সবাইকে আমার সালাম এবং ফুলেল শুভেচ্ছা। টেকটিউন্সে আমার হ্যাট্রিক হল (বাকি দুইটা টিউন পুরাই নন-টেকি; এটাও) তাই আমি আজ আপনাদের কাছে জৈব রসায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হাইড্রোকার্বন সম্পর্কে আলোচনা করবো। আমি যে বইয়ের রিসোর্স দিলাম সে বইগুলোর সংস্করণ হলঃ হাজারী ও নাগঃ এপ্রিল,২০১১ মহির ও মুস্তারীনঃ জুন,২০০৯
তাহলে শুরু করা যাক।
শুধু কার্বন ও হাইড্রোজেন দ্বারা গঠিত যৌগসমূহকে হাইড্রোকার্বন বলে।
হাইড্রোকার্বন এবং কার্বোহাইড্রেট এক নয়।
কার্বোহাইড্রেট হল পলি-হাইড্রক্সি কিটোন ও পলি হাইড্রোক্সি অ্যাল্ডিহাইড এবং এদের জাতকসমূহ। বায়ো-অণু সমূহের রসায়নে এ বিষয়ে আলোচনা করা হবে। (যদি বাইচা থাকি)
হাইড্রোকার্বনের উদাহরণের অভাব নেই। যেমনঃ অ্যালকেন, অ্যালকিন, অ্যালকাইন, বেনজিন, মিথাইল বেনজিন, ন্যাপথালিন ইত্যাদি।
১ ডিগ্রি বলতে বোঝায় জৈব যৌগের যেকোন একটি কার্বনের সাথে ১ টি মাত্র অ্যালকাইল র্যাডিক্যাল বা R যুক্ত আছে।
যেমনঃ
১ ডিগ্রির মতই তবে দুইটি অ্যালকাইল র্যাডিক্যাল থাকতে হবে।
চিত্রঃ
একই ব্যাপার তবে তিনটি অ্যালকাইল র্যাডিক্যাল থাকতে হবে।
চিত্রঃ
জৈব যৌগের যে কার্বনের সাথে কার্যকরী মূলকটি যুক্ত থাকে তাকে আলফা কার্বন এবং তার পরের কার্বনগুলোকে ক্রমান্বয়ে বিটা, গামা ইত্যাদি কার্বন বলা হয়। আলফা কার্বনটি বের করা হয় কার্যকরী মূলকের সক্রিয়তার ক্রমের ভিত্তিতে। অর্থাৎ ঠিক নামকরণের মতই!
চিত্রঃ
প্রথমে হাইড্রোকার্বনের অ্যালিফ্যাটিক গ্রুপের প্রথম সম্পৃক্ত সদস্য অ্যালকেন কে নিয়ে আলোচনা করা যাক।
কার্বন ও হাইড্রোজেন দ্বারা গঠিত দ্বিমৌল যৌগের কার্বন শিকলে কেবল সিগমা বন্ধন থাকলে তাদেরকে সম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন বা অ্যালকেন বলা হয়।
সাধারণ সঙ্কেতঃ CnH2n+2 এখানে n এর মান ১ থেকে শুরু করে ২,৩,৪,৫,.....
