সবার জন্য অনেক শুভ কামনা নিয়ে আবার লিখতে বসলাম। অনেক দিন আগে স্পিকার এবং সাউন্ড নিয়ে কিছু টিউন করেছিলাম, এর পর অনেকেই সাবউফার নিয়ে লিখতে বলেছিলেন। লিখতে বসলে অনেক কিছু লিখতে হবে, এই ভয়ে লিখব লিখব করেও আর হয়ে ওঠেনি :D। যাই হোক সাহস করে আজ শুরু করলাম। আপনারা চাইলে আমার স্পিকার নিয়ে লেখা আগের টিউনটি পরে আসতে পারেন। কারন আগে আলোচনা করা কী ওয়ার্ড গুলো আমি আর বিস্তারিত এখানে ব্যাখ্যা করবনা, যেগুলো এই টিউনটি বোঝার জন্য আপনাদের কাজে লাগতে পারে।
স্পিকার এবং সাউন্ড এর খুঁটিনাটি
হোমথিয়েটার এবং হাই-ফাই সাউন্ড এর জগতে সাবউফার একটি অত্যন্ত পরিচিত নাম যেটি ছাড়া সাউন্ড সেটআপই পরিপূর্ন হয়না। মাল্টিমিডিয়া পিসি স্পিকার এর বদৌলতে আমরা সবাই মোটামুটি ভাবে সাবউফার শব্দটির সাথে পরিচিত। আপনারা যেকোন ধরনের 2.1, 4.1 বা 5.1 স্পিকার সিস্টেমেই একটি সাবউফার দেখে থাকবেন। স্বাধারনত এমপ্লিফায়ার ইউনিটটি যে কেবিনেটে থাকে মূলত সেটিই সাবউফার ইউনিট, তবে সাবউফার ইউনিট এমপ্লিফায়ার থেকে আলাদাও থাকতে পারে। আর এইসব মাল্টিমিডিয়া সিস্টেমে ব্যবহৃত সাবউফার ছাড়াও এর অনেক রকমফের, ডিজাইন এবং কোয়ালিটি ভ্যারিয়েশন আছে। আছে পাওয়ার্ড, নন-পাওয়ার্ড, এক্টিভ, প্যাসিভ ইত্যাদি বিভিন্ন রকম সাবউফার এবং তাদের বিভিন্ন রকম ফিচার্স-ফাংশনস। জানার চেষ্টা করব এসব কিছুই আজকের এই টিউনের মাধ্যমে।
সাবউফার ধারণাঃ
মাল্টিমিডিয়া স্পীকার গুলো দিয়ে আসলেছোট আকারের স্পীকারের মাধ্যমে ফুল রেঞ্জ সাউন্ড দেয়ার চেষ্টা করা হয়, যেহেতু স্যাটেলাইট স্পিকার গুলো আকারে অনেক ছোট হয় তাই একটি আলাদা বেস ড্রাইভার ব্যাবহার করে লো ফ্রিকোএন্সি সাউন্ড গুলো আলাদাভাবে দেয়া হয়। পিসি স্পিকার গুলোর স্যাটেলাইট গুলো যে শব্দ উৎপন্ন করতে পারেনা, সাবউফার ব্যবহৃত হয় সেই শব্দ গুলো উৎপন্ন করে এক্টি ফ্ল্যাট সাউন্ড কার্ভ/ ফ্রিকোয়েন্সি রেস্পন্স প্রোভাইড করা। লো ফ্রিকোয়েন্সি সাউন্ডগুলো ক্রসওভার নামক একটি সার্কিট এর মাধ্যমে ফিল্টার করে সাবউফারে পাঠানো হয়। এইসব মাল্টিমিডিয়া স্পিকারে ব্যবহৃত বেশিরভাগ সাবউফারই আসলে প্রকৃত সাবউফারের কাজ করতে পারেনা, বরং এরা কাছাকাছি একটা রেস্পন্স দেয়ার চেষ্টা করে। কমদামি স্পিকারে ব্যবহৃত সাবউফার সাধারনত লো-মিড ব্যান্ড বা লোয়ার মিড ফ্রিকোয়েন্সির শব্দ উৎপন্ন করে, যেটা একটু বুমি (Boomy) শব্দ তৈরী করে আর কিছুটা কানে বাজে। তাহলে প্রকৃত সাবউফার গুলো কি, আর কোথায়ই বা এরা ব্যবহৃত হয়? তাদের কাজটাই বা কি এমন স্পেশাল, আর কী কী বিষয়াদি এদের সাথে জড়িত? আসুন সেগুলোই এখন জানার চেষ্টা করি।
