বিভিন্ন কাজেই আমাদেরকে কম্পিউটারে ইন্সটল করতে হয় নানা ধরনের সফটওয়্যার। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশতঃ প্রায় বেশিরভাগ সফটওয়্যারই ইন্সটল করার পর সিস্টেমে অপ্রয়োজনীয় ফাইল ইন্সটল করে যা সিস্টেমকে স্লো করে দেয় ও কম্পিউটার হ্যাংয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
কোন সফটওয়্যারের কাজ সেরে গেলে আমরা সাধারণত সেটিংস থেকে অ্যড-রিমুভ প্রোগ্রামটিকে ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু আমরা নিশ্চয়ই এর কার্যকারিতা সম্বন্ধে ভালোভাবেই জ্ঞাত! বেশিরভাগ সফটওয়্যারকেই উইন্ডোজের এই প্রোগ্রামটি সম্পূর্ণভাবে ডিলিট করতে পারে না কিংবা একটুও ডিলিট করতে পারে না। বিশেষ করে যে সব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সফটওয়্যার কম্পিউটার ক্ষতির জন্য তৈরি, সেগুলোকে তো অনেকসময় ধরতেই পারেনা উইন্ডোজের ডিফল্ট এই অপশনটি। এর অকার্যকারিতার দরুণ আমাদেরকে পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। ওয়েবসাইট ঘাঁটাঘাঁটি করতে হয় সমস্যার সমাধানের জন্য। কখনো কখনো সমস্যাই বোঝা যায় না, সমাধান দূরে থাক।
এজাতীয় সমস্যা পারসোনাল কম্পিউটার ব্যবহারকারীদের প্রতি নতুন কিছু না। তাই আজ আমি জানাচ্ছি অতুলনীয় একটি সফটওয়্যারের কথা, যা আপনার কম্পিউটারে সিটি করপোরেশনের মত কাজ করবে। অর্থাৎ, আনাচে-কানাচে ঘেঁটে খুঁজে বের করবে সকল প্রোগ্রাম এবং মূলোৎপাটন করবে যেকোন সফটওয়্যারের যখনই আপনি নির্দেশ দেবেন। আজকের এই সফটওয়্যার রিভিউতে আলোচনা করবো রিভো আনইন্সটলার নামক একটি ফ্রিওয়্যার নিয়ে যা আপনি সহজেই ডাউনলোড করে নিতে পারেন আপনার কম্পিউটারে।
রিভো আনইন্সটলার হচ্ছে মূলত সফটওয়্যার, প্রোগ্রাম বা যেকোন ধরনের 'বেয়াড়া' ফাইলের মূলোৎপাটনের উদ্দেশ্যে নির্মিত অসাধারণ একটি ফ্রিওয়্যার যা ব্যবহার করে আপনি চমকে উঠবেন। যেকোন সফটওয়্যার সম্বন্ধে ভালো ধারণা পাবার সবচাইতে উত্তম উপায় হলো নিজে ব্যবহার করা। সুতরাং, পরামর্শ দিচ্ছি নিজে ব্যবহার করুন। ১০০% গ্যারান্টি উপকৃত হবেন।
তবে তার আগে আসুন এক নজরে জেনে নিই রিভো আনইন্সটলারের কিছু জনপ্রিয় বৈশিষ্ট্য।
আপনার কম্পিউটার ইন্সটল করা সব প্রোগ্রাম/সফটওয়্যারের একটি তালিকা দেখতে পাবেন রিভো আনইন্সটলার প্রোগ্রামটি রান করলে। এখান থেকে যেকোন সফটওয়্যারের নামের উপর ডাবল ক্লিক করে সম্পূর্ণ মুছে ফেলা যাবে সেই প্রোগ্রামটিকে আপনার হার্ডড্রাইভ থেকে। আপাতঃদৃষ্টিতে উইন্ডোজের অ্যাড-রিমুভ প্রোগ্রামের মত দেখা গেলেও এই দুয়ের মধ্যে রয়েছে এক বিশাল পার্থক্য-- যা আপনি ব্যবহারের সময়ই বুঝবেন।