অ্যালকেন এর অপর নাম প্যারাফিন। Parum মানে অল্প affinis মানে আসক্তি; তার মানে অ্যালকেন রাসায়নিকভাবে কম সক্রিয়। এটা সাধারণভাবেই বোঝা যায় কেননা অ্যালকেন এ কার্বন হাইড্রোজেনের সাথে সিগমা বন্ধন গড়ে এবং যেকোন মৌলের এ সিগমা বন্ধন ভেঙ্গে যৌগ তৈরী করা কঠিন। সেকারণে অ্যালকেন রাসায়নিকভাবে অন্যান্য জৈব যৌগের তুলনায় কম সক্রিয়।
সোডিয়াম ইথানয়েটকে সোডালাইমের সাথে উত্তপ্ত করলে মিথেন ও সোডিয়াম কার্বনেট উৎপন্ন হয়ে থাকে।
এখানে সোডিয়াম হাইড্রক্সাইডের H মৌলটি মিথাইলের সাথে যুক্ত হয়ে মিথেন উৎপন্ন করে। বাকি সোডিয়াম অক্সাইড এবং COONa যুক্ত হয়ে সোডিয়াম কার্বনেট উৎপন্ন করে।
চিত্রঃ
এখানে সোডিয়াম ইথানয়েট ছাড়া শুধু জৈব এসিড অর্থাৎ ইথানয়িক এসিড নিলেও একই বিক্রিয়া হবে কিন্তু উৎপাদ সোডিয়াম কার্বনেট না হয়ে কার্বন ডাই অক্সাইড হবে।
টেক্সট রিসোর্সঃ হাজারী ও নাগঃ ২৩২, ২৩৩
মহির ও মুস্তারীনঃ ২৭৬
অতি সাধারণ বিক্রিয়া। বর্ণনা দেওয়ার মত কিছু নেই।
জেনে রাখা ভালঃ এখানে প্রভাবক হিসেবে নিকেল ব্যবহৃত হয়েছে এবং তাপমাত্রা ৩০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এবং দ্বিতীয় বিক্রিয়ার ক্ষেত্রে নিকেল কার্বনেট ব্যবহৃত হয়েছে এবং তাপমাত্রা ২৫০-২৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
টেক্সট রিসোর্সঃ হাজারী ও নাগঃ ২৩৩
মহির ও মুস্তারীনঃ ২৭৬
ক) অ্যালকিন থেকেঃ
অ্যালকিনের সাথে এক অণু হাইড্রোজেন যোগ করলে অ্যালকেন উৎপন্ন হয়ে থাকে।
মেকানিজমঃ এক্ষেত্রে অ্যালকিনের পাই বন্ধন ভেঙ্গে গিয়ে যে দুইটি ইলেক্ট্রন উৎপন্ন হয় তা দ্বারা হাইড্রোজেনের সাথে সিগমা বন্ধন গড়ে তোলে এবং অ্যালকেন উৎপাদিত হয়।
চিত্রঃ
টেক্সট রিসোর্সঃ হাজারী ও নাগঃ ২৩৪
মহির ও মুস্তারীনঃ ২৮৭
জেনে রাখা ভালঃ এক্ষেত্রে নিকেলকে প্রভাবক হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
অ্যালকাইনের থেকে অ্যালকেন উৎপন্ন দুইধাপে ঘটে থাকে। প্রথমবার হাইড্রোজেন যোগ করলে অ্যালকিন উৎপন্ন হয় এবং আবারও অধিক পরিমাণে হাইড্রোজেন যোগ করলে অ্যালকেন উৎপন্ন হয়। (এখানে অ্যালকাইন থেকে অ্যালকিন প্রস্তুতিও হয়ে গেল; এক ঢিলে দুই পাখী)
মেকানিজমঃ অ্যালকিনের ত্রিবন্ধনে (ত্রিবন্ধনের কার্বনে) sp সংকরায়ন হয় বিধায় এখানে পাই বন্ধন ২টি। আর একটি পাই বন্ধন ভাঙ্গলে যেহেতু দুটি মুক্ত ইলেক্ট্রনের সৃষ্টি হয় সেহেতু ২টি পাই বন্ধন ভাঙ্গলে ৪ টি ইলেক্ট্রনের সৃষ্টি হবে আর সেকারণেই অ্যালকিনের ত্রিবন্ধন ভাঙ্গলে ৪টি হাইড্রোজেন পরমাণু সেখানে যুক্ত হয়ে থাকে।
