্থ সামিট (৮৫৮০ মিটার) ও সর্বশেষ সামিট (৮৮৪৮ মিটার)।
ডেথজোন মানেই হলো মৃত্যুকূপ। হিমালয় দূর থেকে দেখতে যতটা না সুন্দর কাছ থেকে ততোটাই নির্মম তার পথ। এমনো স্থা আছে এভারেস্টে যেখানে আজ পর্যন্ত কোন মানুষই সে স্থানে পোছাতে পারে নি। যারা বারবার চেষ্টা করেছে তাদের অনেকে প্রাণ ও হারিয়েছেন এসব স্থান থেকে।
তাছাড়া ৮০০০ মিটার উপরে থেকে শুরু হয় আসল ডেথ জোন। কেননা ৮ হাজার মিটার উচুতে পরিবেশ এতটাই প্রতীকূল অবস্থান নেয় যে সেখানে অস্থান করাটা অনেক কষ্টকর। শূন্য ডিগ্রীর নিচে তাপমাত্রা, তুষার পাত, বরফের ফাদ, পিচ্ছিল বরফ থেকে পড়ে যাওয়া সহ অনেক প্রতিকূলতা অভিযাত্রীদের জন্য হয়ে দাড়ায় সবচেয়ে বড় চ্যালেন্জ।
তাছাড়া উচ্চতাজনিত চাপ তো আছেই। আমরা জানি ভূপৃষ্টের থেকে যত উপরে উঠা যায় চাপ ততো বাড়তে থাকে। আমাদের দেহে চাপ বাড়ার সাথে সাথে রক্তের চাপ ও বেড়ে যায়। আমাদের দেহের স্বাভাবিক নাড়ীর স্পন্দন হলো ৭৬-৭৮/মিনিট। (বার)যখন অভিজাত্রীগন বেস ক্যাম্পে আছে তখন তাদের গড় স্পন্দন থাকে ৮০ বারের মত। কিন্তু ৮ হাজার মিটার উপর থেকে এই স্পন্দন বেড়ে দাড়ায় ৯৫-১০০ বার পর্যন্ত!তাহলে চিন্তা করুন কতটা সমস্যা ও জীবনের ঝুকিতে পরতে হয় অভিযাত্রীদের। তার উপরে যদি আবার শূন্য ডিগ্রীর নিচে তাপমাত্রা, তুষার পাত, বরফের ফাদ, পিচ্ছিল বরফ থেকে পড়ে যাওয়া সহ অনেক প্রতিকূলতা অবস্থা থাকে তাহলে এভারেস্ট জয় থেকে জীবন বাচানোই বড় হয়ে দাড়ায় সেখানে। তা থাকা সত্তে ও জীবনের মায়া না করে তারা চলতে থাকে অবিরাম এভারেস্ট জয় করার মিশনে।
এছাড়া ও এমন কিছু স্থান আছে যেখান থেকে পাড় হতে গেলে পদে পদে মৃত্যুর প্রহর গুনতে হয়। এমন জায়গার নাম হলো খুম্বু আইসফল।
এভারেস্টের সবচেয়ে ভয়ানক স্থান। এই স্থান এতটাই বিপদাসংকুল যে এভারেস্টে যত প্রাণহানি ঘটেছে তার ৮০ ভাগই ঘটেছে এখানে।
কিন্তু দূ;ভাগ্য যে প্রায় ৫০ ভাগ নিহতদের লাশ এখান থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হয় নি। তাহলে বুঝেন যে কতোটা বিপদজনক স্থান এই খুম্বু আইস ফল!
