নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য ও সমুদ্র বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. মোহাম্মদ বেলাল হোসেন ও Australian Museum এর বিশিষ্ট পলিকীট বিজ্ঞনী ড. প্যাট হ্যাচিংস বাংলাদেশের নোয়াখালী উপকূলীয় অঞ্চল থেকে Nephtys bangladeshi নামে পলিকীটের নতুন একটি প্রজাতি আবিস্কার করেন। সাধারণত লবনাক্ত জলাশয়ের তলদেশের মাটিতে বসবাসকারী ছোট এই প্রাণী মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া জলাভূমির প্রতিবেশগত অন্যান্য ভূমিকা রাখে যেমন বারোয়িং এর মাধ্যমে নদী বা সমূদ্রের তলদেশের নিউট্রিয়েন্সেটস ও অক্সিজেন আদান-প্রদান করে উপকূলীয় জলাশয় ও সমূদ্রের উর্বরতা বৃদ্ধি করে।
প্রাণীজগতে এনিলিডা পর্বের অন্তর্গত পলিকীটের দেহে অসংখ্য চুল থাকায় এরা Bristle বা beard worms নামে পরিচিত। এই প্রাণীর গ্রুপ নিয়ে গত প্রায় দুইশত বছর ধরে বঙ্গপসাগরের তীরবর্তী অঞ্চলে গবেষণা হলেও এই পর্যন্ত বাংলাদেশ উপকূলীয় এলাকা থেকে নতুন কোন প্রজাতি আবিস্কৃত হয়নি। তাই এই প্রজাতির নামকরণ বাংলাদেশের নামানুসারে Nephtys bangladeshi করা হয়। সাদা বর্ণের Cylindrical আকৃতির আবিষ্কৃত পলিকীটের দৈঘ্য ১১-১৯ মি:মি: এবং প্রস্থ ০.৮-১ মি:মি:।
এটির অন্যতম সনাক্তকারী বৈশিষ্ট হলো এর গলবিলে ৯ জোড়া প্রান্তীয় ও ১৪ সারি উপ-প্রান্তীয় প্যাপিলা থাকে এছাড়া দেহের ৭-২৭ খন্ডে ব্রাঙ্কিয়া থাকে।
ড. বেলাল বলেন, পলিকীট জীববৈচিত্র নিয়ে গবেষণা করার জন্য ২০১৫ সালের মে মাসে Australian Museum Research Institute, Sydney তে টিউন ডক্টরাল গবেষক হিসেবে আমন্ত্রিত হন। গবেষনার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের নোয়াখালী উপকুলীয় অঞ্চল থেকে সংগৃহীত কিছু পলিকীট নমূনা সনাক্ত করতে গিয়ে দেখতে পান সদ্য আবিষ্কৃত প্রজাতিটি বৈশিষ্টের দিক থেকে Nephtys গণভূক্ত অন্যান্য স্বীকৃত ৯৮টি প্রজাতি থেকে আলাদা। Australian Museum এ সংরক্ষিত এই গণভূক্ত আরো বেশ কিছু নমূনার সাথেও তূলনা করা হয়। চুড়ান্তভাবে নতুন প্রজাতি হিসেবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য অত্যাধুনিক Scanning Electron Microscope (SEM) প্রযুক্তিও ব্যবহার করা হয়। পরে ড. প্যাট হ্যাচিংস সহ এই প্রজাতিটির স্বীকৃতি লাভের জন্য গবেষণার ফলাফল নিউজিল্যান্ড থেকে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক Taxonomic জার্নাল Zootaxa তে পাঠানো হয়। গত ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬ তারিখে “Nephtys bangladeshi n.sp., a new species of Nephtyidae (Annelida: Phyllodocida) form Bangladesh coastal waters” শিরোনামে প্রকাশিত হয়। একই দিনে বিশ্ব স্বীকৃত ডাটাবেইজ Zoobank ও WORMS (World Register for Marine Species) এ অন্তর্ভূক্ত হওয়ার মাধ্যমে প্রজাতিটি নতুন হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করে।
ড. বেলাল জানান এই পর্যন্ত পৃথিবী থেকে প্রায় দশ হাজার প্রজাতির পলিকীট আবিস্কৃত হয়েছে। কিন্তু এই পর্যন্ত প্রকাশিত গবেষনা প্রবন্ধে বাংলাদেশ থেকে মাত্র ২৯ প্রজাতির তালিকা পাওয়া যায়। আমাদের উপকূলীয়/সামুদ্রিক অঞ্চল অত্যন্ত জীববৈচিত্রপূর্ন। অপ্রতুল গবেষণার জন্য আমরা এখনও আমাদের জীববৈচিত্রের সম্পূর্ন তালিকা তৈরী করতে পারিনি। এমনও হতে পারে যে, জলবায়ূ পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় ও মানবসৃষ্ট দূষনের কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ন প্রজাতি আমাদের আবিস্কারের আগেই দেশ/পৃথিবী থেকে হারিয়ে যাবে। এই গুরুত্ব অনুধাবন করে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মত আমাদের দেশেও জীববৈচিত্র নিয়ে আরো ব্যাপক গবেষণা হওয়া দরকার।
আমি আল মাসুম। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 8 বছর 8 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 35 টি টিউন ও 68 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 1 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।