জেনে রাখা ভালঃ এখানেও নিকেল প্রভাবক ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
অ্যালকাইল হ্যালাইডের হাইড্রোজেন দ্বারা বিজারণের মাধ্যমে অ্যালকেন উৎপন্ন করা হয়ে থাকে।
যেমনঃ মিথাইল ক্লোরাইডের সাথে জায়মান হাইড্রোজেন যুক্ত হয়ে মিথেন ও হাইড্রোক্লোরিক এসিড উৎপন্ন করে।
মেকানিজমঃ এখানে জিঙ্কের গুঁড়া ও হাইড্রোক্লোরিক এসিড বিক্রিয়া করে প্রথমে জিঙ্ক ক্লোরাইড এবং জায়মান হাইড্রোজেন উৎপন্ন করে। এরপর উৎপাদিত জায়মান হাইড্রোজেন অ্যালকাইল হ্যালাইডের হ্যালোজেনের সাথে বিক্রিয়া করে হাইড্রোজেন হ্যালাইড এবং অপর হাইড্রোজেন অ্যালকাইলের সাথে যুক্ত হয়ে অ্যালকেন উৎপন্ন করে থাকে।
চিত্রঃ
আমরা জানি, অ্যালকেন থেকে একটি হাইড্রোজেন সরিয়ে নিলে অ্যালকাইল মূলক তৈরী হয় তাই ওই অপসারিত হাইড্রোজেনকে অ্যালকাইলের সাথে যুক্ত করলেই অ্যালকেন উৎপন্ন হবে। এখানে ঠিক তা-ই করা হয়েছে।
জেনে রাখা ভালঃ যেহেতু জিঙ্কের গুঁড়া এবং হাইড্রোক্লোরিক এসিড সম্পূর্ণ বিক্রিয়াটি নিয়ন্ত্রন করে সেহেতু বিক্রিয়াটি লেখার সময় অবশ্যই জিঙ্ক এবং হাইড্রোক্লোরিক এসিডের কথা উল্লেখ করতে হবে।
বিক্রিয়াটি সম্পন্ন করতে Na-Hg ও মিথানল অথবা Zn-Cu ও অ্যালকোহলও ব্যবহার করা যায়।
টেক্সট রিসোর্সঃ হাজারী ও নাগঃ ২৩৫
মহির ও মুস্তারীনঃ ২৭৫
এটি এই অধ্যায়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিক্রিয়া।
অ্যালকাইল হ্যালাইডের সাথে সোডিয়াম ধাতু সহযোগে শুষ্ক ইথারের উপস্থিতিতে তাপ প্রয়োগ করলে অ্যালকেন উৎপন্ন হয়। ---> এটাই উর্টজ বিক্রিয়া।
(ক) প্রথমে দুটি সোডিয়াম যেকোন একটি অ্যালকাইল হ্যালাইডকে আক্রমণ করে এবং সেখান থেকে একটি সোডিয়াম পরমাণু অ্যালকাইল হ্যালাইড থেকে হ্যালোজেনকে নিয়া কেটে পড়ে ও তৎক্ষণাৎ অপর সোডিয়াম সুযোগ বুঝে অপসারিত হ্যালোজেনের স্থানে বসে পড়ে ফলে সোডিয়াম অ্যালকাইল উৎপন্ন হয়। ওই সোডিয়াম অ্যালকাইলটি অপর অক্ষত অ্যালকাইল হ্যালাইডের হ্যালোজেনের সাথে বিক্রিয়া করে সোডিয়াম হ্যালাইডরূপে অপসারিত হয় এবং দুটি অ্যালকাইল অণু নিজেদের মধ্যে বিক্রিয়া করে অ্যালকেন উৎপন্ন করে।
(খ) অ্যালকাইল হ্যালাইডকে (দুই অণু) যখন দুইটি সোডিয়াম পরমাণুর সাথে বিক্রিয়া করানো হয় তখন প্রত্যেক অণু অ্যালকাইল হ্যালাইড থেকে হ্যালোজেনকে সোডিয়াম ধাতু অপসারণ করে এবং অ্যালকাইল অণু দুইটি নিজেদের মধ্যে বিক্রিয়া করে অ্যালকেন উৎপন্ন করে ও সোডিয়াম ধাতু সোডিয়াম হ্যালাইডরূপে অপসারিত হয়ে থাকে।
চিত্রঃ
