বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি যুদ্ধ নামে আজ এক নতুন যুদ্ধের জন্ম নিয়েছে। শিক্ষার অধিকার সবার। কিন্তু দেশের বিশ্ববিদ্যালয় অপর্যাপ্ততার কারণে আজ ভার্সিটি অ্যাডমিশন যুদ্ধ রূপ নিয়েছে। তবে যাই হোক সে কথায় যাচ্ছিনা। আজ লিখছি এই ভর্তি যুদ্ধ সংক্রান্ত একটি সচেতনতামূলক পোস্ট।
আমি এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছি। পরীক্ষা দিয়ে বের হবার পর গেটে হাতে গুঁজে গুঁজে কমপক্ষে ৪-৫ টি বিজ্ঞাপন পাই। শুধু আমি না, আপনারা সব ভার্সিটি অ্যাডমিশন প্রার্থীই পেয়ে থাকেন এবং জানেনও এসব বিজ্ঞাপন কিসের! জি, প্রায় প্রত্যেকেই জানেন এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ধরার জন্য পরীক্ষার পর ভার্সিটি অ্যাডমিশনের অনেক কোচিং সেন্টার তাদের দলবল নিয়ে লিফলেট (বিজ্ঞাপন) সহ দাঁড়িয়ে থাকে পরীক্ষা হলের গেটে। আর পরীক্ষা শেষ হওয়া মাত্রই কাঙ্গালের মতো বিজ্ঞাপন বিলি করতে ঝাপিয়ে পড়ে তাঁরা। এদের এই কাহিনী দেখে মাঝে মাঝে মনে হয় পরীক্ষা দিতে আসছিই মনে হয় শুধু এদের বিজ্ঞাপন পাবার জন্য! এছাড়াও প্রায় সব পত্রিকায় বিরক্তিকর স্টাইলের যত বিজ্ঞাপন দেখে থাকবেন তার ৯০% এইসব ভার্সিটি ভর্তি কোচিং সেন্টারের। স্বাধীন দেশ, বিজ্ঞাপন বিলি করার স্বাধীনতাও তাদের আছে। সেই স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছি না। আমাদের সমস্যাটা অন্য জায়গায়। সমস্যাটা হলো এদের বিজ্ঞাপনে ছবি ব্যবসায়! বুঝেই ফেলেছেন, কি বলতে চাচ্ছি। দেশে যত ভার্সিটি অ্যাডমিশন কোচিং সেন্টার রয়েছে তাদের প্রত্যেকের বিজ্ঞাপনের পুঁজি হলো ছবি! হ্যাঁ ছবি! মেধাবী শিক্ষার্থীদের ছবি! এটাই হলো তাদের মূল পুঁজি।
অমুক ভার্সিটির ১ম স্থান অধিকারী তমুক স্টুডেন্টটা আমাদের! এই দেখুন প্রমাণ। জি, প্রমাণ দেখানোর জন্য তাঁরা তাদের লিফলেটে ঐ তমুক স্টুডেন্টটার ছবি, স্বীকারোক্তি এমনকি স্বাক্ষর সহ তুলে ধরে। সেটাও আমাদের সমস্যা না রে ভাই। তাহলে সমস্যাটা কি? সমস্যাটা আমাদের তখনই যখন একাধিক কোচিং সেন্টারের বিজ্ঞাপনে ঐ একই স্টুডেন্টের ঐ একই ছবি, স্বীকারোক্তি এবং স্বাক্ষর দেখা যায়। ভাই প্রতিটা প্রতিষ্ঠান, পন্য বা সেবার কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য গুণ থাকে। সেটাকেই পুঁজি করে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হয়। এটাই হওয়া উচিৎ বিজ্ঞাপনের নীতি। বিজ্ঞাপন কোন খারাপ কিছু নয়। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে আমরা কাঙ্ক্ষিত পন্য বা সেবাটি নির্বাচন করতে পারি। কিন্তু বিজ্ঞাপনের তথ্যটা তো সঠিক হতে হবে। আল্লাহ মালুম, আমাদের দেশে সেই বিজ্ঞাপনের কোন নীতি আজও আছে কিনা! টিভিতে যদি ৩টা ম্যাঙ্গো জুসের কোম্পানির বিজ্ঞাপন দেখেন। তবে হয়ত দেখা যাবে ৩ টা কোম্পানিই ৩ রকম গুণ বা বৈশিষ্ট্য তুলে ধরবে। এখন গুণগুলো কতটা সত্য সেটা তো আপনার বিচার করার ক্ষমতা নেই। প্রাথমিক ভাবে আপনি যে গুণটিকে ভালো লাগবে সেই কোম্পানিটিকেই পছন্দ করবেন ঐ বিজ্ঞাপন দেখার পরে।