সাবউফারের কাজঃ
সাবউফারের কাজ হলো কিছু নির্দিষ্ট কম্পাঙ্কের শব্দ উৎপন্ন করা, মূলত অডিও ব্যান্ড এর লোয়ার পরশান বা লো-ফ্রিকোএন্সি ব্যান্ডকে অনেক এফিসিয়েন্টলি ড্রাইভ করা বা সেই ফ্রিকোয়েন্সির শব্দ উৎপন্ন করা। লো-ফ্রিকোএন্সি ব্যান্ড বলতে সাধারনত ২০-২০০ হার্টজ পর্যন্ত শব্দ তরঙ্গকে বোঝায়। এক কথায় লো ফ্রিকোয়েন্সি কে বেস বলা হয়, তাই সাবউফার এর কাজ বলা চলে ভাল ভাবে বেস দেয়া। সাধারনত সাবউফার ২০-২০০ হার্টজ এর সাউন্ড বা বেস উৎপন্ন করার জন্যই ব্যবহৃত হয়। তবে মোটামুটি ৩০হার্টজ থেকে রেস্পন্স দিতে পারলেই তাকে আমরা এফিসিয়েন্ট সাবউফার বলতে পারি, কারন ৩০-৪০ হার্টজ এর নিচে সাধারনত গানে তেমন এফেক্ট থাকেনা। যেহেতু মানুষ ২০ হার্টজ এর নিচের শব্দ তরঙ্গ শুনতে পায়না, তাই বেশির ভাগ অডিও সিস্টেম এর চেয়ে নিচের ফ্রিকোয়েন্সি কে ফিল্টার করে বাদ দিয়েই স্পীকারে ড্রাইভ করার জন্য পাঠায়, আর ২০হার্টজ থেকে শুনতে পারার কথা থাকলেও প্রকৃতপক্ষে একজন পূর্ন বয়ষ্ক মানুষ ২৬-৩০ হার্টজ এর উপর থেকেই শব্দ শুনতে পায়, কিন্তু কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে ৪০হার্টজ বা ২০ হার্টজ এর নিচের ফ্রিকোয়েন্সিও উৎপন্ন করা হয় স্পেশাল এফেক্ট তৈরী করার জন্য, সাধারনত হলিউড মুভ্যিতেই এ ধরনের এফেক্ট বেশি থাকে। আর এই ধরনের শব্দ ডেলিভার করার জন্য স্পেশ্যাল এবং খুব শক্তিশালী সাবউফার প্রয়োজন হয়।
যাইহোক একটি সাবউফারের ফ্রিকোএন্সি রেস্পন্স হতে হয় ২০০ হার্টজ এর নিচে এবং অনেক এফিসিয়েন্টলি ২০ হার্টজ এর উপরে । সব সাবউফার ২০ হার্টজ থেকে রেস্পন্স না নিতে পারলেও ৩০ হার্টজ থেকে অবশ্যই একটা আইডিয়াল সাবউফারকে রেস্পন্স নিতে হয়, কারন এখনকার সব মুভ্যি বা গেমসেই এই ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জে সাউন্ড থাকে। তাই অডিওফাইল/ পারফেকশনিষ্ট লিসেনার রা সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারের দেয়া কোন ইফেক্টই মিস করেনা, যদি একটি এফিসিয়েন্ট পাওয়ার্ড সাবউফার তার সাউন্ড সিস্টেমে যুক্ত থাকে।