রিভো আনইন্সটলারের অত্যন্ত জনপ্রিয় ও কার্যকর একটি অপশন হচ্ছে হান্টার মোড। অনেকটা বন্ধুকের টার্গেটের মত দেখতে এই আইকনটিকে আপনি চলমান যেকোন প্রোগ্রাম (সিসট্রে কিংবা টাস্কবার থেকেও) এর উপর নিয়ে ক্লিক করলে ওখান থেকেই ঐ প্রোগ্রামটিকে ডিলিট করে ফেলতে পারবেন। রিভো আনইন্সটলার হান্টার মোড অন করলে নিচের মত একটি ছবি স্ক্রীনের উপরের ডান দিকে দেখতে পাবেন।
ধরুন আপনার সিস্টেমে অভ্র কীবোর্ড রান করা আছে। আপনি অভ্রকে সম্পূর্ণরূপে ডিলিট করতে চাচ্ছেন। এরজন্য আপনাকে যা করতে হবে, সেটা হচ্ছে উপরের ছবিটির উপর ক্লিক করে ধরে রেখে সিস্টেমের যেখানে অভ্রবারটি আছে (স্ক্রীনের উপরে কিংবা সিসট্রেতে), সেখানে নিয়ে ক্লিক ছেড়ে দিন। এতে আপনি অভ্র কীবোর্ডের আনইন্সটল করার অপশন পেয়ে যাবেন। এভাবে আপনি চলমান যেকোন সফটওয়্যারকে একটি ক্লিকের মাধ্যমে শেষ করে দিতে পারেন রিভো আনইন্সটলের হান্টার মোডের মাধ্যমে।
হান্টারমোডকে ইচ্ছা করলে আপনি একটু ব্যতিক্রমভাবেও ব্যবহার করতে পারেন। এজন্য স্ক্রীন থেকে হান্টার মোডের আইকনটির উপর রাইট ক্লিক করে ড্র্যাগ এন্ড ড্রপ মোডে ক্লিক করতে পারেন। এতে আইকনটি নিচের ছবির মত রূপ নেবে।
এই হান্টারটি ব্যবহার করে কোন ফাইল ডিলিট করতে চাইলে যেই ফাইলটি ডিলিট করতে চান, সেই ফাইলটি ড্র্যাগ করে আইকনের উপর ছেড়ে দিন। ব্যস, আনইন্সটল করার অপশন পেয়ে যাবেন।
হান্টার মোডে ক্লিক করার অপশনটির দুইটি অপশন পিছনে দেখতে পাবেন টুলস অপশন যেখানে আপনি দুই ধরনের সাব মেন্যু পাবেন।
এদের একটি হলো অপটিমাইজেশন। অপটিমাইজেশনে রয়েছে তিনটি অপশন। অটোরান ম্যানেজার, জাঙ্ক ফাইলস ক্লিনার এবং উইন্ডোজ টুলস।
অধিকাংশ উইন্ডোজ অ্যাপ্লিকেশন ইন্সটল করার সময় আপনার কম্পিউটারে অপ্রয়োজনীয় ফাইল ইন্সটল হয়ে যায় যা পরবর্তীতে মুছে ফেললেও পারমানেন্টলি কম্পিউটার থেকে বিদায় হয়ে যায় না। ঐসব ফাইল আপনার কম্পিউটারে সক্রিয় থাকে এবং কম্পিউটারকে স্লো করতে থাকে যদিও আপনি ঐসব ফাইলের সন্ধান পাবেন না। রিভো আনইন্সটলারের জাঙ্ক ফাইল ক্লিনারের মাধ্যমে আপনি সেই সব অপ্রয়োজনীয় ফাইল মুছে দিতে পারবেন।
উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের সাথে বেশকিছু কার্যকর ও জরুরি কম্পোনেন্ট দেয়া থাকলেও, কমপ্লেক্স কমান্ড লাইন ও এক্সেসে ডিফিকাল্টি'র জন্য এসব ফাইল কাজের চেয়ে অকাজেরই হয়ে যায় যেন। তবে রিভো আনইন্সটলারের উইন্ডোজ টুলস আপনাকে উইন্ডোজের অতিপ্রয়োজনীয় ১৩টি (কিংবা তারও বেশি) কম্পোনেন্ট একই উইন্ডো থেকে চালু করার সুবিধা দেবে।
প্রতিবার কম্পিউটার চালু করার সাথে সাথে আপনার কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয় অসংখ্য ফাইল। আমরা অনেকেই জানি যে স্টার্ট > প্রোগ্রামস > স্টার্ট-আপ ফাইলে থাকা যেকোন প্রোগ্রামই উইন্ডোজ প্রতিবার চালু হবার সাথে সাথে চালূ হবে। কিন্তু আপনি নিশ্চয়ই টের পেয়ে গেছেন যে এর বাইরেও অনেক প্রোগ্রাম চালু হচ্ছে যখনই আপনি কম্পিউটার চালু করছেন। আপনি যদি অতিরিক্ত এই প্রোগ্রামের চালু হওয়া বন্ধ করে দেন, তাহলে আপনার কম্পিউটার স্টার্ট হবে আরো দ্রুত।
অটোরান ম্যানেজার আপনাকে দেখাবে কোন কোন প্রোগ্রাম আপনার কম্পিউটার চালু হবার সাথে সাথে নিজেরাও চালু হয়ে যায়। আপনি চাইলে টিক চিহ্ন উঠিয়ে তাদের অটোরান বন্ধ করতে পারেন, কিংবা টিক চিহ্ন দিয়ে অটোরান চালুও করতে পারেন। যখনই আপনি কোন প্রোগ্রামের অটোরান চালূ বা বন্ধ করবেন, তখনই আপনি সিসট্রে'র উপরে নিম্নরূপ একটি মেসেজ পাবেন। এই মেসেজে বলা হবে যে সংশ্লিস্ট ফাইলটি আর অটোরান হবে কিংবা হবে না।
ট্র্যাকস ক্লিনারে রয়েছে ব্রাউজার ক্লিনার, অফিস ক্লিনার, উইন্ডোজ ক্লিনার, এভিডেন্স রিমোভার ও আনরিকভারেবল ডিলিট অপশন। আসুন জেনে নিই এদের কার কী কাজ।
ইন্টারনেট এক্সপ্লোরার, ফায়ারফক্স ও অপেরা - এই চারটি ব্রাউজারের হিস্টোরি, টেমপোরারি ফাইল, কুকি, ডাউনলোড হিস্টোরি ও ফরম হিস্টোরি সম্পূর্ণভাবে মুছে ফেলতে অত্যন্ত কার্যকর রিভো আনইন্সটলারের ব্রাউজার ক্লিনার অপশনটি। আপনি যা যা মুছে ফেলতে চান, সেই সব অপশনের উপর টিক চিহ্ন দিয়ে এক্সিকিউট বাটনে ক্লিক করলেই আপনার কাজ হয়ে যাবে।
মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, এক্সেল, পাওয়ার পয়েন্ট, এক্সেস ও ফ্রন্টপেজ ২০০০, এক্সপি, ২০০৩ ও ২০০৭ এর রিসেন্ট ফাইল হিস্টোরি মুছে ফেলতে ব্যবহার করতে পারেন অফিস ক্লিনার।
উইন্ডোজের ক্লিপবোর্ড, রিসাইকেল বিন, টেমপোরারি ফাইল, রিসেন্ট ডকুমেন্ট হিস্টোরি, স্টার্ট মেন্যু হিস্টোরি, রান হিস্টোরি, ওয়ার্ডপ্যাড রিসেন্ট ফাইলসহ আরো বেশকিছু উইন্ডোজভিত্তিক সাম্প্রতিক ইতিহাস মুছে ফেলতে কার্যকরী একটি অপশন উইন্ডোজ ক্লিনার।