জেনে রাখা ভালঃ বিক্রিয়াটি লেখার সময় অবশ্যই শুষ্ক ইথারের কথা লিখতে হবে (তীর চিহ্নের উপরে বা নিচে) এবং তাপ দেওয়ার প্রতীকটি ব্যবহার করতে হবে।
বিক্রিয়াটি উদ্ভাবক উর্টজের নামানুসারে করা হয়েছে।
বিক্রিয়াটির দ্বারা বেজোড়সংখ্যক কার্বন বিশিষ্ট অ্যালকেন উৎপন্ন করা যায় না। যেমনঃ ইথেন, বিউটেন, হেক্সেন .. ঠিকই উৎপন্ন হয় কিন্তু প্রোপেন, পেন্টেন, হেপ্টেন উৎপন্ন করা যায় না।
এটি একটি জৈব আরোহ পদ্ধতি।
টেক্সট রিসোর্সঃ হাজারী ও নাগঃ ২৩৫
মহির ও মুস্তারীনঃ ২৭৫
(দুঃখিত চিত্রে দিতে ভুলে গিয়েছিলাম)
গ্রিগনার্ড বিকারক একটি বহুমুখী জৈব বিকারক।
অ্যালকাইল হ্যালাইডের সাথে ম্যাগনেসিয়াম ধাতুর বিক্রিয়ায় উৎপাদিত অ্যালকাইল ম্যাগনেসিয়াম হ্যালাইড-ই হল গ্রিগনার্ড বিকারক।
গ্রিগনার্ড বিকারকের সাথে পানি যোগ করলেই অ্যালকেন উৎপন্ন হয়।
গ্রিগনার্ড বিকারকের অ্যালকাইল মূলক টি পানির হাইড্রোজেনের সাথে বিক্রিয়া করে অ্যালকেন উৎপন্ন করে এবং গ্রিগনার্ড বিকারকের বাকি অংশ অর্থাৎ ম্যাগনেসিয়াম হ্যালাইড পানির হাইড্রক্সিল মূলকের সাথে বিক্রিয়া করে ম্যাগনেসিয়াম হাইড্রক্সি হ্যালাইড উৎপন্ন করে।
জেনে রাখা ভালঃ গ্রিগনার্ড বিকারক সম্পর্কে অ্যালিফেটিক ও অ্যারোমেটিক যৌগের হ্যালোজেন জাতক অধ্যায়টিতে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে।
গ্রিগনার্ড বিকারক উদ্ভাবক গ্রিগনার্ডের নামানুসারে রাখা হয়েছে এবং তিনি এই বিকারক উদ্ভাবনের জন্য নোবেল পুরস্কার অর্জন করেন।
টেক্সট রিসোর্সঃ হাজারী ও নাগঃ ৩১৬
মহির ও মুস্তারীনঃ ২৭৬
অ্যালকেন উৎপাদনের প্রক্রিয়া আপাতত এই-ই
আমরা অ্যালকেন উৎপাদন প্রক্রিয়ায় দেখতে পাই যে গ্রিগনার্ড বিকারক থেকে, উর্টজ বিক্রিয়া থেকে এবং হাইড্রোজেন দ্বারা বিজারণের মাধ্যমে অ্যালকেন উৎপাদনের পদ্ধতিতে অ্যালকাইল হ্যালাইড ব্যবহৃত হয়েছে।
অর্থাৎ অ্যালকেন উৎপাদনে বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতির মধ্যে অ্যালকাইল হ্যালাইডই ৫০% দখল করে বসে আছে। 😛
অ্যালকেনের বিক্রিয়াগুলো ধাপে ধাপে বলিঃ
বলার মত কিছু নেই। তবে বেশীর ভাগ জৈব যৌগকে অক্সিজেনের উপস্থিতিতে দহন ঘটালে সাধারণত কার্বন ডাই অক্সাইড এবং পানি উৎপন্ন হয়ে থাকে। (জৈব এবং অজৈব যৌগের মধ্যে পার্থক্যে দ্রষ্টব্য)
জেনে রাখা ভালঃ জৈব যৌগের দহন বিক্রিয়ায় প্রচুর শক্তি নির্গত হয়ে থাকে।
বিক্রিয়ার গুরুত্বঃ এই বিক্রিয়ার মাধ্যমে কার্বন ডাই অক্সাইড উৎপন্ন করা যায়। 😛
টেক্সট রিসোর্সঃ এই বিক্রিয়ার টেক্সট রিসোর্স দিলাম না.... .. .. ..