একটি এক্টিভ সাবউফার
ব্যবহারঃ
আগেই বলেছি ভাল ভাবে বেস বা লোয়ার ফ্রিকোয়েন্সির শব্দ উৎপন্ন করার জন্যই সাবউফার প্রয়োজন। মিউজিকে আমরা কিক ড্রাম, বেস গীটার ইত্যাদি ইন্সট্রুমেন্ট থেকেই মূলত অনেক লো ফ্রিকোয়েন্সির শব্দ পাই। আবার হলিউড ম্যুভিতে বিদ্যুৎ চমকানোর আওয়াজ থেকে শুরু করে গোলাগুলি বা একশানে আমরা অনেক ধরনের লো ফ্রিকোএন্সি এফেক্ট পাই। বিশেষ আবহ তৈরী করার জন্য মাঝে মাঝে হরর মুভ্যিতে স্রবনযোগ্য শব্দের নিচের ফ্রিকোয়েন্সিও দেয়া হয়ে থাকে, যেটা আপনি শুনতে হয়তো পাবেন না কিন্তু অনুভব করতে পারবেন, আপনার চেয়ার-শরীর-পায়ের নিচের মাটি পর্যন্ত কাঁপিয়ে আপনাকে মুভ্যির ভেতরে প্রবেশ করিয়ে ফেলার জন্যই এই ধরনের শব্দ ব্যবহার করা হয়। আর এই ধরনের শব্দ তৈরী করার জন্য সাধারন স্পীকার যথেষ্ঠ নয়, চাই সাবউফার!
দেখুন এই ভিডিওটিতে IMAX Theater এর সাবউফার গুলো কিভাবে সামনে থাকা মোমবাতি গুলো লোফ্রিকোএন্সি শব্দ দিয়ে নিভিয়ে দিচ্ছে নিমিষেই!
সাবউফারের ব্যবহার মিউজিক এবং মুভ্যির ক্ষেত্রে এখন অত্যন্ত ব্যাপক, যা এখনকার আধুনিক সিনেমা হল গুলোতে অন্য মাত্রা যোগ করেছে। প্রায় সব কনসার্ট, ডি-জে, ক্লাব, ফেস্টিভাল এবং থিয়েটার গুলোতে বুক আর মাটি কাঁপানো বেস পেতে সাবউফার ব্যবহার করা হয়। একটি আইডিয়াল প্রফেশনাল সাবউফার সাধারনত ২৩ হার্টজ এর থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১২০/১৫০ হার্টজ পর্যন্ত রেস্পন্স দিয়ে থাকে। কারন ১২০ হার্টজ এর উপরের ফ্রিকোএন্সি গুলো ফ্রন্ট/ সারাউন্ড স্পীকার দিয়েই পাওয়া যায়। যদিও দরকার অনুযায়ী ক্রসওভার দিয়ে সর্বোচ্চ কত ফ্রিকোয়েন্সি সাবউফার দিয়ে পেতে চাই তা কন্ট্রোল করা যায়। আর টি এইচ এক্স (THX) এপ্রুভড সাবউফার গুলো ৮০হার্টজ এর উপর রেস্পন্স দেয়না বা ক্রসওভার লিমিট করা থাকে। যাই হোক এই সব সাবউফার গুলোই প্রকৃত সাব উফারের কাজ করে যেগুলো মুভ্যি থিয়েটার কিংবা কনসার্টে ব্যবহৃত হয়। কারন এগুলো দিয়ে অনেক ডিপ এবং শক্তিশালী পাঞ্চি-টাইট বেস পাওয়া সম্ভব এছাড়াও এমন সব এফেক্ট পাওয়া সম্ভব যা সাধারন স্পিকার দিয়ে পাওয়া যায়না।
একটি প্রফেশনাল সাবউফার (PRO AUDIO Subwoofer)