আপনি যখন কোন ফাইল বা ফোল্ডার ডিলিট করেন, তখন হয়তো তা রিসাইকেল বিনে যায় এবং সেখানে থেকে ডিলিট করলে সেটা পুরো কম্পিউটার থেকেই মুছে যায়। আপাতঃদৃষ্টিতে এমনটা মনে হলেও আসলে কিন্তু এমনটা নয়। আপনার ফাইলটি শুধুমাত্র ডিলিটেড হিসেবে মার্ক করা হয়, সম্পূর্ণ ফাইলটি একেবারে মুছে যায়না। ইন্টারনেটে অসংখ্য ফ্রিওয়্যার আছে যেগুলো ব্যবহার করে কয়েক বছর আগে মুছে ফেলা ফাইলও রিকভার বা ফেরৎ আনা সম্ভব। এতে করে আপনার অত্যন্ত গোপনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ ফাইলও চলে যেতে পারে অন্যের হাতে। এভিডেন্স রিমুভার ব্যবহার করে সেইসব ফাইলকে খুঁজে বের করে ডিলিট করার একটি সুযোগ পেতে পারেন আপনি। যেসব ড্রাইভ থেকে ফাইল ডিলিট করা হয়েছে, সেসব ড্রাইভেই আপনার সংশ্লিস্ট ফাইলটি লুকানো থাকে যা পরবর্তী রিকভারী সফটওয়্যার দ্বারা ফেরৎ আনা সম্ভব। রিভো আনইন্সটলারের এভিডেন্স রিমুভার ব্যবহার করতে পারেন সেইসব মুছে ফেলা ফাইলের অবশিষ্টকেও ধ্বংস করতে।
অত্যন্ত গোপনীয় বা কনফিডেন্সিয়াল ফাইলকে ডিলিট করতে হলে আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন যে তা এমনভাবে ডিলিট হোক, যাতে আর কেউ কখনো কোনরূপ টুলের সাহায্য নিয়ে তা পুনরুদ্ধার করতে না পারে। এই কাজটি করার জন্য আপনি সাহায্য নিতে পারেন আনরিকভারেবল ডিলিট অপশনের। এখানে আপনি কাঙ্খিত ফাইল বা ফোল্ডার এড করে চিরদিনের জন্য ডিলিট করে ফেলতে পারেন।
রিভো আনইন্সটলার ব্যবহার করে আপনি আপনার কম্পিউটারে একটি সচল সিটি করপোরেশন স্থাপন করতে পারেন যা আপনি কম্পিউটারকে রাখবে অপ্রয়োজনীয় ফাইল থেকে মুক্ত, পরিচ্ছন্ন ও দ্রুতগতিসম্পন্ন। এখনই রিভো আনইন্সটলার ব্যবহার করুন আর আপনার কম্পিউটার থেকে অপ্রয়োজনীয় ফাইলকে উচ্ছেদ করা শুরু করুন!
রিভো আনইন্সটলার ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন।
আমি মো. আমিনুল ইসলাম সজীব। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 16 বছর 5 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 83 টি টিউন ও 201 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 7 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আমি আমিনুল ইসলাম ভাই কে অসংখ্য ধন্যবাদ। যে সমস্যা আমি ছিলাম তা এখন সমাধান হয়েছে। রিভো আনইন্টল সফটওয়্যার দিয়ে।
আমিনুল, আমি অনেক আগে ভেবে ছিলাম রিভো নিয়ে লেখব। তুমি আসলেই খুবই দারুন করে লিখেছ। আমার মতে রিভো সবারই ব্যবহার করা উচিত।