আমি রুমি, গুগল সমগ্রের পর আমি আবার আসলাম ফেসবুক তত্ত্ব নিয়ে।
Facebook.com। কে চিনি না? যে ফেসবুক চিনে না, আমার ধারনা সে কোনদিন এই লেখা পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবেনা বলে আমার ধারনা।
ফেসবুক হলো সোশিয়াল নেটওয়ার্ক জায়ান্ট। বিশ্ব-সামাজিক আন্তঃযোগাযোগ ব্যবস্থার একটি ওয়েবসাইট। এলেক্সা ডট কমের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বের ২য় বৃহত্তম সাইট। এটি বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম। ফেসবুকের ইতিহাস সম্পর্কে আমরা সবাই কম বেশি জানি। তবে আজ আরও একটু বিশদ জানানোর জন্য আমি আ সম্পর্কে আলোচনা করছি। চলুন আর কথা না বারিয়ে কাজে চলে যাই।
১৯৮৪ সালে নিউ ইয়র্কে জন্ম নেওয়া কম্পিউটার প্রোগ্রামার মার্ক জুকারবার্গ ফেসবুক প্রতিষ্ঠা করেন ফেব্রুয়ারী ২০০৪ সালে।
ছোটবেলা থেকেই প্রযুক্তির প্রতি ঝোঁক ছিল জুকারবার্গের। আর প্রতিফলনে স্কুলে পড়ার সময়েই তিনি তৈরি করেছিলেন জুকারবার্গ নেট নামের একটি সফটওয়্যার। যা তার বাবার কাজে সাহায্য করত।
চলুন আমরা আর একটু আগে ফিরে যাই। আগেই জেনে রাখুন, মার্ক জুকারবার্গ খুব ভালো কম্পিউটার প্রোগ্রামার। তিনি হার্ভার্ড কলেজে ভর্তি হন। ২০০৩ সালের ২৮ অক্টোবর মার্ক এলিয়ট জুকারবার্গ ফেসম্যাশ ডট কম নামে একটি সাইট প্রতিষ্ঠা করেন। এই ফেসম্যাশ সাইটটি খুব একটা ভালো বা কাজের ছিল না। এই সাইটে দুইটা ছবি পাশাপাশি রাখা হত। আর কিছু ১৮+ কথা বার্তা করা হতো। যেহেতু তিনি একজন ভালো প্রোগ্রামার সেহেতু তিনি হ্যাকিং ও পারতেন। হার্ভার্ড কলেজের ডাটাবেজ হ্যাক করে স্টুডেন্টদের ছবি নিয়ে তা ফেসম্যাশে ব্যবহার করেন। কাজটি এতটা ভালো করেন নি। তবুও এখান থেকেই তাঁর শুরু। ফেসম্যাস সাইট এ মাত্র ৪ ঘণ্টায় ৪৫০ ভিজিটর ২২০০০ ছবিতে অন লাইন এর মাধ্যমে ভোট দেন। পরে তাঁর এই খারাপ কাজের ফল হিসাবে কলেজের স্টুডেন্টরা বিক্ষোভ করে এবং এই সাইট বন্ধ করতে বাধ্য করে।
এ ব্যাপারে মার্ক জুকারবার্গ বলেছিলেনঃ
“ একটা ব্যাপার পরিষ্কার এই সাইট বানানোর জন্য আমি একটা জার্ক! যাই হোক, কেউ না কেউ এটা এমনিতেই করতো। ”
হাউজ সিস্টেম নামে হার্ভার্ড কলেজের একটি ওয়েব সার্ভিস ছিলো। এরপর “দি ফেসবুক” কনসেপ্ট আসে। যা এই হাউজ সিস্টেমের একটা নতুন ফিচার ছিল। মুলত এটির জনক ছিলেন এরন গ্রীন্সপ্যান নামের এক স্টুডেন্ট। ২০০৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তিনি এটি উন্মুক্ত করেন।
জুকারবার্গ পরে তাঁর ক্যামেরুন, টেলর ও ডিভিয়া নামের তিন বন্ধুর জন্য হার্ভার্ড কানেকশন নামের একটা সাইটের জন্য কাজ করা শুরু করেন।
তারপর তিনি thefacebook.com নামে একটি ডোমেইন কিনে নেন। এবং তার চেহারা দেখতে এরকম ছিল।
দি ফেসবুক চালুর ২৪ ঘন্টার মধ্যে জুকারবার্গ ১২০০ জন স্টুডেন্ট এর রেজিস্ট্রেশন দেখতে পান। এতে তো তিনি ভীষণ খুশি ছিলেন। thefacebook.com প্রতিষ্ঠাতে তার সাথে কাজ করেন তার রুমমেট এডুয়ারড সারভেরিন, আন্ড্রো ম্যাক্কোলাম এবং ডাস্টিন মস্কভিটয। মূলত হার্ভার্ড হাউজ সিস্টেম ডট কমে কাজ করার সময়কার ফিচার এই দি ফেসবুক। তাই জুকারবার্গের সেই তিন বন্ধুরা (ক্যামেরুন, টেলর ও ডিভিয়া) ছয় দিনের মাথায় তার বিরুদ্ধে আইডিয়া চুরির অভিযোগ আনে।
কিন্তু সে দিকে দেখে কে! কারন তখন তার উড়ার সময়। ফেসবুকের ইউজার সংখ্যা খুব দ্রুত গতিতে বাড়তে শুরু করে। ২ মাসের মাথায় হার্ভার্ড ছাড়াও আরো বেশ কিছু কলেজে দি ফেসবুক পরিচিতি পায়। জুন মাসের মধ্যেই তার সাইটে প্রায় দেড় লাখ ( ১৫০,০০০ ) ইউজার প্রোফাইল খোলা হয়েছিল। পেপাল ছিল তখনকার খুব জনপ্রিয় কোম্পানি। দি ফেসবুক এর সম্ভাবনা দেখে ওই মাসেই পেপালের ফাউন্ডার ফেসবুকের ১০ দশমিক ২ পারসেন্ট এর শেয়ার কিনে নেয় পাঁচ লাখ ইউ এস ডলারে। কিন্তু তারা পরে আলাদা হয়ে যায়।