এ বিক্রিয়ায় অ্যালকেনকে উচ্চ তাপ দিয়ে অ্যালকিনে রূপান্তরিত করা যায়। ( অ্যালকিন প্রস্তুতি .. .. 😀 )
মেকানিজমঃ বিক্রিয়াটিতে উচ্চ তাপ প্রয়োগ করার ফলে অ্যালকিন হতে হাইড্রোজেন কার্বনের সিগমা বন্ধন ভেঙ্গে গিয়ে হাইড্রোজেন অপসারিত হয় এবং সদ্য মুক্ত ইলেক্ট্রনদ্বয় পরস্পরের সাথে পাই বন্ধন গঠন করে।
বিক্রিয়ার গুরুত্বঃ অ্যালকেন থেকে অ্যালকিন রূপান্তরকরণ বিক্রিয়ারুপে প্রয়োজন। কেননা অ্যালকিনের সাথে হাইড্রোজেন যোগ করলে আবার অ্যালকেন উৎপাদিত হয়ে থাকে।
জেনে রাখা ভালঃ এখানে প্রভাবকরূপে অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড এবং সিলিকন ডাই অক্সাইড ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
যতই উচ্চতর অ্যালকেন ব্যবহার করা হবে ততই তাপমাত্রা বাড়াতে হবে।
উচ্চতর অ্যালকেন ব্যবহার করলে তা হতে উচ্চতর অ্যালকিন এবং নিম্নতর অ্যালকিন উৎপন্ন হয়। যেমনঃ প্রোপেন থেকে প্রোপিন পাইরোলাইসিস প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন করতে গেলে ইথিনও উৎপন্ন হবে।
(উচ্চতর এবং নিম্নতর বোঝাতে n এর মানকে বোঝানো হয়েছে)
টেক্সট রিসোর্সঃ মহির ও মুস্তারীনঃ ২৮১
তীব্র সূর্যালোকের উপস্থিতিতে ক্লোরিন অ্যালকেনের হাইড্রোজেনকে বিস্ফোরণসহকারে অপসারিত করে হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাস উৎপন্ন করে এবং কার্বন উৎপন্ন করে থাকে।
মেকানিজমঃ প্রখর সূর্যালোকে ক্লোরিন অণু ভেঙ্গে গিয়ে ফ্রি র্যাডিক্যাল উৎপন্ন করে যা নিমেষেই সকল হাইড্রোজেনের সাথে বিক্রিয়া করে হাইড্রোজেন ক্লোরাইড গ্যাস ও কার্বন উৎপন্ন করে থাকে।
বিক্রিয়ার গুরুত্বঃ হাইড্রোজেন ক্লোরাইড এবং কার্বন উৎপাদন।
জেনে রাখা ভালঃ বিক্রিয়াটি ঘটানোর মূল নিয়ামক প্রখর সূর্যালোক; তাই এটি উল্লেখ করতে হবে।
টেক্সট রিসোর্সঃ হাজারী ও নাগঃ ২৩৬-২৩৭ (মেকানিজমসহ)
মহির ও মুস্তারীনঃ ২৮০
একই বিক্রিয়া তবে ধাপে ধাপে সংঘটিত হয় এবং প্রতিস্থাপিত মূলকের সৃষ্টি হয়ে থাকে। যেমনঃ মিথেনের সাথে ক্লোরিনের বিক্রিয়ায় প্রথমে ক্লোরিন ফ্রি র্যাডিক্যাল উৎপন্ন হয়ে থাকে এবং একটি ফ্রি র্যাডিক্যাল মিথেনের একটি হাইড্রোজেনের সাথে বিক্রিয়া করে হাইড্রোজেন ক্লোরাইড উৎপন্ন করে এবং মিথাইল ক্লোরাইড উৎপন্ন করে। আবার এ মিথাইল ক্লোরাইড আবার ক্লোরিনের সাথে বিক্রিয়া করে ডাইক্লোরো মিথেন ও হাইড্রোজেন ক্লোরাইড উৎপন্ন করে; এ ডাইক্লোরো মিথেন আবারও [কয়বার বিক্রিয়া ...?!. 😈 ] ক্লোরিনের সাথে বিক্রিয়া করে ট্রাইক্লোরো মিথেন বা ক্লোরোফর্ম উৎপন্ন করে। এই ক্লোরোফর্ম আবারও ক্লোরিনের সাথে বিক্রিয়া করে টেট্রা ক্লোরো মিথেন উৎপন্ন করে।