তবে এই সব সাবউফার আকারে বড় হওয়ায় বাসায় ব্যবহারের জন্য অডিওফাইল লিসেনার বা মুভ্যিপাগলদের জন্য বাজারে এক্টিভ পাওয়ার্ড সাবউফারও পাওয়া যায়। যেগুলো আকারে মাল্টিমিডিয়া ২.১ টাইপ স্পিকারে ব্যবহৃত সাবউফার গুলোর চেয়ে বড় হলেও প্রফেশনাল সাবউফারের চেয়ে অনেক ছোট হয়। এই সব সাবউফার দিয়েও বাসার ভেতর থিয়েটার বা কনসার্টের মত লাইভ এফেক্ট পাওয়া সম্ভব। বাসায় ব্যবহার করার জন্য তৈরী সেসব সাবউফার এবং তাদের ফাংশন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো একটু পর। তার আগে চলুন সাবউফার নিয়ে আরো কিছু বিষয় পরিষ্কার হয়ে নিই।
উফার এবং সাবউফার এর পার্থক্যঃ
আমরা অনেকেই উফার এবং সাবউফার কে সিনোনিমাস হিসেবে ব্যাবহার করে থাকি, কিন্তু এই দুইটি আসলে ভিন্ন অর্থে ব্যাবহার হয়। উফার বলতে স্পিকারের পর্দায় সাস্পেনশন (কাপড়/ ফোম/ রবার) যুক্ত যেকোন স্পিকারকেই বোঝায়, যেটা পুরোন দিনের টানা/ সমান পর্দার স্পিকার থেকে বেশী সামনে পিছনে যেয়ে অনেক বাতাসকে আলোড়িত করতে পারে। এই ধরনের পর্দার স্পিকারে সাধারন স্পিকারের তুলনার বেস বেশী হয় এবং হাই ফ্রিকোয়েন্সি রেস্পন্স কম হয়। ১৯৬৬ এর দিকে একজন ফিজিসিস্ট ‘আরনল্ড নাডেল’ এবং এয়ারপ্লেন পাইলট কেরী ক্রিস্টি সবার প্রথম ‘ইনফিনিটি’ ব্র্যান্ডের একটি ১৮” লাউডস্পিকারকে কাস্টমাইজ করে স্পিকারের পর্দার পাশে আলাদা একটি ফোম এর পরত লাগায় বেস বাড়ানোর জন্য। এই প্রোটোটাইপটিই ছিল প্রথম উফার স্পিকার। যাইহোক উফার স্পিকার গুলো মূলত ফুলরেঞ্জ স্পিকার তৈরী করতে ব্যাবহৃত হয়, যেখানে বেস ভাল দেয়ার জন্য উফার ব্যবহার করা হয়। আর এই একই ধরনের স্পিকারই যখন শুধুমাত্র বেস দেয়ার কাজেই ব্যাবহার করা হয় তখন তাকেই সাবউফার বলা হয়। মূলত পার্থক্য হল ফ্রিকোএন্সি রেস্পন্স এবং ব্যাবহারে। একটি উফার স্পিকার ৮০০ হার্টজ পর্যন্ত বা তারও বেশী রেস্পন্স দেয়ার কাজে ব্যাবহার করলে সেটি উফার আর ২০০ হার্টজ এর নিচের রেস্পন্স নেয়ার কাজে ব্যাবহার করলে সেটি সাবউফার বা সংক্ষেপে ‘সাব’। অর্থাৎ সাবউফার কে আপনারা চাইলে শুধু ‘সাব’ ও বলতে পারেন কিন্তু শুধুই ‘উফার’ না।
একটি উফার ড্রাইভার
একটি সাবউফার ড্রাইভার