কিন্তু সেপ্টেম্বর মাসে আবার খুব বড়সড় ভাবে মাথা নেড়ে উঠে সেই পুরাতন সমস্যা। ক্যামেরুন, টেলর ও ডিভিয়া মামলা করে বসে thefacebook এর নামে। তারপরেও সেই বছরের ডিসেম্বরেই ১ মিলিয়ন ইউজার হয়ে যায় দি ফেসবুক এর। ২০০৫ সালের মে মাসে এক্সেল পার্টনার্স ১২ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার ইনভেস্ট করে দি ফেসবুক ডট কমে। ২০০৭ সালে ফেসবুকে বড় ধরণের পরিবর্তন হয়। এতে অারো বিশাল অঙ্কের দুটি ইনভেস্টমেন্ট দেখা যায়। হংকং এর এক লোক ষাট মিলিয়ন ডলার ও মাইক্রোসফট ২৪০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে ফেসবুকের এক দশমিক ছয় পারসেন্ট কিনে নেয়। এর বর্তমান হিসাব অনুযায়ী ফেসবুকের মালিকানা নিম্নরূপ:
২০০৫ সালের আগস্ট মাসে thefacebook.com কিনে নেয় facebook.com ডোমেইনটি। তবে এটি খুব সহজেই হয় নি। ডোমেইন টি কেনার জন্য তাদের গুনতে হয়েছে দুই লাখ মার্কিন ডলার। কিন্তু ২০০৬ সালে দেখা যায় গতবছর অর্থাৎ ২০০৫ সালে ফেসবুক সাড়ে তিন মিলিয়ন ডলারের উপরে লস করে বসে। এরপর ২০০৬ এর সেপ্টেম্বারে ১৩ বছর বয়সের উপরে সবার জন্য ফেসবুক ওপেন করে দেওয়া হয়। যার প্রতিশ্রুতিতে আজ আমারও ফেসবুক একাউন্ট আছে।
2০০৮ সালে এসে ফেসবুক আইনগত সকল সমস্যাগুলো সমাধান করে এবং প্রায় পাঁচ বিলিয়ন ডলারের কোম্পানীতে রুপ নেয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, ২০০৮ সালের মে মাসে ফেসবুকের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা এবং মার্ক জাকারবার্গের বন্ধু অ্যাডাম ডি’অ্যাঞ্জেলো পদত্যাগ করেন। প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয় যে, তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল, এবং তিনি এই কোম্পানির আংশিক মালিকানার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। ২০০৯ এসে দেখা যায় মাই স্পেস ডট কমকে পেছনে ফেলে দিয়েছে ফেসবুক, এবং তারা ফেসবুক থেকে বিশাল অংকের আয় শুরু করেছে।
এরপর ফেসবুককে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০১২ সালে দেখা যায় মার্ক জুকারবার্গ এর সম্পত্তির পরিমান দাড়ায় প্রায় সাড়ে নয় বিলিয়ন ডলার। জুকারবার্গ নিজ যোগ্যতায় হওয়া পৃথিবীর দ্বিতীয় কনিষ্ঠ বিলিনিয়র। ফেব্রুয়ারি ২০১৫ সালের হিসাব অনুযায়ী ফেসবুকের মূলধন ২১২ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে উঠেছে।
২০১১ তে এসে ফেসবুকে ১০০ বিলিয়নের বেশি ছবি আপলোড করেছে ইউজাররা। এরপর ওই বছরই ফেসবুক ভিডিও কল এর জন্য স্কাইপ ও হিরুকুর সাথে চুক্তি করে ফেসবুক এর এপ্স অন্য প্ল্যাটফর্ম এ নিয়ে কাজ করানোর জন্য। ২০১১ এর শেষ দিকে ফেসবুকে যোগ হয় টাইমলাইন ফিচার। ২০১০ সালে টাইম ম্যাগাজিনের পারসন অব দি ইয়ার হন ফেসবুকের জনক মার্ক জুকারবার্গ।
অক্টোবর ২০১২ তে ফেসবুকে ১ বিলিয়ন ইউজার পূর্ণ করে এবং ২০১২ সালের ১৯ মে তেই মার্ক জুকারবার্গ বিয়ে করেন প্রিসিলা চ্যান নামের এক চাইনিসকে। দেখতে চান তাদের ফেসবুক আইডি?
এই নিন, মার্ক জুকারবার্গের ফেসবুক আইডির লিঙ্ক
প্রিসিলা চ্যানের ফেসবুক আইডির লিঙ্ক
অনেক তো হল ফেসবুক ইতিহাস। চলুন আবার জানি ফেসবুক সম্পর্কে কিছু মজার তথ্য।
জাকারবার্গের একটি পোষা কুকুর আছে। তার ফেসবুক পেজে ১.৫ মিলিয়ন লাইক আছে।
আর লেখা লেখি করতে ইচ্ছা করছে না। তাই আজ বিদায়। আরেকদিন আসব অন্য কোন বিষয় নিয়ে। ভুল ক্রুটি হলে আশা করি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন। এবং আপনাদের কাছ থেকে কিছু উপদেশও আশা করছি। আর মন্তব্য করতে ভুলবেন না যেন।
আমি আবু হাসান রুমি। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 1 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 16 টি টিউন ও 156 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 3 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
সুন্দর টিউন ……………:)