এই অংশটি মাউন্ট এভারেস্টের সাউথ ইস্ট রুটের বেস ক্যাম্পের পরেই ৬০৬৫ মিটার উপরে।
এই অংশটুকু পার হওয়া অভিযাত্রীদের জন্য পুলসেরাত পারে হবার মত। এমন ভংগুর স্থান হিমালয়ের আর কোথা ও নেই। বরফের পাত, গভীর খাদ, পরিবেশগত আবহাওয়া, শুন্য ডিগ্রীর নিচে তাপমাত্রা সব মিলিয়ে এ যেন এক মৃত্যুপূরী।
একটু অসাবধান হলেই সেখানে নিশ্চত মৃত্যু।
কেবল এই স্থানেই ১৯৯৬ সালের ১১ মে ১৯ জন অভিযাত্রী প্রান হারান। এটাই এভারেস্টের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দূর্ঘটনা। আর স্বপ্নের এভারেস্ট জয় করতে হলে এই মৃত্যুপূরী পার হয়ে যাওয়া ছাড়া কোন পথ নেই।
আপনি ও কি মুসা ইব্রাহীমের মত এভারেস্ট জয় করতে চান?উজ্জ্বল করতে চান নিজের ও দেশে মুখ? আগে খোজখবর নিন এর সর্ম্পকে। আর আমি কিছু তথ্য দিব যে এভারেস্টে যেতে হলে আপনাকে কি কি করতে হবে।
এভারেস্ট অভিযানে যাওয়ার আগে আপনাকে কড়া প্রশিক্ষণ নিতে হবে। আর এই প্রশিক্ষণ আপনি নিতে পারবেন পাশের দেশ ভারত থেকেই। এই প্রশিক্ষণ হয় দু ধরনের ১। বেসিক ও ২। অ্যাডভান্স। এর জন্য আপনাকে গুনতে হবে আনুমানিক ৫০০ ডলার (৩৫, ০০০ টাকা)। এ ছাড়া অভিজ্ঞতা থাকতে হবে ২০ হাজার ফুটেরও বেশি উচ্চতা থেকে ঘুরে আসার। কি ভেবেছেন কেবল ভালো মৌসুমেই এভারেস্ট জয় করবেন। সে গুড়ে বালি!কেননা আপনাকে খারাপ মৌসুমে সেখানে যাওয়ার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে। আর এসবের করতে হলে ও মোটা অংকের খরচ আপনাকে গুনতে হবে। এখানেই শেষ নয় আরো প্রধান খরচ তো সামনে। এভারেস্টে চড়তে হলে ২৫ হাজার মার্কিন ডলার (১৭ লক্ষ ৫০ হাজার! টাকা)দিয়ে নেপাল সরকার থেকে পারমিট নিতে হয়। আর যদি আপনি তিব্বত মানে উত্তর-পূর্ব রিজ দিয়ে যেতে চান সেখানেও আপনাকে ১০ হাজার মার্কিন ডলার (৭ লক্ষ্য টাকা) দিয়ে পারমিট নিতে হবে। পাশাপাশি ইকুইপমেন্টসহ অন্যান্য খরচ তো আছেই। এভারেস্টে যেতে লাগবে বেশ কিছু টেকনিক্যাল যন্ত্রপাতি। এর মধ্যে রয়েছে হালকা তাঁবু, শূন্য ডিগ্রি নিচের তাপমাত্রা প্রতিরোধক স্লিপিং ব্যাগ, আইসজ্যাকেট, উইন্ডব্রেকার ট্রাউজার,
মাঙ্কি ক্যাপ, সানগ্লাস, হ্যান্ডগ্লাভস, কড়া সানস্ক্রিম, বিশেষ ধরনের দড়ি, পা ও কোমরের বেল্ট,
পাহাড়ের খাড়া জায়গায় নিরাপত্তার জন্য দুমুখো ক্যারাবিনা,
পর্বতের ঢালে নিজের শরীর আটকানোর জন্য হুক, অ্যালুমিনিয়ামের ফ্লোডিং মই, বরফের পথটি শক্ত না ফাঁপা তা পরীক্ষার জন্য আইস এক্স, হাঁটার লাঠি ইত্যাদি। এগুলো আপনি পাবে হিমালয়ের দেশ নেপালের কাঠমান্ডুর থামেলে। এই হলো মোটামুটি ভাবে প্রস্তুতি। আর থাকতে হবে অসীম মনোবল, সাহস আর প্রতিকূলতাকে জয় করার ক্ষমতা। এই সব কিছু যদি আপনার ঠিকঠাক থাকে তবে আপনি ও পারেন মুসা ইব্রাহীমের মত এভারেস্ট জয় করতে। কি কবে যাচ্ছেন এভারেস্ট জয় করতে?
