- بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ -
সুপ্রিয় টেকটিউনস কমিউনিটি সবাইকে আমার সালাম এবং শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আমার আজকের টিউন।
ছোটবেলায় কাগজের নৌকা কিংবা কাগজ দিয়ে বিমান তৈরী করেনি এরকম লোক খুব কম খুঁজে পাওয়া যাবে। বড় বেলাতে এসেও অনেকে হয়তো তাদের এই অভ্যাসটি ছাড়তে পারেনি। সামনে কোন কাগজের টুকরা পড়ে থাকলে দেখলে আপনারা হয়তো মনের অজান্তে সেটাকে পাখি, বিমান কিংবা নৌকার রূপ দিয়ে দেন। আমি নিজেও যখন বাড়িতে যাই তখন ভাগনে ভাগনি কাউকে পেলেই চোখের পলকে কাগজ দিয়ে কিছু একটা বানিয়ে দেই। এরকম অভ্যাস আপনার আমার মতো অনেকের থাকলেও আমরা অধিকাংশই জানিনা এটা একটা শিল্পকলা।
আমরা যদি আমাদের এই কাজকে শুধু নৌকা কিংবা বিমান বানানোতে সীমাবদ্ধ না রেখে একটু বড় চিন্তা করি তাহলে আমরা শুধু কাগজ ভাঁজ করেই অনেক সুন্দর সুন্দর কিছু ব্যবহার্য কিংবা ঘর সাজানোর জিনিস তৈরী করতে পারি। এতোক্ষণ আমি যে বিষয়ে আলোচনা করলাম তার নাম হলো অরিগামি (Origami)। আমার আজকের টিউনে আপনারা জানবেন অরিগামির ইতিহাস, অরিগামি তৈরীর উপকরন এবং অরিগ্যামি তৈরীর পদ্ধতি। সবার শেষে থাকবে কিছু বাংলা এবং ইংরেজি রিসোর্স। তাহলে চলুন শুরু করি।
Origami শব্দটি একটি জাপানি শব্দ। জাপানি শব্দ Ori মানে হলে হলো ভাঁজ এবং Kami মানে হলো কাগজ। পরবর্তি সময়ে Kami শব্দটি পরিবর্তিতে হয়ে Gami হয়ে যায়। তখন এর নাম হয়ে যায় Origami মানে হলো কাগজের ভাঁজ। সাধারনত কাগজকে কোন প্রকার কাটা ছেড়া বা আঠা লাগানো ছাড়া শুধুমাত্র ভাঁজ করে বিভিন্ন আকৃতি দেওয়ার প্রথাকে বলা হয় Origami। ধারনা করা হয় ১৬০৩ সাল থেকে জাপানে সর্ব প্রথম অরিগ্যামির চর্চা শুরু হয়। তারপর দিনের পরিবর্তনে এই চর্চা জাপানে সীমাবদ্ধ না থেকে বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়ে। আরো কিছু জানার আগে চলুন কিছু ছবি দেখে নেওয়া যাক।
অরিগামি দিয়ে যে শুধু মনমুগ্ধকর শিল্পকর্ম হয় তা নয় আপনি চাইলে গৃহস্থালীর প্রয়োজনীয় ছোটখাট কিছু জিনিসপত্রও অরিগামির সাহায্যে তৈরী করতে পারবেন। তাহলে চলুন এক নজরে একটু দেখে নিই কিছু ছবি।
এতোক্ষনে নিশ্চয় অরিগামি সম্পর্কে আপনাদের সুষ্পষ্ট ধারনা এসে গেছে। আপনাদের মনে এখন অরিগামি তৈরীর চিন্তা মাথায় আসবে এটাই স্বাভাবিক। তো চলুন তাহলে শুরু করা যাক অরিগামি তৈরীর প্রকৃয়া।
অরিগামির চর্চা যখন শুরু হয়েছিলো তখন শুধু কাগজ ভাঁজ করে বিভিন্ন আকৃতি দেওয়াকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হতো। কিন্তু বর্তমান সময়ে যারা অরিগামির চর্চা করেন তারা শুধু কাগজ ভাঁজ করাতেই সীমাবদ্ধ না থেকে কাগজ গলিয়ে মণ্ড তৈরী করে, আঠা লাগিয়ে, কাগজ কেটে অথবা আরো প্রয়োজনীয় আনুষাঙ্গিক পরিবর্তন করে অরিগামি তৈরী করে থাকেন। তবে সব চাইতে আদর্শ পদ্ধতি হলো কোন প্রকার কাটা-ছেড়া না করে অরিগামি তৈরী করা।
তো শুরু করার আগে চলুন জেনে নেই কী কী লাগবে।
উপকরনঃ অরিগামি পেপার। অরিগামি তৈরী করার জন্য শুধুমাত্র যেটা লাগে সেটা হলো অরিগামি পেপার। আপনারা হয়তো চিন্তায় পড়ে গেছেন যে এই অরিগামি পেপার কোথায় কিনতে পাওয়া যাবে। আসলে যে কোন পেপার হাউজে গেলেই আপনি অরিগামি পেপার কিনতে পারবেন তবে যদি না পাওয়া যায় তাহলে সমাধান হলো যেকোন পেপারকে বর্গাকৃতি করে কাটলেই সেটা হয়ে যাবে অরিগামি পেপার। কাজের সুবিধার জন্য আপনারা টিউনার পেপার গুলো ব্যবহার করতে পারবেন।