মেকানিজমঃ আগেরটার মতই। তবে ধাপে ধাপে।
চিত্রঃ
বিক্রিয়ার গুরুত্বঃ এ বিক্রিয়ার মাধ্যমে ক্লোরোফর্ম এবং গুরুত্বপূর্ণ জৈব দ্রাবক কার্বন টেট্রা ক্লোরাইড উৎপন্ন করা যায়।
জেনে রাখা ভালঃ বিক্রিয়াটি ঘটানোর মূল নিয়ামক বিক্ষিপ্ত সূর্যালোক; তাই এটি উল্লেখ করতে হবে।
বিক্রিয়াটি ০ ক্রমের 😛
টেক্সট রিসোর্সঃ হাজারী ও নাগঃ ২৩৬-২৩৭ (মেকানিজমসহ)
মহির ও মুস্তারীনঃ ২৮০
এ বিক্রিয়াটি শুধু নুরুল হক মিয়া স্যার এর বইতে পাওয়া গিয়েছে। তাই বেশি তথ্য পাওয়া গেল না। এ বিক্রিয়া থেকে অ্যালকাইল হ্যালাইড উৎপন্ন করা যায়।
এ বিক্রিয়ায় অ্যালকেনের একটি হাইড্রোজেন ও নাইট্রিক এসিড এর হাইড্রোক্সিল মূলক (HO-NO2) যুক্ত হয়ে পানি হয়ে চলে যায় এবং অ্যালকাইল নাইট্রেট উৎপন্ন হয়। (এটাই মেকানিজম)
চিত্রঃ
বিক্রিয়ার গুরুত্বঃ এই বিক্রিয়ার মাধ্যমে অ্যালকাইল নাইট্রেট উৎপন্ন করা যায়।
জেনে রাখা ভালঃ এ বিক্রিয়ায় তাপমাত্রা ৪০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এ রাখা হয়।
অ্যালকেনকে গাঢ় সালফিউরিক এসিড সহযোগে উত্তপ্ত করলে অ্যালকাইল সালফোনিক এসিড উৎপন্ন হয়।
মেকানিজমঃ সালফিউরিক এসিডের হাইড্রোক্সিল মূলক এবং অ্যালকেনের একটি হাইড্রোজেন পরস্পর যুক্ত হয়ে পানি হিসেবে অপসারিত হয়। বাকি অ্যালকাইল ও সালফোনিক মূলক পরস্পর যুক্ত হয়ে অ্যালকাইল সালফোনিক এসিড উৎপন্ন করে।
এ বিক্রিয়াটিও একমাত্র নুরুল হক স্যারের বইতে পাওয়া গেছে এবং এ বিক্রিয়া সম্পর্কে অন্যান্য টেক্সট বইতে কিছু লেখা নেই।
এ বিক্রিয়াটি অ্যালকেনের বিক্রিয়াগুলির মধ্যে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিক্রিয়া।
অ্যালকেনকে ৩০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইড এবং হাইড্রোক্লোরিক এসিডের সহযোগে উত্তপ্ত করলে অ্যালকেনের শাখাশিকল বিশিষ্ট সমাণু উৎপন্ন হয়ে থাকে।
বিক্রিয়াটির গুরুত্বঃ এ বিক্রিয়াটির মাধ্যমে শাখাশিকল বিশিষ্ট অ্যালকেন উৎপন্ন করা যায় যেটি নকিং প্রতিরোধে যথেষ্ট ভূমিকা পালন করে।
জেনে রাখা ভালঃ এক্ষেত্রে তাপমাত্রা এবং অ্যালুমিনিয়াম ক্লোরাইড ও হাইড্রোক্লোরিক এসিডের কথা অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে।
টেক্সট রিসোর্সঃ হাজারী ও নাগঃ ২৩১
মহির ও মুস্তারীনঃ ২৭৪
অ্যালকিনসমূহে অনুরূপ অ্যালকেন হতে দুটি হাইড্রোজেন কম থাকে। এদের অণুতে একটি দ্বিবন্ধন তৈরী হয় দু’জোড়া ইলেক্ট্রন সহযোগে। অর্থাৎ দ্বিবন্ধন বিশিষ্ট দুটি কার্বনের প্রত্যেকটি এই বন্ধন সৃষ্টির জন্য দুটি করে ইলেক্ট্রন সরবরাহ করে।
সাধারণ সংকেতঃ CnH2n এখানে n এর মান ১ থেকে শুরু করে ২,৩,৪,৫,.....