তবে এফিসিয়েন্সি বাড়ানোর জন্য এখন উফার এবং সাবউফার আলাদা ভাবেই তৈরী করে। সাধারনত সাবউফার ড্রাইভার গুলোর ভয়েস কয়েল এবং ম্যাগনেট যেকোন সাধারন স্পিকার বা উফার থেকে বড় হয়ে থাকে; এর পর্দা অনেক শক্ত ম্যাটেরিয়েল যেমন প্লাস্টিক, শক্ত কাগজ এমনকি স্টিল দিয়েও তৈরী হয়, এর সাস্পেনশন/ ‘xmax’ অনেক বেশি হয়। কখনো ছোট আকারের সাবউফার থেকে বেশী ওয়াট ডেলিভার করানোর জন্য ডুয়েল ভয়েস কয়েল এবং ডাবল ম্যাগনেট ড্রাইভার ও ব্যাবহার করা হয়। আর তাই একটি সাধারন স্পিকারের তুলনায় সাবউফার দামেও একটু বেশী হয়।
একটি ডুয়েল কয়েল সাবউফার ড্রাইভার
সাবউফার এর ধরনঃ
পাওয়ার্ড/ নন-পাওয়ার্ডঃ যেসব সাবউফার, স্পিকার নির্দিষ্ট এমপ্লিফায়ার, ক্রসওভার ফিল্টার এবং কেবিনেট সহ সম্পূর্ন ম্যাচ করা অবস্থায় বাজারে পাওয়া যায় তাকে পাওয়ার্ড সাবউফার বলে। এক্ষেত্রে স্পিকার, বক্স বা কেবিনেটে সেট করাই থাকে এবং এমপ্লিফায়ার ও দেয়া থাকে, শুধু প্লাগ ইন করলেই রান করবে। আর নন-পাওয়ার্ড সাবউফারে স্পিকার বক্সে সেট করা থাকে কিন্তু ইউজার তার ইচ্ছে মত এমপ্লিফায়ার কিনে নিতে পারে, মারকেটার তার প্যাকেজের সাথে কোন এম্প যুক্ত করেনা। চাহিদা অনুযায়ী ক্রেতারা যেকোনটিই কিনে সংযুক্ত করে নিতে পারে।
এক্টিভ/প্যাসিভঃ এক্টিভ সাবউফার গুলোতে একটি পাওয়ার্ড সাবউফারের সবই থাকে, আর এমপ্লিফায়ার ইউনিটটিও স্পিকার কেবিনেট এর ভেতরেই মারকেটাররা সেট করে দেয় ব্যাবহারকারির সুবিধার্থে। ইনপুট-আউটপুট এবং কন্ট্রোলিং এর জন্য এক্ষেত্রে কেবিনেট এর যেকোন পাশে বা পেছনে একটি প্যানেল যুক্ত থাকে। সবকিছু একসাথে সেট করা থাকে বলে একে এক্টিভ সাবউফার বলে। আর প্যাসিভ সাবউফারে এ্যামপ্লিফায়ার ইউনিটটি সাবউফার কেবিনেট থেকে আলাদা একটি ক্যাবিনেটে থাকে তাই একে প্যাসিভ সাবউফার বলে। কন্ট্রোল রুম থেকে সাবউফারটিকে দূরে কোথাও রাখার দরকার হলে এই ধরনের সাবউফার প্রয়োজন হয়, মূলত কন্সার্ট, থিয়েটারে বা প্রফেশনাল সেক্টরে প্যাসিভ সাবউফার ব্যাবহৃত হয়। আর বাসায় ব্যাবহারের জন্য ক্রেতারা এক্টিভ সাবউফারই পছন্দ করে।
বক্স/কেবিনেট ডিজাইনঃ সাবউফার বা যেকোন স্পিকার এর কেবিনেট ডিজাইনই মূলত দুই ধরনের হতে পারে, সিল্ড এবং ব্যান্ডপাস। সিল্ড বক্স এর মূল বিষয় হলো এতে বাতাস চলাচলের কোন পোর্ট বা ভেন্ট থাকেনা আর ব্যান্ডপাস ডিজাইনে পোর্ট বা ভেন্ট থাকে। তবে এই দুই ধরনের বক্স ডিজাইনের অনেক প্রকারভেদ আছে. কিছু প্রকারভেদ নিয়ে আগে একটি টিউনে আলোচনা করেছিলাম তাই আর সেখানে গেলাম না। চাইলে এখানে থেকে পরে আসতে পারেন বক্স ডিজাইন নিয়ে লেখা গুলো। যে প্রকারভেদ গুলো আলোচনা করেছিলাম তা হলোঃ
