হ্যালো টেকটিউনস কমিউনিটি, কেমন আছেন সবাই? আশা করি প্রযুক্তির মিষ্টি মধুর ছন্দে বেশ খোশ মেজাজেই আছেন। আমি আইটি সরদার আপনাদের সামনে চলে আসলাম অসংখ্য বার পাওয়া আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে। প্রশ্নটা সবার অনেকটা এরকম, “আমি কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে বা কোন সাবজেক্টে পড়লে আমার ভবিষ্যৎ উজ্জ্বলতর হবে?” “কোন সাবজেক্টের চাহিদা বর্তমানে খুব বেশি”, “আমি যখন চাকরী করবো তখন কোন সাবজেক্টের চাহিদা বেশি হবে”, “যেকোনো সাবজেক্টে পড়লেই হয় তারপরও আমাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বা বুয়েটে পড়তেই হবে?”, “ডাক্তারদের চাহিদা সারা জীবন আছে না?”, “কোন সাবজেক্ট পড়লে চাকরী নিশ্চিত?” “জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে তো কিছু করতে পারবো না!” এ রকম শত শত প্রশ্ন প্রতিনিয়ত আমি ফেসবুক, ফোনে আপনাদের কাছ থেকে পাচ্ছি।
বিশেষ করে এসএসসি এবং এইচএইচসি পরীক্ষার আগে এবং পরে এই প্রশ্নগুলো বেশি পাই। প্রতিবার ভাবী এই ছোট পোলা-মাইয়া গুলোর জন্য একটা দুইটা টিউন করবো। কিন্তু করবো করবো বলেও করা হতো না। আবার ফোনে বা ফেসবুকে বা মেইলে খুব গোছায়ে উত্তর করা কষ্ট হয়। 😎
আবার এদের ভবিষ্যৎ যদি আমার একটা টিউনে কিছুটা বদলে যায়। তাই আজকে আপনাদের প্রায় সব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আমার আজকের টিউন। কেউ মিস করলে বা আপনাকে কেউ এই ধরনের প্রশ্ন করলে দিতে পারেন টিউনের লিঙ্কটি।
আচ্ছা আপনি কি জানেন ইতিহাস পড়ে ইতিহাসবিদ হওয়া যায়, ভূগোল পড়ে হয় ভূতত্ত্ববিদ আবার বাংলা পড়ে হচ্ছে নামকরা সাহিত্যিক। আবার এসব বিষয় না পড়েও তারা উপরের বিষয়গুলো নিজে জেনে এক্সপার্ট হচ্ছে।
একটা গল্প শেয়ার করি আপনাদের সাথে। আমার এক বুয়েটের ফ্রেন্ড, ওর ছোট ভাই গতবারের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়ে অন্য কোন ইউনিটে চ্যান্স না পেয়ে চারুকলায় চ্যান্স পায়। তাতে তারপরিবার সহ আমার বন্ধু খুব কষ্টে আছে। কারন এ বিষয়ে পড়ে কি হবে? কীভাবে পাড়া-প্রতিবেশিকে তারা মুখ দেখাবে? ঐ দিন রাতে ও আমার কাছে আসে একটা কাজে। আমাকে বললো সব ঘটনা। আমিও খুব হতাশ।
হঠাৎ ওকে বললাম, আচ্ছা তোর ছোট ভাইয়ের কি পছন্দ শুনেছিস। তখন ও খুব দৃঢ়ভাবে বললো, ওর আবার পছন্দ কিসের? ভালো সাবজেক্টে না পড়লে ও কি করবে আমরা জানি না। আমি বললাম তারপরও একটু শুনে দেখ। একটু পরে ওর ছোট ভাইকে ও ফোন করে আমার বাসায় ডাকলো।
আমি ছোট ভাইকে জিজ্ঞাসা করলাম, তোমার কি করতে ভালো লাগে? ও জানায়, ছবি আঁকাতে।
কিন্তু তুমি কি জানো এর ভবিষ্যৎ কেমন? ওসব জানি না তেমন তবে ছবি আঁকাতে আমি ক্লান্ত হই না। সে জন্য কি তুমি চারুকলায় ফর্ম উঠায়েছিলে? হ্যাঁ!