যেমনঃ ইথিন (H2C=CH2),প্রোপিন ইত্যাদি।
বর্ণনাঃ
অ্যালকোহল এর সাথে দ্বিগুণ পরিমাণ গাঢ় সালফিউরিক এসিড যোগ করে ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় অ্যালকাইল হাইড্রোজেন সালফেট উৎপন্ন করা হয়। একে ১৬৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করলে অ্যালকিন উৎপন্ন হয়।
মেকানিজমঃ গাঢ় সালফিউরিক এসিড একটি শক্তিশালী নিরুদক। এটি অ্যালকোহল থেকে হাইড্রোক্সিল মূলক অপসারণ করে এক অণু পানি তৈরী করে অ্যালকাইল হাইড্রোজেন সালফেট উৎপন্ন করে। পরে একে উচ্চ তাপ দিলে হাইড্রোজেন সালফেট অ্যালকাইল থেকে একটি হাইড্রোজেন নিয়ে আসে ফলে উৎপন্ন হয় অ্যালকিন এবং সালফিউরিক এসিড।
যেহেতু অ্যালকাইল থেকে একটি হাইড্রোজেন অপসারণ করলেই অ্যালকিন পাওয়া যায় এবং সালফিউরিক এসিড একটি নিরুদক তাই প্রথমে হাইড্রক্সিল মূলক এবং পরে একটি হাইড্রোজেন অপসারণের মাধ্যমে অ্যালকিন উৎপন্ন করা হয়।
জেনে রাখা ভালঃ এই বিক্রিয়াটি ঘটানোর জন্য যেসব লেখা লিখতেই হবে সেগুলো হলঃ
ক) দ্বিগুণ পরিমাণ সালফিউরিক এসিড নিতে হবে।
খ) সালফিউরিক এসিড অবশ্যই গাঢ় হতে হবে।
গ) দুই ধাপে তাপমাত্রা উল্লেখ করতে হবে।
তার কারণ হল;
ক, খ, গ নিয়ম তিনটি অমান্য করলে অ্যালকিন উৎপন্ন না হয়ে ইথার উৎপন্ন হবে।
তাই ইথার প্রস্তুতির সময় এ নিয়মগুলো আমরা অগ্রাহ্য করবো। 😀
বিক্রিয়াটির গুরুত্বঃ বিক্রিয়াটির মাধ্যমে পরীক্ষাগারে ইথিন বা অ্যালকিন প্রস্তুত করা হয়।
টেক্সট রিসোর্সঃ হাজারী ও নাগঃ ২৪০
মহির ও মুস্তারীনঃ ২৮২
হ্যালোজেনো অ্যালকেনের সাথে অ্যালকোহলীয় পটাশিয়াম হাইড্রক্সাইড যোগ করলে অ্যালকিন, পটাশিয়াম হ্যালাইড এবং পানি উৎপন্ন হয়।
মেকানিজমঃ হ্যালোজেনো অ্যালকেনেকে ইথানলীয় পটাশিয়াম হাইড্রক্সাইডসহ ফুটালে এক অণু হাইড্রোজেন হ্যালাইড (HX) অপসারিত হয়ে অ্যালকিন উৎপন্ন করে। এই হাইড্রোজেন হ্যালাইড আবার ক্ষারের সাথে বিক্রিয়া করে পটাশিয়াম হ্যালাইড এবং পানি উৎপন্ন করে। তাহলে দেখা যাচ্ছে ক্ষার না থাকলে বিক্রিয়াটি বিপরীতমুখী হত!
চিত্রঃ
জেনে রাখা ভালঃ বিক্রিয়াটিতে ক্ষারের উপস্থিতির কথা, এবং ক্ষারটি যে অ্যালকোহলীয় তা অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে।
এই বিক্রিয়াটিতে বিটা কার্বন থেকে একটি হাইড্রোজেন পরমাণু অপসারিত হয় বলে একে ডিহাইড্রো হ্যালোজেনেশন বা বিটা-অপসারণ বিক্রিয়া বলে।
টেক্সট রিসোর্সঃ হাজারী ও নাগঃ ৩১৪
মহির ও মুস্তারীনঃ ২৮২
ভিসিনাল মানে সন্নিহিত বা কাছাকাছি। অ্যালকোহলে দ্রবীভূত ডাই হ্যালাইডকে জিঙ্ক চূর্ণের সাথে উত্তপ্ত করলে অ্যালকিন ও জিঙ্ক হ্যালাইড উৎপন্ন হয়।
মেকানিজমঃ অ্যালকোহল জিঙ্কের সাথে বিক্রিয়া করে ডাই অ্যালকক্সি জিঙ্ক এবং ২ টি জায়মান হাইড্রোজেন উৎপন্ন করে। উৎপন্ন জায়মান হাইড্রোজেন ডাই হ্যালাইডের সাথে বিক্রিয়া করে অ্যালকিন ও হাইড্রোজেন হ্যালাইড উৎপন্ন করে। উৎপাদিত হাইড্রোজেন হ্যালাইড ডাই অ্যালকক্সির সাথে বিক্রিয়া করে জিঙ্ক হ্যালাইড এবং অ্যালকোহল উৎপন্ন করে। এই অ্যালকোহল আবার নতুনভাবে বিক্রিয়ায় অংশগ্রহন করতে পারে।
জেনে রাখা ভালঃ অবশ্যই অ্যালকোহল এবং জিঙ্কের কথা উল্লেখ করতে হবে। তাপ দেওয়ার প্রতীকটিও দিতে হবে।
টেক্সট রিসোর্সঃ হাজারী ও নাগঃ ২৪২