"দোস্ত আমি এখন এভারেস্টের মাথার উপর দিয়ে চা খাচ্ছি আর হাটা হাটি করছি" এমন একটা স্ট্যাটাস যদি ফেসবুকে দেখা দেখা যায় তাহলে তাহলে তো আপ[নি ভাবেন যে সে নিশ্চয় পাগল বা ভুয়া কোম্পানীর লোক। কেন?আরে ভাই এভারেস্টে কি ইন্টারনেট আছে যে ঐ বেটা ফেসবুক ইউস করছে?এধরণের কাহিনী হলেও অবিশ্ব্যস করার কিছুই থাকবে না। করণ এখন ইন্টারনেট পোছে গেছে পৃথিবীর সবচেয়ে উচু স্থান হলো হিমালয়।
জ্বী কেবল এভারেস্টের নিচ থেকে নয়। এবার থেকে এভারেস্টের মাথায় ও বসে আপনি অবিশ্বাস্য দ্রুতগতির ইন্টারনেট সিটিসেল ডুম থুক্কু থ্রিজি প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারবেন।
আর এই সুবিধাটা দিচ্ছে সুইডেনের বিখ্যাত ফোন কোম্পানি টেলিয়াসোনেরার সহযোগী প্রতিষ্ঠান এনসেল। তারা এভারেস্ট অঞ্চলের গোরাকশেপ গ্রামে ৫ হাজার ২শ মিটার বা ১৭ হাজার ফুট উঁচুতে একটি দ্রুত গতির তৃতীয় প্রজন্ম (থ্রি-জি) ফোনের বেস স্টেশন স্থাপন করেছে। এ নেটওয়ার্ক এভারেস্টের চূড়া পর্যন্ত পৌঁছবে।
এভারেস্টের ৮ হাজার ৮শ ৪৮ মিটার উঁচুতে ওঠা পর্বতারোহীদের আগে খুবই ব্যয়বহুল অথচ অনিশ্চিত স্যাটেলাইট ফোন কভারেজ কিংবা পর্বতের চীনা পার্শ্বে ২০০৭ সালে চায়না মোবাইলের স্থাপিত ভয়েস-ওনলি নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভর করতে হতো। নতুন স্থাপনা প্রতিবছর এভারেস্ট অঞ্চলে আসা হাজার হাজার পর্যটক ও পর্বত পরিব্রাজকদের জন্যও সহায়ক হবে। টেলিয়াসোনেরার প্রধান নির্বাহী লারস নির্বার্গ বলেন, মোবাইল যোগাযোগের ক্ষেত্রে এটি এক বিরাট মাইলফলক এই থ্রি-জি দ্রুতগতি সম্পন্ন ইন্টারনেট বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ থেকে দ্রুততর ও অধিকতর সুলভ টেলিযোগাযোগ সেবা প্রদান করবে। কোম্পানিটি জানায়, এই থ্রি-জি সার্ভিস ভিডিও কল এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করার জন্য পর্যাপ্ত দ্রুত গতিসম্পন্ন হবে। ইউরোপের একটি খনিতে সমুদ্র পৃষ্টের ১৪শ মিটার নিচে থ্রি-জি বেস স্থাপনের কৃতিত্বের দাবিদারও এই কোম্পানি। তাহলে আপনারা কেউ চিন্তা কইরেন না। প্রিয় টেকটিউনস বা ফেসবুক আপনি এভারেস্টে গেলে ও আপনার সাথেই থাকবে।
এবার আসি এভারেস্ট এর রেকর্ড নিয়ে। এমনও আছে যে ৩০ বার চেষ্টা করে ও ব্যার্থ হয়েছেন এভারেস্ট জয় করতে। আবার ১৩ বছর বয়সে ও জয় করে ফেলেছে এভারেস্ট এমন ঘটনাও ঘটেছে। এমন কিছু রেকর্ড আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।
এভারেস্টের চূড়ায় প্রথম পেঁৗছেন স্যার এডমন্ড হিলারি এবং তেনজিং নোরগে, ১৯৫৩ সালের ২৯ মে।
১৯৭৫ সালের ১৬ মে প্রথম নারী হিসেবে এভারেস্টের চূড়ায় পেঁৗছার কৃতিত্ব দেখান জাপানের জুনকো তাবেই,
লিডিয়া ব্র্যাডি। তিনি এভারেস্ট জয় করেন ১৯৮৮ সালের ১৪ অক্টোবর।