আজকাল অরিগামি তৈরী করার রিসোর্সের অভাব নেই। অরিগামির তৈরীর অনেক রকম বই পাওয়া যায়, ইউটিউবে রয়েছে সহস্রাধিক ভিডিও টিউটরিয়াল, রয়েছে অরিগামি তৈরীর বিভিন্ন ফ্ল্যাশ ওয়েবসাইট। আপনারা সবগুলো জায়গা থেকেই অরিগামি শিখতে পারবেন। তবে আমি ব্যক্তিগত ভাবে ফ্ল্যাশ সাইটগুলোকে বেশি প্রাধান্য দেই। তার পেছনে কারন হলো আপনি খুব কম ব্যান্ডউইথ খরচ করে এই সাইটগুলো থেকে ত্রিমাত্রিক চিত্রের সাহায্যে অরিগামি শিখতে পারবেন। নিচে অরিগামি তৈরীর বিভিন্ন সাইটের লিংক দেওয়া হলো।
আপনি যদি আমাদের মাতৃভাষা বাংলায় অরিগামি শিখতে চান তাহলে আপনার জন্য রয়েছে নারায়ণ সান্যালের অরিগামির উপর বিশাল একটা বই। নিচের ডাউনলোড লিংক থেকে ১০ মেগাবাইটের বইটি যে কেউ ডাউনলোড করে রেখে দিতে পারেন।
সর্বশেষ উপায় হলো আপনারা চাইলে আমাদের জীবনে কাজে আসে এরকম কিছু জিনিস নিয়ে আমি ধারাবাহিক টিউটরিয়াল লিখতে পারি।
আমার আজকের টিউনের শিরোনাম ছিলো “প্রয়োজন এবং আনন্দকে এক সূতোয় গেঁথে দিতে আমার আমার আজকের আয়োজন। অবসর কিংবা ব্যস্ততার ফাঁকে সৃজনশীল কিছু কাজ করুন। অরিগামি হতে পারে আপনার এবং আপনার শিশুর সৃজনশীলতা প্রকাশের অন্যতম উপকরন”। আপনি খেয়াল করছেন কিনা জানিনা আমাদের জীবন দিনের পর দিন বড় একঘেয়ে হয়ে যাচ্ছে। জীবনে কিছু বিচিত্রতা আনতেই আপনার প্রয়োজন অরিগামি শেখা। তাছাড়া অরিগামি হলো একটি প্রথম শ্রেণীর শিল্পকলা, আপনি এর চর্চার মাধ্যমে নিজের সৃজনশীলতা বাড়াতে পারবেন। একটুকরা কাগজকে শুধু ভাঁজ করে বিভিন্ন আকৃতি দেওয়া খুব ছোট কথা না। তাছাড়া আপনার শিশুকে তাদের বিনোদনের ব্যাতিক্রমধর্মী মাধ্যম হিসাবে আপনি অরিগামিকে উপস্থাপন করতে পারবেন। কারন অরিগামি শুধু মাত্র একটি শিল্পকলা নয়, এটি মেধা বিকাশের অন্যতম মাধ্যম। আমি জানি আপনারা সারাদিন অনেক ব্যস্ত থাকেন তবে কাজের ফাঁকে একট টুকরা কাগজ নিয়ে একটি অরিগামি তৈরী করলে আপনার মনে একটা মানুষিক রিফ্রেশমেন্ট আশাকরি।
অরিগামি সম্পর্কে আপনাদের অনেক কিছু বলার চেষ্টা করলাম। এবার চলুন তাহলে একটি অরিগামি তৈরী করা যাক। নিচের চিত্র গুলো দেখুন এবং ধাপে ধাপে অনুসরন করুন। সব সময়ের জন্য উপকরণ হিসাবে থাকছে একটি বর্গাকৃতির কাগজ। তো শুরু করা যাক।
অরিগামি সম্পর্কিত টিউনের প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে আশাকরি আপনাদের মনে অরিগামি তৈরী এবং চর্চার মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে। আপনাদের নিজের এবং পরবর্তি জেনারেশনে অরিগামির ব্যাপক বিস্তার হোক এটাই আমার আজকের প্রত্যাশা। তবে শেষ করার আগে কিছু কথা রয়েছে এখনো বাকি। কারন বরাবরের মতো টিউন শেষ হবে শেষ কথা দিয়েই।
টিউনটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে অথবা বুঝতে যদি কোন রকম সমস্যা হয় তাহলে আমাকে টিউমেন্টের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না। কারন আপনাদের যেকোন মতামত আমাকে সংশোধিত হতে এবং আরো ভালো মানের টিউন করতে উৎসাহিত করবে। আর আপনাদের যাদের টেকটিউনসে একাউন্ট নেই তারা আমার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ লিংক থেকে আমার টিউনে টিউমেন্ট করতে পারবেন। পেজে লাইক দিয়ে আমার সকল টিউন বিষয়ে আপডেট থাকুন। সর্বশেষ যে কথাটি বলবো সেটা হলো, আশাকরি এবং অপরকেও কপি পেস্ট টিউন করতে নিরুৎসাহিত করি। সবার সর্বাঙ্গিন মঙ্গল কামনা করে আজ এখানেই শেষ করছি। দেখা হবে আগামী টিউনে।
আপনাদের সাহায্যার্থে আমি আছি.
ফেসবুক | টুইটার | গুগল-প্লাস
আমি সানিম মাহবীর ফাহাদ। সুপ্রিম টিউনার, টেকটিউনস, ঢাকা। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 12 বছর যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 176 টি টিউন ও 3500 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 159 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আগে যা শিখেছিলাম এখন তা শেখানোর কাজ করছি। পেশায় একজন শিক্ষক, তবে মনে প্রাণে টেকনোলজির ছাত্র। সবার দোয়া প্রত্যাশি।
valo laglo