মহির ও মুস্তারীনঃ ২৮৩
অ্যালকাইনের সাথে প্যালাডিয়াম-ক্যালসিয়াম কার্বনেট এবং কুইনোলিন প্রভাবকের উপস্থিতিতে হাইড্রোজেন গ্যাস চালনা করলে অ্যালকিন উৎপন্ন করে।
মেকানিজমঃ এখানে কুইনোলিন ও ক্যালসিয়াম কার্বনেট প্রভাবক বিষ দ্বারা বিষকৃত প্যালাডিয়াম প্রভাবকের (লিন্ডলার প্রভাবক) উপস্থিতিতে হাইড্রোজেন দ্বারা অ্যালকাইনের নিয়ন্ত্রিত বিজারণ করলে অ্যালকিন উৎপন্ন হয়।
জেনে রাখা ভালঃ প্যালাডিয়াম-ক্যালসিয়াম কার্বনেট এবং কুইনোলিনের কথা বলতেই হবে।
** বিক্রিয়াটি অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়**
টেক্সটরিসোর্সঃ মহির ও মুস্তারীনঃ ২৮৩
অ্যালকেনকে উচ্চ তাপমাত্রায় রাখলে দুইটি হাইড্রোজেন পরমাণু অপসারিত হয়ে অ্যালকিন উৎপন্ন করে।বেশি পরিমাণ অ্যালকেন নিলে এবং আরও বেশি তাপ প্রয়োগ করলে ক্ষুদ্রতর অ্যালকেনও উৎপাদিত হয়ে থাকে।(এটাই মেকানিজম)
জেনে রাখা ভালঃ তাপমাত্রা ৬০০-৭০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এ রখা হয়।প্রভাবক হিসেবে ক্রোমিয়াম অক্সাইড ব্যাবহার করা হয়।
বিক্রিয়ার গুরুত্বঃ অ্যালকিন থেকে ক্র্যাকিং এর মাধ্যমে যেমন অ্যালকেন উৎপন্ন করা যায় ঠিক তেমনি এ প্রক্রিয়াতেও অ্যালকেন থেকে অ্যালকিন উৎপন্ন করা যায়।
টেক্সট রিসোর্সঃ হাজারী ও নাগঃ ২৪২
মহির ও মুস্তারীনঃ ২৮৩
অ্যালকোহলকে অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইডের উপস্থিতিতে তাপ প্রয়োগ করলে অ্যালকিন উৎপন্ন হয়।
মেকানিজমঃ অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইডের উপস্থিতিতে তাপ প্রয়োগ করলে অ্যালকোহল থেকে এক অণু পানি অপসারিত হয় ফলে অ্যালকিন উৎপন্ন হয়।
জেনে রাখা ভালঃ অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইডের কথা উল্লেখ করতে হবে।এখানে অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইডের পরিবর্তে থোরিয়া বা থোরিয়াম ডাই অক্সাইড ব্যাবহার করা যাবে।
টেক্সট রিসোর্সঃ হাজারী ও নাগঃ ২৪১
মহির ও মুস্তারীনঃ ২৮২
এই পর্যন্তই অ্যালকিনের প্রস্তুতি শেষ হল।
[ এতক্ষণ লেকচার দিলাম পরীক্ষাতো একটা নিমুই হা হা হা .... 😀 ] [ গুগল মামুরে সার্চ দিলে খপর আসে 👿 ]
তাই রাসায়নিক বিক্রিয়া যত বেশি অনুশীলন করা যায় তত ভাল। আমি শুধু ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা সকল সাম্ভাব্য বিক্রিয়া একত্রে লিখলাম। তবে বাকি কাজ আপনাদের।
জৈব রসায়ন যেন আমাদের কাছে বিরক্তিকর বিষয় না হয়ে একটি আনন্দময় বিষয় হয়ে উঠুক সেই কামনায় আজকে এই পর্যন্তই। টিউনটি পড়ার জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। সবাই ভাল এবং সুস্থ থাকুন। আল্লাহ্ হাফেজ।
THIS TUNE IS DEDICATED TO THE QUOTATION >>>>"ZAOGA MIA BISKUT KHAOGA"<<<<
১। আমরা ইন্টিগ্রেশন ভয় পাই না..... > ২০০০ শব্দের + ৩৫ ছবির মেগাটিউন
আমি নিওফাইটের রাজ্যে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 13 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 13 টি টিউন ও 1392 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 5 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
শ্রবণ, মনন , অনুশীলন
vai onek sundor hoisa salea jan