১৯৭৮ সালের ৮ মে এভারেস্ট জয় করেন অস্ট্রিয়ার পিটার হেবেলার (ডানে ব) এবং ইতালির রেইনহোল্ড মেসনার(বায়ে)। এ অভিযানটি অনন্য, কারণ তাঁরাই প্রথম অক্সিজেন ছাড়া চূড়ায় আরোহণ করেন।
ইতালির রেইনহোল্ড মেসনার প্রথম অভিযাত্রী যিনি একা এভারেস্ট জয় করেন,
১৯৮০ সালের ২০ আগস্ট।
শীতকালে প্রথম এভারেস্ট জয় করেন পোল্যান্ডের এল সিচি (ডানে)এবং কে ওয়েলিকি, (বায়ে) ১৯৮০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি।
১৯৯০ সালের ৭ অক্টোবর এভারেস্ট জয় করেন এক দম্পতি। স্লোভেনিয়ার এই স্বামী-স্ত্রীর নাম আন্দ্রেজ এবং মারিয়া স্ট্রেমফেলজ।
২০০১ সালের ২৫ মে প্রথম অন্ধ ব্যক্তি হিসেবে এভারেস্ট জয় করেন যুক্তরাষ্ট্রের এরিক ভিয়েনমায়ার।
১৯৯২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর। প্রথম সহোদর হিসেবে এভারেস্ট জয় করলেন আলবার্তো ও ফেলিক্স ইনুরাতেগুই।
১৯৯০ সালে প্রথম মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেন জ্য নোয়েল রোচে এবং তাঁর ছেলে রোচে বারত্রা ওরফে জেবুলন।
১৭ বছরের বারত্রা ছিলেন তখন পর্যন্ত সবচেয়ে কম বয়সী এভারেস্ট জয়ী।
১৯৯৮ সালে বিশ্ব্ববাসীকে চমকে দিলেন যুক্তরাষ্ট্রের টমাস হুইটাকের। একটা কৃত্রিম পা নিয়েও দুর্গম এভারেস্টকে পরাভূত করেন তিনি।
প্রথম দুবার এভারেস্টের চূড়ায় ওঠার কৃতিত্ব নেপালের নওয়াং গোম্বুর।
সবচেয়ে দ্রুত এভারেস্টে ওঠার রেকর্ড অস্ট্রিয়ান ক্রিস্টিয়ান স্টেনগালের।
বেইস ক্যাম্প থেকে চূড়ায় পেঁৗছাতে তিনি সময় নেন মাত্র ১৬ ঘণ্টা ৪২ মিনিট। ঘটনাটি ঘটে ২০০৭ সালে।
সবচেয়ে দ্রুত চূড়া থেকে নেমে আসার রেকর্ডটি ফ্রান্সের জ্যঁ-মার্ক বোয়াভিনের। তিনি প্যারাগ্লাইডিং করে মাত্র ১১ মিনিটে নেমে আসেন বেস ক্যাম্পে।
বাঙালি হিসাবে প্রথম এভারেস্ট শৃঙ্গ জয় করেন দেবাশীষ বিশ্বাস ও বসন্ত সিংহ রায়।
দেবাশীষের বাড়ি পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় আর বসন্ত সিংহের বাড়ি নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগরে।
এভারেস্টের চূড়ায় কোনো মতে একবার পেঁৗছাটাই বেশির ভাগ মানুষের কাছে স্বপ্নের মতো।
সেখানে নেপালের আপা শেরপার কাণ্ড শুনলে চোখ কপালে উঠবে। এ পর্যন্ত ২০ বার এভারেস্টের চূড়ায় পা রেখেছেন তিনি।
সবচেয়ে বেশি সময় মাউন্ট এভারেস্টের শীর্ষে অবস্থানের রেকর্ড নেপালের বাবু চিরি শেরপার।
১৯৯৯ সালে অক্সিজেন ছাড়া ২১ ঘণ্টার বেশি চূড়ায় থাকেন তিনি। শুধু তাই নয়, চমৎকার একটা ঘুমও দিয়ে দেন সেখানে।
সবচেয়ে বেশি বয়সে এভারেস্ট জয় করেন বাহাদুর শেরচান।
২০০৮ সালে ২৫ মে এভারেস্ট জয়ের সময় তাঁর বয়স ছিল ৭৬ বছর।
এ বছরই ২২ মে ঘটনাটা ঘটান আমেরিকান এক কিশোর। জর্ডান রোমেরা নামের
এই কিশোরের বয়স মাত্র ১৩ বছর।
এভারেস্টের চূড়ায় পা রাখতে গিয়ে ২০০৯ সালের শেষভাগ পর্যন্ত ২১৬ জন অভিযাত্রী প্রাণ হারিয়েছেন।
এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় অভিযাত্রী দল এভারেস্ট জয়ে গেছে চীন থেকে। ১৯৭৫ সালে ৪১০ জনের একটি অভিযাত্রী দল ওই অভিযানে অংশ নেয়।
ডেস্কস্যার এডমন্ড হিলারি ও তেনজিং নোরগে এভারেস্ট জয় করার পরও অনেক বছর বিশ্বের সর্বোচ্চ চূড়াটি অনেকটা রহস্য হয়েই ছিল মানুষের মাঝে। ১৯৫৩ সালের পর দীর্ঘ ৫০ বছরে এভারেস্ট জয় করেছিলেন প্রায় ৫০০ জন আরোহী। সেখানে গত সাত বছরে ২৯ হাজার ৩৫ ফুট উঁচু চূড়াটি জয় করেছেন আড়াই হাজার মানুষ। মুসা ইব্রাহীম যে সময় হয় করেন সেই সপ্তাহেই এভারেস্টজয়ী হিসেবে নাম লিখিয়েছেন তিন শতাধিক অভিযাত্রী।
'এভারেস্টকে আমার আর বিশেষ কোনো স্থান মনে হয় না। কারণ অন্য পাঁচটা ব্যস্ত এলাকার মতোই সেখানে এখন মানুষ গিজগিজ করে। ' কয়েক বছর ধরে বিশ্বের সর্বোচ্চ চূড়াটি বিজয়ের 'হিড়িক' পড়ে যাওয়ায় এ মন্তব্য করেছেন পাঁচবার এভারেস্টজয়ী যুক্তরাষ্ট্রের জেক নরটন।
মূলত ২০০৩ সাল থেকেই এভারেস্টজয়ীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ২০০৭ সালে সর্বোচ্চ ৬৩০ জন বিশ্বের সর্বোচ্চ চূড়াটি জয় করেন। চলতি বছরেও এ সংখ্যা চার শর কম হবে না। জয়ীদের তালিকায় কেবল পুরুষই নয়, রয়েছেন নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধীরাও। গত রবিবারেই মাত্র ১৩ বছর বয়সে চূড়ার ওঠার রেকর্ড গড়ে আমেরিকার শিশু জর্ডান রোমেরো। ২০০৭ সালে জাপানি নাগরিক কাতসুকে ইয়ানাগিসাওয়া ৭১ বছর বয়সে চূড়ায় উঠে চমক লাগিয়ে দেন। একই বছরে চূড়ায় ওঠেন কৃত্রিম হৃদযন্ত্র স্থাপন করা এক কানাডীয় নারী। এবার সহ আপা শেরপা চূড়া জয় করলেন ২০ বার।
হঠাৎ করেই এভারেস্ট জয়ে সফলতার হার বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টিকে 'প্রযুক্তির আশীর্বাদ' হিসেবেই অভিহিত করছেন জেক নরটন। তাঁর ভাষায়, 'এভারেস্ট চূড়ায় আরোহণের মানচিত্র এখন আমাদের মুখস্থ। গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) আরোহীদের হাতে হাতে। তা ছাড়া পথপ্রদর্শক ও দেহরক্ষী হিসেবে সার্বক্ষণিক শেরপা তো রয়েছেই। রয়েছে আধুনিক সরঞ্জাম। '
আরোহীদের পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করা ব্রিটিশ নাগরিক কেনটন কুল বলেন, 'হিলারি ও নোরগে যখন এভারেস্টে যান, তখন তাঁরা সম্পূর্ণ অচেনা এক জগতের খোঁজে ছিলেন। এখন কিন্তু বিষয়টি আর তেমন নেই। এমনকি আরোহীদের সহায়তার জন্য বিভিন্ন স্থানে স্থায়ীভাবে দড়ি ও মই লাগানো রয়েছে। '
কুলের মতে, উন্নত প্রযুক্তির পোশাক ও সরঞ্জাম পর্বতারোহণের কাজকে অনেক সহজ করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, 'পাহাড়ের চূড়ায় ভালো দস্তানা, জুতা ও কাপড় বড় ব্যবধান গড়ে দেয়। এসব বিশেষায়িত কাপড় প্রচণ্ড ঠাণ্ডার মধ্যেও আরোহীদের উষ্ণ রাখে। তা ছাড়া কৃত্রিম অক্সিজেনের ব্যবস্থাও এখন অনেক আধুনিক হয়েছে। রয়েছে স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রিত আধুনিক আবহাওয়ার পূর্বাভাস। এসব কারণেই এভারেস্ট জয় আগের চেয়ে এত সহজ ও নিরাপদ হয়েছে। '