এখন বলুন, ঘটনা কি দাঁড়াল? কোন প্রতিষ্ঠানকে বিশ্বাস করব আমরা? একজন কৃতি শিক্ষার্থীকে দাবি করছে দুই প্রতিষ্ঠান। এবং তাঁরা সেই হিসেবে তাদের বিজ্ঞাপনে ছবিও ছাপিয়ে যাচ্ছে। ছবি নিয়ে চলছে এক রমরমা ব্যবসায় এবং প্রতারণা। আমার মূল্যবান সময় নস্ট করে একটার বেশী প্রমাণ খোঁজা সম্ভব হলোনা। কারো ইচ্ছে থাকলে নিজ ইচ্ছায় অনুসন্ধান করতে পারেন। তবে এই ঘটনাটি যে অধিকাংশ শিক্ষার্থীই আজ অবগত তা আমার বিশ্বাস। কিন্তু বিজ্ঞাপনের নামে শিক্ষা এবং মেধাবী কৃতি শিক্ষার্থীদের নিয়ে ব্যবসায় চলছে তা কি অপরাধের পর্যায়ে পড়েনা? নাকি এটাকে প্রতারনাও বলা চলেনা? প্রশাসন নিরব কেন? ভার্সিটি ভর্তির মতো কঠিন পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতারণা করবেন না প্লিজ। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানই যদি শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতারণা করে। তবে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে আমরা আর কি আশা করতে পারি? তাই, সকলকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। দেশের সব ভার্সিটি কোচিং সেন্টারের আজ প্রায় একই অবস্থা। এদের বিজ্ঞাপন মানেই শুধু প্রতারনা...!!!
আমাকে পেতে পারেন...
বাংলা ব্লগ | ফেসবুক প্রোফাইল | ফেসবুক পেজ | টুইটার | গুগল প্লাস ভেরিফাইড পেজ | ইউটিউব
আমি ব্লগার মারুফ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সৌশল নেটওয়ার্ক - টেকটিউনস এ আমি 11 বছর 2 মাস যাবৎ যুক্ত আছি। টেকটিউনস আমি এ পর্যন্ত 196 টি টিউন ও 1301 টি টিউমেন্ট করেছি। টেকটিউনসে আমার 2 ফলোয়ার আছে এবং আমি টেকটিউনসে 0 টিউনারকে ফলো করি।
আমি মারুফ। প্রযুক্তিকে ভালোবাসি। তাই গড়তে চাই প্রযুক্তির বাংলাদেশ। পড়াশুনা করছি রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাকাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগে। আমার ওয়েবসাইটঃ https://virtualvubon.com এবং https://www.rupayon.com
ভাই সত্যিকার ব্যাপারটা হচ্ছে…. যে ছাত্র/ছাত্রী ঢাবি বা রাবিসহ স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রথম/দ্বিতীয/তৃতীয় হয় তারা যে কোচিং এই আগে ক্লাস করুকনা কেন চান্স পাওয়ার পর অন্যান্য কোচিংরা টাকার বিনিময়ে তার সফলতা কিনে নেয়…
ব্যাপারটা এমন… তুমি ঢাবিতে প্রথম হলে.. তোমার সাথে যোগাযোগ করে তোমার নাম বিজ্ঞাপনে ব্যবহারের জন্য অর্থ অফার করবে… বা তোমাকে সংবর্ধনা দেওয়ার নামে ল্যাপটপ তথা ঘুষ প্রদান করে তোমার ছবি ব্যবহারের অনুমতি চাইবে…
এখন তুমি যদি আদর্শবান হও তবে রাজি হবেনা… কিন্তু দুঃখের বিষয় যারা প্রথম/দ্বিতীয় হয় তারা ভাল স্টুডেন্ট হলেও ন্যায়বান হয়না… [ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে…]
এবার আসি আমার দেখা প্রতারনায়…
আমি যখন 2011 তে পাশ করি… তখন ঢাবিতে গ ইউনিটে আমার এক ক্লাসমেট 20 তম এর ভিতর স্থান পেয়েছিল… আমাদের স্থানীয় এক কোচিং তার ছবি দিয়ে বিজ্ঞাপন দিয়েছিল যে সে সেই কোচিং এর স্টুডেন্ট… আমার সেই ক্লাসমেটকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে ও ওই কোচিং এ পড়েছিল কি না… সে বলেছিল যে তারা টাকার বিনিময়ে তার ছবি ব্যবহার করছে….
সুতরাং ব্যপারটা হচ্ছে সব কোচিং এমন প্রতারনা করবেই… তবে আমার মনে হয় কেউ চান্স পায় কোচিং এর ফলে নয়, তার নিজের মেধায়….