১। সিল্ডঃ সাধারন ডিজাইন এবং প্যাসিভ র্যাডিয়েটর সিস্টেম
২। ব্যান্ড পাসঃ পোর্টেড/ ভেন্টেড ফার্শট অরডার ব্যান্ড পাস বা সাধারন ডিজাইন, ফোর্থ অরডার ব্যান্ড পাস ডিজাইন।
এছাড়াও রয়েছে ইনফিনিট ব্যাফেল, সিক্সথ/ এইটথ অরডার ব্যান্ড পাস এবং আরো অনেক যা এক দিনের আলোচনায় শেষ করা যাবেনা।
সাবউফার সম্পর্কিত কিছু টার্মসঃ সাবউফার কিনতে গেলে সচরাচর কিছু টার্মস চলে আসে যা এখানে আলোচনা করছি।
এমপ্লিফায়ার ক্লাস: এটি একটি বিষদ আলোচনার বিষয়। সেই ভাল্ব টিউব জগতের এমপ্লিফায়ার থেকে এখন পর্যন্ত ধাপে ধাপে অনেক উন্নয়ন হয়েচে এমপ্লিফায়ারের। এমপ্লিফায়ার এর ক্লাস হলো, কিভাবে একটি এমপ্লিফায়ার কাজ করে বা সিগনালকে বর্ধিত করে তারই এক ক্লাসিফিকেশন। অনেক ধরনের ক্লাসিফিকেশন রয়েছে যার মধ্যে Class A, Class AB, Class D এবং Class H সবচেয়ে বেশী ব্যাবহৃত। পূরোন দিনের ভাল্ব এম্প গুলো কাজ করতো ক্লাস এ পদ্ধতিতে, তারপর ট্রানসিস্টর এবং চিপ এম্প গুলো ক্লাস এবি পদ্ধতিতে, আর ক্লাস এবি এর এফিসিয়েন্সি বাড়িয়ে যে পদ্ধতি হলো, তা ক্লাস এইচ। সবচেয়ে বেশি এফিসিয়েন্ট অর্থাৎ বিদ্যুৎ সাস্রয়ী, কম তাপ বিকিরক পদ্ধতি আবিষ্কার হলো ট্রানসিস্টর এর পরবর্তী সংস্করন Mosfet (Metal oxide semiconductor field effect Transistor) আবিষ্কারের পর, যা PWM (Pulse Width Modulation) পদ্ধতিতে কাজ করে। যাই হোক সোজা কথায় ক্লাস ডি এম্লিফায়ার গুলো আধুনিক এবং আকারে অনেক ছোট হয় ও কম বিদ্যুতে অধিক পাওয়ার দিতে সক্ষম। তাই এই এম্লিফায়ার ব্যাবহৃত সাবউফার আকারে ছোট এবং হালকা হয় অন্য যেকোন ক্লাস ব্যাবহৃত এম্প এর তুলনায়, তবে দাম ও একটু বেশী হয়।
ক্রসওভারঃ আগেই বলেছি ক্রসওভার হলো এক ধরনের সার্কিট যা অডিও ফ্রিকোএন্সিকে ফিল্টার করার কাজে ব্যাবহৃত হয়। ক্রসওভারও মূলত দুই ধরনেরঃ এক্টিভ ও প্যাসিভ। এক্টিভ ক্রসওভার সার্কিট এমপ্লিফায়ারে সিগনাল যাওয়ার আগেই ফিল্টার করে তারপর এমপ্লিফায়ারে পাঠায়, অর্থাৎ ব্যাবহৃত হয় এমপ্লিফিকেশনের আগে। আর প্যাসিভ ক্রসওভার ব্যাবহৃত হয় এমপ্লিফিকেশনের পরে ফিল্টার করার জন্য। স্বভাবতই এক্টিভ ক্রসওভার ইলেকট্রনিক্স পার্টস দিয়ে তৈরী হয়ে থাকে