এই তুই ওর কথা কি শুনছিস? আমার বন্ধু তেড়ে আমাকে বলে।
চুপ থাক না তুই। আমি কথা বলি তারপর ডিসিশন নিস।
জানেন ভাইয়া আমি অনেক ছবি এঁকেছি। পুরস্কারও পেয়েছি স্কুল থেকে। ছোট ভাই বলে।
আমি আমার বন্ধুকে বললাম ওকে চারুকলায় ভর্তি করায়ে দে। তোর আব্বা-মাকে আমি বুঝাবো।
পাগল নাকি তুই!
কেন?
এভাবে অনেক তর্কাতর্কীর পর ওকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলায় ভর্তি করলো। যদিও সে ঢাকার বাইরেও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে আরও কিছু ভালো সাবজেক্টে চ্যান্স পেয়েছিলো তবুও।
ও এখন তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। বিভিন্ন বইয়ের কভার পেজ এবং নামী পত্রিকার কার্টুন ও আঁকে। ওর বড় ভাই বুয়েট থেকে বের হয়েও এখনও ফ্যামিলিকে সাপোর্ট দিতে পারে না। কিন্তু ও ঠিকই দিয়ে যাচ্ছে। ওর বাবা এখন ছোটটাকেই বেশি যোগ্য সন্তান মনে করে। পাড়া – প্রতিবেশিকে গল্প শোনায়।
গল্পটা বাস্তবে দেখা আমার জীবনের এক কাহিনী। 🙂
আপনি কোন সাবজেক্ট বা বিষয়ে পড়ছেন তার থেকে বেশি ইম্পরট্যান্ট আপনি কোনটা বেশি পছন্দ করেন।
আপনার কম্পিউটার সাইন্স পছন্দ হলে কেন আপনি বুয়েটে কেমিক্যালে পড়বেন? আপনার সাংবাদিকতা পছন্দ হলে কেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনে পড়বেন?
আপনার ট্র্যাভেলিং পছন্দ হলে কেন ডাক্তারী পড়বেন?
আপনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বা কম নামকরা কোন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েও যদি পড়ে আপনার পছন্দের সাবজেক্টে পড়তে হয় তাও সেটা আপনার ভবিষ্যতে যে আপনাকে ক্লান্ত করবে না এটা বলতে পারি। আর ক্যারিয়ার সেটাতো ক্লান্তহীন কাজ করতে পারলে কেমন হবে সেটা আমি না বলে দিলেও আপনারা অনুধাবন করতে পারেন।
এবার আসি রেজাল্টের বিষয়ে। আপনার এসএসসি বা এইচএসসি রেজাল্ট খারাপ হয়েছে? আপনি এ+ পাননি? পরিবারের সবাই আপানাকে বকাবকি করছে। চোখের পানি আর নাকের জল এক করার কোন জায়গাও আপনি পাচ্ছেন না।
আসুন আমার কাছে। আমি আমার পরিচিত হাজার খানিক মানুষ দেখাতে পারবো যারা নামমাত্র রেজাল্ট নিয়ে আজকে তাদের পছন্দের বিষয়ে পড়ে ভালো রেজাল্টধারী বন্ধুদের চেয়ে জীবনযুদ্ধে অনেক এগিয়ে। হয়তো কষ্ট একটু বেশি করতে হয়েছে কিন্তু তাদের লাইফ স্টাইল দেখলে আপনার হিংসা হবে।
আরেকটা কথা জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে হলে আপনাকে এক্সট্রা নলেজ নিতে হবে। আপনার বিশ্ববিদ্যালয় আপনাকে একটা সার্টিফিকেট নামক কাগজ দিতে পারবে কিন্তু আপনার ক্যারিয়ার গড়তে হলে আপনাকে স্কিলফুল হতে হবে?
আপনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বা কম দামের কোন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়েন না কেন আপনার বেসিক কিছু স্কিল থাকলে আপনি জীবন যুদ্ধে এগিয়ে থাকবেন সুনিশ্চিত। বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলছি।
বিশেষ করে কম্পিউটার নলেজ আপনার যে কোন ভালো চাকরীর জন্য দরকার। সেহেতু আপনার পছন্দের সাবজেক্টের স্কিল বাড়ানোর সাথে সাথে এ দিকটা যতো সম্ভব উন্নত করুন।
অনেকে বলে ভাই আইটি সাবজেক্টে কেমন চাহিদা? তাদের একটা কথা বলবো। উপরের লেখা সম্পূর্ণ পড়লে এটার উত্তর আমার কাছে জানতে চাইবেন না আশা করি। আর কোন বিশ্ববিদ্যালয় আইটি বা সিএসই হাতে কলমে শেখায় না। এ সাবজেক্ট আপনার পছন্দের হলে যেখানে ইচ্ছা সেখানে পড়ুন। পারলে যেখানে পড়লে নিজে প্র্যাকটিস করার বেশি সুযোগ পাবেন সেখানে পড়ুন। তা সে বিশ্ববিদ্যালয় যেমনই হোক। কারন সার্টিফিকেট আপনাকে এই বিষয়ে খুব বেশি কাজে দিবে না যদি নিজের স্কিল ভালো না করতে পারেন।
শেষ করার আগে শুধু একটা কথা বলবো পছন্দের সাবজেক্ট সে যেটাই হোক ভর্তি হোন, আর নিজেকে আরও বেশি স্কিলফুল করুন। তবেই আপনার লাইফের গল্প একদিন মানুষ লিখবে এটা বলতে পারি জোর গলাই।
তবে একটা কথা যারা ইঞ্জিনিয়ারিং বা ডাক্তার হতে চান তাদের আমি নিষেধ করছি না, শুধু বলছি আপনার ইচ্ছা যদি ঐ সাবজেক্টে পড়া হয় তারপরই পড়ুন। শুধু টাকা বা ক্যারিয়ার না দেখে নিজের মূল্যবোধকে সম্মান করতে শিখুন। 🙄
আপনাদের সুন্দর ও সুস্থ জীবন কামনায় আজ এখানেই শেষ করবো। যতো প্রশ্ন আছে মাথায় আমাকে করতে পারেন প্রয়োজনে আরও একটা টিউন করবো আপনাদের প্রশ্ন থেকে।
দেখুন এখান থেকে!
শেয়ার করে সবাইকে জানার সুযোগ করে দিন। ধন্যবাদ সবাইকে! 😆
আমি আইটি সরদার। Web Programmer, iCode বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 10 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 261 টি টিউন ও 1750 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 22 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আমি ইমরান তপু সরদার (আইটি সরদার),পড়াশুনা করেছি কম্পিউটার বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি নিয়ে; পেশা কন্টেন্ট রাইটার এবং মার্কেটার। লেখালেখি করি নেশা থেকে ফেব্রুয়ারি ২০১৩ থেকে। লেখালেখির প্রতি শৈশব থেকেই কেন জানি অন্যরকম একটা মমতা কাজ করে। আর প্রযুক্তি সেটা তো একাডেমিকভাবেই রক্তে মিশিয়ে দিয়েছে। ফলস্বরুপ এখন আমার ধ্যান, জ্ঞান, নেশা সবকিছু...
অসাধারন লিখেছেন ।আমি ও ছোট থেকে ছবি আঁকতে ভালবাসি Evan এখন ছবি আঁকার জন্য সপ্তাহে একটা দিন রাখি, তবে ওয়েব প্রোগ্রামিং ও ওয়েব ইউআই ডিজাইনে এ বেশি সময় দিচ্ছি ।আপনার কাছ থেকে অনেক ভালো গাইড লাইন পাচ্ছি যা আমাদের সবার কাজে আসবে।