এ মৌসুমে (এপ্রিল-মে) অবশ্য অনুকূল আবহাওয়াও আরোহীদের অনেক সহায়তা করেছে। এ পর্যন্ত ২১৬ জন অভিযাত্রী এভারেস্ট চূড়ায় আরোহণের পথে প্রাণ হারালেও এ বছর এখনো পর্যন্ত কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি। অভিযাত্রীদের সফলতার হারও ছিল অনেক বেশি। নেপালের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য মতে, এ বছর এভারেস্টে আরোহণের জন্য অনুমতি নিয়েছেন ২৩৩ জন বিদেশি। তিব্বত অংশ থেকে যাত্রা করে এভারেস্টজয়ের সফলতার হার নেপালের তুলনায়ও বেশি। মুসা ইব্রাহীম এ পথেই চূড়ায় উঠেছেন। তাঁর ২৬ জনের দলের সবাই সফলভাবে এভারেস্ট জয় করতে সক্ষম হয়েছেন। মুসার এক দিন আগে তাঁর ব্যবহৃত পথ ধরেই সবচেয়ে কম বয়সে এভারেস্ট জয়ের রেকর্ড গড়ে শিশু রোমেরো। সোমবার কানাডার নাগরিক সেইন্ট জার্মেইন তো কোনো রকম কৃত্রিম অক্সিজেন সঙ্গে না নিয়েই এভারেস্ট জয় করেছেন।
বছর বছর শতাধিক আরোহী এভারেস্ট চূড়ায় উঠছেন বলে গুরুত্ব কমে যাচ্ছে জয়ীদেরও। ১৯৫৩ সালে হিলারি ও নোরগের এভারেস্ট জয়ের পর পুরো বিশ্বেই আলোড়ন উঠেছিল। অথচ গত রবিবার রোমেরো মাত্র ১৩ বছর বয়সে এভারেস্ট জয় করার পর তার নিজ দেশের পত্রপত্রিকায়ও তেমন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। একই দিনে সবচেয়ে কম বয়সী ভারতীয় হিসেবে এভারেস্ট জয় করা ১৬ বছর বয়সী অর্জুন বাজপেয়িকে নিয়েও তেমন মাতামাতি হয়নি। তবে নরটন মনে করেন, স্বাভাবিক হয়ে এলেও মানুষের এভারেস্ট জয়ের আকাঙ্ক্ষা চিরদিনই থাকবে। যদিও ইচ্ছে থাকলেই সেটি সম্ভব হবে না সবার পক্ষে। কারণ নেপাল বা তিব্বত থেকে এভারেস্টে আরোহণের অনুমতি সংগ্রহ করতেই মাথাপিছু ফি দিতে হয় ১০ হাজার ডলার। এ ছাড়া আরোহণের অন্যান্য ব্যয় তো আছেই।
আসলে শেষ কথা হলো যত বাধা বিপত্তিই আসুক না কেন এভারেস্ট জয় করা জন্য মানুষ সবসময় ই যাবে এভারেস্টের পাদদেশে। আর চিরকালই মানুষের কাছে এভারেস্ট হয়ে থাকবে একটি গর্বের বিষয়। আর বারবার এভাবেই এভারেস্ট হার মানবে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের কাছে। সবাইকে কষ্ট করে টিউনটি পড়ার জন্য অসংখ্য ধ্যনবাদ।
আমি সজীব রহমান। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 15 বছর 3 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 69 টি টিউন ও 819 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 5 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
এই না হইলে টিউন!
অনেক দিন পর একটা ক্লাশ টিউন পেলাম।
অনেক কষ্ট করে এত সুন্দর ভাবে টিউনটি উপস্থাপনের জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আপনার জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা।
আপনার টিউন থেকে অনেক কিছু জানতে পারলাম।