যেহেতু এখানে কম ভল্টেজ ইনপুট আউটপুট হয়, আর এর ফিল্টারিং ও হয় অনেক নিখুঁত। কিন্তু বেশি ভল্টেজে কাজ করা লাগে বলে প্যাসিভ ক্রসওভারে অনেক বেশি পাওয়ারের বড় বড় এলেক্ট্রিক পার্টস যেমন ক্যাপাসিটর, পাওয়ার রেসিস্টর, ইন্ডাক্টর ইত্যাদি ব্যবহার হয়, কিন্তু ততটা একুরেট ফিল্টারিং এর দ্বারা সম্ভব হয়না। সাধারনত এক্টিভ এবং প্যাসিভ দুই ধরনের সাবউফারে এক্টিভ ক্রসওভারই ব্যাবহৃত হয়, আর ফুল রেঞ্জ স্পিকার তৈরির ক্ষেত্রে ফিল্টারিং করতে কেবিনেটের ভেতরে প্যাসিভ ক্রসওভার ব্যবহার হয়।
একটি এক্টিভ ক্রসওভার সার্কিট
একটি প্যাসিভ ক্রসওভার সার্কিট
ফ্রন্ট, নাকি ডাউন ফায়ারিংঃ সাবউফারের ক্ষেত্রে এই কথাটি শুনে থাকবেন যে সাবটি 'ফ্রন্ট ফায়ারিং নাকি ডাউন ফায়ারিং?' আসলে এটি দিয়ে বোঝায় যে ড্রাইভারটি কেবিনেটের কোন দিকে ফেস করানো আছে , সামনের দিকে নাকি নিচের দিকে। আবার কখনো যেকোন এক পাশেও ফেস করানো থাকতে পারে, তখন তাকে বলে সাইড ফায়ারিং। মূলত পারফরমেন্স এর ক্ষেত্রে ড্রাইভার ফেসিং এর তেমন কোন পার্থক্য পাওয়া যায়না। তবে ডাউন ফায়ার সাব গুলো সরাসরি মাটিতে বেস থ্রো করে বলে ফ্লোর শেকিং এফেক্ট একটু বেশি পাওয়া যায়, আর ফ্রন্ট ফায়ারিং এ সামনা সামনি বসলে শরীর কাঁপানো এফেক্ট বেশি পাওয়া যায়।
একটি ডাউনফায়ারিং সাবউফার (Downward firing subwoofer)
সাবউফারে ব্যবহৃত বিভিন্ন ফিচার্স এবং ফাংশনসঃ এ পর্যায়ে আমরা একটি সাবউফার সাধারনত যে সমস্ত ফিচার্স এবং ফাংশন্স দরকার হয় বা বাজারের সাবউফার গুলোতে পাওয়া যায় তা নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করবো।
ক্রসওভার কন্ট্রোল (Crossover control): এই ফাংশনের মাধ্যমে ব্যবহারকারী তার ইচ্ছেমতো সাবউফারকে তার ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জ ডিফাইন করে দিতে পারে, যার থেকে উপরের ফ্রিকোয়েন্সি সাবউফার ড্রাইভ করবেনা। সাধারনত ৪০-২০০ হার্টজ পর্যন্ত এই রেঞ্জ থাকতে পারে যা একটি ভলিউম কন্ট্রোলারের মত ভ্যারিয়েবল কন্ট্রোলার দিয়ে নিয়ন্ত্রন করা যায়।
ফেইজ কন্ট্রোল (Phase Control): সাবউফারে আরেকটি ফাংশন থাকে যা দিয়ে স্পিকারের phase বা স্পিকারটি কোন ডিরেকশনে ড্রাইভ করবে তা নিয়ন্ত্রন করা যায়, সাধারনত যে কোন স্পিকারই ০ ডিগ্রী ডিরেকশনে ড্রাইভ করে, কিন্তু কোন কারনে যদি এই ডিরেকশন পালটে যায় বা পাল্টানোর প্রয়োজন পরে তবে এই কন্ট্রোলার দিয়ে তা পাল্টানো যায়। এক্ষেতে ০-১৮০ ডিগ্রী ভ্যারিয়েবল বা ফিক্সড ফেইজ কন্ট্রোল অপশন থাকতে পারে।
অটো/ স্ট্যান্ডবাই মোডঃ কিছু কিছু সাবউফারে এই অপশন গুলো ও থাকে, অটো অপশন অন থাকলে কোন সিগনাল না গেলে একটি নির্দিষ্ট সময় পর সাবউফার নিজেই স্ট্যান্ডবাই মোডে চলে যাবে। স্ট্যান্ডবাই মোডে থাকলে সাবউফার অনেক কম পাওয়ার কনস্যুম করে সার্কিট অন করে রাখবে, এবং সিগনাল পাওয়ার সাথে সাথে আবার এক্টিভ মোডে চলে যাবে। আর স্ট্যান্ডবাই অপশন অন করে ইউজার নিজ থেকেই ম্যানুয়ালি সাবউফারকে স্ট্যান্ডবাই মোডে রাখতে পারে।
ইনপুট কানেক্টিভিটি টাইপঃ একটি সাবউফারে তিন ধরনের ইনপুট কানেক্টিভিটি থাকতে পারে-
নিচে একটি সাবউফারের ব্যাকপ্যানেল এর চিত্র দেয়া হলো, এটি দেখে আরো পরিষ্কার হয়ে নিন ব্যাপার গুলো...
এছাড়াও একটি সাবউফারে থাকতে পারে বিভিন্ন রকম প্রটেকশন সার্কিট্রি যা সাবউফারকে এক্সট্রিম কন্ডিশনে রক্ষা করে, যেমন ওভারলোড, ওভার কারেন্ট, থারমাল প্রটেকশন ইত্যাদি।
সাবউফার প্লেসমেন্টঃ সর্বশেষে সাবউফারকে তার সর্বোচ্চ পারফরমেন্সের জন্য খেয়াল করে প্লেস করুন সরাসরি ফ্লোরে।উঁচু যায়গায় রাখলে সাবউফার থেকে অপ্টিমাম বেস পাবেন না, তবে কার্পেটের উপর রাখলে কোন সমস্যা নেই। প্লেস করুন রুম এর একদম কোনার দিকে, বা কোন টেবিলের নিচে এতে অনেক ভাল বেস পাবেন।
আশা করি লেখাটি আপনাদের কাজে আসবে, কষ্ট করে এতক্ষন পরার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আর চাইলে একবার ঘুরে আসতে পারেন আমার নিজের সাবউফার এবং হাই ফাই অডিও প্রজেক্ট গিগাবেস এর ফেসবুক পেজটি থেকে যা আমি সখ থেকেই নিজ উদ্যোগে গত কয়েক বছর যাবৎ চালাচ্ছি।
আমি রিফাত হুসাইন। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 14 বছর 8 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 5 টি টিউন ও 47 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
ভালবাসি গান শুনতে, মুভ্যি দেখতে আর গীটার বাজাতে। ভাললাগে জানতে। ইলেক্ট্রনিক্স আর টেকনোলজি আমার মূল আ্কর্ষন।
i have a great passion on sound and music. can you suggest me a low cost but perfect sound system to listen rock music?? thanks for the tune .